আবার প্রেম হোক পর্ব-১৭+১৮+১৯

0
409

#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম

১৭.
“সমস্যা টা কি আপনাদের?ডেয়ার কমপ্লিটের মোহরা কি কেবল আমিই?”

বিরক্তির সহিতই কথাটা বলতে বাধ্য হলো চাঁদ।রোজ রোজ একই কাহিনী ভালো লাগছেনা তার।নিজেকে সার্কাসের কোনো জো!কারের থেকে কম মনে হচ্ছেনা আপাতত।কলেজে ঢুকে সবেমাত্রই ক্যাম্পাসে বান্ধবীদের সাথে দাড়িয়েছিলো।তার ঠিক গুটি কয়েক সেকেন্ড বাদেই একটা ছেলে তার সামনে এসে দাঁড়ায়।দাঁড়িয়ে থেকেই বলে,

“চাঁদ?”

চাঁদ ছেলেটার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বলে,

“জ্বি?”

চাঁদের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে ছেলেটা বললো,

“ইফাদ”

“সরি”

চাঁদের প্রত্যাখ্যানে ছেলেটা হাত সরিয়ে বললো,

“একটা কথা বলার ছিলো”

“বলুন”

ছেলেটা আমতা আমতা করে বললো,

“আ..আসলে…আসলে..আ…আই লাইক ইউ”

কুচকানো ভ্রু আরও কুচকিয়ে চাঁদ বললো,

“হোয়াট!”

ছেলেটা চোখ বন্ধ করে একটা গোলাপ তার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,

“দে…দেখুন আমি..আমি আসলে আপনাকে একটু বেশিই পছন্দ করে ফেলেছি।আমি জানিনা একদিনে কি করে কাউকে এতো ভালো লাগতে পারে।বাট আই হ্যাভ আ হিউজ ক্রাশ অন ইউ।কাল থেকে আপনাকে ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারছিনা।আপনার নাম যেমন চাঁদ,আপনি আর আপনার মন দুটোই চাঁদের ন্যায় সুন্দর।আই রিয়েলি লাইক ইউ”

সকাল থেকে একের পর এক বিরক্তিকর পরিস্থিতির শিকার হওয়ায় চাঁদের মেজাজ এবার অতিরিক্ত পরিমাণে খারাপ হলো।তাই ঝা!ঝালো স্বরেই সে বললো,

“সমস্যা টা কি আপনাদের?ডেয়ার কমপ্লিটের মোহরা কি কেবল আমিই?”

চাঁদের ঝা!ঝালো স্বর শুনে ছেলেটা থতমত খেয়ে যায়।চাঁদকে ভয়ে ভয়ে সে বলে,

“সরি?”

চাঁদের বলার আগেই অবনী বলে,

“নাটক করে করে সরি বলা হচ্ছে না?বেয়াদব ছেলে।মেয়ে দেখিস নাই কোনোদিন?এই ছেলে তুই এই মেডিকেলে চান্সও পেয়েছিস ক্যাম্নে?নিশ্চয়ই নক!ল করেছিস?”

ছেলেটা অবনীর কথা শুনে রীতিমতো ভ!ড়কে যায়।ভ!ড়কায় চাঁদ আর ইপ্সিও।চাঁদ তাড়াহুড়ো করে বলে,

“এই অবনী চুপ।কিসব বলছো!”

“ঠিকই বলছি।তুই চুপ থাক”

চাঁদ ইপ্সিকে ইশারা করলো অবনীকে নিয়ে ক্লাসে যেতে।ইপ্সি তাই জো!র করে অবনীকে নিজের সাথে নিয়ে গেলো।অবনী আর ইপ্সি যেতেই চাঁদ ছেলেটাকে বললো,

“আমার বান্ধবীর হয়ে আমি সরি বলছি।আসলে ও একটু বেশি কথা বলে।আপনাকেও বলে ফেলেছে।কিছু মনে করবেন না।আর আপনি এমনটা না করলেও পারতেন।এখানে আরও অনেক মেয়ে আছে।আমার সাথেই কেনো আপনারা এমন করেন?”

ছেলেটা চাঁদকে বললো,

“অন্য কোনো মেয়েতো আর আপনি হয়ে যাবে না তাইনা?আর এটা কোনো ডেয়ার না।আমার সত্যিই আপনাকে ভালোলেগেছে”

চাঁদ ছেলেটাকে বললো,

“ভালো সবারই কাউকে না কাউকে লাগতেই পারে।এতে কোনো বাধা নেই।”

“তবে?”

“আপনার বাম হাতটা এখানে দিন তো”

“কেনো?”

“আমি বলেছি তাই”

ছেলেটা তার বাম হাত চাঁদের সম্মুখে দিতেই চাঁদ বলে,

“ডান হাতের গোলাপটা বাম হাতে রাখুন”

চাঁদের কথামতো ছেলেটা গোলাপ এক হাত থেকে অন্য হাতে রাখতেই চাঁদ আবারও বলে,

“এবার বা’ হাত মুষ্টিবদ্ধ করুন”

ছেলেটা তাই করলো।অতঃপর চাঁদ বললো,

“এবার হাতটা পকেটে ঢুকিয়ে ফেলুন”

কথাটা শ্রবণ হতেই ছেলেটা চমকে তাকালো চাঁদের দিকে।অতঃপর তার হাত নামিয়ে গোলাপ পকেটে ঢুকিয়ে চাঁদের দিকে তাকিয়ে ভ্রু উচিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,

“নীরব প্রত্যাখ্যান?”

চাঁদ প্রতিত্তোরে মৃদু হাসে।ছেলেটা অসহায় দৃষ্টিতে চাঁদের দিকে তাকিয়ে বলে,

“প্লিজ ডোন্ট ডু দিজ”

ছেলের এরূপ কান্ডে চাঁদ উচ্চশব্দেই হেসে উঠে।তা দেখে ছেলেটা বলে,

“আ!হত না হওয়ার জন্য আপনাকে হাসতে বারণ করলাম।আর আপনি নি!হত করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন?”

চাঁদ হাসি থামিয়ে বলে,

“ফ্লার্টিং লেভেল অ্যাট নাইন্টি নাইন পার্সেন্ট”

“নো।ক্রাশিং লেভেল অ্যাট নাইন্টি নাইন পয়েন্ট নাইন নাইন পার্সেন্ট”

“হয়েছে থামুন।ক্লাসে যাবো”

বলেই সেখান থেকে চলে যেতে নিলে পথ আটকে দাঁড়ায় মিরা,অরণ আর মির।তাদেরকে দেখে থেমে যায় চাঁদের পা জোড়া।অবাক দৃষ্টিতে তাকায় তাদের পানে।মিরা চাঁদের পাশের ছেলেটাকে আঙুল দিয়ে ইশারা করে বলে,

“লিভ”

ছেলেটা চাঁদকে কিছু বলতেই নিয়েছিলো এমন সময় মিরা আবারও বলে,

“যেতে বলেছি যাবে।ডোন্ট ট্রাই টু বি ওভারস্মার্ট জুনিয়র”

‘জুনিয়র’ শব্দটা শুনে ছেলেটা বুঝতে পারলো সামনে দাড়িয়ে থাকা ছেলে মেয়েগুলো তার সিনিয়র।তাই কোনো বাক্য ব্যয় না করে সে প্রস্থান করলো।ছেলেটা যেতেই মিরা চাঁদের সামনে এসে বলে,

“কেমন আছো চাঁদ?”

“আলহামদুলিল্লাহ।আপনি আপু?”

