অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ পর্ব-২৮+২৯

0
139

#অ্যারেঞ্জ_ম্যারেজ
#অবন্তিকা_তৃপ্তি
#পর্ব_২৮

সকল রীতি-নিয়ম শেষ করে তুলিকে শুভ্রর রুমে এনে বসিয়ে দিয়ে গিয়েছে শুভ্রর দাদাবাড়ির কিছু মেয়েরা। যাবার আগে এক গ্লাস দুধ আর দুটো মিষ্টি প্লেটে রেখে সাফসাফ বলে গেছে: শুভ্র রুমে এলে প্রথমে সালাম করে তারপর এগুলো খাওয়াতে। তুলি ঘোমটা টেনে হাটুভেঙে বসে আছে বিছানায়। অনেকক্ষণ হয়েছে, বাইরে শুভ্রর কথা শোনা যাচ্ছে। বাসর ঘরে ঢোকার জন্যে বেচারার পকেট কা টা হচ্ছে। তুলি ওপাশে শুভ্রর একেকটা ঝগড়া করা শোনে হাসে। একসময় দরজা খোলার আওয়াজ আসে। শব্দ পেয়ে ঘোমটা টেনে মাথায় তুলে তুলি। শুভ্র তুলিকে দেখে দরজা সিটকিনি তুলে বললো – ‘ঘোমটা টেনে আর কী করবে? গরম লাগলে খুলে ইজি হও।’

তুলি শুনলো না। মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে রইলো। তুলি চাইছে; শুভ্র নিজে এসে তুলির ঘোমটা খুলে দিয়ে মুখটা দেখুক. . মুগ্ধ হয়ে বলুক ‘মা সা আল্লাহ’
শুভ্র এসি অন করে দিল। তারপর এগিয়ে এসে বিছানায় তুলির মুখোমুখি বসলো। তুলি একবার আড়চোখে শুভ্রকে দেখে চোখ ফিরিয়ে নিল। শুভ্র হাত বাড়িয়ে তুলির ঘোমটা খুলল। তুলি ধীরে ধীরে এবার শুভ্রর দিকে চোখ তুললো। দুজনের চোখে চোখ পড়ল। শুভ্র হালকা হেসে তুলির ডান হাতটা হাতে নিয়ে হাতের পিঠে চুমু খেয়ে বললো – ‘জান্নাতের হুর শুভ্র যে দুনিয়াতেই দেখে ফেললো- কী ভাগ্য।’

তুলি হেসে বললো – ‘ফ্লার্ট করা কী নতুন শিখেছেন?’

শুভ্র হেসে বললো – ‘বৌ আমার মহা সুন্দরী, ফ্লার্ট শেখা লাগে না। তাকে দেখলি অটোমেটিক আসে।’

তুলি হালকা হাসল। লজ্জা পেয়েছে খুব। শুভ্র হাজারগুণ সুন্দর তুলির থেকে। তুলি শ্যামা, অথচ শুভ্র যেভাবে তুলির রুপের প্রশংসা করলো, তুলি এখন বিশ্বাস করে ও পৃথিবীর সেরা সুন্দরী নারী। শুভ্র একটুপর বলল- ‘কোলে মাথা রাখি?’

নিঃসংকোচ আবদার, তুলি হাসলো। হাত দিয়ে ইশারা করে কোল দেখিয়ে ঘুমাতে বললো। শুভ্র তুলির কোলে মাথা রাখলো। তুলি হালকা হাতে ম্যাসাজ করছে শুভ্রর কপাল। শুভ্র বললো- ‘তোমার কথামতো একটা বুক শেলফ কিনেছি! দেখেছো? ওখানে। এই শেলফে তোমার সব রোমান্টিক বই রাখবে। আর শিখবে কিভাবে বরকে রোমান্টিক পদ্ধতিতে ইমপ্রেস করতে হয়, উহুম উহুম।’

শুভ্র হালকা কাশার ভান করলো। তুলি শুভ্রর কপালে দু আঙুল ঠেসে বলল -‘ খুব শখ, না?’

শুভ্র চোখ উঁচু করে তুলির মুখের দিকে তাকালো। বললো – ‘শখই তো। আমি হচ্ছি খাঁটি পুরুষ। সকল শখ আহ্লাদ বিয়ের পরের জন্যে তোলা রেখেছি। তোমার আগে বা পরে কোন সতীন আসার চান্স নেই। তোমার তো খুশি হওয়া উচিত?’

তুলি এবার মুগ্ধ হল। শুভ্র এভাবে মায়া লাগিয়ে কথা বলে কেন? তুলির বুক কাপে? পা ষণ্ড পুরুষ সেটা কী বুঝে? তুলি মাথা নিচু করে শুভ্রর প্রশস্ত কপালে চুমু খেয়ে ধরা গলায় বললো – ‘থ্যাংক ইউ আমার আগে কাউকে ভালো না বাসার জন্য।’

শুভ্র চোখ বন্ধ করলো। তুলি মুখ সরিয়ে আনলো। শুভ্র চোখ খুলে বললো- ‘আগের জন্যে থ্যাংক ইউ দিলে। পরেরজন্যে দিবে না?’

