আমায় একটু ভালবেসো পর্ব-০৯

0
267

#আমায়_একটু_ভালবেসো
#জান্নাতুল_ফোরদৌস_কেয়া

(৯)

অর্ণার ফুফুদের বাড়ির শহরের প্রায় শেষ প্রান্তে৷বাড়িটা চমৎকার ৷এখান থেকে পাহাড়েরর সারিগুলো দেখা যায় পাহাড়ের কোল ঘেঁষে বেড়ে ওঠছে চা’পাতা গাছ৷বিকেলের সূর্যাস্ত৷ সবককিছু মন কেড়ে নেয়৷অর্ণা গুনগুণ করে গান ধরলো৷ তখনই মারিয়া বেগম সেখানে এলো৷
,কি করছিস অর্ণা ?
,তেমন কিছু না ফুপি ৷একটু হাটাহাঁটি করছি৷ কি সুন্দর জায়গা৷ মন প্রান জুড়িয়ে যায়।
,তোর ভালো লাগছে এখানে?
,হুম ‘খুব ভালো লাগছে৷ আচ্ছা ফুপি ,ছোটবাবা কি চলে গেছে?
,হ্যা। অনিল তো দুপুরের খাবার খেয়েই চলে গেছে।
,,দেখেছ!আমাকে একবার ডাকলো ও না। এত অভিমান।
,আরে তা না। তুই ঘুমিয়ে ছিলি তাই ডাকেনি।
,ওহ আচ্ছা। এই কথা। আচ্ছা ফুপি, যে ছেলেটার এ ক্সি ডেন্ট হয়েছে। তাকে কি তুমি চেন?
,হ্যা চিনবো না কেন! ওর বাবা এখানকার চেয়ারম্যান। আবার অনেক বড় ব্যবসায়ী। সবাই তাকে এক নামে চিনে।
,তুমি কি একটা জিনিস লক্ষ করেছো ফুপি?
,কি জিনিস?
,ছেলেটার সব আত্মীয় স্বজন এসেছে তার অসুস্থতার কথা শুনে। কিন্তু তার মা আসেনি?এমনটা কেন হলো?
মারিয়া বেগম দীর্ঘশ্বাস ফেলল। আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল,
,ছেলেটার মতো কপাল পো ড়া আর একটাও নেই রে মা। ওর হাসপাতালে জন্ম হয়। সাতদিন পর যখন রিলিজ নিয়ে বাড়িতে আসছিল। তখন দূর্ঘটনায় ওর মা আর নানু মা রা যায়। তার ভাগ্য ভালো ছিল। তাই সে বেঁচে ফিরেছে।
কথাটা শোনা পর তাহমিদের জন্য অর্ণার ভিষণ খা রা প লাগলো। মা ছাড়া পৃথিবীটা কেমন হবে, ভাবতেই অর্ণা গা শিউরে ওঠে।

কেটে গেল কিছুদিন। এখানে অর্ণার বেশ ভালোই লাগে। সারাদিন মারিয়া বেগমের সাথে টুকিটাকি কাজ করে দিন যায়। মা-বাবার সাথে প্রতিদিন ভিডিও কলে কথা হয়। অর্ণাকে হাসি খুশি দেখে, তাদের ও ভালো লাগে। মনে,মনে ভাবে, থাক মেয়েটা তো খুশিতে আছে এটায় অনেক। অর্ণার কলেজ থেকে টি,সি এনে এখানে ভর্তি হয়েছে। আজ কলেজের প্রথম দিন। সকাল নয়টা বাজে। অর্ণা কলেজের ইউনিফর্ম পরে নিচে নামলো।
,ও তুই রেডি। দাঁড়া আমি তৈরি হয়ে আসছি। তুই খেয়ে নে।
,তুমি কোথায় যাবে ফুপি?
,ওমা! আজ তোর কলেজের প্রথম দিন। আর আমি দিয়ে আসবো না। এটা কোনো কথা।তুই কি রাস্তাঘাট কিছু চিনিস নাকি যে একা,একা যাবি?
,একা,একা কই?ড্রাইবার তো আছে তাই না!
,না তবুও আজ আমি তোকে দিয়ে আসবো।
,আচ্ছা ঠিক আছে।

