আড়ালে কে পর্ব-১৮ এবং শেষ পর্ব

0
477

. #গল্প – #আড়ালে_কে . [ #পর্ব – ১৮/শেষ ]
#লেখক – #সালাহউদ্দিন_তারিক [ জুনিয়র মুগলি ]

টর্চের আলোটা লোকটির র*ক্তাক্ত চেহারার উপরে ফেলতেই আর চিনতে অসুবিধা হলো না আজিজ সাহেবের। অতঃপর দীর্ঘশ্বাসের সাথে ক’টা শব্দ বেরিয়ে আসল ওনার মুখ থেকে, “আহ্ নাজমুল সাহেব..! ”

অতঃপর বসে নাজমুল সাহেবের হাত ও গলার নার্ভ চেক করেন তিনি। নাহ্ কোথাও নাড়াচাড়া নেই, শরীর ও ঠান্ডা হয়ে গেছে। প্রাণ পাখি হয়তো অনেক আগেই বিদায় নিয়েছে। আজিজ সাহেব এবার টর্চের আলোতে পুরো শরীর দেখে নিলেন। চেহারার উপরে অনেক র*ক্ত দেখা যাচ্ছে আর পেটের উপরেও। তারপর শার্ট ও প্যান্টের পকেট হাতড়ে নাজমুল সাহেবের ফোনটা পেয়ে গেলেন। অবাক করা কান্ড যে খুনি মোবাইলটা অব্দি নেয়নি। আজিজ সাহেব মোবাইলের লক খুললেন নাজমুল সাহেবের আঙুল ব্যবহার করেই। খুলতেই দেখলেন মোবাইলের নোট বুক এপসটা আগে থেকেই ওপেন করা আছে। আর সেখানে অনেক গুলো কথা নোট করা আছে। এসবের ফলে অনেকটাই চমকে গেলেন তিনি। খু*নি কেন ওনার ফোনে এতো কথা লিখে ফেলে যাবে! তবে এসব নিয়ে আর বিস্তারিত চিন্তা না করে সহকর্মীদের নির্দেশ দিলেন লাশ তুলে নেওয়ার জন্য। লাশ তুলে নেওয়ার লাগেই বেশ কিছু ছবি তুলে নিল। সাধারণত পুলিশ এই কাজটি করে না, কিন্তু আজিজ সাহেব নিজেই এই কেসটা তদন্ত করবেন বলে সুবিধার জন্য ছবি তুলে নিলেন।

লাশ সোজা ম*র্গে পাঠিয়ে দিয়ে থানায় এসে মোবাইল ফোনটা নিয়ে বসলেন আজিজ সাহেব। মোবাইলের নোট বুকে অনেক কথা লেখা রয়েছে। নিশ্চয়ই এর পিছনে পর্যাপ্ত কাারণ রয়েছে। আজিজ সাহেব মনোযোগ দিয়ে সব কথা পড়লেন। তারপর মোবাইলের ফোন বুক থেকে বাড়ির লোকের নাম্বার বের করে কল করলেন। নাজমুল সাহেবের বাবা কল ধরতেই আজিজ সাহেব সোজা সাপটা জিজ্ঞেস করলেন, “আপনি এই সিমের মালিকের কি হন?”

” আমি নাজমুলের বাবা, আপনি কে? ওর মোবাইল আপনার কাছে কেন?”

” আমি আপনাদের থানার এস আই আজিজুল ইসলাম বলছি। আপনার কি হার্টের কোনো সমস্যা আছে?”

” নাহ্ আমার হার্টের সমস্যা নেই, নাজমুলের মায়ের আছে। ”

” তাহলে আপনি দয়া করে একটু ওনার থেকে দূরে যান।”

” আমি দূরেই আছি, আপনি বলুন আমার ছেলের মোবাইল আপনার কাছে কেন?”

