আড়ালে কে পর্ব-১৬+১৭

0
293

. #গল্প – #আড়ালে_কে [ #পর্ব – ১৬ ]
#লেখক – #সালাহউদ্দিন_তারিক ( জুনিয়র মুগলি )

সিয়াম হ*ত্যা কেস নিয়ে তেমন কোনো মাথা খাটাতে চায়নি এস আই আজিজ সাহেব। কিন্তু কেস নেওয়ার দিন রাতেই একজন সিনিয়র অফিসারের কল আসে ওনার কাছে। কল ধরে ফোনের এপাশ থেকেই সেলুট করেন তিনি। ওপাশের অফিসার বলেন, “আজিজ সাহেব, মা*র্ডার কেস অনুসন্ধানে আপনার অনেক খ্যাতি শুনেছি। কিন্তু শোনলাম আজকে না-কি একজন মহিলা কেস নিয়ে আসলে সেটা গুরুত্বই দেননি। আর তাও এমন একজনের মা*র্ডার কেস যার ডে*ট বডি সবার আগে আপনি দেখেছিলেন।”

আজিজ সাহেবের চতুর মস্তিষ্ক উর্ধ্বতন কর্মকতার ইঙ্গিত সহজেই বুঝতে পারেন। তাই নিজের সম্মান কমে যাওয়ার আগেই তড়িঘড়ি করে বলেন, ” স্যার আমার মনে হয় কেউ আপনাকে কিছুটা ভুল সংবাদ দিয়েছে। আমি কেসটা খুব যত্নের সাথে গ্রহন করেছি। এবং পূর্ণ মনোযোগের সহিত তদন্ত করব ঠিক করেছি।”

” আচ্ছাহ্! তবে তো বেশ ভালো। আমার কানে আসা সংবাদটা তবে যেন মিথ্যেই থাকে। আর আপনার এতোদিনের রেপুটেশন বজায় থাকে।”

” স্যার আপনি একদম নিশ্চিত থাকতে পারেন। আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করব। ”

” শুভ কামনা রইল আপনার জন্য। ”

” ধন্যবাদ স্যার…”। কল কেটতেই যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলেন আজিজ সাহেব। ওনার ধুরন্দর মস্তিষ্ক এবার কেস করতে আসা উক্ত মহিলা সম্পর্কে ভাবতে লাগল। নিজেই নিজেকে বলতে লাগল, “আগেই বলেছিলাম এই মহিলা খুব ডেঞ্জারাস। এখন দেখ অবস্থা! নিজের রেপুটেশন বজায় রাখতে তাড়াতাড়ি কিছু কর।”

প্রথমদিন কথা বলার সময়েই আজিজ সাহেবের মনে হয়েছিল যে ঐ মহিলা আসলেই বিশেষ কিছু। থানায় এসে নয়তো এভাবে চটাং চটাং কথা খুব কম মহিলাই বলতে পারে। একবার চিন্তা করলেন মহিলাকে নিয়ে কিছু অনুসন্ধান করবেন। কিন্তু পরক্ষনেই ভাবেন, ঐ মহিলাকে অনুসন্ধান না করে খু*নির অনুসন্ধান করি। কেস নিতে চাইনি বলেই যেভাবে কল করিয়েছে। কোনো খোঁজ দিতে না পারলে হয়তো সংবাদ সম্মেলন ডেকে বসবে। এসব নানান কথা চিন্তা করতে করতেই সহকর্মীকে দিয়ে সিয়ামের ময়না*তদন্তের রিপোর্টটা আনিয়ে নেন।

খুনের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ইন্টারনাল ব্লি*ডিং এন্ড এক্সটার্নাল ব্লি*ডিং।
মাথার পিছনে আঘাতের ফলে মস্তিষ্কের ভিতরে র*ক্তক্ষরন হয়েছে। আর পেটে ছুঁড়ির আঘাতের ফলেও প্রচুর র*ক্তক্ষরন হয়েছে। এই উভয় র*ক্তক্ষরণের ফলেই ভিক্টিম খুব দ্রুত র*ক্ত শূন্য হয়ে মারা গেছেন। এছাড়া শরীরে আর কোনো প্রকার আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। ময়নাতদন্তের পুরো রিপোর্টে এই কিছু তথ্য ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায়নি। ময়না*তদন্তের আগে তোলা ছবি গুলো এবার একের পর এক দেখতে লাগলেন তিনি। পেটে করা ছু*রিকাহতটার বিভিন্ন দিক থেকে ছবি তোলা হয়েছে। ছবি গুলোর অরিজিনাল কালার পরিবর্তন করে এডিটিং করা হয়েছে বিভিন্ন রঙে। সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছে খু*নী সম্পর্কে একটা সূত্র পাওয়ার জন্য।

