#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম
২০.
“আমার ডি*ভো*র্স লাগবে দোস্ত”
কথাটি বলে দমও ফেলতে পারেনি চাঁদ।তৎক্ষনাৎ ফোনের ওপাশ থেকে কারো বিস্মিত কন্ঠস্বর তার কানে ভেসে এলো,
“ডি*ভো*র্স লাগবে মানে?তুই বিয়ে করেছিস?”
“হিম”
“কবে করলি?জানালিওনা?এই আমি তোর বেস্ট ফ্রেন্ড?”
“হুট করেই হয়ে গেছে রে”
“তুই না সারাজীবন কুমারী থাকবি বলেছিস?তবে বিয়ের প্রসঙ্গ আসে কোত্থেকে?”
চাঁদ মজার ছলে বলে,
“কেন রে?আমার বিয়ে না হলে তোর বউ বানাতি নাকি?”
“রাহা থাকতে তোকে কেনো বউ বানাবো চান্দু?”
“ঐ রাহাতো জীবনেও তোকে পাত্তা দিলোনা।বেস্ট ফ্রেন্ড বলে বলে ইউজ ই করলো।এখনো ঐ মেয়েকে ভালোবাসিস তুই?”
“তুইও তো প্রণয়কে বাসিস”
“আমার প্রণয়ের সাথে ঐ থার্ড ক্লাস মেয়েটার তুলনা যায়ও না”
ছেলেটা বিরক্তির সুরে বললো,
“আচ্ছা থাম।তোর সামনে রাহার কথা বলাটাই আমার ভুল হয়েছে।এখন বল যে প্রণয়কে তুই কি করে ধো*কা দিলি?”
চাঁদ কপাল কুচকে বললো,
“ধো!কা দিয়েছি মানে?”
“তোর না বিয়ে হয়েছে?”
“হ্যা তো?”
“এটা প্রণয়কে ধো*কা দেওয়া হলোনা?”
“চ!ট!কাবো তোকে!সোজাসুজি বলতে পারিস না?”
“এই মেয়ে বিয়ে করছিস কি মনের রঙে?প্রণয় ছাড়াতো কিছুই বুঝতিস না।তাইলে এমন কোন সুপুরুষকে বিয়ে করছিস যে প্রণয়ের কথা বলায় এভাবে ভ!ড়কাচ্ছিস?”
ব্যঙ্গ করে চাঁদ বলছে,
“আরে ছাগলের নানা!প্রণয়ের সাথেই বিয়েটা হয়েছে আমার”
বিস্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে ছেলেটা বললো,
“কী!কী বললি তুই?প্রণয়?তোর প্রণয়?”
“হিম”
“ঐ যে রুহায়ের প্রণয়?”
“হ্যা”
“তোর ঐ বিড়ালাক্ষী মানব?”
“হ্যা রে ভাই হ্যা”
“ডাক্তার হবে যে ঐ ছেলেটা?”
“ছাগল জানি কোথাকার।সারাজীবন কি ডাক্তারই হবে?অলরেডি হয়ে গেছে।বাংলাদেশের সনামধন্য কার্ডিয়াক সার্জনদের মধ্যে অন্যতম সে”
দীর্ঘশ্বাস ফেলে ছেলেটা বললো,
“তোরও তো হওয়ার কথা ছিলো।কার্ডিয়াক সার্জন হওয়াতো তোর স্বপ্ন!”
“বাদ দে।তুই বল আমার ডি*ভোর্স করাতে পারবি কিনা?”
“প্রণয়ের সাথে বিয়ে হওয়ার পরও ডিভো*র্স চাচ্ছিস?”
“হ্যা চাচ্ছি”
“ডি!ভো!র্সই যখন লাগবে বিয়ে কেনো করেছিস?”
“সেসব একদিন সময় করে বলবো।আপাতত আমার ডি*ভোর্সটা লাগবেই দোস্ত।যে করেই হোক।তুই আমার কেসটা নিতে পারবি?”
“প্রণয় কি তোকে মা!রধ!র করে?”
আশ্চর্যান্বিত হয়ে চাঁদ বলে,
“মা!রবে কেনো?”
“তবে ডি!ভোর্স কেনো চাচ্ছিস?”
“তুই আমার কেস নিতে পারবি কিনা তা বল?”
“আমি অবশ্যই তোর কেসটা নিতাম যদি আমি দেশে থাকতাম বা কয়েকদিন অথবা মাসখানেকের মাঝেই আসতাম”
“তুই এখনো ইংল্যান্ড?তোর না মাস ছয়েক আগেই আসার কথা?”
“হ্যা কিন্তু আমি এখানে সিনিয়রদের পর্যবেক্ষণ করছি।তাছাড়া ঘুরাঘুরিও আছে টুকটাক”
“তো তুই আমার কেসটা নিতে পারছিস না?”
“কিভাবে নেবো বল?দেশে থাকলে একটা কথা ছিলো”
“তো দেশে আসছিস না কেনো?”
“এখনই না বললাম?”
“কী বলেছিস?”
“আচ্ছা বুঝিয়ে বলছি।তোরা তো শেষে দিয়ে ইন্টার্নি করিস।আমাদের তেমন স্পেসিফিক কিছু না থাকলেও আমি আমার সুবিধার্থে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছি যাতে করে ফিউচারে যেকোনো প্রকার কেস হ্যান্ডেল করতে কোনো অসুবিধা না হয়।”
“তা দেশে আসবি কবে?”
