আজও বৃষ্টি নামুক পর্ব-১০+১১

0
270

#আজও_বৃষ্টি_নামুক❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ১০
_________________

ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি ড্রাইভ করছে আকিব। আর তাঁর পাশেই বসে আছে অপূর্ব। চোখে মুখে স্পষ্ট রাগের ছাপ। আকিব গাড়ি ড্রাইভ করতে করতেই জোরে জোরে নিশ্বাস ফেলে বলে উঠলো অপূর্বকে,

‘ ভাই আপনায় একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?’

অপূর্ব নিজেকে সামলালো নিজের রাগটাকে দূরে সরিয়ে রেখে শান্ত গলায় বলে উঠল,

‘ হুম বলো,

আকিব একপলক অপূর্বের দিকে তাকালো তারপর বললো,

‘ আপনার কাল সত্যি ভয় লাগে নি ভাই ওইভাবে বম সমেত গাড়ি নিয়ে ছুট লাগালেন?’

অপূর্ব গাড়ির সিটে গা এলিয়ে দিল তারপর শান্ত গলাতেই বলতে লাগলো আবার,

‘ তাহলে কি করতাম আকিব ওইসময় ওখানে বাচ্চারা স্কুল থেকে বাড়ি ফিরতো তাছাড়া আশেপাশেও লোকজন ছিল আমি কি করে তাদের সামনে বিপদ রেখে পালিয়ে আসতাম। যতই হোক যা হচ্ছিল তাতে তাদের তো কোনো দোষ ছিল না।’

‘ সত্যি ভাই আমার মধ্যে যদি আপনার মতো একটুখানি না হোক আধা ইঞ্চি সাহস থাকতো আমার জীবনটা ধন্য হয়ে যেত।’

হাসলো অপূর্ব। অপূর্বের হাসি দেখে বললো আকিব,

‘ আপনি হাসছেন ভাই সত্যি বলছি আমি যদি আপনার জায়গায় থাকতাম না জানি কি করতাম?’

‘ বাদ দেও কিছু তো হয়নি আর।’

‘ ভাই এখন কি সোজা বাড়ি যাবেন?’

প্রতি উওরে আকিব শান্ত দৃষ্টি রেখে শীতল কন্ঠে বললো,

‘ হুম মাকে কথা দিয়েছি রাতে বাসায় ফিরবো।’

‘ আচ্ছা ভাই।’

বলেই গাড়িতে ছুট লাগালো আকিব। আর অপূর্বও বেশি না ভেবে চোখ দুটো বুঝে শুয়ে রইলো গাড়ির সিটে। যতক্ষণ পর্যন্ত আসল কালপিটকে ধরতে না পারছে ততক্ষণ যেন শান্তি মিলছে না অপূর্বের।’

____

ঘড়িতে তখন রাত ৯ঃ০০টার কাটায় ছুঁই ছুঁই বিছানায় শুয়ে আছে প্রিয়তা। শরীরটা আগের চেয়ে বেশ ভালো লাগছে তাঁর। প্রিয়তা শোয়া থেকে উঠে বসলো এরই মাঝে হাতে গরম গরম আদা দিয়ে রং চা বানিয়ে রুমের ভিতর আসলো আরোহী। চায়ের কাঁপ হাতে মুচকি হেঁসে প্রিয়তার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলতে লাগলো সে,

‘ এখন কেমন লাগছে শরীর?’

উওরে প্রিয়তাও মুচকি হেঁসে বললো,

‘ হুম ভালো আপু?’

হাসলো আরোহী তারপর প্রিয়তার দিকে চায়ের কাঁপটা এগিয়ে দিয়ে বললো,

‘ এটা খেয়ে নেও ভালো লাগবে।’

প্রিয়তা চায়ের কাঁপটার দিকে এক পলক তাকিয়ে বললো,

‘ এখন চা খাবো,

‘ হুম খাও তুমি তো রুমে ঢুকেই শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লে এখন এটা খাও তারপর কতক্ষণ পর ডিনার করবো আমরা।’

প্রিয়তা চায়ের কাঁপটা নিলো সারাদিন ঘুমাতে ঘুমাতে মাথাটা প্রচুর ধরেছে তাঁর। প্রিয়তা চায়ের কাঁপে চুমুক দিতেই আরোহী প্রশ্ন করলো,

‘ এবার বলো তোমার নাম কি?’

