আকাশ মোড়ানো চিরকুট পর্ব-৪৩+৪৪+৪৫

0
561

আকাশ মোড়ানো চিরকুট
লেখনী – সাইমা ইসলাম প্রীতি

৪৩.

এয়ারপোর্টের এক কর্ণারের একটা চেয়ারে নিশ্চুপ বসে রয়েছে চন্দ্রিমা। ফ্লাইট রাত সাড়ে তিনটায়। আর সে একটায় এসে বসে রয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা আসতে এগারোটা বেজেছে। তাই দেরি না করে সোজা এয়ারপোর্টেই চলে এসেছে সে। বুকের ভেতরটা তার ধীপ ধীপ করছে। সেকি কোনো ভুল ডিসিশন নিয়ে ফেলেছে কিনা। আবার পরক্ষণেই ভাবছে ভুল কেনো হতে যাবে! সে ঠিক,একদম ঠিক। সমারোহ যখন কুহেলীকে নিয়ে যাচ্ছিল তার সামন দিয়ে হঠাৎ ভেতরটা কেমন যেন করে উঠেছিল তার।কুহেলী তার ভালোবাসার মানুষটার সাথে কতোই না খুশি! অথচ সে বরাবর ভবিষ্যতের কথা ভেবে বর্তমানটা নষ্ট করছে। বর্তমান ছাড়া গেলো, ভবিষ্যতে ও কি সে আবির ছাড়া ভালো থাকবে? তাই সে আজ খুব বড় একটা ডিসিশন নিয়ে এখানে এসেছে। পরে মন বদলে যায় এই ভয়ে আজই, এক্ষুনি একটা হেস্তনেস্ত করবে সে। প্রায় একঘন্টা বসে থাকার পর চন্দ্রিমা দেখে আবির তার ফ্যামিলি নিয়ে এসেছে এয়ারপোর্টে। আবিরকে দেখেই চোখের কার্ণিশ বেয়ে টপটপ করে জল পরতে থাকে চন্দ্রিমার। সে যতই উড়ি উড়ি করুক এই লোকটার কাছেই যে তার পায়ের শিকল বাধা পরে আছে। পালাতে চাইলেও সাহস বা সামর্থ কিছুই হয়না তার।

চন্দ্রিমা কোনোকিছু না ভেবে হঠাৎই দৌড়ে গিয়ে জরিয়ে ধরে আবিরকে। আবিরের সঙ্গে তার মা ভাই আছে সেদিকে তার খেয়ালই নেই। ঘটনার আকস্মিকতায় কয়েকপা পিছিয়ে যায় আবির। পেছনে আরশ থাকায় একটুর জন্য নিচে পরে যায়নি দুজনা। কয়েক সেকেন্ড পর আবিরের যখন খেয়াল কি হলো ব্যাপারটা চমকে উঠে সে। চন্দ্রিমা! সে কি চন্দ্রিমাকেই দেখছে নাকি এটা কল্পনা? চন্দ্রিমাকে ফুপিয়ে কাঁদতে দেখে তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আবরি। চন্দ্রিমা মুহূর্তের মধ্যেই নিজেকে সারিয়ে নিয়ে চিৎকার করে বলে,

‘ এটা ভালোবাসা? তুমি বলেছিলে আমাকে ছেড়ে যাবে না। কথা রেখেছো তুমি? ‘

আবির হা হয়ে থাকে। কিছু বুঝে উঠতে না পেরে আমতা আমতা করে বলে,

‘ চন্দ্রিমা তুমিই তো বলেছিলে তোমার জীবন থেকে চলে যেতে। ‘

এবার চন্দ্রিমার রাগ আকাশ ছোঁয়। আবিরের কলার ধরে বলে,

‘ আমি বলবো আর তুই চলে যাবি? তুই জানোস না মেয়েদের বুক ফাটে তবু মুখ ফুটে না। মুখে যেটা বলে মনে তার বিপরীটা চায় বিশেষ করে এসব ক্ষেত্রে। ‘

আবির কিছু বলতে যাবে তার আগেই চন্দ্রিমা ফুলে ফেঁপে উঠে বলে, ‘ আর একটা কথা বলবি তো সারাজীবনের মতো আমাকে হারাবি বলে দিলাম। ‘

কথাটা বলেই মাথার চুল শক্ত করে হাতের মুঠির মধ্যে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে চন্দ্রিমা। আবিরের চোখেও এবার পানি চলে এসেছে। সে যা চায় তা হয়ত এবার সত্যিই পেতে চলেছে। একটু বাজিয়ে দেখা যাক চন্দ্রিকে। আবির মন খারাপ করে বলে,

‘ তুমি তো আমাকে ভালোই বাসো না। তাই এখান থেকে চলে যাওয়াই ভালো। ওখানে তোমাকে ভুলতে সুবিধা হবে। চাইলেই তোমার কাছে ছুটে আসতে পারবো না। আর ওখানেই সুন্দরী একটা মেয়ে দেখে বিয়ে করে নেবো ভেবেছি। ঠিকই বলো তুমি, মাকে আর কতো কষ্ট দেব। ‘

চন্দ্রিমা এমনিতেই রেগে ছিল। এবার নিজেকে সামলাতে না পেরে আবিরকে কিল-ঘুষি মারতে শুরু করে। আবির হেসে চন্দ্রিমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ক্ষীণ স্বরে বলে,

‘ ম্যাডামকে তাহলে অবশেষে আমার কাছে ফিরতেই হলো। আমি জানতাম আপনি আমায় ছাড়তে পারবেন না। কিন্তু এবার একবার ভালোবাসি বলবেন প্লিজ? ‘

আবিরের কথা শেষ হওয়ার আগেই চন্দ্রিমা বলে, ‘ ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি। আপনাকে আমি ভালোবাসি। আপনি আমাকে ছেড়ে যাবেন না প্লিজ। আমি আপনাকে ছাড়া আর থাকতে পারছি না। ‘

আবির মুচকি হাসে। আবিরের মা আর আরশও হেসে ফেলে ওদের কান্ড দেখে। চন্দ্রিমা একটা বড় শ্বাস নিয়ে বলে,

‘ বিয়ে করবেন আমায়? ‘

আবির হা হয়ে যায়। তার পৃথিবী যেন থমকে যেতে চাইছে। যার জন্য এতোগুলা বছর সে কষ্ট করেছে অবশেষে ফিরে যাচ্ছিল আজ সেই মানুষটাই তার সামনে দাড়িয়ে বলছে বিয়ে করবে কিনা! আবির চন্দ্রিমার হাত দুটো ধরে আলতো করে চুমু খেয়ে বলে,

‘ সে তো আমি অনেক আগে থেকেই চাই। ‘

চন্দ্রিমা মাথা নাড়িয়ে বলে, ‘ না। আমি এখন বিয়ে করার কথা বলছি। এক্ষুনি। ‘

আবির বোকা বনে গিয়ে বলে, ‘ এখন মানে! কি বলছো? ‘

‘ এখন মানে এখনি। আমি আমার বাবার সাথে কথা বলেছি উনার মত আছে। আমার পক্ষ থেকে স্বাক্ষী থাকবে ফুপ্পী। উনার বাসা কাছেই। আপনি আমাকে চাইলে এক্ষুনি বিয়ে করবেন নয়তো আর কক্ষনো না। এখন আপনি বলুন। ‘