“আলহামদুলিল্লাহ।কাল তোমার সাথে দেখা করতে তোমার ক্লাসে গিয়েছিলাম পাইনি”

“কখন?”

“ক্লাস টাইম শেষেই”

“গতকাল আমি পাঁচ মিনিট আগেই বের হয়ে গিয়েছিলাম আপু।কিছু কাজ ছিলো তাই”

“ওহ আচ্ছা।তোমার কি এখন টাইম হবে?কথা বলতাম”

চাঁদ আমতা আমতা করছে দেখে অরণ বললো,

“ইতস্তত করোনা।এখন ফ্রি না থাকলে পরে কথা হবে।যদি তুমি ফ্রি থাকো তবেই”

“আসলে স্যার আজ ক্লাসে আগেই যেতে বলেছিলেন।উনিও আগে আসবেন নাকি।কি জরুরী আলোচনা ছিলো”

মিরা ভরসা দিয়ে বললো,

“সমস্যা নেই তুমি যাও।ক্লাস টাইম শেষে থেকো কথা বলবোনে?”

“আসলে আপু!”

“হ্যা বলো?”

“একটু এখানে আসবেন?”

মিরা অরণ আর মিরকে ইশারা করতেই তারা একটু দূরে সরে দাড়াতেই মিরা চাঁদের কাছে গিয়ে বলে,

“বলো?”

চাঁদ আস্তেসুরে বলে,

“ক্লাস টাইম শেষের একটু আগেই বের হই আমি। ডিউটি জয়েন করতে হয় আপু”

“ডিউটি?”

“হিম।আমি একটা হাসপাতালে জব করি।সেটা বিকালের ডিউটি”

“ওহ!তাহলে সমস্যা নেই।তুমি আমার নাম্বারটা রাখো ফোনে কথা বলবোনে?”

“আচ্ছা আপু।আমারটাও রাখুন।আর কাল সময় করে আমি আপনার সাথে দেখা করবো ইনশাআল্লাহ।আজ স্যার না ডাকলে দাড়াতাম সত্যিই”

“সমস্যা নেই।ফার্স্ট ইয়ারের ক্যাপ্টেন তুমি না?”

“হ্যা আপু”

“এজন্যই তোমায় ডেকেছে।আমাদের বেলা প্রণয় সবকিছু এরেঞ্জ করেছিলো”

“সবকিছু বলতে?”

“নবীনবরণ হবেনা?”

“নবীনবরণ!”

“হ্যা।অবাক হচ্ছো কেনো?সবারই তো হয়”

“না সেজন্য না।সব দায়িত্ব কি তবে আমায় দেবে?”

“না।ফার্স্ট ক্যাপ্টেন থেকে নিয়ে এইটথ পর্যন্ত নেয়।আমাদের বেলা প্রণয়,অরণ,মির আমি আর রিহা দায়িত্ব পেয়েছিলাম।আর বাকি তিনজন ক্লাসমেট ছিলো”

“আচ্ছা!মানে আটজন মিলে করতে হবে?”

“করবে আটজনই বাট প্ল্যানিং সব তোমায় করতে হবে।সবাইকে দায়িত্ব ভাগ করে দিতে হবে।নিখুঁত পরিকল্পনা বৈকি।”

“এতো প্রেশার!”

মিরা হেসে চাঁদের থুতনীতে হাত রেখে বলে,

“টেনশন নিওনা।তুমি পারবে।আর বেস্ট নবীনবরণ ইন ডিএমসি যেনো এটাই হয় ওকে?”

চাঁদ মৃদু হেসে বলে,

“চেষ্টা করবো আপু।”

“কোনো হেল্প লাগলে আমাকে অবশ্যই বলবে।আর কেউ করুক না করুক।আমি,অরণ আর মির অবশ্যই করবো”

চাঁদ মিরার দু’হাত নিজের হাতে নিয়ে বলে,

“থ্যাংক ইউ সো মাচ আপু।আপনি অনেক ভালো”

“তাহলে আপুকে আপনি বলে আর পর করবেনাতো?”

“একদমই না আপু!এখন আসি?”

“হ্যা আসো”

চাঁদ যেতে নিলেই মির দৌড়ে এসে একটু জোরেই বলে,

“এই বিড়ালিনী!কোথায় যাচ্ছো?দাড়াও”

চাঁদ থেমে গিয়ে বলে,

“জ্বি ভাইয়া?”

“মিরার সাথে কথা বলেই চলে যাচ্ছো?এখানে যে আমরা দুজন এতোক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছি তার কোনো মূল্যই নেই দেখছি!”

“না ভাইয়া।আসলে… ”

মিরা চাঁদকে বলে,

“তুমি যাও।আমি ওদের বুঝিয়ে বলছি”

মির বলে,

“যাবে মানে?ক্লাস শুরু হতে দেরি আছে”

মিরা মিরকে চোখ রা!ঙিয়ে বলে,

“চুপ থাক”

বলেই চাঁদকে ইশারায় যেতে বললে চাঁদ মৃদু হেসে প্রস্থান করে।

ক্লাসের সামনে আসতেই চাঁদ দেখে সেখানে অনেকেই উপস্থিত আছে।ভেতরে তাদের প্রফেসরও আছেন।তাই চাঁদ পার্মিশন নেয়,

“মে আই কাম ইন স্যার?” [আমি কি ভেতরে আসতে পারি স্যার?]

চাঁদের দিকে তাকিয়ে প্রফেসর বলেন,

“ইয়েস বাট হোয়াই আর ইউ সো মাচ লেইট ক্যাপ্টেন?হোয়াইল আই টোল্ড ইউ টু কাম ফাস্ট টুডায়?” [হ্যা কিন্তু তুমি এতো বিলম্ব করেছো কেনো ক্যাপ্টেন?যেখানে আমি তোমায় আজ জলদি আসতে বলেছিলাম?]

চাঁদ ভেতরে প্রবেশ করে বলে,

“এক্সট্রিমলি সরি স্যার।রাস্তায় একটু ঝামেলা হয়েছিলো।এরপর থেকে আর এমন হবেনা।ইট উইল বি মাই ফার্স্ট এন্ড লাস্ট মিসটেক”

“ওকে আই ট্রাস্ট ইউ।হোপ সো ইউ ওন্ট রিপিট ইট।নাও কাম এন্ড স্ট্যান্ড উইথ দেম।আই হ্যাভ ইমপর্ট্যান্ট ডিশকাশন উইথ অল অফ ইউ” [ঠিক আছে আমি তোমায় বিশ্বাস করলাম।আশা করছি তুমি পরবর্তীতে এটা আর করবেনা।এখন ওদের সাথে এসে দাড়াও।তোমাদের সাথে জরুরী কথা আছে আমার]

সবাই প্রফেসরের কথা শুনে সোজা হয়ে দাড়াতেই তিনি বলেন,

“চাঁদ এন্ড ফায়ান কাম বিসাইড মি” [আমার পাশে এসে দাড়াও চাঁদ এবং ফায়ান]

চাঁদ প্রফেসরের পাশে দু’হাত জায়গা রেখে অস্বস্তি নিয়ে দাড়াতেই ফায়ান শান্তভঙ্গিতে চাঁদের দিকে তাকায়।অতঃপর প্রফেসরের অপরপাশে গিয়ে দাঁড়ায় সে।

