আমার আদরিনী পর্ব-০৯

0
663

#আমার_আদরিনী
#আশুথিনী_হাওলাদার (ছদ্মনাম)
পর্ব-৯
তিয়ানা বাড়িতে একা। বাড়িতে কেউ নেই, তুলিকা নিজের অফিসে সাদিদ, তিলাতও তাই। তিয়ানার ভার্সিটি বন্ধ বাইরেও তেমন কাজ নেই তাই আজকের দিনটা বাড়তে কাটাবে সে। আজকে বাড়িতে শুধু তার একার রাজত্ব । টিভিতে টাইটানিক মুভি চলছে যেটা তার বেশ কয়েক বার দেখা। তবুও টাইটানিকের প্রতি মোহ কাটেনি তার। সোফায় আরাম করে বসে হাতে চিপসের প্যাকেট নিয়ে টিভিতে সম্পুর্ন মনোযোগ তার। কিচ্ছুক্ষন পর’ই রোজ আর জ্যাকের কিসিং সিন টানটান মুহূর্ত। তখন’ই দরজা খোলার শব্দে উঠে দাঁড়ায় তিয়ানা। এমন সময় কে আসলো? ঘুড়ে মেইন ডোরে তাঁকিয়ে আঁতকে উঠে সে। ধপ করে কাউচে বসে পরে।
বাঁকা হাসে মেঘালয়। ব্লেজারে লেগে থাকা ময়লা বা হাত দিয়ে ঝাড়তে ঝাড়তে এটিটিউড নিয়ে কাউচের সামনে তিয়ানার সোজাসুজি এসে দাঁড়ায়। তিয়ানা ভিতু চোখে তাকে দেখছে। কাউচের দু’পাশে হাত রেখে তিয়ানার দিকে কিছুটা ঝুঁকে মেঘালয়। কাটকাট চোখে তার চোখে চোখ রাখে । মেঘালয়ের চোখ দু’টো ভূতের ফিল্মের দেখা দানবের মতো লাল টকটকে হয়ে আছে। সাথে ইয়া লম্বা নাকটা লাল টকটকে হয়ে আছে । নাকের দিকে চোখ পরতেই শুকনো ঢোক গিলে তিয়ানা। মেঘালয়ের নাকের উপর একটা তিল আছে। তিলের কারনে বেশি আকর্ষণীয় লাগছে তাকে। মেঘালয়ের লাল হয়ে যাওয়া নাকের প্রতি ভিশন দূর্বলতা তিয়ানার। ইচ্ছে করে কামড় বসিয়ে দিতে। কখনো সুযোগ আসলে ইচ্ছেটা পূরুন করবে সে শুকনো ঢোক গিলে তিয়ানা। বলল,,
__“মেঘ ভাইয়া আপনি?”
ধপ করে রাগ উঠে যায় মেঘালয়ের। ‘ভাই’? দেখা যাবে এই মেয়ে বিয়ের রাতে বাসর ঘরে উত্তেজিত মুহুর্তেও বলবে, মেঘ ভাইয়া আপনি কি করছেন?
ত্যাড়া ভাবে উত্তর দেয় মেঘালয়,,
__‘কেন? অন্য কাউকে আশা করছিলি। ”
আমতা আমতা করে বলল তিয়ানা,,
__‘আপঅনি ঘরে ঢুকলেন কি করে?
__‘ম্যাজিক”
মেঘালয়ের উত্তর পছন্দ হয় না তিয়ানার। ফোস করে নিশ্বাস ছেড়ে ভয়ে ভয়ে বলে,
__‘ভাইয়া একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ান। এভাবে ঝুঁকেএ
কথা শেষ করতে দেয়না মেঘালয়। আগের থেকেও আরও কিছুটা ঝুঁকে। ঝাঁঝ নিয়ে বলে,
__‘দূরে যাবো না। যদি আমার ইচ্ছে হয়, তো এখন তোর কোলে বসব আমি। ”
মেঘালয়ের কোলে বসার কথা শুনে হাত পা গুটিয়ে নেয় তিয়ানা। উপরে উপরে হাত পা গুটালেও মনে মনে বলল,,