আবির ঠোঁটে ঠোঁট চেপে কতোক্ষণব্যাপী তাকিয়ে থাকে চন্দ্রিমার মুখের দিকে। যে মেয়েটা তাকে দুদিন আগেও রিজেক্ট করলো এখন সে তাকে পাওয়ার জন্য কতোটা ব্যাকুল হয়ে পরেছে। আবির একবার তার মায়ের দিকে তাকায়। তিনি ইশারায় আবিরকে সম্মতি দেন।

আধাঘন্টা সময়ের ব্যাবধানে চন্দ্রিমা এখম শুধুই তার। চন্দ্রিমার ফুপুর বাড়িতে কাজি এনে রাত একটা পয়ত্রিশ মিনিটে বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে তাদের। আবির আর চন্দ্রিমাকে এখন আলাদা একটা ঘরে দেয়া হয়েছে কিছুক্ষণ সময়ের জন্য। আবির দরজা আটকেছে পর থেকেই জড়িয়ে ধরে বসে আছে চন্দ্রিমাকে। চন্দ্রিমা হঠাৎই লজ্জা মিশ্রিত কন্ঠে বলে,

‘ এই ছাড়ুন এবার। ‘

‘ এতে কষ্ট করে বিয়ে করেছি কি ছেড়ে দেয়ার জন্য নাকি? ‘

‘ আচ্ছা তাহলে ধরে রাখুন। ‘

চন্দ্রিমা হেসে ফেলে। তারপর সময়টুকু নিরবে কাটতে থাকে। অনেকটা সময় পার হয়ে যাওয়ার পর আবির অতিরিক্ত শান্ত কন্ঠে বলে,
‘ আমার চন্দ্রি? ‘

‘ হুঁ? ‘

‘ অবশেষে তোমায় পেয়েই গেলাম আমি। ‘

‘ হুম। ‘

‘ আমিই মনে হয় প্রথম বর যে কিনা বিয়ের পর ফুলশয্যা বাদ দিয়ে ফ্লাইটে চরবো। কত্তো বড় একটা মিস তাই না? ‘

চন্দ্রিমা আবিরের বাঁধন ছাড়িয়ে নিয়ে আবিরের চোখে চোখ মিলিয়ে মিষ্টি রাগ দেখিয়ে বলে,

‘ কি জঘন্য লোক! ‘

‘ হা হা হা। সেটা আমি কতো জঘন্য টের পাবে। বিয়ে করলে না! আচ্ছা চন্দ্রিমা, একটা প্রশ্ন করবো? ‘

‘ জিজ্ঞেস করতে হবে নাকি! করুন। ‘

‘ তুমি এমন তাড়াহুড়ো করে বিয়ে করে ফেললে কেনো? ‘

চন্দ্রিমা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবিরের বুকে মাথা রেখে বলে, ‘ আমি আপনাকে অনেক আগে থেকেই ভালোবাসি। কেবল পরিবারের কথা ভেবে দূরে সরিয়ে রাখতাম। আর যাতে সরাতে না পারি তাই। ‘

‘ পাগলি মেয়ে একটা! কথা দিলাম তোমার পরিবার এখন থেকে আমারও পরিবার। তাদের কোনো অযত্ন আমি হতে দেব না। ‘

চন্দ্রিমা মুচকি হাসে। আবিরের একদম কাছে গিয়ে আমতাআমতা করে আবিরকে বলে,

‘ আবির, আমার জন্য কি দেশেই থেকে যাওয়া যায়না? ‘

আবিরের ঠোঁটে মিষ্টি হাসির রেখা ফুটে উঠে। চন্দ্রিমার কপালে চুমু খেয়ে সে বলে,

‘ চন্দ্রির জন্য তার আবির সব কিছু করতে পারে। আর এটা তো একটা সামান্য বিষয়। ‘

চন্দ্রিমা বেশ চিন্তিত হয়ে বলে, ‘ আমি চাপিয়ে দিতে চাইছি না আবির। আপনি চাইলে আমি আপনার সঙ্গেই যাব। কিন্তু আমার ভাই বোনের লাইফ সিকিউর করার পর। ‘

‘ কোনোকিছুই তুমি চাপিয়ে দাওনি চন্দ্রি। তোমাকে যখন বিয়ে করেছি তখনই ঠিক করে নিয়েছি আমি দেশেই থাকবো। তোমার কাছে। তবে এখন আমার স্টাডি কমপ্লিট করতে একবছরের জন্য যে যেতে হবে! এই সময়টুকু আমাকে দিবেন ম্যাডাম? ‘

চন্দ্রিমা মৃদু হাসে। আবির তার চন্দ্রিকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। এই সময়টা আসলেই তার কল্পনার বাহিরে ছিল।

আকাশ যেন বয়ে চলা খরস্রোতা নদী আর এই নদীর বুকে ফুটেছে অজস্র তারা! এইসকল তারা’রা যেন সকলে আজ শুধু মাত্র কুহেলীর নামে। কুহেলীর ইচ্ছা করে পাখির মতো ডানায় ভর করে তার নদীর প্রতিটা কোণা রঙিন করে দিতে। রাতে ছাঁদে শুয়ে কানে হেডফোন গুঁজে রেডিওতে গান শুনছে কুহেলী। তখনকার দিনে গান শোনার সবচেয়ে ভালো মাধ্যম ছিল রেডিও। রাতের যত গভীরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে ততই যেন রহস্যময় হয়ে উঠছে চারিদিক। কুহেলী চোখ বুঁজে কুঞ্জার চেহারাখানি মনে করে। রাত্রির নিস্তব্ধতা বিদীর্ণ করে অতীতের চঞ্চল দিনগুলোর মাধুর্য্যময় স্মৃতি নাড়া দিচ্ছে কুহেলীর ভেতর। কুহেলী তার ছোটবেলা থেকে এই পর্যন্ত পাড়ি দেয়া সকল সময়ের কথা মনে করে। বুকে সূক্ষ একটা ব্যাথা হয়। ব্যাথার দমক আরো বাড়িয়ে দেয় সমারোহর ভাবনা। কেটে গেছে আরো পনেরো ষোলটা দিন। এই কদিনেই সমারোহ কুহেলীর সবচেয়ে বড় অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। তার কেয়ারিং পাগল করে তুলেছে কুহেলীকে। এখন সমারোহর বুকে মাথা রাখা ছাড়া ঘুম হয়না কুহেলীর। প্রথম প্রথম যখন সমারোহ সবার সামনে ডাইনিং টেবিলে বসে জোর করে তাকে নিজ হাতে লোকমা তুলে খাইয়ে দিত খুব লজ্জা হতো কুহেলীর। আর এখন সমারোহর হাত ছাড়া খাওয়া সম্পূর্ণ হয়না তার। সমারোহ পড়া বুঝিয়ে না দিলে পড়তে ইচ্ছা করে না। সমারোহর মোনাজাতে নিজের জন্য দোয়া শোনা ছাড়া প্রশান্তি মিলে না। সমারোহকে এক পলক না দেখলে মন শান্ত হয়না। কি বাজে অবস্থা! কিন্তু প্রেমের সম্পর্ক কিছুই গড়ে উঠেনি এ কদিনে। আজও সমারোহর ধারে কাছে ঘেঁষলে কুহেলীর বুক ধুকপুক করে। আজও সমারোহর স্পর্শ তাকে খুন করে। সমারোহ কেবল মায়া বাড়িয়ে যাচ্ছে। কদিন পর কুহেলীকে ছেড়ে গেলে কুহেলীর কি অবস্থা হবে একবার ভেবে দেখেছে? শুধু শুধু কেনো বাড়াচ্ছেন মায়া!
একটু আগে সমারোহ পড়ছিল, সেই সুযোগে চুপিসারে ছাদে চলে এসেছে কুহেলী। শুয়ে শুয়ে আপন মনে তারা গুনছিল তখনই হঠাৎ নিজের উপর একটা অস্পষ্ট ছায়া দেয়ে ঘাবড়ে যায় কুহেলী। পরক্ষণে একটু ভালো করে দেখতেই লম্বা নিশ্বাস ফেলে। সমারোহ কুহেলীর মাথার একদম কাছে এসে দাঁড়িয়ে কুহেলীর দিকে চেয়ে ছিল। হালকা শাসন করে সে বলে,

