আবার প্রেম হোক পর্ব-৬৮

0
558

#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম

৬৮.
উশ্মির বিয়ের আয়োজন তোরজোর করেই শুরু হয়ে গিয়েছে।আজ তার গায়ে হলুদ।কাজিনমহলের সকলেই তার বাড়ি এসে হাজির।এসেছে রিদিও।তার এক কথা,রামিম ভাই আমার আপন ভাই তো কী হয়েছে?উশ্মি ভাবিও তো আগে আমার বোনই।সেই সুবাদে সে দুইপক্ষেরই লোক।বর্তমানে উশ্মিসহ সকল মেয়েরা পার্লারে বিদ্যমান।সাথে আছে চাঁদও।যদিও সে আসতে চায়নি তবে ননদদের জোরাজুরিতে তাকেও আসতে হয়েছে।পার্লারের চিফ আর্টিস্ট উশ্মিকে নিয়ে ব্যস্ত।আর বাকি মেয়েদের পার্লারের অন্যান্য আর্টিস্টরা সাজাচ্ছে।চাঁদকে সাজাতে গিয়ে তার আর্টিস্ট মহিলাটি বলেন,

“এত সুন্দর গড়নের মুখশ্রী আমার ক্যারিয়ার লাইফে আজ অব্দি দেখিনি আমি।যত ব্রাইড অথবা তার ফ্রেন্ড,কাজিন দেখেছি তবে আপনার মতো কাউকে সত্যিই দেখিনি।মিস?”

“চাঁদ”

চাঁদের বদলে রুবাই জবাব দেয়।রুবার জবাব শুনে মহিলাটি বলেন,

“আপনার নামের মতোই সুন্দর আপনি মিস চাঁদ।আজতো বউয়ের বদলে সব ছেলে আপনার দিকেই চেয়ে থাকতে বাধ্য হবে!”

শিফা অল্প বিস্তর উচ্চস্বরে বলে,

“মাশাআল্লাহ বলেন!”

মহিলাটি হেসে বলেন,

“মাশাআল্লাহ,মাশাআল্লাহ!আপনার বোনেরাতো ভারী পোজেসিভ মিস চাঁদ”

চাঁদ মৃদু হেসে বলে,

“ওরা আমার বোন নয় ননদ সকলেই।তবে বোনের চাইতে কম কিছুই নয়।আর আমি মিস নই,মিসেস”

অবাক দৃষ্টিতে চাঁদকে দেখে মহিলাটি বলেন,

“আপনি ম্যারিড?”

চাঁদ হ্যা বোধক মাথা নাড়তেই মহিলাটি বিস্ময় নিয়ে বলেন,

“সিরিয়াসলি?দেখেতো একদমই বোঝা যায়না”

উশ্মি মহিলাটিকে বলে,

“তাই না বলুন?আমার চেয়েও ইয়াং দেখা যায়না?”

মহিলাটি হ্যা বোধক মাথা নাড়তেই চাঁদ কপাল কুচকে বলে,

“তুমি আর আমিতো একই বয়সের”

“হ্যা,তাওতো তোমায় বেশি সুন্দর লাগে ভাবি”

তখনই রুবা বলে,

“আমাদের ভাই ভাবিকে পেয়ে জিতেছে না বলুন?”

মহিলাটি সামান্য হেসে হ্যা বোধক জবাব দিতেই রুবা বলে,

“আসলে তোমরা দুজনই দুজনকে পেয়ে জিতেছো ভাবি।প্রণয় ভাইয়ার মতো ছেলে মনে হয়না তুমি আরেকটা পেতে”

চাঁদ রুবাকে বলে,

“তুমিও পাবে ননদিনী।যাকে দেখলে মন তোমার বলতে বাধ্য হবে তার মতো আর কেউই নেই”

“তবে যাই বলোনা কেন প্রণয় ভাইয়া আসলেই ক্রাশ ম্যাটারিয়াল।জানো তুমি?তাদের কলেজে নাকি মেডি ক্রাশ ছিলো সে!”

চাঁদ সামান্য হেসে বলে,

“আমি জানবোনা তো কে জানবে আর?”

