আমার আসক্তি যে তুমি Part-53

0
3421

#আমার_আসক্তি_যে_তুমি
#Part_53
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat
.
?
ডাইরিটা হাতে নিয়ে আমি প্রথম পৃষ্ঠা খুলে পড়তে শুরু করি। ডাইরির প্রথম পাতায় খুব সুন্দর করে “প্রিয়তমা” লিখা। সাথে আছে হাল্কা কারুকাজ। লিখাটি এমন ভাবে লিখা যে, যেকেউই দেখলে মুগ্ধ না হয়ে পারবে না।
আমি এইবার দ্বিতীয় পৃষ্ঠা উল্টাই। মূলত এই পৃষ্ঠা থেকেই ডাইরির লিখাটি শুরু। ডাইরির পাতায় সরু কালো কালি দিয়ে লিখা। আর লেখাগুলো বেশ ছিপছাপ।
আমি এইবার খুব মনোযোগ সহকারে এইটা পড়তে থাকি।
.
?
” দিনটি ছিল সোমবার। ঘড়িতে তখন ৯ টা বেজে ৩৯ মিনিট। মাত্রই একটা অপারেশন শেষ করে হাতের ময়লা গ্লাবস গুলো খুলতে খুলতে বের হচ্ছি। আমি আমার কেবিনের দিকে অগ্রসর হচ্ছিলাম। পরনে আমার এখনো পিপি। চোখে সেফ গ্লাস পড়া। মুখে মাস্ক আর মাথায় হেয়ার কেপ পড়া। চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে৷ শরীরটাও কেমন মেচ মেচ করছে।
মাঝ পথে আসতেই কাউরো কান্নার আওয়াজ আমার কানে এসে ভাসে। সাথে সাথে আমার বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো৷ কেন উঠলো জানি না। ডাক্তার হওয়ার সুবাদে এমন কান্নার আওয়াজ অহরত আমার কানে আসে কিন্তু কখনো এমনটা হয় নি। আমি এইবার ভ্রুকুটি করে আশে পাশে সেই কান্নার আওয়াজের মালিকে খুঁজতে থাকি।
তখনই আমার নজর যায় আমার থেকে প্রায় ৬-৭ হাত দূরে বসে থাকা একটি মেয়ের দিকে। সে মুখে হাত দিয়ে কিছুটা শব্দ করেই কাঁদছে। আমি এইবার তার দিকে অগ্রসর হই। মেয়েটি এখনো কেঁদেই চলেছে।
আমি সামনে গিয়ে দাড়াই। তারপর তাকে সুবিনয় কণ্ঠে জিজ্ঞেস করি, ” কি হয়েছে আপনার কান্না করছেন কেনো? ”
আমার কণ্ঠ সেই মেয়েটি কানে পৌঁছাতেই সে মাথা তুলে আমার দিকে তাকায়। তাকে দেখার সাথে সাথে আমি থমকে যাই। কান্নার ফলে তার চোখ দুটো লাল হয়ে উঠেছে। হলদে ফর্সা গাল দুটো একদম ফুলে লাল হয়ে গিয়েছে। কান্না মিশ্রিত চোখ দুটো চিকচিক করছে।
আমি তার দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছি। সে তখন আমার দিকে তাকিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,
— আআন্টি! ওওওইযে ওওওখানে। পাশে ইশারা করে।
আমি তখন পাশে তাকিয়ে দেখি একজন বয়স্ক মহিলা শুয়ে আছে। তাকে কিছু নার্স অবজারভ করছে। আমি একবার সেই মেয়েটির দিকে তাকাই। সে অসহায় ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আর তার চোখ অনাবরত পানি গড়িয়েই চলেছে। হুট করেই আবার বুকটা মোচড় দিয়ে উঠে। কেন যেন তার কান্না আমার সহ্য হচ্ছিল না। তার কান্না যেন আমার বুকে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছিল। মনে হচ্ছিল যত যাই হোক এই মেয়েটিকে কান্না করতে দিতে দেওয়া চলবে না।
আমি এইবার দ্রুত সেই মহিলার কাছে যাই এবং তার চেক-আপ করতে শুরু করি৷ অবস্থা বেশ খারাপ লাগছিল তাই দ্রুত আমি তার ইকো ও ইসিজি করতে পাঠিয়ে দেই৷ আর ওই মেয়েটির দিকে আড়চোখে তাকাই। মেয়েটি এখনো ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করছে। কেন যেন তার কান্না আমার বুকে সুচের মত বিধছিল। কেন এমন হচ্ছিল জানি না।
রিপোর্ট হাতে আসতেই যা বুঝলাম মহিলাটি মাইনোর হার্ট স্টোক করেছে। আমি তাকে দ্রুত অবজারভেশনে নিয়ে নেই। তখন একটি নার্সকে সেই মেয়েটির কাছে পাঠাই সকল ইনফরমেশন কালেক্ট করতে। ”
?