“অ্যাটেনশান এভ্রিওয়ান।মিট মুহাইমা বিনতে চাঁদ এন্ড আরফিদ ফায়ান।মেইবি ইউ গাইজ নিউ বাউট দেম।ইওর ফার্স্ট এন্ড সেকেন্ড ক্যাপ্টেন। [সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।এরা মুহাইমা বিনতে চাঁদ আর আরফিদ ফায়ান।তোমরা হয়তো ওদের সম্পর্কে জানো।তোমাদের প্রথম এবং দ্বিতীয় ক্যাপ্টেন]

অতঃপর সকলকে নবীনবরণ নিয়ে সবকিছু বুঝিয়ে দিয়ে।শেষ বক্তব্য দেন,

“তোমাদের দু’দিন বাদেই নবীনবরণ তাই আজ থেকেই সব শুরু করে দাও।আর এই তিনদিন তোমাদের আটজনের ক্লাস করতে হবেনা।যেহেতু তোমরা আমাদের বেস্ট স্টুডেন্ট আমরা কেউই চাইনা তোমাদের কোনো ক্লাস মিস যাক।সেজন্য এই তিনদিন কোনো ক্লাসই হবেনা।নবীনবরণের পর থেকেই হবে।সো ইউ গাইজ ক্যান অ্যাটেন্ড ইচ এন্ড এভ্রি ক্লাস।বাট ইউ গাইজ হ্যাভ টু কাম কলেজ ফর অল এরেঞ্জমেন্টস অফ দ্যা ফাংশন।চাঁদ তুমি সবাইকে সবটা বুঝিয়ে দেবে।ফায়ান তুমি আর চাঁদ একসাথে আলোচনা করে কাকে কি দায়িত্ব দিবে চিন্তা করে কিভাবে সবটা করবে দেখো।তোমাদের দুজনের উপরই পুরো দায়িত্ব দিলাম।তবে কোনো ত্রুটি হলে সম্পূর্ণ দায়ভার চাঁদেরই থাকবে।রিমেমবার ইট”

ফায়ান জবাব দিলো,

“সরি স্যার বাট দায়িত্ব দুজনকে দিলে দায়ভার একার তার কেনো হবে?”

“ফার্স্ট ক্যাপ্টেনেরই সব দায়িত্ব হয়”

“তাহলে কেনো বলছেন আমায়ও দায়িত্ব দিচ্ছেন?”

“যদি চাঁদ সবটা…”

“সরি ফর ইন্টারেপ্ট বাট আপনি একজন গণ্যমান্য ডাক্তার প্লাস প্রফেসর হয়ে এমন মনোভাব কি করে রাখতে পারেন স্যার?মেয়ে-ছেলে যেই হোক।রুল যেটা ওটাই আপনার ফলো করা উচিত।”

ফায়ানের কথায় প্রফেসরের মুখ থমথমে হয়ে যায়।তিনি গম্ভীরভাবে বলেন,

“তোমাদের যেভাবে মনে হয় করো।এন্ড ফাইনাল ডিসিশন চাঁদেরই থাকবে।কিছু করার আগে সকলে ওকে জিজ্ঞেস করে নেবে।”

বলেই তিনি প্রস্থান করেন।তিনি যেতেই ইফাদ ফায়ানের সামনে এসে বলে,

“মামা স্যারকেতো একদম ধু!য়ে দিলি”

ফায়ান ভ্রু কুচকে বলে,

“ধোয়ার মতো কী হলো এতে?আমার কাছে তার কথা অনুচিত লেগেছে তাই উচিতটা বলে দিয়েছি দ্যাটস ইট।ওখানে গিয়ে দাড়া আসছি আমি”

বলেই চাঁদের দিকে তাকায় ফায়ান।তাকিয়ে থেকে বলে,

“ক্যান….”

একইসাথে চাঁদও বলে,

“আম…”

ফায়ান থেমে গিয়ে বলে,

“বলুন”

চাঁদ জবাবে বলে,

“আপনিই বলুন”

ফায়ানের কথা পেচানো পছন্দ না।তাই সে কথা না বাড়িয়ে সোজাসুজিই বলে,

“নট দ্যাট মাচ ইমপর্ট্যান্ট।ক্যান উই টক?” [অতোটা জরুরী না।আমরা কি কথা বলতে পারি?]

“শিওর”

প্রণয়সহ তার সব ফ্রেন্ড ক্যান্টিনে বসে আছে।অরণ সবসময়কার মতো বইয়ে মগ্ন।মির মোবাইলে ব্যস্ত।বাকিরা খাচ্ছে আর টুকটাক কথা বলছে।আর প্রণয় গিটারের তার ঠিক করছে।রিহা বার্গার খেতে খেতে বললো,

“দোস্ত কতদিন হলো তোর গলায় গান শুনিনা”

মির মোবাইল লক করে টেবিলে আছ!রে স্প্রাইটে চুমুক দিয়ে বলে,

“মনটাও ভালো নেই।তানহার সাথে ব্রেকাপ হয়ে গেলো।একটা ছ্যাকা খাওয়া গান শোনাতো মামা”

সকলে ভ্রু কুচকে তাকায় মিরের দিকে।তাকাতেই সে বলে,

“কী?”

রবিন উইংস চিবাতে চিবাতে বলে,

“কোন তানহা?কলেজের টা নাকি তোর পাশের বাসার টা?”

এ কথা শুনতেই সকলে হেসে দেয়।আর মির টেবিলে হালকাভাবে ঘু!ষি দিয়ে বলে,

“ধ্যাত!”

প্রণয় তার বন্ধু-বান্ধবের কান্ড দেখে এক গালে হেসে সামনে তাকাতেই দেখতে পায় আবারও লাল-কালো মিশ্রিত ড্রেসাপে কাগজ কলম হাতে ভেতরে ঢুকছে চাঁদ,তবে আজ গতকাল থেকে কিছুটা ভিন্নই দেখাচ্ছে।একপাশে তার অবনী,ইফাদ অপরপাশে আরেকটা মেয়ে।কলম নাড়াতে নাড়াতে ভ্রু কুচকে চাঁদ বলছে,

“ফায়ান কোথায়?দেখছিনা কেনো?”

অবনী বিরক্ত হয়ে বলে,

“না ঢুকেই বলছিস দেখছিনা।ভেতরে গিয়েতো দেখ।এই ইফাদ যা আমার জন্য মিরিন্ডা নিয়ে আয় গরম লাগছে”

চাঁদ আড়চোখে অবনীর দিকে তাকিয়ে বলে,

“তোরা এখানেই থাক।আমিই ওকে নিয়ে আসছি”

বলেই সামনে এগোয় চাঁদ।এমন সময় একজন ওয়েটার একহাতে গ্লাসের ট্রে অপরহাতে চেয়ার নিয়ে তার দিকেই না দেখেই এগোয়।প্রণয় সেটা খেয়াল করে গিটার রেখে উঠতেই নেবে এমন সময় তার নজরে আসে দ্রুতগতিতে কেউ একজন চাঁদের হাত টেনে নেয়।চাঁদ টাল সামলাতে না পারায় তার মাথা ছেলেটার বুকে গিয়ে আছ!রে পড়ে।ছেলেটা দ্রুতগতিতেই চাঁদকে বুক থেকে তুলে নিয়ে এক হাত দিয়ে হাত ধরে রেখে অপর হাতের তর্জনী চাঁদের চোখ বরাবর নিয়ে শাসিয়ে বলে,

“চোখে চমশা থাকা সত্ত্বেও দু!র্ঘ!টনা চোখে পড়েনা?এখনইতো পেটে চেয়ারের আ!ঘাত লেগে কিছু একটা হয়ে যেতো”