“আসতে আসতে বছরখানেকতো লাগবেই”
“অতোদিনে বুড়িও হয়ে যেতে পারি।এখন বল যে ডি*ভোর্স কিভাবে নেবো আমি?”
“বিডিতে তো আর কম লয়ার নেই তাইনা?যেকোনো একজনকে হায়ার করে নে”
“সেটা করতে পারলে তোকে অবশ্যই ডিস্টার্ব করতাম না?”
“কিন্তু অন্য কেউতে সমস্যা কোথায়?”
“সমস্যা অন্য কেউতে না।সমস্যা হলো আমি চাইনা মিডিয়া বা কারো সামনে আমাদের বিয়ে বা ডি*ভোর্সের কথা আসুক”
ছেলেটা মৃদু হেসে বললো,
“তোদের বিয়ে বা ডি*ভোর্স নাকি ডক্টর রুহায়ের প্রণয়ের ব!দনা!মী না হোক সেটা?”
“গিভ মি সাম বেটার সলিউশনস” [আমায় ভালো কিছু উপায় দে]
চাঁদ বিষয়টা এড়িয়ে যেতে চাচ্ছে বুঝতে পেরে চাঁদকে আর ঘাটায়না সে।অতঃপর বলে,
“ওয়েল একজন মেয়ে লয়ার আছে।চলবে?”
“আমার কেসটা নিলে সবকিছু গোপনে করবেতো?”
“হ্যা।ও আমার বিদেশী ফ্রেন্ড।আই মিন এখানে পড়তে আসার পর আমাদের ফ্রেন্ডশিপ হয়েছে।আর আজই ও দেশে ফিরেছে।আমি ওর সাথে কথা বলে তোকে ওর নাম্বারটা দিচ্ছি।তুই ওর সাথে আলাপ করে দেখতে পারিস”
“ঠিক আছে”
“আর শোন”
“বল”
“বাই এনি চান্স বিয়েটা যদি না ভাঙে।আই মিন তোদের যদি ডি*ভোর্স না হয়,তো এই একবছরে আমি না আসা পর্যন্ত বাচ্চা কাচ্চা আবার নিয়ে ফেলিস না!আমার একটা মাত্র বেস্ট ফ্রেন্ডের বিয়ে খেতে পারিনাই।এটা আমার সারাজীবনের আফসোস থাকবে।অন্তত বাচ্চা হওয়াটা যেনো দেখতে পারি।”
“তবে রে সোইম্মা!”
ছেলেটা দম ফা!টানো হাসিতে মেতে উঠে বলে,
“বাআবাই চান্দু।সংসারে মনোযোগী হও।ফুউউউ!”
বলেই কলটা কেটে দেয়।আর চাঁদ হাসতে হাসতে মোবাইলের দিকে চেয়ে আছে।কারো আওয়াজে পেছনে ফিরে তাকাতেই রুবাকে দেখতে পায় সে।রুবা বলছে,
“কার সাথে এতো হাসা হচ্ছে ভাবি?”
রুবাকে দেখে স্মিত হেসে চাঁদ বলে,
“আমার প্রাণ”
“প্রাণের সাথে এতোটা প্রাণবন্ত?”
“হিম।এককথায় সে আমার প্রাণ ই।সহজভাবে বলতে গেলে বেস্টফ্রেন্ড”
“ওহ আচ্ছা আচ্ছা এবার বুঝলাম!”
“কিছু লাগবে তোমার?”
“না।আমিতো তোমায় নাস্তার জন্য ডাকতে আসলাম।এসে দেখলাম তুমি একটু ব্যস্ত।তাই দাড়িয়ে ছিলাম বাইরে”
চাঁদ কিছুটা শংকিত হয়ে বলে,
“কখন এসেছো?”
রুবা চাঁদকে আস্বস্ত করে বলে,
“আহা টেনশন নিওনা ভাব্জ!আমি তোমার কথা শুনিনি।জাস্ট সোইম্মা নাকি শুনলাম।তারপরই দাঁড়িয়ে ছিলাম”
চাঁদও রুবার ন্যায় বললো,
“টেনশন নিইনি নন্স!ইউ আর ঠু মাচ কিউট।আমার কথা শুনলেও যে কাউকে বলবেনা সে বিশ্বাস রাখতেই পারি।না?”
“অফ কর্স ভাব্জ!আমি তোমার সামনে নিতান্তই চুনোপুঁটি।তাছাড়া তোমার হাসি কিন্তু মারাত্মক!ভাইয়া নিশ্চয়ই হাসির প্রেমেই পড়েছিলো?”
“চলো নাস্তা করে আসি?নিশ্চয়ই তোমার ক্ষুদা পেয়েছে?”
“ওহ হ্যা চলো”
“তুমি যাও আমি শাড়িটা পাল্টেই আসছি”
“ঠিক আছে ভাব্জ”
“খেতে বসে পড়ও কিন্তু!আমার অপেক্ষায় থেকোনা”
“তুমি আগে আসোতো!”
“আচ্ছা আচ্ছা আসছি”
চুলে টাওয়াল পেচাতে পেচাতে ড্রয়িংরুমে হাজির হয় চাঁদ।অতঃপর কিছুটা জোরে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“তোমাদের মতো অতো বড় ডাইনীং টেবিলতো নেই।তাছাড়া আমরা হাতেগোনা মানুষই হলাম চারজন।তাই ছ’জনের টাই এনেছিলাম।একটু আগে-পরে খেলে আশা করছি অসুবিধা হবেনা কারোরই?”
