আমার আসক্তি যে তুমি Part-5+6

0
4519

#আমার_আসক্তি_যে_তুমি
#Part_5_And_6
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat
.
?
ঘুমের ঘোরে কাটিয়ে কিছুটা সজাগ হয়াতে বুঝতে পারছি কেউ আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তার হাত ক্রমশ আমার দিকে এগিয়ে আসছে। প্রায় খানিকটা এসেই পড়েছে তখন আমি এক চিৎকার দিয়ে লাফিয়ে উঠি। তারাতাড়ি করে টেবিল ল্যাপটি জ্বালিয়ে নেই আর চারদিক বুলিয়ে দেখতে থাকি।
না কেউ নেই। কোন খারাপ স্বপ্ন দেখিছি হয়তো। তাও নিজের মনকে বুঝানোর জন্য রুমের এলিডি লাইট জ্বালিয়ে সব জায়গা ভালো মত চেক করে নিলাম। না কেউ নেই।
কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে আছে। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। বুকের ভিতরটা বার বার ধুকধুক করেই চলেছে। এক গ্লাস পানি খেয়ে কোন মতে নিজেকে শান্ত করি।
নিজেকে সংযত রাখার চেষ্টা করতে থাকি। হঠাৎ নাকে এক পারফিউমের ঘ্রাণ আসে। ঘ্রাণ যেন আমার চিরচেনা। আমি এর আগেও এই ঘ্রাণটা আমার রুমে পেয়েছি কিন্তু আমি তহ এই ঘ্রানের পারফিউম ইউজ করি না। তাহলে এই ঘ্রাণ আসছে কোথা থেকে৷ এইসব ভাবতে ভাবতে খাটে গিয়ে বসি। তখননি নজর পরে জানালার দিকে। জানালা খোলা। তারমানে বাইরে থেকে ঘ্রাণটা আসছে।
তখনই নজর যায় সেই শুকিয়ে যাওয়া ফুলগুলোর দিকে। ফুলগুলো সামনে নিয়ে এসে বসি। পরক্ষণেই মনের মধ্যেই এক আলদা নাড়া দিয়ে উঠে। কিন্তু তাও কোথাও এক ফাঁকা বিরাজমান হয়ে আছেই।


??


” ইয়ে ইস্ক মেরি কাবিলিয়াত নেহি মেরি জানুনিয়াত হ্যয়❤
ইস ইস্কমে হাতসে গুজার জানে কি খোয়াইস হ্যয়?
ইয়ে ইস্ক আব তু মুজসে ভি কারেগি?
মেরি দুনিয়া আব তেরি হগি? ”
.
.
— ” ভালবাসার প্রথম ধাপ পেরিয়ে এসেছো তুমি রিয়ু পাখি। আর তুমি সে ধাপে পুরোপুরি সফল। একদিন ফুল আর চিঠি পাঠাইনি বলে তোমার মনের এই হাল। ছটফট করছো আমার খোঁজ জানতে।
তার মানে তোমার মনে আমি জায়গায় করতে সক্ষম। কিন্তু চিন্তা করো না খুব জলদি এই তোমার মন, হৃদয় সবকিছু জুরে থাকবো আমি!! তখন বুকের বা পাশে থাকবে শুধু আমার নাম। ”
এই বলে রিয়ানার ছবির দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে থাকে সে।
( হ্যাঁ যা ভাবছেন ঠিক তাই। সেই চিঠি পেরক এই সাইকোটাই)

??