চাঁদের কথা শুনে রিদি বলে,

“হ্যা,ভাবি আর ভাইয়াতো একসাথেই ছিলো”

রিদির দিকে চেয়ে চাঁদ বলে,

“তোমার ক্লাস কবে থেকে শুরু হবে?”

“দুই-আড়াই মাসের মতো লাগবে মনে হয়”

“আর রুবা,শিফা তোমাদের এডমিশন?”

রুবা জবাব দেয়,

“সামনের মাসেই টেস্ট ভাবি।তারপর ভর্তি হতে হতে তো সময় লাগবে”

চাঁদ শিফাকে উদ্দেশ্য করে বলে,

“তুমি মেডিকেলে দাওনি শিফা?”

“দিয়েছিলাম কিন্তু মেডিকেল নিয়ে তেমন ইচ্ছা নেই ভাবি”

শিফার মন্তব্য শুনে চাঁদ বলে,

“মেরিট এসেছিলো?”

“হ্যা”

“কোনটায়?”

“সলিমুল্লাহ তে”

শিফাকে সাজাতে থাকা আর্টিস্ট শিফাকে বলেন,

“আর তুমি সলিমুল্লাহ তে পেয়েও ইচ্ছা নেই?”

শিফা জবাব দেয়,

“না”

মহিলাটি বলেন,

“কিন্তু কেনো?”

“কারণ আমি ফার্মাসী ডেডিকেটেড”

শিফার কথা শুনে চাঁদ বলে,

“তুমি আর রিদি কি তাহলে ঢাকা চলে আসবে?”

শিফা জবাবে বলে,

“আমি এখনও কিছু ভাবিনি ভাবি।আগে দেখি কোনটায় চান্স হয়”

চাঁদ এবার রিদিকে উদ্দেশ্য করে বলে,

“আর রিদু তুমি?তুমি এক কাজ করও,তুমি বরং আমাদের বাসায় চলে আসো।আমার সাথেই নাহয় যেয়ো”

রিদি বলে,

“দেখি মা আর ভাইয়া কী বলে”

রিদির কথা শুনে উশ্মি বলে,

“ভাইয়ার কাছে আবার কী শুনবে?তোমার ভাই কিছু বলে তো দেখুক আগে!ঐটা তোমার ভাবির বাসা।তাছাড়া তোমার আপন ফুপাতো ভাইয়েরও বাড়ি।আমিও দেখি কে আটকায় তোমায়!”

রিদি হেসে বলে,

“আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে ভাবিরা আমার!চিন্তা করও না তোমরা।আগে সময় হোক”

এতক্ষণ চুপ থাকলেও এবার উশ্মির মামাতো বোন আলিশা বলে,

“এই চাঁদ ভাবি?তোমার সেদিনের ঐ ফ্রেন্ডটা কি আসবেনা আজ?”

কপাল কুচকে চাঁদ সাজ রেখেই আলিশার দিকে ঘুরে জিজ্ঞেস করে,

“কোন ফ্রেন্ডের কথা বলছো?”

“আরেএ ঐ যে….”

আলিশার কথা সম্পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই উশ্মির খালাতো বোন হুরায়রা বলে,

“অনেক বেশি কথা বলিস তুই আলু”

আলিশা গা ছাড়া ভাব নিয়ে বলে,

“চুপ থাক তো তুই।সাজাচ্ছেনা তোকে?”

চাঁদ জিজ্ঞেস করে,

“কী হয়েছে বুঝলাম না?”

আলিশা চাঁদকে বলে,

“আরেএ তোমার ঐ যে সেদিনের সেই ডাক্তার ফ্রেন্ডটার কথা বলছিলাম।সে আজ আসবেনা নাকি?”

“ফায়ানের কথা বলছো তুমি?”

আলিশা হুরায়রাকে ইশারায় কিছু জিজ্ঞেস করতেই বিরক্তি নিয়ে সে হ্যা বোধক মাথা নাড়ে।অতঃপর আলিশা বলে,

“হ্যা হ্যা সে ই”

“হ্যা আসবে কিন্তু তুমি জিজ্ঞেস করছো যে?”

“না মানে ঐ আরকি এমনি”

চাঁদ হুরায়রার দিকে চেয়ে বলে,

“কিছু কি হয়েছে হুরায়রা?”