রামিম চাঁদের দিকে তাকিয়ে বলে,
“প্রণয়ের যে এতো সুন্দর একটা শালি আছে জানতাম নাতো।হেই ধূসরপরী আর ইউ সিংগেল?”
চাঁদসহ বাকিসবাই রামিমের দিকে ভ্রু কুচকে তাকাতেই শোনা যায় প্রণয়ের গম্ভীর কন্ঠস্বর,
“নো।শি ইজ ম্যারিড এন্ড প্রণয়’স বেটার হাফ”
এ কথা শুনতেই রামিমের কাশি উঠে যায়।সে আশেপাশে পানি খুজতে গেলেই রিদি তাকে পানি এগিয়ে দিয়ে বলে,
“ভাইয়া এটাই আমাদের চাঁদ ভাবি”
পানি খেয়ে রামিম বলে,
“সরি চাঁদ।আমি আসলে বুঝতে পারিনি যে তুমিই প্রণয়ের ওয়াইফ”
“ইটস ওকে ভাইয়া”
মির রামিমকে সতর্কবানী দিলো,
“তুমি প্রণয়ের ভাই বলেই বেঁচে গেলে রামিম।নাহয় এই বিড়ালিনীকে কেউ টিটকারি মা!রবে আর সে তাকে ছেড়ে দেবে এমনটা আমি দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারিনা”
বলেই চাঁদের দিকে তাকালো মির।আর রামিম মিরকে বললো,
“তাই নাকি?চেনো নাকি তুমি?”
“খুব ভালো করেই”
রামিম আরও কিছু বলতে চেয়েছিলো তবে চাঁদের কথায় থেমে গেছে,
“আমায় নিয়ে গবেষণা শেষ হলে নাস্তা আনবো?”
শিফা চাঁদকে বলে,
“ভাবি আমরা কিন্তু তোমার অপেক্ষায়ই ছিলাম।এমনকি ভাইয়ারাও”
“কিন্তু সবাইতো একসাথে বসতে পারবোনা শিফা”
মির বললো,
“এই টেবিল ফেবিলে কে বসবে বিড়ালিনী?আমিতো নিচেই বসবো।অরণ থাকতে আমরা প্রায়শই বিভিন্নভাবে আড্ডা দিতাম”
রামিম মিরকে বলে,
“অরণের এখন কন্ডিশন কেমন?”
মির জবাব দেয়,
“আগের মতোই”
“অরণকে ভীষণ মিস করি”
রিদি রামিমকে বললো,
“ভাইয়াকে আমরাও মিস করি ভাইয়া।আমি মন থেকে তার জন্য অভিশাপ দেই যার বদৌলতে আমাদের অরণ ভাইয়ার আজ এই দশা।”
শিফা রিদির দিকে তাকিয়ে বললো,
“তার কপালে আজীবন দুঃখ লেগে থাকবে দেখে নিস রিদু!”
তন্ময়ের কন্ঠে ক্ষো!ভ মিশ্রিত,
“এসব অভিশাপেতো আমি বিশ্বাস করিনা।তবে মন থেকেই চাই,যে ভাইয়ার সাথে এমনটা করেছে সে যেনো তার প্রাপ্য শাস্তিটুকু পায়”
“প্রাপ্য থেকে অতিরিক্তই পাবে।কেবলই সময়ের অপেক্ষা”
প্রণয়ের কথা শুনে সে পানে তাকায় চাঁদ।অতঃপর দেখতে পায় প্রণয়ের দৃষ্টি তারই দিকে নিবদ্ধ আর সে দৃষ্টিতে রয়েছে এক আকাশ পরিমাণ আক্রোশ।
.
.
.
.
.
.
.
নাস্তা সেরে যে যারমতো উঠে যাচ্ছিলো এমতাবস্থায় চৈত্র কেশে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলে,
“ইহিম!আপনাদের মতো অতো বড়লোক হয়তো আমরা নই।অথবা বলা যায় আপনাদের সামনে আমরা কিছুই না।খালামনির বাসায় যেতে হচ্ছে একটুখানি।সেখানে দু’দিন থাকতে পারবেন অনায়াসে।আমাদেরতো দুটোই রুম।একরুমেতো আর এতোজনকে জায়গা দেয়া যাবেনা”
তন্ময় বাঁধা দিয়ে বললো,
“ঐ ভাগারু বাড়িতে আমরা যাবোনা”
শিফাও নাক ফুলিয়ে বললো,
“হ্যা।ওখানে যাওয়ার প্রশ্নই আসেনা!”
রুবাও তাল মিলিয়ে বললো,
“এতোটা অপ!মানিতো হওয়ার পরও ওখানে যাবো?উহু!একদমই না”
চৈত্র ইতস্তত করে বললো,
“তাহলে মানে কিভাবে আপনারা…”
রামিম চৈত্রের কাধে হাত রেখে বললো,
“ভাই আমি একটা সাজেশন দিতে পারি।নেবেন?”
চৈত্র রামিমের দিকে তাকিয়ে বললো,
“বলুন”
“আমরা চাইলেই সবাই মিলে দুটো রুমে থাকতে পারি।আংকেল-আন্টিকে নাহয় আপনার খালার বাসায় পাঠিয়ে দিলেন”
“আম্মু-আব্বু গতকালই ও বাড়িতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে”
“আচ্ছা তাহলেতো হলোই।আমরা ইয়াংস্টাররা এখানেই থাকবো”
রুবা জিজ্ঞেস করলো,
“কিন্তু কিভাবে ভাইয়া?”