‘ ময়লার উপরেই শুয়ে আছো? ‘

‘ মাঝে মাঝে সব চিন্তা বাদ দিয়ে সময়টা উপভোগ করতে হয়। বালি নাই একদম দেখুন, সকালে বৃষ্টি হয়েছিল না! ‘

‘ এতো রাতে একা ছাদে আসতে ভয় করে না? ‘

‘ আমি গ্রামের মেয়ে। ‘

‘ হুওম। ‘

সমারোহ কুহেলীর পাশে গিয়ে শুয়ে পরে। কুহেলী একটু সরে গিয়ে দূরত্ব বজায় রাখতে চায় কিন্তু সমারোহ তার আরো কাছে গিয়ে গাঁ ঘেঁষে শোয়। কুহেলী অস্বস্তিতে পরে নখ দিয়ে হাত খোঁচতে থাকে। সমারোহ তা দেখে কুহেলীর হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নেয়। কুহেলীর শরীর যেন মুহূর্তেই জমে শীতল হয়ে যায়। এই মানুষটার স্পর্শেই কেবল এমন ক্ষমতা আছে যা সেকেন্ডের মধ্যে কুহেলীর নিজেকেই ভুলিয়ে দিতে পারে। কুহেলী যেন পাথরের মতো শুয়ে থাকে। এলোপাতাড়ি নিশ্বাস ফেলে বৃথাই নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করে। সমারোহ কুহেলীর হাতে নিজের আঙ্গুলের ছোঁয়ায় আঁকিবুঁকি করে কিছুক্ষন তারপর হঠাৎই এক হাতে ঠেস দিয়ে মাথা উঁচু করে শুয়ে কুহেলীকে দেখতে থাকে। কুহেলী একবার তাকে দেখে চোখ সরিয়ে নিলেও সমারোহ ঠায় চেয়ে থাকে। সময়ের পর সময় অতিবাহিত হয় তবু সমারোহর দেখা যেন আর শেষ হয় না। কুহেলী এই অনুভূতি আর সহ্য করতে না পেরে বলেই ফেলে,

‘ এভাবে তাকিয়ে থাকেন কেনো হে? আমাকে আর দেখেননি? ‘

সমারোহ বেখেয়ালি ভাবে বলে,

‘ তোমার চোখ! আমার বুক ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে মেরে ফেলার জন্য যথেষ্ট। ‘

কুহেলী লজ্জায় মিইয়ে যায়। সমারোহ হালকা হেসে ভ্রুঁ নাড়িয়ে বলে,

‘ তোমার অত আড়ষ্টতা কিসের আমার সামনে? সোনার চেয়েও খাঁটি কথা বলেছি। ‘

কুহেলী এবার সমারোহর হাত ছাড়ানো চেষ্টা করে বলে,

‘ আমাকে লজ্জা দিলে আমি আর এক মুহূর্ত এখানে থাকবো না। ‘

সমারোহ হেসে ফেলে। কুহেলীর হাত ছেড়ে দিয়ে আগের মতো শুয়ে বলে,

‘ আচ্ছা আচ্ছা আর দেব না। তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে কাল। ‘

কুহেলী এক লাফে উঠে বসে সমারোহ হাত ঝাকাতে ঝাকাতে উচ্চস্বরে বলে, ‘ সারপ্রাইজ! কি সারপ্রাইজ বলুন না? ‘

‘ ওমা! সেটা বলে দিলে কি আর সারপ্রাইজ হলো নাকি। কাল সকালের আগে পাবেনা। ‘

কুহেলী মুখ ফুলিয়ে অন্যদিক তাকিয়ে বলে, ‘ তাহলে এখন বললেন কেনো? অস্থিরতা ভাল্লাগে না আমার। ‘

সমারোহ মিনমিনে কন্ঠে বলে,
‘ আর আমাকে যে সারাক্ষণ অস্থির করে রাখো! ‘

‘ এই কি বললেন আপনি? ‘

‘ না কিছু না। ঘুমোতে চলো। ঘুমলেই দেখবে সকাল হয়ে গেছে। ‘

‘ কি সারপ্রাইজ, না জানা, না দেখা অব্দি তো ঘুমই হবে এখন। ‘

‘ তাহলে আমি আছি তো। তোমার কাছে! ‘

সমারোহর কথায় হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হয়ে কুহেলী তাকায় তার দিকে। সমারোহর ঠোঁটে দুষ্টু হাসি দেখেই তড়িঘড়ি করে উঠে চোখ বুঁজে একদৌড়ে চলে যায় ঘরে। সমারোহর কাঁধ হেলিয়ে হেসে বলে,

‘ পাগলী মেয়ে একটা। আমার থেকে বাঁচতে আমার ঘরেরই যাচ্ছে! ‘

চলবে.

আকাশ মোড়ানো চিরকুট
লেখনী – সাইমা ইসলাম প্রীতি

৪৪.