হুরায়রা জবাব দেয়,

“না ভাবি”

হঠাৎ করেই রুবা বলে,

“আলিশাপু নিশ্চয়ই ফায়ান ভাইয়ার উপর ক্রাশ খেয়েছে!আ’ম ড্যাম শিওর।যা হ্যান্ডসাম সে!মাই গড”

আলিশা উচ্চস্বরে বলে,

“এই খবরদার তার দিকে নজর দিবিনা!সে শুধুই আমার ক্রাশ”

বলেই জিভে কা!মড় দিয়ে এক চোখ বন্ধ করে আরেকচোখ দিয়ে আড়চোখে চাঁদের পানে তাকাতেই সেখানে উপস্থিত সকলে উচ্চস্বরে হেসে উঠে।হাসে চাঁদ নিজেও।অতঃপর হাসতেই হাসতেই বলে,

“ফায়ান শুধু তোমার ক্রাশই না।আরও বহু মেয়ের ক্রাশ।সে আর মির ভাইয়া ছিলো থার্ড ক্রাশ অফ দ্যা হোল মেডিকেল”

মিরের কথা শুনে রিদি চাঁদের পানে তাকাতেই চাঁদও তার পানে তাকিয়ে সামান্য হাসতেই রিদি লজ্জা পেয়ে দৃষ্টি নত করে।আর আলিশা জিজ্ঞেস করে,

“বাহ তাই নাকি?আর বাকি দুজন কে ছিলো?সেকেন্ড আর ফার্স্ট?ফার্স্টের নামটাই আগে বলোনা ভাবি!”

হঠাৎ করেই চাঁদ সশব্দে হেসে উঠে।চাঁদের হাসিতে সকলেই ভড়কে তাকায় তার পানে।সকলে তাকাতেই চাঁদ আলিশার পানে চেয়ে ফের উচ্চশব্দে হেসে বলে,

“সে আমার প্রাণের স্বামী!”

আলিশা চোখ বন্ধ করে বলে,

“শিট শিট!সেটা আমি আগে ভাবলাম না কেনো?”

চাঁদ হাসতে হাসতেই বলে,

“থাক ভাবা লাগবেনা।প্রণয়ই ছিলো পুরো মেডিকেলের মেয়েদের একমাত্র ক্রাশ যার একবার দর্শনের জন্য তারা হয়ে থাকতো ব্যাকুল!আর তারপরই সকলের মনে বসবাস ছিলো অরণের”

হুরায়রা জিজ্ঞেস করে,

“সেই অরণ ভাইয়া?প্রণয় ভাইয়ার বেস্ট ফ্রেন্ড যে?”

চাঁদ হ্যা বোধক মাথা নাড়তেই আলিশার কিছু বলার পূর্বেই সেখানকার চিফ আর্টিস্ট বলেন,

“আপনারা কাইন্ডলি বাসায় গিয়ে সমস্ত আলাপ করে নিয়েন!আপাতত সাজাতে দিন প্লিজ।এত নড়চড় করলে সবটা নষ্ট হবে”

সকলে একইসাথে ‘সরি সরি’ বলে সাজসজ্জায় মনোনিবেশ করে।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
রাত আট টা বেজে ঠিক ত্রিশ মিনিটে শুরু করা হয় হলুদের অনুষ্ঠান।সকলে উশ্মিকে হলুদ লাগাতে ব্যস্ত।চাঁদ মাত্রই উশ্মিকে হলুদ ছুইয়ে এসেছে আর ফায়ানকে এক চেয়ারে বসা দেখে তার পানে এগিয়ে আসে সে।অতঃপর পাশেই এক চেয়ার টেনে বসে ফায়ানকে বলে,

“কখন এসেছো?”

চাঁদের কন্ঠ পেয়ে তার পানে তাকাতেই শ্বাস আটকে আসে ফায়ানের।চাঁদের পানে এক পলক তাকিয়ে দৃষ্টি নত করে বলে,

“এইতো পাঁচ মিনিটের মতো হলো”

“আচ্ছা।যাও হলুদ ছুইয়ে আসো উশ্মিকে”

“সবেইতো শুরু হলো একটু পরে যাই”

“আচ্ছা শোনো”

“বলো”

“তোমার থেকে একটা হেল্পের কথা বলেছিলাম না?”