তুলি মুখটা অন্যদিকে সরিয়ে ঠোঁট টিপে হেসে বললো- ‘ ওটা ভবিষ্যৎ। পুরুষ মানুষের বেলায় গ্যারান্টি নেই। কবে পিছলে যায়।’

শুভ্র এ কথা শুনে চট করে উঠে বসলো। তুলির দিকে চেয়ে বললো – ‘মানে? তুমি ভয় পাচ্ছো আমি তোমার সতীন আনবো বা কোন পরকীয়া করব কী না? How could you think like that, তুলি?’

শুভ্র আহত ভঙ্গিতে বললো। তুলি তাকালো। আগের ন্যায় ভাবলেশহীন ভাবে বলল – ‘আমি বললাম তো ভবিষ্যৎ ওটা। পুরুষ মানুষ পিছলে না? শুনেন নি কখনও?’

শুভ্র তুলির থুতনি চেপে মুখটা নিজের দিকে ফেরাল। তুলি তাকালো, শুভ্র শান্ত স্বরে বললো – ‘শুনেছি। সঙ্গে এমন পুরুষও দেখেছি যারা একজনকে ভালোবেসে জীবন পাড় করে দিয়েছে।’

তুলি কিছু বললো না। শুভ্র তুলিকে ছেড়ে দিল। রাগ করে বাথরুমে গিয়ে শেরওয়ানি পাল্টে ট্রাউজার-টিশার্ট পরে বিছানায় এসে সোজা শুয়ে পড়ল। তুলি হা করে শুভ্রর রাগ দেখছে। আজ বাসর রাতে ওরা ঝগড়া করলো? এই রাত নিয়ে এত পরিকল্পনা করে এটাও দেখার ছিল? তুলি ছোট্ট করে শ্বাস ফেললো। টি-টেবিল থেকে দুধের গ্লাসটা নিয়ে শুভ্রর দিকে এগিয়ে বললো- ‘উঠুন, এসব খেয়ে ঘুমান। সকালে আপনার কাজিনরা দেখলে কিন্তু আমাকে প্রশ্ন করবে।’

শুভ্র কাঁধ ঝকিয়ে বললো – ‘তুমি খাও। আমি সুগার খাই না।’

তুলি বললো – ‘তাহলে দুধটুকু খেয়ে ঘুমান।’

শুভ্র উত্তর দিলো না। তুলি কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে হাল ছেড়ে দুধের গ্লাস আবার জায়গায় রাখলো। গরম লাগছে। ভারী লেহেঙ্গা গায়ে শরীর ঢলে পড়তে চাইছে। তুলি উঠে লেহেঙ্গা খুলে শাড়ি গায়ে জড়াল। এবার বসলো চুলের ক্লিপ খোলায়। ক্লিপ মনে হচ্ছে হাজার ডজন লাগিয়েছে পার্লারের মেয়েরা। কোথায় কোথায় লাগানো সেটাও খুঁজে পাচ্ছে না। তুলি আয়নায় দেখলো: শুভ্র শুয়ে আছে বিছানায়। তুলি শুভ্রকে শুনিয়ে শুনিয়ে বললো- ‘বাসর রাতের গল্প কত পড়লাম। হাসবেন্ড-ওয়াইফ গল্প করে, আদর করে চুলের ক্লিপ খুলে দেয়, বুকে নিয়ে ঘুমায়। আর আমার কপাল দেখো। বিবাহিত জীবনের শুরুটাই ঝগড়া দিয়ে হলো। শুরুতেই এই অবস্থা. . বাকি জীবন তো পরেই আছে। ও বাবা, এটা কার সঙ্গে বিয়ে পড়িয়ে দিলে আমার।’

চুলের ক্লিপগুলো তুলি আসলেই খুলতে পারছে না। চুল ছিঁড়ে হাতে আসছে বারবার। তুলি কাঁদোকাঁদো মুখে হাল ছেড়ে দিতে চাইলে হঠাৎ চুলে কারো হাতের স্পর্শ লাগে। শুভ্র তুলির পেছনে দাঁড়িয়ে চুলের ক্লিপ খুলে দিচ্ছে। মুখভঙ্গি ভয়াবহ গম্ভীর। হাসছেও না একদম। তুলি কিছুক্ষণ থম হয়ে শুভ্রকে দেখলো। তারপর ভয়েভয়ে বললো- ‘আ’ম সরি না, শিশু ডক্টর। আর বলবো না এমন।’

