আজও বৃষ্টি নামুক পর্ব-২+৩

0
352

#আজও_বৃষ্টি_নামুক❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ০২
_________________

আচমকাই হাতে কারো শীতল স্পর্শ পেতেই চমকে উঠলো অপূর্ব। পাশ ফিরে তাকালো তক্ষৎনাত। মাত্রই চোখ দুটোকে বুঁজিয়ে ঘুম নামক সন্ধিপথে মগ্ন হতে নিয়েছিল সে। এরই মাঝে বাস থামা সাথে পাশের মেয়েটির এমন অদ্ভুত আচরণ সব কিছুই তাঁর ঘুম নামক আরামদায়ক মুহূর্তটাতে প্রচুর ব্যাঘাত ঘটিয়েছে। অপূর্ব দৃষ্টি রাখলো বোরকা পরিধিত মেয়েটির দিকে। যদিও কালো বোরকার আড়ালে চোখ ব্যতীত আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না। মেয়েটার চোখ দুটো অসম্ভব ভাবে কাঁপছে হাত পাও স্বাভাবিক রাখতে পারছে না। অপূর্ব মেয়েটার চোখের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে ফেললো কেন যেন মেয়েটার ওই কাঁপা কাঁপা চোখের দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারছে না সে। নিজের হাতে এখন খানিকটা ব্যাথা অনুভব করছে অপূর্ব মেয়েটা খুব শক্ত পোক্তভাবেই চেপে ধরেছে হাত। অপূর্ব বুঝতে পেরেছে মেয়েটা ভয় পাচ্ছে, ভীষণ ভাবে ভয় পাচ্ছে। অপূর্ব বেশি ভাবলো না খানিকটা ভরাট কন্ঠেই বলে উঠল,

‘ কি হয়েছে আপনার? এত ভয় পাচ্ছেন কেন?’

প্রিয়তা অপূর্বের দিকে তাকালো না। খানিকটা হতভম্ব কন্ঠ নিয়েই অপূর্বকে বলতে লাগলো,

‘ প্লিজ আমায় একটু হেল্প করুন না ওই লোকগুলো আমায় নিতেই এসেছে?’

এবার অপূর্ব চমকালো, ভীষণভাবে চমকালো তাঁর মানে এই মেয়েই বিয়ের আসর ছেড়ে পালিয়ে এসেছে। কি সাংঘাতিক! অপূর্ব চমকানো গলাতেই বলে উঠল আবার,

‘ তাঁর মানে আপনি বিয়ের আসর ছেড়ে পালিয়ে এসেছেন?’

প্রিয়তা এবারও অপূর্বের দিকে না তাকিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠল,

‘ আমায় জোর জবরদস্তি করে একজন ৬০ বছরের বুড়োর সাথে বিয়ে দিতে চাচ্ছে পালিয়ে আসবো না তো করবো বলুন।’

এবার যেন আরও চরম অবাক হলো অপূর্ব। কি বলছে এই মেয়ে?’ অপূর্ব সন্দিহান দৃষ্টিতে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ এসব কি বলছেন আপনি?’

‘ আমার কথা বিশ্বাস করুন প্লিজ। ওদের সাথে আমাকে যেতে দিয়েন না। প্লিজ যেকোনো ভাবে ওদের আমার মুখ দেখা থেকে আটকান। আমি আপনার কাছে হাত জোর করছি প্লিজ আমায় একটু হেল্প করুন আমি বড্ড বিপদে পড়েই এইভাবে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে এসেছি।’

প্রতি উওরে অপূর্ব কিছু বললো না। মেয়েটা কাঁপছে ভয়ংকরভাবে কাঁপছে। চোখ দুটোতে বিষন্নতায় ঘিরে ধরেছে খুব। অপূর্বের কেন যেন বিশ্বাস করতে মন চাইলো মেয়েটার কথা। তাঁর মনে হচ্ছে ‘এই মেয়ে মিথ্যে বলছে না।’

এদিকে শিহাব নামের ছেলেটি একে একে সব যাত্রীদের দেখতে দেখতে এগিয়ে যেতে লাগলো অপূর্বদের দিকে। ছেলেটা যতই অপূর্বদের দিকে এগোচ্ছে প্রিয়তা ততই শক্ত করে চেপে ধরছে অপূর্বের হাত। শিহাব বোরকা পরিধিত মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,

‘ আপনার মুখ দেহান?’

সঙ্গে সঙ্গে আঁতকে উঠলো প্রিয়তা। এখন কি করবে সে। তাঁকে দেখলেই তো চিনে যাবে এঁরা। শিহাব নামের এই ছেলেটিকে চেনে প্রিয়তা। তাঁর চাঁচির সাথে প্রায় সই কথা বলতে দেখেছে সে। প্রিয়তার ভাবনার মাঝেই আবারো বলে উঠল শিহাব,

‘ কি হলো কথা হুনেন না কেন মুখ দেহান আপনার?’