” চাচা আপনাকে কিভাবে বলব আমি বুঝতে পারছি না। আপনি দয়া করে একটু মাথা ঠান্ডা রাখবেন, আমি যা বলব তা যেন এখন চাচির কানে না যায়। ”

‘ তাড়াতাড়ি বলেন কি বলবেন। তার আগে বলেন মোবাইল আপনি কোথায় পাইছেন।”

” চাচা , আপনার ছেলের একটা এক্সিডেন্ট হয়ে গেছে। একটা সমস্যা হয়ে গেছে যার জন্য ওনার মোবাইলটা এখন আমার হাতে। ক্ষমা করবেন আমাকে,নাজমুল সাহেব আর আমাদের মধ্যে নেই। ‘ কোনো রকমে আমতা আমতা করে কথা গুলাে বলে চুপ করে রইলেন আজিজ সাহেব।

ওপাশ থেকে নাজমুল সাহেবের বাবা কিছুই বুঝলেন না। উনি উল্টো বারবার জিজ্ঞেস করতে থাকলেন, “কি হয়েছ? কই গেছে নাজমুল? ”

আজিজ সাহেব এবার সরাসরিই বলে দিলেন, ” নাজমুল সাহেব খুন হয়েছেন। ওনার লা*শ এইমাত্র ম*র্গে পাঠিয়েছি আমরা। ”

বৃদ্ধ লোক এবার যেন আকাশ থেকে পরলেন, ‘ এসব কি বলছেন আপনি? “।

” জি আমি যা বলেছি সেটাই হয়েছে। আপনি নিজেকে একটু নিয়ন্ত্রণ রাখুন অতিরিক্ত ভেঙে পড়বেন না। আপনারা স্ত্রীর থেকে আজ রাতের জন্য গোপন রাখুন সংবাদটা। ‘

ওপাশ থেকে বৃদ্ধ আর কোনো কথাই বললেন না। কেবল গোঙ্গানির শব্দ আসল আজিজ সাহেবের কানে। অতঃপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কল কেটে দিলেন তিনি। মনে মনে ভাবলেন, আল্লাহ তিনি যেন নিজেকে সামলাতে পারেন। ‘

কালকের নাজমুল সাহেব আজকে শুধুই লা*শ পরিচয় ধরে রইল। আজিজ সাহেবের কথা গুলো মাথায় রাখলেন ওনার বাবা। ছেলের খু*নের সংবাদ গোপন রাখলেন আজ রাতের জন্য। সবাই এতোক্ষণ না খেয়ে অপেক্ষা করছিল নাজমুল সাহেবের জন্য। তাই ওনার বাবা কোনো রকম নিজেকে সামলে নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই নাদিয়াকে বলল, ” তোরা খেয়ে নে, নাজমুল আজকে আসব না। ”

নাদিয়া আর উল্টো কোনো প্রশ্ন করল না। টেবিলে খাবার রেডি করে খেতে বসল। বৃদ্ধ আর সেই টেবিলে বসতে পারল না। একরাশ কষ্ট বুকে নিয়েও যথাসম্ভব স্বাভাবিক ভাবে বললেন, ‘আমার খাইতে মন চাইতাছে না। তোরা খেয়ে নে। ”

