আজ তার বিয়ে পর্ব-১১

0
3236

আজ_তার_বিয়ে
# লেখিকা -নাইমা জাহান রিতু
# পর্ব -১১
বরের গাড়িটা যখন গুলশান ইমতিদের বাসার
সামনে থামলো তখন ঘড়িতে বাজে ৯.১৫। পুরো
বাড়িটা আলোয় ঝলমল করছে। বাইরে থেকে
দেখে বোঝার উপায় নেই এই বাড়ির ভেতরের
অবস্থা কতো টা নির্মম। মানুষগুলোর মনের
ভেতরে এখন কি চলছে। সবার মন জুড়েই এখন
যে এক স্তব্ধতা বিস্তার করছে সেটা বাইরের
লোকজনই বা কিভাবে বুঝবে!
মাইক্রো থেকে নেমেই শিমা যেন হাফ ছেড়ে
বাচলো। লম্বা শ্বাস নিয়ে প্রাপ্তির দিকে
হাত বাড়িয়ে বললো
-“আম্মু, এসো। নেমে পড়ো।”
প্রাপ্তি মামির ডাকে সাড়া দিয়ে গাড়ি
থেকে নেমে এসে শিমার কোল ঘেঁষে
দাঁড়াল। শিমা প্রাপ্তিকে কোলে নিয়ে
এগুতে লাগলো বাসার ভেতরে। শিমার এমন
অদ্ভুত ব্যবহার দেখে ইফতেখার শিমাকে
ডেকে উঠে বিরক্তি নিয়ে বললো
-“কোথায় যাচ্ছো? আখিকে নিয়ে তারপর যাও।
একাই ঢ্যাং ঢ্যাং করে বাসায় চলে যাচ্ছো?
কমন সেন্স বলতে কি কিছু আছে?”
শিমা ইফতেখার এর কথায় দাঁড়িয়ে পড়লো।
তারপর ইফতেখার এর দিকে তাকিয়ে বললো
-“মা কে ডেকে আনি। নাকি আমিই আখি কে
নামাবো?”
-“তুমি কেন নামাবে! অবশ্যয় মা নামাবে।”
-“তো আমি সেটার জন্যই যাচ্ছিলাম ভেতরে।
আর সত্যি বলতে কি তোমাদের এই রঙ
তামাসার বিয়ে আমি জাস্ট আর সহ্য করতে
পারছিনা। এমন ফালতু বিয়েতে আমি এর আগে
কখনো এটেন্ড হয় নি। তোমাদের বাড়িতে
এসেই এসব আমাকে দেখতে হচ্ছে।”
বলেই শিমা প্রাপ্তিকে কোলে নিয়ে উপরে
উঠে গেল।
ইফতেখার শিমার কথা শুনেও না শোনার ভান
করে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো বরের গাড়ির
পাশে। আসল কথা তার শরীর টাও আর কুলুচ্ছে
না। সেই সকাল থেকে তার উপরে যে ধকল টা
যাচ্ছে তাতে করে এখন আর নতুন করে কিছু শুরু
করতে চায় না সে। এমনিতেই মন মেজাজ
মোটেও ভালো নেই, তার উপর শিমার এমন
চটাং চটাং মুখের উপর কথা বলা টা কিছুতেই
সহ্য হচ্ছে না তার। শিমা মেয়েটা হাসি খুশি
মিশুক হলেও একটু বেশি কথা বলে। কোথায়
কোন কথা বলতে হবে সেটা হাজার চেষ্টা
করেও শিমা কে শেখাতে পারেনি ইফতেখার।
একসময় নিজের কপালেই চাপড়িয়ে বলতে
ইচ্ছা করে ‘জুতা মারি মিশুক বৌ এর কপালে,
এর চেয়ে চুপচাপ বৌ থাকাই ভালো’।
ইতির ফোন আসায় ইফতেখার কে তার চিন্তার
জগৎ থেকে বের হয়ে আসতে হলো। ফোন
রিসিভ করতেই ইতি বলে উঠলো
-“ভাইয়া, তোমরা বাসায় গিয়ে পৌঁছেছো?”
-“হ্যাঁ। মাত্রই আসলাম।”
-“অহ, আচ্ছা একটা গাড়ি হসপিটালে পাঠিয়ে
দাও তো। অদ্রিকে রিলিজ করে দিয়েছে।
বাসায় ফিরবো।”
-“আচ্ছা দিচ্ছি।”
-“আর হ্যাঁ, আমি আসার আগে যেন আবার
ঘুমিয়ে পড়ো না।”
-“তুই কি দুই মাইল ফাঁকে আছিস যে তুই আসতে
আসতে আমি ঘুমিয়ে পড়বো!”