টুং টাং শব্দে ঘুৃম ভেঙে যায় কুহেলীর। সকালের দিকে ঘুম আপনা-আপনি পাতলা হয়ে আসে। তবে আজ ঘুম ভেঙেছে অন্যরকম একটা শব্দে। লেপের মাঝখান থেকে চোখ টিপটিপ করে এদিক ওদিক তাকাতেই চোখ আটকে গেলো বেলকনির দরজায় আটকানো ফেং শ্যুই বেলের দিকে। কুহেলীর আর বুঝতে বাকি রইলো না এই সুন্দর টুং টাং শব্দের উৎপত্তি কোথা থেকে হচ্ছে। মিষ্টি হাসি ফুটে উঠলো কুহেলীর লাল ঠোঁট জুড়ে। এটাই কি তবে সমারোহর সেই সারপ্রাইজ ছিল? তবে সমারোহ কোথায়? ঘরে তো তাকে দেখা যাচ্ছে না। কুহেলীর মন খারাপ হয়। ইদানীং ঘুম ভেঙেই সমারোহকে দেখা একটা অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঘরের বাহিরে মানুষের চলাচল, কথার শব্দ শোনা যাচ্ছে। কুহেলী চমকে উঠে। সচরাচর সেই সবার আগে উঠে ঘুম থেকে। তবে আজ এতো দেরি করে ফেললো কিভাবে! বাহিরে তো এখনো সূর্যের আলো ফুটেনি! কুহেলী দ্রুত বালিশের নিচ হাতরে মোবাইল নিয়ে দেখে সবেমাত্র সাড়ে চারটা বাজে। এখনো ফজরের আজান হয়নি। তাহলে ঘরের সবাই উঠে গিয়েছে কেনো? কুহেলী দ্রুত কোনোমতে গায়ে উরনা জরিয়ে ঘর থেকে বের হয়েই দেখে নয়না ব্যস্ত হয়ে কোথায় যেন চলে যাচ্ছে। কুহেলী ডাকলেও শুনলো না। কুহেলী অবাক হয়ে নিচে নামতেই দেখে সান্দ্র আর হিরণ ভাইয়া সোফায় বসে কি নিয়ে যেন আলোচনা করছে। কুহেলী তাদের দিকে এগিয়ে যেতেই হিরণ প্রশস্ত হাসি দিয়ে বলে উঠে,

‘ আরে শালা বউ যে! যদিও বউয়ের বড় ভাই, ওই একই হলো আমি সমারোহর চেয়ে বড়। কেমন আছো? তো তোমার অনুভূতি কি? ‘

কুহেলী বুঝতে না পেরে বলে, ‘ কি অনুভূতি ভাইয়া! ‘

‘ না কিছু না। কেমন আছো সেটা বলো। ‘

‘ এইতো ভালো ভাইয়া। আপনি কেমন আছেন? কখন এলেন দেখলাম না যে? ‘

‘ রাতেই, তুমি আর সমারোহ দেরি করে বাড়ি ফিরেছিলে তাই দেখোনি। ‘

‘ হতে পারে। তো ভাইয়া কথা বলুন আমি আসছি। ‘

‘ অবশ্যই। ‘

কুহেলী রান্নাঘরে যেয়ে দেখে আনরুবা ত্রস্ত হাতে পিঠা বানাচ্ছেন আর তাকে সাহায্য করছে সেঁজুতি। কুহেলীকে দেখেই জরিয়ে ধরে দুটো কথা বলেই আবার নিজ কাজে ব্যস্ত হয়ে পরে সে। কুহেলী বুঝে উঠে না কিসের অত ব্যস্ততা সবার। হিরণের জন্য? নাহ হিরণ ভাইয়া আসলে তো অন্যান্য সময় এমন করে না। এত্তো সকাল উঠে একজন মানুষের জন্য দশজনের প্রস্তুতি কেনোইবা নেবে। কুহেলী ধীর পায়ে হেটে গিয়ে আনরুবাকে জড়িয়ে ধরে। আনরুবা মুচকি হেসে কুহেলীকে বলে,

‘ তোকে আর কতো বলবো নিজের একটু খেয়াল রাখ। এতো সকালে উঠতে কে বলেছে? চোখ দুইটা ফুলে ঢোল হয়ে আছে। রাতেও পড়ার নাম করে ঘুমাস না। এখন তোরে ঘুমের জন্যও বকতে হবে আমার? ‘

প্রতিউত্তরে খিলখিল করে হেসে উঠে কুহেলী। আনরুবা চোখ মুখ কুঁচকে রাগার চেষ্টা করেও হেসে ফেলেন। কুহেলীকে আদর করে বলেন,

‘ দুই তলায় সান্দ্রর পাশের রুমে যা, যেয়ে দেখ কে এসেছে। ‘

কুহেলী অবাক হয়ে আনরুবাকে দেখে। আনরুবাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি নিজে কিছুই বলেন না কে এসেছে। কৌতুহলবশত কুহেলী দৌড়ে সান্দ্রর পাশের ঘরের সামনে এসে দরজায় নক করে দাঁড়িয়ে থাকে চুপচাপ। কিন্তু ভেতর থেকে ভেসে আসা একটা কন্ঠস্বর কুহেলীর ভেতরে তোলপাড় শুরু করে দেয়।

‘ ভেতরে আসো। ‘

কুহেলীর চোখ বড় বড় হয়ে যায়। মাত্র কি সে ভুল শুনলো? হতেই পারে। কিন্তু এতো বড় ভুল সে করতে পারে! কুহেলী চমকে গিয়ে দ্রুত দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকেই ডান হাতে মুখ চেপে থ’মেরে দাঁড়িয়ে থাকে। অশ্রুরা অবাধ্য হয়ে অঝোরে নামতে শুরু করে। কুহেলীর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটা ছোঁ মেরে কুহেলীকে নিজের বুকের সঙ্গে মিলিয়ে নেয়। কুহেলী আর খোর্শেদ একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পরে। কুহেলীর যেন বিশ্বাসই হতে চাইছে না যে তার আব্বা এই মুহূর্তে তার ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে, তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জরিয়ে রেখেছে নিজের কাছে। কুহেলীর ভেতরটা একদম শীতল হয়ে যায়। মনে হয় বাবার কোলে মাথা রেখে এই মুহূর্তে সবচেয়ে সুখী মানুষটা সে। মিনিট খানেক বাদে কুহেলী খোর্শেদের বুক থেকে মাথা তুলে কান্না জড়িত কন্ঠে বলে,

‘ আব্বা, আমার আব্বা। আমার প্রিয় আব্বা। কেমন আছো তুমি? তোমার শরীর এমন নরম হয়ে যাইতেছে কেনো? আমার তোমার কথা অনেক মনে পরতো। তুমি সত্যিই আসছো আব্বা! ‘

খোর্শেদ কিছু না বলে কুহেলীকে আবার বুকের সঙ্গে চেপে ধরে রাখেন। তার কলিজা যে এখনো শান্ত হয়নাই। কলিজার টুকরাটারে বুকের ভেতর পুরে ফেলতে ইচ্ছা করছে খোর্শেদের। কুহেলী তার আব্বার বুকে মাথা রেখেই বলে,

‘ আব্বা তুমি আসবা আমাকে বললে কি হতো? ‘

‘ বললে কি তুই হঠাৎ দেখায় এমন খুশি হইতি? ‘

কুহেলী হাসে। তারপর কপট রাগ দেখিয়ে বলে,
‘ তোমার শরীর ভালো আছে আব্বা? এমন শুকায় গেছো কেন? নিজের যত্ন নেওনা তাইনা! ‘