শিহাবের কথা শুনেই পিছনের লোকটিও বলে উঠল,

‘ কি হলো শিহাব তুই এহনো ওখানে দাড়িয়ে আছিস কেন?’

উওরে শিহাব বললো,

‘ বস এই মাইয়াডা মুখ দেহাইতে চায় না।’

‘ মুখ দেখাতে চায় না মানে,

‘ বস বোরকা পড়ে আছে মুখ ঢাকা তো।’

‘ কথা না শুনলে টান মেরে বোরকা খুলে ফেল তারপরও মুখ না দেখে ছাড়বি না শিহাব।’

শিহাব শুনলো বসের কথা। আবারও বললো মেয়েটিকে,

‘ হুনছেন বস কি কইলো ভালোভাবে মুখ দেখান নয়তো,,

প্রিয়তা এবারও শুনলো না। একদম ঝেকে বসে আছে সে কিছুতেই তাঁর মুখ দেখাবে না। প্রিয়তার কান্ডে শিহাব এবার বিরক্ত হয়ে বললো তাঁর বসকে,

‘ বস মেয়েটা মুখ দেখতে দেয় না,

‘ না দিলে জোর কর বলদটা এতক্ষণ সময় লাগে একটা মেয়ের মুখ দেখতে।’

শিহাব বেশি না ভেবে খানিকটা রাগ নিয়ে বললো,

‘ আমনের জন্য বস আমায় বলদ কইলো, আপনার মুখ দেখান মাইয়া? বুঝচ্ছি আপনে ভালো কথায় হুনবেন না, আমনেরে জোরই করা লাগবে বুঝচ্ছি আমি।’

বলেই নিজের হাতটা এগিয়ে দিতে লাগলো শিহাব প্রিয়তার মুখের দিকে। উদ্দেশ্য টান মেরে মুখের নিকাব খুলে ফেলা। প্রিয়তা থমকে গেছে এখন পুরোপুরি। হাত পা কাঁপা কাঁপা আরো বেড়ে গেছে তার বার বার মিনতির স্বরে পাশের ছেলেটির কাছে হেল্প চাইছে সে। সাথে মনে মনে আল্লাহকে ডাকছে খুব করে কোনোভাবেই যেন এঁরা তাঁর নিকাব না খুলতে পারে। প্রিয়তা খিঁচে চোখ বন্ধ করে নিলো তাঁর, আর হয়তো শেষ রক্ষা হলো না। এতদূর এসেও যেন চাঁচির হাত থেকে রক্ষা পেল না সে। বেশ কিছুক্ষন যাওয়ার পরও মুখে কারো হাতের স্পর্শ অনুভব না পেতে আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকালো প্রিয়তা। সামনেই শিহাবের হাত শক্ত করে চেপে ধরেছে অপূর্ব। অপূর্বকে দেখে বোঝা যাচ্ছে খুব স্বাভাবিকভাবেই শিহাবের হাতটা ধরেছে সে। কিন্তু শিহাব বুঝতে পারছে তাঁর হাতের হাড্ডি গাড্ডি ভেঙে গুঁড়ো গুঁড়ো হচ্ছে ভিতর থেকে। এবার অপূর্ব মুখ খুললো ভয়ংকর ভাবে রাগ হচ্ছে তাঁর এইভাবে বাস ভর্তি লোকের সামনে একটা মেয়ের নিকাব খুলে নেওয়া কতটা অরুচিকর ভেবেই রাগ হচ্ছে তাঁর। অপূর্ব গম্ভীর কণ্ঠে বললো,

‘ সাহস কি করে হয় অপূর্বের বউয়ের নিকাবের দিকে হাত দেওয়ার।’

সঙ্গে সঙ্গে চোখ মুখ কুঁচকে এলো প্রিয়তার। কি বলছে কি ছেলেটা অপূর্বের বউ মানে। শিহাব তাঁর হাতের ব্যাথায় মুখ থেকে কোনো কথা বের করতে পারছে না। তারপরও বহুত কষ্টে বললো পিছন ঘুরে বললো,

‘ বস মোর হাত শেষ, হয়ালে এদিকে আহেন।’

সঙ্গে সঙ্গে পিছন থেকে লোকটা এগিয়ে আসলো প্রিয়তাদের দিকে। হতভম্ব গলায় বললো,

‘ কি হইছে হারামজাদা?’ একটা মেয়ের মুখ দেখতে এতক্ষণ সময় লাগে।’

শিহাবের হাত ছেড়ে দিলো অপূর্ব। নিজের হাতটা ছাড়া পেতেই হাতটা শক্ত করে ধরে বললো শিহাব,

‘ বস পোলাডা মোর হাতটা ভাইঙা দিছে।’

‘ কি পোলাডার এত বড় সাহস মতলবের পোলাগো দিকে হাত বাড়ায় কই দেখি সর দেখি ছ্যারাডারে দেখতে দে।’

শিহাবের চেয়ে মতলব অনেকটা খাটো যার দরুন অপূর্বের ফেসটা ঠিকভাবে দেখতে পারছে না সে। শিহাবকে ছাড়িয়ে যেই না অপূর্বের ফেসটা দেখলো মতলব সঙ্গে সঙ্গে ভয়ে কুঁকড়ে উঠে বললো,

‘ ভাই আপনে এখানে?’