“কিভাবে আবার?এক রুমে তোরা মেয়েরা মেয়েরা থাকলি।একরুমে আমরা ছেলেরা”
শিফা কিছু বলতেই নিয়েছিলো তার আগেই চাঁদ বলে ফেললো,
“কিন্তু প্রণয়তো….”
চাঁদ সম্পূর্ণ কথা পূর্ণ করার আগেই প্রণয়ের গম্ভীরস্বর ভেসে আসে,
“প্রণয়ের অনেক কিছুই বদলেছে,সেইসাথে প্রণয় নিজেও।রামিম যা বলেছে সেভাবেই হবে”
বিকাল চারটা বেজে সাত মিনিট,
রিদির চেচানোতে ড্রয়িংরুমে উপস্থিত হয় সবাই।অতঃপর সামনে তাকিয়ে বিস্ময়ে চোখ বড় করে তাকিয়ে থাকে সে পানে।চৈত্র হনহনিয়ে রিদির পাশে দাঁড়িয়ে থাকা অমৃতার বাহু টে!নে তার সম্মুখে দাড় করিয়ে গালে পাঁচ আঙুল বসিয়ে দিয়ে বলে,
“কোন বিবেকে এ বাড়ি এসেছিস?”
To be continued….
#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম
২১.
“আপনারা শুধু শুধুই অমৃতাকে দোষাচ্ছেন।মেইন কা!লপ্রি!ট হলাম আমি”
কথাটি বলে বেশ বিরক্তির সহিতই চৈত্রের সামনে এসে দাঁড়ালো প্রণয়।অতঃপর আবারও বললো,
“আমি এখানে চাঁদকে বিয়ে করতেই এসেছিলাম।অমৃতাকে নয়।”
কথাটি শ্রবণ হতেই বিস্ময় নিয়ে তাকায় সকলে।চাঁদের বাবা প্রণয়ের সামনে এসে বলেন,
“সেদিন তোমায় দেখেই এটা আন্দাজ করেছিলাম তবে আসলেই যে এমনটা হবে কস্মিনকালেও ভাবিনি”
“আমি দুঃখিত আব্বু।তবে আপনারা এভাবে মেয়েটাকে দোষাবেন না।আর ভাইয়া তার গায়ে হা!ত তো!লাটা আপনার ঠিক হয়নি।”
“হয়েছে কি হয়নি সেটা আমি বুঝে নেবো প্রণয়”
চৈত্রের কথা শুনে রুবার যেনো পিত্তি জ্ব!লে গেলো।সে তেতে উঠে বললো,
“আমার ভাইয়া যখন এমনটা করতে চেয়েছিলো আপনি তখন কী করেছিলেন মি.চৈত্র?”
তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে রুবার পানে চেয়ে চৈত্র কিছু বলবে তার আগেই রায়হানের উচ্চস্বর শোনা যায়,
“ডোন্ট ক্রস ইওর লিমিটস রুবা” [নিজের সীমা লঙ্ঘন করবেনা রুবা]
চৈত্র রুবার জবাব দিলো,
“দুটো পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন ছিলো মিস রুবা”
রুবা কিছু কড়া কথা বলার জন্য প্রস্তুত হতেই রায়হানের গম্ভীর কন্ঠস্বর ভেসে আসে,
“ওখানেই থেমে যাও।আদারওয়াইজ আমি ভুলে যাবো আমরা প্রণয়ের শ্বশুরবাড়ি আছি”
অমৃতার বাবা অমৃতার সামনে এসে বলেন,
“কোন মুখে তুমি আবার ফেরত এসেছো?এসেছোতো এসেছো এই বাড়িতে কেনো এসেছো?”
অমৃতার সোজাসাপটা জবাব,
“আমি আমার বোন আর দুলাভাইকে দেখতে এসেছি”
“এভাবে বলতে লজ্জাও করছেনা তোমার?”
“লজ্জার কি হলো বাবা?আমি যা চেয়েছিলাম তাইতো হয়েছে।আমার বোনটার দিকে তাকিয়েছো একবার?এমন প্রাণবন্তই তো আমার চাঁদ আপু ছিলো।প্রণয় জিজুর বদৌলতে সে আগের ন্যায় হচ্ছে এবং আশা করছি পুরোপুরি হবে।আর এটাইতো আমি চেয়েছিলাম”
অমৃতার বাবা বললেন,
“মানে?”
চৈত্রও বিস্ময় নিয়ে বললো,
“বুঝিনি?”
অমৃতার মা এবার সামনে এসে বলেন,
“আমি বলছি সবটা।সেদিন অমৃতা যে চিঠি রেখে গিয়েছিলো তাতে ও স্পষ্ট লিখেছিলো চাঁদ আর প্রণয় একে অপরকে ভালোবাসে।কিসব ভুল বোঝাবুঝির জন্য আলাদা হয়ে গেছে নাকি।চাঁদ আর প্রণয়ের বিয়েটা যেকোনোভাবে দিতেই হবে।ওদের দুজনকে এক করতেই হবে।এই দুটো মানুষ একে অপরকে ছাড়া নাকি প্রা!ণহীন হয়ে আছে।ওদের বিয়েটা না দিতে পারলে অমির সব চেষ্টা বৃথা যেতো।আর এজন্যই আমি সেদিন চিঠির ব্যাপারে এড়িয়ে গিয়েছি।আর এ খবর যেনো চাঁদের বা তার পরিবারের কেউ না জানে এটাও অমি বলেছিলো।কিন্তু আমি দুঃখিত রে মা।তবে আর উপায় দেখছিনা।তোর নামে এতোকিছু শুনতে পারলাম না।বলতে হলো”
চৈত্র বিস্ময় নিয়ে বললো,
“চাঁদ আর প্রণয়ের সম্পর্ক ছিলো?”