.
এইবার আমি দ্বিতীয় পৃষ্ঠা পড়তে শুরু করি।
.
?
“ইনফরমেশন ফর্ম ফিলাপের পর যখন আমি তা চেক করি তখন চোখের সামনে মেয়েটির নাম ভেসে উঠে। মেয়েটির নাম ছিল “রিয়ানা রহমান”।
নামটি পড়ার সাথে সাথে মুখ দিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে বেরিয়ে আসে “রিয়ুপাখি”। নামটি উচ্চারণ করার সাথে সাথে আমি চমকে উঠি। আমি কেন এই নামটি উচ্চারণ করলাম জানি না। কেন তাকে এই নামে সম্মোধন করলান তাও জানি না। আমি দ্রুত ফর্মটা পাশে রেখে চুপচাপ মাথায় হাত রেখে চোখ বন্ধ করে বসে পড়ি। চোখ বন্ধ করতেই মেয়েটি সেই কান্না মিশ্রিত মুখটি চোখের সামনে ভেসে উঠে।
সাথে সাথে আমি চোখ খুলে ফেলি। নিজের কর্মকাণ্ডের প্রতি বেশ অবাকই হচ্ছিলাম। কি হচ্ছে আমার সাথে কিছু বুঝতে পারছিলাম না। ”
?
.
এতোটুকু পড়ে দম নেই আমি। চোখের সামনে আমার সেই ৫ বছর আগের স্মৃতিগুলো ভেসে উঠে। তখন আমি মেডিক্যালে ভর্তি হয়েছিলাম প্রায় ৩-৪ মাস হয়েছে। একদিন সন্ধ্যায় আমি পড়ছিলাম তখন রান্না ঘরে আমেনা আন্টি কাজ করছিল। এমন সময় তার বুকে ব্যথা উঠে আর সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়। রান্না ঘরে কিছু পড়ার আওয়াজ পেয়ে আমি দ্রুত সেইখানে যাই আর দেখি আমেনা আন্টি নিচে পড়ে আছে। আমি এইবার ঘাবড়িয়ে গিয়ে দ্রুত তার কাছে যাই আর তাকে ডাকতে থাকি। তার কোন সারাশব্দ না পেয়ে দারায়োন চাচাকে ডেকে আনি৷
তিনি আন্টিকে নিচে নিয়ে আসতে সাহায্য করে আর সিএনজি ঠিক করে দেয়।
হসপিটালে আসতেই তাকে রুমে নেওয়া হয়। কোন ডাক্তার নাকি তখন ফ্রি ছিল না। আন্টিকে যে কেউ ট্রিটমেন্ট করবে তার সময় কাউরো ছিল না। তাই আমি তখন বাইরে বসে কান্না করছিলাম ঠিক তখনই একজন ডাক্তার এসে আমাকে জিজ্ঞেস করে হয়েছে। তার মানে সেই ডাক্তার রিয়ান ছিল।
এইবার টুপ করে আমার চোখ বেয়ে দুই ফোটা নোনা জল গড়িয়ে পড়ে। যদি সেইদিন রিয়ান না থাকতো হয়তো বা আমেনা আন্টি সেইদিনই মারা যেতেন।
আমি এইবার কান্না মুছে দ্রুত অন্য পৃষ্ঠা পড়তে শুরু করি।
.
.
.
#চলবে