‘ আমি ঠিক আছি। কুঞ্জার জন্য বুকে অনেক কষ্ট হয়। বুকটা না অনেক ব্যাথা করে জানোস! ইদানীং এই ব্যাথা সহ্য করতে পারিনা। মেয়েটারে ছাড়া একবেলা খাইছি আমি! কোনোদিন খাওয়ার সময় পার হইয়া গেলেও আমি বাড়ি না ফিরলে মেয়েটা না খাইয়া বইসা থাকতো। ওরে ছাড়া খাইতে পারি না আমি। আমি শূন্য হইয়া গেছিরে মা। তুই পড়া লেখা শেষ কইরা আমারে তোর কাছে নিয়া আসবি? আমি যে কোনোদিন আমার মেয়ে ছাড়া থাকি নাই। আমার বুক ফাঁকা লাগে। আমার কিছু ভাল্লাগে না। ‘

কুহেলীর ভেতরটা কেঁপে ওঠে। খোর্শেদের কথা শোনামাত্রই চোখ ছাপিয়ে জল নেমে আসে। কি সহজ স্বীকারোক্তি দিলেন তিনি। অথচ তার আব্বা শক্ত কথার মানুষ। প্রচন্ড ভালোবাসলেও শক্ত হাতে শাসন করে বড় করেছেন তিনি তাদের। আজ সেই আব্বা কেমন দুর্বল হয়ে পড়েছেন! যে মানুষটা চিরকাল নিজের দুর্বলতা লুকিয়ে রেখেছে সে আজ নিজেই নিজের দুর্বলতার কথা বলছে। একটা সময় পর বাবা-মায়েরা মানসিকভাবে সন্তানের উওর পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে পরে। তখন সন্তানের কাছ থেকে পাওয়া অল্প একটু সময়ের জন্য বুক গ্রীষ্মের খাঁ খাঁ রোদ্দুরে তপ্ত প্রকৃতির মতো হাহাকার করে। একটু সময় যেন খরায় জীর্ণ হয়ে পড়া গাছের গোড়ায় এক সমুদ্র পানি। এটাই তাদের কাছে সবচেয়ে মুল্যবান। এই সল্প সময়ের জন্যই তাদের যত আর্তনাদ। অথচ এই বাবা-মাই নিজের জীবনের সবটুকু সময় উজাড় করে সন্তানকে দিয়েছে একটা সময়। কুহেলী ত্রস্ত হাতে তার আব্বার চোখ মুছে দিয়ে বলে,

‘ আব্বা আমি যেখানেই থাকি না কেন তুমি আমার সাথে থাকবা। আর তো মাত্র অল্প কয়েকটা বছর। আমার আব্বা আমার কাছেই থাকবে। ‘

খোর্শেদ মৃদু হাসেন। হাসনাহেনা কুহেলীর মাথায় হাত রেখে বলেন,
‘ এখানে কি শুধু কান্নাকাটি চলবে? এতদূর থেকে আসলাম মেয়ে তো আমার কাছেই আসে না। ‘

কুহেলী হেসে ফেলে হাসনাহেনার কথায়। হেনা নিজের মেয়েকে জরিয়ে ধরে নিজের সকল কষ্ট ভুলে যান। কুহেলী মায়ের বুকে মাথা রেখে বলে,

‘ ইশঃ! আম্মা কতোদিন তোমার গায়ের গন্ধটা পাইনি। তোমাদের কোনো অসুবিধা হয়নি তো আসতে? ‘

‘ নারে মা কোনো অসুবিধা হয় নাই। জামাই যেমনে ফোন দিয়া দিয়া খবর নিছে একটু পরপর অসুবিধা হওয়ার জোঁ আছে! ‘

কুহেলী আম্মার কথায় হতচকিত হয়ে যায়। সমারোহ আগে থেকেই সব জানতেন! কুহেলীর রাগ হয় একটু। পরক্ষনেই রাগ ভেঙে গিয়ে মনে হয় এটাই হয়তো তার সারপ্রাইজ। কুহেলী আম্মাকে ছেড়ে দাদীমার দিকে তাকাতেই দেখে সমারোহ তার দাদীমার কাছে বসে রয়েছে। তার দাদীমার হাতে তেল মালিশ করছে। কুহেলী মাকে ছেড়ে দাদীর কাছে যেতেই তিনি কুহেলীকে ঝাপটে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন। কুহেলী খুব শক্ত করে দাদীমাকে জরিয়ে ধরে চুপচাপ বসে থাকে কিছু সময়। রমলা নিজেকে সামলে নিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বলেন,

‘ আমার কলিজার টুকরা কুহু, আমি ভাবছিলাম আমাদের আর দেখাই হইবো না, তোর সংসার দেখনের ভাগ্য আমার নাই। জামাই এইখানে না আনলে কি তোর জামাই বাড়ি দেখনের স্বাদ মিটতো আমার? ‘

‘ তুমি খুশি দাদীমা? ‘

‘ মেলা খুশিরে কুহু। তোর জামাই সোনার টুকরা ছেলে একটা। নেলা খুইজাও অমন পোলা মিলে না। আইলাম পরে শরীলডা কি খারাপ লাগতাছিল, ম্যাজ ম্যাজ করতাছিল! এতো দূরের পথ পুরান শরীরে দেয়না আর। ভাবছিলাম একটু পরে খামু। না, আমার বাপে আমারে নিজে মুখে তুইল্লা খাওয়াইয়া দিসে। তোরে দেখতে চাইলাম তুই ঘুমাইছোস দেইখ্খা তোরে ডাকতে দেয় নাই। নিজেই সেবা যত্ন করতাছে আমাগো। অহন তেল মালিশ কইরা দিতাছে দেখ। না করলাম কত্তোবার। আমার শরীর এখন আক্কেবারে ভালো হইয়া গেছে। ‘

কুহেলী হাসে। কেনো যেন ভেতর ভেতর আনন্দ হচ্ছে অনেক। সমারোহ তার পরিবারের মানুষগুলোর প্রতিও যত্নশীল! বেশিরভাগ স্বামীই তাদের স্ত্রীর প্রতি যত্নশীল হলেও শ্বশুর বাড়ির লোকের প্রতি এতোটা হয়না। কথাটা কঠিন হলেও সত্য যে আমাদের সমাজের বেশিরভাগ ছেলেই আশা করে সে তার শ্বশুর বাড়িতে প্রচন্ড আহ্লাদে থাকবে। শ্বশুর বাড়ির প্রতিটা মানুষ তার উপস্থিতিতে কেবল তাকে নিয়েই ব্যস্ত থাকবে। কিন্তু সমারোহ এমনটা চাননি। সমারোহ তার বাবা মায়ের জন্য মেয়ের জামাই নয়, নিজের সন্তান হয়ে উঠার চেষ্টা করেছে।
খোর্শেদ সোফায় বসে পাঞ্জাবির কোণা দিয়ে চশমা মুছতে মুছতে জিজ্ঞেস করেন,
‘ ক্লাস আছে না তোর? ‘

‘ হ্যা আব্বা। ‘

‘ খেয়ে তৈরি হয়ে নাও মা। সমারোহ বাবা, তুমিও যাও। সকাল থেকে তো পরিশ্রম করলে। খেয়ে নাও তুমিও। ‘

কুহেলী বলে, ‘ আচ্ছা তোমরা একটু রেস্ট নাও হে! আমি তাড়াতাড়ি চলে আসবো। ‘

কুহেলী আর সমারোহ বের হয়ে আসে সে ঘর থেকে। ব্রেকফাস্ট সেরে নিজের ঘরে আসতেই সমারোহ বলে,
‘ আমি তোমাকে দিয়ে আসছি। রেডি হও দ্রুত। ‘

