আবদ্ধ আমি পর্ব-১৫

0
454

#আবদ্ধ_আমি
#নিয়াজ_মুকিত
#১৫তম_পর্ব

একাধারে মোবাইলটা ঘেটে চলেছি তখন থেকে।নিধির পার্সোনাল‌ কোনো জিনিস দেখার ইচ্ছা নেই।আমার শুধু প্রয়োজন ভিডিও টা।ফোনটা ঘাটতে ঘাটতে একপর্যায়ে সামনে চলে আসে‌ একটা ভিডিও।কৌতুহল নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে দেখতে পাই অবাক করা কিছু ঘটনা।

মনোযোগ সহকারে সম্পুর্ন ভিডিওটা দেখার পর বুঝতে পারি ফটোগ্রাফের সব কথা ঠিক।এখন আমার কাজ হচ্ছে আহান ভাইকে এই ভিডিওটা দেখানো।

আমি ভিডিওটা সেয়ারইট দিয়ে আমার মোবাইলে নেই।তারপর ভিডিওটা মেসেজ করে দেই আহান ভাইয়ের নাম্বারে।সব কাজ শেষ হওয়ার পর মনে হয়,বিশাল আকৃতির একটা পাথর সড়ে গেল আমার মাথা থেকে।

আমি ধপ করে বিছানায় শুয়ে পড়ি।আমার একপাশে আমার মোবাইল অন্য পাশে নিধির মোবাইলটা পড়ে আছে।পটল ভাইয়ের জন্য আজ সম্ভব হয়েছে এই‌ কাজটা করা।তাকে স্পেশাল ভাবে একটা ধন্যবাদ দেয়া আমার কাম্য।

শুয়ে শুয়ে এসব কথা ভাবতে থাকি আমি।চোখের মধ্যে ঘুম চলে‌ আসে।আস্তে আস্তে চোখের পাতা বন্ধ হতে ধরে।এমন সময় টং করে বেজে ওঠে আমার মোবাইলটা।তড়িঘড়ি করে হাতে নিয়ে দেখি কি মেসেজ আসলো?

চোখ খুলে মেসেজটা দেখে নেই একবার।দেখতে পাই‌ মেসেজটা আহান ভাইয়ের নাম্বার থেকে এসেছে।আমি কৌতুহল নিয়ে সম্পুর্ন মেসেজটা পড়তে শুরু করি।সেখানে আহান ভাই লিখেছে,
–“উষু,ভিডিওটা আমি মনোযোগের সহিত দেখলাম এবং বুঝলাম।আসলে এখানে তোর কোনো দোষ নেই।আগে থেকেই আমি জানতাম তুই নির্দোষ।”

এটুকু পড়ে আমি থেমে যাই।অবাক হয়ে চারদিকে তাকাতে থাকি।কোথায় আছি বোঝার চেষ্টা করি প্রাণপণ দিয়ে।কেন জানিনা আমার মনে হচ্ছে আমি পাবনায় রয়েছি।তিনি যদি জানতেনই আমি নির্দোষ তাহলে এত অভিনয় করার মানে কি?

আপাতত চিন্তাটা মাথা থেকে দুরে সড়িয়ে দিয়ে পুনরায় পড়তে শুরু করি মেসেজটা।তিনি সুন্দর করে লিখেছেন,
–“ভাবছিস,আমি যদি জানতামই তুই নিদোর্ষ তা হলে এত অভিনয় করলাম কেন?ভাবার বিষয় এটা।শোন,তুই ইদানিং একটু বেশি বুঝতেছিস এবং ভাবতেছিস।একটা থাপ্পড় দিব,এত ভাবিস কেন?ভাবাভাবি বাদ দিয়ে সম্পুর্নটা পড়?”

আমার মধ্যে এবার অজ্ঞান হবো হবো ভাব চলে আসে।ভবিষ্যৎ জানতে পারে আহান ভাই এই কথাটা আমি জানি না।যদি নাই ‌জানতে পারতো তাহলে কেমন করে জানলো আমি‌ এই সময় এই ভাবনা ভাববো।

আমি পুনরায় পড়তে শুরু করি।তিনি সুন্দর করে লিখেছেন,
–“অভিনয়টা এমনি করলাম।বাচ্চারা যেমন স্কুল পালায় মজা করার জন্য সেরকম আমি অভিনয়টা করলাম মজা করার জন্য।বিয়ের যে কথাটা বলেছি সেটাও ভুয়া।কালকে আমি সকালে আসতেছি তোর সাথে বোঝাপড়া করতে।আর হ্যাঁ নিদ্র নাকি তোকে ৭দিন সময় দিয়েছে।এর মধ্যে বিয়ে করবে নাহলে কখনো তোর দিকে তাকাবেও না।ওকে,এই সাতদিন তুই আমার সাথে থাকবি।এমন কি ওয়াসরুমও আমার সাথে যাবি।

শোন,কালকে আসতেছি।কফিটা রেডি রাখিস নাহলে তোকে কাঁচায় চিবিয়ে খেয়ে নেব।আমি কাউকে সরি বলি না,আজকে তোকে বলছি।মজা করার জন্য সরি।”