পেটের আঘাত আর মাথার আঘাত থেকে আজিজ সাহেব একটা চলচিত্র কল্পনা করেন নিজের মস্তিষ্কের ভিতরেই। ভাবেন, সিয়াম হয়তো এক জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিল। তারপর খু*নী পিছন থেকে এসে সোজা আ*ঘাত করে তার মাথার পিছনে। তারপর সিয়াম মাথায় হাত দিকে পিছনে তাকাতেই আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়ে থাকা খু*নী সিয়ামের পে*টে ঢু*কিয়ে দেয় ছু*রিটা। দুই জায়গা থেকে একসাথে র*ক্তক্ষরণ হওয়ার পরে আর দাঁড়িয়ে থাকতে না পেরে মুখ থুবড়ে পড়ে যায় সে। তবে আস্তে আস্তে পড়ার কারণে মুখে অতিরিক্ত কোনো আ*ঘাত পায়নি সে।

আপাতত এইটুকুন চিন্তা করতে পারেন আজিজ সাহেব। তারপর আ*ঘাতের ছবি দেখে খুনীর উচ্চতা এবং আ*ঘাতের ধরণ সম্পর্কে ধারণা করেন। যেভাবে কোনাকোনি হয়ে পেটের ডান দিক থেকে আ*ঘাতটা ভিতরের দিকে ঢুকেছে। তা থেকে আন্দাজ করা যায় যে খু*নী খুন করার সময় বাম হাত ব্যবহার করেছে এবং তার উচ্চতা সিয়ামের কাছাকাছি। অতঃপর একটা সাদা কাগজে খু*নীর বৈশিষ্ট্য সমূহ লিখেন আজিজ সাহেব। তারপর তার একটা ছবি তুলেন এবং কাগজটা নিজের মানিব্যাগে রেখে দেন।

ভেবেছিলেন এই কেসের পিছনে এবার উঠে পড়ে লেগে যাবেন। বাংলাদেশে যেহেতু বাম হাত ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনেক কম সেহেতু অতোটা বেগ পেতে হবে না ওনাকে। সবে মাত্র আগামীকালই মিশনে নামার কথা ভাবলেন আজিজ সাহেব। তার কয়েক ঘণ্টা পরেই ওনার কাছে নতুন আরেক কেস চলে আসে। এটা আর কোনো মা*র্ডার কেস না বরং অপহরণের কেস। আর অপহরণ কেস নিয়ে তো আর বসে থাকা যায় না। এজন্য আপাতত সিয়াম হ*ত্যা কেস একপাশে রেখে নাজমুল সাহেবের করা অপহরণ মামলায় হাত দিতে হয় ওনার। রাত গভীর হয়ে যাওয়ায় তড়িঘড়ি করে মামলা নিয়ে কোনো রকমে বিদায় করেন নাজমুল সাহেবকে।

তারপর সিম ও মোবাইলের জিপিএস চেক করে সোহানার অবস্থা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেন ওনার সহকর্মীরা। কিন্তু মোবাইল ফোন বন্ধ থাকাতে কোনো কাজই হলো না এসবে। আজিজ সাহেব সহকর্মীদের কাজ বুঝিয়ে দিয়ে একটু ঘুমিয়ে নেন। যদিও আজকের সারারাত ওনার ডিউটি। কিন্তু সারারাত সজাগ থাকলে আর সকালে মাঠপর্যায়ের কোনো কাজই করতে পারবেন না…..।
.
.
দশ…..

সকাল বেলার শশুরের কলে ঘুম ভাঙে নাজমুল সাহেবের। তখন মাত্র সাড়ে ছয়টা বাজে। এমনিতেই গত রাতে শেষ বেলায় ঘুমিয়েছেন তার উপরে ক্লান্তও ছিলেন অনেক। এজন্য এখনও ঘুমে পোষায়নি ওনার। কোনো রকমে আধখোলা চোখে মোবাইলের অবস্থানটা দেখে হাতে নিলেন। তারপর কানে ঠেকিয়ে সালাম দিলেন, “আসসালামু আলাইকুম আব্বা।”

ওনার শশুর সালামের উত্তর দিয়েই এক গাদা কথা বলতে লাগলেন, “তুমি এখনো ঘুমাচ্ছ! আমার মেয়ের কোনো খোঁজ নাই আর তুমি নাক ডেকে ঘুমাচ্ছ এখনও? ”

অনেক মানুষ এমন আছে যাদের ঘুম কম হলেই মাথা গরম হয়ে যায়। নাজমুল সাহেবও তাদেরই একজন। এমনিতেই তার কাঁচা ঘুম ভেঙে যাওয়ায় মাথা গরম। তার উপরে শশুরের কথা শুনে ওনার মাথা আরো গরম হয়ে গেল। রেগে মেগে শশুরের মুখের উপরেই বলে দিলেন, ” দেখেন আপনার মেয়েরে খুঁজে পান না। তাও আপনার ঘর থেকে বের হওয়ার পরে পান না। এখানে আমি কেন পাগলের মতো খুঁজব। এমনিতেও আপনার মেয়ের অন্য কারো সাথে সম্পর্ক আছে। সে তার কাছে চলে যাওয়ার জন্য আমার ঘর থেকে বেরিয়ে গেছে। এরপরও গভীর রাতে মাইলের পর মাইল হাঁটছি কালকে। রাত ৪ টা বাজে ঘুমাইছি। আর এখন আমাকে কল দিয়ে কিসের তেজ দেখাচ্ছেন! ” একদম এক নিঃশ্বাসে সব কথা বলে কল কেটে দেন নাজমুল সাহেব।