কুহেলী চুপচাপ সমারোহর সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে কোমল কন্ঠে বলে,

‘ ধন্যবাদ। আমাকে এতো সুন্দর সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য। ‘

সমারোহ কুহেলীর দিকে গভীর দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে। ঠোঁট উল্টে হেসে আলতো হাতে কুহেলীর কপালের সামনের চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে চাপা স্বরে বলে,
‘ তুমি খুশি? ‘

‘ খুউব। ‘

‘ তোমার আমার সম্পর্কটা কি ধন্যবাদ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ? ‘

কুহেলী বিব্রতবোধ করে। আমতা আমতা করে বলে,
‘ আমি কিন্তু সেভাবে বলিনি কথাটা। ‘

‘ কোনভাবে বলেছো? ‘

‘ মনে এলো বলে দিলাম। ‘

‘ মনে অন্য কিছু আসে না? ‘

কুহেলী সমারোহর দিকে তাকায় একবার। সমারোহ তাকে দেখেই চলেছে। কুহেলী সমারোহর কাছ থেকে একটু দূরে সরে গিয়ে বলে,
‘ আপনি এমন করেন কেনো হ্যা আমার সাথে? ‘

‘ কেমন করলাম? ‘

‘ এই যে কথা প্যাচাচ্ছেন বারবার । ‘

‘ কই না তো! ‘

‘ তাহলে এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো বলুন। ‘

‘ আমার যে এই মায়া চোখে চোখ রাখলে ফিরে তাকানো বারণ! ‘

চলবে.

আকাশ মোড়ানো চিরকুট
লেখনী – সাইমা ইসলাম প্রীতি

৪৫.

সম্পূর্ণ লাল রঙে সেজেছে আজ কুহেলী। ছেলের বিয়েতে ছিলেন না তো কি হয়েছে, আজ ছেলের বউকে নিজের ইচ্ছে মতো সাজিয়েছেন আনরুবা। সঙ্গ দিয়েছে মাইশা আর শর্মিলা। নয়না বিছানায় বসে তাদের কান্ড দেখে হাসছে। সিঁদুর লাল কাতান শাড়ির সঙ্গে সোনালী সুতোর কাজ করা লাল ব্লাউজ। টকটকে লাল গোপাল মোড়ানো খোঁপা ঢাকা পড়েছে নেটের উরনায়। সাজ বলতে চোখে হালকা কাজল আর ঠোঁট রাঙানো হয়েছে লালে। হাত ভর্তি করে লাল বেলোয়ারের চুড়ি সঙে খানদানি বালা! গলায় আনরুবার বংশ পরম্পরায় পাওয়া সীতাহার আর চোকার, কোমড়ে চন্দ্রহার, নাকে নোলক আর কপাল জুড়ে টিকলি। কুহেলীকে মন ভরে দেখেন আনরুবা। একদম পুতুলের মতোন সুন্দর দেখাচ্ছে তাকে। এই মুখখানি দেখে চোখ ফেরানো বড় দায়। তার ছেলের তো পাগল হওয়ার-ই কথা। আনরুবা কুহেলীর চিবুক ছুঁয়ে চুমু খেয়ে বলেন,

‘ কারো নজর না লাগুক আমার মায়ের উপর। আল্লাহ তোমাকে সব বালা-মুসিবত থেকে রক্ষা করুক। ‘

কুহেলী মুচকি হেসে জরিয়ে ধরে আনরুবাকে। শতসহস্র প্রেম কন্ঠে ঢেলে দিয়ে বলে,

‘ এই মামনিটা পাশে থাকলে কুহেলী সবসময় খুশি থাকবে। ‘

আনরুবা মায়াবী হেসে কুহেলীকে আয়নার দিকে ফিরিয়ে দিয়ে বলেন,
‘ আজ তোকে সত্যিই আমার ছেলের বউ মনে হচ্ছে। আমি যেমন একটা লাল টুকটুকে বউ চাইতাম আমার সমারোহর জন্য ঠিক তেমন। ‘

আনরুবার কথা মাইশার তেমন একটা ভালোলাগে না। আশাহত হয়ে সে কুহেলীর ঘর থেকে বের হয়ে আসে। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সমারোহর ঘরের দিকে যায়। সান্দ্র, হিরণ আর সেঁজুতি সমারোহর ঘর ফুল দিয়ে সাজাতে ব্যস্ত। ঘরে আজ বেশখানিকটা পরিবর্তন এসেছে। সবটা কুহেলীর মনের মতো সাজিয়েছেন সমারোহ। পুরো ঘরের ওয়াল পেইন্টিং থেকে শুরু করে সব আসবাব পার্পল আর হোয়াইট রঙের। কুহেলী আজ সকাল থেকেই নিজের ঘরে। এটা তার জন্য সারপ্রাইজ। মাইশাকে দেখে মুচকি হাসে সান্দ্র, বিনিময়ে সেও হাসে মৃদু। সান্দ্রকে প্রচন্ড রকমের প্রফুল্ল দেখা যাচ্ছে। মাইশা অবাক হয়। সান্দ্র খুশি, তার হবু শ্বশুর-শ্বাশুড়ি খুশি, প্রত্যেকে খুশি তবু সে খুশি হতে পারছে না কেনো? কুহেলীকে সে সমারোহ ভাইয়ার সঙ্গে বিয়ে হওয়ার আগ থেকেই তো চিনে, এমনকি পছন্দও করে। তারপর ও অসহ্য লাগছে। বিরক্তিকর সবকিছু! সত্যি বলতে তার কুহেলীর পাওয়া অবস্থানের প্রতি সকল অসন্তুষ্টি কুহেলীর প্রতি নয়। সবাই কেবল কুহেলীকে নিয়েই মাতামাতি কেনো করছে! সে এখানে আছে, সে ও এ বাড়ির বউ হবে তাকে নিয়ে তো কারো মাথা ব্যাথা নেই। তবে হ্যা, কুহেলী এ বাড়ির বউ হওয়ার আগে ওকে নিয়েও চলতো এমন মাতামাতি। সে আসলে আনরুবা তার প্রিয় সাবুর পাপর, ক্ষীরের পায়েস আর দুধ চা বানাতো। আড্ডা হতো জমিয়ে। সেঁজুতি নয়না তার ধারে কাছে ঘুরঘুর করতো আর সান্দ্র কেবল তাকে সময় দিতো। কিন্তু এখন সব অন্যরকম হয়ে যাচ্ছে। না, হয়ে গেছে। কুহেলী তার ছোট হওয়ার পরও কেনো সে কুহেলীর অস্তিত্বের উপর চাপা পরে যাবে? মাইশার ভয় হয়, সাব-কনশাস মাইন্ড তাকে ভাবায় কুহেলী তার জায়গা নিয়ে নিচ্ছে না তো! তার মাও তাকে এরকমটাই বলেছেন। ভবিষ্যতে গিয়ে যদি তার মায়ের কথাই সত্যি হয়! সে থেকেও না থাকার মতো হয়ে যাবে?

