আবার প্রেম হোক পর্ব-২+৩+৪

0
641

#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম

০২.
আকাশ থেকে মেঘের ‘গুড়ুম গুড়ুম’ ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।ক্ষণে ক্ষণেই বিদ্যুৎ চ*ম*কা*চ্ছে গগণে।সময়টা তখন চৈত্র মাসের।ফাগুনের গরমকে পেছনে ফেলে চৈত্রের বৃষ্টি আকাশ চি*ড়ে ধরণীতে তার আগমন ঘটাতে চাচ্ছে যেনো।রাত্রি তখন এগারোটা বেজে ছাপ্পান্ন মিনিট।ছাদের উপর স্টেজ সাজানো হয়েছে সাদা আর গোলাপি কম্বিনেশনে।পুরো ছাদটাকে আকাশে বিদ্যমান অর্ধচন্দ্র তার আলোয় আলোকিত করতে ব্যস্ত।সেইসাথে ব্যস্ত কয়েকজন ছেলেপেলেও।চোখ বেধে সাদায় মোড়ানো প্রিন্সেস ড্রেসে আবৃত এক কন্যাকে ছাদের কিনার ঘে*ষে দাড় করানো হয়েছে।তার ঠিক ডান পাশেই গগণ হতে চন্দ্রিমা সেই সফেদ কন্যাকে তার আলোয় করে তুলছে অভূতপূর্ব!এমতাবস্থায় একটা মেয়ের মিষ্টি আর কম্পিত কন্ঠ শুনতে পাওয়া যায়,

“চোখের বাঁধন টা খুলে ফেল চাঁদ!”

ঘড়িতে তখন ঠিক বারোটা বেজে শূন্য এক সেকেন্ড।বাঁধন খোলামাত্রই চাঁদের সম্মুখে নিজের প্রিয় মানবকে দেখে যতটানা সে অবাক হয়েছে তার চাইতেও বেশি অবাক হয়েছে তার কন্ঠস্বরে এরূপ এক বাক্য শুনে,

“হ্যাপি টুয়েন্টি মিস হোয়াইট বাটারফ্লাই”

স্ত*ম্ভি*ত অবস্থা থেকে চাঁদের স্বাভাবিক হওয়ার পূর্বেই অবাকের চরম পর্যায়ে চাঁদকে ফে*লে দিতে ছেলেটা তার সামনে গিয়ে তার দিকে পিঠ করে দাঁড়িয়ে আধারিয়া অম্বরে বিদ্যমান অর্ধচন্দ্রিমার দিকে তাকিয়ে বললো,

“দ্যা মুন ইজ বিউটিফুল”

বলেই অল্প একটু থেমে নিশ্বাস সঞ্চয় করে চাঁদের দিকে ঘুরে তার দিকেই খানিকটা হেলে উভয় ভ্রু উচিয়ে বললো,

“ইজন্ট ইট?”

গাড়ির বাইরে মাথা রেখে আকাশে অবস্থিত অর্ধচন্দ্রের দিকে দৃষ্টি জ্ঞাপন করে অতীতের পাতার কিছু অংশ স্মৃতিচারণ করছিলো চাঁদ।দিনটা ছিলো তার জীবনের শ্রেষ্ঠতম দিনগুলোর মধ্যে অন্যতম।তার বিশতম জন্মদিনে শ্রেষ্ঠতম উপহারটাই যেনো সে পেয়েছিলো।তবে কেনো ভাগ্য সহায় হলোনা?প্রকৃতি কি তবে শুধু ছি*নি*য়ে নেয়ার জন্যই জীবনে অপার সৌন্দর্যেমন্ডিত জিনিসগুলো প্রেরণ করে?চাঁদের ভাবনায় বে*ঘা*ত ঘটলো তারই দেবরের হঠাৎ চেচানোতে,

“ভাবি!কী করছো?গাড়ির বাইরে মাথা নিয়োনা এটা ঝু*কি*পূ*র্ণ”

চাঁদ মাথা ভেতরে নিয়ে বললো,

“যেই ঝু*কি*পূ*র্ণ পরিস্থিতিতে এসে পড়েছি তার তুলনায় অন্য কিছু কিই বা ঝু*কির হবে?”

কথাটা যে তার পাশে বসা মানবকে বলা হয়েছে সেখানে উপস্থিত সকলেই তা বুঝতে পারলো।ছেলের ছোট ভাই প্রসঙ্গ পাল্টাতে বললো,

“তোমার কথাবার্তা শুনে মোটেও লাগছেনা ভাইকে বিয়ে করার জন্য তুমি অমৃতা আপুকে কোথাও গা*য়ে*ব করতে পারো!”

চাঁদ ভ্রু কুচকে বললো,

“তোমার আদৌ মনে হয় এই লোককে বিয়ে করতে আমি জাস্ট ম*রে যাচ্ছিলাম?”

“তাহলে অমৃতা আপুকে পাওয়া যাচ্ছিলোনা কেনো?বিয়েটাতো অমৃতা আপুর সাথে হওয়ার কথা ছিলো?”

“তোমার এখনো মনে হচ্ছে আমি অমিকে কোথাও লুকিয়ে রেখে এই মানবকে বিয়ে করতে উ*ঠে প*ড়ে লাগবো?যাকে আমি দুই চোখে দেখতে পারিনা তাকে?আর তুমি হয়তো ভুলে যাচ্ছো তোমার এই ভাই কোনোভাবেই আজ বিয়ে না করে বিয়ের আসর থেকে উঠবেনা বলেছিলো।আমি এমন বিয়ে পা*গ*ল মানুষ আজ অব্দি দেখিনি।এমনতো না যে সে আর কোনো মেয়ে পাবেনা তাও!আ*জ*ব প্রকৃতির লোকজন!তার উপর আমার সে*ন্সি*টি*ভ ফ্যামিলি আরও একধাপ এগিয়ে!”

“হ্যা আমি মানছি ভাই শেষে দিয়ে অতিরিক্তই করেছে।এমনটা করা উচিত হয়নি।কিন্তু তুমিতো মানা করতে পারতে নাকি?”

“করিনি ভেবেছো?”

“তোমার ফ্যামিলি জোর করেছে?”

এবার চুপ করে রইলো চাঁদ।কিছুই বললোনা।কেউ কিছু বলার পূর্বেই চাঁদের স্বামী বললো,

“তাকে জিজ্ঞেস কর,তাহলে অমৃতা হুট করে কোথায় গা*য়ে*ব হয়েছে?বিয়ের যখন ইচ্ছেই ছিলোনা তবে কেনো অন্যের বিয়েতে বা*গ*ড়া দিচ্ছিলো?”

দা*তে দা*ত চেপে রইলো চাঁদ।এই লোকের সাথে কথা বলতে মোটেও ইচ্ছুক না সে।

ছেলের ফুপাতো ভাই বললো,

“এভাবে না জেনে কারো নামে বলা ঠিকনা প্রণয়”

“তো তুই কি বলতে চাচ্ছিস অমৃতা নিজে থেকেই পা*লি*য়ে*ছে?এই মেয়ের কোনো হাত নেই এতে?”

“না নেই”

এক ভ্রু উচিয়ে প্রণয় বললো,

“তুই এতো শিওর কী করে?”

“কারণ আমি মা আর মামিকে বলতে শুনেছি অমৃতা নাকি তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে পা*লি*য়ে*ছে।সুযোগ বুঝে কো*প মেরেছে আরকি!মেয়েটা ভালো করেই জানতো এমন সময় পালালে সবাই চাঁদকেই সন্দেহ করবে।আর হলোও ঠিক সেরকমটাই।আর চাঁদের পরিবারের লোকজন একেকটা অতিরিক্ত ট*ক্সি*ক!এক মেয়ের জন্য অপর মেয়ের লাইফ কেউ কি করে ন*ষ্ট করতে পারে?অমৃতার দো*ষ ঢাকতে চাঁদের উপর সব আ*রো*প দিয়েছে।এমনকি ব*লি*র পা*টা হিসেবে তোর সাথে বিয়েও দিয়ে দিয়েছে।”

চাঁদ জবাব দিলো,

“সরি ভাইয়া কিন্তু আপনি আমার পরিবারের নামে এভাবে কথা বলতে পারেন না।আগে নিজের ভাইয়ের দো*ষ*টা দেখুন।পরে অন্যের দিকে আঙুল তুলবেন”

“আমি কখন বললাম প্রণয়ের দো*ষ নেই?”