শুভ্র তুলির দিকে একবার চেয়েই চোখ ফিরিয়ে নিল। একে একে আস্তে ধীরে সবগুলো ক্লিপ খুলে রাখলো টেবিলে। তারপর গিয়ে আবার শুয়ে পড়লো। তুলি দীর্ঘশ্বাস ফেললো। বাতি নিভিয়ে নিজেও শুভ্রর পাশে শুয়ে পড়লো। শুভ্র তুলির দিকে পিঠ করে আছে। তুলি থমথমে মুখে শুভ্রর চওড়া পিঠের দিকে তাকিয়ে থাকলো কিছুসময়। হঠাৎ শয়তানি বুদ্ধি মাথায় চড়ল তুলির। উঠে গিয়ে শুভ্রর সামনে গেলো। শুভ্র ভ্রু কুঁচকে তাকালো, তুলি শক্তি দেখিয়ে জোর করে শুভ্রর দুহাতের মধ্যে ঢুকে জড়িয়ে ধরলো শুভ্রকে। শুভ্র হা হয়ে গেলো। তুলিকে সরাতে চাইলে তুলি শুভ্রর গালে চুমু খেয়ে বসলো। মিষ্টি করে বললো- ‘সরি।’ তারপর মাথা উঁচু করে কপালে চুমু খেলো, আবারও একই ভাবে বললো- ‘সরি।’ শুভ্র থমকে আছে। তুলি এগিয়ে এসে শুভ্রর খাড়া নাকে চুমু খেল, মিষ্টি করে আবারো বললো- ‘সরি’
পরপর কয়েকটা চুমু খেয়ে একই কথা বললো-‘সরি,সরি,সরি।’ তুলির অনবরত চুমুর জ্বালায় একসময় অতিষ্ট হয়ে গেলো শুভ্র। একপর্যায়ে রাগ ধরতে না পেরে হেসে উঠে তুলির দুগাল ধরে তুলিকে থামালো। বললো- ‘আর কত, তুলি? চুমু খাওয়ার তো আর কোনো জায়গা বাকি রাখো নি।’

তুলি শুভ্রর চোখের দিকে চেয়ে কানে আঙুল ছুঁয়ে আবার মিষ্টি করে বললো- ‘সরি, আর বলবো না এমন।’

শুভ্র হালকা হেসে তুলির কপালে চুমু খেলো। বললো- ‘রাগ নেই আমি আর। শান্ত হও।’

তুলি হালকা হাসলো। শুভ্র কিছুসময় তুলিকে ওভাবেই বুকে জড়িয়ে রাখল। তুলিও মাথাটা শুভ্রর বুকে ঠেকিয়ে আরামে পরে আছে। শুভ্র তুলির পিঠে হাত বুলিয়ে বললো- ‘ঘুমাও, সারাদিন অনেক দখল গেছে।’

তুলি অবাক হয়ে মাথাটা তুলে শুভ্রর দিকে তাকালো। শুভ্র এভাবে তুলির তাকানো দেখে ভ্রু নাড়িয়ে জিজ্ঞেস করল- ‘কী?’

‘কিছু না।’— তুলি আবারও শুভ্রর বুকে মাথা রাখলো। মনেমনে তুলি কিছুটা হতাশ। আজ প্রায় ছ মাস পর তারা একসঙ্গে থাকছে। শুভ্র এতদিন বাসর রাত নিয়ে কতকিছু শোনাল, এখন একদম ভালো মানুষ সাজছে। ‘ঘুমাও’-কেন ঘুমাবে তুলি? আজকের রাত ঘুমানোর রাত? তাদের বিয়ে অরেঞ্জ ম্যারেজ হলেও, এখন দুজনের মনে ডুবন্ত ভালোবাসা উপচে পড়ছে। বলা যায়- লাভ কম অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ তাদের। এই বিয়ের রাতটা কেউ ঘুমিয়ে কাটায়? তুলি শুভ্রর বুক নাক ঘষলো। চোখ বন্ধ করা অবস্থায় শুভ্র বললো- ‘কিছু বলবে? ঘুম আসছে না?’

‘না।’ তুলি ছোট্ট করে জবাব দিলো।
‘মাথা ম্যাসাজ করে দেই?’
‘হু।’

শুভ্র একটা হাত দিয়ে তুলির পিঠ আগলে অপরহাতে তুলির চুলে বিলি কাটতে লাগলো। চুলে বিলি কাটায় তুলির মনে হলো- সারাদিনের ক্লান্তি এক নিমিষেই হাওয়া হয়ে গেছে তার। এখন মনে হচ্ছে- সত্যি আজকের দিনটায় অনেক দখল গেছে। বিশ্রাম দরকার। শুভ্ররও হয়তো বিশ্রাম দরকার। একমাত্র সন্তান হওয়ায় বিয়ের সমস্তটাই শুভ্র নিজে দেখাশোনা করেছে। একটা মিনিট বসারও সুযোগ পায়নি। শুভ্রর জন্যে মায়া লাগলো তুলির। বেচারা বিয়েতে কতো কষ্ট করেছে। তুলি তো ঘুমিয়েই কাটিয়েছে। বউ দেখে কোন কাজ করতে দেওয়া হয়নি তাকে। তুলি কিছুসময় শুভ্রর দিকে চেয়ে থেকে তারপর হালকা হাসলো। একপর্যায়ে শুভ্রর বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লো।
_____________
ভোর সকালের আলো অনেক আগেই ফুটেছে। শুভ্র এখনও ঘুমিয়ে আছে। চুলগুলো এলোমেলো, গাল ফুলে আছে ঘুমে। তুলি গোসল করে বের হয়। দু কাপড়ের উপর টাওয়াল জড়িয়ে বের হয়েছে। বাথরুমে শাড়ি পরতে পারেনি তুলি। তাই রুমে এসে আগে দেখলো শুভ্র গভীর ঘুমে কী না। শুভ্রকে ভালো করে দেখে নিয়ে রুমের একপাশে শাড়ি পড়তে লাগলো। শাড়ি পরায় এখনও বড্ড কাঁচা তুলি। কোনদিক থেকে কোনদিক চেপে ধরবে বুঝতেই পারছে না। আঁচলটা গায়ে জড়িয়ে কুচি ধরতে লাগলো।

-‘শাড়িটা আমি পড়িয়ে দেই?’