রামিম অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে বলে,
“এই নিরামিষটা আবার প্রেমও করেছে?”
রায়হান প্রণয়ের দিকে তাকিয়ে শান্তস্বরে বললো,
“ভালোবাসিস বলে এতোদূর চলে এসেছিস?”
চাঁদ ভরাট কন্ঠে বলে,
“আমি এ জন্মে প্রেম করিনি।আর না আমাদের কোনো সম্পর্ক ছিলো”
শিফা বললো,
“তাহলে দুজন দুজনের ব্যাপারে এতোকিছু কি করে জানো ভাবি?”
“জানতেই পারি।যেহেতু একই মেডিকেলে পড়ে এসেছি”
রুবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি চাঁদের পানে।সে চাঁদের বলা কথার সাথে সাথে জবাব দেয়,
“ঢামেক ছেড়ে এতোদূর আসার কারণ অবশ্যই সামান্য নয় ভাবি?”
রুবার কথা শুনে সকলেই উদ্বিগ্ন হয়ে উঠে।এমনকি প্রণয়ও চাঁদের পানে তাকায় উত্তরের আশায়।সে জানে চাঁদের কাছে এর উত্তর নেই।তবুও সে এক ধ্যানে তাকিয়ে রইলো সামনে দাড়িয়ে থাকা ধূসরনীল বর্ণের পোশাকে আবৃত ধূসরকন্যার দিকে।তবে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকা সম্ভব হলোনা।এই মেয়েটার দিকে তাকালে চোখ সরানো দায় হয়ে পড়ে।আগের ন্যায় সেই উজ্জ্বল ভাবটা না থাকলেও লাবণ্যময়তা কমেনি একটুখানিও।দৃষ্টি এলোমেলো করে অন্যপানে তাকাতে বাধ্য হলো প্রণয়।এভাবে তাকিয়ে থাকলে লক্ষ্যভ্রষ্ট হতে হবে নিশ্চিত।ধ্যান ভাঙলো চৈত্রের গম্ভীর আর তেজী কন্ঠস্বরে,
“দ্যাটস নান অফ ইওর বিজনেস” [এটা মোটেও আপনার কাজ নয়]
রুবা কিছু বলতে গেলে হাতের ইশারায় রুবাকে বাধা দেয় রায়হান।অতঃপর প্রণয়ের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,
“কিরে ভালো যেহেতু বাসিসই না বিয়ে করতে এতোদূর আসার কারণ?”
প্রণয় এ প্রশ্নের জবাবে কিছু বলার পূর্বেই রিহা উত্তর দিয়ে ফেলে,
“কে বলেছে ভালোবাসেনা?”
রিদি বললো,
“চাঁদ ভাবি না বললো”
“চাঁদ কখন বলেছে ভালোবাসেনা?”
“তখননা…”
মির জবাব দিলো,
“চাঁদ বলেছে ওদের সম্পর্ক ছিলোনা।প্রেম করেনি”
মাথা নিচু করে রিদি বললো,
“হ্যা তাইতো…”
মিরের তীক্ষ্ণ নজর রিদির দিকে।দাতে দাত চেপে সেভাবে তাকিয়ে থেকেই সে বললো,
“প্রেম না করলে ভালোবাসা যায়না?”
এ কথা শুনতেই ঝট করে মাথা তোলে রিদি।অতঃপর রিহার কথা শুনে সে পানে তাকায়,
“আড়ালে ভালোবাসতে ক’জন পারে?ওরা পেরেছিলো।”
মির চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললো,
“ভালো নিখুঁতভাবে দুজনই বেসেছিলো।কেবল প্রকাশটুকু করেনি”
রামিম বিস্ময়ের সহিত বললো,
“প্রণয় সত্যিই কোনো মেয়েকে ভালোবাসতে পারে?নারী বি!দ্বেষী ছেলেটা সত্যিই এই পরীটাকে ভালোবাসে?”
প্রণয়ের গম্ভীর কন্ঠস্বর,
“এসব টপিকে আর দ্বিতীয় কোনো শব্দ আমি শুনতে চাচ্ছি না।অমৃতার এখানে কোনো দোষ ছিলোনা তাই তার দিকে আঙুল তুলবেন না কেউ।যা বলার আমায় বলবেন।আর তুমি,যাও ফ্রেশ হয়ে নিমৃতাকে নিয়ে এখানে এসে পড়ও।তোমাদের বোন এখানে কেবল দু’দিনই আছে”
বলেই প্রস্থান করে সে স্থান।একে একে সকলেই যে যারমতো কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।আর চাঁদ বাইরে এসে সিড়ি ভেঙে ছাদের উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়।সেখানে কাউকে দেখতে না পেয়ে স্বস্তির শ্বাস ফেলে মোবাইল বের করে ডায়াল করে তার বেস্ট ফ্রেন্ডের দেওয়া সেই লয়ারের নাম্বারে।প্রথম দু’বার বেজে বেজে কেটে গিয়ে তৃতীয়বারের বেলা কলটি রিসিভ হতেই চাঁদ বলে,
“হ্যালো।আসসালামু আলাইকুম।ব্যারিস্টার উশ্মিতা উশ্মি বলছেন?”