-“রেগে যাচ্ছো কেন! আমি কথার কথা
বলেছি। আসলে জরুরী কিছু কথা ছিল বাবার
সম্পর্কে।”
ইফতেখার ভ্রু কুঁচকে বললো
-“কি কথা? এমনিতেই ইমতির কান্ড কারখানার
জন্য বাবার প্রেশার বেড়ে গেছে। প্রেশারের
মেডিসিন দিয়েও প্রেশার কমানো যাচ্ছিল
না বাবার। এখনো গাড়িতেই ঘুমিয়ে আছে।
ফোন রাখ এখন। বাবাকে ভেতরে নিয়ে
যাবো।”
বলেই লাইনটা কেটে দিল ইফতেখার। তারপর
কপাল থেকে ঘাম ঝেড়ে এগুলো তার বাবা
আফজাল সাহেবের গাড়ির দিকে।
ইতি তার ভাই ইফতেখার এর কথা শুনে মনে মনে
বাবার চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করতে শুরু করলো।
খানিকক্ষণ মনে মনে গালাগাল করার পর কঠিন
চোখে অদ্রির দিকে তাকিয়ে বললো
-“তুই তাহলে এবোরশন করবি না?”
-“না।”
-“সেটা সম্পূর্ণই তোর ইচ্ছা। তোর লাইফ তুই
বুঝবি। তোর যা ইচ্ছা হবে করবি।”
অদ্রিকে চুপ করে থাকতে দেখে আবারো ইতি
বলতে শুরু করলো
-“জীবন টা কি তোর কাছে সিনেমা মনে হয়?
আর নিজেকে তার নায়িকা মনে হয়? এই বাচ্চা
টাকে জন্ম দিতে গিয়ে তোর কতো কিছুর
সম্মুখীন হতে হবে একবার শুধু এটা ভাব। তোর
বাবা মা, পরিবার, আত্মীয়স্বজন সবাই তোকে
ত্যাগ করবে। এক ঘরে করে ফেলবে তোকে।
পুরো জীবন টা নষ্ট হবে তোর অদ্রি। এতোক্ষন
অনেকভাবে চেষ্টা করেছি তোকে
বোঝানোর। আর আমি তোকে বোঝাবো না।
এখন যা করার তুই করবি। ভেবে চিন্তে ডিসিশন
নিবি। এর সাথে তোর যেমন জীবন জড়িয়ে
আছে তেমনি একটা নিষ্পাপ বাচ্চার জীবন ও
জড়িয়ে থাকবে।”
অদ্রি নিজেও বুঝতে পারছে এই বাচ্চাটিকে
দুনিয়ায় আনতে তাকে সব কিছু হারাতে হবে।
সবাই তাকে চরিত্রহীনা নামে চিনবে। তাকে
দেখলেই খারাপ খারাপ কথা বলবে। কিন্তু তাই
বলে সে একটা শিশুকে হত্যা করতে পারবে
না। যে কিনা তার আর ইমতির ভালোবাসার
ফল। তাদের মধুর কিছু মুহূর্তের সাক্ষী। শুধু
নিজের ভবিষ্যৎ এর কথা চিন্তা করে একটি
শিশুকে সে পৃথিবীর আলো দেখা থেকে
কিছুতেই বঞ্চিত করতে পারে না। তাই আর এক
মুহূর্ত চুপ না থেকে সে ইতিকে বললো
-“তুমি কি আমাকে সেই নিষ্পাপ বাচ্চাকেই
মেরে ফেলতে বলছো? তুমি পারতে আজ আমার
যায়গায় থাকলে নিজের বাচ্চাকে খুন করতে?
বলো পারতে? প্রাপ্তিকে আজ তোমাকে
মেরে ফেলতে বললে তুমি ওকে মেরে ফেলরে
পারবে?”
অদ্রির কথা শুনেই বুকটা কেপে উঠলো ইতির।
ভয়ার্ত মুখ নিয়ে অদ্রির দিকে তাকিয়ে
বললো
-“কি সব কথা বলছিস তুই এগুলো? প্রাপ্তি
আমার নিজের সন্তান। দশমাস ওকে পেটে ধরে
দুনিয়াতে এনেছি কি ওকে মেরে ফেলতে?”