প্রণয় সামান্য হেসে বললো,

“হ্যা সেটা কেনো বলবি?তুইতো বলবি ব*লি*র পা*টা!আমার সাথে বিয়ে হয়েছে বলে কি এই মেয়ে ম*রে যাবে?নাকি আমি মে/রে ফে*ল*বো?একটা অপরিচিত মেয়ের জন্য এতো দরদ উ*ত*লি*য়ে পড়ছে কেনো তোর?নাকি ভালো লেগে গেছে?”

“জাস্ট শা*ট আ*প প্রণয়!”

চাঁদ কথা ছিনিয়ে বললো,

“কাকে কি বলছেন ভাইয়া?যার চিন্তাধারা যেমন মুখ দিয়ে বেরুবেও তো ঠিক তেমনই বুলি তাই না?”

কথাটা শুনে আড়চোখে তাকালো প্রণয় চাঁদের দিকে।

প্রণয়ের ছোট ভাই বললো,

“তুমি আর ভাই একে অপরের কথাই স*হ্য করতে পারোনা একসাথে থাকবে কি করে ভাবি?”

প্রণয় বিরক্ত হয়ে বললো,

“তোকে কেউ ভাবতে বলেছে?”

চাঁদও বিরক্ত হয়ে বললো,

“তুমি অযথা কথা বাড়াচ্ছো কেনো তন্ময়?দেখছোনা মুখ দিয়ে সা*পে/র চেয়েও বি*ষা*ক্ত বুলি ঝড়ছে কেবল?”

তন্ময় অবাক হয়ে বললো,

“তুমি আমার নাম কী করে জানো?”

প্রণয়ের খালাতো বোন বললো,

“আরে ভাইয়া তখন শুনোনি প্রণয় ভাইয়া আর চাঁদ ভাবি সেম মেডিতে ছিলো?এই ভাবি বলোনা তুমি টেকনাফ কি করে গেলে?এতো দূর থাকছোই বা কেনো?আমি শুনেছি তোমার ফ্যামিলির সবাই নাকি আগে ঢাকা থাকতো।আর সবাইতো ঢামেকে চান্সও পায়না।তুমি ঢামেক ছেড়ে চলে এলে?এটা অবিশ্বাসনীয়!”

প্রণয় বিরক্ত হয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে,

“কখন থেকে ননস্টপ উদ্ভট কথাবার্তা বলেই চলেছে!আর একটা বাড়তি কথা আমার কানে এলে গাড়ি থেকে হয় আমি বে*র হবো নাহয় সবক’টাকে বে*র করবো।এন্ড আই মিন ইট!”

সাথে সাথে নিস্তব্ধতা ছেয়ে গেলো সেখানে।কেনোনা প্রণয়ের এই গম্ভীর কন্ঠস্বরের সাথে সবাই ই পরিচিত।আর কিছু বললে যে হি*তে বি*প*রী*ত হবে সেটা সবাই ই জানে।তাই মৌনতা অবলম্বন করাই শ্রেয়!সবাই চুপ হতেই বাতাসের শব্দ কানে ভেসে আসে চাঁদের।মাথা ব্যাথাটা তী!ব্র হওয়ার পূর্বেই ক্লান্ত শরীরটাকে সিটে এলিয়ে দিতে বিলম্ব করলোনা সে।

গাড়ি চলছে তার আপন গতিতে।কারো মুখেই কোনো রা নেই।কেউ কেউ মোবাইলে মনোযোগ দিয়েছে তো কেউ আবার বাইরের প্রকৃতিতে করেছে নিজেকে মগ্ন।গাড়িটা ছোট না।মোটামুটি বড় ই।সামনের সিটগুলোয় বসেছে প্রণয়ের তিনভাই।মাঝের দিকে প্রণয় আর চাঁদ।তাদের সাথে আর কেউই বসেনি।অবশ্য চেয়েছিলো।চাঁদই বারণ করেছে।কেনোনা সে প্রণয়ের গা ঘে*ষে মোটেও বসবেনা।তাই মাঝের সিটটা ফাকাই রয়ে গেছে।আর পেছনের দিকে বসেছে প্রণয়ের বোনেরা।হুট করেই সকলের মোবাইলের মেসেঞ্জারের টুংটাং শব্দ ভেসে আসলো।কান অব্দি শব্দ পৌঁছাতেই চমকে একে অপরের দিকে তাকালো সবাই।প্রণয় হলো মহা বিরক্ত।তার গম্ভীরভাব বজায় রেখেই সে বললো,

“মোবাইল কি সাইলেন্ট করে রাখা যায়না?”

সাথে সাথেই সবাই হুড়মুড়িয়ে মোবাইল সাইলেন্ট করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।সেইসাথে নজরে পড়লো প্রণয়ের খালাতো বোন শিফার মেসেঞ্জারে নতুন গ্রুপ খোলার নোটিফিকেশন।গাড়িতে উপস্থিত প্রণয় আর চাঁদ বাদে বাকি সবাইকে নিয়েই শিফা গ্রুপটা খুলেছে।আর মেসেজও দিয়েছে,

“বোর হচ্ছিলাম তাই গ্রুপ খুললাম।কেউ কিন্তু লিভ নিয়োনা”

তন্ময় রিপ্লাই দিলো,

“আমিও বোর হচ্ছিলাম।ভালো করেছিস খুলেছিস।চল আড্ডা দেই সবাই”

প্রণয়ের মামাতো বোন রিদি রিপ্লাই দিলো,

“তা নাহয় বুঝলাম কিন্তু কি বিষয়ে আড্ডা দেওয়া যায়?”

প্রণয়ের ফুপাতো বোন রুবা বললো,

“কি আবার?ভাই আর ভাবির অতীত জানতে হবে গাইজ!”

তন্ময় বললো,

“জানবো কার কাছ থেকে?এরা দুজনতো কখনোই বলবেনা”

প্রণয়ের চাচাতো ভাই উজান বললো,

“তোদের অন্যের বিষয়ে এতো ইন্টারেস্ট কেনো?”

তন্ময় রিপ্লাই দিলো,

“অন্যের বিষয় মানে? আমাদের ভাই আর ভাবি হয় তারা”

শিফা উজানের মেসেজের রিপ্লাই দিলো,

“সেটাইতো ভাইয়া।তুমি বেশি বড় সাজতে এসোনাতো!রায়হান ভাই কোথায়?ভাইকে এক্টিভ দেখছিনা কেনো?”

রুবা বললো,

“ভাইয়া আবার এক্টিভ থাকে কবে?”

রিদি শিফার মেসেজে আড়চোখের ইমোজি সহ রিপ্লাই দিলো,

“তোর এতো ভাইয়াকে নিয়ে গবেষণা কেনো?”

উজান বললো,

“তোরা সবাই রায়হান ভাইকে নিয়ে গবেষণা করছিস কেনো?জানিস না তার মুড খারাপ?প্রণয় ভাইয়ের উল্টাপাল্টা কথায় এমনিতেই রে*গে আছে।আর সে তো ড্রাইভ করছে নাকি?গাড়ি চালানো বাদ দিয়ে তোদের সাথে আড্ডা দেবে?”

শিফা উজানকে রিপ্লাই দিলো,

“তুমি চালালেওতো পারো এখন।আর তন্ময় ভাইয়া তুমিও তো চালাতে পারো নাকি?সেই কখন থেকে চালাচ্ছে!”

এভাবেই চলতে থাকলো তাদের সকলের আড্ডা।সবাইকে মোবাইলে মগ্ন দেখে প্রণয়ও মোবাইল হাতে নিলো।নিতেই দেখলো রবিনের মেসেজ,

“চাঁদের সাথে এটা কি তুই ঠিক করলি?”