ঘুমঘুম কণ্ঠে এ কথা শুনে তুলি চোখ তুলে তাকালো। এলোমেলো চুলে শুভ্র মুচকি হেসে দাঁড়িয়ে আছে। তুলি শুভ্রর চাওনি দেখে শাড়ির আঁচলটা ভালো করে গায়ে জড়াল। শুভ্র বোধহয় এতে ভ্রু কুঁচকালো। হতাশ হয়ে বললো- ‘আমার সামনে এভাবে অপ্রস্তুত হওয়ার কী আছে? আমি তোমার হাসবেন্ড, তুলি। বারবার তুমি এটা ভুলে যাও।’

তুলি হেসে ফেললো। শুভ্র তুলির অনুমুতির অপেক্ষা করলো না। এগিয়ে এসে শাড়ির কুচি ধরলো। কুচি যত্ন নিয়ে ভাঁজ করতে লাগলো। তুলি বললো – ‘আপনি না ঘুমাচ্ছিলেন? এত দ্রুত উঠে গেলেন? আমি তো শব্দও করিনি কোনো।’

শুভ্র উত্তর দিলো- ‘তুমি যখন গোসল করে বাথরুম থেকে বের হয়েছো, তখনই উঠে গিয়েছিলাম।’

‘তাহলে কেনো ঘুমের ভান করলেন? আমি তো-‘
‘দেখছিলাম কিছু।’
‘কী দেখছিলেন?’

তুলি প্রশ্ন করলো। শুভ্র মাথা তুলল এবার। চোখ টিপে বললো- ‘গোসল করে বের হওয়া শাড়ি ছাড়া সদ্য নববধূকে। অস্থির দেখাচ্ছিল তোমায়। আমি তাকালে লজ্জা পেতে, তাই একটু ঘুমানোর ভান করেছিলাম।’

তুলি অবাক হয়ে তাকালো শুভ্রর দিকে। পরপর লজ্জায় শুভ্রর হাতে থাপ্পড় বসিয়ে বললো- ‘আপনি এতটা অসভ্য, ছিঃ।’

শুভ্র হাসলো। কুচি ভাজ করা শেষ করে বললো- ‘আমি গুঁজে দেই?’

তুলি ‘না’ করবে তার আগে শুভ্র নিজে নিজেই বললো- ‘আমি গুজবো না তো কে গুজবে? হাসবেন্ড হই তোমার।’

শুভ্র এ কথা বলে কুচিগুলো একসঙ্গে করে তুলির পেটিগোটে গুঁজে দিলো। পেটে শুভ্রর হাতের স্পর্শে তুলি শিউরে উঠে হাত চেপে ধরল শুভ্রর। তুলি জোরেজোরে শ্বাস ফেলছে। শুভ্র তুলির মসৃণ পেটে ছোট্ট চুমু বসিয়ে উঠে দাঁড়ালো। শুভ্র তুলির শাড়ির আঁচল ঠিক করে দিলো। তুলি অন্যপাশে চেয়ে রইলো। শাড়ি পরানো শেষ করে শুভ্র একটু দূরে গিয়ে তুলিকে আপাদমস্তক দেখলো। তারপর থাম্বস অ্যাপ দেখিয়ে বললো- ‘পারফেক্ট।’

তুলি হেসে আঁচল ঠিক করলো। শুভ্র এগিয়ে এসে তুলির কোমর দুহাতে আগলে ধরে ঘনিষ্ঠ হলো। তুলি শুভ্রর বুকে দুহাত রেখে ভ্রূ নাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো- ‘কী চাই এখন আবার?’

শুভ্র বাম গালটা দেখিয়ে বললো- ‘মর্নিং কিস।’

তুলি ভ্রু বাকালো- ‘খুব শখ না?’

শুভ্র হালকা হেসে জবাব দিল- ‘বউ পেলে শখ আহ্লাদ বাড়ানো উচিত। এই তুমি না রোমান্টিক বই পড়ো? বইয়ে পড়ো নি?’

তুলি শুভ্রর বুকে আঙুল ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বললো- ‘আমার রোমান্টিক বইয়ে এসব আজগুবি কথা লেখা নেই।’

শুভ্র বললো- ‘লেখা উচিত। লেখা উচিত যে স্বামী একটা কিস চাইলে তাকে দুটো কিস দিতে হবে, স্বামী শাড়ি পরাতে চাইলে তাকে সুন্দর করে হ্যাঁ বলতে হবে, আর স্বামী আদর করতে চাইলে তাকে মানা করা যাবে না।’

তুলি হেসে উঠে বললো- ‘সবকিছুতে নিজের লাভ খুঁজেন, না?’

শুভ্র তুলির কপালে চুমু খেয়ে বললো- ‘শুধু আমার লাভ? তোমার লাভ হয়না?’

তুলি লজ্জা পেয়ে গেল। শুভ্রর বুকে আলতো করে থাপ্পড় বসিয়ে নিজেকে ছাড়াতে ছাড়াতে বললো- ‘বাজে কথা না বলে ছাড়ুন, বাইরে যাব। অলরেডি নয়টা বাজে। আম্মু একা একা নাস্তা বানাবেন?’