প্রিয়তা চায়ের কাঁপটা থেকে তাঁর ঠোঁট সরিয়ে নীরব স্বরে আরোহীর দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,

‘ হুম প্রিয়তা।’

‘ প্রিয়তা সুন্দর নাম। আমার নাম আরোহী অর্নাস তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী আর তুমি?’

‘ আমি ভর্তি হবো ফাস্ট ইয়ারে।’

‘ ওহ,

‘ হুম।’

নীরব হলো দুজন। আর কিছু বললো না আরোহী। এই মেয়েটার সাথে অপূর্ব ভাইয়ের ঠিক কি সম্পর্ক সেটা জানতে মন চাইছে তাঁর কিন্তু আকিব পই পই করে বলে দিয়েছে অপূর্ব রিলেটেড কোনো প্রশ্ন এই মেয়েটাকে না করতে। সাথে মেয়েটার ব্যক্তিগত কোনো বিষয় নিয়ও প্রশ্ন না তুলতে।আরোহী দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। বললো,

‘ তুমি চা খাও আমি একটু আসছি।’

‘ আচ্ছা।’

বলেই চলে গেলো আরোহী। আর প্রিয়তা চুপচাপ বসে রইলো। আরোহী মেয়েটা যথেষ্ট ভালো। কিন্তু যতই ভালো হোক প্রিয়তা এইভাবে কারো বাড়িতে থাকতে পারে না। প্রিয়তা ভেবে নিয়েছে দু’দিনের বেশি এখানে থাকবে না। শরীরটা হাল্কা একটু সুস্থ হলেই চলে যাবে সে। তারপর মুক্ত পাখির মতো নিজের জীবন নিজের মতো চালাবে, নিজেকে নিজের মতো করে গুছিয়ে নেবে সে। প্রিয়তা জানালার দিকে তাকালো, আকাশটা মেঘলাময়, চাঁদ দেখা যাচ্ছে না এখান থেকে, তাঁরাও নেই কোনো চিহ্ন। প্রিয়তা কি ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেললো আনমনেই বলে উঠল,

‘ আপনি কি সত্যি আবার আসবেন অপূর্ব আমার সাথে দেখা করতে। আপনি যে বড্ড ঋণী করলেন আমায়। আপনায় ছোট্ট ধন্যবাদ দেওয়াও তো হলো না। সুযোগ কি হবে আপনায় সরাসরি ধন্যবাদ দেওয়ার।’

উওর মিললো না কোনো। প্রিয়তা রাতের আকাশটার দিকে তাকিয়ে রইল। অভিযোগের শেষ নেই তাঁর। মাঝে মাঝে তো প্রিয়তা ভেবে পায় না এই অভিযোগের অবসান ঘটবে কোথায়?’

____

ডিনার সেরে ছাঁদের উদ্দেশ্যে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছেন অপূর্বের বাবা। আজ খাবার টেবিলে অপূর্বের সাথে তেমন কোনো ঠোঁট কাটাকাটি কথা বার্তা হয় নি তাঁর। অপূর্বের বাবা তো ভেবেই নিয়ে তাঁর ছেলে হয়তো ভালো হয়ে গেছে আর যাইহোক নির্লজ্জের মতো কথা আর বলবে না তাঁর সাথে। এই রকম নানা কিছু ভাবতে ভাবতে সিঁড়ি বেয়ে ছাঁদের উপর উঠলো অপূর্বের বাবা। প্রায় রাতেই রাতের জোৎসা ভরা আকাশটা দেখতে ছাঁদে ওঠেন উনি। অপূর্বদের বাড়ির ছাঁদে রেলিং নেই কোনো। ছাঁদের কতদূর এগোতেই হঠাৎ ছাঁদের কর্নারের দিকটায় পা ঝুলিয়ে অপূর্বকে বসে থাকতে দেখে চরম অবাক হলো অপূর্বের বাবা। একবার ভাবলো আর সামনে এগোবে না যদি ডিনারের বক বকানি এখন দিয়ে বসে তখন যদিও এখানে তেমন কেউ নেই তারপরও। যদিও মনে মনে ভাবুক তাঁর ছেলে ভালো হয়ে গেছে অপূর্বের বাবা তো জানে তাঁর ছেলে আসলে ভালো হওয়ার নয়। অপূর্বের বাবা ফিরে যাওয়ার জন্য পা রাখতেই কোকের বোতলে এক চুমুক দিয়ে উল্টো দিকে তাকিয়ে থেকেই বলে উঠল অপূর্ব,