প্রণয় রবিনের মেসেজের রিপ্লাই এ লিখলো,

“যে যেমন তার সাথে প্রণয় তেমনটাই করবে।বিনা কারণে আমায় ছেড়ে চলে যাওয়া।সবার সামনে এমন একটা ভাব ধরা যেনো তার সাথে কতবড় অ*প*রা*ধ করে ফেলেছি!অথচ আজ পর্যন্ত আমি জানতেও পারলামনা আমার দো*ষটা কি ছিলো?হুট করেই কোথায় যেনো চলে গেলো আর খোজ ই পেলাম না?আর সেদিনের কথা আমি কি করে ভুলে যাবো?যার জন্য আমি আমার ভাইয়ের মতো বেস্ট ফ্রেন্ডকে হারিয়েছি?তাকেতো এমনি এমনি ছেড়ে দেওয়া যায়না?চাঁদকে তার শা*স্তি পেতেই হবে।আর সেটা দেবো আমি।তি!লে তি/লে তাকে শে*ষ করবো।যেভাবে আমার বেস্ট ফ্রেন্ডকে সে শে*ষ করেছে ঠিক সেভাবেই!আমি আজও অরনের র*ক্ত*মা*খা চেহারাটা ভুলতে পারিনারে!যেই মেয়েকে অফুরন্ত ভালোবাসা দিয়েছি তাকে আজ থেকে আ!ম!র!ণ ঘৃ*ণা দেবো!না পারবে ম*র*তে না চাইবে বাঁ*চ/তে!তার জীবন যদি জা*হা*ন্না*মের চেয়েও জ”ঘ”ন্য না বানাই তবে আমার নামও রুহায়ের প্রণয় না!”

মেসেজটা সেন্ড করেই প্রণয় নিজের ফোন থেকে তা ডিলিট করে দিয়ে আড়চোখে চোখে চাঁদের দিকে এমনভাবে তাকালো যেনো তার চোখের অ*গ্নি*বর্ষ/ণ দিয়েই চাঁদকে ভ*স্ম করে দেবে!

To be continued…

#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম

০৩.
“কিসের বউ দেখাদেখি হা?আমি আপনাদের ছেলেকে ডি*ভো*র্স দেবো”

নতুন বউয়ের মুখে এরূপ বাক্য শুনে সেখানে উপস্থিত সকলে ভ*ড়*কে গেলো।সকলের দৃষ্টিই সীমাবদ্ধ হলো কেবল চাঁদের দিকে।একজন মহিলাতো বলেই ফেললেন,

“এই মেয়ের মুখেতো দেখছি কিছুই আটকায়না।বিয়ের দিনও যা নয় তাই বলেছে।আজতো আরও একধাপ এগিয়ে।এমন ছো*লা মুখের মেয়েকে বউ করে এনে বড্ড ভুল করেছেন ভাবি”

অপর একজন বললেন,

“ডি*ভো*র্সই যখন দেবে বিয়ে করেছো কেনো?নাকি অন্য কারো সাথে সেটিং আছে?”

বিস্ফোরিত নয়নে মহিলাটির দিকে তাকালো চাঁদ।ঘৃ*ণা*য় ভেতরটা ভরে যাচ্ছে।পরিবর্তনের যুগে এসেও মানুষের চিন্তাধারা এমন হতে পারে ভেবেই গা গু*লা*চ্ছে তার।ভদ্রতার খাতিরে কাউকে কিছু বলছেনা।তবে একটা পরিচিত কন্ঠস্বর ভেসে আসতেই সেদিকে তাকায় চাঁদ,

“মুখ সামলে কথা বলবেন ভাবি।ভুলে যাবেন না আপনি এ বাড়ির বড় বউয়ের নামে কথা বলছেন।আর আমাদের বউয়ের চরিত্রে কোনো প্রকার দা*গ নেই।ছেলেটা হুট করে এভাবে বিয়ে করেছে বলে বউ রে*গে আছে বৈকি!আপনারা এখন আসতে পারেন।আমরা সবাই খুব টায়ার্ড।লম্বা জার্নি করে এসেছি।আজ আর কোনো রিচুয়াল হবেনা।রিসিপশনেই বউকে দেখে নেবেন।বউমা যাও রুমে গিয়ে রেস্ট নাও।রিদি,শিফা যাও তোমাদের ভাবিকে ভাইয়ের রুমে দিয়ে এসো।”

রুবা লোকটার সামনে এসে বললো,

“মামা এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছেনা।তুমি আমাকে যেতে বললেনা কেনো?”

প্রণয়ের বাবা জিভে কা*ম*ড় দিয়ে বললেন,

“এই যাহ!সরি রুবা মামনি।তুমিও যাও”

চাঁদ ইতস্তত করতে করতে বলেই ফেললো,

“বাবা আপনার….”

চাঁদকে বাধা দিয়ে তিনি বললেন,

“তোমার সাথে কাল কথা বলবো।আজ ঘুমোও। এমনিতেই অনেক রাত হয়েছে।তাছাড়া তোমার বিশ্রাম প্রয়োজন।আরেকটা কথা”

“জ্বি?”

“অনেক বদলে গেছো”

বলেই তিনি প্রস্থান করেন।চাঁদ করুন চোখে তার যাওয়ার পানে তাকায়।তাকিয়ে থেকেই ডুব দেয় ভাবনার জগতে,

“তোমায় যতবার দেখি ততবারই মুগ্ধ হই মা।তোমার এই প্রতিবাদী ব্যক্তিত্ব সর্বদা বজায় রেখো।অ*ন্যা*য়ের বিরুদ্ধে তোমার আওয়াজ সবসময় সোচ্চার রাখবে।কখনো কারও সামনে, বিশেষ করে অ*ন্যা*য়ের কাছে মাথা নত করবেনা।”

“আপনি সবসময় আমায় সাহস দেন আংকেল।আজ আপনার সাহায্য ব্যতীত এই ব!র্ব!র লোকদের কখনোই তাদের প্রাপ্যটুকু দিতে পারতাম না।আপনাকে ধন্যবাদ”

“আংকেলও বলছো আবার পরও করে দিচ্ছো?”

চাঁদ হেসে উত্তর দিলো,

“সরি সরি।আর পর করবোনা।আমি নিশ্চিত আপনার মা আপনাকে সুশিক্ষার পাশাপাশি স্বশিক্ষায়ও শিক্ষিত করেছেন আর তদ্রুপ আপনিও আপনার সন্তানদের করবেন”

লোকটার হাসি হঠাৎ করেই মিলিয়ে গেলো।তা দেখে চাঁদ বললো,

“কী হলো আংকেল?”

“তুমি ঠিক বলেছো মা।আমি আমার দুই ছেলেকেই চেষ্টা করি তারা যেনো কখনো বিপথে না যায়।তবে ওদের সাথে আমার সম্পর্কটা খুব একটা ঘনিষ্ঠ না।বড়টা নিজেকে সবসময় গুটিয়ে রাখে।একাকিত্ব তার খুব পছন্দের আর ছোটটা আমায় ভ*য় পায়”

“সে কী কথা আংকেল?”

“আমি সবসময় একটা মেয়ের অভাববোধ করতাম।এখন আরও বেশি করছি।আমার কাছে যদি তোমার মতোই একটা মেয়ে থাকতো!”

চাঁদ হেসে বললো,

“কে বলেছে নেই?আজ থেকে আমি ই আপনার মেয়ে।আর কখনো যেনো আমার বাবাকে আমি এমন গো!ম!ড়ামুখে না দেখি”

লোকটাও হেসে বললেন,

“তা আমার মেয়েটার নাম কী?”

“চাঁদ”

“শুধুই চাঁদ?”

“মুহাইমা বিনতে চাঁদ”
.
.
.
.
.