বাড়ি ভর্তি হয়ে গিয়েছে মেহমানে। সমারোহর খুব কাছের কয়েকজন ফ্রেন্ড, কলিগস আর অল্প কিছু আত্মীয়স্বজন এসেছে। অল্প মানুষের মাঝে বউ-ভাতের আয়োজন করা হয়েছে। সকলেই নতুন বউ দেখবে তাই কুহেলীকে একদম বউয়ের মতো করেই সাজানো হয়েছে। বাড়ির সকলে ব্যস্ত যে যার কাজে। কুহেলীর বাবা মাও মেয়ের বউ ভাতের জন্য এতো দূর থেকে এসেছেন। কিন্তু এ সবকিছুই ছিল কুহেলীর অজানা। কুহেলী ঘরে বসে চন্দ্রিমার সঙ্গে গল্প করছিল তখনই দরজায় নক করে সমারোহ বলে,

‘ আসবো? ‘

চন্দ্রিমা সমারোহকে দেখে এক গাল হেসে নাটকীয় ভঙ্গিমায় বলে,
‘ বারণ করলে বুঝি শুনবেন! ‘

সমারোহ ঘরে ঢুকতে ঢুকতে ভ্রুঁ উঁচিয়ে বলে, ‘ বারণ শুনবো কেনো? আমার বউ, সবসময় আপনি আটকে রেখে দিলে হবে! ‘

‘ ওরে বাব্বা! এখন যত দোষ চন্দ্রি ঘোষ নাকি? কুহু তুই থাক বুঝলি দুলাভাইয়ের সঙ্গে কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ড কর। আমি কাবাবের হাড্ডি বরং যাই। ‘

চন্দ্রিমা যেতেই দরজা আটকে দেয় সমারোহ। কুহেলীর ব্যাপক রাগ হয়। মনস্থির করে যখন পরবর্তীতে চন্দ্রিমার সাথে আর দেখা হবে তার চুলগুলো সব টেনেটুনে ছিড়ে ফেলবে। বেয়াদব মেয়ে একটা। সমারোহ কুহেলীর সামনে এসে দাঁড়িয়ে কপাল কুঞ্চিত করে কঠিন সুরে বলে,

‘ এতো সাজা কি খুব জরুরি ছিল? ‘

কুহেলী সমারোহর দিকে তাকিয়ে কোনো জবাব দেয়ার আগেই স্থির হয়ে যায়। মানুষটা রাগ করলে তাকে এতো সুন্দর লাগে! কই আগে তো কখনো খেয়াল করেনি সে? নাকি আজ একান্তই তার বলে মনে হচ্ছে। সমারোহর নাকের ডগা লাল হয়ে রয়েছে, কুহেলীর কামড় বসাতে ইচ্ছা করে সেখানে। হঠাৎ কি উল্টাপাল্টা জিনিস ভাবছে ভেবে দ্রুত সমারোহর কাছ থেকে চোখ সরিয়ে নেয় কুহেলী। সমারোহ অবাক হয়ে বলে,

‘ কি জিজ্ঞেস করলাম আমি? ‘

কুহেলী আমতা-আমতা করে বলে, ‘ মামনি আর শর্মিলা সাজিয়ে দিয়েছে। ‘

‘ ওহ। ‘

সমারোহ কুহেলীর কাছে এসে কুহেলীর মুখের সামনে চলে আসা কতগুলো চুল ঠিক করে দিতে নিলেই কুহেলী ভরকে গিয়ে দ্রুত পেছনে সরে গিয়ে বলে,

‘ আপনি এখন এখানে এসেছেন কেনো? ‘

‘ মানে? ‘
অবাক হয় সমারোহ। কুহেলী মাথা নিচু করেই বলে,

‘ না মানে, সবাই কি মনে করবে! ‘

সমারোহ মুচকি হেসে কুহেলীর পেছনে গিয়ে চুল ঠিক করে দিতে দিতে বলে,

‘ আমি চাই না তুমি সাজার পর আমার আগে অন্য কেউ তোমাকে দেখুক। ‘

‘ কিন্তু মামনি, নয়না আপু, শর্মিলা আর চন্দ্রিমা তো দেখে ফেলেছে? ‘, বাচ্চাদের মতো প্রশ্ন করে কুহেলী। সমারোহ হালকা হেসে বল,

‘ ওরা তো সাজিয়েছে! যাই হোক আরো একটা সারপ্রাইজ বাকি তোমার। রাতে পাবে। ‘

কুহেলী প্রথমে লজ্জা পেলেও এখন খুব খুশি হয়ে যায়। সারপ্রাইজের নাম শুনলে পাগল হয়ে উঠা কুহেলীকে সমারোহর কাছে বাচ্চা বাচ্চা মনে হয়।

‘ আপনি এতো কিছু করে ফেললেন আমাকে আগে বললেন না কেনো? ‘

‘ বললে সারপ্রাইজ হতো না। ‘

‘ থ্যাংকস। ‘

সমারোহর মুখ চুপসে যায় কুহেলীর কথায়। শীতল কন্ঠে সে বলে,
‘ থ্যাংকস দিতে হয় দূরের মানুষকে। তোমার বাবা মা এখন আমার ও বাবা মা। নিজের বাবা-মার জন্য এতটুকু করতেই পারি। ‘

কুহেলী বুঝতে পারে সমারোহ তার কথায় কষ্ট পেয়েছেন। কুহেলী ঠোঁট উল্টে বাচ্চাদের মতো করে বলে, ‘ ভুল হয়ে গেছে ফিরিয়ে নিলাম থ্যাংকস। ‘

সমারোহ কুহেলীর দিকে ঝুঁকে বলে, ‘ আহা! শুধু ফিরিয়ে নিলেই হয়ে গেল? আর আমার যে খারাপ লাগলো তার বেলা? ‘

কুহেলী সমারোহকে কিছু বলতে যাবে তখনই খেয়াল করে সমারোহ তার চোখের গভীরে হারিয়ে রয়েছে। এক মুহূর্তের জন্য কুহেলীও অন্যমনস্ক হয়ে পরে। সমারোহ কুহেলীর কপালে আলতো করে চুমু খেতেই ধ্যান ফিরে তার। লাজুকলতার ন্যায় মাথা ঝুকিঁয়ে নিতেই সমারোহ বলে,

‘ কুহেলী! তোমার চোখদুটো হিমালয়ের শুভ্র বরফের ন্যায়। এ চোখ না দেখলে আমার জানাই হতো না যে হিমালয়েও মরিচিকা থাকতে পারে। আর ওই মরিচিকার প্রথম এবং শেষ শিকার হয়তো আমি। ‘

কুহেলী লজ্জা পেয়ে সমারোহর কাছ থেকে সরে যেতে চাইলে সমারোহ কুহেলীর আরো কাছে এসে কুহেলীর কানের সাথে নাক ঘষেঁ মাদকতা মেশানো ঢিমে সুরে বলে,
‘ তোমার গলার দাগটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে ম্যাডাম। ‘