‘ ভাবাভাবি শেষ হলে পাশে এসে বসা হোক কথা আছে কিছু।’

অপূর্বের বাবা থেমে গেলেন। অপূর্বের দিকে বিস্ময়ের চোখে তাকিয়ে রইলেন তিনি। তাঁর সাথে অপূর্বের কথা বাবা কি এমন কথা বলবে অপূর্ব কে জানে।’

অপূর্বের বাবা এগিয়ে গেলেন। তারপর পায়ের জুতো খুলে ছাইডে রেখে পা ঝুলিয়ে বসে পড়লো অপূর্বের পাশে। তারপর বললো,

‘ আমার সাথে কথা কি এমন কথা বলবে তুমি?’

‘ কেন তোমার সাথে আমার কথা থাকতে পারে না নাকি।’

‘ না তেমন ব্যাপার নয় যাইহোক বলো কি বলবে?’

অপূর্ব কোকের বোতলে আরেক চুমুক দিলো। বললো,

‘ খাবে?’

‘ না মাত্র ডিনার সারলাম,

‘ তাতে কি হয়েছে?’

বলেই পাশ থেকে আরেকটা কোকের বোতল বাপের দিকে এগিয়ে দিলো অপূর্ব। অপূর্বের বাবাও নিলো। আজ ছেলের হাবভাব কেমন যেন উল্টোপাল্টা লাগছে তাঁর কাছে। নিশ্চয়ই কোনো ঘাপলা আছে।’

অপূর্বের বাবা কোকের বোতলটা তাঁর পাশে রেখে বললো,

‘ এখন বলো কি বলবে আমায়?’

অপূর্ব তাকালো বাবার মুখের দিকে তারপর বললো,

‘ বুঝলে বাবা আমি অনেক ভেবে দেখলাম আসলে তোমার সাথে আমি যেভাবে কথা বলি সেটা আসলে আমার সেভাবে বলা ঠিক হচ্ছে না যতই হোক আমি তোমার ছেলে। তাই আমি ভেবেছি আজ থেকে আমি ভালো হয়ে যাবো তোমার সাথে আর উল্টো পাল্টা কথা বলবো না।’

অপূর্বের কথা শুনে চরম অবাকের স্বরে বললো অপূর্বের বাবা,

‘ তুমি সত্যি বলছো?’

‘ হুম।’

‘ আলহামদুলিল্লাহ ভালো হয়েছে। এই না হলে আমার ছেলের মতো কথা।’

চোখ মুখ কুঁচকে ফেললো অপূর্ব। বললো,

‘ তোমার ছেলের মতো কথা মানে এতদিন আমি তোমার ছেলে ছিলাম না।’

‘ না তেমন নয় বিষয়টা।’

‘ তেমন নয় তো কেমন ছাব ছাব বলো বাবা আমি তোমার ছেলে না হলে কার ছেলে।’

‘ আরে আমি তা কখন বললাম,

‘ কি বলো নি তুমি আমি কিন্তু সব জানি বাবা।’

অপূর্বের কথা শুনে ভ্রু-জোড়া কুঁচকে বিস্মিত কন্ঠে বলে উঠল অপূর্বের বাবা,

‘ কি জানো তুমি?’

‘ এই যে আমার মা তোমার জীবনে আসার আগেও তোমার জীবনে আরো তিন তিনটে মেয়ে ছিল অবশ্য তিনটে বললে কম হবে আরো বেশি ছিল,

ছেলের কথা শুনে চোখ বড় বড় করে বললেন অপূর্বের বাবা,

‘ কি তোমার মাথা গেছে অপূর্ব আমার জীবন তোমার মা ব্যতীত আর কোনো নারী ছিল না। তোমার মাকেই এ জীবন ভালোবেসেছি আমি আর তাঁকেই বিয়ে করেছি।’

‘ সে তো আগের মেয়েগুলো তোমায় পাত্তা দিচ্ছিল না বলে আমার মাকে ধরে বেঁধে বিয়ে করেছো কি ভেবেছো আমি জানি না কিছু।’

এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে অপূর্বের কথা শুনে অপূর্বের বাবা রাগ করবে নাকি করবে না তাই বুঝচ্ছে না। এই তাঁর ছেলে ভালো হওয়ার নমুনা। অপূর্বের বাবা অপূর্বের দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ নাম বলো তুমি শুধু একজনের নাম বলে দেখাও। মিথ্যে বলার জায়গা পাও না আর কে বলেছে তোমার মাকে ধরে বেঁধে বিয়ে করেছি আমি। এসব ফাও কথা পাচ্ছো কোথায় তুমি?’