তারপর মিনমিন করে কতক্ষণ বলতে থাকেন, “এহ্ আসছে আমার সাথে গরম দেখাতে। নিজের মাইয়ার ঠিক নাই মাইয়ার জামাইরের কাছে কৈফিয়ত চায়। ”
তারপর বেশিক্ষণ আর সজাগ থাকতে পারলেন না নাজমুল সাহেব। একপ্রকার ধপাস করেই পরে গেলেন বালিশের উপরে। ঘুম ওনাকে জোকের মতো কা*মড়ে ধরল….।

নাজমুল সাহেবের কথাগুলো নাদিয়ার কানেও যায় অল্প। জোরে কথা বলার ফলে এসব শুনে ঘুম ভেঙে গিয়েছিল তারও। নাদিয়ার মাথায় বিদ্যুৎ বেগে চিন্তা চলে যায় বাবা-মায়ের ব্যপারে। যদি এসব কথা ওনারা শুনতে পায় তবে পুরো ঘর মাথায় তুলে ফেলবেন। সে তাড়াতাড়ি বিছানা ছেড়ে নেমে সোজা বাবা-মায়ের ঘরের দরজার সামনে চলে যায়। তারপর দরজায় কান পেতে শোনার চেষ্টা করে যে ওনারা কেউ কিছু শুনে ফেলল কিনা। দুজনেই একদন চুপ আছে বলে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সে।

নিজের মেয়ের জামাইয়ের ব্যবহারে হতবাক হয়েছেন সোহানার বাবা। নাজমুল সাহেবের প্রতি ওনার ধারণা সব সময় পজিটিভ ছিল। নাজমুল সাহেবকে সব সময় অত্যন্ত ভদ্রলোক বলেই জানতেন তিনি। কিন্তু আজকের ব্যবহারের পর ওনার সব বিশ্বাস ভেঙে গেল। আর কোনো প্রকার ভরসাও করতে পারলেন না উনি। চিন্তা করলেন নিজেই থানায় যাবেন। এমতাবস্থায় ওনার ফোনে এক অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসে। কল রিসিভ করতেই অপর পাশের লোকটি বলতে থাকে,” আপনার মেয়ে এখন আমার হাতে। দশ লাখ টাকা মুক্তিপণের বিনিময়ে আপনি তাকে নিতে পারবেন। ”

এই কয় কথাতেই ভয়ে অনুনয় করতে শুরু করেন সোহনার বাবা। কাঁদো কাঁদো গলায় বলেন, ” দেখ বাবা আমি জানি না তুমি কে। দয়া করে আমার মেয়েকে ছেঁড়ে দাও। ”

” ছেড়ে দিব বলেই তো বললাম ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে ফেলুন। আর সেটা অবশ্যই আজকের দিনের মধ্যে। যদি আজ রাত বারেটার মধ্যে আমি টাকা না পাই। তবে টাকা কিভাবে উসুল করতে হয় সেটাও আমার জানা আছে।”

ভয়ে কাঁপতে থাকেন সোহানার বাবা। ওনার মেয়ের সঙ্গে কেমন বাজে ব্যবহার হতে পারে সেসব একটু কল্পনা করেন। তারপর বলেন, ” দেখ আমার হাতে এখন এতো টাকা নাই যে তোমাকে দিতে পারব। মাত্র ৩ লাখ টাকা আছে ব্যংকের মধ্যে। তোমাকে আমি সেই টাকা দিই তুমি আমার মেয়েকে ছেঁড়ে দাও। ”

ওপাশ থেকে হো হো করে হাসতে থাকেন লোকটি। হাসি শুনে সোহানার বাবার ভয় আরো বেড়ে যায়। উনি না পারেন মোবাইলের মধ্যে দিয়েই ঐ লোকের পা ধরে বলেন সোহানাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য। অনেক আকুতি মিনতি করার পরেও কোনো কাজ হয় না। ওপাশের লোকটি সাফ জানিয়ে দেয়, ” আজকে রাত বারোটার ভেতরে টাকা রেডি করেন। আর যদি পুলিশের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন তবে পরিনতি ভয়াবহ হবে।”

কথা শেষ করেই সাথে সাথে কল কেটে দেয় লোকটি। সোহানার বাবা আর কিছু বলতে না পেরে হতবুদ্ধি হয়ে বসে থাকে। সোহানার মা দূরে থেকে সব শুনছিলেন। এবার উনি দৌড়ে এসে একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকেন। কিন্তু সোহানার বাবা কোনো উত্তর না দিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকেন। কি করবেন কিছুই বুঝতে পারেন না তিনি। কয়েকজন প্রভাবশালী আত্মীয়স্বজনকে কল দিয়ে বিস্তারিত অবস্থা বলেন । সবাই ওনাকে পরামর্শ দেয় পুলিশের সাথে যোগাযোগ করার জন্য। সোহানার বাবা যেন দু-চোখে অন্ধকার দেখেন। কি করবে বুঝতে না পেরে শেষ পর্যন্ত আবার কল করেন নাজমুল সাহেবকে।