চাঁদ চোখ খিচে বন্ধ করে ছিলো।ফায়ানের কন্ঠ শুনে পিটপিট করে চোখ মেলে তাকায় তার দিকে।

সেই একই বেশে চাঁদকে দেখে দ্বিতীয়বারের মতো চোখ আটকে গিয়েছিলো প্রণয়ের।তবে বর্তমানে ঘটা অল্পকিছুক্ষণের ঘটনার রেশ তার মস্তিষ্কে ভ!য়ঙ্ক!রভাবে ছাপ ফেলে দিলো।তার বিড়ালাক্ষীজোড়া সেদিকেই থমকে গেলো।সে গিটারে আঙুল চালিয়ে সে পানে তাকিয়েই শুধালো,

♪♪♪…আমি ভেবে নিলাম,
তুমি সেই লাল গোলাপ।
যারে নিরন্তর পাহারা দেয়,
এক কাটার বাগান!…♪♪♪

হঠাৎ করে কারো মন্ত্রমুগ্ধ কন্ঠস্বরে তার প্রিয় পঙক্তি শুনে উৎসের দিকে সে অবস্থায়ই চোখ বন্ধ করে মনোযোগ জ্ঞাপন করে চাঁদ।অতঃপর উৎস খুজে পেয়ে সেদিকে তাকাতেই দ্বিতীয়বারের ন্যায় দৃষ্টিমিলন ঘটে প্রণয় নামক বিড়ালাক্ষী মানবের সাথে।

To be continued….

#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম

১৮.
“এ শহর আমার বোনের জন্য অভিশপ্ত।এখানে রেখে গিয়ে আরও একবার অভিশাপ ডেকে আনার আহ্বান জানাচ্ছেন?”

কথাটি প্রণয়ের কর্ণকুহর হয়ে মস্তিষ্কে পৌঁছাতেই অতীত নামক বইয়ের পাতাটি শব্দ করেই বন্ধ হলো।টনক নড়লো প্রণয়ের।মস্তিষ্কে কেবল একটি বাক্যই বিচরণ করছে,

“এ শহর আমার বোনের জন্য অভিশপ্ত”

বেশকিছুক্ষণ মস্তিষ্কে চাপ প্রয়োগ করার পরেও এ কথার অর্থ প্রণয়ের বোধগম্য হলোনা।সে সেখানে দাঁড়িয়ে থেকেই প্রশ্ন করলো,

“আপনি ঠিক কোন জিনিসটাকে অভিশাপ বলছেন একটু বোঝাবেন?”

আচানক প্রণয়ের করা প্রশ্নে তাকায় তার পানে চৈত্র এবং চাঁদ।চাঁদ চৈত্রকে কিছু বলার পূর্বেই চৈত্র তাকে থামিয়ে দিয়ে প্রণয়কে উদ্দেশ্য করে বলে,

“আমার আর আমার বোনের কোনো ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করার অধিকারতো আমি আপনাকে দিইনি?”

প্রণয় গম্ভীরভাব ধারণ করেই ধীরগতিতে চাঁদের পাশে এসে দাঁড়ায়।অতঃপর চাঁদের হাত ধরে তাকে চৈত্রের সামনে থেকে সরিয়ে নিজে চৈত্রের সম্মুখে দাঁড়িয়ে বলে,

“সে আমার স্ত্রী।তার প্রতিটা বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার অধিকার স্বয়ং বিধাতা আমায় দিয়েছেন”

চৈত্র প্রণয়ের জবাবে তার বিড়ালাক্ষীজোড়ার দিকে তাকালো।তাকিয়ে থেকে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানবের মাত্র বলা বাক্য আর চোখের ভাষায় কতটা মিল আর অমিল রয়েছে।অতঃপর চৈত্র বললো,

“কিছু জিনিসে হস্তক্ষেপ না করাই শ্রেয় ডাক্তারসাহেব।তাছাড়া যেই লোক বিয়ের আসরে বউ পাল্টাতে দু’বার ভাবেনি তার কাছে আমার বোনকে রেখে যাওয়া কতটা নিরাপদ হবে?”

চৈত্রের সূক্ষ্ম এড়িয়ে যাওয়া আরসবার নজরে না এলেও প্রণয় ঠিকই বুঝতে সক্ষম হলো।তাই চৈত্রকে আর ঘাটাতে চাইলোনা সে।চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললো,

“আপনার বোন যদি আপনার সাথে চলে যেতে চায় আমি তাকে বাঁধা দেবোনা।কিন্তু যেতে যদি আপত্তি থেকে থাকে তবে তাকে আমার পাশ থেকে এক পাও কেউ নড়াতে পারবেনা।”

প্রণয়ের শান্ত জবাবে চৈত্র তাকায় চাঁদের দিকে।অতঃপর বোনকে বলে,

“কী চাস?”

চাঁদ ভাইয়ের দিকে করুন চোখে তাকিয়ে বলে,

“তোমার অবাধ্য কখনো হইনি।আজও কিন্তু হচ্ছিনা!তবে সময় আর ভরসা চাচ্ছি।সবটা ঠিক হয়ে যাবে। বিশ্বাস রাখো।আগে চাঁদের কেবল খোলস শক্ত ছিলো,বর্তমানে সে পুরোটাই শক্ত আবরণে আবৃত।আমায় নিয়ে ভেবোনা।”

চাঁদের কথা শুনে আড়চোখে তাকায় তার পানে প্রণয়।অতঃপর তার সামনে দাঁড়িয়ে তার কানের কাছে নিজের মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,

“চাঁদের সেই শক্তাবরণকে ভেঙে গুড়ো গুড়ো করার জন্যই তার জীবনে প্রণয়ের দ্বিতীয়বার আগমণ ঘটেছে মিস রেডরোজ”

প্রথম দিনের ন্যায় প্রণয়ের কাছে আসা আর তারই দেওয়া নামে বহুবছর পর ডাকলেও সেদিনের ন্যায়ই মিল খুজে পেতে চাইলো চাঁদের অবচেতন মন,তবে সফল হলোনা তাতে।খুজে পেলো কেবলই আকাশ-পাতাল ব্যবধান!সেদিন প্রণয়ের চোখেমুখে ছিলো মুগ্ধতা আর আজ কেবলই আক্রোশ।চাঁদও প্রণয়ের ন্যায় ফিসফিসিয়ে বললো,

“চাঁদ তা সাদরে গ্রহণ করলো মি.বিড়ালাক্ষী মানব”

চাঁদের ফিসফিসানোতে তার ঠোটের নাড়াচাড়া প্রণয়ের ঘাড় স্পর্শ করতেই সর্বাঙ্গ শিউরে উঠলো প্রণয়ের।আঁখি জোড়া তৎক্ষণাৎ বন্ধ করে নিজেকে সামলালো সে।অতঃপর হাতের স্টেথোস্কোপ চাঁদের গলায় ঝুলিয়ে দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে হাতের এপ্রোণ চাঁদের হাতে ধরিয়ে দিয়ে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে উঠতে বললো,

“ভাইয়াকে আজ কোনোক্রমেই যেতে দেবেন না চন্দ্র!একসঙ্গেই শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশ্যে বেরুবো আমরা”

