আজকে শহর তোমার আমার পর্ব-১৮

0
668

#গল্পঃআজকে_শহর_তোমার_আমার
#লেখিকাঃজিন্নাত_চৌধুরী_হাবিবা
#পর্ব_১৮

সাথী বয়েজ ভেতরে এসো তোমরা বলতেই ইশান কতগুলো ছেলেপুলে নিয়ে শোভনের বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে।
এতগুলো ছেলেকে একসাথে দেখে সেদিকে আতঙ্কিত চোখে একবার তাকিয়ে শোভন সাথীর দিকে তাকায়।
সাথী ঠোঁট বাঁকা করে হেসে বলল,পুলিশে দিলেতো একদিন না একদিন বেরিয়ে যাবি তার আগে একটু আদর যত্ন করে নিই যাতে জীবনের চলন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলিস।তারপর নাহয় পুলিশের হেফাজতে রাখা যাবে তোকে।

শোভন রুপ্সিতার গলায় ছুরি চেপে ধরে রেখে নিজের ফোন বের করে কাউকে কল দিতে দিতে সাথীকে উদ্দেশ্য করে বলল,তুই কাজটা ভালো করলিনা সাথী।
রিতা,শোভনের বাবা মা সবাই নির্বিকার ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে।
ইশান সাবধানে পেছন থেকে শোভনের হাত চেপে ধরে ছুরিটা ফেলে দিতেই সাথী সরে আসে।তারপর শোভনের নাক বরাবর ঘুষি মেরে বলল,কাকে কল দিতে যাচ্ছিলি?শোভন সিটকে দু’পা সরে যায়।
ইশান ছেলেগুলোকে ইশারা করতেই সবাই মিলে শোভনের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ওকে মারতে থাকে।

ইশান দাঁতে দাঁত পিষে বলল,এমন ভাবে মারবে যাতে ভেতরে যখম হবে কিন্তু উপর দিয়ে দেখলে তেমনটা বোঝাই যাবেনা।সালার মেশিনের এমন অবস্থা করবি যাতে দ্বিতীয়বার কোনো মেয়ের কাছাকাছি যাওয়ার কথাও না ভাবতে পারে।নিজের অক্ষমতার কথা ভেবে ফিরে আসে।
একসাথে এতগুলো ছেলের মার সহ্য করতে না পেরে শোভন চিৎকার করছে।একজন দুপায়ের মাঝ বরাবর লাথি মারতেই শোভন এক গগনবিধারী চিৎকার করে উঠে মা বলে।
শোভনের বাবা মা,রিতা সবার চোখে পানি কিন্তু কেউ এগিয়ে আসছেনা।শোভন চিৎকার করে বলছে,বাবা-মা আমি মরে যাচ্ছি আমাকে এদের হাত থেকে বাঁচাও।আমি আর কখনো এসব খারাপ কাজ করবোনা একেবারে ভালো হয়ে যাবো।শোভনের বাবা মা ঘৃনায় মুখ ফিরিয়ে নেয়।ছেলের এই অবস্থা দেখে কষ্ট হচ্ছে তারচেয়ে বেশি কষ্ট হচ্ছে এমন একটা নরপিশাচকে জন্ম দিয়েছে বলে।
শোভন আর্তনাদ করে বলছে,মা তোমার আল্লাহর দোহাই লাগে এদেরকে থামাও।আমি ভালো হয়ে যাবো।শোভনের মা কটাক্ষ করে বললেন,কুকুরের লেজ যেমন সোজা হয়না তেমনি তোর মতো কিছু পশুও কোনদিন ভালো হবেনা।

একই জায়গায় অন্যজন পা দিয়ে আঘাত করতে শোভনের চোখ দুটো বেরিয়ে আসার উপক্রম।গলার স্বর বের হচ্ছেনা অতি কষ্ট রিতার দিকে তাকিয়ে বলল,রিতা আমি তোমার স্বামী তোমার সন্তানের বাবা।আমার কিছু হলে তুমি বিধবা হয়ে যাবে আমাদের সন্তান এতিম হয়ে যাবে।
রিতা চিৎকার করে বলছে,লাগবেনা আমার তোর মতো স্বামী,আমার সন্তানের ও এমন বাবার দরকার নেই।আমার সন্তানের জীবনে যাতে কোনদিন তোর মতো জানোয়ারের ছায়াও না পড়ে সেই চেষ্টাই করবো আমি।