অপূর্ব এবার তাকালো সামনের লোকটির দিকে। একে চেনে বলে মনে পড়ছে না তাঁর। অপূর্বের ভাবনার মাঝেই হতভম্ব হয়ে বলে উঠল মতলব,

‘ ভাই আপনে এইভাবে বাসে করে,

অপূর্ব খানিকটা অবাকের স্বরে তাঁর ভ্রু-জোড়া কুঁচকে কপাল চুলকে বললো,

‘ আমায় চিনেন আপনি?’

উওরে প্রফুল্লতার স্বরে বললো মতলব,

‘ আপনায় চিনবো না ভাই আপনার মতো এত বড় রা…

বলতে গিয়েও অপূর্বের চোখের দিকে তাকিয়ে থেমে গেল মতলব। আশেপাশের সবার দিকেও তাকালো সে। সবাই তাদের দিকেই তাকিয়ে আছে। পরক্ষনেই প্রসঙ্গ পাল্টে বললো মতলব,

‘ এই মেয়ে আপনার সাথে ভাই?’

উওরে অপূর্ব বেশি না ভেবে বললো,

‘ হুম।’

‘ তাহলে তো আমরা যাকে খুঁজছি সে হওয়ার কোনোই চান্সই নেই। আপনে বহেন ভাই। আমরা যাচ্ছি।’

বলেই সকল যাত্রীদের উদ্দেশ্য করে ক্ষমা চেয়ে তৎক্ষনাৎ বাস থেকে নেমে পড়লো মতলব ওঁরা। ওরা নামার কিছুক্ষনের মাঝেই বাস চলতে শুরু করলো আবার। এদিকে বাস যেতেই শিহাব হা হয়ে বলে উঠল,

‘ বস আমনে কিছু বললেন না কেন?’

‘ কি কমু?’

‘ পোলাডায় আমায় হাত ভেঙে দিলো।’

শিহাবের কথা শুনে ওর গালে হাল্কা চাপড়ে বললো মতলব,

‘ তোর ভাগ্য ভালো উনি শুধু তোর হাতটা ধরেছে না হলে তুই তো গেছিলি আজ। কিন্তু মেয়েটা ছিল কে?’

এবার করিম বললো,

‘ বললো তো বউ!’

প্রতি উওরে করিমের দিকে চোখ বড় বড় করে বললো,

‘ বউ বললো না বোন বললো গাঁদা উনি তো বিয়ে করেনি।’

‘ কিন্তু উনি তো বউই কইলো বস (শিহাব)

‘ তোগো কান দুটো বাসায় গিয়ে পরিষ্কার করোন লাগবে বুঝচ্ছি আমি চল এহন ওই মাইয়াডারে খোঁজা লাগবে। নয়তো মাইয়ার চাঁচি রেগে বোম ফাটাইবে।’

বলেই সামনে এগিয়ে চললো মতলব। আর শিহাব করিমও হাবলাকান্তের মতো চললো মতলবের পিছু পিছু। মাঝে মাঝে এঁরা সত্যি বুঝে না তাদের বস এই শুদ্ধ তো এই অশুদ্ধ ভাষায় কথা বলেন কেন? আর কে ছিল ওই ছেলেটা যে তাদের বস এইভাবে ভাই বলে সম্মেলন করছিল ছেলেটাকে।’

____

চলন্ত বাসের ভিড়ে ড্যাব ড্যাব চোখে তাকিয়ে আছে প্রিয়তা তাঁর পাশের অপূর্ব নামের ছেলেটির দিকে। এর দুটো কারন এক তাঁকে বউ বলে আখ্যায়িত করা আর দুই কে এই ছেলে যার কারনে চাঁচির পাঠানো ছেলেগুলো ওনাকে এত সম্মান জানিয়ে বেরিয়ে গেল বাস থেকে। প্রিয়তা যখন এসব ভাবনায় মগ্ন ছিল তখনই হুট করে অপূর্ব প্রিয়তার চোখের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বললো,

‘ আমার দিকে কেউ ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকুক এটা আমার পছন্দ নয় মিস। আর হ্যাঁ কিছুক্ষন আগে যা বলেছি তা আপনাকে ওদের থেকে রক্ষা করার জন্য তাই সিরিয়াস ভেবে নিয়ে নিশ্চয়ই বোকার মতো তাকিয়ে থাকবেন না।’

