আবদ্ধ আমি পর্ব-১৭

0
531

#আবদ্ধ_আমি
#নিয়াজ_মুকিত
#১৭তম_পর্ব

আহান ভাইয়ের নানা অত্যাচার সহ্য করতে হয় এই ৫দিনে।উদাহরণ স্বরূপ-ওয়াসরুমে গেলে আহান ভাই বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকতো।আবার তিনি ওয়াসরুমে গেলে আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো বাহিরে।সর্বদা দুজনের হাতে সুতো বাধা থাকতো।তারপর রাতে ঘুমানোর সময় তার বুকের সাথে লেপ্টে থাকা।তাকে জড়িয়ে ধরে থাকা।অবশ্য এই অত্যাচারটা অনেক ভালো লেগেছে আমার কাছে।

নিদ্রের চ্যালেঞ্জ অনুযায়ী আজকেই তার শেষ দিন।এই কয়েকদিনে তাকে প্রায় দেখতেও পাওয়া যায়নি।হঠাৎ এভাবে উধাও হওয়ায় বেশ অবাক হয়েছি আমি।আজকে তার চ্যালেঞ্জ অনুযায়ী শেষ দিন।আজকের দিনটায় অনেক সচেতন থাকতে হবে আমাকে।

সকাল বেলা উঠে আমি আহান ভাইকে জাগিয়ে দেই।তিনি উঠে সর্বপ্রথম ফ্রেস হতে যান।আমি ওয়াসরুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকি।তিনি বের হলে আমি ভিতরে প্রবেশ করি।ফ্রেস হয়ে বের হই একেবারে।তারপর দুজনে নিচে নেমে পড়ি নাস্তা করার জন্য।আহান ভাই আমার দিকে তাকিয়ে বেশ তাড়া দিয়ে বলেন,
–“তারাতারি নাস্তা শেষ কর উষু!”

একের পর এক তাগদা দিয়েই চলেছেন তিনি।নাস্তা শেষ করে দুজনে রুমে প্রবেশ করি।আহান ভাই দরজা জানালা সব লাগিয়ে দেন।আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকাই।তিনি আমার গা গেষে বিছানায় বসে পড়েন।তারপর কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে ফিসফিস করে বলেন,
–“আজকেই শেষদিন।বুঝলি আজকেই শেষ হয়ে যাবে নিদ্রের যন্ত্রণা।আজকে বেশ সচেতন থাকতে হবে বুঝলি।”
আমি কোনো কথা না বলে শুধু মাথা নাড়াই।তারপর কিছুক্ষন চুপচাপ বসে থাকি দুজনে।একপর্যায়ে আমি হুট করে বলে উঠি,
–“তুমি কি নিদ্রকে ভয় পাও আহান ভাই?”

আমার কথা শুনে ঝট করে মাথা ঘুড়িয়ে আমার দিকে তাকান তিনি।আমার উপর পর্যবেক্ষকের দৃষ্টি ফেলে পর্যবেক্ষণ করেন কিছুক্ষন।তারপর চাপাস্বরে বলেন,
–“আমি ভয় পাব।তাও আবার এই নিদ্রকে।তোর মাথা গেছে উষু,তারাতারি একটা পাবনার টিকিট সংগ্রহ কর।”

আহান ভাইয়ের কথা শুনে আমি তারদিকে তাকিয়ে বলি,
–“তাহলে এত ভয় পাচ্ছো কেন?”
আহান ভাই আমার দিক থেকে তার দৃষ্টি সড়িয়ে নিয়ে বলেন,
–“ভয় পাব কেন?আজব।একটা বাচ্চা ছেলে নিদ্র।তার সাথে যদি মারপিট করি,তাহলে ৩০সেকেন্ডও টিকতে পারবে না।আর তাকে আমি ভয় পাব।এখন দেখছি তোকে পাবনায় রাখলেও হবে না।রাখতে হবে গোয়ালঘরে।”

আহান ভাই আমাকে অপমান করলো নাকি প্রশংসা কিছুই বুঝলাম না।তবে যতদুর মনে হলো অপমানই বোধ হয় করেছে।আমি কোনো কথা না বলে চুপ হয়ে থাকি।দুজন চুপচাপ হয়ে বসে থাকার পর হঠাৎ আহান ভাই বলে ওঠে,
–“দাঁড়া আমি একটু ওয়াসরুম থেকে আসি!”