মেসেজটা পড়ে এর আগা-মাথা কিছুই বুঝতে পারি না আমি।শুধুমাত্র মজা করার জন এতকিছু করতে পারে একটা মানুষ বিশ্বাসই করতাম না যদি নিজ অভিজ্ঞতা না হতো।নাকি সে এমনি‌ বলছে এটা মজা ছিল।যদিই মজাই হতো তাহলে আমি যখন অজ্ঞান হইলাম তখন‌ সে আমাকে তুললো না কেন?তারপর সে কান্নাই বা করছিল কেন?আমার মনে হয় না এটা মজা ছিল।

এই বিষয়গুলো জানার জন্য আমি আহান ভাইয়ের নাম্বারে একটা মেসেজ পাঠাই।মেসেজটাতে সুন্দর করে লিখি,
–“মজা ছিল এটা।ও মাই গড,এত সুন্দর মিথ্যা বলতে পারেন।যদি মজাই হতো তাহলে কান্না করছিলেন কেন তখন?এখন ভিডিওটা দেখার পর বুঝতে পারছেন যে সব আপনার ভুল তাই বলতেছেন এটা মজা।আমি বুঝছি সব।কালকে আসিয়েন না।আমার‌ দেখা পাবেন না।”

মেসেজটা পাঠিয়ে নিশ্চিন্ত হয়ে শুয়ে পড়ি আমি।কিছুক্ষন পর আহান ভাইয়ের নাম্বার থেকে পুনরায় একটা মেসেজ আসে।আমি চোখ খুলে মেসেজটা পড়তে শুরু করি।তিনি লিখেছেন,
–“আমি জানতাম তুই এই‌ প্রশ্নটা করবি।আরে বুদ্ধ,আমি কান্না করি নাই।চোখে পানি ছিল না ওটা থুথু ছিল😀।থুথু হাতে নিয়ে চোখের নিচে লাগিয়ে দিয়েছি যাতে তুই মনে করিস আমি কান্না করছি।দেখছিস কত ভালো অভিনেতা আমি।কালকে আমি আসবোই বুঝলি।এখন ঘুমা”

মেসেজটা পড়ে আমার মুখ হা হয়ে যায়।কত্তবড় ফাজিল পোলা দেখছেন।ফাজিল হোক আর যাই হোক আমারই তো স্বামী।এখন আমার প্লান হচ্ছে কয়েকটা দিনের জন্য বাড়ি থেকে পালানো।আর ভালোলাগছে না এসব তাই কয়েকটা দিন জাষ্ট চিল হবে।কথাগুলো চিন্তা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ি আমি।

কতক্ষন ঘুমিয়ে ছিলাম জানি না তবে ঘুম থেকে উঠে বুঝতে পারি ঘুমাতে ঘুমাতে একটু না অনেকখানি‌ বেশি ঘুমিয়ে ফেলেছি।প্লান অনুযায়ী আমার ভোরে উঠে পালানোর কথা ছিল কিন্তু উঠতে উঠতে আটটা বেজে যায়।আমি লক্ষ্য করি আমাদের বাসায় চলে‌ এসেছে আহান ভাই।

বিছানায় উঠে বসে চিন্তা করতে থাকি আর পালানো হইলো না।ধুর,আজকেই ঘুমটা ধরলো আমাকে।মনে মনে বেশ অসম্মানসূচক গালি দিয়ে দেই ঘুম নামক ব্যাক্তি কিংবা বস্তুটাকে।

মনে একরাশ কষ্ট নিয়ে উঠে দাঁড়াই আমি।ওয়াসরুম থেকে ফ্রেস হয়ে বের হই।সাথে সাথে আমার রুমে প্রবেশ ঘটে আহান ভাই নামক দুপেয়ে প্রাণীটার।আমি চোখ তুলে তার দিকে তাকাই।তারদিকে তাকানোর পর আমার চোখ যেন আটকে যায়।বলতে গেলে পুনরায় তার উপর ক্রাশিত হই আমি।

তার জেল দেয়া চুলগুলো ফ্যানের বাতাসে উড়ছে।ফিটিং টি-শার্ট আর সানগ্লাস যেন তার রূপকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।মোটকথা আমি তার দিক থেকে চোখ ফেরাতেই পারছি না।আমার এভাবে তাকানো দেখে আহান ভাই মুচকি হাসেন।তারপর আস্তে আস্তে করে হেটে গিয়ে ধপ ‌করে বিছানায় বসে পড়েন।

আমি এখনো তার দিকে তাকিয়ে আছি।তিনি এবার আমাকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
–“শোন,তারাতারি রেডি হয়ে নে।বাড়ি যেতে হবে।”

আহান ভাইয়ের কথায় আমার হুশ ফেরে।আমি‌ তারদিকে ভ্রু-কুঁচকে তাকিয়ে বলি,
–“কেন যাবো?যখন বের করে দিয়েছিলেন তখন মনে ছিল‌ না।যাবো না আমি।”

আমার কথা শুনে মুচকি হেসে উঠে দাঁড়ান আহান ভাই।আস্তে আস্তে এগোতে থাকেন আমার দিকে।একপর্যায়ে তিনি আমার সামনে চলে আসেন।তিনি আমার সামনে আসলেও আমি একপাও পিছপা হই না আমার জায়গা থেকে।তিনি আমার দিকে ঝুঁকে বলেন,
–“নেক্টট ৬দিন তুই আমার সাথে সাথে থাকবি।আমার কাপড়গুলো‌ আমার থেকে আলাদা হলেও তুই আলাদা হবি না বুঝলি..”

চলবে..ইনশাআল্লাহ
ভুলত্রুটি ক্ষমা করুন।