-“আমার পেটে যে এখন বেড়ে উঠছে সে ও
আমার সন্তান। আমার আর ইমতির ভালোবাসার
একমাত্র সাক্ষী ও। আর কেউ না জানলেও তুমি
তো জানো আমি কতোটা ভালোবাসি তোমার
ভাইকে। আর একজন মা হিসেবে আমি আমার
আর ইমতির বাচ্চা কে দুনিয়ায় আসার আগে
মেরে ফেলতে পারবো না।”
-“কিন্তু ইমতি যে আর তোর নেই, অদ্রি। ও এখন
অন্যজনের স্বামী। তোর প্রেগনেন্সির খবর টা
আর একটু আগে পেলেই কখনওই ইমতি বিয়ে
করতে যেত না। তুই যেমন ইমতিকে
ভালোবাসিস তেমনি ইমতি ও তোকে অনেক
বেশি ভালোবাসে। কিন্তু পরিস্থিতি তোদের
অনুকূলে। আর আজ তুই বাচ্চাটা কে জন্ম দিতে
গেলে মানুষ নানান ধরনের কথা বলবে তোকে
নিয়ে। আর ইমতি নিজেও এই খবর টা পেলে কি
করবে আমার মাথায় জাস্ট আসছে না।”
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে অদ্রি বললো
-“যার যা ইচ্ছা ভাবুক। আমি তাদের খাই না
পড়ি, যে তাদের কথা আমার শুনতে হবে?
তাদের কথা আমার গায়ে লাগবে? আমি নিজে
জানি আমি কেমন। আমার এতোবছরের জীবনে
আমি একজন পুরুষের কাছে গিয়েছি। আর তার
কাছেই নিজের সর্বস্ব সপে দিয়েছি। তাকেই
মন দিয়ে ভালোবেসেছি। আর বাসবো ও।
জানি না আমার জীবনে কী লেখা আছে।
কিন্তু যাই লেখাই থাক না কেন আমি আমার
বাচ্চাকে জন্ম দিতে পিছুপা হবো না। আমি
আমার ডিসিশন নিয়ে নিয়েছি।”
বলেই দম ফেললো অদ্রি। এতোক্ষণ শুয়ে শুয়েই
কথাবার্তা চালাচ্ছিল অদ্রি ইতির সাথে।
কিন্তু কথাবার্তার এ পর্যায়ে অদ্রি
ধীরেধীরে উঠে বসলো। অদ্রির বেডের
পাশেই একটা টুল নিয়ে বসেছিল ইতি।
অদ্রিকে উঠতে দেখেই ইতি এগিয়ে গেল
অদ্রির দিকে। ইতি অদ্রির পাশে আসতেই
অদ্রি তার হাত চেপে ধরে কাঁদোকাঁদো গলায়
বললো
-“আমি যদি জানতাম আমি প্রেগন্যান্ট তাহলে
কখনওই ইমতিকে বিয়ে করতে যেতে বলতাম না,
আপু। আমার নিজের ও কিছু স্বপ্ন আছে। চাওয়া
পাওয়া আছে। কে না জীবনে তার প্রিয়
মানুষটিকে নিয়ে একসাথে বসবাস করতে চায়
না? সব মানুষই চায় তার জীবনে, চলার পথে
প্রিয় মানুষটি তার হাত ধরে থাকুক। আমিও
তাদের ব্যতিক্রম নয়। আমিও চাই ইমতি আমার
পাশে থাকুক। কিন্তু জীবনে সুখে শান্তিতে
বাস করার জন্য হলেও আমরা সব কিছু পাই না।
আমার জন্য আল্লাহ হয়তো ইমতিকে লিখে
রাখে নি। আর আমি যতোটুকু পেয়েছি ইমতির
কাছ থেকে আমি ততোটুকুতেই খুশি। এমনিই
আমার জন্য ইমতিকে অনেক ঝামেলা পোহাতে
হয়েছে। আর কোনো ঝামেলা হোক সেটা
আমি চাই না। আমি একটা মেয়ে হয়ে অন্য
মেয়ের সংসার ভাঙবো কিভাবে! আমি কাল
সকালেই ঢাকা ছেড়ে চলে যাব। আর কখনো
যোগাযোগ করার চেষ্টা ও করবো না ইমতির
সাথে। ও নতুন জীবনে সুখী হোক আমি সেটাই
চাই। আমার প্রেগনেন্সির খবর টা আমি কখনওই
ওকে বলবো না। তোমরাও কিছু বোলো না। আর
কখনো যদি কিছু জানতে পারে ও তাহলে ওকে
বলে দিয়..”
আর কিছু বলতে পারলো না অদ্রি। কথা গুলো
শুনতে সহজ হলেও বলাটা মোটেও সহজ নয়
একটা মেয়ের কাছে। কম কষ্ট বুকে চেপে
রেখে আজ নিজের মানুষকে অন্যের হাতে
তুলে দেয় নি সে। বাধ্য ছিল সে। ভয়ানক
পরিস্থিতির সম্মুখে দাঁড়িয়ে লড়াই করবার
সাহস তার ছিল না। কিন্তু আজ হঠাৎ তার ভেতর
সেই শক্তিটা জেগে উঠেছে। সব পরিস্থিতির
সাথে লড়াই করবার সাহস আজ সে পাচ্ছে।
কেন এমন টা হচ্ছে? তার নিজের মাঝে যে
একজন বেড়ে উঠছে সে কি তাকে সাহস দিয়ে
সামনে এগিয়ে দিতে চাচ্ছে?