এই বলে তিনি উঠে দাঁড়ান।আমিও তার সাথে উঠে দাঁড়িয়ে ওয়াসরুমের দরজার কাছে চলে আসি।তিনি ভিতরে প্রবেশ করেন আর আমি বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকি।কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থাকার পর হঠাৎ একটা শব্দ হয় পিছনে।মাথা ঘোড়ানোর আগেই কেউ একজন আমার মুখ চেপে ধরে।আমি ছটফট করতে শুরু করি।লক্ষ্য করি নিধি সুতোটা কাটছে।

সুতো কেটে নিদ্র আর নিধি আমাকে বের করে নিয়ে যান রুম থেকে।ব্যালকনি দিয়ে নিচে নামে আমাকে নিয়ে।আমি চিৎকার করবো তারও উপায় নেই।মুখ চেপে ধরে রেখেছে নিদ্র।লক্ষ্য করি তারা আমাকে গাড়িতে বসিয়ে গাড়ি ছোটাতে শুরু করে।আমি বারবার পিছনে তাকিয়ে দেখি আহান ভাই আসছে কিনা।

একপর্যায়ে লক্ষ্য করে আহান ভাইয়ের গাড়ি দ্রুতবেগে এগিয়ে আসছে আমাদের গাড়ির দিকে।নিদ্র গাড়ির স্পিড আরো বাড়িয়ে দেয়।আহান ভাইও গাড়ির স্পিড বাড়িয়ে দেয়।আমি নিঃসন্দেহে বলতে পারি দুজনের গাড়ি চালানোর প্রতিযোগিতা হলে আহান ভাই এমনিতেই জিতে যাবে।তার উপর ড্রাইভিং লাইসেন্স রয়েছে আহান ভাইয়ের।

আহান ভাই আমাদের গাড়ির কাছাকাছি চলে আসে।এমন সময় নিদ্র হুট করে একটা গুদামে গাড়ি ঢুকিয়ে দেয়।আহান ভাই গাড়ি ঢোকানোর আগেই বন্ধ হয়ে যায় গুদামেে সাটার।নিদ্র গাড়ি সাইট করে নেয়।নিধি আমাকে গাড়ি থেকে নামায়।তারপর একটা চেয়ারে বসিয়ে দেয়।

আমি লক্ষ্য করি,সেখানে উপস্থিত রয়েছে ৫জন লোক।আমরা তিনজন সহ মোট আটজন।এর মধ্যে একজন মুন্সি আরেকজন কাজি সেটা স্পষ্ট বুঝতে পারছি।নিদ্র আমার দিকে তাকিয়ে ডেভিল মার্কা হাসি দিয়ে বলে,
–“আ‌মি চ্যালেঞ্জে হেরে যাই না কখনো।আজকেও তার ব্যাতিক্রম নয়।এখন তোমাকে বিয়ে করবো জানু।দেখি তোমার আহান কি করে?”

আমি কিছু না বলে শুধু নিদ্রের দিকে তাকাই।অপেক্ষা করি কখন আহান ভাই আসবেন।আমার মন বলছে তিনি আসবেন।আমি নিদ্রের দিকে তাকিয়ে একটু মুচকি হেসে বলি,
–“আপনার এই আশাটা অপূরণযোগ্য।বুঝলেন অপূরণযোগ্য।এটা কখনো পূরণ হবে না।না হওয়ারই কথা।কেননা আপনি এমন একজনকে ভালোবেসেছেন যে কিনা একজনের স্ত্রী।আপনি বুঝতে পারছেন আপনি কতটা ফালতু একজন মানুষ?”