অবশেষে নিস্তেজ হয়ে পড়ে থাকে শোভনের দেহ।হালকা একটু শ্বাস উঠা নামা করছে।ইশান সবাইকে থামিয়ে দিয়ে বলে এবার এটাকে হসপিটালে ভর্তি করিয়ে একটু রিকভার হলেই পুলিশের হেফাজতে দিয়ে দেবো।এমন অবস্থা হয়েছে জেল থেকে ছাড়া পেলেও কোনদিন সচলভাবে চলাফেরা করতে পারবেনা।ইশান ছেলেগুলোকে নিয়ে চলে যায় সাথে শোভনকেও নিয়ে যায়।

শোভনের বাবা মা,রিতা ফ্লোরে বসে কাঁদছে।সাথী রিতার কাঁধে হাত দিতেই রিতা হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো।সাথীর চোখেও পানি।রিতা কাঁদছে স্বামীর কাছ থেকে প্রতারিত হয়ে আর সাথী কাঁদছে প্রেমিকের কাছে নিজের সর্বস্ব হারিয়ে।
আমাদের সমাজে কিছু মেয়ের এরকম ভুলের কারণে পরে তাদেরকে পস্তাতে হয়।সমাজের চোখে নিজেতো ছোট হয় সাথে বাবা মায়ের মুখও ছোট করে।যে মানুষটা তোমাকে ভালোবাসবে সে কোনোদিন তোমার শরীরের দিকে নজর দিবেনা।সে তোমাকে হালালভাবে গ্রহন করতে চাইবে।আফসোস এই ছোট্ট কথাটা মেয়েরা বুঝেনা।মিথ্যা ভালোবাসার বশবর্তী হয়ে বিলিয়ে দেয় নিজেকে।

রুপ্সি আমার নীল রঙের টিশার্ট টা কি করেছো?
রুপ্সিতা সানিকে কোলে নিয়ে রুমে ঢুকেছে মাত্র তখনই আলিফ টিশার্টের কথা জিজ্ঞেস করে উঠলো।রুপ্সিতা আমতা আমতা করে বলল,আব আমি কি জানি আপনার নীল টিশার্ট কোথায়?
আলিফ বিরক্তি নিয়ে বলে তুমিইতো টিশার্ট টা দিনে একশবার জামার উপর দিয়ে পড়ো।
রুপ্সিতা চোরের মতো মুখ এদিক ওদিক করে বলল,তো?তাই বলেকি আমাকে জানতে হবে নাকি টিশার্ট এখন কোথায় আছে?
আসলে রুপ্সিতা টিশার্ট টা পড়ে খাটের উপর থেকে হামাগুড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে হাটুর নিচে পড়ে টিশার্টের বুক পকেটের জায়গায় অনেক খানি ছিঁড়ে গেছে।আলিফের গায়ের মাপের টিশার্ট রুপ্সিতার গায়েতো বড় হবেই তার উপর গেছে হামাগুড়ি দিয়ে নামতে।

রুপ্সিতার মুখের ভাবগতি বুঝার চেষ্টা করে আলিফ বলল,কি করেছো টিশার্ট বলো!আমি কিছু বলবোনা।
রুপ্সিতা হাসার চেষ্টা করে বলল,আমি সত্যিই জানিনা টিশার্ট টা কোথায় তাহলে বলবো কিভাবে?
সানি একবার আলিফের মুখের দিকে তাকাচ্ছে আবার রুপ্সিতার মুখের দিকে তাকাচ্ছে।
এরপর রুপ্সিতার কোল থেকে নেমে রুপ্সিতার পড়ার টেবিলের কাছে গিয়ে বইয়ের চিপা থেকে আলিফের টি-শার্ট বের করে আনে।রুপ্সিতা বইয়ের চিপায় রেখেছিল কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত টিশার্টের কিছু অংশ বেরিয়েছিলো।আলিফ সানির হাত থেকে টিশার্ট নিয়ে পড়তে গিয়ে দেখে বুকপকেটের জায়গায় অনেকখানি ছিঁড়ে আছে।রুপ্সিতার দিকে তাকতেই রুপ্সিতা একটা কেবলাহাসি দিয়ে বলে,সত্যি বলছি আমি কিছু জানিনা।