সমাজের কথা চিন্তা করেই বাচ্চাটাকে
এবোর্ট করতে বলছিল ইতি। কিন্তু মুখে বললেও
মন টা খচখচ করছিল তার। কিন্তু এ পর্যায়ে ইতি
অদ্রির কথাগুলো শুনে নিজের কান্নাও আর
আটকিয়ে রাখতে পারলো না। এক হাত দিয়ে
অদ্রিকে কাছে এনে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে
কাঁদতে কাঁদতে বললো
-“আমার বাবা আর মা কে মাফ করে দিস
অদ্রি। আমার বাবা আর মা কে মাফ করে
দিস।”
অদ্রি আর কিছু না বলে ইতির বুকে মুখ গুঁজে
চুপচাপ পড়ে রইলো।
ইমতি হেটে চলছে এক অন্ধকারময় রাস্তা ধরে।
রাস্তাটা এতোটাই অন্ধকার যে আশেপাশের
কিছুই চোখে পড়ছে না। একটি জলজ্যান্ত মানুষ
নিঃশব্দে সামনে এসে দাঁড়ালেও সেটা
কারো বোঝার সাধ্যি নেই। নিলয় এর হাতে
একটা চিরকুট দিয়ে বিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে
দেওয়ার পর থেকেই আনমনে রাস্তায় রাস্তায়
হেটে বেড়াচ্ছে ইমতি। ওদিকে কি ঘটেছে
সেটা ওর জানা নেই। বারবার বাসা থেকে
ফোন আসার জন্য ফোন টাও সুইচ অফ করে
রেখেছে সে। আপাতত এই দুনিয়ার সাথে
কোনো ধরনের যোগাযোগ সে রাখতে চায় না।
দরকারই বা কি এ দুনিয়ার সাথে তার
যোগাযোগ রাখার? অদ্রি, যাকে সে এতো
বেশি ভালোবাসে, সে তাকে তার নিজের
জীবনে চায় না। একসাথে ঘর সাজানো,
বাচ্চাকাচ্চা আরো কতোই না স্বপ্ন
দেখেছিল তারা। কিন্তু হঠাৎ কি এমন ঘটে
গেল যার কারণে এখন অদ্রি আর তার সঙ
চাচ্ছে না। তাকে নিয়ে ঘর সাজাতে অদ্রির
আপত্তি থাকলেও তার তো নেই। তাহলে সে
কেন অদ্রি কে ফেলে রেখে গিয়ে অন্য এক
মেয়েকে বিয়ে করে তার সাথে নতুন ঘর
সাজাবে? তার মনের ঘরে তো শুধুই বাস করে
অদ্রি। তাহলে লোক দেখানো ঘর অন্যজন কে
নিয়ে সাজিয়ে লাভ টা কি?
দুপুরে রেস্টুরেন্ট থেকে একরকম জোর করেই
বের করে নিয়ে এসেছিল সে নিলয় কে।
তারপর হাতে একটা চিরকুট ধরিয়ে দিয়ে
বলেছিল
-“এটা নিয়ে সোজা কমিউনিটি সেন্টারে চলে
যাবি।”
নিলয় তখন হতভম্ব হয়ে বলেছিল
-“এটা কি? আর আমি একা কেন যাব? তুই যাবি
না?”
-“না, যাব না। কারণ আমি এই বিয়েটা করছি
না।”
বিস্ময় চোখে তখন নিলয় তাকিয়ে ছিল ইমতির
দিকে। ইমতি তখন তার গাড়িটার চাবি
নিলয়ের হাতে দিয়ে বলছিল
-“এতে স্পষ্ট ভাষায় লেখা আছে ‘আমি
বিয়েটা করছি না। আমি অদ্রিকে
ভালোবাসি। আর বিয়ে করলে ওকেই করবো।
যার হাতে এটা পাঠাচ্ছি তাকে বলিকা
বাকড়া বানিয়ে আখির জীবন টা নষ্ট হওয়া
থেকে বাঁচাতে পারো।'”
কথা টি শুনে নিলয় তখন যতোটা না অবাক
হয়েছিল তার চেয়ে বেশি রেগে গিয়েছিল।
রাগত্ব স্বরেই সে বলেছিল
-“কি বলছিস এসব? তুই ভুল করবি আর আমি গিয়ে
তার মাশুল গুনবো? আর আমার বিয়ে ঠিক হয়েই
আছে। মা পছন্দ করে রেখেছে আমার জন্য
মেয়ে। আর আমি কিনা এখন তোর কথামত তোর
হবু বৌ বিয়ে করে তাকে নিয়ে বাড়ি উঠবো?