‘ ফাও কথা বলছি আমি। সত্যি করে বলো বাবা তুমি সাবানা আন্টির সেলাই মেশিনের কাজ দেখে তাঁর প্রেমে পড়ো নি, মৌসুমি আন্টির খাইরুল্লো ছবিতে তার লম্বা লম্বা চুল দেখে বলো নি তাঁকে তোমার চাই, তারপর ববিতা, পূর্নিমা, সাবনূর কার প্রেমে পড়ো নি বলো আমায়। যখন যাকে দেখেছো তখন তাঁর প্রেমে পড়েছো।’

ছেলের কথা শুনে মুখে লাগাম লাগার মতো অবস্থা অপূর্বের বাবার। এসব কি বলছে তাঁর ছেলে। অপূর্বের বাবা নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,

‘ আব্বে হতছ্যারা এরা সবাই তো নাইকা।’

‘ তো নাইকা হইছে তো কি হইছে নাইকা হলেই তাদের প্রেমে পড়তে হবে কেন তোমায়।’

‘ এই আজেবাজে কথা তোমায় কে বলেছে শুনি।’

‘ কে আবার বলবে স্টোর রুম থেকে তোমার একটা পুরনো ডাইরি পেয়েছিলাম তাঁর মধ্যেই এদের ছবি লাগানো দেখেছি আমি ছিঃ বাবা ছিঃ এত এত মেয়েদের প্রেমে পড়েছো তুমি। তুমি আমার বাবা হয়ে কি না। আমি আজ বুঝলাম তুমি আমার মাকে ভালোবাসো না কেন?’

অপূর্বের বাবার মাথা ধরে গেছে চোখে মুখে কি পরিমাণ রাগের ছাপ ভেসে উঠেছে তা বলে প্রকাশ করা যাবে না অপূর্বের বাবা তক্ষৎনাত বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো তারপর বললো,

‘ তোমার মতো ছেলের পাশে আধ ঘন্টা তো দূরে থাক পাঁচ মিনিটও বসা যায় না। আর কে বলেছে আমি তোমার মাকে ভালোবাসি না আরে তুমি কি বুঝবেে ভালোবাসার মানে তুমি আজ পর্যন্ত কোনো মেয়েকে আই লাভ ইউ বলেছো কোনো মেয়েকে বিয়ে করার স্বপ্ন দেখেছো আবার আসছো আমায় জ্ঞান দিতে আমি না হয় তোমার মায়ের আগে সাবানা, শাবনূর, মৌসুমি, ববিতা এদের প্রেমে পড়েছিলাম তুমি কার প্রেমে পড়েছো। আজ পর্যন্ত কোনো মেয়েকে সামনে এনে বলতে পেরেছো বাবা আমি এই মেয়েকে ভালোবাসি এই মেয়েকে বিয়ে করতে চাই। অভদ্র, ইডিয়েট,গর্দভ ছেলে কোথাকার। থাকো তুমি আমি গেলাম।’

বলেই জুতো রেখেই চলে যেতে লাগলো অপূর্বের বাবা। যা দেখে অপূর্ব বললো,

‘ আরে জুতা রেখে কোথায় যাচ্ছো জুতাটা তো নিয়ে যাও, খালি পায়ে গেলে রুমে ময়লা পড়বে তো।’

অপূর্বের বাবা ফিরে এসে জুতাটা পায়ে পড়ে চোখ রাঙিয়ে বললো আবার,

‘ অভদ্র ছেলে একটা।’

উওরে অপূর্বও দাঁত কেলানি হাসি দিয়ে বললো,

‘ আই নো।’