হঠাৎ রুবার আওয়াজে চাঁদ কেপে উঠতেই রুবা বলে,

“ভাবি আমি।রুবা?কি ভাবছিলে?সেই কখন থেকে ডাকছি”

চাঁদ বড় করে শ্বাস নিয়ে বললো,

“বিশেষ কিছুনা।বলো”

“চলো রুমে যাই”

“চলো”

চাঁদকে প্রণয়ের রুমের সামনে আনতেই সে নাক মুখ কুচকে বলে,

“এ রুমে কেনো এনেছো?”

“এখানেই তো আনার কথা!”

“আমি এই রুমে এক পা ও দেবোনা।তোমার জন্য এ বাড়িতে কোনো রুম নেই?আচ্ছা গেস্ট রুম আছে এখানে?”

শিফা বললো,

“গেস্ট রুম দিয়ে কি করবে তুমি?”

“রুমের ভিতর কি করে মানুষ?”

“মানে?”

“মানে হলো থাকবো অবশ্যই?”

“কিন্তু ভাইয়া…”

“কোনো কিন্তু না।আমি তার সাথে এক মুহুর্ত থাকতে পারবোনা।তোমাদের রুমে নিয়ে চলো নাহয় আমি ড্রয়িং রুমেই শুয়ে পড়বো”

রিদি বললো,

“এই না না ভাবি।তুমি আমাদের সাথেই চলো।আমরা যখনই এ বাড়িতে থাকি সবসময় একসাথেই থাকি একই রুমে।ওখানেই চলো।বিছানা বড় আছে।আমাদের চারজনের জায়গা হয়ে যাবে”

“চলো”

বলে পিছু ঘুরতেই প্রণয়ের মা’কে দেখতে পায়।রুবা বলে,

“কিছু লাগবে মামি?”

“না।বউমা এই শাড়িগুলো নাও।কয়েকদিন এগুলোই পরো।তোমার কাপড়তো আনা হয়নি”

চাঁদ আর দ্বিরুক্তি করলোনা।শাড়িগুলো নিয়ে বললো,

“কিন্তু আন্টি ব্লাউজ?”

“তাইতো!শিফাদের কাছ থেকে নিয়ে নিও।ওদের যেকোনো একজনের টা ঠিক লাগবে তোমার।আমি কালই তোমার মাপ নিয়ে শাড়িগুলোর ব্লাউজ বানাতে দিয়ে আসবো”

“ঠিক আছে আন্টি”

প্রণয়ের মা চাঁদের থুতনীতে হাত রেখে মোলায়েম কন্ঠে বললেন,

“তুমি আর তোমার কথাগুলোও বেশ মিষ্টি।শ্বশুরকেতো ঠিকই বাবা ডাকো।আমায় কেনো আন্টি?”

চাঁদ বেশ অস্বস্তিতে পড়ে গেলো।ইতস্তত করে বললো,

“আসলে আন্টি…”

তিনি চাঁদকে বাধা দিয়ে বললেন,

“কোনো আন্টি না।মা বলে ডাকবে।আমার কোনো মেয়ে নেই জানোতো?”

সাথে সাথে রুবা,রিদি,শিফা বললো,

“কে বলেছে মেয়ে নেই?”

প্রণয়ের মা হেসে দিয়ে বললেন,

“হ্যা তাইতো!কিন্তু আমি সবসময় চেয়েছিলাম আমার ছেলেদের বউকে মেয়ে বানিয়েই আনবো।মেয়ের মতোই রাখবো।দেখো মা সবটা কারোর ই জানা ছিলোনা।ভবিষ্যৎ তো কেউই জানেনা।তুমি আমার বড় ছেলের বউ হয়ে এসেছো।আমি জানিনা তোমাদের মাঝে ঠিক কি হয়েছে বা তোমাদের সম্পর্ক কী।তবে বর্তমানে তোমরা স্বামী-স্ত্রী।আমার ছেলের বউ।ভাগ্যকে মেনে নিয়ে তোমাকে আমি আজ থেকে আমার মেয়ে বানালাম।তুমিও সবটা মেনে নাও।আর এই মা’কে ছেড়ে যাবেনাতো?”

চাঁদ অসহায় দৃষ্টিতে তার পানে তাকিয়ে বললো,

“যাবো কি যাবোনা তাতো বলতে পারছিনা মা।তবে আমি আজন্ম আপনার মেয়ে হয়ে থাকবো।যখন পাশে চাবেন এই মেয়েকে পাবেন।কিন্তু আপনার ছেলের পাশে কখনো দেখতে চাবেন না মা।সেটা আমি পারবোনা।”

বলেই মাথা নত করে ফেললো চাঁদ।প্রণয়ের মা পুষ্পিতা জামান চাঁদকে আর ঘাটাতে চান না।তাই তাকে সহজ করতে বললেন,

“ওসব বাদ দাও।এখন যাও ফ্রেশ হয়ে আসো।আর এই ভারী শাড়িটা চেঞ্জ করে এখান থেকে পছন্দমতো পরে নাও”

বলেই তিনি চলে যেতে চাইলে চাঁদ পিছু ডাকে,

“মা?”

পুষ্পিতা জামান পিছু ঘুরে বলেন,

“হ্যা মা?”

“শাড়িগুলো কি অমির জন্য ছিলো?”

তিনি ঠোটজোড়া প্রশস্ত করে বললেন,

“তোমার শ্বশুর যা বলেছিলেন একদম ঠিক বলেছিলেন।”

“বাবা আমাকে নিয়ে কিছু বলেছেন?কী বলেছেন?”

“চাঁদ মায়ের আত্মসম্মান সবকিছুর ঊর্ধ্বে।আর সেজন্যই আমি তোমার জন্য ঢাকা আসার পথেই মার্কেট থেকে শাড়ি কিনেই ফিরেছি”

চাঁদ কৃতজ্ঞতার সহিত তাকালো তার দিকে।মনেমনে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করলো এমন শ্বশুর-শাশুড়ি পেয়ে।পরক্ষণেই মনে পড়লো যাকে স্বামীই মানেনা।তার বাবা-মা কি করেইবা শ্বশুর-শাশুড়ি হবেন?

সবেমাত্র সালাম ফিরিয়েছে চাঁদ।এমতাবস্থায় তার ফোনে কল আসায় রিদি ফোনটা নিয়ে দেখে ‘আর ভাইয়া’ নামে কেউ একজন ফোন দিয়েছে।তা দেখে ফোন ফোনের জায়গায় রেখে বলে,

“ভাবি ‘আর ভাইয়া’ নামের কেউ একজন কল দিয়েছে।তুমি মোনাজাত শেষ করে কল ব্যাক করো”

মোনাজাত শেষ করে কিছুক্ষণ আঙুলে গুনে কি যেনো পড়লো চাঁদ।অতঃপর মোবাইল হাতে নিতেই আবারও রিংটোন বেজে উঠলো।বাজতেই চাঁদ সেটা রিসিভ করে কাপা কাপা কন্ঠে বললো,

“হ্যা…হ্যালো?”

ওপাশ থেকে ভেসে আসলো উ*ত্তে*জি!ত কন্ঠস্বর,

“আপু প্লিজ আপু ফোনটা কেটোনা।আমার উপর রাগ করে থেকোনা প্লিজ!”

অমৃতার কন্ঠস্বর শুনে আ*ত!ঙ্কি*ত হয়ে কিছু বলার পূর্বেই নজরে আসলো প্রণয়ের তিনবোন।তাদের সামনে কিছু বলা ঠিক হবেনা ভেবে সে বললো,

“আমি তোকে পরে কল দেবো।এ নাম্বারেই পাবো কি?”

“হা…হ্যা আপু।এটাতেই পাবে।রবিনের নাম্বার এটা।আমি ওর সাথেই আছি”

“ঠিক আছে রাখছি।কাল ফ্রি হয়ে কল দেবো।তুই রেস্ট নে”

কল রাখতেই শিফা বললো,

“কে করেছে ভাবি?”

“একটা কাজিন”

রিদি বললো,

“তোমার বিয়ের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতে?”