প্রিয়তা থমকালো, অপূর্বের থেকে চোখ সরিয়ে ফেললো তক্ষৎনাত। সে কি বলেছে তাঁকে বউ বলার বিষয়টা সে সিরিয়াসভাবে নিয়েছে মটেও নেয় নি। হা একটু চমকেছিল কিন্তু পরমুহূর্তে নিজেকে সামলে নিয়েছে তো। ভেবেছিল একটা ধন্যবাদ জানাবে ছেলেটিকে কিন্তু ছেলেটির গম্ভীর ভাবের কারনে মুখ ফুটে কিছু বলতে পারছে না প্রিয়তা।’

প্রিয়তা কিছু বললো না নিশ্চুপে বসে রইলো সে। তবে তাঁর পাশের ছেলেটি আসলে কে? জানার জন্য খুব কৌতুহল জেগেছে মনে। কিন্তু সাহস করে বলতে পারছে না কিছুই। প্রিয়তা আর একবার তাকালো ছেলেটির মুখের দিকে। ছেলেটা আবারও বাসের সিটের সাথে তাঁর সমস্ত শরীর এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিয়েছে। আচ্ছা ছেলেটির কি মাথা যন্ত্রণা করছে? নাকি খুব ঘুম পেয়েছে? নাকি ক্লান্ত।’

প্রিয়তা কথাগুলো মনে মনে আওড়ে অপূর্বের মুখের দিকে দৃষ্টি রাখলো। গোল ফেস, ফর্সা মুখ, চোখের ডান পাশে ছোট্ট একটা দাগ আছে, যেটা খুব গভীরভাবে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে ছেলেটাকে,হাল্কা লাল ঠোঁট, শীতল ভেজা চোখ, মাথা ভর্তি ঘন কালো চুল। যা মাথার সাথে সাথে লেপ্টে আছে কপাল জুড়ে। রাতের শীতল ভেজা বাতাসের ছোঁয়ায় খানিকটা নড়ছে সেগুলো। পরনে নেভি ব্লু কালার শার্ট, সাথে কালো টিশার্ট, কালো জিন্স শার্টের হাতা কনুই পর্যন্ত বোল্ড করা, শার্টের বোতাম খোলা সব।’

ছেলেটার মুখে এক অন্যরকম মায়া ফিল করছে প্রিয়তা। ছেলেটাকে ভয়ংকর সুন্দর বলে আখ্যায়িত করতে মন চাইছে তাঁর। সাথে নিসন্দেহে বলা যায় ছেলেটা প্রবল ভালো মনের মানুষ। নয়তো অচেনা এই মেয়েকে সাহায্য করতো না এইভাবে?’

প্রিয়তা যখন অপূর্বকে দেখতে ব্যস্ত তখন চোখ বন্ধ করেই ভরাট কন্ঠে বলে অপূর্ব,

‘ আমি কিন্তু একবার বলেছি আমার দিকে কেউ ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকুক এটা আমার পছন্দ নয় মিস!’

সঙ্গে সঙ্গে ঘাবড়ে গেল প্রিয়তা, চমকে উঠলো ভীষণ ভাবে। ছেলেটা তো চোখ বন্ধ করে ছিল তাহলে বুঝলো কি করে সে তাঁকে দেখছে? ছিঃ ছিঃ কি লজ্জা? কি লজ্জা? ছেলেটা নিশ্চয়ই তাঁকে খুব বাজে ভাবলো!’

#চলবে….

#আজও_বৃষ্টি_নামুক❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ০৩
_________________

নিকষ কালো অন্ধকারে ঘেরা চারপাশ। রাস্তার দুইধারে পর পর ল্যামপোস্টের আলো ব্যতীত তেমন কিছুই চোখে পড়ছে না আর। বাসভর্তি করা মানুষগুলো প্রায় ঘুমে মগ্ন তখন, শুধু ঘুম নেই প্রিয়তার চোখে। ভীষণ জোরে কান্না পাচ্ছে তাঁর কতক্ষণ চেঁচিয়ে কাঁদতে পারলে হয়তো মনটা শান্ত হতো। আজ যদি বাবা মা বেঁচে থাকতো তাহলে হয়তো এই দিনটা তাঁর জীবনে কখনোই আসতো না, তার শান্তসৃষ্ট বোনটার কপালটাও এতো খারাপ হতো না। যদিও তাঁর বোনের বরের বয়সটা তাঁর এই হবু বুড়ো বরের মতো ছিল না। তবে প্রেমার চেয়ে গুনে গুনে বারো বছরের বড় ছিল প্রেমার বর। প্রেমার যখন বিয়ে হয়েছিল তখন ওর বয়স ছিল আঠারোর ছুঁই ছুঁই আর ওর বরের ত্রিশ। এখন তেত্রিশ ছাড়িয়েছে। জোরে দীর্ঘ শ্বাস ফেললো প্রিয়তা। বোনটার বরটা যগন্য খারাপ তাঁর বোনকে একটুও ভালোবাসে না। উল্টো নানান অযুহাত নিয়ে শুধু মারে। তাইতো বোনটাকে বলে ছিল তাঁর সাথে আসতে কিন্তু অবুঝ বোনটা শুনলো না। প্রিয়তার তো মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে বোনটার বরটাকে খুন করে জেলে যেতে। কিন্তু আফসোস এমনটা করতে পারে না। একটা মানুষকে খুন করা এতটা সোজা নাকি।’