নাজমুল সাহেব তখন সবে মাত্র ঘুম থেকে উঠে খাওয়া দাওয়া করেছেন।
কল ধরেই সালাম দিলেন তিনি।
সালামের উত্তর দিয়ে কোনো ভূমিকা ছাড়াই সোহানার বাবা একে একে সব কাহিনী বলতে শুরু করেন। নাজমুল সাহেব ওনাকে মাঝখানে থামিয়ে দিয়ে বলেন, “দেখেন টাকার কথা বলে লাভ নেই। আমার হাতে যা ক্যাশ ছিল সব বিয়ের পিছনে খরচ হয়ে গেছে। এজন্য আমি মামলা করে এসেছি। আপনার এতো টাকা থাকলে টাকা দেন গিয়ে। আর নয়তো দেখেন পুলিশ কি করতে পারে। ”

” তুমি এসব কি বলতেছ বাবা! ”

” এর বেশি আর কিছু বলতে পারব না আমি। এমনিই আপনারা মেয়ে আমার মাথা খেয়ে ফেলছে। আপনারা তার অনিচ্ছায় বিয়ে দিয়েছেন আর সেসবের মাশুল আমি দিছি। সবশেষে সে আমাকে ছেড়ে চলে গেছে অন্য কোনো ছেলের কাছে যেতে। এখন আবার তার পিছনে কোন কারণে টাকা ঢালব? ”

” তুমি আমার মেয়ের জামাই, তুমি করবে না তো কে করবে!”

” এসব বলে লাভ নেই, আপনার মেয়ে আমাকে তার স্বামী হিসেবেই দেখে না। সে আমার থেকে আলাদা হয়ে গেছে। এখন তার প্রেমিককে বলেন যা করার করতে। আর এমনও হতে পারে সে প্রেমিকের কাছে চলে গিয়ে টাকার জন্য নাটক করছে। সুতরাং
আমাকে আর টাকার বিষয়ে কিছুই বলবেন না। ”

কথাটা বলে সাথে সাথেই কল কেটে দেয় নাজমুল সাহেব। সোহানার বাবা হ্যালো হ্যালো করতে থাকেন ওপাশ থেকে। যখনই বুঝতে পারলেন যে মেয়ের জামাই আবারও ওনার মুখের উপরে কল কেটে দিয়েছে তখনই রাজ্যের সব চিন্তা ওনার মাথায় নেমে আসে। ওনার ভরসার শেষ জায়গাটুকুও যে নষ্ট হয়ে গেল!
.
ওনার সাড়া দুপুর কাটে চিন্তায় চিন্তায়। দুপুরের শেষ দিকে অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসতেই দ্রুত রিসিভ করেন তিনি। ওপাশে লোকটি কোনো ভূমিকা ছাড়াই জিজ্ঞেস করেন, “টাকা রেডি করেছেন?”

সোহানার বাবা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলেন, “না বাবা এতো টাকা আমার কাছে নেই। ” বলেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি।

” রাত ১০ টা বাজে এই নাম্বার আবার খোলা হবে। টাকা জোগাড় হলে কল দিবেন নয়তো আপনার মেয়ের চিন্তা বাদ দিয়ে দিন। ”

সোহানার বাবা পাল্টা কিছু বলার আগেই কল কেটে যায়। মোবাইল হাতে চিৎকার করে কাঁদতে থাকেন তিনি। কপালে থা*প্পড় দিতে দিতে বলতে থাকেন, ” আমার কপাল, আমার একমাত্র মেয়ে!”

( চলবে ইন শা আল্লাহ )

. #গল্প – #আড়ালে_কে [ #পর্ব – ১৭ ]
#লেখক – #সালাহউদ্দিন_তারিক [ জুনিয়র মুগলি ]