রুবা ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।তার মাঝে কোনো হেলদুল নেই।সে এখনো তাকে অ!পমান করা চাঁদের ভাইয়ের কথাই ভাবছে।বোন এতো মিষ্টি ভাই কেনো তিক্ত?অথচ দুজনের চেহারায় খানিকটা হলেও মিল আছে।কে বলবে এরা দুজন ভাইবোন?নাকি চাঁদও তার ভাইয়ের ন্যায়ই শক্তপোক্ত মানবী?চাঁদের অতীত তো সে জানেনা।আর আজ কেনোইবা চৈত্র বললো এ শহর অভিশপ্ত চাঁদের জন্য?তার মনে একটু একটু করে সন্দেহ জাগতে লাগলো।কি এমন হয়েছিলো যার জন্য চাঁদকে পাড়ি জমাতে হয়েছিলো সুদূর টেকনাফে?কেনোইবা প্রণয়কে চাঁদ দেখতে পারেনা?দুজনের মাঝে ঠিক কি হয়েছে তা জানতে মন তার আরও ব্যাকুল হলো।এসব ভাবতে ভাবতেই বেখায়ালী হয়ে আরও একবার পড়ে যেতে নিলেই নিজেকে সামলে সামনে তাকালো সে।তাকাতেই দেখতে পেলো সোফায় বসে পায়ের উপর পা তুলে হাতে মোবাইল নিয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তার পানেই চেয়ে আছে চৈত্র।রুবার সাথে দৃষ্টি মিলতেই আবারও মোবাইলে মনোযোগ দেয় ছেলেটা।অতঃপর রুবা মাথার ঘোমটা ঠিক করে ফ্লোর থেকে কাগজ আর কাপড়ের ব্যাগ হাতে নিয়েই বের হয় বাড়ির বাইরে।

রাত তখন নয়টা বেজে ছয় মিনিট,
বাড়ির বয়োজ্যেষ্ঠরা ব্যতীত সকল ছোটরা ডাইনীং এ বসেছে মাত্রই।কারণ প্রণয় সকলকে নিয়েই নাকি তার শ্বশুরবাড়ি যাবে।তাই ই তাদের আগে আগে খেতে বসা।চাঁদ,শিফা,রিদি আর রুবা মিলে রান্নাঘর থেকে খাবার নিয়ে এক এক করে টেবিলে রাখছে।তন্ময় চেয়ারে বসেই প্লেট নিয়ে বলে,

“ভাবি দুপুরে তো আঙুল,প্লেট সবই চেটে খেয়ে ফেলেছি।এখনও কি সেম হবে নাকি?”

চাঁদ ভাতের বোল আনতে আনতে কিছু বলতেই নিয়েছিলো আর তার মাথার ঘোমটা পড়ে গিয়ে বিপত্তি বাঁধে।আচল বড় হওয়ায় সে দাত দিয়ে তুলতে পারছেনা।তার মধ্যে আবার চোখের চশমা নাকের ডগার কাছাকাছি এসে পড়েছে।বেশ বিরক্তবোধ করছে চাঁদ।আগেও বাড়তে পারছেনা সে।শিফাকে ডাক দেবে এমন সময়ই কেউ একজন তার চশমা চোখে ভালোকরে এটে দিয়ে পেছনে গেলো।পেছন থেকে হাত খোপার মতো করে পেচিয়ে গিট লাগিয়ে দিলো চুলে,যাতে করে খুলে না যায়।অতঃপর সামনে এসে চাঁদকে আড়াল করে শাড়ির আচল ধরে পেচিয়ে এনে কোমড়ে গুজে দিতেই চাঁদ চোখজোড়া আবেশে বুজে নিলো।শরীরের লোম দাঁড়িয়ে গেলো নিমিষেই।তার চিনতে মোটেও অসুবিধা হলোনা এ হাতের স্পর্শ তার বিড়ালাক্ষী মানবের।অতঃপর চাঁদের হাত থেকে ভাতের বোল নিয়ে টেবিলে রেখে চেয়ারে বসতে বসতেই প্রণয় বললো,

“এখানে আমি ব্যতীত বাকি সকলেই আপনার ভাই।টিপিক্যাল বউ সাজার প্রয়োজনীয়তা আছে বলে মনে হচ্ছেনা”

প্রণয়ের কথায় চমকে তাকায় সকলে।অবাক হয় চাঁদ নিজেও।মনে এতো ক্ষো!ভ থাকা সত্ত্বেও এতো শান্ত ব্যবহার করছে কেনো লোকটা?ঝড় টা কি তবে ভ!য়ংকরভাবে হা!না দেবে চাঁদের জীবনে?চাঁদের ভাবনায় ছ্যাদ ঘটে তার দেবর আর ননদদের উস্কানিমূলক কথাবার্তায়,

তন্ময় সুর তুলে বলছে,

“ওহোওওও!এখানে আমি ব্যতীত সকলেই আপনার ভাআআই!”

উজান তন্ময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চাঁদকে বলছে,

“ভাই যখন তোমাকে খোপা করে দিচ্ছিলো আমি কিন্তু ফটো ক্লিক করে ফেলেছি ভাবি!”

উজানের কথায় শিফা ভ!ড়কে বলে,

“আমার নকল করার সাহস কি করে হলো তোমার হ্যা?”

উজান ভ্রু কুচকে বললো,

“নকল মানে?”

“আমিও ফটো তুলেছি”

রুবা বিরক্ত হয়ে বললো,

“এরকম একটা মোমেন্টই ছিলো যে ফটো না তুলে থাকাই যাবেনা!আমিও তুলেছি এতে এমন করার কি আছে ভাই!”

রিদি বললো,

“সেটাইতো।ভাইয়া যখন শাড়ি গুজে দিচ্ছিলো আমিও তুলেছি হোয়াটস দ্যা বিগ ডিল?”

তন্ময় কৌতুহলী হয়ে বললো,

“চশমা ঠিক করার সিন টা তুলেছিস কেউ?”

“ওদের অজান্তেই ওদের আড়ালে তোলা অনেক ছবি আমার ড্রাইভে এখনো পড়ে রয়েছে”

মিরের কন্ঠস্বর পেয়ে সেদিকে নজর দেয় সকলে।মিরের এতো কাছাকাছি থাকায় রিদি তৎক্ষনাৎ সেখান থেকে সরে চাঁদের নিকট এসে দাঁড়ায়।মির সেটা খেয়াল করে আঁড়চোখে তাকায় সে পানে।অতঃপর প্রণয়ের দিকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে বলে,

“আমাদের না জানিয়ে ঘসেটি বেগমকে বিয়ে তো করেছিসই আবার শ্বশুরবাড়িও যাচ্ছিস না জানিয়েই?”

প্রণয় মিরের দিকে না তাকিয়েই বলে,

“মিরা সাথে আছে?”

তৎক্ষনাৎ মিরার উচ্চস্বর শোনা গেলো,

“কেনো?মিরা সাথে থাকলে খুব বেশি অসুবিধা হয়ে যাবে তোর?”

প্রণয় সাথে সাথে দাঁড়িয়ে বললো,

“দোস্ত তুই…”

“কি তুই?তুই এই মেয়েকে বিয়েও করেছিস কিভাবে বলবি আমায়?তোর কাছে আছে কোনো এক্সপ্লেনেশন?”

“পুরো অতীতটা জানা সত্ত্বেও তুই এক্সপ্লেনেশন চাচ্ছিসও কি করে?”

প্রণয়ের কথায় কুচকানো ভ্রু শিথিল হয় মিরার।অতঃপর সে বলে,

“এটাই তবে কারণ আমাদের কাউকে বিয়েতে না নেওয়ার?”

