আমার আদরিনী পর্ব-০৪

0
676

#আমার_আদরিনী
#আশুথিনী_হাওলাদার (ছদ্মনাম)
পর্ব-৪
__মাইয়াডা জীবন পুরা ছারখার কইরা দিলো।
দুঃখি কন্ঠে বলে ওঠে তিলাত।
শব্দ করে হাসে মেঘালয়। বেশ হয়েছে। না করেছিল সে তিলাত কে। বলেছিল, ওই মেয়ে ডেঞ্জারাস কিন্তু শুনেনি ক্রাশ খাইছে। খা এখন। মেঘালয়কে হাসতে দেখে বিরক্ত হয় তিলাত। যাকে বলে চরম বিরক্ত। তার ইচ্ছে করছে মেঘালয়ের চকচকে সুন্দর দাত গুলো তুলে তা দিয়ে ফুটবল খেলতে। পরক্ষনে মত পালটে তিলাত। ফুটবলত খেলা যায় না তার চেয়ে দাত খুলে মালা বানিয়ে ওর পাজি মেয়েকে গিফট করবে। কিছুদিন ধরে সোস্যাল মিডিয়ায় পরিচিত ট্রল একজন ব্যাক্তি নিজের দাত খুলে প্রেমিকাকে গিফট করেছে। তিলাত নিজের দাত নয় বন্ধুর দাত খুলে গিফট করবে।
তিলাত কে ড্যাবড্যাব করে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে কপাল কুচকায় মেঘালয়। বন্ধুটা আবার গে টে হয়ে গেল না তো বিরহে। কেমন চেয়ে আছে। নিজের দিকে তাকায় মেঘালয় শার্ট টেনে ভাল করে বসে। তিলাতের থেকে একটু দূরে সরে বসে। খ্যআক খ্যাক করে কেঁশে উঠে। বিরক্তিতে চোখহ মুখ কুচকে ফেলে তিলাত। রাগ নিয়ে কিছু বলতে নেয়। তাকে বলতে না দিয়ে মেঘালয় বলে,,
__গার্লফ্রেন্ডের প্যারায় তোর লিঙ্গ পরিবর্তন হইয়া গেলো নাকি। ওমন কইরা তাকাইয়া আমারে কি দেখছ।
‘হা” হয়ে যায় তিলাত। হোয়াট? লিঙ্গ পরিবর্তন? ফুসে ওঠে সে। উঠে গিয়ে এলোপাতাড়ি কয়কটা পাঞ্চ মারে মেঘালয়ের পিঠে। হো হো করে হেসে দেয় মেঘালয়। ফুটপাতে হাত পা ছড়িয়ে বসে তিলাত। রাগে ফুসতে থাকে। মেঘালয় হাসতে বলে,,
__দুই ভাইবোন এক। দু’জনই খালি ফোস ফোস করে।
চোখ গরম করে তাঁকায় তিলাত। চুপসে যায় মেঘালয়। হাসি থামিয়ে ঠোটে আংগুল দেয়। মুখ থেকে রাগী ভাব সরিয়ে দুঃখি ভাব আনে তিলাত। ফোস করে নিশ্বাস ছেড়ে দুঃখী স্বরে বলে,,
__মাইডার হাত থেকে বাঁচা আমায়। নাহলে আমার মাথা খারাপ হয়ে যাবে। আমি পাগল হয়ে যাবো। মাইনকা চিপায় পরছি। ওই মাইয়া বহুত ক্যাচালের মাইয়া।
সিরিয়াস হয় মেঘালয়। চেহারায় গম্ভীর ভাব আনে মেঘালয়। হাসে পেলেও হাসা যাবে না পাগলটার ক্ষ্যাপবে। পরে দেখা যাবে তার প্রেমে’ই সিনেমার শয়তান ভাইদের মতো দানব হয়ে দাড়ালো। নিজের সার্থে হলেও কিছু করতে হবে। গম্ভীর স্বরে বলে,,
__আমার উপর ছেড়ে দে আমি দেখে নেবো। কাল আমাকে সাথে করে নিয়ে যাবি।
বাঁকা হেসে বলে,,
__তারপর দেখবো কত ঝাঁঝ তোর রিনি বেবির।
বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় তারা। তিলাতের কাঁধে হাত দিয়ে বলে,,
__এখন বাড়ি চল। আন্টি তোকে ফোনে পাচ্ছিলনা তাই৷ আমায় কল করেছে। বাড়ি যেতে বলছে।
মৃদু হাসে তিলাত। মেঘালয়ের কাঁধে নিজের হাত দিয়ে। দু’জন গলাগলি বেঁধে বাড়ির পথে হাটে।