নো ওয়ে। সুতরাং তুই তোর পথ দেখ। আমি
আমার।”
বলেই চলে যাওয়ার জন্যই এগিয়েছিল নিলয়।
কিন্তু তার আর যাওয়া হয়ে ওঠে নি। ইমোশনাল
কথাবার্তা বলে মাথার মধ্যে প্যাচ ফেলিয়ে
দিয়েছিল ইমতি নিলয়ের। এতোবছর এক সাথে
কাটাবার এই একটা ফয়দা ইমতি ভালোভাবেই
লুফে নিয়েছিল। নিলয় ঠাট্টাতামাসার মাঝে
সব সময় থাকলেও অন্যের কষ্টে তার মন টা
ভীষণ কেঁদে উঠে। বাবা ছাড়া বড় হওয়ায় এই
একটা দূর্বলতাই তার মাঝে ছিল। সেটাই
কাজে লাগিয়ে নিলয় কে কমিউনিটি
সেন্টারে যাওয়ার জন্য রাজি করিয়েছিল
ইমতি। কিন্তু নিলয়ের ও শেষ কথা ছিল সে
চিরকুট টা দিয়ে আসলেও কোনো ভাবেই আখি
কে বিয়ে করবে না সে। কিন্তু ইমতির এটা
অজানা ছিল না যে, আখি নামক মেয়েটাকে
দেখার পর কোনো ভাবেই নিলয় তাকে ভয়াবহ
এক পরিস্থিতির মাঝে ফেলে রেখে আসতে
পারবে না। কারণ বাঙালি মেয়েদের বিয়ের
দিনে বিয়ে ভেঙে যাওয়াটা যে কতোটা
কলঙ্কের সেটা কারো অজানা নয়। বিশেষ
করে মেয়েটার কাছে সেই পরিস্থিতি টা পার
করা অনেকটা কষ্টের। নিলয়কে গাড়িতে
উঠিয়ে দিয়ে ইমতি নিলয়ের উদ্দেশ্যে তখন
বলেছিল
-“আখিকে একবার দেখে তারপর না হয় না
বলিস। আমার মনে হয় না আখিকে দেখার পর
কোনো ছেলে ওকে রিজেক্ট করবে।”
এই কথাগুলোই শেষ কথা ছিল তার আর নিলয়ের
মাঝে। তারপর আর কোনো যোগাযোগ হয় নি।
বিয়ে বাড়িতে কি হয়েছে, নিলয়ের সাথে
আখির বিয়েটা হয়েছে কিনা এটা নিয়ে
কিছুটা হলেও চিন্তিত ইমতি। কিন্তু তার চেয়ে
বেশি খুশি লাগছে তার এই ভেবে যে আজ তার
বিয়ে টা হয় নি।
ইতি অদ্রিকে বাসায় নিয়ে এসেছে বেশিক্ষণ
হয় নি। বাড়িতে ঢুকতেই বাড়ির থমথমে
পরিবেশ দেখে কিছুটা হলেও অবাক হয়ে
গিয়েছিল তারা। তার খানিকক্ষণ পর সব কিছুই
পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল তাদের কাছে। সব
শুনে ইতি আর অদ্রি থম ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছিল
কিছুক্ষণ। বুঝছিল না তাদের কি রিয়াকশন এখন
দেয়া উচিৎ। খুশিতে আত্মহারা হয়ে এখন
তাদের কি করা উচিৎ? ছলছলে চোখে একে
অপরের দিকে তাকিয়ে ছিল ইতি আর অদ্রি।
অদ্রির তখনো বিশ্বাস হচ্ছিল না ইমতি
বিয়েটা করে নি। আখিকে বিয়েটা করেছে
নিলয় ভাই। নিলয় চিরকুট নিয়ে কমিউনিটি
সেন্টারে ঢোকার পরপরই মুখোমুখি হয়েছিল
সে ইফতেখার এর। ইফতেখার তাকে দেখে
ইমতির কথা জানতে চাইলেই চিরকুট টা তার
হাতে ধরিয়ে দিয়েছিল নিলয়। চিরকুট টা পড়ে
কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছিল ইফতেখার।
তারপর মাথা টা ঠাণ্ডা রেখে সব কিছু তাকেই
করতে হয়েছে। নিলয় কে এক রকম জোর করে
ধরে বেধেই বিয়ে দিয়ে দেয়া হয়েছে আখির
সাথে। নিলয়ের দিকে বেশি খাটাখাটি না
করতে হলেও আখির বাবা হাফিজ সাহেবকে
বুঝাতে ইফতেখার কে কম কাঠখড় পোড়াতে হয়
নি। অবশ্য এতো কিছু করার কোনো দরকারই
ছিল না ইফতেখার এর। বর আসে নি সুতরাং বর
যাত্রি নিয়ে কোনো রকম ভাবে কেটে আসতে
পাড়তো তারা। কিন্তু ইফতেখার সেটা পারে
নি। একটা মেয়ের জীবন এভাবে হাতেনাতে
নষ্ট করার তারা কে! আবার এক রকম ভয়
নিয়েও কাজ গুলো করেছে সে। হাজার হলেও
মন্ত্রীর মেয়ে আখি। আর এভাবে বিয়ে করতে
এসে না করিয়ে চলে গেলে কোনোভাবেই