__‘ বসুন না মেঘ ভাইয়া। আপনি আমার কোলেই বসুন। যখন ইচ্ছা বসুন। আমার কোল আপনার জন্য শুধু আপনার জন্য’ই সর্বক্ষণ উন্মুক্ত।’
তবে মুখে এ কথা বলার সাহস নেই তার। অবশ্য সাহস নেই বললে ভুল হবে। সাহস আছে কিন্তু বলে মেঘালয়ের শক্ত হাতের দামাং মার্কা চর খেতে চায় না সে। তাই নিজ ইচ্ছেকে দমিয়ে রাখে সে। মুখে বলল,,
__‘আপনি কেন এসেছেন ভাইয়া? বাড়িতে কেউ নেই।
__‘তোর বাড়তে কেউ থাকলে আসা যাবে নাহলে আসা যাবে না। সেটা কোন আইনে লেখা আছে? শুনি!
__‘আমি তা বলিনি আপনি তো ভাইয়া বা আব্বু আম্মু বাসায় থাকলে আসেন তাই বলছি। ‘
তিয়ানার থেকে সরে এসে তার পাশে কাউচে বসে মেঘালয়। মেঘালয় বসাতে তিয়ানা তার থেকে কিছুটা সরে বসে। আড়চোখে দেখে বলল,
__‘তুই তো আছিস। অন্যরা না থাকলেও হবে। আমার দরকার তোকে।
কিছুটা অবক হয় তিয়ানা। তার কাছে মেঘ ভাইয়ের কাজ। অবাক করা বিষয় বটে। বলল,
__‘আমার কাছে কাজ। কি কাজ?
আচমকা তিয়ানার হাতের বাহু ধরে তাকে নিজের কিছুটা কাছে টেনে বলল,,
__‘তোর কাছেই তো কাজ। হঠাৎ কোন ভূতে ধরছে তোকে? হু? আমার সম্মুখে আসিস না কেন? তোকে কি আমি খেয়ে ফেলবো?
‘এই ভয়টাই পাচ্ছিলো তিয়ানা। তার সামনে না যাওয়ার কারন জানতে চেপে ধরবে তাকে। আর তাই হলো। এখন কি করবে সে? বলল,,
__আমার ইচ্ছে হইছে তাই আসি না।
তবে মনে মনে বলল,,
__আপনার সম্মুখে আসলে আমার পেট গুরুম গুরুম করে মেঘ ভাইয়া। বুকের ভিতর কেমন ধপাস ধপাস করে। আপনি যদি শুনে ফেলেন। আপনি যদি জেনে যান আমার এই পেট গুরুম গুরুম বুকের ভিতর ধপাস ধপাস শব্দের কারন । তখন কি হবে? সে ভয়েই তো আপনার সম্মুখে যাই না আমি।,
‘তিয়ানার কথা খুব একটা বিশ্বাস হয় না মেঘালয়ের। তুখড় দৃষ্টিতে চেয়ে আছে তিয়ানার মুখের দিকে। তিয়ানার খুব অসস্থি হয় মেঘালয়ের এমন দৃষ্টিতে। লজ্জা লাগে তার।
টাইটানিকে কিসিং সিন চালু হয়। টিভির দিকে তাকাতেই মেঘালয়ের চোখ বড় বড় হয়ে যায়। তিয়ানা ভয়ে লজ্জায় চোখ খিচে বন্ধ করে ফেলে। হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলে সে। মেঘালয় তিয়ানার হাত থেকে টিভির রিমোট এক প্রকার ছিনিয়ে নিয়ে টিভি বন্ধ করে। সস্তির নিশ্বাস ফেলে বলে,,