“ওয়ালাইকুম’সালাম।জ্বি বলুন”
“আমি চাঁদ বলছিলাম”
“কোন চাঁদ?”
“মুহাই…”
চাঁদের কথা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই মেয়েটা বলে,
“ওহ হ্যা।সমুদ্রের বেস্ট ফ্রেন্ড বলছিলেন?”
“জ্বি”
“হ্যা হ্যা বলুন।যদিও সমুদ্র আমায় বলেছে।তবুও আপনি বলুন আমি আপনাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি?”
“আসলে ম্যা’ম আমার ডিভো!র্স লাগতো আরকি”
“আমি আহামরি কোনো বড় কেউ নই যে আমায় ম্যা’ম বলতে হবে।তাছাড়া আমার জানামতে আপনি,আমি,সমুদ্র আমরা একই ক্লাসে পড়ি।তাই আমায় নাম ধরে ডাকলে খুশি হবো”
“জ্বি আচ্ছা”
“দেখুন মিসেস.চাঁদ আমি স্টিল বিডিতে ল্যান্ড করিনি।হয়তো রাত হবে নয়তো ভোর।অথবা সকালও হতে পারে।আমি আপনায় আগামীকাল জানাচ্ছি।আর চিন্তা করবেন না।আপনার সাথে যদি অনুচিত হয় আমি আপনাকে যেভাবেই হোক আপনার হাজবেন্ড থেকে ছাড়াবোই।”
রিদি জানালার পাশে টুল নিয়ে বসে আছে।চেয়ে আছে আকাশ পানে।মন তার বিসন্ন।কাধে কেউ হাত রাখতেই ঘুরে তাকায় সেদিকে।রুবা আর শিফাকে দেখে স্মিত হাসে সে।হাসিটার পেছনে লুক্কায়িত কষ্টের ঢেউগুলো তারা স্পষ্ট দেখতে পেলো যেনো।দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুবা বললো,
“মন খারাপ করিস না রিদু।সুন্দর ছেলেদের গার্লফ্রেন্ড থাকাটাই স্বাভাবিক।বরং না থাকাটাই অস্বাভাবিক।এক্সসেপ্ট প্রণয় ভাইয়া”
শিফা রিদির পাশে টুল নিয়ে বসে তার হাতদুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে,
“একপাক্ষিক প্রেমে যতটা প্রশান্তি পাবি ঠিক ততটাই অশান্তিও পাবি জানিস না?”
রুবা রিদির আরেক পাশে বসে বলে,
“প্রেম ট্রেম নিয়ে হয়তো আমার আইডিয়া নেই।তবে ভালোবাসা জিনিসটা ভালো নয়।এ জিনিসটা কেবলই কষ্ট দেয়।নাহয় চাঁদ ভাবি আর ভাইয়া কেনো আলাদা হয়েছিলো?”
রিদি মাথা নিচু করে বিসন্ন গলায় বললো,
“তাদের কষ্ট বোঝার মতো ক্ষমতা হয়তো আমাদের কারোরই নেই তবে আমি মিরকে অন্য কারো সাথে কল্পনাও করতে পারিনারে!”
শিফা মৃদু হেসে আঙুলে ওড়না পেচাতে পেচাতে বলে,
“অথচ আমি তাকে অন্য কারো সাথে প্রতিনিয়ত দেখেছি।মনকে ক্ষ!ত!বিক্ষ!ত করে তাদের শুভকামনাও জানিয়েছি।আমি পারলে তুই কেনো পারবিনা রিদু?”
শিফাকে জড়িয়ে ধরে কেদে দিয়ে রিদি বলে,
“তোদের দুজনের মতো স্ট্রংতো আমি নই!নইরে!”
রুবা রিদিকে পাশে দিয়ে জড়িয়ে বলে,
“স্ট্রং না হলে দুনিয়ায় টেকা মুশকিলরে দোস্ত”
রিদি রুবাকে এক হাতে জড়িয়ে বললো,
“জীবনে আর যাই করিস কাউকে ভালোবাসার মতো ভুল কখনোই করবিনা।বিশেষ করে যার কাছ থেকে ভালোবাসার বিন্দু পরিমাণও পাবিনা তাকেতো একদমই না”
শিফাও রুবাকে বললো,
“সে কখনো তোর হবেনা জেনেও সেদিকে আর পা বাড়াবিনা ভুলেও”
রাত আটটা বেজে সাতাশ মিনিট,
বিদ্যুৎ ভ্রষ্ট হয়েছে কিয়ৎক্ষণ পূর্বেই।গরমে সবাই বাড়ির বাইরে এসে পড়েছে।রয়ে গেছে কেবল রিদি।তার নাকি শরীরটা ভালো ঠেকছেনা।তাই বিছানায় শুয়ে আছে।কাদতে কাদতে নাক বন্ধ হয়ে কাশি উঠে গেছে।তাই রুমে পানি না পেয়ে রুম থেকে বের হয়েছে পানি খেতে।যেইনা রুম থেকে বের হয়েছিলো ওমনি কেউ হাত ঠেনে রুমের ভেতরে এনে দরজা চাপিয়ে দেওয়ালে রিদির পিঠ ঠেকিয়ে মুখ চেপে ধরে।রিদি হাসফাস করছে দেখে ছেড়ে দিয়ে কানের কাছে মাথা নিয়ে বলে,
“যেখানে কষ্ট বৈ কিছু পাওয়া যায়না সেখানে পা বাড়ানো উচিত নয়।আর ভুল জায়গায়তো একদমই না।ভুল পথে পা বাড়িয়ে ফেলেছো,দেরি হয়ে যাওয়ার আগেই পিছু নিয়ে নাও।আর তুমি যা চাচ্ছো তা কখনোই সম্ভব নয়।তোমার চাওয়াটায় নিষেধাজ্ঞা জারি আছে।এ চাওয়া কখনোই পূর্ণ হবার নয়”
To be continued….