অপূর্বের বাবা চলে গেল। না তাঁর ছেলে শোধরানোর নয়। ছিঃ ছিঃ কোন যুগে কাকে পছন্দ করতো তা নিয়ে আজ কথা শোনাচ্ছে তাও কি না তাঁর নিজের ছেলে।’

এদিকে অপূর্ব,

বাবা যেতেই কোকের বোতলটার দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ আজ তুই সিঙ্গেল বলে বাবা তোকে কথা শোনালো অপূর্ব। আই প্রাউড অফ ইউ।’

বলেই হেঁসে ফেললো অপূর্ব এই বাবাকে জ্বালাতে না তাঁর বেশ লাগে। সত্যি অবুঝ বাবা তাঁর।’

হঠাৎই সকালের সেই লাল বেনারিস শাড়ি পরিধিত প্রিয়তা পরে আবার গোলাপি চুড়িদার পড়া প্রিয়তার মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠলো অপূর্বের। মেয়েটার সাথে বাস থেকে ঘটে যাওয়া পর পর ঘটনাগুলো মনে করলো তাঁর। আচমকাই কি হলো অপূর্ব আক্ষেপের সঙ্গে বলে উঠল,

‘ ইস! মেয়েটার নামটাই তো জানা হলো না কি নাম ছিল মেয়েটার? বাস, গুপ্তচর, আরোহীর বাড়ি পুরো একটা দিন একটা রাত সঙ্গে ছিল হেল্প করলো অথচ মেয়েটার নামটাই জানা হলো না।’

অপূর্ব আকাশ পথে তাকালো তারপর আনমনেই বলে উঠল,

‘ তোমার নামটা কি ছিল মেয়ে?’

এই প্রথম কোনো কাজের জন্য বড্ড আফসোস হচ্ছে অপূর্বের। এত কথা বললো অথচ মেয়েটার নামটা জিজ্ঞেস করতেই ভুলে গেল অপূর্ব। ইস! এই আফসোস নিয়ে রাতে যেন ঘুমানো হবে না অপূর্বের।’

#চলবে……

#আজও_বৃষ্টি_নামুক❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ১১
_________________

রাতের অন্ধকারে ঘেরা চারপাশ। গাছের পাতা নড়ছে আনমনে আকাশে বিদুৎ চমকাচ্ছে বারে বারে। যেন মেঘ কাঁপিয়ে আকাশ বেয়ে ঘন জোরে বৃষ্টি নামবে এমন। অপূর্ব এখনও আকাশ পথে তাকিয়ে আছে। শহর জুড়ে রাতের নিস্তব্ধতার ছোঁয়া, অপূর্ব আকাশের অবস্থা দেখে বেশ বুঝতে পেরেছে আজ বৃষ্টি নামবে আবার। বৃষ্টি, এই বৃষ্টি কিছু একটা মনে করায় অপূর্বকে। কখনো সেইভাবে বৃষ্টি নিয়ে ভাবা হয় নি অপূর্বের। কিন্তু হুট করেই আজ কেন যেন বৃষ্টি নিয়ে ভাবতে ভালো লাগছে তার। অপূর্ব কি ভেবে যেন তার চোখ বুঝিয়ে নিলো, রাতের আকাশে তাঁরা ছিল না কোনো। দূর আকাশ বেয়ে ঘন কালো মেঘের আড়ালে শুধু লুকিয়ে ছিল চাঁদ মামা। অপূর্ব চোখ বুঝে কিছু একটা ভাবতে লাগলো,

ঠিক কালকে কথা। আজকের এমন এই সময় সে বাসে ছিল বাস চলতে ছিল তার পাশে বসা ছিল এক কালো বোরকা পরিধিত মেয়ে। সে মেয়ের চোখে কি অদ্ভুত মায়া। ভয়ের চোটে তার হাতটা চেপে ধরে সাহায্য চেয়েছিল মেয়েটি। কি শীতল ভেজা কন্ঠ মেয়েটার। মায়া মায়া চোখ দুটোর কথা আবার মনে উঠলো অপূর্বের। সঙ্গে সঙ্গে অপূর্ব চোখ খুলে ফেললো না প্রিয়তার ওই চোখ দুটো নিয়ে বেশি ভাবতে পারছে না অপূর্ব। অপূর্ব আজও বুঝলো না প্রিয়তার ওই চোখ দুটোতে কি আছে যে সে বেশিক্ষণ ভাবতে পারছে না। কই এর আগেও তো আরো কত মেয়ের সাথে দেখা সাক্ষাৎ হলো অপূর্বের তখন তো তাদের চোখ দেখে এমন কিছু হয় নি। অপূর্ব আবারও আফসোসের স্বরে বললো,