“তেমন কিছুনা।ও হয়তো জানেনা বিয়ের কথা।ভালো লাগছেনা।মাথাটা ধরেছে।কফি বানানো যাবে এখন?”

রুবা বললো,

“এতো রাতে কফি খাবে?ঘুম আসবেনাতো”

“না খেলে মাথা ব্যাথায় ম^রে*ও যেতে পারি!”

রিদি বললো,

“বেশি কথা না বলে ভাবিকে কিচেন দেখিয়ে আয়”

শিফা বললো,

“দেখিয়ে আয় মানে?ভাবি একা থাকবে নাকি ওখানে?কোথায় কি আছে জানে?”

রুবা বললো,

“আমরাওতো এসে বসে থাকিনা যে জানবো”

চাঁদ বললো,

“আচ্ছা সমস্যা নেই আমি মা’কে ডেকে নেবো”

রিদি বললো,

“ফুপিকে ডেকোনা ভাবি।ফুপির জার্নি করলে শরীর খারাপ করে।ঘুমোক।তুমি চলো আমি তন্ময় ভাইকে বলে দিচ্ছি”

রিদি চাঁদকে নিয়ে তন্ময়ের রুমে আসতেই দেখতে পায় তন্ময়ের রুমে তন্ময়সহ উজান আর মির বসে আছে।রিদি তন্ময়কে বলে,

“ভাই তুই ভাবিকে নিয়ে একটু কিচেন টা বুঝিয়ে দিয়ে আয়।কফি বানাবে”

তন্ময় রিদির পেছনে দাঁড়ানো চাঁদকে দেখে বুকের বা পাশে হাত রেখে বলে,

“দিলেতো হার্টবিট মি*স করে?এভাবে শাড়ি পরে খোলা চুলে আসতে কে বলেছিলো?একজনের উপর আর কতবার ক্রাশ খাবো বলোতো ভাবি?”

চাঁদ হেসে বললো,

“ভাবিও বলছো আবার ক্রাশও খাচ্ছো ব্যাপারটা ইন্টারেস্টিং!”

তন্ময় বললো,

“চশমা পরোনি বলে চোখগুলোর গভীরতা বুঝা যাচ্ছে।এজন্যই অতিরিক্তই সুন্দর লাগছে তোমায়, যার দরুন আমি ক্রাশ খেতে বাধ্য হচ্ছি।শাড়িটা সাধারণই তবে তুমি পরায় অসাধারণ লাগছে!আমি জাস্ট ম*রে যাচ্ছি ভাবি!ইশ ভাইটা তোমায় বিয়ে না করলে আজ তুমি আমার ভাবির জায়গায় বউ হতে ধ্যাত!কেন যে তোমায় আগে দেখলাম না!”

চাঁদ কিছু বলার পূর্বেই মির বসা থেকে দাঁড়িয়ে বলে,

“বিড়ালিনী তুমি?”

পরিচিত কন্ঠস্বর কানে ভেসে আসতেই সেদিকে তাকায় চাঁদ।তাকাতেই মিরকে দেখে আঁখিজোড়া হয় অশ্রুসিক্ত।তবে নিজেকে সামলে বলে,

“কেমন আছো মিরজাফর ভাইয়া?”

মির হেসে দিয়ে বলে,

“তুমি সবাইকে যেমন রেখে গেছিলে তেমনই আছি ঘসেটি বেগম”

চাঁদ নিজেকে সামলে বললো,

“রাখা না রাখার মালিক আল্লাহ।তবে সবার মধ্যে কেবল তুমিই আমার সাথে ঠিকভাবে কথা বললে।যেটা আমি মোটেও তোমাদের কারও কাছ থেকে আশা করিনি”

বলেই চোখজোড়া লুকানোর বৃথা চেষ্টা করলো চাঁদ।তা দেখে মির বললো,

“ভাইয়ের কাছ থেকে দৃষ্টি লুকাতে চাচ্ছো?এভাবে পা*লি*য়ে না গেলে কি হতোনা বিড়ালিনী?তুমি থাকলে এভাবে সম্পর্কগুলো ছি*ন্ন হতোনা কারোরই।”

চাঁদ নিজেকে সামলাতে না পেরে মিরের সামনে গিয়ে তার হাতদুটো নিজের দু’হাতে নিয়ে ফুপিয়ে ফুপিয়ে বলতে লাগলো,

“বিশ্বাস করো ভাইয়া আমি যেতে চাইনি!পরিস্থিতির কাছে হে*রে গিয়েছিলাম আমি।সেইসাথে হারিয়েছি আরও অনেককিছু।তারপরেও ফিরে আসা আমার সাজেনা।তাছাড়া যে সম্মান করতে জানেনা সে ভালোবাসতেও জানেনা ভাইয়া”

চাঁদের চোখ মুছে দিয়ে মির বলে,

“তুমি ভুল ভাবছো চাঁদ”

“আমি সবটা ঠিকই ভাবছি ভাইয়া।অরণ কোথায়?তার সাথে চেয়েও যোগাযোগ করতে পারিনি”

মিরের কিছু বলার পূর্বেই প্রণয়ের গম্ভীর কন্ঠস্বর ভেসে আসে,

“এই মেয়েকে এখান থেকে যেতে বল তন্ময়।আর তুই কি করে ওর সাথে কথা বলছিস মির?”

মির প্রণয়ের দিকে তাকিয়ে বললো,

“এভাবেই বলছি।কেনো তোর কোনো সমস্যা?আর তুই চাঁদকে বিয়ে করেছিস কেনো?বিয়েটাতো চট্টগ্রামের কোন মেয়ের সাথে হওয়ার কথা ছিলো?এসব হলো কি করে?চাঁদ আসলো কোত্থেকে?আর সবচাইতে বড় কথা এতোবছরেও যাকে আমরা খুজে পাইনি তাকে ডিরেক্ট বিয়ে করে নিয়ে এসেছিস?বাকিরা সবটা জানে?”

উজান বললো,

“আমি বলছি তোমায় সবটা।তন্ময় যা ভাবিকে বাইরে নিয়ে যা।রিদিকেও সাথে নিস”

চাঁদ বললো,

“লাগবেনা ভাইয়া।ঘুমাতে যাচ্ছি চলো রিদি”

তন্ময় বললো,

“কিন্তু ভাবি?”

তন্ময়কে উপেক্ষা করে চাঁদ রিদির আগেই বের হয়ে গেলো।রুমে যেতেই শিফা বললো,

“কফি এনেছো?আমাদের জন্যও আনতে?”

চাঁদ জবাব দিলো,

“বানাইনি।কাল বানিয়ে দেবো তোমাদের কেমন?”

“কিন্তু তোমার মাথা ব্যাথা?”

“ঔষধ খেয়ে নিলে ঠিক হয়ে যাবে”

বলেই ব্যাগ থেকে ফার্স্ট এইড বের করে একটা ট্যাবলেট খেয়ে শুয়ে পড়লো চাঁদ।

রিদি এসে রুবা আর শিফাকে বললো,

“জানিস?প্রণয় ভাইও রুমে নেই।ভাবির সাথে নাকি থাকবেনা এক রুমে।তাই তন্ময় ভাইয়ের রুমে গেছে থাকতে।”

“কি বলিস কি?”

রুবা বললো,

“আমাদের উচিত দুজনের মাঝের সমস্যা মিটিয়ে দেওয়া”

রিদি বললো,

“এতো সহজ হবেনা।সমস্যাটা বিরাট!”

শিফা বললো,

“কি করে বুঝলি?”

“মির ভাইয়াও ভাবিকে চিনে।ভাবিও চিনে।দুজনের সম্পর্কও বেশ!যদি কিছু জানতেই হয় তো মির ভাইয়ার থেকেই জানা যাবে।আমি তন্ময় ভাইকে বলছি মির ভাইয়াকে নিয়ে আসতে”

রুবা বললো,

“ভাবির সামনে শোনা যাবেনা।তন্ময় ভাইকে বল মির ভাইয়াকে নিয়ে প্রণয় ভাইয়ার রুমে যেতে।ওটা খালিই আছে।আমরাও আসছি”

“ঠিক আছে বলছি”

প্রণয় মিরের দু’কাধে হাত রেখে ঝাকিয়ে বলছে,

“তুই সবটা জেনেও ঐ মেয়ের সাথে কথা বলছিলি?চোখের পানি মুছে দিচ্ছিলি মির?”