তারপর ঘরে গিয়ে একা একা কাঁদতে থাকলেন স্ত্রী ঘরে আসার আগ অব্দি। দরজার কাছে পায়ের শব্দ পেতেই নিজেকে সামলে নিয়ে উল্টোদিকে ফিরে শুয়ে পরলেন তিনি। একবারের জন্যও স্ত্রীকে বুঝতে দিলেন না যে তিনি কাঁদছেন।
.
.
আজিজ সাহেব নিজের উদ্যোগেই সকাল ভোর হওয়ার আগে লা*শের ময়না*তদন্ত শেষ করলেন। তারপর সকাল বেলাতে ডেট বডি নিজের সাথে নিয়ে তার বাড়িতে পৌঁছে গেলেন। ফ্ল্যাটের নিচে নেমে আসল ওনার পরিবারের সবাই। বৃদ্ধা মা আর আদরের ছোট বোনের বুঝতে অসুবিধা হলো না যে কি হয়েছে। কফিন বের করা মাত্রই ছেলের কা*টা চেহারা দেখে চিৎকার করে অজ্ঞান হয়ে গেল বৃদ্ধা মা। আজিজ সাহেবর সাথে আসা মহিলা পুলিশেরা ব্যস্ত হয়ে পড়ল বৃদ্ধা মহিলাকে নিয়ে। নাদিয়া একবারের বেশী তাকাতে পারল না লাশের দিকে। চিৎকার করে দূরে সরে গেল সেও। তার কান্না দেখে কেউ নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারল না। সবার চোখের কোণেই পানি জমে গেল। আজিজ সাহেব কখনো এভাবে লাশ নিয়ে সরাসরি কারো বাড়িতে যায়নি। আজকে এই প্রথম এসেই এতোটা অপ্রস্তুত হয়ে গেলেন যে মনে মনে ঠিক করে নিলেন আর কখনো লা*শ নিয়ে কারো বাড়িতে যাবেন না তিনি।

সময় বাড়তে থাকল, লোকজন ভীর জমাতে শুরু করে দিল। সোহানার বাড়িতে খবর যেতেই সেখান থেকেও লোকজন এসে জড়ো হয়ে গেল। এতোক্ষণ ধরে কেউ আজিজ সাহেবকে কিছু জিজ্ঞেস না করলেও সোহানার এক অল্প বয়সী চাচা ওনাকে কয়েকটা প্রশ্ন করলেন। আজিজ সাহেব ওনাকে সুন্দর করে বুঝিয়ে বললেন কিভাবে ওনার খু*নের ব্যপারে জানতে পারলেন উনি। তবে কৌশলে ওনার মোবাইলের নোট বুকে কিসব লেখা ছিল তা উল্লেখ করলেন না। উনি শুরুতেই ঠিক করে নিয়েছিলেন, “যেহেতু নাজমুল সাহেব খু*ন হয়েই গেছেন। সেহেতু আর কোনো কিছু নিয়েই আলোচনা করবেন না তিনি। শুধু ওনার পরিবার থেকে একটা কেস লিখে নিয়ে খু*নিকে তালাশ করবেন ।

লা*শ দাফনের পর্বের অনেক কাজ অবদি আজিজ সাহেব সেখানে উপস্থিত থাকলেন। কান্নার রোল একটু কমে আসলে লা*শের বাবার কাছে গিয়ে মামলার ব্যপারে কথা বললেন তিনি। নিজ থেকেই আগে ভাগে বলে রাখলেন, দেখুন মামলা নিয়ে কোনো চিন্তা করবেন না। এই খু*নিকে ধরতে আমি আমার সর্বোচ্চ শক্তি ব্যয় করব। আমি শুধু অফিশিয়াল অনুমতি পাওয়ার জন্য আপনাকে কেস করার জন্য বলতেছি। বৃদ্ধ ছোট করে উত্তর দিল, ” আচ্ছাহ্, কি করতে হবে আমাকে?”

আজিজ সাহেব ওনাকে সব বুঝিয়ে দিয়ে কাগজপত্রে কিছু জায়গায় সাইন করিয়ে নিলেন। তারপর ওনাদের ধৈর্য্য ধরার উপদেশ দিয়ে থানায় চলে এলেন। কিছু মূহুর্তের জন্য ভুলেই গেলেন যে অপহৃত হওয়া সোহানাকে খোঁজার দ্বায়িত্বও ছিল ওনার কাঁধে। সেসবের চিন্তা বাদ দিয়ে উনি নাজমুল হ*ত্যা কেস নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। ময়না*তদন্ত রিপোর্টের পাশাপাশি কিছু ফরেনসিক রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করলেন পরের দিনের জন্য। সেসব হাতে আসলেই মূল কাজ শুরু করলেন তিনি।