হঠাৎ করে শোনা গেলো পূর্ণতার কন্ঠস্বর,

“তোদের দুজনের যদি বিয়েই করতে হতো মাঝে দিয়ে পাঁচটা বছর নাটক করলি কেনো?কেনোইবা তোদের জন্য অরণকে সা!ফার করতে হচ্ছে?”

পূর্ণতার কথায় দরজার দিকে তাকায় সকলে।অরণের কথা শুনে চাঁদ বিচলিত হয়ে দৌড়ে পূর্ণতার কাছে গিয়ে তার দু’বাহুতে হাত রেখে বলে,

“পূর্ণপু অরণ কোথায় আছে আপনি জানেন?”

পূর্ণতা ভ্রু কুঞ্চিত করে চাঁদকে ঝাড়া মে!রে বলে,

“ছুবেনা আমায়!”

সবেমাত্র দরজা দিয়ে প্রবেশ করেছিলো রিহা।তৎক্ষনাৎ চাঁদকে পড়ে যেতে দেখে জাপটে ধরে তাকে।অতঃপর বলে,

“ঠিক আছো তুমি?”

রিহাকে দেখে চাঁদ জড়িয়ে ধরে তাকে।জড়িয়ে ধরেই বলে,

“আমি একদম ঠিক আছি।তুমি কেমন আছো আপু?”

রিহা চাঁদের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,

“ভুলেও কাদবেনা মেয়ে।তোমার চোখে পানি কখনো দেখিনি।দেখতে চাইওনা।আমি ভালো আছি।ওঠো”

বলেই চাঁদকে বুক থেকে উঠিয়ে পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে বলে,

“এগুলো কেমন ব্যবহার পূর্ণ?”

“তোর জ্ঞান শুনতে এখানে আসিনি”

বলেই প্রণয়কে উদ্দেশ্য করে বলে,

“ভালোইতো মজে আছিস।বিয়ে,বাসর টাসর করে একদম অস্থির!”

পূর্ণতার মুখে এরূপ কথা শুনে বিস্ফোরিত নয়নে তাকায় সকলে তার পানে।অপেক্ষায় আছে প্রণয়ের জবাবের।বেশি বিলম্ব করতে হলোনা তাদের।প্রণয়ের পালটা জবাব এলো,

“বিয়ে করেছি বাচ্চাও করে ফেলবো শীঘ্রই।নাকি তোকে বলে করতে হবে?”

প্রণয়ের এরূপ লাগামহীন কথায় ভ!ড়কায় চাঁদ।ভ!ড়কায় সেখানে উপস্থিত সকলেই।পূর্ণতার বুলি ফুরোয় এবার।তবে এখানেই শেষ হয়না কথোপকথন।মিরা প্রণয়কে গম্ভীরভাবে বলে,

“আমার প্রশ্নের উত্তর এখনো আমি পাইনি”

প্রণয় জবাব দেয়,

“সময় হলে উত্তর আপনাআপনি তোর কাছে চলে যাবে”

রিহা সবকিছু মনোযোগ দিয়েই শুনেছে এতক্ষণ।বেশ শান্তভঙ্গিতেই সে এবার বলে,

“সবই বুঝলাম তবে তুই বিয়ে করলি তাও আবার চাঁদকে আর আমাদের কান অব্দি খবরটা এলোও না ব্যাপারটা হজম হচ্ছেনা!”

“মিরুকে তো বলেছিলাম বাসায় এসে বউ দেখে যেতে”

রিহা জবাব দিলো,

“এসেছি বলেইতো জানলাম।এও জানলাম শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছিস?”

“হিম”

“অরণের সাথে কে থাকবে তবে?”

“দু’দিনের জন্যই যাচ্ছি।তাছাড়া মিরু আর আরফিদ তো আছেই।তোরাওতো আছিস।আমি ওর খোজ এমনিতেও রাখবো”

মিরা বললো,

“আসছি তবে”

প্রণয় মিরার দিকে তাকিয়ে বলে,

“না খেয়েই যাবি?”

তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে প্রণয়ের পানে চেয়ে মিরা বললো,

“খাওয়ার জন্য আসিনি।”

বলেই দরজা দিয়ে বেরুতে বেরুতে বাকিদের বললো,

“চল”

পূর্ণতা মিরার সাথে সাথে বেরিয়ে পড়লেও রিহা আর মির যায়না বলে পূর্ণতা পিছু ঘুরে বলে,

“কি হলো?”

রিহা জবাব দিলো,

“তোরা যা”

“আর তোরা?”

রিহা শান্তভাবেই বললো,

“ভাবিকে দেখতে এসেছি।যেহেতু ভাবিরূপে ছোট বোনকে পেয়ে গেছি আপাতত আমার আর যাওয়া হচ্ছেনা।আর মিরও যাবেনা।তোরা থাকলে থাকতে পারিস”

পূর্ণতা তাচ্ছিল্য করে বললো,

“ছোট বোন?এখনো এই মেয়ে তোর ছোট বোন?”

“বোন তো বোনই।এখন আর তখন কি রে?”

পূর্ণতার কিছু বলার পূর্বেই মির সামনে এসে বলে,

“অনেক্ক্ষণ ধরে তোদের নাটক দেখে যাচ্ছি।ইচ্ছে হলে থাক নাহলে যা।তোদের কেউ আটকে রাখেনি।”

এরূপ অপ!মানে মিরা আর এক মুহুর্ত দাড়ায়না সেখানে।চলে আসে তৎক্ষনাৎ।পূর্ণতাও যেতে নেবে এমন সময় মির তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,

“আর শোন।ব্যক্তিগত দ্ব!ন্দ্বের জন্য অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা বলা এবার অন্তত ছাড়িস!”

পূর্ণতা পিছু না ঘুরেই হনহনিয়ে বেরিয়ে পড়ে সেখান থেকে।পূর্ণতা যেতেই রিহা চাঁদের সামনে এসে বলে,

“ননদ আর দেবরকে এভাবেই দাড় করিয়ে রাখবে?খেতে বলবেনা?”

চাঁদ মাথা ঝাকিয়ে বলে,

“তোমরা ওদের সাথে জয়েন করো আমি এখনি খাবার বেড়ে দিচ্ছি”

বলেই দুজনকে বসিয়ে তাদের খাবার বেড়ে দিতেই তন্ময়ের হতাশ কন্ঠস্বর শোনা যায়,

“ভাবি আমরা কিন্তু এখনো কিছু খাইনি।”

চাঁদ ভ্রু কুচকে বলে,

“সেকি!এখনো খাওনি কেনো?”

উজান বললো,

“খাবার দিলে তবেইনা খাবো!”

চাঁদ জিভ কে!টে বলে,

“সরি সরি।ভুলে গিয়েছিলাম”

বলেই এক এক করে সবাইকে খাবার বেড়ে দেয়।খাওয়াদাওয়ার পর্ব চুকতেই মির ঢেকুর তুলে বলে,

“সরষে ইলিশটা অসাধারণ হয়েছে বিড়ালিনী”

চাঁদ হাসিমুখ করে বলে,

“আমার ভাইয়ের প্রিয়।তাইই করেছি।তবে ভাইয়ের থেকে এখনো রিভিউ পেলাম না”

কথাটা বলে চৈত্রের দিকে তাকাতেই সে পানি খেয়ে বলে,

“প্লেট চেটেপুটেই পরিষ্কার করে দিয়েছি আর না ধুলেও চলবে।আরও রিভিউ চাস?”