আলিফ মিথ্যে রাগ দেখিয়ে বলল,আমার টিশার্ট ছিঁড়ে ফেলার অপরাধে আজ তোমাকে কঠোর শাস্তি পেতে হবে।রুপ্সিতা সানিকে নিয়ে রুম থেকে কেটে পড়তে চাইলে আলিফ রুপ্সিতার হাত চেপে ধরে সানিকে বলে,বাবা দেখে আসোতো তোমার আম্মু তোমাকে কেন ডাকছে?

সানি ভ্রু কুচকে বলল,কই আমিতো শুনলাম না?সাথে রুপ্সিতা ও তাল মিলিয়ে বলল,একদম!আমিওতো শুনলাম না।
আলিফ মুখটাকে ইনোসেন্ট করে সানিকে বলল,কিন্তু চাচ্চু তো স্পষ্ট শুনলাম।তুমিই বলো চাচ্চু কি তোমাকে মিথ্যে বলছে?
সানি মাথা নেড়ে না জানিয়ে ভাবুকের মতো গালে আঙ্গুল দিয়ে ভাবতে ভাবতে চলে গেলো।
আলিফ দরজা আটকে দিয়ে রুপ্সিতাকে খপ করে দুহাতে চেপে ধরলো।রুপ্সিতা ছটপট করে নাক টেনে বলল,একটা টিশার্টের জন্য আপনি আমাকে এখন শাস্তি দিবেন?

আলিফ ঠোঁট টিপে হেসে বলল,হুম!ভুল যখন করেছো শাস্তিতো পেতেই হবে।আলিফ রুপ্সিতার দিকে এগিয়ে আসছে রুপ্সিতা পিছিয়ে যেতে যেতে ভাবছে না জানি আজকে আমার গাল দুটো ঠাটিয়ে চড় মেরে ফাটিয়ে দেয়।আলিফ রুপ্সিতার একেবারে সামনে আসতেই রুপ্সিতা চোখদুটো বন্ধ করে নিয়ে মিনমিন করে বলে আস্তে মারবেন প্লিজ।
আলিফ রুপ্সিতার বন্ধ চোখজোড়ার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে তারপর হুট করে রুপ্সিতার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট বসিয়ে আস্তে করে কামড়ে ধরে।রুপ্সিতা চমকে উঠে চোখ মেলে তাকায়।তখনই রুপ্সিতার মুঠোফোন তীব্রগতিতে আওয়াজ করে উঠে।আচমকা এরকম আওয়াজে আলিফ রুপ্সিতাকে ছেড়ে সিটকে সরে যায়।অতঃপর ফোনের দিকে তাকাতেই রাজ্যের বিরক্তি এসে আলিফের চোখে মুখে ভর করে।এই ফোন আওয়াজ তোলার আর সময় পেলোনা এখনই কল আসতে হলো?

রুপ্সিতা মোবাইল হাতে নিয়ে স্ক্রিনে তাকাতেই অবাক হয়ে যায় রিতা কল করেছে।কেননা ওই ঘটনার পর থেকে রিতা কখনো রুপ্সিতাকে কল দেয়নি।কল ধরবে কি ধরবেনা ভাবছে রুপ্সিতা।এরমাঝে একবার কল কেটে গিয়ে আবার কল আসে।রুপ্সিতার আকাশ-পাতাল ভাবনার মাঝে আলিফ বলে উঠে,কল ধরছো না কেন?
রুপ্সিতা হ্যাঁ ধরছি বলে কল রিসিভ করে বারান্দায় চলে যায়।এখন কল রিসিভ না করলে আলিফ নানান প্রশ্ন শুরু করতো।
ফোন কানে ধরতেই ওপাশ থেকে রিতার ভাঙা ভাঙা কন্ঠস্বর শুনতে পায় রুপ্সিতা।