আবারও নিশ্বাস ছাড়লো প্রিয়তা। জীবন তাঁকে কোথায় নিয়ে এসে দাঁড় করালো সেটাই ভাবছে প্রিয়তা। একটা সময় ছিল প্রিয়তার জীবনটাও সুন্দর ছিল খুব। বাবা মায়ের খুব আদরের মেয়ে ছিল প্রেমা আর প্রিয়তা। বাবা শখ করে প্রিয়তাকে ‘পিহু’ বলে ডাকতো। কি মধুর ডাক ছিল বাবার? তখন প্রিয়তা দশম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে কেবল হঠাৎ একদিন স্কুল ছুটির পর বাড়ি এসে জানলো বাবাকে নাকি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বাবার প্রফেশনাল লাইফ সম্পর্কে তেমন কিছুই জানতো না প্রিয়তা।’

কি করে নিখোঁজ হলো? কোথায় গেছে বাবা? বলতে বলতে মুখে ফ্যানা উঠে গিয়েছিল প্রিয়তার সেদিন কিন্তু উওর পাওয়া যাচ্ছিল না কোথাও। এরপর প্রায় টানা ১৫ দিন পর বাবার নিথর দেহ মিললো নর্দমার এক ডাস্টবিনের ভিতর। চাকুর আঘাতে বাবার দেহটাকে ক্ষত বিক্ষত করে কেউ মেরে ফেলেছিল প্রিয়তার বাবাকে। ইস! কি মর্মান্তিক ঘটনা ছিল সেদিন। বাবার সেই নিথর দেহটার কথা ভাবলে আজও গা শিউরে ওঠে প্রিয়তার। বাবা মারা যাবার দু’মাসের মাথাতেই মা মারা গেল। বাবার শোকেই হুট করে হার্ট এ্যাটাক করে মারা গেল প্রিয়তার মা। ব্যস এরপরই প্রেমা আর প্রিয়তার নামের পাশে ট্যাগ আসলো অনাথ হওয়ার। সেইসময় কেউ পাশে এসে দাঁড়ায় নি প্রেমা আর প্রিয়তার। তবে একে বারে কেউ আসে নি বললে ভুল হবে একটু এসেছিল দুজন তাঁরা হলো প্রিয়তার চাচা চাঁচি। ওনাদের কোনো সন্তান নেই। চাঁচির কোনো এক সমস্যার কারনে সন্তান হয় নি তাদের। তো প্রথম প্রথম ভালোই চলছিল সব কিন্তু ধীরে ধীরে বদলে যেতে লাগলো চাঁচির ব্যবহার। তাদের নিজস্ব বাড়ি গাড়িও বিক্রি করে দিয়েছে চাঁচি। ষড়যন্ত্র করে বুঝিয়েছে তাঁর বাবা নাকি মৃত্যুর আগে চাঁচার নামে সব লিখে দিয়ে গেছে আর চাচা চাঁচির নামে করে দিয়েছে। তখন প্রিয়তা এসব না বুঝলেও প্রেমা তো বুঝতো কেন কিছু করলো না কেন চাঁচির বিরুদ্ধে কোনো আইনী পদক্ষেপ নিলো না। সবসময় চাঁচি যা বলতো তাই শুনতো প্রেমা। মাঝে মাঝে প্রেমার ওপর বড্ড অভিমান হয় প্রিয়তার, সবসময় এমন অসহায় হলে হয়। না জানি প্রিয়তাকে না পেয়ে কেমন ব্যবহার করেছে চাঁচি প্রেমার সাথে।’

আর ভাবতে পারছে না প্রিয়তা নিজ অজান্তেই চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পরলো তাঁর। বড্ড কষ্ট হয় এসব ভাবলে, হুট করেই ফুপিয়ে উঠলো প্রিয়তা। এতক্ষণ জাগ্রত মানুষের ভীড়ে নিজের কষ্টগুলো লুকিয়ে রাখতে পারলেও এখন আর পারছে না। শরীরটাও ভালো নেই সকাল থেকে কিছুই খেতে দেয় নি চাঁচি। তারওপর বোরকার আড়ালে বিয়ের সাজ ভাড়ি ভাড়ি গহনাগাঁটি। অসহ্য লাগছে প্রিয়তার। ইচ্ছে করছে সব টেনেটুনে খুঁজে ফেললে। কিন্তু পারছে না। বুকের ভিতর অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে তাঁর।’

আকাশটায় মেঘ জমে আছে এখনো। মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে তবে কি আবারও বৃষ্টি নামতে এই রাতের ধরণীতে? হয়তো নামবে হয়তো না।’