#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম
২২.
“একটা প্লেবয়ের জন্য চেহারার এ দশা করেছো মেয়ে?”
মিরের কথাটি শুনে চোখজোড়া বন্ধ করে ঠোট কা!ম!ড়ে রিদি শ্বাস নিয়ে বলে,
“ছাড়ুন বাইরে যাবো”
“চেহারার এই বাজে অবস্থা নিয়ে বাইরে যাবে?এরপর কেউ জিজ্ঞেস করলে কী বলবে?এটাই যে একটা প্লেবয়ের রিলেশনশিপের ব্যাপারে জেনে কেদে কে!টে অস্থির?”
রিদি কোনো জবাব দেয়না।তাই মিরই আবার বলে,
“শোনো মেয়ে,আমি এ জীবনে যতগুলো রিলেশন করেছি অতোটা বয়সও বোধহয় তোমার হয়নি।একজন প্লেবয়ের দিকে ঝুকে যাওয়ার পূর্বেই নিজেকে সংযত করো।জীবন সুন্দর হবে”
বলে আর এক মুহুর্ত দাড়ানোর প্রয়োজনবোধ করেনা মির।তৎক্ষনাৎ প্রস্থান করে।
অরণের পাশে বসে এক ধ্যানে চেয়ে চুলে হাত বুলাচ্ছে মিরা।ছেলেটা আগের তুলনায় অনেকটাই শুকিয়ে গিয়েছে।চুলগুলোও বেশ বড় হয়েছে।অরণের মাথায় বিলি কাটতে কাটতে হঠাৎ করেই চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে মিরা বলে,
“কবে ঠিক হবিরে?আর কত অপেক্ষা করাবি তুই?এবার অন্তত কথা বল।একটুখানি বল?”
অতঃপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে অরণের ক্যানোলা লাগানো হাতটা আস্তেধীরে নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে,
“জানিস?প্রণয় বিয়ে করেছে।তাও আবার চাঁদকে।বিশ্বাস হয়?প্রথমে মিরের মুখে শুনে আমিও বিশ্বাস করিনি।কিন্তু সচক্ষে দেখার পর মানতে কষ্ট হচ্ছিলো।প্রণয় এমনটা কী করে করতে পারলো রে?যেই মেয়ের জন্য ওর বেস্ট ফ্রেন্ডের এই দশা সেই মেয়েকে ও কী করে বিয়ে করলো?যেই মেয়ের তোকে আঘা!ত করতে একটুও হাত কাপেনি তাকে বিয়ে করতে প্রণয়েরও তো বুক কাপেনি রে!একটাবার তোর কথা ওর মনে হলোনা?ও এমনটা কী করে করতে পারে অরণ?যাকে শাস্তি দেবার কথা তার সাথে দিব্যি সংসার করছে?”
আবারও থেমে অরণের কপালে-গালে হাত বুলিয়ে বলে,
“প্রমাণের অভাবে ঐ মেয়েকে সাজা দিতে পারছিনা।তবে চিন্তা করিস না একদিন ও ওর শাস্তি ঠিকই পাবে।বিধাতা ঠিকই দেবেন।তিনি ছাড় দেন কিন্তু ছেড়ে দেননা।তোর অবস্থার জন্য যারা যারা দায়ী সকলেই শাস্তি পাবে”
কারো কন্ঠস্বর পেয়ে পেছনে ঘুরে তাকায় মিরা,
“কোন মেয়ের কথা বলছেন আপু?কে অরণ ভাইয়ার এ অবস্থা করেছে?”
মিরা স্মিত হেসে বলে,
“বললে বিশ্বাস করবে?করবেনাতো।তাই না বলাই ভালো”
ছেলেটা সামনে এসে অরণকে চেক করতে করতে বলে,
“কেনো করবোনা আপু?করার মতো হলে অবশ্যই করবো।আর আপনারা যদি জানেনই কাজটা কে করেছে আপনাদের উচিত তার বিরুদ্ধে মা!মলা দায়ের করা”
“নিজের বান্ধবীকে চৌদ্দ শিকের ভেতরে দেখতে পারবেতো ফায়ান?”
ভ্রু কুচকে ছেলেটা বলে,
“বান্ধবী?কোন বান্ধবী?কার কথা বলছেন আপনি?”
“কেনো তোমার প্রিয় বান্ধবীকে এই পাঁচ বছরে একবারও মনে করোনি নাকি?”
মিরার কথা শুনে হৃদস্পন্দন দ্রুত গতিতে ওঠানামা করে ছেলেটার।ঘনঘন শ্বাস নিয়ে সে বলে,
“আপ..আপনি কার কথা বলতে চাচ্ছেন?”
“জানতাম বিশ্বাস করবেনা।অবশ্য তাতে আমার কিছু যায় আসেনা”
“যেই মেয়ে বছর পাঁচেক আগেই উধাও হয়ে গেছে সেই মেয়ে অরণ ভাইয়াকে মে!রেছে এটা বিশ্বাস করতে বলছেন আপনি আমায়?”