কলেজের সামনে এসে গাড়ি থামতেই। অর্ণা আর মারিয়া বেগম নেমে পড়লো। মারিয়া বেগম অর্ণাকে নিয়ে প্রিন্সিপাল রুমে গেল। সমস্ত ডকুমেন্টস জমা দিয়ে। ক্লাস রুমের দিকে হাঁটা ধরলো। অর্ণা মারিয়া বেগমের থেকে বিদায় নিয়ে। ক্লাসে চলে গেল।
ফাঁকা দেখে একটা বেঞ্চে বসলো অর্ণা। একে, একে ফাঁকা ক্লাসরুমে ছাত্র ছাত্রী দিয়ে পরিপূর্ণ হলো।
পর,পর তিনটি ঘন্টা করে। অর্ণা বাইরে বের হলো।করিডোর ধরে হেঁটে সোজা পুকুর পারে চলে এলো। এ জায়গাটায় তেমন লোকজন নেই। কিছু কপোত-কপোতী একে অন্যের হাত ধরে বসে গল্প করছে। তার থেকে কিছু দূরে কয়েকটা ছেলে মেয়ে মিলে গিটারে গান ধরেছে। অর্ণা একপাশে বসে পড়লো। পুকুরের টলটলে পানি। শীতল হাওয়া। প্রান জুড়িয়ে যায়।

,কেমন আছেন ভাবি?
কারো ডাকে চমকে উঠে অর্ণা। ঘাড় ঘুরিয়ে নজর দিতেই ছেলেটা ফিক করে হেসে উঠে।
,কে আপনি? আর আমাকে ভাবি ডাকছেন কেন?
,আমাকে আপনি চিনবেন না ভাবি। নিন এটা রাখুন। ভাই পাঠিয়েছে।
বলেই ছেলেটা অর্ণার হাতে একটা বক্স দিয়ে চলে গেল।অর্ণা পেছন থেকে অনেক ডাকলো তবে ছেলেটা শুনলো না।
অর্না দ্বিধায় পড়ে গেল। সে এখানে একদম নতুন। তবে কে পাঠালো এই বক্স। হঠাৎই অর্ণা মনে হলো। কেউ হয়তো তার সাথে প্রাংক করেছে। নিশ্চয় এটার ভিতর, প্লাস্টিকের সাপ,বা তেলাপোকা আছে। যখনই অর্ণা এসব দেখে লাফিয়ে উঠবে। তখন সামনে এসে মজা নিবে। অর্ণা মুচকি হেসে উঠে দাঁড়ালো। ক্লাস শেষ। এখন বাড়িতে যাওয়ায় যায়। যে এসব করেছে। সে অনেক বড় একটা ডোজ খাবে।

কলেজ থেকে বের হয়ে। অর্ণা একটা রিকশা নিয়ে সোজা বাড়িতে গেল। রুমে ঢুকে ফ্রেশ হতো গেল। তার মধ্যে মারিয়া বেগম অর্ণার রুমে এলো। ঘরটা অগোছালো দেখে, তিনি সব পরিষ্কার করে দিলেন। অর্ণা ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখলো। মারিয়া বেগম সব কিছু পরিষ্কার করে ফেলেছে। সে কপট রাগ দেখিয়ে বলল,
,ফুপি তোমাকে কে বলেছে আমার ঘর গুছাতে। আমি বুঝি করতে পারি না। আসলে কলেজ থেকে এসে খুব ক্লান্ত লাগছিল। তাই আগে গোসল দিয়েছি।
,বেশ করেছিস! আর আমি বুঝি তোর কাজে সাহায্য করতে পারি না। তুই ও তো আমার কত কাজ করে দিস। আমি কি কিছু বলি?
,আচ্ছা ঠিক আছে। এখন নিচে চল। প্রচুর খিদে পেয়েছে। খাবার খাব।
,হ্যা চল।
সারা বিকেল ব্যস্ত তার সাথে কাটলো। অর্ণা ভুলেই গেল সেই বক্সের কথা। রাতে যখন ঘুমুতে গেল। তখন মনে পড়লো। সাথে, সাথে উঠে লাইট জ্বালালো।
অর্ণা ভ য়ে,ভ য়ে বক্সটা খুলল। খুলেই অবাক হলো বেশ। সেখানে কোনো তেলাপোকা বা প্লাস্টিকের সাপ ও না। আছে ভাঁজ করা একটা কাগজের টুকরো। আর একটা চিঠি বাক্স।অর্ণা কাঁপা কাঁপা হাতে চিঠি টা তুলল।

চলবে,,,