সারাদিন নানান ধরনের চেষ্টা করেও সোহানাকে উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। সোহানার অবস্থা সম্পর্কেও কোনো প্রকার তথ্য যোগাড় করতে পারেনি তারা। এরমধ্যে সোহানার বাবাও টাকার ব্যবস্থা করতে পারেনি। একদম দেখতে দেখতেই যেন রাত বারোটা বেজে গেল। রাত বারোটার কয়েক মিনিট পরেই ওনার হোয়াটসঅ্যাপে একটা গুগুল ড্রাইভ লিংক আসল। কোনো প্রকার ফিশিং লিংক কি না চেক করে নিয়ে সেটাতে ক্লিক করলেন তিনি। অল্প কিছুক্ষণ সময় নিয়ে একটা ভিডিও লোড হলো। ভিডিও থাম্বেলে সোহানার বিধ্বস্ত চেহারা দেখা যাচ্ছে। ভিডিওটা চালিয়ে দিতেই দেখা গেল ক্যামেরার সামনে বসে আছে সোহানা। আর ক্যামেরাটা কাঁপছে। সহজেই বুঝা যাচ্ছে যে কেউ একজন ক্যামেরাটা সেট করতেছে। অতঃপর সেটা স্থির হতেই একটা লোক হেঁটে গেল সোহানার কাছে। লোকটির চেহারা ঠিকঠাক বুঝা যাচ্ছে না। চেহারার উপরে একটা সাদা মুখোশ লাগিয়ে রেখেছে সে। সোহানাকে একটা কাঠের চেয়ারে শক্ত করে বেঁধে রাখা হয়েছে। আর তার সামনে ছোট্ট একটা টেবিল। লোকটি সোজা সোহানার পিছনে গিয়ে দাঁড়িয়েই চুলেই মুঠি ধরে নিচের দিকে টা*ন দিল। সোহানা ব্যা*থায় উহ্ করে মুখটা উপরের দিকে তুলে ফেলল। সাথে সাথেই লোকটি টেবিলের উপরে রাখা একটা পেয়ালা হাতে তুলে নিল। স্টিলের পেয়ালাটিতে ঠিক কি রয়েছে তা নাজমুল সাহেবের চোখে পড়ল না। কিন্তু পেয়ালায় থাকা হলুদ তরল পদার্থগুলো সোহানার মুখে ঢেলে দিতেই ওয়াক ওয়াক করে বমি করতে লাগলো সে। পিছনে থাকা লোকটি সাথে সাথে তার গ্লাভস পরা হাতে সোহানার চোয়াল দু’টো চিপে ধরল। নড়াচড়ার চেষ্টা করতেই তার নাকটাও টি*পে ধরা হলো। বাধ্য হয়ে মুখে থাকা জিনিস গুলো খেয়ে ফেলতে হলো সোহানার। এবার লোকটি তাকে ছেড়ে দিয়ে ক্যামেরার সামনে চলে এলো। তারপর ইচ্ছেকৃত পরিবর্তিত কন্ঠে বলল, “নাজমুল সাহেব, কখনো কাঁচা ডিম খেয়েছেন বলে তো মনে হয় না। আপনার প্রিয়তমার গলাতে এখন সেটাই ঢালা হযেছে। পেটে যেতেই তার আরো বেশি বমি পাবে। আর তারপর পেটে যা যা আছে সব বমি করে দিবে। তার পেট সম্পূর্ণ খালি হলে একদম বলিউডের নায়িকাদের মতো জিরো ফিগার মনে হবে। আর তারপর, হাহাহা,তারপর! ব্ল্যাক মার্কেটে জিরো ফিগারের নায়িকা হিসেবে চড়া দামে বি*ক্রি করে দিব তাকে। আর বিক্রির আগে সোনামনির সাথে কি কি হবে তা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন!” এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো শেষ করে হো হো করে হাসতে থাকে লোকটি। আর তার পরপরই ভিডিওটা বন্ধ হয়ে যায়।

নাজমুল সাহেবের শরীর শিরশির করতে থাকে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ভেবে। কত খারাপই না হতে পারে সেই দিনগুলো! বেশি দেরি না করে থানাতে কল করেন তিনি। তারপর এস আই আজিজ সাহেবের হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার নিয়ে সেই নাম্বারে ভিডিওটা পাঠিয়ে দিলেন। আজিজ সাহেব সাথে সাথে ভিডিওটা দেখেই ফিরতি মেসেজ পাঠান নাজমুল সাহেবকে, “আমাদের সাইবার টিম কাজ করতেছে, অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে। আপনি চিন্তা করবেন না, ইন শা আল্লাহ আমরা দ্রুতই শেষ করতে পারব।”

নাজমুল সাহেব তার বিপরীতে কিছুই লিখতে পারেন না। শুধু একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে ওনার ভিতর থেকে। সারারাত চেষ্টা করেও কোনো কিছুই করতে পারে না পুলিশের অনুগত সাইবার টিম। সোহানার মোবাইল ফোনের সর্বশেষ অবস্থান বের করতে সক্ষম হলেও সেখানের আশেপাশে এমন কিছু পাওয়া যায়নি যেখানে লুকিয়ে থাকা যায়। শীতলক্ষ্যা নদীর উপরে দিয়ে যাওয়া একটা ব্রীজের উপরে তার সর্বশেষ লোকেশন পাওয়া যায়। পুলিশ ধারনা করতে পারে যে এখান থেকেই মোবাইলটা হয়তো পানিতে ফেলে দেওয়া হয়েছে।
আর কল দিয়ে টাকা দাবি করা সিমগুলো ট্রেস করার চেষ্টা করে কোনো লাভ হয় না। শেষে সিম দুটো রেজিস্ট্রেশন করা লোকদের সাথে যোগাযোগ করা হয় সিম কোম্পানির সহযোগীতায়। উভয় সিমের মালিকই জানায় যে তাদের সিমটা সবে মাত্র চুরি হয়েছে মোবাইলের সাথে। এখনো সিম তুলতে পারেনি তারা।

এধরনের উত্তরের পরে পুলিশের আর কিছুই করার থাকে না। আজিজ সাহেব চেয়ার টেবিলে বসে নিজের কপাল চাপড়ান আর ভাবেন, ” শা*লা কে খুঁজে বের করতে কি স্যাটেলাইট হ্যা*ক করতে হবে এখন! ”