সব কাগজপত্র নিয়ে ফরেনসিক এক্সপার্টের সাথে দেখা করলেন আবারও। ময়না*তদন্তে উঠে আসা রিপোর্ট আর শরীরের বাহ্যিক রিপোর্ট সমূহ ঘাটাঘাটি করলেন দু’জন মিলে।
নাজমুল সাহেবের মুখের উপরে বেশ কয়েকটি দাগ আছে ছু*রির পোঁ*ছের। তার অধিকাংশই ছিল গালের ডান পাশে। ওনারা দু’জনেই ধারনা করেন যে এগুলো ওনাকে খুু*ন করার পরে করা হয়েছে ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে। পেটের অনেক গভীরে একটা ছু*রি ঢু*কিয়ে খুু*ন করা হয়েছে ওনাকে। সেটাও একই ভাবে পেটের ডান দিকে করা হয়েছে। গভীর ক্ষতের ফলে প্রচুর র*ক্তক্ষরণ হওয়ার পরে মাটিয়ে শুয়ে পরতেই মুখ ও বুকের উপরে কিছু এলোপাতাড়ি আঘাত করা হয়। যার অধিকাংশই শরীরের ডান দিকে।

এ সমস্ত কিছু আলোচনা পর্যালোচনা শেষে দু’জনেই একমত হলেন যে কেউ ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকেই খু*ন করেছে ওনাকে এবং খুনি একজন বামহাতি। খু*নি বামহাতি! এই বিষয়ে একমত হওয়ার সাথে সাথেই সিয়াম হ*ত্যা কেসটাও আজিজ সাহেবের মাথায় ঘুরতে থাকে। কোথাও সেই বামহাতি আর এই বামহাতি একই ব্যক্তি নয়তো!

না না না, আর বেশি কিছু ভাবতে পারেন না তিনি। ফরেনসিক এক্সপার্টের থেকে বিদায় নিয়ে সোজা নিজের বাড়িতে চলে যান তিনি। ততক্ষণে বিকাল হয়ে আসছে। বউকে জানিয়ে রাখলেন, ‘আমি এখন ঘুমাতে যাচ্ছি। আসরের আজান দিলেই ডেকে দিবা বহুত কাজ বাকি আছে। ‘
.
.
বিকালে উঠে আসরের নামাজ পড়ে বউয়ের হাতের চা-নাস্তা খেয়ে আবার থানায় চলে গেলেন আজিজ সাহেব। চেয়ারে বসেই নাজমুল সাহেবের মোবাইলটা হাতে নিলেন। ইতিপূর্বেই মোবাইল ফোনটার লক উনি পাল্টে নিয়েছিলেন। তাই ফোনের কোনো জায়গায় পৌঁছাতে বেগ পেতে হয়নি ওনার। একে একে সব জায়গা খুঁজেও নিজের সুবিধা হওয়ার মতো কিছুই পেলেন না। শুধু মাত্র নোটবুকে লিখে রাখা তথ্যগুলো ওনাকে একটা ধারনা করতে সাহায্য করল। শেষে কি মনে করে একজন মোবাইল এক্সপার্টকে নিজের অফিসে ডাকলেন তিনি। অল্প বয়সী একটা ছেলে এসে বসল ওনার সামনের চেয়ারটাতে। মোবাইলটা তার হাতে দিয়ে আজিজ সাহেব বললেন, ” এটার সবগুলো ব্রাউজার চেক করেছি আমি। সব জায়গার ভিজিটিং হিস্ট্রি মুছে ফেলা হয়েছে। তোমার কাজ হবে সেসব মুছে ফেলা হিস্ট্রি খুঁজে বের করা। ”

ছেলেটি ওনার কথা শুনতেই হেসে বলল, ” স্যার এটা তেমন বিশেষ কোনো কাজই নয়। ব্রাউজার থেকে ব্রাউজিং হিস্ট্রি ডিলেট করলেও জিমেইল একাউন্টের এক কোণায় সেসব ঠিকই থেকে যায়।”