মির হেসে বললো,

“তুই কি রা*গছিস নাকি জেলাস হচ্ছিস বুঝতে পারছিনা মামা!”

ভ্রু কুচকে প্রণয় বললো,

“আমি কেনো জেলাস হবো?”

“যাকে তুই কখনো ছুয়েও দেখিসনি তাকে আমি ছুয়ে দিলাম বলে!”

“ওহ জাস্ট শা!টাপ মির!তুই দুনিয়ার যত মেয়ে আছে সবার সাথে ফ্লার্ট করতে পারদর্শী হলেও কেবল ঐ মেয়ের কাছে দু*র্ব*ল হয়ে যাস।এতে নতুন কী?সেতো তোর ধর্মের বোন!”

“হাহাহাহা।ধরা পড়ে গেলাম দেখি!”

“আর তাকে কে ছুয়ে দিলো কে ছোয়নি তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসেনা”

“সত্যি ই যায় আসেনা?যার কথা বলছিস মেয়েটা কেবল তোর পুরোনো অনুভূতি না বর্তমানে তোর সহধর্মিণীও।তোর বউকে যেকেউ এসে ছুয়ে দিবে আর তুই চেয়ে চেয়ে দেখবি?”

প্রণয়ের মেজাজ ধীরে ধীরে খা|রা’প হচ্ছে।তাই মিরকে রুম থেকে বের করে বললো,

“এই তুই যা তো!তন্ময়ের রুমে গিয়ে ঘুমা।তোকে আমার রুমে আনাটাই ভুল হয়েছে।আর মিরাকে ঐ মেয়ের ব্যাপারে কিছু বলবিনা”

“যাকে ঐ মেয়ে ঐ মেয়ে করছিস সে এখন তোর ওয়াইফ”

“ওয়াইফ?কিসের ওয়াইফ?কালই ডি*ভো*র্স পেপার বানাতে দিয়ে আসবো আমি”

“ডি*ভো*র্সই যখন দিবি বিয়ে কেনো করেছিস?”

“সময় হলেই জানতে পারবি”

“আজ অরণ থাকলে আগে ক*ষি*য়ে তোর গালে চ^ড়াতো!তারপর যা বলার বলতো”

চোয়াল শ*ক্ত করে প্রণয় বললো,

“যার জন্য অরণ আমাদের মাঝে বিদ্যমান না তার ওকালতি করতে লজ্জাবোধ করেনা তোর?”

“একসময় না জেনে তোর করা ভুলগুলোর জন্য অনেক আফসোস করবি প্রণয়।তখন চেয়েও কোনোকিছু শোধরাতে পারবিনা”

“যাতো।গুড নাইট”

বলেই মিরকে বাইরে বের করে দরজা লাগিয়ে দেয় প্রণয়।বাইরে আসতেই হঠাৎ করে হাতে টান লাগতেই সেদিকে তাকায় মির। রিদিকে দেখে চুপ হয়ে যায় সে।রিদি ফিসফিসিয়ে বলে,

“চলুন আমার সাথে”

To be continued…

#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম

০৪.
ফজরের আযান কানে ভাসতেই ঘুম ছুটে যায় চাঁদের।ঘুম থেকে উঠে পাশে ফিরে দেখে তার তিন ননদের একজনও সেখানে উপস্থিত নেই।তাদের জন্য চিন্তা হচ্ছে চাঁদের।ওয়াশরুমে গেলে তিনজন একসাথেই বা কেনো যাবে?তবে কোথায় গেলো তারা?এসব ভাবতে ভাবতেই হাত খোপা করতে করতে রুমের বাইরে আসে চাঁদ।এদিক সেদিক খুজতে থাকে তাদের।কোথাও না পেয়ে তন্ময়ের রুমের দিকে এগিয়েও পিছু ঘুরে ফিরে আসতে চায় কিন্তু বলিষ্ঠ দেহের অধিকারী কারো বুকের সাথে ধা*ক্কা লেগে ফ্লোরে পড়ে যায় সে।একেতো নাকে খুব জো!রে ব্যাথা পেয়েছে তার উপর এখন মনে হচ্ছে কোমড়টাও বাকিয়ে গিয়েছে।বেশ বিরক্ত হয়ে চাঁদ উঠতে চাইলে ব্যথায় চোখমুখ খি*চে ফ্লোরেই বসে থাকে।মনে মনে ভাবছে সামনের লোকটা খুবই নির্দয়।পড়ে গেছে দেখেও উঠার জন্য হাত বাড়াচ্ছেনা?এমনও মানুষ হয়?লোকটাকে দেখার বড্ড ইচ্ছে হলো চাঁদের।তাই সেদিকে দৃষ্টিপাত করে সে।চোখে চশমা নেই বিধায় চেহারা স্পষ্ট নজরে আসছেনা তবে অবয়ব দেখে কোনো সন্দেহ নেই সামনে থাকা ব্যক্তিটি কে।শুধু শুধুই লোকটাকে নির্দয়ের খেতাব দেয়ায় নিজেকে গা!ল!ম!ন্দ করে একাই একাই উঠার চেষ্টা করছে।তবুও লোকটা সাহায্য করছেনা বলে খানিকটা আশাহত হলো সে।চাঁদকে অবাক করে দিয়ে লোকটা চলে যেতে নিলে কষ্ট করে উঠে দৃষ্টি নত করেই চাঁদ বলে,

“এতোটা ঘৃ*ণা কবে জন্মালো প্রণয়?”

চাঁদের মুখে এরূপ বাক্য শুনে হতবিহ্বল হয়ে পিছু তাকায় প্রণয়।এরকম কিছু সে মোটেও আশা করেনি।চাঁদকে চুপ দেখে সে মনে মনে ভাবলো হয়তো ভ্রম হয়েছে।তাই আবারও যেতে নিলে শুনতে পায়,

“এটা কোনো ভ্রম না।আমি জানতে চাইছি এতোটা ঘৃ*ণা করার কারণ কী?”

বিস্ফোরিত নয়নে প্রণয় চাঁদের দিকে তাকালো।তাকিয়ে থেকে বললো,

“যার দৃষ্টি সর্বদা ঊর্ধ্বে থাকে তার দৃষ্টি আজ নত কেনো?”

চাঁদ সেভাবে থেকেই বললো,

“যে জানে অতিরিক্ত কথা তার পছন্দনা তবুও কেনো বাড়তি কথা বলছে?”

“সে কি কখনো ভেবেছে যাকে ছাড়া তার এক মুহুর্তও চলতোনা সে কী করে বছরের পর বছর থেকেছে?”

“থাকতে পেরেছেতো!সবাই পারে”

“দৃষ্টি উঁচু করুন চাঁদ”

প্রণয়ের মুখে এতোগুলো বছর পর ‘চাঁদ’ ডাক শুনে প্রণয়ের দিকে তাকাতে বাধ্য হলো চাঁদ।আর তাকাতেই প্রথম দিনের ন্যায় দুজনের দৃষ্টিমিলন ঘটলো।চাঁদ বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারলোনা সেই প্রখর চাহনীতে।এই দৃষ্টিতে যেনো কেবলই তার ধ্বং*স নিহিত!তাই চাঁদ দৃষ্টি অন্যদিকে দিয়ে বললো,

“একজন ডাক্তারকে মানবিক হতে হয় এটাই আমাদের সর্বপ্রথম শেখানো হয়,এমনকি দুশমন হলেও।একজনকে কষ্টে দেখে আনন্দ পাওয়া ব্যাপারটায় ঘৃ*ণা পুরোপুরিভাবে আবৃত আছে।কারণটা যে কেবলই ছেড়ে চলে যাওয়া তা কিন্তু নয়।তবে কেনো এতোটা ঘৃ*ণা?”