পরদিন সকাল সকাল থানায় যায় সোহানার বাবা, ওনার আগেই সেখানে অবস্থান করছিল নাজমুল সাহেব। আজিজ সাহেব ওনাদের সাইবার স্পেশালিস্ট কে ডাকেন। সেই লোক এসে বিস্তারিত বুঝিয়ে বলেন যে কোনো চেষ্টাই তারা বাদ রাখেননি। কিন্তু এতে কোনো কাজ হচ্ছে না। যে লোক এই কাজ করেছে, সে কোনো সধারণ লোক নয়। ডার্ক ওয়েভের সাথে কানেক্টেড কোনো লোক সে। যার জন্য সিকিউরিটির প্রতিটি ধাপে ধাপে সে সম্পূর্ণ নিরাপদ। আর এমন ভাবে প্রতিটি কাজ করেছে যে কারো পক্ষেই তার অবস্থান যাচাই করা সম্ভব নয়। যদি না সে রাস্তায় নেমে আসে।

হতাশ হয়ে ফিরে আসতে হয় সোহানার বাবা ও নাজমুল সাহেবকে। সোহানার বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে তিনি কিছুই বলতে পারেন না নাজমুল সাহেব। মাথা নিচু করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকেন কতক্ষণ। সোহানার বাবাও ওনার সাথে কোনো কথা না বলে একা একা চলে যান। তিনিও চলে আসেন নিজের বাড়িতে।

দুপুররের খাবারের সময় একই টেবিলে বসেন নাজমুল সাহেবের পরিবারের সবাই। এরই মাঝে নাজমুল সাহেবের মা জিজ্ঞেস করেন, “বউমার কি হয়েছেরে? ”

নাজমুল সাহেব যেন আকাশ থেকে প*ড়েন। ওনার মুখ দিয়ে কোনো শব্দ বের হয় না। কতক্ষণ চুপ থেকে আবারও খেতে শুরু করেন তিনি। ওনার মা আবারও প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন, “কি হয়েছে বলছিস না কেন আমাকে?”

নাজমুল সাহেব ছোট করে উত্তর দেন, “তেমন বেশি কিছু হয়নি। খাওয়া শেষ কর তারপর বলব সব।”

নাজমুল সাহেবের বাবা মাঝখানে থেকে বলে উঠেন, “এখন বলতে কি সমস্যা তোর? বল কি হয়েছে। ”

নাজমুল সাহেব কিছু একটা বলতে যাবেন অমনি ওনাকে থামিয়ে দিয়ে নাদিয়াই উত্তর দিয়ে দেয়, “খাবার টেবিলে বসে এতো কথা বলতে হয় না। ভাইয়া এমনিই কত জার্নি করে এসেছে। খাওয়া শেষ করুক তারপর শোনা যাবে না না-কি! ”

বাড়ির বড়দের কথা অমান্য করা গেলেও, ছোট মেয়েদের কথা ফেলে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাই আদরের মেয়ে নাদিয়ার কথার পরে আর কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলেন না। শান্তি মতো খেতে দিলেন নাজমুল সাহেবকে। খাওয়ার পরেই সবাই গল্প শোনোর মতো করে গোল হযে বসল। যদিও নাদিয়াকে সকালেই সব কিছু বলেছিলেন নাজমুল সাহেব, তবুও আবার শুনতে চায় সেও। নাজমুল সাহেব ভালো করেই জানেন ওনার মায়ের হার্ট দূর্বল। তাই যথা সম্ভব অল্প আর সাধারণ করে বললেন কাহিনীটা। কিন্তু এতেও প্রলাপ করতে শুরু করলেন বৃদ্ধা। গানের সুরে সুরে বলতে লাগলেন “এ কেমন মাইয়া ঘরে আনছিলাম আমি। আমার পোলাডার জীবনডা শেষ কইরা দিছি। ” সোহানার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ওনার মাথা ব্যাথা নেই, বরং ছেলের জীবন নিয়েই যত ভাবনা।

নাজমুল সাহেব এসব শোনার জন্য বসে থাকলেন না। দ্রুত স্থান ত্যাগ করে ছাঁদে চলে গেলেন। নাজমুল সাহেবের বাবা কিছুই বললেন না, কিন্তু মনে মনে চিন্তা করে রাখলেন সোহানাকে পাওয়া গেলেই ওর বাবাকে একগাদা কথা শুনাবেন তিনি। কিভাবে আরেক জায়গায় সম্পর্ক রাখা মেয়েকে চুপচাপ বিয়ে দিতে পারলেন। আর নাদিয়া কোনো কথা না বলে নিজের মা কে স্বান্তনা দিতে লাগল বিলাপ থামানোর জন্য। এই কাজ যে ওনার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তা বুঝাতে থাকল। কিন্তু বৃদ্ধা মহিলা কোনো কথা না শুনে বিলাপ করতেই থাকল….।

ছাঁদে আসার মিনিট দশেক পরেই নাজমুল সাহেবের ফোন হাতে নিয়ে ছাঁদে আসল নাদিয়া, “ভাইয়া দেখ অফিস থেকে কল আসছে মনে হয়।”

নাজমুল সাহেব তার হাত থেকে ফোন নিয়ে দেখলেন বসের কল। রিসিভ করে কানে ঠেকাতেই ওপাশ থেকে বসের ভূমিকাহীন কথা ভেসে আসল, “নাজমুল সাহেব, আমি জানি আপনার উপর দিয়ে একটু ঝামেলা যাচ্ছে। কিন্তু আমি বাধ্য হয়েই কল দিয়েছি আপনাকে। একটা জরুরি মিটিং আর কিছু কাজ আছে। যদি সম্ভব হয় তবে চলে আসুন “।