” তাই নাকি! তবে এখুনি চেক করে জানাও সন্দেহজক কিছু আছে কি না। ”

ছেলেটি দ্রুত তার হাত চালালো। মাত্র দশ মিনিটের মধ্যেই নিজের কাজ শেষ করে ফেলল সে। অতঃপর আজিজ সাহেবকে বলল, ” স্যার উনি অতো বেশি কিছু ব্রাউজ করেনি। কিন্তু! উনি ইদানীং কিছু একটা শিখছিলেন। ”

” কি জিনিস?”

” ডার্ক ওয়েভের ব্যপারে। ”

” এটা আবার কি জিনিস? ”

” এটা এমন এক নিষিদ্ধ সাইট বা কালো বাজার। যেখানে ইলিগ্যাল সবকিছুই বৈধ ভাবে করা হয় সম্পূর্ণ গোপন ভাবে।”

” তো এসবের থেকে কি ধারনা করা যায়? ”

” নাজমুল সাহেব এই ডার্ক ওয়েবে ভিজিট করার পূর্বে সব শিখেছেন। তারপর সেখান থেকে হয়তো কোনো কাজ করেছিলেন।”

” যেখানে কি অপহরণ করার বিষয়ে কোনো সুবিধা আছে?”

” জি স্যার, চাইলেই টাকা দিয়ে লোক ভাড়া করা যায় গোপনীয়তার সাথে। ”

” কার সাথে এসব চুক্তি করা হয়েছে তা জানা যাবে?”

” তা শুধু আমার পক্ষে না, কারো পক্ষেই জানা সম্ভব নয়। এই সাইটের এসব কিছুই সম্পূর্ণ গোপন থাকে। তাই কি ডিল করেছেন এবং কার সাথে করেছেন কিছুই আমরা বলতে পারব না। ”

” ঠিক আছে তবে তুমি যেতে পারো, তুমি বের না করতে পারলেও এটা আমি বের করতে পারব। ”

ছেলেটা ওনাকে সালাম দিয়ে বেরিয়ে গেল সেখান থেকে। আজিজ সাহেব এবার নাজমুল সাহেবের বিরুদ্ধে কোনো কেস আছে কি-না যাচাই করতেই পেয়ে গেলেন সেটা। একটা সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছিল সোহানার পক্ষ থেকে। যেখানে উল্লেখ করা হয় যে নাজমুল সাহেব তার উপরে শারীরিক নির্যাতন করেন। যার সাথে প্রমান স্বরূপ ছবিও রয়েছে। আজিজ সাহেবের চতুর মস্তিষ্ক দুইয়ে দুইয়ে চার মিলাতে বেশি দেরি করল না। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসায় কাজ সেখানেই থামিয়ে দিয়ে নামাজের জন্য মসজিদে চলে গেলেন।

নামাজ শেষ করে এসে নিজের ইউনিফর্ম পরিবর্তন করে সাদা পোশাক পরে নিলেন। সাথে আরো একজন সহকর্মীকেও সাদা পোশাক পরতে বললেন। তারপর একসাথে দু’জনে চলে গেলেন সোহানার এলাকায়। সোহানার কয়েকজন ক্লাসমেটকে খুঁজে বের করে তাদের থেকে তথ্য সংগ্রহ করলেন সোহানার ব্যাপারে। নিশ্চিত হলেন যে সোহানার একটা ছেলের সাথে সম্পর্ক ছিল। আজিজ সাহেব সবাইকেই ওনার মোবাইল থেকে একটা ছবি দেখালে তারা নিশ্চিত করল যে এটাই সেই ছেলে।