নানান ভাবনায় মগ্ন হতে হতে বাসের সিটের সাথে পুরো শরীর এলিয়ে দিল প্রিয়তা। মাথা যন্ত্রণা করছে, চোখ জ্বলছে, শরীরটাও যেন বেজায় নারাজ আজ প্রিয়তার সাথে। সঙ্গে করে আনা কালো কলেজ ব্যাগটাকে শক্ত করে চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে ফেললো প্রিয়তা। ভালো লাগছে না কিছু। সাহস নিয়ে তো বাড়ি ছেড়ে এসেছে এখন কোথায় যাবে? কার কাছে উঠবে অচেনা অনগরীতে কি হবে তাঁর। ভাবতে ভাবতে চোখ বুঝিয়ে নিলো প্রিয়তা।’

____

ভোর_৫ঃ০০টা,

ধরনীতে তখন অল্প স্বল্প আলোর রেখা ছুটছিল। বাস থেমেছে মাত্র। তখন মাঝ রাস্তায় অনেকক্ষণ গাড়ি থামিয়ে রাখার কারনে আজ বাস ঢাকায় আসতে একটু লেট হয়েছে। বাস জুড়ে থাকা সমস্ত যাত্রীরাও একে একে নিজেদের মালপত্র নিয়ে নেমে পড়ছে। যাত্রীদের নামার সড়গড়েই ঘুমটা ভাঙলো অপূর্বের। আশেপাশে চোখ বুলিয়ে হাতের ঘড়িটার দিকে তাকালো সে পাঁচটা বেজে ২ মিনিট। অপূর্ব পুরো বাসে চোখ বুলাতেই আচমকাই চোখ গেল তাঁর পাশে থাকা বোরকা পরিধিত মেয়েটার দিকে। তাঁর কাঁধেই মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে আছে মেয়েটা। যেটা এতক্ষণ অনুভব না করলেও এখন অনুভব করলো অপূর্ব। অপূর্ব এক ঝলক তাকালো মেয়েটার ঘুমন্ত চোখ দুটোর দিকে। অসম্ভব মায়ায় ভরা সেই আঁখি। যা বার বার অপূর্বকে টানছে খুব, অপূর্ব চোখ সরিয়ে ফেললো তক্ষৎনাত। মেয়েটার চোখ দু’টোতে নির্ঘাত কিছু একটা আছে না হলে অপূর্ব বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারছে না কেন?’ অপূর্বের ইচ্ছে করছে খুব কড়া কন্ঠে মেয়েটাকে বলতে,

‘ এই মেয়ে তোমার ওই চোখ দুটোতে কি আছে বলো তো আমি তাকাতে কেন পারছি না?’

পরক্ষণেই কি উদঘাট ভাবছে সে ভেবেই নিজের গালে নিজেরই একটা চাপড় মারতে ইচ্ছে হলো অপূর্বের। কাল শেষ রাতের দিকে মেয়েটাকে ফুপিয়ে কাঁদতে দেখেছে অপূর্ব। বড্ড মায়াও লেগেছিল তাঁর। কিন্তু কিছু বলে নি অপূর্ব কারন সে চায় নি মেয়েটার কান্নার মাঝে তাঁর জেগে থাকার উপস্থিতি টের পাইয়ে মেয়েটাকে বিব্রত করতে। তাই চোখ বন্ধ করেই রেখে ছিল অপূর্ব। তবে চোখ বন্ধ করেও অপূর্ব অনুভব করেছিল মেয়েটার দুঃখ, হয়তো সত্যি ভীষণ বাজে পরিস্থিতিতে পরে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মেয়েটা। তপ্ত নিশ্বাস ছাড়লো অপূর্ব।’

আর এক পলক মেয়েটার দিকে তাকালো অপূর্ব। পরক্ষনেই ভাবলো এইভাবে তো এখানে বসে থাকা যায় না। কিন্তু মেয়েটাকে ডাকতেও ইচ্ছে করছে না অপূর্বের। অপূর্ব কিছুক্ষন দ্বিধার মধ্যে কাটিয়ে সিদ্ধান্ত নিলো মেয়েটাকে ডাকবে। এভাবে কতক্ষণই বা বসে থাকবে। যেতে হবে তাঁকে। অপূর্ব বেশি না ভেবে শুকনা কন্ঠে বললো,

‘ এই মেয়ে শুনছো? শুনছো আমার কথা। ওঠো জলদি।’

প্রতি উওরে কোনো সাড়াশব্দ করলো না প্রিয়তা। এতে বেশ বিপাকে পড়লো অপূর্ব। এখন কি করবে? মেয়েটার গায়ে স্পর্শ করতেও বিব্রত ফিল করছে অপূর্ব। এইভাবে একটা মেয়েকে ছোঁয়া যায় নাকি। অপূর্ব জানালার দিকের সিটে থাকায় আরোই সমস্যা হচ্ছে মেয়েটাকে না উঠিয়ে বের হওয়ার মতো বিন্দু মাত্র পথ খোলা নেই তাঁর কাছে। এবার অপূর্বের চরম লেভেলের বিরক্ত লাগছে। অপূর্ব পকেট থেকে তাঁর বন্ধ করে রাখা ফোনটা বের করলো। তারপর ফোনটা খুলে কল করলো একটা নাম্বারে। কল করার সাথে সাথেই ফোনটা তুললো অপরপাশের ব্যক্তিটি যেন অপূর্বের ফোনের অপেক্ষায় কাল সারারাত ঘুমায় নি সে। অপূর্ব খানিকটা বিরক্তির স্বরে বললো,

‘ আকিব গাড়ি কোথায়?’