‘ ইস তোমার নামটা যদি এক বার জিজ্ঞেস করতাম মেয়ে।’

এমন সময় অপূর্বের ফোনটা বেজে উঠলো তুহিন ফোন করেছে। অপূর্ব তার হাতের কোকের বোতলটায় আবার চুমুক দিলো। তারপর ফোনটা রিসিভ করে বললো,

‘ হুম বলো তুহিন?’

প্রতি উওরে অপরপ্রান্তে থাকা তুহিন বলে উঠল,

‘ ভাই লোকটার হদিস পাওয়া গেছে আমার লোকেরা ওকে বাগেরহাট বাসস্ট্যান্ড থেকে ধরে ফেলেছে। সকালের আগেই হয়তো ঢাকা পৌঁছে যাবে।’

তুহিনের কথা শুনে তেমন কোনো রিয়েকশন দিলো না অপূর্ব। শুধু বললো,

‘ গুড। ওকে আমাদের পুরনো সেই বাংলোতে নিয়ে যাও তুহিন। তারপর ভালো মতো সেবাযত্ন করো শুধু নামটা জিজ্ঞেস করো। না পারলে দুদিন পর আমি দেখছি।’

‘ আচ্ছা ভাই।’

উওরে আর কিছু না বলে ফোনটা কেটে দিল অপূর্ব। জোরে নিশ্বাস ফেলে আবারও আকাশ পথে তাকালো অপূর্ব। এরই মাঝে চোখের কোনায় এক ফোটা বৃষ্টির পানি ছিটকে এসে পড়লো অপূর্বের। অপূর্ব উঠলো না বৃষ্টি, এই বৃষ্টিকে অপূর্ব ঠিক কতটা ভালোবাসে জানা নেই তার। এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে অপূর্বের কাছে এই বৃষ্টির মানে হলো এক অদ্ভুত অনুভূতি। এমনই এক অনুভূতি যা এর আগে কখনো ফিল করে নি অপূর্ব।’

কিছুক্ষনের মাঝেই ধরনী জুড়ে ঝিরিঝিরি শব্দ করে বৃষ্টি পড়তে লাগলো। বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছিল সব কিছু। অপূর্বদের বাড়ির ছাঁদ, ছাঁদের এক কর্নার জুড়ে থাকা ফুলের বাগান। এই বাগানটা অপূর্ব মায়ের তৈরি বেশ যত্ন নিয়ে গড়েছে এগুলো। অপূর্বদের বাড়ির চারপাশ জুড়েই রয়েছে বিভিন্ন ফুলের ছড়াছড়ি। বাড়ির ভিতর ঢোকায় সময় সেই ফুলের সুভাষ প্রায় সবার নাকেই আসে।’

অপূর্ব ভিজে যাচ্ছে বৃষ্টি নামক আল্লাহর দেওয়া প্রাকৃতিক সুন্দর সৃষ্টি তাকে চরমভাবে ভিজিয়ে দিচ্ছি। অপূর্বের গায়ে জড়ানো কালো শার্টটাকে ভিজিয়ে শরীরের সাথে লেপ্টে দিচ্ছে। চুল ভিজিয়ে নামিয়ে দিচ্ছে কপালে। ফর্সা শরীরটায় বৃষ্টির ছোঁয়া পেয়ে আরো যেন জ্বল জ্বল করছে। ইস! বৃষ্টিতে ভেজা এই কালো শার্ট পরিধিত সুদর্শন যুবককে মারাত্মক সুন্দর লাগছে যেন। নির্ঘাত এই অবস্থায় তাকে কোনো মেয়ে দেখলে প্রেমে পড়তে বাধ্য হতো। অপূর্ব বিড় বিড় করে বলে উঠল,

‘ সেদিন বৃষ্টির ভিড়ে আসা পাশে বসা মেয়েটি
আজ আমায় এত জ্বালাচ্ছে কেন?’