শুভ্র তুলিকে আরো কিছুসময় জ্বালাতন করে তারপর ছেড়ে দিল। তুলি শাড়ির আঁচল মাথায় তুলে রুম থেকে বের হলো।

#চলবে

#অ্যারেঞ্জ_ম্যারেজ
#অবন্তিকা_তৃপ্তি
#পর্ব_২৯

শুভ্র-তুলির বিয়ে উপলক্ষে শুভ্রদের দাদার বাড়ির গুটিকয়েক আত্মীয়স্বজন এসেছিলেন। দুপুরে খেয়েদেয়ে তারা যে যার বাড়ি চলে গিয়েছেন। সম্পূর্ণ ফ্ল্যাটটা আপাতত খালি পড়ে আছে। বর্তমান শুভ্র বাসায় নেই। কনস্ট্রাকশন এরিয়াতে গিয়েছে। ফ্ল্যাটে শুধু আফরোজা ও তুলি। তুলি এতোক্ষণ রুমে ঘুমাচ্ছিলো। আসরের আজান শুনে মাত্রই ঘুম থেকে উঠে নামাজ পরলো। দুপুরে আফরোজা ভাত খেয়েই ঘুমিয়েছে। এরপর আর দেখেনি তুলি। তুলি নামাজ শেষ করে চুলগুলো হাতখোপা করতে করতে আফরোজার রুমে গেল। আফরোজা জায়নামাজে বসে তাজবীহ পরছেন। তুলি গিয়ে আফরোজার পাশে মেঝেতেও হাঁটু ভেঙে বসলো। আফরোজা তাসবিহ শেষ করে কথা বললেন- ‘ঘুম শেষ?’

তুলি হালকা হেসে মাথা দুলালো। আফরোজা হাসলেন। নিজের কোল দেখিয়ে বললেন- ‘মাথা রাখ এখানে। মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।’

তুলি এ কথা শোনে অবাক চোখে কিছুক্ষণ আফরোজার দিকে চেয়ে থাকে। তারপর মুগ্ধ হয়ে আফরোজার কোলে মাথাটা রাখে। আফরোজা মাথা থেকে আঁচল সরিয়ে চুলে এক হাত দিয়ে বুলিয়ে দিচ্ছেন অপরহাতে তাজবীহ পরছেন। আরামে তুলির আবারও ঘুম পাচ্ছে। তুলি বললো- ‘আম্মু মাত্র ঘুম থেকে উঠলাম। আবারও ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছো আমাকে তুমি।’

আফরোজা হাসলেন। নিজের মতো করে চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বললেন- ‘তুই যখন আমাকে শুভ্রর মতো আম্মু ডাকিস না, তুলি? আমার না তোকে নিজের মেয়ে মেয়ে মনে হয়। ভালো লাগে শুনতে। এভাবেই ডাকিস কিন্তু সবসময়।’

তুলি হেসে আফরোজার হাত চেপে ধরে মুগ্ধ চোখে বলল- ‘আর তুমি যখন এভাবে কোলে মাথা রাখিয়ে চুলে হাত বুলাও না? তোমার হাত- গা থেকে কেমন মা মা একটা গন্ধ আসে। শাশুড়ি শাশুড়ি গন্ধ পাই-ই না।’

তুলি শেষের কথাটা বাচ্চাদের মতো মুখ ফুলিয়ে বললো। আফরোজা হেসে উঠলেন। তুলির চুল হাত দিয়ে নাড়তে নাড়তে বললেন-‘চুলে তেল দিস না কতদিন? পাখির বাসা হয়ে আছে চুল।’

তুলি চুল দেখলো, তারপর বললো- ‘অনেক ম্যাসাজ করতে হয়, তাই প্রতিদিন দেইনা। শুধু শুক্রবার দেই, দিয়ে শ্যাম্পু করে ফেলি আবার। বেশিক্ষণ তেল মাথায় রাখলে মাথা ব্যাথা করে আমার।’

আফরোজা তুলির চুলটা হাত দিয়ে নেড়ে দেখে বললেন- ‘তেলের কৌটাটা নিয়ে আয়। আমার ড্রয়ারের উপর রাখা- যাহ।’

তুলি অবাক হয়ে বললো- ‘তুমি তেল দিয়ে দিবে?’

‘হ্যাঁ, দিবো। যা নিয়ে আয় এখন।’

আফরোজার সোজাসোজি জবাব। তুলি প্রথমে অবাক হলেও,পরপরই নিজের বিস্ময় কাটিয়ে উঠে তেল নিয়ে বসলো। আফরোজা তাজবীহর গোটা একপাশে রেখে তুলির চুলে তেল দিয়ে দিচ্ছেন। তুলি আরামে চোখ বুজে আছে। অদ্ভুতভাবে আবার ঘুম পাচ্ছে তুলির। আফরোজা চুলে তেল দিতে দিতে বললো- ‘চুলে প্যাক দিস না? মেহেদী প্যাক দিবি? আমি বানিয়ে দিবো? আমি তো প্রতি বুধবার দিই।’

‘নিজে বানিয়ে?’
‘হ্যাঁ।’
‘আড়ং এ কিনতে মিলে, ওখান থেকেই কিনে নাও না কেন? খামোকা এত কষ্ট।’