__‘ছি! তিনু, তুই আজকাল এসব এডাল্ট মুভিও দেখিস।
লজ্জায় কান্না চলে আসে তিয়ানার। এখানে এডাল্টের কি দেখলো মেঘ ভাইয়া। টাইটানিক ফিল্মে একটু আক্টু ওসব ছাড়া আর কি এডাল্ট আছে? এমন ভাবে বলছে যেন সে এ জীবনে টাইটানিক দেখেনি। রাগে কান্না চলে আসে তিয়ানার। এবং সে মেঘলয়ের সামনে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কেঁদে দেয়। তিয়ানার হঠাৎ কান্নায় হতভম্ব হয়ে যায় মেঘালয়। তবে বেশিক্ষন তা আমলে নেয় না। আদরে বাদর হওয়া তিয়ানার কিছুটা অভ্যাস বলা চলে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে যখন তখন কান্নায় ভেসে যাওয়া। তাই কিছু হয়নি এমন ভান ধরে কাউচ থেকে উঠে তিয়ানার ঘরে যায় মেঘালয়। এদিকে, তিয়ানা ইতোমধ্যে মনে মনে শ’খানেক গালি দিয়ে ফেলছে মেঘালয় নামক বদটাকে। তার জাত শঅত্রুকে। মাঝে মধ্যে খুব আফসোস হয় তার। এমন একটা জল্লাদের প্রেমে কেন সে পরলো। জল্লাদটা তো কখনো ভুলেও তার ভালবাসা বুঝবে না। তার চেয়ে পাশের বাসার লিটনদার প্রেমে পরতো সে। লিটদার সাথে প্রেম করতো সে, তাও ভালো ছিল। লিটনদা কত কত রোমান্টিক চিঠি লিখে তার জন্য। চিঠি লিখে কখনো নৌকা, কখনো প্লেন বানিয়ে তার বারান্দায় ছুরে মারে। কি রোমান্টিক লিটন দা সাথে হ্যান্ডুও। অবশ্য জল্লাদ মেঘ ভাইয়ার দেখে কম। তাতে কি সুন্দর তো। তবে লিটন দা হিন্দু যদি মুসলিম হতো তাহলে তাকে একটা চান্স দেয়া যেতো। বেচারা এখন তার বিরহে রোমান্টিকতা ছেড়ে বিরহের চিঠি লেখা শুরু করেছে। ভাবে তিয়ানা, এই বদটা তো জীবনে চিঠি কেন? রোমান্টিক কথা বলতে পারবে কিনা তা নিয়েও সন্দেহ তিয়ানার। কিনতু এসব ভেবে কি হবে? মন দিয়ে ফেলেছে শয়তান টাকে। ফোস করে শ্বাস ফেলে তিয়ানা।
টনক নড়ে তিয়ানার। মেঘালয় তার ঘরে গেছে। সর্বনাস! আজ গেল, সব গেল। দৌড়ে নিজের ঘরে যায় তিয়ানা। তবে শেষ রক্ষা হয় না। লিটনদার দেয়া প্লেন চিঠি মেঘালয়ের হাতে বিচরণ করছে এখন। বেশ মনযোগ সহকারে গম্ভীর ভাবে প্লেন টাকে উলটে পালটে দেখছে মেঘালয়। তিয়ানার দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে দাত দিয়ে নখ খুটে যাচ্ছে আর মনে মনে দোয়া করছে যাই হয়ে যাক মেঘ ভাইয়া যেন চিঠিটা না পরে। কিন্তু তার সব দোয়াতে এক বালতি ঠান্ডা কনকনে পানি ঢেলে মেঘালয় খুব যত্ন নিয়ে প্লেনটা খুলে। হালকা শব্দ করে চিঠিটা পড়া শুরু করলো।

‘ও তিনু ও তিনু ‘
‘তুমি কেন বোঝো না ‘
‘তোমার বিরহে মরছি তিনু’
‘তুমি কেন দেখছো না’
‘কেন ভালবাসছো না’
‘ও তিনু রে ও তিনু রে ‘
‘কেন বোঝা না’
‘আমার তিনুরে’

কিছুক্ষন আগে প্রসংশা করা লিটনদা কে খুব বিচ্ছিরি একটা গালি দেয় তিয়ানা। এমন বিচ্ছিরি একটা চিঠি লেখার জন্য। এবং সেটা মেঘালয়ের হাতে’ই পরতে হলো। নিজের কপাল চাপড়াতে ইচ্ছে করছে তার।

চলবে?