“ইগো শেষমেশ ছুটলো বলে?”

“ইগো নামক বস্তু চাঁদের মাঝে বিদ্যমান নেই সেটা আপনি ভালো করেই জানেন”

প্রণয়ের মেজাজ ধীরে ধীরে বি!গড়া!চ্ছে সে নিজেকে সামলাতে না পেরে চাঁদের কব্জি ধরে টেনে নিজের রুমে এনে দরজা আটকে দরজার সাথেই দু’বাহু চেপে ধরে বলে,

“ইগো নেই না?ইগো না থাকলে কেবল সন্দেহ করে দুটো কথা বলায় কেউ ছেড়ে চলে যেতে পারে?কী করেইবা পারে?”

চোখমুখ বন্ধ করে চাঁদ বলে,

“আপনি জানেন না।আপনি জানেন না!”

“আমি জানতে চাইও না!একজন খু*নীর কাছ থেকে অন্তত সত্যিটা জানার প্রত্যাশা আমি করিনা”

সাথে সাথে চোখ খুলে অস্ফুটস্বরে চাঁদ বলে,

“খু…খু*নী?”

তাচ্ছিল্যের সুরে প্রণয় বললো,

“ভাজা মাছটাও উলটে খেতে জানেন না তাইতো?”

“আমি সত্যিই বুঝতে পারছিনা প্রণয়?”

“আমি জানতাম ঠিক জানতাম এমন কিছুই শুনতে হবে আমায়।আপনার এই দুমোখোভাব আমার বরাবরই অপছন্দনীয়।সবার সামনে এমন ভাব করা যেনো ঘৃ*ণার চূড়ান্ত পর্যায়ে আমি আপনার তালিকায় আছি আর এখন এমন ভাব করছেন যেনো আপনি সদ্য ভূমিষ্ট হওয়া শিশু?”

তীক্ষ্ণ দৃষ্টি প্রণয়ের দিকে নিক্ষেপ করে চাঁদ বললো,

“কথা পেচাবেন না।আপনি আমায় খু*নী বলছেন কোন ভিত্তিতে?”

চাঁদের দু’বাহু আরও শক্ত করে চে!পে ধরে প্রণয় বলে,

“সেদিন আপনি অরণের মাথায় আ*ঘা^ত করেন নি?বলুন করেন নি?”

ব্যথায় কু*কি*য়ে গিয়ে চাঁদ বলে,

“অ…অরণ?কী হয়েছে অরণের?কোথায় সে?”

“যা জিজ্ঞেস করেছি তার উত্তর দিন চাঁদ!”

চোখ বন্ধ করে চাঁদ কাপা কাপা কন্ঠে বলে,

“ক…করেছিলাম তবে..”

“হ্যা করেছিলেন!আর আপনার জন্য আমার বন্ধু!”

চোখ খুলে বার কয়েক পলক ঝাপটে চাঁদ বলে,

“কী হয়েছে অরণের?”

“অরণের কী হয়েছে আপনাকে বলতে আমি বাধ্য নই!আর হ্যা যেই বিয়েটাকে সবাই ভাগ্য মনে করছে সেটা পুরোটাই ছিলো আমার নিখুঁত পরিকল্পনা।বিয়েটা আপনাকেই করার জন্য আমি টেকনাফ গিয়েছি।আর তাতে হেল্প করেছে আপনারই আপন খালাতো বোন অমৃতা!কিন্তু এতে তার কোনো দো*ষ নেই।তাকে দো*ষাবেন না।আমি তাকে বলেছি আমি আপনায় অনেক ভালোবাসি।আপনিও বাসেন।প্রমাণ স্বরূপ রবিন তো ছিলোই।আপনার বোনতো আর জানেনা একজন খু*নীকে ঘৃ!ণা ব্যতীত আর কিছু দেয়া যায়না!”

অবিশ্বাস্য চাহনী প্রণয়ের দিকে নিক্ষেপ করে চাঁদ বলে,

“অ..অমি সব জানতো?”

“সব জানেনা। শুধু জানে প্রণয় চাঁদকে অসম্ভব ভালোবাসে।ভুল বুঝাবুঝির জন্য চাঁদ আজ থেকে পাঁচ বছর আগে প্রণয়কে ছেড়ে চলে গিয়েছিলো”

“চ..চলে গিয়েছিলো এইটুকুই বলেছেন?কেনো গিয়েছিলো সেটা বলতে পারেননি?”

“যেই কারণ নিজেই জানিনা অন্যকে কী করে বলবো?”

“জানেন না যেহেতু অপ!বাদের উপর অপ!বাদ দিয়েই যাচ্ছেন কী করে?”

“নিজ চোখে দেখা জিনিসকে বিশ্বাস করবোনা ভেবেছেন?আপনার মতো প্র*তা*রক কে বিশ্বাস করতে বলছেন?একটা কথা মনে রাখবেন আপনার জীবনকে ন!র!কের তুলনায়ও অধিক বি’ষা’ক্ত যদি আমি করতে না পারি তবে আমার নামও প্রণয় না!”

চাঁদের কোনোকিছু বলার পূর্বে প্রণয়ের ফোনের রিংটোন বাজতেই প্রণয় চাঁদকে ছেড়ে দিয়ে পকেট হাতড়ে মোবাইল বের করে রিসিভ করে গম্ভীরভাবে বললো,

“ডক্টর রুহায়ের প্রণয় ইজ স্পিকিং”

“ঠিক আছে আমি এক্ষুনি আসছি”

বলেই নিজের আলমারির সামনে গিয়ে কালো রঙের একটা শার্ট বের করে দ্রুত গতিতে সাদা রঙের স্যান্ডো গেঞ্জির উপর দিয়ে পরে সাদা রঙের এপ্রোণ গায়ে দিয়ে এক হাতে স্টেথোস্কোপ গলায় ঝুলাতে ঝুলাতে আর অন্য হাতে ব্যাগ নিয়ে এলোমেলো চুলেই দরজার সামনে গিয়ে চাঁদের হাত ধরে টেনে সেখান থেকে সরিয়ে দরজা খুলে বেরিয়ে পড়লো।চাঁদ ছিটকে পড়লো ফ্লোরে।সোফার কোনার সাথে লেগে কে*টে গেলো তার ঠোটের কোনও।ডান হাতটা স্টেথোস্কোপ হাতে ধরায় সেখানেও চামড়া খানিকটা ছি/লে গেছে।সেদিকে তার ভ্রুক্ষেপ নেই।সে ভাবছে একটু আগে হওয়া প্রণয়ের সাথে মিনিট পাঁচেকের কথপোকথন।এবং সর্বশেষে প্রণয়ের এপ্রোণ গায়ে দিয়ে চোখে এক আকাশ আ!ক্রো!শ নিয়ে চলে যাওয়ায় আরও একবার ঝলসে গেলো চাঁদের নেত্রদ্বয়!

সালাম ফিরিয়ে মোনাজাতে কান্নারত অবস্থায় চাঁদ আল্লাহর নিকট অভিযোগ করছে,

“কেনো সবসময় আমার সাথেই এমনটা হয় আল্লাহ?কেনো আমি যা চাই কখনোই তা পাইনা?আমি জানি তুমি যা করো ভালোর জন্যই করো তবে কেনো একের পর এক পরীক্ষা নিচ্ছো আল্লাহ?আমার পরীক্ষা কি কখনোই শেষ হবেনা?সবচাইতে মূল্যবান জিনিসটাতো ছি!নি!য়েই নিয়েছো।এখন খু*নীর অপবাদও লেগে গেলো?তবে কি অরণ?না না!না আল্লাহ!তুমি এমনটা করতে পারোনা।প্রণয়ের কথামতো সত্যি ই যদি?নাহ নাহ!হে আল্লাহ আমি যা ভাবতে চাচ্ছিনা।যা ভাবতে গিয়েও শরীরে কা!টা দিয়ে উঠছে তুমি সেটাকে সত্যি করোনা আল্লাহ!অরণকে তুমি দীর্ঘজীবী করো আল্লাহ!সেই পুরুষটা যদি না থাকতো বেঁ’চে থাকাটাও বোধহয় সম্ভব হতোনা!আমি তোমার কাছে তার দীর্ঘায়ু কামনা করছি আল্লাহ।তুমি প্রণয়ের কষ্টটাকে কমিয়ে দিও।দু’বন্ধুকে আবার এক করে দিও।মির ভাইয়ার কথানুযায়ী তাদের সকলের ছিন্ন হওয়া সম্পর্কটাকে জুড়িয়ে দিও আরও একবার!”