‘ধুর, ওগুলো ভালো নাকি? কী না কী মেশায়। আমি আমার নিজের মেহেদী গাছ থেকে মেহেদী এনে বেটে তারপর প্যাক বানিয়ে মাথায় দেই।’

‘নিজেদের মেহেদী গাছ? কোথায় লাগানো? আমি দেখলাম না।’

‘ছাদে আছে। তোকে একবার ছাদ ঘুরিয়ে আনবো। শুভ্র তো অনেক গাছ লাগিয়েছে ছাদে। ফুল গাছও আছে। আমি মাথায় দেই বলে- মেহেদী গাছও এনে লাগিয়েছিলো গতবছর।’

তুলি অবাক হয়েছে। পরপর খুশিও হয়েছে আবার। শুভ্র তার মতোই গাছ লাগাতে জানে। এখন থেকে তুলি ও শুভ্র একসঙ্গে গাছের জড় এনে লাগাবে টবে।তারপর গাছগুলোর বড় হওয়া, ডালপালা ছড়ানো দুজন এসব একসঙ্গে উপভোগ করবে।

বউ-শাশুড়ির গল্পের মধ্যে কলিং বেল বাজলো। আফরোজা তুলির চুলে বেনুনি করে বেধে দিলেন। তারপর বললেন- ‘দরজা খুলে আয়, শুভ্র এসেছে হয়তো।’

তুলি তেলের কৌটা জায়গায় রেখে উঠে গেল। দরজা খুলে ওপাশে ইন করা ব্ল্যাক শার্ট-প্যান্ট পরে ক্লান্ত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থাকা শুভ্রকে দেখে হাসল তুলি। দরজায় ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে শুভ্রকে আপাদমস্তক দেখে বললো- ‘ডাক্তার সাহেবের শেষ অব্দি ঘরে ফেরার কথা মনে পড়লো?’

শুভ্র তুলির দিকে চেয়ে আছে। মসৃণ কোমরটা বাঁকিয়ে দরজার সাথে হেলান দিয়ে আছে তুলি। মারাত্মক একটা দৃশ্য। এমন দৃশ্যে শুভ্রর কী কন্ট্রোল থাকে নিজের উপর। মোটেও না, আর থাকলো না। শুভ্র এগিয়ে এসে দুহাতে তুলির কোমর আগলে পেছন থেকে দরজা লাগিয়ে দিল। শুভ্র কোমর আগলে ঘনিষ্ঠ হতেই তুলি হইহই করে উঠল। শুভ্রকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বারবার আফরোজার রুমের দরজার দিকে চেয়ে বললো- ‘আহ, ছাড়ুন মা, আম্মু ও ঘরে কিন্তু। চলে আসবে যেকোনো সময়।’

তুলি বারবার আফরোজার রুমের দিকে তাকাতে লাগলো। শুভ্র একবার উকি দিয়ে দেখলো। আফরোজার রুমের দরজা কিছুটা ভিড়িয়ে রাখা। শুভ্র যেন আরো লাই পেল। তুলির কাঁধে শেষবারের ন্যায় নাক ঘষে বললো- ‘রুমে আসো, বোঝাপড়া আছে।’

কথাটা বলে শুভ্র চট করে তুলিকে ছেড়ে সোজা হেঁটে চলে গেল আফরোজার রুমে। তুলি হা হয়ে গেলো। এই লোকটা বাইরের মানুষের সঙ্গে একরকম আর তুলির সাথে কী না- এসব অসভ্যতামি করে। হায়, তুলি এই পাগলাটে শুভ্রকে নিয়ে কই যাবে। তুলি কই যাবে আর। যাওয়ার জায়গা তো নেই। শুভ্রর সংসারে তুলির শেকড় ছড়িয়ে গেছে। যেতে চাইলে উপড়ে যাবে। তুলি হালকা হেসে দরজায় সিটকিনি তুলে রান্নাঘরে গেলো। দুধ চা বসাল দু কাপ, এক কাপ রঙ চা-ও আফরোজার জন্য বসালো।

শুভ্র বেশ অনেকটা সময় আফরোজার রুমে কাটিয়ে নিজের রুমে এলো। ফ্রেশ হয়ে ধোয়া কাপড় বারান্দায় মেলে রুমে এসে বসলো। তুলি আফরোজাকে চা দিয়ে নিজেদের চা নিয়ে রুমে এলো। চুরির রিনেঝিনে শব্দ কানে যেতেই শুভ্র ল্যাপটপ থেকে মাথা তুললো। তুলি দরজা খোলা রেখেই রুমে ঢুকে যাচ্ছিল। শুভ্র সঙ্গেসঙ্গে বললো- ‘দরজা লক করে আসো।’

তুলি চায়ের কাপ হাতে নিয়ে হা করে শুভ্রর দিকে চেয়ে থাকল। কিছুক্ষণ তাকিয়ে নিজেকে সামলে তুলি ভ্রু কুচকে বললো- ‘দিন দুপুরে কীসের দরজা বন্ধ করা? চা নিয়ে এসেছি, চুপচাপ চা খাবেন, অসভ্য পুরুষ।’

শুভ্র ভ্রূ নাড়ালো। তারপর মাথা নিচু করে ল্যাপটপের কিবোর্ডে দক্ষ হাত চালাতে চালাতে বললো- ‘ওকে ফাইন। আমার কী? তবে কেউ লজ্জা পেয়ে যেন বারবার দরজার দিকে না তাকায়- বলে রাখলাম।’

তুলি কিছুক্ষণ ভ্যাবলার মতো শুভ্রকে দেখলো। পরপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে দরজার দিকে এগিয়ে গেলো। লক করে চায়ের কাপ নিয়ে শুভ্রর পাশে বিছানায় বসলো। শুভ্র তুলির হাত থেকে চায়ের কাপ নিলো। শুভ্র চায়ে চুমুক দিয়ে বললো- ‘আমাদের বাসায় এই প্রথম তোমার চা বানানো, রাইট?’