চাঁদের কথা শুনে তার পানে তাকিয়ে ফায়ান বলে,

“হ্যা কিন্তু কী হেল্প?”

“তোমাকে জাস্ট একটা কাজ করতে হবে”

কপাল কুচকে ফায়ান বলে,

“কী কাজ?”

“সেটাই বলছি কানটা এপাশে আনো”

অতঃপর ফায়ান তার কান এগিয়ে দিতেই চাঁদ ফায়ানের কানে বেশ ধীরস্বরে কিছু বলতেই ফায়ান বিস্ময় নিয়ে চাঁদকে বলে,

“না না!একদমই না।এসব আমার দ্বারা সম্ভব না।পারবোনা আমি।তাছাড়া সকলে কী ভাববে?”

“কিছুই ভাববেনা”

“ছি চাঁদ।তুমি আমায় দিয়ে এসব করাবে?জীবনে এসব করেছি আমি?”

চাঁদ অসহায় দৃষ্টি ফায়ানের পানে দিয়ে বলে,

“প্লিজ ফায়ান?এই একবারই করতে হবে।এরপরতো সব ঠিক হয়েই যাবে।সব ঠিকঠাক হলে আমিই সবাইকে সবটা বলে দেবো”

ফায়ান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,

“ঠিক আছে তবে একবারই আর কখনো এসব বলবেনা”

চাঁদ খুশি হয়ে কিঞ্চিৎ হেসে বলে,

“থ্যাংক ইউ,থ্যাংক ইউ সো মাচ ফায়ান!”

চাঁদকে প্রাণোচ্ছল দেখে ফায়ানও মৃদু হেসে বলে,

“সুন্দর লাগছে তোমায়”

চাঁদ উৎফুল্লতার সহিতই ধন্যবাদ জানিয়ে সেখান থেকে উঠে পড়ে উশ্মির কাছে যাবে বলে।

উজান আর তন্ময় একইসাথে উশ্মিকে হলুদ লাগিয়ে এসে আড্ডা দিতে বসেছিলো কিন্তু তখনই তাদের পাশে এসে দাঁড়ায় রায়হান।খানিকটা কেশে সে বলে,

“তোদের একটা কাজ করতে হবে আমার”

তন্ময় ভ্রু কুচকে বলে,

“হঠাৎ কী কাজ ভাই?”

“একটু এদিকে আয়”

নিম্নস্বরে কথাখানা বলেই উজান আর তন্ময়কে রিসোর্টের এক পাশে নিয়ে গিয়ে রায়হান বলে,

“খানিক বাদেই রামিম আসবে।তো তোরা যেভাবে পারিস উশ্মিকে রাজি করিয়ে টেরিসে নিয়ে আসবি।প্রয়োজনে চাঁদ অথবা রুবা ওদের হেল্প নিবি বাট আধা ঘন্টার মধ্যে উশ্মিকে টেরিসে আনা তোদের হাতে।এর হেরফের হলে তোদের অবস্থা কী হবে তা কিন্তু জানিসই”

কথাগুলো বলে আর এক মুহুর্ত দাড়ায়না রায়হান।আর রায়হানের দেওয়া কাজ শুনে হতবিহ্বল হয়ে একে অপরের দিকে চাওয়াচাওয়ি করে তন্ময় আর উজান।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
হলুদের পর্ব মাঝখানে আটকে দিয়ে সকল মেয়েদের বায়না আগে নাচগানের পর্ব চুকবে এরপর বাকি হলুদের অনুষ্ঠান করা হবে।নাহয় আগে আগেই হলুদ লাগিয়ে অনেকে চলে যায়।কিন্তু এবার তারা অনেক রকমের সারপ্রাইজ ভেবে রেখেছে উশ্মির জন্য।সে সুবাদেই হলুদ দেওয়া ঘন্টা দুয়েকের জন্য স্থগিত রেখেছে।প্রথমেই উশ্মির বোনেরা আসে নাচার জন্য।অতঃপর তাদের নাচ শেষ হতেই হঠাৎ করে ফায়ান স্টেজের মাঝ বরাবর এসে শিফার দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়।ফায়ানের এরূপ কাজে ভড়কে উঠে শিফা।বিস্ময়পূর্ণ দৃষ্টি ফায়ানের পানে নিক্ষেপ করতেই ফায়ান সামান্য হেসে ফের তার হাতের দিকে ইশারা করে শিফাকে।শিফা বেশ অস্বস্তি নিয়েই ফায়ানের হাতে হাত রাখে।ফায়ানের হাতে হাত রাখতেই স্টেজের লাইটের রং বদলে যায়।হালকা গোলাপি রঙের আলোয় শিফা আর ফায়ানকে একসাথে বেশ ভালোই লাগছে।সকলেই তাদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।চাঁদ লো ভয়েজে স্পিকারে লাগিয়েছে বলিউডের প্রিয় এক জুটির বিখ্যাত এক গান।অতঃপর প্রথমেই শিফার হাত আকস্মিক টেনে তাকে বুকের কাছে এনে কানে কানে ফায়ান বলে,

