আবদ্ধ আমি পর্ব-১৩

0
421

#আবদ্ধ_আমি
#নিয়াজ_মুকিত
#১৩তম_পর্ব

জীবনের প্রথম গোয়েন্দাগিরি করছি।অভিজ্ঞতা নেই বললেই চলে।আশা করছি প্রথম বারেই সফল হবো।
তাদের কথা ‌শুনে উঠে দাঁড়িয়ে গাড়ির দিকে রওনা দেই আমি।আমার দিকে একবার তাকায় নিধি।তবে চিনতে পারে‌নি যে সেটা বুঝতে পারি আমি।

কিছুটা দৌড়ে বের হই রেষ্টুয়েন্ট থেকে।বাহিরে পার্কিং করা আছে রেষ্টুয়েন্টে প্রবেশকারী মানুষদের গাড়ি গুলো।নিদ্রদের গাড়িটা খুঁজতে বোসি বেগ পেতে হয় না আমাকে।গতি না কমিয়ে সেদিকে এগিয়ে চলি আমি।একপর্যায়ে পৌঁছে যাই তাদের গাড়ির সামনে।

গাড়িটা লক করা রয়েছে।কি করবো ভেবে পাই না আমি?এক এক করে সবদিকের দরজা গুলো চেক করতে থাকি।প্রথম তিনটা চেক করে খুলতে ব্যার্থ হয়ে চার নাম্বার দরজাটায় বিরক্তি নিয়ে হাত দেই।হঠাৎ করে খুলে যায় দরজাটা।আমি অবাক হয়ে তাকাই গাড়ির ভিতরে।

গাড়ির এক কোণে পড়ে থাকতে দেখি নিধি ব্যাগটাকে।কিছুটা তাড়া নিয়ে ব্যাগটায় হাত দেই।এমন সময় রেষ্টুয়েন্টের দরজার কাছে দেখতে পাই নিদ্র আর নিধিকে।নিদ্র বিল পরিশোধ করছে আর‌ নিধি দাঁড়িয়ে আছে।

বুকটা অনবরত উঠা-নামা করতে থাকে আমার।শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে।ভয়ে ঘামতে শুরু করে দেই।হাত-পা সবকিছু যেন আটকে আছে।কি করবো বুঝতে পারছি না?চুরির মতো কঠিন একটা কাজ জীবনে প্রথমবার করছি।ধরা পড়লে শেষ।

আমি ব্যাগটা রেখে আস্তে করে সড়ে দাঁড়াই।তারপর দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে মাথা নিচু করে সড়ে যাই।আড়াল থেকে লক্ষ্য রাখি গাড়িটার উপরে।

একপর্যায়ে গাড়িতে এসে বসে নিদ্র ও নিধি।দুজনের মুখেই বিরাজ করছে হাসি নামক বস্তুটা।গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চালাতে শুরু করে নিদ্র।আস্তে আস্তে সেখান থেকে অদৃশ্য হয়ে যায় গাড়িটা।আমি আড়াল থেকে বের হয়ে রেষ্টুয়েন্টে প্রবেশ করি।তারপর একজন ওয়েটারকে ডেকে কিছু মুখরোচক খাবার অর্ডার করি।

কিছুক্ষনের মধ্যে আমার সামনে সুন্দর ভাবে সব খাবার উপস্থাপন করে ওয়েটারটা।আমি খেতে শুরু করি খাবারগুলো।খুব খারাপ ‌লাগছে চুরিতে ব্যার্থ হবার পর।প্রথমে নিজেকে দোষ দিলেও পরবর্তিতে আমার অন্তর বলে,তুই প্রথমবার না সমস্যা নাই।পরেরবার সাকসেস হবি নিশ্চিত।

শুনেছি মানুষের মন যাই বলে তাই নাকি হয়।গ্যারান্টি দেয়নি কেউ তবে জোড় দিয়ে বলেছে অনেকে।মন নাকি সবাইকে ভালো উপদেশও দেয়।কিন্তু আমার মনটা সবার থেকে আলাদা।আমার মনটা আমাকে চুরি‌ করার উপদেশ দিচ্ছে।এসব ভেবে কিছুটা ব্যাথিত হই আমি।

খাবার খাওয়া শেষ করে রেষ্টুয়েন্ট থেকে বের হই আমি।হাটতে হাটতে ভাবতে থাকি কিভাবে চুরি‌ করবো মোবাইলটা?এমন সময় পুনরায় সামনে এসে দাঁড়ায় চাচা রুপি ভাইয়া তার হোন্ডা নিয়ে।আমি মাথা‌ তুলে তাকাই তার দিকে।তিনি পুনরায় তার হলদেটে দাঁত গুলো বের করে হাসি মুখে বলেন,
–“আফা,যাইবেন নাকি?”

আমি রিকসায় উঠে বসি।রিকসা সরি হোন্ডা চলতে শুরু করে।মাঝে মাঝে মাথা ঘুড়িয়ে আমার‌ দিকে তাকাচ্ছে‌ লোকটা।একপর্যায়ে হঠাৎ করে রিকসা থামান তিনি।আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকাই।তিনি হাসি মুখে বলে ওঠেন,
–“আফা,আপনাকে খুব চিন্তিত মনে হচ্ছে।কোনো সমস্যা?”