তুলি চায়ে চুমুক দিতে দিতে নিজেই আগ বাড়িয়ে শুভ্রর গা ঘেঁষে বসলো। শুভ্রও তুলিকে একহাতে আগলে ধরলো। তুলি শুভ্রর বুকে মাথা রেখে বললো- ‘মজা হয়েছে?’

শুভ্র এ প্রশ্নে টিপ্পনী কেটে বললো- ‘মজা হয়নি বললে আমার ঘাড় থাকবে?’

তুলি ভ্রু কুচকে শুভ্রর চোখে তাকালো। বললো- ‘ঘাড় থাকবে না মানে? আমি এত খারাপ বৌ নাকি?’

শুভ্র তুলির এভাবে ফ্যাকাসে হয়ে কথা বলার কারণ ধরতে পারল। আলগোছে তুলিকে আগলে কপালে গাঢ় চুমু খেয়ে বললো- ‘উহু, তুমি আমার ঘরের লক্ষ্মী, তুলি। তুমি আমার ঘরে শাড়ি পরে হাটছো, আমার জন্যে চা বানাচ্ছো নিজের হাতে, আমায় এতটা ভালোবাসো-পুরো ব্যাপারটার জন্যে আ’ম লাকী। তোমার চেয়ে ভালো কেউই আমার বৌ হতে পারতো না। তুমি আমার পাশে আছো বলেই আমার জীবনে আজ এত সুখ, এত পূর্ণতা। শুভ্র শ্যুড থ্যাংক ইউ ফর দিস, অ্যান্ড অলসো-‘

তুলি আগ্রহ নিয়ে শুভ্রর কথা শুনছে। শুভ্র চা শেষ করে কাপটা আলগোছে টি-টেবিলের উপর রেখে তুলিকে দুহাতে আগলে নিজের সঙ্গে চেপে ধরলো। তুলিও বাধ্যগত বৌয়ের ন্যায় শুভ্রর সঙ্গে একদম মিশে গেল। শুভ্র তুলিকে বললো- ‘এন্ড ফর ইওর আনলিমিটেড লাভ, শুভ্র শ্যুড অলসো গিফট ইউ অ্যা কিউট লিটল প্রিন্সেস।’

শুভ্র থামলো। তুলি লজ্জায় মাথা নিচু করলো। শুভ্র বাচ্চার জন্যে এতটা উন্মাদ হয়ে আছে- ভেবে তুলি লজ্জায় শেষ হয়ে যাচ্ছে। শুভ্র তুলির কপালের চুল কানের পেছনে গুঁজে কানের লতিতে ঠোঁট ছুঁইয়ে ফিসফিস করে বললো- ‘শ্যুড অ্যাই, মিসেস শুভ্র?’

উফ- এতটা নেশালো গলা। তুলি ডুবে যাচ্ছে যে। তুলি থামলো। উত্তর দিলো না। গলায় সমস্ত কথাগুলো কাটার ন্যায় আটকে আছে। নিঃশ্বাস ফেলতে পারছে না তুলি। শুভ্র তুলিকে চুপ দেখে তুলির কানের কাছে আবারো ফিসফিসালো- ‘মিসেস শুভ্র কয়টা প্রিন্সেস গিফট চায় বলুক। যতগুলো চায় বলুক- মিস্টার শুভ্র সবেতেই একদম প্রস্তুত।’

তুলি আবেশে শুভ্রর টিশার্টের কলার খামছে ধরলো। জোরেজোরে নিঃশ্বাস ফেলে বললো- ‘মিস্টার শুভ্র কী চায়?’

‘অ্যা ক্রিকেট টিম।’

শুভ্র আগের চেয়েও ফিসফিসিয়ে উত্তর দিলো। তুলি আবেশে শুভ্রর কথা না শুনেই বলে দিল- ‘মিসেস শুভ্রও তাই চায়।’

সঙ্গেসঙ্গে শুভ্র তুলিকে ছেড়ে পিছিয়ে গেলো। তুলির লাজুক মুখটার দিকে চেয়ে চোখ বড়বড় করে বললো- ‘ক্রিকেট টিম? শিউর তো? এতগুলি বাচ্চার ধকল সামলাতে পারবে? পারলে চলো- আজকে থেকেই প্রসেসিং শুরু করি।’