চাঁদ হেসে দিয়ে ভাইয়ের পেছনে এসে দু’হাত ভাইয়ের দু’কাধে রেখে বলে,

“একবারও কিন্তু খাইয়ে দাওনি”

এ কথা শুনেই চোখজোড়া বন্ধ করে নিশ্বাস নিয়ে চাঁদকে ছাড়িয়ে টেবিলে কিছু একটা খুজতে থাকে চৈত্র।অতঃপর রুবার কাছে গিয়ে রুবাকে না বলেই তার প্লেট হাতে নিয়ে চাঁদের সামনে গিয়ে চাঁদকে দু’লোকমা খাইয়ে দিয়ে বলে,

“এবার ঠিক আছে?”

চাঁদ কেবলই মাথায় ঝাকায়।আর রুবা চোখ ছোটছোট করে তীক্ষ্ণ নজরে দেখছে তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা উজ্জ্বল শ্যাম বর্ণের নজরকাড়া মানবটিকে।ঠিক তখনই চৈত্রের চোখ রুবার দিকে পড়ে।রুবার দৃষ্টি এলোমেলো হয় তৎক্ষনাৎ।চৈত্রও দৃষ্টি ঘোরায় প্রণয়ের কন্ঠস্বরে।প্রণয় চেয়ার থেকে উঠতে উঠতে বলছে,

“রুবা,শিফা,তন্ময় তাড়াতাড়ি কর।বেরুতে হবে।নেক্সট বিশ মিনিটের মাঝে সবাইকে হলরুমে তৈরি অবস্থায় দেখতে চাই আমি”

অতঃপর চৈত্রের দিকে তাকিয়ে বলে,

“ভাইয়া একটু আসুন।কিছু কথা ছিলো”

চৈত্র প্রণয়ের পানে চেয়ে বলে,

“বাইরে গিয়ে দাড়ান আসছি”

সকলে তৈরি হয়ে গাড়িতে উঠছে।রিহা আর মিরও গিয়ে গাড়িতে উঠতে নিলে প্রণয় বলে,

“কোথায় যাচ্ছিস তোরা?”

মির কানে ইয়ারফোন গুজতে গুজতে গাড়িতে উঠে বললো,

“কেনো?তোর শ্বশুরবাড়ি”

To be continued….

#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম

১৯.
গগণে মেঘের বিন্দুমাত্র লেশ নেই।তবুও নীলিমায় দেখা যাচ্ছেনা শশীকে।রাস্তাঘাটে খুজে পাওয়া যাচ্ছেনা প্রাকৃতিক আলোর ঝলকানিও।শহুরে এলাকা ছেড়ে প্রাইভেট কারগুলো যত বেশি গ্রামীণ এলাকায় প্রবেশ করছে অম্বর ধীরেধীরে তত বেশি অন্ধকারাচ্ছন্ন হচ্ছে।এ বুঝি অমাবস্যার রাত্রি?গাড়িতে এসি চলছে বিরামহীন,তবুও ঘেমে একাকার চাঁদ।বারবার ঘনঘন শ্বাস নিচ্ছে।অস্বস্তি হচ্ছে তার।গাড়ি চলছে তার আপনগতিতে,থামেনি কোথাও।ড্রাইভিং সিটে প্রণয় আর তার পাশেই বসেছে চৈত্র।লুকিং গ্লাসে বোনকে পর্যবেক্ষণ করছিলো বেশকিছুক্ষণ যাবৎ ই।অবশেষে প্রণয়কে সে বললো,

“গ্লাসগুলো খুলে দিলে ভালো হতো প্রণয়”

প্রণয় গাড়ি চালাতে চালাতেই বললো,

“এসি চলছেতো ভাইয়া”

“চাঁদের এসিতে সমস্যা হয়।শ্বাস আ!টকে আসে।প্রায় দেড় ঘন্টা হয়ে এসেছে।আরেকটু সময় গেলে হিতে বিপরীত হবে।এসিটা অফ করে গ্লাসগুলো খুলে দিয়েন কষ্ট করে।”

প্রণয় সাথে সাথে গাড়ি থামালো।থামিয়ে গ্লাস সব’কটাই খুলে দিয়ে এসি অফ করে দিলো।অতঃপর গাড়ি স্টার্ট করতেই চৈত্র বললো,

“থ্যাংক ইউ”

প্রণয় কিছু বললোনা।চুপচাপ গাড়ি চালানোয় মনোযোগ দিলো।চাঁদের একপাশে বসেছে উজান অপরপাশে রিহা।জানালার পাশে না বসলে অস্বস্তি হয় বিধায় চাঁদ রিহাকে বললো,

“আপু জানালার সাইডে দেবে প্লিজ?”

রিহা কিছু বলার পূর্বেই উজান বললো,

“ভাবি তুমি আমার পাশে বসো।আমি পেছনের সিটে বসছি”

“একা বসবে?”

“সমস্যা নেই”

“ঠিক আছে”

“ভাই গাড়ি থামাও”

উজানের কথায় ব্রেক কষে প্রণয়।অতঃপর উজান পেছনের সিটের কিনার ঘেষে দু’পা বাকি দুই সিটের উপর উঠিয়ে হেলান দিয়ে মোবাইল নিয়ে বসে।বসেই মেসেজ দেয় শিফার খোলা সেদিনের মেসেঞ্জার গ্রুপে,

“কী করছিস তোরা?আমাকেতো জোর করে এখানে পাঠালি।আমি ওখানে বসতে চেয়েছিলাম”

রিপ্লাই আসে রুবার,

“জায়গা না হলে কোথায় বসাবো আমার কোলে?”

উজান বমি করার ইমোজি সহিত রুবার মেসেজের রিপ্লাই দেয়,

“তোর কোলে বসতে আমার বয়েই গেছে?তাছাড়া আমি বসলে তুই আস্ত থাকবি?”

বলেই শেষে দিয়ে হাসির ইমোজি পাঠায়।উজানের মেসেজের রিপ্লাই দেয় শিফা,

“বেচারি এমনিতেই শুকনা তুমি ভুলেও বসোনা।ওর হাজবেন্ড বিয়ের আগেই বিধবা হয়ে যাবে ভাই!”

তন্ময় শিফার মেসেজের রিপ্লাই দেয়,

“ওটা বিপত্নীক* হবে”

শিফা লিখে,

“ঐ একই”

বেশকিছুক্ষণ যাবৎ ই রিদি খেয়াল করছে তার কাজিনগুলো মোবাইলে ব্যস্ত কেবল সে বাদে।মনে মনে উজানকে ইচ্ছেমতো গা*লি দিচ্ছে।কেনো সে মিরের আগে গাড়িতে উঠলোনা।সে যদি উঠে পড়তো বর্তমানে রিদিকে মিরের পাশে এতো অস্বস্তি নিয়ে বসতে হতোনা।নড়তে চড়তে পারছেনা সে।মূর্তির ন্যায় জমে থাকতে হচ্ছে তাকে।একটুখানি নড়লেই বুঝি মিরের শরীরে স্পর্শ লেগে যাবে।অতঃপর লজ্জায় মাথা কা!টা যাবে তার।ভাবতেই গাল দুটো জ্বলে উঠলো।না!আর বেশিক্ষণ এখানে বসে থাকা যাবেনা।তাই সে খানিকটা কেশে মিরের পাশে বসা তন্ময়কে বললো,

“ভাই তুই মাঝে বসে আমাকে ওপাশে দিবি প্লিজ?”