‘ কিহ! ‘

কুহেলীর মুখ ফসকে বের হয়ে আসে কথাটা। সমারোহ হালকা হেসে সরে আসে কুহেলীর কাছ থেকে। কুহেলী আয়নার দিকে তাকিয়ে দেখে সমারোহর দেয়া কামড়ের দাগটা এখনো যায়নি। কুহেলী সমারোহর দিকে তাকাতেই চোরের মতো ঘর থেকে কেটে পরে সে। কুহেলী কি করবে ভেবে না পেয়ে সে জায়গায় ইচ্ছে মতো ফাউন্ডেশন লাগিয়ে নেয়। তারপর আয়নার সামনে বসেই মৃদু হাসে সমারোহর কথা ভেবে। চন্দ্রিমা তখন আরশকে কুহেলীর ঘরে নিয়ে আসে। আরশ কুহেলীর সঙ্গে একাকী কথা বলতে চায় বলে সে চলে যায়। চন্দ্রিমা চলে গেলে আরশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে হঠাৎ বলে উঠে,

‘ কেমন আছো কুহেলী? ‘

‘ ভালো ভাইয়া। আপনি কেমন আছেন বলুন? ‘

‘ একসময় হয়তো ভালো থাকবো। ‘

কুহেলী আরশের কথার মর্ম ঠাওর করতে পারে না। বিস্ময়ের চোখে আরশের দিকে তাকায়। আরশ মৃদু হাসি ফুটিয়ে তোলে ঠোঁট জুড়ে। এই হাসি যেন অসহায়ত্বের ভাষা শিখায়। আরশ বলে,

‘ সময়টা খারাপ। বায় দ্যা ওয়ে কুহেলী ইউ লুকিং সো প্রিটি। ‘

‘ থ্যাংকস। ‘

আরশ চুপ হয়ে যায়। কুহেলী আরশের চাহনি দেখেই বুঝতে পারে সে অন্য কিছু বলতে চায়। কুহেলী শান্ত গলায় বলে,

‘ ভাইয়া আপনি কি কিছু বলতে চাইছেন? আপনি বলতে পারেন, আমি কিছু মনে করবো না ‘

আরশ খুব কনফিডেন্স নিয়ে বলে,
‘ আমি যেটা বলবো সেটা বলা উচিত নয়। কিন্তু না বললে নিজের প্রতি অন্যায় করা হবে। তাই বলছি, আমি তোমাকে ভালোবাসি কুহেলী। খুব বেশি ভালোবাসি। ঠিক যতটা ভালোবাসলে নিজের সবকিছু, এমনকি নিজের অস্তিত্বকেও ভুলে যাওয়া যায় ঠিক ততটা ভালোবাসি। তুমি বিবাহিত হওয়ার পরও তোমাকে কথাটা বলছি কারণ আমি শুধু তোমাকে তোমার প্রতি আমার ফিলিংসটুকু বলেছি। কাউকে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসি বলাটা তো আর দোষের না! আশা করি আমাকে ভুল বুঝবে না। আমি তোমাকে নিজের ইচ্ছেই ভালোবেসেছি। তোমার ভালোবাসা পাওয়ার আশা আমি রাখি না। তুৃমি আমার চোখে দেখা সবচেয়ে পবিত্র মানুষ। তোমার পরবর্তী জীবন অনেক বেশি সুন্দর কাটুক। এন্ড ইউ হেভ টু বি এ বেস্ট অনেস্ট ডক্টর। আমি দোয়া করি তুমি সমারোহ ভাইয়ার সঙ্গে খুব সুখী হও, স্বামী সোহাগি হও। আর হ্যা, আমি অবশ্যই চেষ্টা করবো মুভ অন করার। তোমাকে ভালোবাসে নাহয় নাই পেলাম, আমাকে একজন শুভাকাঙ্ক্ষী এবং ভাইয়ের মতো সবসময় পাশে পাবে। ‘

কুহেলী থ’মেরে থাকে আরশের কথাগুলো শুনে। কিছুক্ষণ চুপ থেকে সেও মুচকি হাসে। কুহেলীও কোনো না কোনো ভাবে বুঝতে পেরেছিল আরশের ভালোবাসা। তাই সে সবসময় ইচ্ছা করেই এরিয়ে চলতো আরশকে। কিন্তু এখন ভালো লাগছে আরশের মুভ অন করার কথা শুনে। কুহেলী আরশের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট ভর্তি হাসি নিয়ে বলে,

‘ আপনি আমার চেয়েও ভালো কাউকে জীবন সঙ্গিনী হিসাবে পাবেন ভাইয়া, যে আপনাকে সবটুকু ভুলিয়ে দিবে। ছোট বোনের দোয়া রইলো আপনার জন্য। ‘

আরশ হেসে ঘর থেকে বের হতে নিলেই কুহেলী তাকে পিছু ডেকে বলে,

‘ ভাইয়া একটা কথা ছিল। আসলে কিছু জানার ছিল আমার। ‘

‘ হ্যা বলো? ‘

আরশের দিকে তাকিয়ে আমতা-আমতা করে কুহেলী বলে,

‘ ভা’ভাইয়া আ’আপনি আমার বইয়ের ভাঁজে চিরকুট রেখেছিলেন কোনোদিন? ‘

আরশ অবাক হয়ে কপাল কুঁচকে বলে, ‘ না তো। কেনো? ‘

এতোদিনের দেয়া চিঠিগুলো আরশের লিখা নয় কুহেলী জানতো। তবুও শিউর হয়ে নিল। অনেকটা খুশিও হয়েছে বটে। আরশকে বিষয়টা বুঝতে না দিয়ে কুহেলী কথা ঘুরিয়ে নিয়ে বলে, ‘ না এমনি। ‘

আরশ আর কোনো কথা না বলে সোজা বের হয়ে গেল কুহেলীর ঘর থেকে। সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে এসে সমারোহর কাছে গিয়ে তাকে ধন্যবাদ জানায় একবার। তারপর সে বাড়ি থেকে বের হয়ে আসে। সমারোহই তাকে বলেছে মনের কথা চেপে না রেখে যাকে বলার তাকে বলে দিতে। এতে কষ্ট কমবে। সত্যিই আজ একদম ফাঁকা লাগছে নিজেকে। ভেতর থেকে যেন একটা বোঝা কমে গেছে। প্রেমে ব্যার্থ হওয়ার যন্ত্রণা অসহ্য রকম। সে কষ্ট তাকে সারাজীবন পোড়াবে, হয়তো সে কোনোদিন কুহেলীর জায়গা কাউকে দিতে পারবে না। তবে কোথাও একটা প্রশান্তি কাজ করছে। ভালোবাসতে সবাই পারে। কজন পারে নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে অন্যকারো হতে দেখেও ভালোবাসি বলতে! সে পেরেছে। সে কুহেলীকে ভালোবাসে। সারাজীবন বাসবে। তবে আড়ালে। আরশ সমারোহর বাড়ি থেকে বের হয়ে ঢাকার জন্য রওনা হয়। কুহেলীর জন্য নিজের বাড়ি ছেড়ে চট্টগ্রাম আসা আর আজ কুহেলীকে মনে বন্ধী করেই ফিরে যাওয়া। প্রেমটা তো আর সবার হয় না। কিন্তু ভালোবাসতে জানে সকলেই।

চলবে.