ছাড় দিত না হাফিজ সাহেব। তাই হাফিজ
সাহেবকে ভুলিয়ে ভালিয়ে মান সম্মানের ভয়
দেখিয়ে হলেও কাজ টা করতে পেরেছে
ইফতেখার। ওদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী হাফিজ
সাহেব প্রথমে খুব ক্ষেপে গিয়েছিল। অবশ্য
ক্ষেপে যাওয়া টা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
কিন্তু মান সম্মানের ভয়ে পরবর্তীতে নিলয়ের
সাথে বিয়ে দিতে রাজি হয়েছে সে। কারণ
আজ বাদে কাল ইলেকশন, আর এর মাঝেই যদি
খবরের কাগজে হেডলাইন আসে ‘স্বাস্থ্যমন্ত্
রীর মেয়ের বিয়েতে বিয়ের আসর থেকে
পালিয়ে গিয়েছে বর’ তাহলে লজ্জায় সে মুখ
দেখাতে পারবে না। আর মন্ত্রী সভায়ও কিছু
মন্ত্রী তার পেছনে পড়ে আছে। কোনো একটা
ভূল করলেই প্রধানমন্ত্রীর কাছে নালিশ করবে,
চারিদিকে তাকে নিয়ে মানুষের নানান হাসি
তামাশার কথা শুনাবে। এখন আবার ফেসবুক
নামের এক মাধ্যমে মুহূর্তের মাঝেই সবকিছু
ছড়িয়ে পড়ে সবার মাঝে। তখন চেয়ার টাও
হারাতে হবে তার। তাই সবশেষে বিয়ের জন্য
মত দিয়েছেন সে। শুধু এতোকিছুর মাঝে
মাঝখান থেকে বলি হয়েছে আখি আর নিলয়।
আখির কাছ থেকে একবার কেউ শুনতেও চায়
নি সে নিলয় নামের একজন কে বিয়ে করতে
রাজি আছে কিনা! কিন্তু বিয়েটা হয়েই
গেছে। আর ওদের নিলয়ের বাড়িতে এত রাতে
না পাঠিয়ে এই বাড়িতে নিয়ে এসেছে
ইফতেখার। কারণ, একে তো নিলয় তার পরিবার
কে নিয়ে এখন ময়মনসিংহ থাকে। সেখানে
এতো রাতে পাঠানো ঠিক হবে না। আবার
নিলয়দের বাড়িতে হুট করে বউ নিয়ে গেলে
কে কী রিয়াক্ট করবে। এইসব ভেবেই গুলশানে
নিজ বাড়িতে এনে তুলেছে নিলয় আর
আখিকে। ইমতির ঘরে বাসরঘর সাজানো
হয়েছিল। সেই ঘরেই এখন আছে নিলয় আর
আখি।
আখি চুপচাপ বিছানার মাঝখানে বসেছিল।
নিলয় কে রুমে ঢুকতে দেখেই ভয়ে কেপে
উঠলো তার বুক। নিলয় নামের ছেলেটা কে সে
কিছুতেই মেনে নিতে পাড়ছে না। কোথায়
থেকে হঠাৎ উদয় হয়ে তার জীবনে এল আর সব
কিছু তছনছ করে দিয়ে গেল ভাবতেই তার
কান্না পাচ্ছে। ইমতির সাথে বিয়ে ঠিক
হওয়ার পর প্রতি রাতে ইমতিকে নিয়েই ভাবতে
ভাবতে ঘুমিয়েছে সে। জেগে উঠেও ভেবেছে
ইমতির কথা। ইমতিকে নিয়ে তার ছোট্ট
সংসার, তাদের খুঁটিনাটি খুনসুটি, রোমান্স সব
কিছুই সময় পেলেই মনে মনে ভেবে একাই
লজ্জায় লাল হয়ে পড়তো সে। অথচ আজ কি
থেকে কি হয়ে গেল! আজ কের এই রাত টা
নিয়ে কতোটা না স্বপ্নই বুনেছিল সে ইমতিকে
নিয়ে। অথচ আজ রাতে তার পাশে ইমতি নেই।
তার বদলে আছে এই লোকটি। অবশ্য এই
লোকটি কেও দেখতে খারাপ না। লম্বা চওড়া,
হালকা ফর্শা গালে খোঁচা খোঁচা দাড়িতে
তেমন একটা খারাপ লাগছে না। কিন্তু তাই
বলে তো তাকে মেনে নিয়ে নতুন ভাবে
সংসার শুরু করা যায় না।
ওদিকে আখিকে দেখার পর থেকে নিলয়ের
অবস্থা পুরো কেরোসিন হয়ে আছে। এমন
মেয়েকে তার এই ২৯ বছরের জীবনে এই প্রথম
দেখা। এতো রূপ নিয়ে মেয়েটা জন্মেছে যে,
তাকালেই চোখ টা ঝলসে যাবে এমন অবস্থা।
নিলয় না পারছে এক দৃষ্টিতে আখির দিকে
তাকিয়ে থাকতে, আবার না পারছে চোখ
সরাতে। নিজের উপস্থিতি জানান দেয়ার জন্য
নিলয় হালকা একটা কাশি দিল। নিলয়ের
কাশি শুনে আখি মুখ তুলে নিলয়ের দিকে
তাকিয়ে বললো
-“আপনি এসেছেন এটা বোঝানোর জন্য কাশতে
হবে কেন?”