“তুমি আমায় নিয়ে উল্টাপাল্টা ভেবোনা শিফা।আমি তোমায় বোনের নজরেই দেখি।চাঁদ আমায় বললো তোমার সাথে উশ্মির বিয়ে হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রেমিকের মতো আচরণ কর‍তে।ও এসব কেনো বলেছে জানিনা তবে আমার মনে হচ্ছে তুমি কাউকে পছন্দ করো যাকে চাঁদ আমার দ্বারা জেলাস ফিল করাতে চাচ্ছে।কে সে?আসলেই এমন কিছুই কিনা?”

ফায়ানের কথা শুনে লজ্জায় গালদু’টো জ্বলে যায় শিফার।সে দৃষ্টি স্টেজ পানে রেখে ফায়ানের সাথে নাচার তালে তালেই বলে,

“জ্বি ভাইয়া এমনটাই।ভাবি হয়তো এজন্যই আপনাকে বলেছে।প্লিজ আপনি আমায় ভুল বুঝবেন না।আমি এসব জানতাম না”

ফায়ান হাসিমুখেই বলে,

“না সমস্যা নেই।আমার জন্য যদি দুজন ভালোবাসার মানুষ এক হয় এতে আমিই খুশি হবো।তুমি জাস্ট আমার সাথে কো-অপারেট করো”

“জ্বি ভাইয়া”

বলেই হাসিমুখে ফায়ানের সাথে সাথে তাল মেলায় শিফা।

বেশ ঘনিষ্ঠভাবেই শিফা আর ফায়ান একসাথে নাচায় মনোনিবেশ করেছে।সাথে দুজনকেই বেশ প্রফুল্লচিত্ত দেখা যাচ্ছে।হঠাৎ করেই রায়হানের নজর স্টিজের দিকে যায়।সে শিফাকে ফায়ানের সাথে নাচতে দেখে অবাকের চরম পর্যায়ে পড়ে যায়।বিস্ময় নিয়ে নিজের সাথেই বিড়বিড়িয়ে বলে,

“এই রসকসহীন মেয়ে নাচতেও জানে?তাও আবার কাপল ডান্স করছে?ছিহ!এভাবে অপরিচিত ছেলের গা ঘেষে নাচার মতো কী হলো?কে ছেলেটা?ওর বয়ফ্রেন্ড নাতো?”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
রুবা আর চাঁদ উশ্মিকে নিয়ে ছাদে এসেছে।উশ্মি এখনও জানেনা তাকে এখানে কেনো নিয়ে আসা হয়েছে।সে কেবলই চাঁদের ভরসায় এসেছে অন্যথা অনুষ্ঠান রেখে কখনোই আসতোনা।তখনই বোরকা পরহিতা এক মহিলাকে নিয়ে উজান আর তন্ময় হাজির হয় সেখানে।উশ্মি ভ্রু কুচকে বলে,

“এই মহিলাটা কে উজান?তোরা সবাই এখানে কেনো?”