আমি পর্যবেক্ষকের দৃষ্টি নিয়ে কিছুক্ষন তাকাই তার দিকে।অথঃপর বলি,
–“রিকসা চালাতে থাকেন আমি বলছি”
আমার কথা শুনে লোকটা খেঁকিয়ে ওঠে।তার খেঁকিয়ে ওঠার কারনটা জানতে চাইলে তিনি কিছুটা রাগান্তিত হয়ে বলেন,
–“বলছি না আমার হোন্ডারে রিকসা কইবেন না।”
আমি তার দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে বলি,
–“সরি ভাইয়া।”
লোকটা পুনরায় হাসতে হাসতে বলে,
–“ওখে ওখে”

কথাগুলো বলা শেষ করে তিনি রিকসা চালাতে ‌শুরু করেন।আমি তাকে বলতে শুরু করি কিভাবে চুরি করতে গিয়ে পারি নাই?আমার কথা শুনে হাসতে শুরু করেন তিনি।কথায় কথায় একপর্যায়ে জানতে পারি আগে অভিজ্ঞ একজন চোর ছিলেন তিনি।

কথাটা শুনে মাথায় চেপে বসে একটা বুদ্ধি।বুদ্ধিটা হলো যে,এনাকে আমি ব্যবহার করবো চুরির কাজে।চলন্ত অবস্থায় তাকে আমার প্লানটা খুলে বলি।প্রথমে চুরি করতে রাজি না হলেও অনেক অনুরোধ করার পর রাজি হন তিনি।তবে কড়া গলায় বলে দেন এর জন্য যা যা কিছু লাগবে তা যেন আমি নিজের টাকায় তাকে কিনে দেই।তার শর্তে রাজি হই আমি।

আজকে রাতেই শুরু হবে চুরির মিশন।তিনি বলেন,সন্ধ্যার সময় আমাদের বাসার নিচে দাঁড়িয়ে থাকবেন।আমি একবালতি খুশি নিয়ে বাসায় প্রবেশ করি।রুমে প্রবেশ করতেই হঠাৎ মনে পড়ে,হায় হায় আমিতো নিদ্রদের বাসা চিনিনা।কি হবে এখন?

বেশ চিন্তায় পড়ে যাই‌ আমি।কি করবো বুঝতে পারি না?পায়চারি করতে থাকি সম্পুর্ন রুমটায়।এমন সময় হুট করে আমার রুমে প্রবেশ করেন আহান ভাই।আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকাই।

তিনি আমার সামনে দিয়ে হেটে গিয়ে ধপ‌ করে বিছানায় বসে পড়েন।স্টাচু হয়ে দাঁড়িয়ে তার কান্ড-কারখানা দেখছি‌ আমি।আহান ভাই পর্যবেক্ষকের দৃষ্টি নিয়ে আমার দিকে তাকান।তারপর হাসি মুখে বলে ওঠেন,
–“কিরে তুই এখনো মরিস নাই?”

তার এমন প্রশ্নে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যাই আমি।তার দিকে তাকিয়ে থাকি বেশ কিছুক্ষন সময় নিয়ে।তারপর ঠোঁট উল্টিয়ে বলি,
–“মরবো কেন?এত তারাতারি মরার ইচ্ছা আমার নাই।”

আমার কথা শুনে হো হো করে হেসে ওঠে আহান ভাই।আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকি এবং বোঝার চেষ্টা করি তার হাসির কারনটা।তিনি হাসতে হাসতে বলেন,
–“ভালোই করেছিস মরিস নি, শোন আমি কয়েকদিন পর সিংগেল থেকে মিংগেল হতে চলেছি মানে বিয়ে করছি।তোর ‌দাওয়াত রইল।বিয়েটা আমার ২নাম্বার গার্লফ্রেন্ডের সাথে হচ্ছে।আসিস কিন্তু?”

এই বলে তিনি আমার রুম থেকে বের হয়ে যান।আমি‌ অবাক নয়নে তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকি।বুঝার চেষ্টা করি তিনি সত্ত্যি বলছেন নাকি ‌মিথ্যা।কিন্তু কিছুই বুঝতে পারি না আমি।

এই বিষয়টা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে নিদ্রের বাসা খোঁজার ব্যাপারটা মাথায় নিয়ে আসি।হঠাৎ আমার ফোনটা বেজে ওঠে।হাতে নিয়ে দেখি‌ মামী।তার সাথে কথা বলতে‌ শুরু করি।কথায় কথায় নিদ্রের বাবা-মায়ের কথা ‌তুলি।মামী তাদের প্রসংশা করতে করতে আমার কান ভারী করে ফেলে।অবশেষে জানতে চাই তারা এখন কোথায় থাকে?

মামী‌ কোনো সন্দেহ ছাড়াই তাদের ঠিকানা আমাকে বলে দেয়।ঠিকানাটা নোট করে নেই আমি।তার অপেক্ষা করতে থাকি কখন সন্ধ্যা হবে।জীবনে প্রথম কাউকে লিড দিব।তাও আবার এমন একটা কাজ যা সমাজে সবচেয়ে নিম্ন মানের কাজের মধ্যে একটা।তবুও লিড দিতে পেরে কেন জানি গর্বই ‌হচ্ছে আমার।ক্যাপ্টেন বলে কথা।

সন্ধ্যার সময় বাসার নিচে লোকটাকে দেখতে পাই।আমি‌ কিছু টাকা নিয়ে চুপ ‌করে বাসা থেকে বের হই।বের হয়ে দেখি লোকটা একটা লুঙ্গি পড়ে এসেছে আর সম্পুর্ন শরীরে কাপড়ের অস্তিস্ত্ব নেই।তাকে জিজ্ঞেস করতেই‌ সে বলে এরকম থাকলে তাকে ধরতে পারবে না।সে আরো জানায় এক বোতল সরিষার তেল লাগবে।সেটা কড়া করে গায়ে মেখে রওনা হবে।

তার সব প্রয়োজনীয় জিনিস ক্রয় করে নিয়ে রওনা দেই আমরা।জানিনা সফল হবো‌ কিনা ব্যার্থ…

চলবে…ইনশাআল্লাহ