দুষ্টু হেসে দুহাত তুলির দিকে বাড়িয়ে এগিয়ে এলো শুভ্র। তুলি হা করে এতোক্ষণ শুভ্রর দিকে চেয়ে ছিল। নিজের কথার অর্থ এতক্ষণ বুঝতে না পারলেও শুভ্রর দুষ্টু হাসি দেখে এখন ঠিক বুঝল। শুভ্র তুলিকে ছুঁবে- তার আগেই তুলি চায়ের কাপদুটো নিয়ে উঠে গেলো বিছানা থেকে। শুভ্র ভ্রু নাড়িয়ে তাকালে, তুলি হেসে বললো- ‘দিল্লি আভি ভি বহুত দূর হ্যা।স্বপ্ন দেখা বন্ধ করুন- ডাক্তার সাহেব।’

‘অ্যাই কী বল-‘

শুভ্র তুলিকে পাকড়াও করতে চাইলো, তার আগেই তুলি চায়ের কাপদুটো নিয়ে পালালো। শুভ্র মাথার পেছনে চুলকে হেসে উঠলো।

তারপর- তারপর শুভ্র সারাটাদিন তুলিকে জ্বালিয়ে খেলো। তুলি যেখানেই যায়- বারবার তুলির কানের কাছে এসে জানায় ক্রিকেট টিম কিভাবে বানানো যায়, একটা ক্রিকেট টিমের উপকারিতা কী, নিজেদের বাসা থেকেই একটা ক্রিকেট টিম তৈরি হলে দেশের কতবড় লাভ, এসবই শুভ্রর আজকের সারাদিনের কথা বলার টপিক।

এই তো- এখন। সবাই খেতে বসেছে। শুভ্রর দুষ্টুমিও এখানেও একটাসময় শুরু হয়ে গেলো। খাবারের একফাঁকে খোপ করে তুলির হাত ধরে নেয়। থমকে যায় তুলি। আড়চোখে শুভ্রর দিকে চেয়ে, টেবিলে বসে থাকা আফরোজার দিকে চোখ ঘুরায়। আফরোজা খেতে মগ্ন। তুলি সবার অগোচরে ডান হাতে শুভ্রর হাতে থাপ্পড় বসায়, ফিসফিসিয়ে বলে,

‘কী হচ্ছে কী? স্যার হয়ে ছাত্রিকে ইভটিজিং করা হচ্ছে?’

শুভ্র দুষ্টু হেসে বললো,

‘হু, বাকি ইভটিজিং রুমে চলো, দেখিয়ে দিচ্ছি। প্লিজ গিভ মি অ্যা চান্স মিস ছাত্রি।’

শুভ্র শেষের কথাটা বেশ করুণ গলায় বললো। তুলি আরও দু কথা বলবে তার আগেই আফরোজা খেতে খেতে বললেন,

‘তুলি, খাবার ঠান্ডা হচ্ছে। ক্ষুধা নেই আজ তোর?’

তুলি সোজা হয়ে বসল। চেয়ারে নড়েচড়ে বলল,

‘হ্যা আম্মু খাচ্ছি তো।’

পাশ থেকে শুভ্র বললো,

‘আম্মু বুঝতে পারছে না আসলে, তার ছেলের বৌর আপাতত কী খেতে মন চাইছে? আমি হেল্প করবো?’

তুলি চোখ রাঙাল। সকাল থেকে এই ছেলেটা তাকে জ্বালিয়েই যাচ্ছে। মূলত তার হয়েছেটা কী? শুভ্র ভদ্র ছেলের ন্যায় খেতে মশগুল। তুলি শুভ্রর দিকে চেয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললো। কে জানে, এই শুভ্র মশাই মোটেও শুভ্র অর্থাৎ ভালো না। বরং নেহাতই অসভ্য পুরুষ। ইশ- তুলি যদি মানুষটার অসভ্যতা সবাইকে জানাতে পারতো। একদম টাই টাই ফুশ হয়ে যেত এই ভদ্র মুখোশ পরা অসভ্য পুরুষের।

শুভ্র এখনো তুলির হাত চেপে ধরে আছে। তুলি ভালো করে খেতেও পারছে না। সারাদিন পর খেতে বসেছে, শুরু হয়েছে তার অসভ্যতা। তুলি একটাসময় বিরক্ত হয়ে বললো,

‘মশাই, এসব ছোয়াছুঁয়ি আমরা রুমে গিয়ে করি, হু?’

শুভ্র দুষ্ট হাসলো। তুলির দিকে চেয়ে ফিসফিস করে বললো,

‘ক্রিকেট টিম বানাবে বললে, তাহলে তো সবসময় ছোয়াছোঁয়ি ইজ মাস্ট,মিসেস শুভ্র! আম ট্রায়িং ম্যাই বেস্ট টু মেইক অ্যা বেস্ট ক্রিকেট টিম, ইউ নো?’

শুভ্র ডান চোখটা টিপলো। তুলি হা হয়ে শুভ্রর দিকে তাকাল। বিকেলের কথা নিয়ে এখনো টিজ করে যাচ্ছে? তুলি এবার জোর করে নিজের হাত শুভ্রর থেকে ছাড়িয়ে নিলো। তারপর শুভ্রর দিকে ঝুঁকে ফিসফিস করে বললো,

‘দুটি সন্তানের বেশি নয়-একটি হলে ভালো হয়, মিসেস শুভ্র সম্পূর্ণভাবে এই রুলসে বিশ্বাসী। এর বেশি আবদার করে মিসেস শুভ্রকে লজ্জা না দেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি,শুভ্র মশাইকে।’

#চলবে