আজিজ সাহেব আর দেরি করলেন না। দ্রুত থানায় এসে পোশাক পরিবর্তন করে নিজের ইউনিফর্ম পরে নিল। তারপর আরো ৩ জন সহকর্মীকে নিয়ে থানার নির্ধারিত গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পরলেন। পথে একটা জায়গায় ড্রাইভারকে থামিয়ে দিলেন তিনি। তারপর নেমে গেলেন সবাই। একটা বড়সড় চায়ের দোকানে অনেকেই চা খাচ্ছেন। ওনাদের দেখে অনেকেই দাঁড়িয়ে গেলে আজিজ সাহেব বলেন, “আমরাও চা খেতে এসেছি আপনারা বসেন। ”

উনিসহ্ সবার জন্য এক কাপ করে চায়ের অর্ডার দিয়ে সাথে আরেক কাপ বেশি বানাতে বললেন তিনি। দোকানদার সবার হাতে এক কাপ করে দিয়েও একটা কাপ অতিরিক্ত থেকে যাওয়ায় জিজ্ঞেস করলেন, ” এই কাপ কাকে দিব স্যার? ”

আজিজ সাহেব হাতের ইশারায় দেখালেন, “ঐ যে কোণায় একটা ছেলে বসে আছে ওকে দেন। ”

দোকানদার চায়ের কাপটা ঐ ছেলের হাতে দিয়ে বলল, “স্যার পাঠিয়েছে আপনার জন্য। ”

ছেলেটা চায়ের কাপ হাতে নিয়ে আজিজ সাহেবের দিকে তাকালেই তিনি হাতের ইশারায় কাছে ডাকেন তাকে। ছেলেটা আর কেউ নয়, সাইফার বড় ভাই “সাইদুল।”

আজিজ সাহেব তাকে ওনার পাশে বসিয়ে বললেন, “কি ব্যাপার সাইদুল! বোনের শোক কেটেছে?”

সাইদুল মাথা নিচু করে রাখল কতক্ষণ। তারপর বলল, ” আপনি তো সব জানেনই স্যার। ”

” হ্যাঁ তা তো অবশ্যই। আশাকরি এখন তুমি ভালোই আছো। যাই হোক তোমার সাথে দেখা হয়ে ভালোই হলো। ” বলেই পকেট থেকে একটা কাগজ আর কলম সাইদুলের হাতে দিয়ে বললেন, “নাও তো তোমার একটা সাইন কর দেখি এখানে। ”

সাইদুল অবাক চোখে তাকিয়ে থাকলে আজিজ সাহেব ঘাড় নেড়ে ইশারা করলেন সাইন করার জন্য। সাইদুল সাইনটা করে দিতেই কাগজটা হাতে নিয়ে ভালো করে দেখে বললেন, “বাহ্ সাইদুল। তোমার বাম হাতের সাইনও যে সুন্দর। আমার ডান হাতের লেখাও অতোটা ভালো না”

সাইদুল অবাক হয়ে বলল, ” ঠিক বুঝলাম না স্যার। ”

আজিজ সাহেব কোনো কথা না বলে কোমড় থেকে হ্যান্ডকাফটা খুললেন। তারপর সেটা সাইদুলের হাতে লাগিয়ে দিয়ে বললেন, “আর বেশি বুঝতে হবে না বাচ্চা ছেলে। বাইরে চলে এসো। ”

অতঃপর সাইদুলকে টানতে টানতে গাড়িতে তুলে নিলেন ওনার সহকর্মীরা। থানায় এনে একটু জেরা করতেই সে স্বীকার করে নিল যে সিয়ামকে সেই খু*ন করেছে। নিজের বোনের হ*ত্যার প্রতিশোধ নিতে।

এরপরও আজিজ সাহেব তাকে কি*ল ঘু*ষি দিতে থাকলেন আর জেরা করতে লাগলেন, “বল সোহানার সাথে তোর কিসের সম্পর্ক ছিল। ”