আমার কথা শুনে শুধু হাসে নিদ্র।পাশ থেকে নিধি বলে ওঠে,
–“আমার মোবাইলটা ইচ্ছা করেই চুরি হতে দিয়েছি বুঝলে।ওই লোকটাকে কোনো বাধা দেইনি।আমরা ইচ্ছে করলে ওর রক্তে স্লান করতে পারতাম।আমরা চেয়েছি আহানের সামন দিয়ে তোমাকে নিয়ে আসবো।”
আমি কি বলবো বুঝতে পারি না?চুপ হয়ে বসে থাকি শুধু।নিদ্র আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
–“আমরা অর্ধেক ভ্যাম্পায়ার আর অর্ধেক মানুষ।আমার বাবা মানুষ মা ভ্যাম্পায়ার।আমার মতো অবস্থা নিধিরও।তার মা ভ্যাম্পায়ার আর বাবা মানুষ।তাই উভয় প্রজাতির ক্ষমতা আমাদের মধ্যে বিদ্যমান।আমাদের মৃত্যু নেই বললেই চলে।কেননা আমরা বেঁচে থাকি যুগ যুগ।আমাদের মেরে ফেলা অত সহজ না।হ্যাঁ মারতে পারবে মানুষ,যদি আমাদের বিশেষ এক জায়গায় আঘাত করে।”

নিদ্র এক নাগাড়ে সব বলতে থাকে।নিধি তাকে আটকানোর চেষ্টা করলে সে বলে,
–“শুনুক না।এখানকার একজনও বেঁচে ফিরতে পারবে না শুধু মাত্র উষা বাদে।আর উষাকেও আমি ভ্যাম্পায়ার বানিয়ে নেব।”
নিধির উদ্দেশ্যে কথাগুলো বলে নিদ্র।তারপর আমার দিকে তাকিয়ে পুনরায় বলতে শুরু করে,
–“বিশেষ এক জায়গায় আঘাত করলে আমাদের মৃত্যু অনিবার্য।আমাদের মাথার ঠিক পিছনে যদি কেউ আঘাত করে তাহলে আমাদের মৃত্যু নিশ্চিত।”

এমন সময় পিছন থেকে একজন বলে ওঠে,
–“তাহলে মরার জন্য প্রস্তুত হও তোমরা।”
কথাটা শুনে ঝট করে সেই ব্যাক্তিটার দিকে তাকাই আমরা সবাই।আহান ভাই দাঁড়িয়ে আছে সেখানে।তিনি একাই নন তার সাথে দাঁড়িয়ে আছে ২০/২৫জন ছেলে।আমি অবাক হয়ে বোঝার চেষ্টা করি এতজন ঢুকলো কেমনে?

আহান ভাই আস্তে আস্তে এগোতে এগোতে বলেন,
–“তাহলে ওপারে যাওয়ার জন্য রেডি হও।ভাবছিলাম তোমাদের মতো বাচ্চাদের সাথে লড়াই করবো না।কিন্তু বাধ্য করলে আমাকে।তাই তোমাদের ছেড়ে দিচ্ছিনা আর।”
এই কথাগুলো বলা শেষ করে তিনি আমার দিকে তাকিয়ে বলেন,
–“উষু,তোর জন্য বিশাল সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে আজকে রাতে।অবশ্যই ভালো কিছু।পার্লারে গিয়ে একটু সেজে আসিস।”

আমি অবাক হয়ে তাকাই আহান ভাইয়ের দিকে।মরবো নাকি বাঁচবো জানিনা আর তিনি ব্যাস্ত আছেন পার্লার নিয়ে।এমন সময় নিদ্র..

চলবে‌‌..ইনশাআল্লাহ