চাঁদ ঠোট চেপে খানিক হেসে বলে,

“এই মহিলাটা তোমার হবু স্বামী উশ্মি।দেখি দেখি নিকাবটা খুলুন তো ভাইয়া”

বলেই মহিলাটার নিকাব টেনে খুলে দেয় চাঁদ।অতঃপর রামিমকে সে অবস্থায় দেখে উশ্মি ভড়কে গিয়ে খানিকক্ষণ চুপ থেকে হুহা করে হেসে দিয়ে বলে,

“সিরিয়াসলি রামিম?শেষমেশ তুমি বোরকা পরে এখানে আসলে?মাই গড!আমার পেটতো ফেটে যাচ্ছে ভাবি।প্লিজ আমার হাসি থামাও তোমরা!”

বলতে বলতেই আবারও সশব্দে হেসে উঠে উশ্মি।আর চাঁদ বলে,

“তোমার হাসি থামানোর মানুষতো এসেই গেছে।এবার আমরা যাই।এই চলো তোমরা”

বলেই রুবা,উজান আর তন্ময়কে একসাথে নিয়েই ছাদ থেকে নেমে পড়ে চাঁদ।
.
.
.
.
.
.
.
.
ছাদ থেকে নেমে রায়হানের পাশে এসে দাঁড়ায় চাঁদ।তার দিকে চেয়ে তাকে বিস্ময় নিয়ে ফায়ান আর শিফার নাচ দেখতে দেখে ঠোট চেপে মৃদু হাসে সে।অতঃপর কেশে বলে,

“আপনি ডান্স করবেন না ভাইয়া?”

চাঁদের কথায় ধ্যান ভাঙে রায়হানের।সে চাঁদের দিকে চেয়ে বলে,

“কিছু বললে?”

“হ্যা।বলছিলাম যে আপনি নাচবেন কিনা?”

“দেখছোনা একদল নাচছে?”

“হ্যা শিফা আর ফায়ান”

কপাল কুচকে রায়হান বলে,

“ফায়ান?কে ছেলেটা?”

“আমার বন্ধু”

চাঁদের বন্ধু শুনে কপাল আরও কুঞ্চিত হয় রায়হানের।সে ফের জিজ্ঞেস করে,

“তোমার বন্ধু শিফার সাথে কেনো ডান্স করছে?”

“সে তো আমি জানিনা”

রায়হানের আরও কিছু বলার পূর্বেই প্রণয় সেখানে এসে হাজির হয়।অতঃপর চাঁদকে বলে,

“আম্মু আব্বুরা আসলোনা চাঁদ?তাদের কি ইনভাইট করা হয়নি?”

প্রণয়ের কথা শুনে তার পানে চেয়ে চাঁদ বলে,

“হ্যা মা তো গিয়েছিলেন মনে হয়।এখনও আম্মুরা আসেনি?”

“না”

“দাড়ান আমি জিজ্ঞেস করছি”

“এদিকে আসুন”

বলেই চাঁদের কব্জি ধরে তাকে ভীড় থেকে কোলাহলহীন জায়গায় দাড় করিয়ে বলে,

“কল পরে দিয়েন।শুনুন আগে”

মোবাইল হাতে রেখেই প্রণয়ের পানে চেয়ে চাঁদ বলে,

“জ্বি?”

“বউ উশ্মি নাকি আপনি?”

প্রণয়ের কথা শুনে কপাল কুচকে চাঁদ বলে,

“মানে?”

“বউ আপনি নাকি উশ্মি?”

“আপনি জানেন না?কী অদ্ভুত প্রশ্ন করছেন?”

“জানি বলেইতো বলছি”

“বুঝিয়ে বলুন”

“আশেপাশে দেখার তো সময় পাচ্ছেন না।সকলের দৃষ্টি কেনো আপনাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে?সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করার স্বভাব এখনও গেলোনা?”

প্রণয়ের কথা শুনে কপাল কুচকে চাঁদ বলে,

“একই প্রশ্ন যদি আমি আপনাকে করি?”

বলেই প্রণয়ের বিড়ালাক্ষীজোড়ার দিকে নিজ আঁখিদ্বয় নিবদ্ধ করে চাঁদ।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
হাতে মিষ্টির বাক্সসহ রিসোর্টের ভেতরে প্রবেশ করে চৈত্র।ঢুকেই আশেপাশে চাঁদকে খুঁজে না পেয়ে মিরকে দেখে ডাক দেয় তাকে।মির তার কাছে এসেই হাসিমুখে বলে,

“কী চৈত্র ভাই?কেমন আছেন?”