প্রতি উওরে হতভম্ব গলায় বললো আকিব,

‘ এই তো ভাই আমি দু’মিনিটের মাঝেই আসছি।’

‘ ঠিক আছে জলদি আসো।’

‘ আচ্ছা ভাই।’

বলেই হতভম্ব হয়ে ফোনটা কেটে চটজলদি গাড়ি চালিয়ে চললো আকিব। কাল সারারাত সত্যি ঘুমায় নি আকিব। ড্রাইভিং সিটে বসে বাসস্ট্যান্ড থেকে খানিকটা দূরে বসে শুধু ঝিমিয়েছে আর অপূর্বের ফোনের অপেক্ষা করেছে। ফাইনালি অপূর্ব ফোন করলো। মশায় সারারাত যে পরিমান জ্বালিয়েছে আকিবকে তাঁর হিসাব নেই।’

তিন মিনিটের মাঝেই আকিব গাড়ি নিয়ে এসে থামলো খুলনার থেকে ঢাকা আসার বাসের সামনে। কিন্তু আশেপাশে অপূর্বকে না দেখে খানিকটা হতাশ হলো আকিব। অপূর্ব ভাই কি বাস থেকে নামে নি এখনও। এরই মাঝে হাজির অপূর্ব তবে একা নয় সঙ্গে একটা মেয়ে। তাও কি না অপূর্ব কোলে নিয়ে আসছে মেয়েটাকে। গাড়ির ভিতর বসে এমন আকস্মিক দৃশ্য দেখে চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম আকিবের। এটা সত্যি তো তাঁর অপূর্ব ভাই। নাকি অন্যকেউ। আকিব হাতে চিমটি কাটলো নির্ঘাত সারারাত না ঘুমানোর জন্য ভুলভাল দেখছে সে। আকিব নিজের হাতে নিজেই চিমটি কেটে চেঁচিয়ে উঠলো না এটা তো মিথ্যে না সত্যি সত্যি তাঁর অপূর্ব ভাই একটা মেয়েকে কোলে তুলে হেঁটে আসছে তাঁর দিকে। আকিব বিস্মিত চেহারা নিয়ে গাড়ি থেকে বের হলো তারপর এগিয়ে গিয়ে হতভম্ব গলায় বললো,

‘ ভাই।’

উওরে বেশি না ভেবে বললো অপূর্ব,

‘ আপাতত কোনো কথা নয় আকিব বাসে মেয়েটার একটা ব্যাগ আছে জলদি নিয়ে আসো কুইকলি আমাদের যেতে হবে।’

বলেই মেয়েটাকে সঙ্গে নিয়েই গাড়ির দিকে এগিয়ে গেল অপূর্ব। আকিব হা হয়ে তাকিয়ে রইলো অপূর্বের যাওয়ার পানে। অপূর্বের কথায় যেন ঘোরে আঁটকে গেল আকিব তাঁর এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না অপূর্ব কোনো মেয়েকে কোলে তুলে নিয়ে এসেছে। আচ্ছা ওটা সত্যি মেয়ে তো নাকি বোরকার আড়ালে কোনো ছেলে এমা না না কি ভাবছে আকিব। অপূর্ব ভাই তো বললো মেয়েটার ব্যাগটা আনতে, আকিব বেশি না ভেবে চটজলদি ছুটে গেল বাসের ভিতর। তারপর আশেপাশে চোখ বুলাতেই চোখ গেল নিচে পড়ে থাকা কালো ব্যাগটার দিকে। তক্ষৎনাত ব্যাগটা নিয়ে আবার ছুটলো আকিব অপূর্বের গাড়ির দিকে। মাথায় কিছুই ঢুকছে না তাঁর, হুট করে ভাই একটা মেয়েকে নিয়ে উদায় হলো কেমনে? কই কাল বিকেলেও তো বলে নি তাঁর সাথে একটা মেয়ে আছে? আকিব বেশি ভাবলো না মাথার ভিতর হাজারটা প্রশ্ন খিচুড়ি পাকাচ্ছে তাঁর। জলদি তেল মরিচ আর পানি দিলে খিচুড়ি কড়াইর সাথে লেগে পুড়ে যাবে তাড়াতাড়ি।’

আকিব দৌড়ে এসে ঢুকে পড়লো গাড়িতে। অপূর্ব তখন বোরকা পরিধিত মেয়েটাকে গাড়ির পিছনে রেখে নিজেও বসে পড়েছে পিছন সিটে। আকিব লুকিং গ্লাসে এক ঝলক অপূর্ব আর মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ অপূর্ব ভাই মেয়েটা,,