বিদ্রুপ হেসে মিরা বলে,
“প্রিয় মানুষের করা পা!পও পূণ্য লাগে জানোতো ফায়ান?আর রইলো উধাও হওয়ার ব্যাপার।তো এটাতো তুমিও জানো একজন খু!নি খু*ন করার পর ধরা খাওয়ার জন্য সেখানে বসে থাকবেনা?”
ছেলেটা কিছু বলার পূর্বেই একজন লোক এসে বলে,
“ড.আরফিদ ফায়ান?”
পিছু ঘুরে চিরচেনা বন্ধুকে বছরখানেক পর দেখে আবেগে দৌড়ে তাকে জড়িয়ে ধরে ফায়ান বলে,
“কেমন আছিস মামা?আর অবনীর কন্ডিশন এখন কেমন?”
ফায়ানকে একহাতে চাপর মেরে ইফাদ বলে,
“বান্ধবীর কথা জিজ্ঞেস করতে ভুলিস না শা*লা!”
ফায়ান হেসে বলে,
“আহহা বলতো!আর ডেলিভারি কবে ওর?”
“আছে আলহামদুলিল্লাহ।দেরি আছে ভাই।সবেতো দু’মাস হলো”
“ঢাকা এসে পড়েছিস একবারে?”
“আমাদের দুজনের ফ্যামিলিই ফাইনালি মেনেছে।না এসে পাড়লাম না”
ইফাদের কাধে হাত রেখে ফায়ান বললো,
“যাক ভালোই হলো।তুই একটু অপেক্ষা কর আমি আধঘন্টার মধ্যে আসছি।অবনীকে দেখিনা অনেকদিন।এখনতো আমার ভাতিজা বা ভাতিজি আসছে।এখন দেখা যেনো বাধ্যবাধকতায় এসে ঠেকেছে!না গেলেতো আর রক্ষে নেই।তোর বউ আমায় কাচা গি!লে খাবে”
ইফাদ হেসে বললো,
“আর কত অপেক্ষা করবি?এবার তোরও বিয়ে করা উচিত”
ফায়ান প্রতুত্তোর করেনা।তাই ইফাদ কিছু বলতে নিলে সামনে মিরাকে দেখে থেমে যায় সে।অতঃপর অরণের সামনে এসে মিরাকে বলে,
“অরণ ভাইয়ার কন্ডিশন আগের চেয়ে বেটার হয়েছে আপু?”
গম্ভীরভাবে মিরা বলে,
“খানিকটা”
এরপর আবারও মিরা কেশে বলে,
“তোমাদের একটা সত্যি জানা উচিত।অবশ্য তোমাদের অধিকারই আছে জানার।”
ইফাদ বলে,
“মানে?”
“তোমাদের বান্ধবীরতো বিয়ে হলো আজ দু’দিন”
ইফাদ ভ্রু কুচকে বললো,
“বান্ধবী?কোন বান্ধবী?”
“তোমাদের প্রিয় টপার বান্ধবী”
ইফাদ বিস্ময় নিয়ে বললো,
“চাঁদ?”
ফায়ান সন্দেহজনকভাবে মিরার দিকে তাকিয়ে বললো,
“চাঁদের ব্যাপারে আপনি কী করে জানেন?”
“জানারই কথা।বন্ধু কাজই করেছে এমন”
ফায়ান ভ্রু উচিয়ে বললো,
“বুঝিনি?”
“দুর্ভাগ্যবশত ঐ মেয়ে আমার বন্ধুর বউ হয়ে গেছে।যেটা আমি বা আমরা কেউই চাইনি।”
ফায়ানের শ্বাস খানিকটা আটকাচ্ছে।মস্তিষ্ক কেমন ফাকা ফাকা লাগছে।চোখের সামনে সবকিছুই ঘোলাটে হচ্ছে তার।নিজেকে সামলাতে চোখজোড়া বন্ধ করে সে।অতঃপর অনুভব করে চাঁদের প্রতি তার প্রথম ভালোলাগার সুখানুভূতি।স্মৃতির পাতায় ভেসে উঠে সেই সুন্দরতম মুহুর্তটি,যখন সে জানতোও না নীরবে নিভৃতে সবার অগোচরে এই একটি মেয়ে তার সমস্ত হৃদয় জুড়ে বিরাজমান হবে,
.
.
.
.
.
.
.
বক্ষস্থল থেকে চাঁদ সরে যেতেই টনক নড়ে ফায়ানের।নিজেকে ধাতস্থ করে চাঁদকে সে বলে,
“কী হলো বলছেন না কেনো কিছু?”
চাঁদের জবাব না পেয়ে তাকে মনোযোগ দিয়ে কোথাও তাকিয়ে থাকতে দেখে তার দৃষ্টি অনুসরণ করে সেও তাকায় সে পানে।অতঃপর নজরে আসে সাদা রঙের শার্ট পরহিত এক লম্বাটে ছেলে গিটার নিয়ে গানের সুর তুলছে।দৃষ্টি তার চাঁদেতে নিবদ্ধ,
♪♪♪…তবে তাই যদি হয়,
করি নাকো ভয়,
জানি আধার রাত ঘনিয়ে হবে সূর্যোদয়।
আমি ভেবে নিলাম,
তুমি সেই লাল গোলাপ।
যারে নিরন্তর পাহারা দেয়,
এক কাটার বাগান!…♪♪♪
To be continued….