রুপা!
রুপ্সিতা চোখ বন্ধ করে নেয়।কতদিন পর নিজের বোনের মুখে এই ডাকটি শুনলো।
রিতা আবারো বলে উঠে,রুপা একটু শোভনের বাসায় আসতে পারবি কালকে?তোর আসাটা খুব জরুরী।আমি বাবা মাকেও আসতে বলেছি প্লিজ তুই আসিস।
রুপ্সিতা কেন জিজ্ঞেস করতেই রিতা কেঁদে উঠে বলে,আসলেই সব জানতে পারবি প্লিজ আয়না একবার।
রুপ্সিতা হকচকিয়ে গিয়ে বলল,তুই কাঁদছিস কেন?কি হয়েছে সব ঠিকঠাক আছেতো?

কিচ্ছু ঠিক নেই তুই একবার আয় প্লিজ।আসলে সব জানতে পারবি বলেই রিতা কল কেটে দিলো।নিজের কান্না আটকানোর চেষ্টায় আছে রিতা।
রুপ্সিতা হ্যালো,হ্যালো করে যাচ্ছে যখন বুঝতে পারলো কল কেটে গেছে তখন ফোন সামনে এনে আনমনেই বলল,আজব তো!এভাবে কল কেটে দিলো কেন?
কিছুতেই রুপ্সিতার মন শান্ত হচ্ছেনা তাই বার কয়েক রিতার নাম্বারে ডায়েল করতেই প্রতিবার কল বেজে কেটে যাচ্ছে।ওপাশ থেকে কেউ তুলছেনা।
শেষে ব্যর্থ হয়ে রুপ্সিতা রুমে ফিরে আসে।ওর মাথায় একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে রিতা কেন ওকে কাল যেতে বলল আর কাঁদছেইবা কেন?এসব ভাবতে ভাবতে রুপ্সিতা খাটের সাথে বাড়ি খাওয়ার আগেই আলিফ ধরে ফেলে।রুপ্সিতাকে ধমকে বলে,কি ভাবো সারাদিন?এক্ষুনিতো পায়ে লেগে যেতো।রুপ্সিতা সামনে তাকিয়ে আবার আলিফের দিকে তাকায়।

আপু কল করেছে।আমাকে কাল একবার যেতে বলেছে ওদের বাসায়।ও কাঁদছেও কিন্তু কারণ বলছেনা।বলেছে কালকে আমি গেলেই নাকি সব বলবে।আলিফ রুপ্সিতাকে খাটে বসিয়ে বলল,আচ্ছা ঠিক আছে এত চিন্তা করতে হবেনা।আমি তোমাকে কাল তোমার আপুর বাসায় দিয়ে তারপর অফিসে যাবো।এখন ঘুমিয়ে পড়ো।

শুয়ে শুয়ে ও রুপ্সিতা রিতার কথা নিয়ে চিন্তা করছে।আলিফ পেছন থেকে রুপ্সিতাকে জড়িয়ে ধরে কোমল কন্ঠে বলল,রুপ্সি!
রুপ্সিতা জবাব দিলো,হুহ!
আলিফ রুপ্সিতাকে নিজের দিকে ফিরিয়ে বলল,এখনো চিন্তা করছো তুমি?
রুপ্সিতা বলল,নাহ মানে আমি
আলিফ রুপ্সিতাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,কালকে তো যাচ্ছোই তাহলে এত চিন্তা কিসের?যত চিন্তা তুমি সবাইকে নিয়ে করো তার এক পার্সেন্ট তোমার এই বরটাকে নিয়ে করলেই পারো।আলিফের কথা শুনে রুপ্সিতা হেসে দেয়।আলিফ রুপ্সিতার গলায় মুখ ডুবিয়ে দিয়ে বলল,এখন ঘুমাও।রুপ্সিতাও আলিফের পিঠে একহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে।
#চলবে……..।

(ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।হ্যাপি রিডিং।)