নাজমুল সাহেবের ভাবলেশহীন উত্তর, ” স্যার আমি আগে থানায় কল করে জানিয়ে দিই অফিসারকে। এস আই সাহেব বলছিলেন বাড়ি ছেড়ে কোথাও যাওয়ার আগে ওনাকে জানাতে।”

” আচ্ছা তবে দেখুন উনি কি বলেন। সমস্যা না থাকলে চলে আসুন, আমি আর কল দিব না। ”

” ঠিক আছে স্যার..।”

বসের কল কেটে দিয়ে এস আই আজিজ সাহেবকে কল দিলেন নাজমুল সাহেব। ওনাকে অফিসের বসের কথা সম্পর্কে জানালো। আজিজ সাহেব নির্দিধায় অনুমতি দিয়ে দিলেন, ” অবশ্যই যেতে পারেন অফিসে। কোনো সমস্যা নেই। ”

” না মানে স্যার আপনি বলছিলেন তো জানাতে তাই কল দিলাম আপনাকে “।

” জি জি, তা তো অবশ্যই। আপনি যেতে পারেন এখন। জানিয়ে খুব ভালো করেছেন। আমি চাই না আপনারা নিজে থেকে কোনো কাজ করতে গিয়ে বিপদে পরেন। তাই জানিয়ে রাখতে বলা হয়েছিল। ”

নাজমুল সাহেব আর কথা না বাড়িয়ে ছোট্ট করে ধন্যবাদ দিয়েই কল কেটে দিলেন। তারপর ঝটপট নিচে গিয়ে তৈরি হতে থাকলেন অফিসে যাওয়ার জন্য। এই দুপুর বেলা অফিসে যাচ্ছে দেখেও ওনাকে নানান প্রশ্ন করলেন ওনার মা। তারপর আবার বিভিন্ন দোয়া পরে শরীরে ফুঁ দিয়ে বললেন, “সাবধানে যাস বাবা। ”

নাজমুল সাহেব মুচকি হেসে মায়ের পা ছুঁয়ে সালাম করে ঘর থেকে বের হলো। অতঃপর বাইরে গিয়েই সবার আগে একটা সিগারেট কিনলেন। যেই সেটা ধরাতে নিবেন ওমনি মনে পড়ল এইমাত্র ওনার মা দোয়া দুরুদ পড়ে শরীরে ফুঁ দিয়ে দিয়েছে। তাই এখনই একটা সিগারেট ধরিয়ে সেটার ধুঁয়া আর শরীরে লাগালেন না তিনি। প্রচন্ড ইচ্ছে থাকা স্বত্তেও সিগারেটটা প্যাকেটে ঢুকিয়ে রওনা হলেন অফিসের উদ্দেশ্যে।

পুলিশ আজকের সারাদিনও চেষ্টা করে গেল সোহানার অবস্থান যাচাইয়ের জন্য। আর আজিজ সাহেব এই দ্বায়িত্ব সাইবার এক্সপার্টদের হাতে দিয়ে নিজে চলে গেলেন ফরেনসিক এক্সপার্টের কাছে। সিয়াম হ*ত্যা মামলায় ওনার করা অনুমান সম্পর্কে জানালেন এক্সপার্টকে। ফরেনসিক এক্সপার্টও ময়না*তদন্তের রিপোর্ট ও খুনের সাথে সম্পৃক্ত অন্য সব কিছু খুঁটিয়ে দেখল। সবশেষে আজিজ সাহেব কে জানালো, ” ছু*রিটা ডে*ট বডির পেটের ডান পাশ থেকে যেভাবে পয়তাল্লিশ ডিগ্রি এঙ্গেলে ভেতরের দিকে এসেছে এটা থেকে প্রায় নিশ্চিত হওয়া যায় যে খুনি বাম হাত ব্যবহার করেছে। তারপর মাথার আঘাত টা দেখুন, এটা আবার বাম সাইড থেকে কোনাকোনি ভাবে লেগেছে। এবং পিছনের সাইডে। আপাত দৃষ্টিতে দেখলে এই আঘাত কোনো ডানহাতের কাজ মনে হলেও ভিক্টিমের মাথার পিছনের দিকে আছে এটা। যার থেকে বুঝা যায় আঘাত কেউ পিছন থেকে এসে করেছে। আর এজন্যই বাম হাতের হিসেব এখানে উল্টে যাচ্ছে। দুইটা আঘাত থেকে ১০০ ভাগ নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে যে এটা বাম হাত ব্যবহার কারী কোনো ব্যক্তির কাজ। ”

ফরেনসিক এক্সপার্টের এই বিশাল ব্যাখ্যা আজিজ সাহেবের ধারনাকে সম্পূর্ণ সত্যি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করল। খুশিতে হাসি মুখে এক্সপার্টের সাথে হ্যান্ডসেক করলেন তিনি। তারপর থানায় এসে সিয়ামের কেসের সাথে জড়িত থাকা সবার নাম একে একে লিস্ট করলেন তিনি। আজকে যদিও ওনার নাইট ডিউটি। তবুও দিনের বেলা অবদি থানাতে বসে থাকলেন কেবল সিয়ামের কেসটার জন্য। সবগুলো নাম লিস্ট করা শেষে বাড়িতে গিয়ে ক্লান্ত দেহটা বিছানায় এলিয়ে দিলেন।।