সাইদুল শুরুতে স্বীকার করতে না চাইলেও বাধ্য হয়ে করতেই হলো যে তার সাথে সোহানার অনেক বছরের প্রেম ছিল। আজিজ সাহেব এবার হাঁপাতে হাঁপাতে একটা চেয়ারে বসে বলল, “আর কস্ট করতে হবে না তোর। বাকিটা আমি বলে দিচ্ছি। বিয়ের পরেও তুই সোহানার সাথে সম্পর্ক রেখেছিলি যা নাজমুল সাহেবকে কষ্ট দেয়। এবং যখন তিনি সব কিছু জানতে পারেন তখনই অত্যাচার করেন সোহানার উপরে। তারপর সোহানা কেস করে রাখলে সেটা কোনো ভাবে জেনে যায় নাজমুল সাহেব। তাই আবার সোহানার সাথে ভালো ব্যবহার করতে থাকেন। চেষ্টা করেন সেভাবে ঠিক করার। কিন্তু পরিস্থিতি খারাপ হলে একদিন ওনাদের মধ্যে অনেক ঝামেলা হয় আর সোহানা তার বাড়িতে চলে যায়। আমি কি ঠিক বলছি? ”

সাইদুল সম্মতি জানিয়ে বলে, ” হুম সেদিন আমি ওনার ঐ ভাড়া বাসায় গিয়েছিলাম এটাই হয়তো কোনো ভাবে জেনে গেছিলেন তিনি। উনি হয়তো সোহানাকে মেরেই ফেলতেন, কিন্তু আগেই কেস করা থাকায় মারতে পারেননি ভয়ে। কিন্তু ভাড়া করা লোক দিয়ে ঠিকই অপ*হরণ করায় সোহানাকে।”।

” এটা তুই কি করে বুঝলি? ”

” সোহানা অনেক আগেই ওনার ফোনের লোকেশন আমার কাছে শেয়ার দিয়ে রেখেছিল। আমি তাই ওনার অবস্থানের উপরে নজর রেখেই বুঝতে পারি যে উনি হয়তো কিছু একটা করছে। কারণ উনি এমন সব জায়গায় যাচ্ছিলেন যেখানে ওনার যাওয়ার কথা না। আর ঝামেলার দিন রাতে সোহানার গ*লায় উনি খুব বাজে ভাবে টি*পে ধরেন কিন্তু মা*রতে পারেন না খালি কেসটার জন্য। আর এসব থেকে যখন ওনার উপরে সন্দেহ হয় তারপরই একটা খালি জায়গায় ওনাকে আক্রমণ করি আমি।”

” হ্যাঁ, কিন্তু সেখানে গিয়ে তুই পিছন থেকে মাথায় বা*ড়ি দেওয়ার আগেই তোকে দেখে ফেলে, আর ধস্তাধস্তি হয়, এজন্য ওনার নখের নিচে তোর শরীরের চামড়াও পাওয়া যায়। ”

” জি, সেই সময়ই উনি স্বীকার করছিল যে অপহরণ তিনিই করিয়েছেন ডার্ক ওয়েভ থেকে লোক ভাড়া করে। যেটা কেউ কোনদিন জানতে পারবে না। ”

আজিজ সাহেব হো হো করে হাসেন আর বলেন, ” আর এজন্যই তুই মোবাইলের নোট এপসে সব লিখে দিয়েছিলি যেন নাজমুল সাহেবের খারাপ দিকগুলো চিন্তা করে আমি আর তার খু*নিকে ধরতে বেশি গুরুত্ব না দেই। ”

সাইদুুল চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলে, আজিজ সাহেব তার মু*খ টি*পে ধরে বলে, “একটা পরকীয়া কতটা মানুষকে শেষ করে দিল দেখলি তো! ”

এখন আর কারো মুখে কোনো কথা নেই, একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়া আর কিছুর শব্দ পাওয়া গেল না পুরো ঘর জুড়ে…..। যুগ যুগ ধরে পরকীয়া হয়তো এভাবেই অনেক পরিবার ধ্বংস করে বীর দ্বর্পে এগিয়ে যাবে…..।

( সমাপ্ত )