….
বৃষ্টির ঝিরিঝিরি শব্দ কানে বাজতেই বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো প্রিয়তা। বৃষ্টি প্রিয়তার ভীষণ পছন্দের। এই মুহূর্তে বৃষ্টিতে ভিজতে ভীষণভাবে ইচ্ছে করছে তার কিন্তু শরীরের যা অবস্থা তাতে বৃষ্টিতে ভিজলে তাকে আর খুঁজে পাওয়া লাগবে না। প্রিয়তা বেলকনির দিকে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো কিন্তু পরক্ষণেই কি ভেবে যেন গেল না। আকাশে বিদুৎ চমকাচ্ছে। প্রিয়তা ডিনার সেরে মাত্রই রুমে বসেছিল। আরোহীও এসেছিল সঙ্গে কিছুক্ষন গল্প করে চলে গেছে তার রুমে। প্রিয়তা নীরবেই চুপটি করে কাঁথা জড়িয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো। চোখ বুঝিয়ে নিলো নিমিষেই সঙ্গে সঙ্গে অপূর্বের ফেসটা ভাসলো তার সামনে। আনমনেই হাসলো প্রিয়তা তবে চোখ খোলে নি অভাবেই ঘুমিয়ে পড়লো আনমনে। তবে বিড় বিড় করে বলেছে শুধু,

‘ আপনি হলে আমার জীবনের প্রথম সেই পুরুষ অপূর্ব। যাকে প্রথম দেখায় আমার ভালো লেগেছে। ঝড় উঠেছে বুকের মাঝে, বৃষ্টি ঝড়ছে বারে বারে। তবে বেশি ভাববেন না এই ভালো লাগা কোনোদিনও প্রকাশ করার মতো মেয়ে প্রিয়তা নয়। আর হয়তো আমাদের দেখাই হবে না ভালো থাকবেন অপূর্ব।’

তপ্ত নিশ্বাস ফেললো প্রিয়তা তারপর বেশি না ভেবেই ঘুমের দেশে পাড়ি জমালো সে।’

___

ঘড়ির কাঁটায় রাত এগারোটা ছাড়িয়েছে তখন। এখনও ঝিরিঝিরি শব্দের বৃষ্টিরা ভিজিয়ে দিচ্ছে অপূর্বকে। অপূর্ব এখনও বসে আছে চুপচাপ। কেন যেন এই মুহূর্তে উঠে নিজ রুমে যেতে ইচ্ছে করছে না তার। এমন সময় হঠাৎই ছাতা মাথায় তার দিকে হন্তদন্ত হয়ে এগিয়ে আসলো অয়ন। বিস্ময়কর কন্ঠ নিয়ে বললো,

‘ ভাই, এতরাতে বৃষ্টিতে ভিজচ্ছিস কেন ঠান্ডা লেগে যাবে তো?’

অপূর্ব ফিরে তাকালো অয়নের দিকে। বললো,

‘ তুই এখানে?’

‘ রুমে চল ভাই, বৃষ্টিতে ভিজে কি অবস্থা করেছিস নিজের চল জলদি।’

অপূর্ব শুনলো অয়নের কথা। বেশি কিছু না বলেই আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ালো। অপূর্ব দাঁড়াতেই অয়ন বলে উঠল,

‘ এভাবে কেউ বৃষ্টি ভেঁজে ভাই, বাবা না বললে তো জানতামও না।’

প্রতি উওরে অপূর্ব আর কিছু বললো না শুধু নিশ্চুপে ছোট ভাইটার মুখপানে একপলক তাকালো সে।’

—-
ঘড়ির কাঁটা সুর সুর করে বাড়ছিল, রাত হচ্ছিল গভীরও থেকে আরো গভীরত অপূর্ব রুমে ঢুকে ভেজা শরীর নিয়ে ঢুকে পড়ে ওয়াশরুমের দিকে। বৃষ্টিতে ভেজার পর গোসল না করলে কেমন ইরিটেশন হয় তার। আধঘন্টা পর ট্রাউজার আর টিশার্ট পড়ে মাথা মুছতে মুছতে বের হয় অপূর্ব। অয়ন তখনও অপূর্বের বিছানায় বসে ছিল। অপূর্ব অয়নকে এখনও নিজের রুমে বসে থাকতে দেখে বিস্মিত কন্ঠে বললো,

‘ এখনও রুমে যাস নি কেন নাকি আজ রাতে ভাইয়ের রুমে থাকারই ফন্দি আঁটছিস মনে।’

প্রতি উওরে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে সোজাসাপ্টা বললো অয়ন,

‘ গুপ্তচরে নিয়ে যাওয়া মেয়েটা কে ছিল ভাই?’