আজিজ সাহেবের সেই ঘুম ভাঙতে ভাঙতে সন্ধ্যা পাড় হয়ে যায়। তাড়াতাড়ি উঠে ফ্রেশ হয়ে চা নাস্তা পর্ব সেরে থানায় চলে আসেন তিনি। এরই মধ্যে প্রায় এশার নামাজের সময় হয়ে আসে। সোহানার অনুসন্ধান কতদূর এগিয়েছে তার খোঁজ নিয়ে মসজিদের দিকে পা বাড়ান তিনি। রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে চিন্তা করেন, “সেই যে জুমার দিনে মসজিদে গেছিলাম আর যাওয়া হয় নাই। আজকে একটু কপাল ঠেকিয়ে দেখিয়ে দেখি কেস দুইটা একটু সহজ হয় না-কি।”

অতঃপর আজিজ সাহেব নামাজ শেষ করে এসে চেয়ারে হেলান দিয়ে শুয়ে শুয়ে পড়েন আবারও। ক্লান্তিতে আবারও চোখ লেগে যায় ওনার।
.
.
আজিজ সাহেব রাতের খাবার খেয়ে অন্য সব অফিসারদের সাথে কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলেন। একেকজন একেক বিষয়ে গল্প করার মাঝে একজন বলেন, শীত এসে পরল থানার সামনে কি সুন্দর ব্যাডমিন্টন খেলা হচ্ছে। আসেন আমরাও যাই একটু হাত পায়ের জং ছুটিয়ে আসি। ”
ওনার কথার সাথে অনেকেই এক মত হলেন। যারা একটু খেলায় এক্সপার্ট তারা আগে আগেই নেমে পড়লেন মাঠে। আজিজ সাহেব যখন একটা গেমের ঠিক মাঝখানে ঐ সময়ে ওনার পার্সোনাল মোবাইলে কল আসল। প্রথমবার না ধরলেও দ্বিতীয়বার ব্যাট অন্যজনের হাতে দিয়ে নিজে উঠে এলেন। ফোন ধরে স্ক্রিনে দেখলেন নাজমুল সাহেবের নাম ভাসছে। ঘড়িতে এগারোটার উপরে বাজে এই সময়ে নাজমুল সাহেব নিশ্চয়ই দরকারে কল দিয়েছেন। কলটা রিসিভ করে লাউড স্পিকার অন করে রাখলেন। কলটা নাজমুল সাহেবের ফোন থেকে আসলেও ওপাশ থেকে একটা অল্প বয়সী ছেলের কন্ঠ ভেসে আসল, ” আজিজ সাহেব বলছেন নিশ্চয়ই! ”

” হ্যাঁ এস আই আজিজ বলছি। আপনি কে বলছেন?”

” আমি কে বলছি সেটা তো আর সরাসরি বলে দেওয়া যায় না। আমি কে সেটা খোঁজার দ্বায়িত্বই তো আপনার। হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ চেক করুন। আপনার নিস্পাপ মক্কেল নাজমুল সাহেবের লোকেশন পাঠিয়েছি। ”

আজিজ সাহেব তার কথার আগামাথা বুঝলেন না। তাই আবার জিজ্ঞেস করলেন, ” কি বললেন আপনি? ”

” অতো শতো বুঝে কাজ নেই স্যার। হোয়াটসঅ্যাপে লোকেশন পাঠিয়ে দিয়েছি। ” কথা শেষে সাথে সাথে কল কেটে দিল ছেলেটি।

আজিজ সাহেব তাড়াতাড়ি হোয়াটসঅ্যাপে ঢুকে মেসেজ চেক করলেন। সত্যি সত্যি নাজমুল সাহেবের একাউন্ট থেকে একটা লোকেশন শেয়ার করা হয়েছে। এ দেখে তাড়াতাড়ি থানায় আসলেন আজিজ সাহেব। কয়জন সহকর্মীকে সাথে নিয়ে দ্রুত ঐ লোকেশন অনুযায়ী পৌঁছালেন উনি। গুগল ম্যাপ একটা অন্ধকার রাস্তায় নিয়ে গেল ওনাদের। একদম কাছাকাছি পৌঁছে গাড়ি থেকে নেমে টর্চ জালালেন দু’জন সহকারী পুলিশ। বেশিক্ষণ দেরি করতে হলো না ওনাদের কাঙ্ক্ষিত স্থানে পৌঁছাতে। টর্চের আলোর মধ্যে ধরা পরল একটি লোক। মাটিতে চিত হয়ে পরে আছে সে। আজিজ সাহেব দৌড়ে কাছে গেলেন। টর্চের আলোটা লোকটির র*ক্তাক্ত চেহারার উপরে ফেলতেই আর চিনতে অসুবিধা হলো না ওনার। দীর্ঘশ্বাসের সাথে ক’টা শব্দ বেরিয়ে আসল আজিজ সাহেবের মুখ থেকে, “আহ্ নাজমুল সাহেব……! ”

( চলবে ইন শা আল্লাহ..)