আকিবের পুরো কথা শেষ হওয়ার আগেই অপূর্ব বলে উঠল,

‘ সব বলবো আকিব আগে এখান থেকে চলো,

‘ ঠিক আছে ভাই কিন্তু কোথায় যাবেন বাড়ি নাকি অন্য কোথাও, বড় সাহেব কাল রাত থেকে অনেক বার ফোন করে আপনার কথা জিজ্ঞেস করেছিল আমি বলেছি আপনি সকালেই ওনার সাথে দেখা করবেন।’

‘ ভালো করেছো তবে এখন বাড়ি নয় অন্য কোথাও চলো,

‘ অন্য কোথাও কোথায় ভাই,

‘ তুমি জানো আমি বাড়ি ছাড়া আর কোথায় যাই আকিব,

‘ ওহ বুঝেছি ভাই কিন্তু এই মেয়েটাকে কি ওখানে নেওয়া ঠিক হবে।’

‘ ওর জন্যই তো যাচ্ছি ওখানে, কথা কম বলে চলো জলদি।’

আর কোনো প্রশ্ন করার সাহস হলো না আকিবের সে বুঝতে পেরেছে অপূর্ব বিরক্ত হচ্ছে। তাই আর কোনো প্রশ্ন না করে বললো আকিব,

‘ ঠিক আছে ভাই।’

অতঃপর চললো আকিব, অপূর্ব আর প্রিয়তা এক অজানা গুপ্তচরের উদ্দেশ্যে। অপূর্বের মাথায় কি চলছে বোঝা বড় দায় কিন্তু এই মুহূর্তে মেয়েটাকে এভাবে একা রেখে যাওয়াতেও মন সায় দিচ্ছিল না অপূর্বের। তারওপর মেয়েটা অসুস্থ।’

___

আচমকাই রুম জুড়ে এক বিকট শব্দ কানে আসতেই সোফায় শুয়ে থাকা প্রেমার ঘুমটা ভেঙে গেল। কান্নায় চোখ মুখ ফুলে গেছে তার। কাল চাঁচি যাচ্ছে তাই ভাষায় গালি গালাস করেছে তাঁকে। প্রিয়তার চলে যাওয়ার পিছনে ওর হাত আছে বলে দুবার গায়েও হাত তুলেছে প্রেমার। পরে চাচা এসে বাঁচায় তাঁকে। বরপক্ষরাও অরুচিকর ভাষায় গালি গালাস করেছে চাঁচিকে সাথে এও বলেছে এক সপ্তাহের মধ্যে তাঁদের কাছ থেকে নেওয়া নগদ অর্থ যেন ফেরত না দিলে দেখে নিবে চাঁচিকে। মিট মিট চোখে তাকালো প্রেমা চাঁচিই টেবিলের উপর থাকা কাঁচের জগটা মাটিতে ফেলে দিয়ে ভেঙে ফেলেছে। তাঁর সামনেই লম্বা চওয়া আর খাটো সাইজের পাঁচ দশজন ছেলেপেলে আর মধ্যম বয়স্ক একজন লোক দাঁড়ানো। চাঁচি কর্কশ কন্ঠে বললো,

‘ সামান্য একটা মেয়েটাকে খুঁজে আনতে পারলে না মতলেব। মেয়েটা কি এক রাতের মাঝে ভেনিস হয়ে গেল নাকি।’

প্রতি উওরে মাথা নিচু করে মতলেবও বলে উঠল,

‘ অনেক খুঁজেছে বাসস্যান্ড, ট্রেন লাইন,নদীর পাড় জঙ্গল সব জায়গায় কিন্তু পাই নি।’

‘ ওতোশতো জানি না যে করেই হোক আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে প্রিয়তাকে তোমাদের খুঁজে বের করতে হবে মতলেব। তাতে যতো টাকা লাগে দিবো কিন্তু মেয়েটাকে আমার চাই, ওর জন্য আমার এতগুলো টাকা কিছুতেই পানিতে ভাসিয়ে দিতে পারবো না। বুঝেছো!’

‘ হুম বুঝেছি, দেখছি ম্যাডাম। আপনি চিন্তা করবেন না।’

বলেই একে একে সবাই বাড়ির থেকে বেরিয়ে গেল। কতক্ষণ আগেই প্রিয়তাকে না পাওয়ার সংবাদ নিয়ে এসেছিল তাঁরা। এখন চলে যাচ্ছে আবার প্রিয়তাকে খুঁজতে।’

চাঁচি ওদের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে থমথমে কন্ঠে নিয়ে প্রিয়তাকে উদ্দেশ্য করে বললো,

‘ পালিয়ে যাবি কোথায় প্রিয়তা আজ নয় কাল তোকে তো আমার কাছে আসতেই হবে।’

#চলবে……