অপূর্ব চমকালো, বেশ অবাকও হলো অয়নের কথা শুনে। তবে প্রকাশ করলো না। নিজেকে স্বাভাবিক রেখে জেনেও না জানার ভান করে বললো,

‘ কোন মেয়েটা?’

ভাইয়ের উওরে চোখে মুখে বিষন্নতা ধেঁয়ে আসলো অয়নের মুখমন্ডলে। বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো তক্ষৎনাত। বললো,

‘ এখন তো না চেনার ভান করবি তাই না ভাই।’

‘ সত্যি ভান করলাম নাকি বুঝলাম না তো।’

অপূর্বের ত্যাড়া উওরে অয়ন হতভাগ তবে দমলো না পকেট থেকে একটা সোনার কানের ভাড়ি ঝুমকা বের করে অপূর্বকে দেখিয়ে বললো,

‘ এই কানের অলংকারটা যার আমি তার কথা বলছি ভাই এখন নিশ্চয়ই মনে পড়েছে আমি কোন মেয়ের কথা বলছি।’

অপূর্ব অদ্ভুত দৃষ্টি নিয়ে তাকালো একবার অয়ন তো একবার কানের অলংকারটার দিকে। অতঃপর চোখ মুখ কুঁচকে অয়নের হাত থেকে কানের অলংকারটা তেড়ে নিয়ে বললো,

‘ এটা তুই কোথায় পেলি?’

‘ যেথায় তুই মেয়েটাকে রেখেছিলি? মেয়েটা কে ছিল ভাই? কি হয় মেয়েটা তোর?’

প্রতি উওরে নিজ মনে বললো অপূর্ব,

‘ এতগুলো প্রশ্নের উত্তর দেওয়া কি খুব জরুরি। যে প্রশ্নগুলোর উত্তর অপূর্বের কাছে নেই।’

অপূর্বের ভাবনার মাঝেই আবারও প্রশ্ন ছুড়লো অয়ন। বললো,

‘ কি হলো ভাই কথা বলছিস না কেন?’

অয়নের প্রশ্নের জবাব দিলো না অপূর্ব। উল্টো নিজে প্রশ্ন করলো অয়নকে। বললো,

‘ সেসব বাদ দে আগে বল এটা তুই কিভাবে পেলি?’

উওরে বেশি না ভেবে বললো অয়ন,

‘ সন্ধ্যার অনেক পরে আমি গুপ্তচরে গেছিলাম ভাই, তখনই ওটা টেবিলের উপর পেয়েছিলাম। তখন সন্দেহের বসে আকিবকে ফোন করি আর তখনই ও সব বলে আমায়।’

অয়নের কথা শুনে আকিবকে চরম লেভেলের একটা ধমক দিতে মন চাইলো অপূর্বের কিন্তু দিলো না। এই কথাটা অয়নকে বলাটা কি খুব জরুরি ছিল? এখন হাঁটতে বসতে মেয়েটাকে নিয়ে প্রশ্ন করবে অয়ন। আর প্রশ্নে প্রশ্নে বাবার কানে কথাটা গেলে তো কাম সারছে। তাকে সিঙ্গেল থেকে মিঙ্গেল ভাবতে দু’মিনিটও সময় নিবে না। অপূর্বের ভাবনার মাঝেই অয়ন আবার প্রশ্ন ছুঁড়ে বসলো অপূর্বকে। বললো,

‘ এবার তো বল ভাই মেয়েটা কে ছিল?’

উওরে অনেকক্ষণ সময় নিয়ে বললো অপূর্ব,

‘ কফি খাবো বানিয়ে নিয়ে আয়?’

অপূর্বের কথায় থতমত খেয়ে গেল অয়ন। এমন জরুরি মুহূর্তে এমন কথা একদমই আশা করে নি সে। অয়ন ভেবেছিল এবার হয়তো ভাবির দেখা মিলবে তার কিন্তু কি হলো। তার ভাইটা এমন কেন? এমন একটা মুহূর্তে এই কথা বলে কেউ। বুকটা যেন হুট করেই ছ্যাত করে উঠলো।’

#চলবে….