“এইতো ভাই আছি আলহামদুলিল্লাহ।তোমার কী অবস্থা?”

“আমিও আছি আলহামদুলিল্লাহ।এত দেরি হলো যে ভাই?”

“আমিতো আসতেই চাইনি।আম্মু জোর করে পাঠালো।বললো বাসা থেকে কারো না কারো যাওয়া উচিত।বোনের শ্বশুরবাড়ি থেকে প্রথম দাওয়াত তাই আর না করলাম না”

“ভালো করেছেন ভাই।অনেকদিন পর দেখা”

“হ্যা চাঁদকে কোথাও দেখেছো?”

“একটু আগেই রুবা ওদের সাথে দেখলাম।এখন কোথায় আছে জানিনা।আপনি রুবাকে জিজ্ঞেস করুন,দাড়ান ডেকে দিচ্ছি আমি”

“না সমস্যা নেই।আমিই খুঁজে নিচ্ছি”

বলেই চাঁদকে খুঁজতে লাগে চৈত্র।বেশকিছুক্ষণ যাবৎ ই চৈত্রের দিকে পলকহীন তাকিয়ে আছে আলিশা।অতঃপর হুরায়রাকে কনুই দিয়ে পেটে গুতো মে!রে বলে,

“ছেলেটাকে দেখ হুরু।জোস না?কী হ্যান্ডসাম মাইরি!”

বিরক্ত হয়ে হুরায়রা বলে,

“লুইচ্চা মহিলা!স্বভাব আর গেলোনা?তখনই না বললি ডক্টর ফায়ান তোর ক্রাশ?”

“হ্যা তো কী হয়েছে?জীবনে ক্রাশ কি কম খেয়েছি নাকি?এই ছেলেটাও এখন আমার ক্রাশ।চল কথা বলে আসি”

বিরক্তি নিয়ে হুরায়রা বলে,

“তুই ই যা”

অতঃপর আলিশাকে রেখেই কোথায় যেনো চলে যায় সে।আর আলিশা চৈত্রের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে,

“হেই হ্যান্ডসাম?খুঁজছেন নাকি কাউকে?”

হঠাৎ কোনো মেয়েকে তার সামনে দাড়াতে দেখে খানিক পেছনে চেপে ভ্রু কুচকে মেয়েটার মতিগতি বোঝার চেষ্টা করে চৈত্র।অতঃপর গম্ভীরভাবে বলে,

“সে কৈফিয়ত আপনাকে দিতে হবে?”

“না না!তা বলিনি।এমনিতেই ভাবলাম যদি হেল্প করতে পারি”

“নো থ্যাংক্স।আমার কাজ আমি নিজেই করতে পারি”

ঠিকঠাকভাবে দাঁড়িয়ে শান্তকন্ঠে আলিশা বলে,

“ভাব দেখাচ্ছেন?”

“কে আপনি?যে আপনার সাথে আমার ভাব দেখাতে হবে?”

বেশ অপমানবোধ করে আলিশা বলে,

“আপনি আমায় রীতিমতো অপমান করছেন মিস্টার”

“অপমানিত হতে এসেছেনই বা কেনো?”

চৈত্রের করা অপমানে মুখ থমথমে হয়ে আসে আলিশার।চোখ ফে!টে কান্না আসার উপক্রম।আজ অব্দি কেউ তাকে এভাবে অপমান করেনি।সকলেই তার সাথে কথা বলার জন্য দিশেহারা হয়ে থাকে আর এই ছেলে কিনা তাকে অপমান করলো?আর এক মুহুর্ত না থেকে চোখে পানি নিয়েই সেখান থেকে প্রস্থান করলো আলিশা।আর চৈত্র আবারও খুঁজতে লাগলো চাঁদকে।চাঁদকে খুঁজতে খুঁজতেই হঠাৎ তার নজরে আসলো রুবা।তন্ময় আর উজানের সাথে কথা বলতে বলতে স্টেজের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সে।রুবাকে দেখতে পেয়েই দ্রুত গতিতে হেটে রুবার পিছু এসে গম্ভীর কন্ঠে সে ডেকে উঠে,

“মিস রুবা?”

To be continued….