এ কথা শুনে আঁড়চোখে তাকালো মির রিদির পানে।অতঃপর মোবাইলে ধ্যান রেখেই বললো,

“কেনো?এখানে কী সমস্যা?তোমার গায়ের উপরতো আর উঠে যাচ্ছিনা।তাছাড়া আমার গার্লফ্রেন্ড আছে।সো রিল্যাক্স”

মিরের কথায় চমকে তাকায় রিদি তার পানে।সেইসাথে তাকায় রুবা আর শিফাও।অতঃপর তারা রিদির দিকে তাকাতেই দেখতে পায় মেয়েটা ঠোট কা!ম!ড়ে ঘনঘন শ্বাস নিচ্ছে।সরু ছোট্ট নাকটা লালচে বর্ণ ধারণ করছে ধীরে ধীরে।চোখজোড়া তার বন্ধ।কতটা কষ্টে কান্না আটকেছে তা কেবল সেই জানে।আরেকটু হলে যে সবার সামনেই নোনাজল গড়িয়ে পড়বে তা ভেবেই রুবা,শিফা একসাথেই বলে,

“গাড়ি থামাও ভাইয়া”

“গাড়ি থামান রায়হান ভাই”

বোনদের হঠাৎ চিৎকারে দ্রুত গাড়ি ব্রেক করে পিছু ঘুরে তাকায় রায়হান।অতঃপর বলে,

“কী হয়েছে?”

রুবা আমতা আমতা করে বলছে,

“আ..আমার বমি পাচ্ছে ভাইয়া!”

কপাল কুচকে রায়হান বললো,

“এসি ছাড়া তবুও বমি কি করে লাগছে?”

শিফা বললো,

“বমিতো বলে কয়ে আসেনা।এই রুবা নামতো।রিদিকেও নামা ওর হয়তো গরম লাগছে”

রায়হান জবাব দেয়,

“এখনই নামাতে পারবোনা।একটু বাদে এমনিতেও রামিমকে পিক করতে হবে।তখনই তোরা নামিস”

বলে আবারও গাড়ি স্টার্ট দেয়।

শিফা বাঁধা দিয়ে বলে,

“কিন্তু রা….”

রায়হানের গম্ভীর কন্ঠস্বর,

“ডোন্ট টক”

গাড়ির ভেতর নিস্তব্ধতা ছেয়ে যেতেই মির ঘাড় না ঘুরিয়ে আঁড়চোখে বাম পাশে তাকায়,যেখানটায় রিদি বসে আছে।অতঃপর তার নজরে আসে রিদির বিধ্ব!স্ত চেহারা।ভাবলেশহীন ভঙ্গিতে দৃষ্টি ঘুরিয়ে আবারও মনোযোগ জ্ঞাপন করে মুঠোফোনে।

শিফা আর রুবা হতাশ হয়ে দু’জন জানালার দু’পাশ দিয়ে আকাশে চন্দ্রিমাকে খুজতে ব্যস্ত হয়।তবে ব্যর্থতা গ্রাস করে তাদের।মেসেজের টুংটাং শব্দে মেসেঞ্জারে ঢুকতে বাধ্য হয় আবারও।অতঃপর দেখে উজানের মেসেজ,

“একটু আগেই আপু মেসেজ দিয়েছে শীঘ্রই দেশে ফিরবে জানালো।”

রুবা উজানের রিপ্লাই দেয়,

“উশ্মিপু!রিয়েলি!কত্ত বছর হলো আপুকে দেখিনা ইশ!”

শিফা রিদিকে উৎফুল্লতার সহিত বলছে,

“রিদু উশ্মিপু দেশে ফিরছে।আমাদের উশ্মিপু”

রিদির কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করতে না পেরে পেছন থেকে রুবা তাকে ডাকতে নেবে আর শিফা তাকে ইশারায় বারণ করে।রায়হান গাড়ি চালাতে চালাতেই বলে,

“ওর আরও আগে ফেরার কথা ছিলো।বেপরোয়া মেয়েকে নিয়ে এতো মাতামাতি বড্ড বিরক্তিকর”

রায়হানের কথায় রুবা আর শিফার মুখ বন্ধ হয়।তন্ময় ভুল করেও কিছু বলেনি।কারণ রায়হানকে সে জ!মের মতো ভয় পায়।

ভোর পাঁচটা,
হঠাৎ করে ব্রেক করায় মিরের ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে।সে চোখ খুলতেই অনুভব করে তার দু’কাধ ভারী হয়ে আছে।এক কাধে তার রিদি অপর কাধে তন্ময় মাথা রেখে ঘুমোচ্ছে।অসহায় ভঙ্গিতে সে একবার রিদিকে দেখছে তো একবার তন্ময়কে।সকাল হতে হতে যে তার দু’কাধ ব্যথায় টনটন করবে তা বুঝতে পারা সত্ত্বেও তার মন,দুটো বাচ্চা ছেলে-মেয়ের কাচা ঘুম ভাঙতে সায় দিলোনা।অতঃপর সে হাই তুলে সিটের পেছনে আবারও গা এলিয়ে দিলো।

রায়হান গাড়ি থামিয়ে বসে আছে প্রায় দশ মিনিট।এখনো আসছেনা রামিম।বিরক্ত হয়ে তাকে কল দিতে নিলেই চোখ যায় রাস্তার ডান পাশে।গাড়ির কাচে মৃদু টোকা পড়ে।অতঃপর গ্লাস খুলতেই দেখতে পায় শ্যামবর্ণের হাস্যোজ্জ্বল মুখশ্রীর এক মানবকে।সে হাসিমুখ করেই রায়হানকে বলছে,

“কী মামা?আছিস কেমন?”

তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তার পানে চেয়ে রায়হান জবাব দেয়,

“তুই যেমন রাখতে চেয়েছিলি তার তুলনায় ভালোই আছি”

ছেলেটা শব্দ করে হেসে দেয় রায়হানের কথায়। অতঃপর বলে,

“তবে বেশিক্ষণ সেই ভালো থাকা মনে হচ্ছেনা স্থায়ী হবে বলে”

রায়হানের কিছু বলার পূর্বেই ছেলেটা আবারও বলে,

“বের হ”

“বসার হলে পাশে বস।গাড়ি কেবল আমিই চালাবো”

“চোখে সরষে ফুল দেখছিস তাও তোর ঝাঁঝ কমছেনা?”

“কথা বুঝেশুনে বলবি রামিম”

“তোর সাথে আবার বুঝেশুনে কী বলবো?এই শা*লা বের হ তো!”

বলেই গাড়ির ভেতর থেকে রায়হানকে টে!নে নামায় রামিম।অতঃপর ড্রাইভিং সিটে বসতেই রায়হান তিরিক্ষি মেজাজে গিয়ে পাশের সিটে বসে।

টেকনাফ সদরে পৌঁছাতে খানিকটা সময় লাগবে আরও।নিজের এলাকায় আসতেই সতেজতায় ভরে উঠে চাঁদের ভেতরটা।সে চোখ থেকে চশমা খুলে তার ভাইয়ের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,

“ভাই এটা তোর পকেটে রাখ”

চৈত্র গাড়ি চালাতে চালাতেই বললো,

“সারারাত ঘুমাস নি।এখন আর ঘুমিয়ে কী করবি?”

অতঃপর বাম হাত দিয়ে চাঁদের থেকে চশমা নিয়ে তার শার্টের পকেটে রেখে আবারও গাড়ি চালানোয় মনোনিবেশ করে।আর চাঁদ বাইরের দিকে তাকিয়ে লম্বা করে শ্বাস নিয়ে বলে,

“ওসব রাস্তা মনে অশান্তি জাগায় ভাই।ঘুমাই কি করে?”

To be continued….