পুরনো ডায়েরি নিয়ে বেলকনিতে গিয়ে বসে তুলিকা। ডায়েরির পাতা গুলোতে কিছু সুন্দর মুহুর্তের ফটো। তবে সেটা তার নয়। তার স্বামী আর তার বড় বোন তিয়াসার। দু’জনকে বেশ মানিয়েছে। হিংসে হচ্ছে। আবার কষ্টও হচ্ছে। মাঝে মাঝে নিজেকে খুব অপরাধী মনে হয় তার। মনে হয় সে তাদের মাঝে চলে আসলো না তো। নিজের বোনের সুখের সংসারে ভাগ বসালো নাতো। নিজের বোনের জায়গা দখল করলো না তো? তাচ্ছিল্য হাসে। সংসারে ভাগ বসিয়েছে ঠিকি তবে ভালোবাসায়? ভালোবাসায় কই আদেও সে ভাগ বসাতে পেরেছে? ২০ বছরে সে কখনো সাদিদের মুখে তার জন্য হাসি দেখেনি। ভালোবাসার প্রকাশ দেখেনি। শুধু কর্তব্য পালন করে যেতে দেখেছে সে। সে তো সব ছেড়ে চলেই গিয়েছিল। কিন্ত্য ভাগ্য তাকে আবার এখানে নিয়ে এসেছে।
__আম্মু আম্মু
তিয়ায়ানার ডাকে ভাবনা থেকে বের হয় তুলিকা। ডায়েরিটা লুকিয়ে। চোখের কোনে জল মুছে মেয়ের ঘরে দিকে যায়। খাটে উবুত হয়ে ঝুলছে তিয়ানা। মেয়েকে এভাবে ঝুলতে দেখে হতভম্ব হয় তুলিকা। তরিঘরি করে টেনে তুলে বসিয়ে দেয়। গাল ফুলিয়ে বসে তিয়ানা। চুল একো মেলো হয়ে ছিটিয়ে আছে। মাথার চুল গুছিয়ে বেঁধে। কপাল কুচকে মেয়ে কে দেখে তুলিকা। মায়ের তুখোড় চাহনিতে ভাবগতি পালটায় না তিয়ানার। সে তার মতোই মুখ ফুলিয়ে আছে। এবার চিন্তা হয় তিয়ানার। জীন ভুতে ধরল না তো তার মেয়েকে। এই মেয়ের তো ঠিক নেই বন জঙ্গল সব জায়গাতেই তার পায়ের ধুলো আছে। শুকনো ঢোক গিলে তুলিকা। মেয়ের কাছে বসে গালে হাত দিয়ে আদুরে স্বরে প্রশ্ন করে,,
__এভাবে ঝুলছো কেন আম্মা? কি হইছে।
মায়ের এত মিষ্টি কথায় ভরকায় তিয়ানা। তার আম্মু এত মিষ্টি করে কথা বলছে। অবিশ্বাস্য! গাল ফুলিয়ে উত্তর দেয় তিয়ানা,
__আমার মনে হচ্ছে আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি আম্মু।
আঁতকে উঠে তুলিকা। পাগল হয়ে যাচ্ছে মানে কি। মেয়ের কথা শুনে কেঁদে দেয় তুলিকা। কাঁদতে কাঁদতে হেচকি তুলে ফেলে। তিয়ানা মায়ের হঠাৎ কান্নার মানে বুঝতে না পেরে আহমক হয়ে চেয়ে থাকে।
ভিতু কন্ঠে বলে তুলিকা,,
__আমাকে ওজহা ঢাকতে হবে। আমার মেয়েকে জ্বীন ভুতে ধরে ফেলল শেষে। এই এই কে ডুকেছিস আমার মেয়ের ভিতর ।। বের হয়ে আয় বলছি।
“হা” হয়ে যায় তিয়ানা। কে ঢুকবে তার ভিতর। সে যেখানে যাচ্ছে, যা ভাবছে শুধু সব জায়গায় মেঘালয় আর মেঘালয়। তার মনে হচ্ছে সে পাগল হয়ে যাচ্ছে। তাই সব খাননে মেঘালয়কে দেখতে পাচ্ছে। এই যে সে খাটের উপর ঝুলে ছিল তখনও সে নিছে ফ্লোরে মেঘালয়কে দেখতে পাচ্ছিলো। ফ্লোরে বসে কেমন তার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে ছিল। নির্লজ্জ মেঘালয়।

মুখ ফুলিয়ে বসার ঘরে কাউচে হাত-পা গুটিয়ে বসে আছে তিয়ানা। বড় চুল গুলো পিঠে আউলাজাউলা হয়ে ছড়িয়ে আছে। তার সোজাসুজি কাউচে মেঘালয় আর তিলাত কপাল কুচকে বসা। পাশে’উ তুলিকা জ্বীন ভুত বলতে বলতে মুখে ফ্যানা তুলে ফেলছে। মায়ের এই জ্বীন ভূত কাহিনীতে বিরক্ত তিয়ানা। কিন্তু মারের ভয়ে কিছু বলতে পারছে না। তুলিকার ঠিক নেই দেখা যাবে এই খারুচটা সামনের তার পিঠে ধুরিম করে কয়েক ঘা লাগয়ে দিলো। তখন তার প্রেস্টিজ পাঞ্চার হয়ে। রাস্তায় গড়াগড়ি খাবে। ফোস করে শ্বাস কাউচ থেকে উঠে দাঁড়ায় তিয়ানা। একবার সবাইকে দেখে নিজ ঘরে গিয়ে খিল আটকে দেয়। তুলিকা তা দেখে চেঁচিয়ে বআড়ি মাথায় করে। দরজার সাথে লেঘে ফ্লোরে বসে পরে তিয়ানা। মায়ের চেচামেচির শব্দ শোনা যাচ্ছে বাইরে থেকে। এতক্ষন মেঘালয়ের সামনে দম আটকে যাচ্ছিল তার। আর কিছুক্ষন থাকলে দম আটকে বেহুস হয়ে যেতো সে তখন তার আম্মু ভাবতো জ্বীন ভূতে তার মেয়েকে কব্জা করে ফেলছে। কি করে সে বোঝাবে,, জ্বীন ভূতে নয় তোমার আদরের মেঘালয় তোমার মেয়েকে কব্জা করে ফেলছে আম্মু। সব জায়গায় শুধু খারুচটাকে দেখছে। জ্বীন ভূতে না ধরলেও তোমার মেয়ে পাগল হয়ে যাবে আম্মু। ঠোঁট উল্টে ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে তিয়ানা। কেমন যেন বুকের ভিতর তোলপাড় করছে। লজ্জা লজ্জা লাগছে। এমন অনুভূতি সে চায় না তো। মন বোঝে না কেন। ওই খারুশটা তাকে গুলি করে মারবে। তার মাথায় চড়ে নাচবে।

চলবে?