নিলয় আখির কথা শুনে থতমত খেয়ে গেল।
কিন্তু নিলয় ও কম যায় না। তাই কথার পিঠে
বলে উঠলো
-“আপনাকে বোঝানোর কি আছে? আমার
সত্যিই ঠান্ডা লেগেছে।”
নিলয়ের কথা শুনে আখি আর কিছু বললো না।
আখির জবাব না পেয়ে বিছানার দিকে
এগিয়ে আসতেই আখি নিলয়ের উদ্দেশ্যে
বললো
-“যেখানে ছিলেন ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকুন।
বিয়ে করেছেন ঠিকই। কিন্তু একদম অধিকার
ফলাতে আসবেন না।”
নিলয় আখির কথা শুনে বিছানার অপর পাশে
গিয়ে শুয়ে পড়তে পড়তে বললো
-“আমার বয়েই গেছে। দেশে কি মেয়ের অভাব
পড়েছে?”
ইমতি রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে যখন বাড়ি
ফিরলো তখন রাত বাজে ১ টা। প্রথমে বাসায়
আসার এক বিন্দু ইচ্ছা না থাকলেও পরে
আসতে হয়েছে তাকে। ফোন টা খোলার পর
পরই সাজিদের ম্যাসেজ পেয়েছিল সে।
ম্যাসেজ টা কিছুটা এরকম ছিল
‘শালা তুই আমাকে আগে জানালি না কেন?
আগে জানালে আজ কি এসব হতো? এতো
কাহিনী হতো? যাই হোক যা হওয়ার হয়েছে,
এখন যা বাসায় যা। আংকেল অসুস্থ হয়ে
পড়েছে। বাসায় গিয়ে আংকেলের সাথে কথা
বল। আমার মনে হয় না আংকেল তোর আর
অদ্রির ব্যাপারটা নিয়ে দ্বিমত করবে। আর
হ্যাঁ এ ব্যাপারে কোনো ঝামেলা হলে
আমাকে জানাবি। আমি আছি তোদের পাশে।
আর নিজের অজান্তে হলেও আমি তোদের কষ্ট
দিয়ে ফেলেছি। তোদের মাঝে এসে
পড়েছিলাম পারলে মাফ টা করে দিস।’
কলিংবেল বাজাতেই দরজা খুলে দিল আয়েশা
বেগম। ছেলেকে কিছু কঠিন কথা শোনানোর
জন্য রেডি হয়েইছিল সে। কিন্তু ইমতি আসার
পর ক্লান্তিমাখা ছেলের এই রুপ দেখে
আয়েশা বেগমের মন টা গোলে গেল। নরম
স্বরে বললো
-“কোথায় ছিলি?”
মায়ের এরূপ নরম স্বর কিছুতেই হজম হলো না
ইমতির। ভেবেছিল বাসায় আসতেই নানা ঝড়
ঝামেলার সম্মুখীন হতে হবে তাকে। কিন্তু
পরিস্থিতি শান্ত দেখে অনেকটা অবাক হলো
ইমতি। ততোক্ষণে ইতি আর ইফতেখার ও চলে
এসেছে সেখানে। ইফতেখার ইমতির হাত ধরে
টেনে ড্রয়িং রুমে সোফায় বসালো। তারপর
বললো
-“আজ কিছু কথা জানা দরকার তোর। যা না
জানলেই নয়। ঠান্ডা মাথায় আমার কথা গুলো
মন দিয়ে শোন।”
ইতি আর আয়েশা বেগম ও ইমতির পাশের
সোফায় গুলোতে বসেছে। ইতি তার বাবার
সম্পর্কে, অদ্রির আর ইমতির সম্পর্ক, সবশেষে
অদ্রির প্রেগনেন্সি সব কিছুই ইফতেখার কে
এসে বলে দিয়েছিল। আর এখন ইফতেখার তার
ভাই ইমতিকেও সেই ইতিহাস বলতে শুরু করলো।
সব শুনে ইমতি কিছুক্ষণ নিরবে বসে রইলো।
তারপর স্বাভাবিক ভাবেই বললো
-“আফজাল সাহেব এখন কোথায়?”