কান্না করতে করতে মাথা ব্যথা হয়ে যাওয়ায় প্রণয়ের বিছানাতেই শুয়ে পড়লো চাঁদ।কিছুক্ষণের মাঝেই ঘুমিয়েও গেলো।

মির বি*র*ক্ত হয়ে তন্ময়,রিদি,শিফা আর রুবাকে বলছে,

“বাকিটুকু অন্য একদিন বলবো।এখনো ওদের জীবনের তিনবছরের একবছর বলেও শেষ করতে পারিনি।আমার অনেক ঘুম পাচ্ছে।একদিন সকাল থেকে শুরু করে রাত পর্যন্ত বলবো”

তন্ময় হাই তুলে বলে,

“আমার বিশ্বাস ই হচ্ছেনা চাঁদ ভাবি আমার এতো বড় হবে আই মিন তিন ব্যাচ সিনিয়র!কিন্তু এখনো ইন্টার্নি করছে কেনো?মাথায় আসছেনা কিছুই”

রুবাও হাই তুলে বলে,

“সে..সেটা আছে তবে আমিতো ভেবেই পাচ্ছিনা আমাদের প্রণয় ভাইয়া যে কিনা মেয়ে এ!লা!র্জে!টি!ক ছিলো সে প্রথম দেখাতে এমন কিছু করে বসবে!”

শিফা বলে,

“পুরোই হিরো হিরোইন টাইপ”

রিদি বললো,

“আসলেইরে।আমার ভেবেই কেমন লজ্জা লজ্জা লাগছে আর ভাবিতো!”

বলেই দু’হাত দিয়ে চোখমুখ ঢেকে ফেলে রিদি।সেদিকে আড়চোখে তাকায় মির।অতঃপর বলে,

“লজ্জা পাওয়ার কী হলো?চাঁদতো মোটেও লজ্জা পায়নি সেদিন।ওর মতো মেয়ে দু’টো দেখিনি আমরা কেউ।মাথা নত করবার মতো মেয়েই না।যেই প্রণয়কে তোমরা য*মের মতো ভয় পাও তার কলার ধরতেও দু’বার ভাবেনি ও।এমনকি উলটা পালটা নামেও ডাকতো ভাবা যায়?”

শিফা বলে,

“আরও বলোনা ভাইয়া।পুরোটা শুনবো।কিভাবে প্রণয় ভাইয়া আর চাঁদ ভাবির কেমিস্ট্রি শুরু হলো।দুজনের প্রণয় কী করে হলো আর বিচ্ছেদই বা হলো কেমন করে?”

মির গম্ভীরভাবে বলে,

“ওদের কখনোই বিচ্ছেদ হয়নি।চাঁদ হঠাৎ একদিন গা*য়ে*ব হয়ে যায়।আজ জানতে পারলাম ও টেকনাফ চলে গিয়েছিলো।সেখানে সম্ভবত চমেক থেকে পড়াশুনা করেছে”

রিদি জিজ্ঞেস করে,

“চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ?”

তন্ময় রিদির মাথায় গাট্টা মেরে বলে,

“তো চমেক মানে কী হ্যা?”

রিদি মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে,

“যেই মেয়ে ঢামেকের ফার্স্ট গার্ল সে কী এমনি এমনি ঢামেক ছেড়ে চলে যেতে পারে?শুধুই একটা রিলেশনে ঝামেলার জন্য?ব্যাপার টা মানতে কষ্ট হচ্ছে।বড় কিছু হয়েছিলো নিশ্চয়ই?”

মির বলে,

“কী হয়েছিলো সেটা অরণ আর চাঁদ বাদে আর কেউ জানেনা”

তন্ময় বলে,

“অরণ ভাইয়ার সাথে এমনটা না হলে পারতোনা ভাইয়া?অরণ ভাইয়াকে কি কোনোভাবেই ঠিক করা যায়না?”

“প্রণয়তো কম চেষ্টা করছেনা।তাছাড়া অরণের ফ্যামিলি বিদেশে পর্যন্ত নিতে চেয়েছিলো কিন্তু বেশিরভাগ মতামত এমন ছিলো যে ‘বডি ইজ ডে!ড বাট ব্রেইন এন্ড হার্ট ইজ স্টিল রানিং”

বলতে গিয়ে কেমন কথায় খাদ নেমে এলো মিরের।

রিদি মিরকে বললো,

“আপনি চিন্তা করবেন না ভাইয়া অরণ ভাইয়া একদিন ঠিক কোমা থেকে বেরুবে।”

রুবা সবার মুড ঠিক করার জন্য প্রসঙ্গ পালটে বলে,

“ইশ!প্রণয় ভাইয়ার মতো যদি আমারও এমন ফ্রেন্ড সার্কেল থাকতো ভালোই হতো না?ডেয়ার দিতো আর আমি গিয়ে হ্যান্ডসাম কাউকে কি*স করে প্রেমে ফেলে দিতাম!”

তন্ময় নাক ছিটকে বলে,

“তোর মতো পেত্নির প্রেমে কে ই বা পড়তো?”

রুবা রে*গে বলে,

“ভাইয়া তুমি!”

শিফা বলে,

“আমারতো বিশ্বাস ই হচ্ছেনা এগুলো বাস্তবেও হয়?আমিতো সবসময় নাটক সিনেমা বা গল্পেই এসব দেখে এসেছি নায়ক বা নায়িকার মাঝে ডেয়ার দিয়েই প্রণয়ের সূচনা ঘটে।বাস্তবে এমনটা আদৌ হয়?ভাইয়া তুমি মিথ্যা বলছো নাতো?”

ভ্রু কুচকে মির বলে,

“আর মিথ্যা বলে আমার লাভ?”

শিফা মাথা দুলিয়ে বলে,

“তাও ঠিক”

মির বলে,

“এটা সত্যি ই অবিশ্বাস্যনীয়।আমি নিজেও এসব ডেয়ার,র‍্যা*গিং এ বিশ্বাস করিনা।কিন্তু সেদিন যে এমন কিছু হবে ভাবিনি আমরা কেউই।আর তারপর যে দুজনের প্রেম হবে সেটা আমি কিছুক্ষণের জন্য চিন্তা করলেও।প্রণয় চাঁদের জন্য এতোটা ডেসপারেট হবে বা চাঁদের মতো পড়াকু মেয়ে প্রণয়ের প্রতি এতোটা ডেডিকেটেড হবে কল্পনায়ও আনিনি!”

রুবা বলে,

“প্রণয় ভাইয়া প্রেমও করতে পারে?”

তন্ময় বলে,

“ভাই কোনো মেয়ের জন্য ডেসপারেট ছিলো এটাও আমায় বিশ্বাস করতে হচ্ছে?”

শিফা বলে,

“অমন পড়াকু মেয়ে প্রেমও করতে পারে?”

রিদি বলে,

“দুজনে একসাথে এতোকিছু কি করে সামলিয়েছে?”

মির হেসে বলে,

“ওরা দুজন আমাদের মেডির আলোচিত হ!ট নিউজে থাকতো প্রায়শই”

রুবা আবারও বললো,

“সিরিয়াসলি ভাইয়া একটা পুরোই অপরিচিত মেয়েকে কি’স করে ফেললো?”

মির বিরক্ত হয়ে বললো,

“তোমাদের আর কয়বার বলবো?অবিশ্বাস্যনীয় হলেও ওদের প্রথম দেখাটা পুরোটাই সিনেমাটিক ছিলো!”

To be continued…