ছেলের মুখ থেকে এমন কথা শুনে কিছুটা ভয়
পেয়ে গেল আয়েশা বেগম। ছেলের পাশে বসে
বললো
-“এখন নিজের ঘরে হয়তো ঘুমিয়ে আছে। শোন,
বাবা এত রাতে আর ঝামেলা করিস না। কাল
সকালে যা করার করবো আমরা সবাই মিলে।
এতোদিন আমি একা একা চুপচাপ সহ্য করলেও
এখন তো আমি আর একা নয়। তোরা আছিস
আমার পাশে। তুই বরং এখন ফ্রেশ হয়ে অদ্রির
কাছে যা একবার। মেয়েটা আমার জন্য কম
কষ্ট সহ্য করেনি। এখন থেকে মেয়েটাকে না
হয় শান্তি দে।”
বেশ কিছুক্ষণ মায়ের কোলে মাথা রেখে
চুপচাপ শুয়ে রইলো ইমতি। পাশেই চুপচাপ বসে
আছে তার দুই ভাই বোন। তাদের চোখে স্পষ্ট
ফুটে উঠছে বাবা নামক শব্দটার প্রতি একরাশ
ঘৃণা।
অদ্রি দরজা চাপিয়ে দিয়ে লাইট অফ করে
চুপচাপ শুয়ে রয়েছিল। শুয়ে শুয়ে অপেক্ষার
প্রহর গুনছিল কখন ইমতি আসবে। রাত দুটোর
বেশি বাজে। অথচ এখনো ইমতির কোনো
পাত্তা নেই। আজ রাতে কি ইমতি ফিরবে না
বাসায়? ভাবতেই বুক টা ফাকা ফাকা
লাগছিল অদ্রির। ঠিক তখনি রুমে ঢুকলো ইমতি।
দরজা টা লাগিয়ে দিয়ে এগুলো বিছানার
দিকে। অদ্রি ইমতির উপস্থিতি টের পেয়ে চুপ
করে শুয়ে রইলো। আনন্দে তার এখন ইমতিকে
জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে। আজ থেকে
সারাজীবন এর জন্য এখন থেকে ইমতি শুধুই তার।
কিছুক্ষণ আগেই ইফতেখার ভাইয়া এসে তাকে
অনেক কথাই বলে গিয়েছে। তার মাঝে তার
একটি কথা ছিল ‘কাল সকালেই কাজি
ডাকিয়ে বিয়ে দিয়ে দিব তোদের। কাউকে
কোনো রকম ভয় করবি না একদম। সবসময় মনে
রাখবি ইমতি তোকে খুব বেশি ভালোবাসে।
আর ভালোবাসা টাই কিন্তু সব কিছুই উর্ধ্বে।’
অদ্রি বিছানার ঠিক মাঝখানে শুয়ে ছিল
অন্যপাশ হয়ে। ইমতি এসেই বিছানায় গা
এলিয়ে দিল। তারপর পিছন থেকে অদ্রিকে
জড়িয়ে ধরলো। হাত টা অদ্রির পেটে দিয়ে
বুলাতে শুরু করলো। আর মুখটা অদ্রির ঘাড়ে
নিয়ে এলোপাথাড়ি চুমু দিতে থাকলো।
অদ্রিও আর বেশিক্ষণ চুপচাপ শুয়ে ঘুমের
অভিনয় করতে পারলো না। এপাশ ফিরতেই
নিমিষেই অদ্রির ঠোঁট টা শুষে নিতে শুরু
করলো ইমতি। অদ্রি ও ইমতির সাথে তাল
মিলিয়ে আদরগুলো উপভোগ করতে শুরু করলো।
বেশ কিছুক্ষণ পর ঠোঁট টা ছাড়লো ইমতি।
তারপর ফিসফিসে গলায় বললো
-“এত্তগুলো ভালোবাসি তোমায়।”
বলেই উঠে বসলো ইমতি। তারপর অদ্রির পেটের
কাছে মুখ টা নিয়ে বললো
-“এটা কিন্তু তোকে বলেছি। তোর মা কে না।”
তারপর আলতো করে পেটে একটা চুমু দিল।
এরপর ফিসফিস করে আরো কথা বলতে শুরু
করলো সে। অদ্রি চুপচাপ শুয়ে ইমতির এই
বাচ্চামি গুলো দেখতে লাগলো। খুশিতে
অনবরত চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে তার।
আজ তার চেয়ে সুখী পৃথিবীতে আর কে আছে?
(সমাপ্ত—সমাপ্ত)