রাত ৩.৩০ বাজে,
বনানীর হাউজিং কোলানীতে কোন এক গাড়ির Security alarm এর আওয়াজে পুরো কোলানী সজাগ হয়ে যায়। অনেকে ইতি মধ্যে নিচে নেমে আসে ঘটনা বুঝার জন্য। আসার পর তারা যা দেখলো তাতে কেউ মোটেও প্রস্তুত ছিল না।
কেউ ড. রিয়ানের গাড়ির নাজেহাল অবস্থা করে রেখেছে। পুরো গাড়িতে টেন্ট পড়া আর কাঁদা দিয়ে মাখা মাখি। তার উপর কেমন যেন ইঁদুর মরা গন্ধ আসছে।
এরই মধ্যে ড. রিয়ান নিচে নেমে আসে আর নিজের গাড়ির এই অবস্থা দেখে কিছুটা ভরকে যায়। নিজের গাড়ির এত বাজে অবস্থা দেখে মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। সে জোরে জোরে চিৎকার করে ওয়াচ ম্যানকে ডাক দিতে থাকে।
.
রিয়ানঃ ওয়াচ ম্যান!!!!! ওয়াচ ম্যান!!!!!
.
রিয়ানের এমন হুংকার ভরা আওয়াজে সকলেই কেঁপে উঠে। এইদিকে ওয়াচ ম্যান পাহাদারি করতে করতে একসময় চোখ খানিকটা লেগেই এসেছিল। রিয়ানের এমন আওয়াজে সে ধরফরিয়ে উঠে যার ফল স্বরুপ সে চেয়ার থেকে উল্টিয়ে নিচে পড়ে যায়। এরই মধ্যে আবার রিয়ানের ডাক কানে আসে সে কোন মতে নিজেকে সামলিয়ে দৌড় দেয় রিয়ানের কাছে যায়।

ওয়াচম্যানঃ জজজ্বী স্যার ববলেন।।
.
রিয়ানঃ আমার গাড়ির এই অবস্থা কে করলো??
.
ওয়াচম্যানঃ আমি জানি না স্যার। গাড়ির দিকে তাকিয়ে।
.
রিয়ানঃ জানেন না মানে কি??? আপনাকে এইখানে কেন রাখা হয়েছে বুঝি না। রাত বেরাতে কেউ আমার গাড়ির অবস্থা এমন করে গেল আর আপনি তেরও পেলেন না বাহ।
.
ওয়াচম্যানঃ আব আমি তহ গেটের পাশেই ছিলাম। কাউকে..
.
রিয়ানঃ জাস্ট শার্ট আপ। কোন সাফাই আমি শুনতে চাই না। যান গিয়ে সিসিটিভি ফুটেজ নিয়ে আসুন।
.
ওয়াচম্যানঃ আব স্যার ইয়ে মানে.. ১ সপ্তাহ ধরে সিসিটিভিটা নষ্ট।
.
রিয়ানঃ হোয়াট দ্যা.. এইখানে কোন ডিসিপ্লিন আছেও নাকি না। জাস্ট রিডিকুলাস। যান এই গাড়ি আমার চোখের সামনে থেকে নিয়ে যান। আমি এক মুহূর্তের জন্যও গাড়িটা দেখতে চাই না।
.
ওয়াচম্যানঃ কোথায় নিব স্যার??
.
রিয়ানঃ গো টু হেল ওইথ ইট। যেখানে ইচ্ছা সেখানে নিয়ে যান চাইলে নিজের জন্য নিয়ে যান বাট আমার সামনে থেকে নিয়ে যান। এই গাড়ি দেখতেও এখন আমার রুচিতে বাধছে।
.
এই বলে রিয়ান গটগট করে চলে যায়।


??


— ” হাহা!!! এই গাড়ির তহ এই অবস্থা হওয়ার কথাই ছিল। যে গাড়ি আমার রিয়ু পাখির উপর কাঁদা ছুঁড়েছে সে গাড়িকে কি আমি এত সহজে ছেড়ে দিতে পারি?? উহু একদম না।
গাড়িচালককে আমার রিয়ুপাখি শাস্তি দিলেও গাড়িকে দেয় নি। গাড়িচালক তার শাস্তি পেলেও গাড়িটা পাই নি। তাই তহ আমাকেই গাড়িটার অবস্থা এমন করতে হলো।
আমি জানি তোমায় হাজার মানুষের সাথে কথা বলতে হয়, উঠতে হয়, বসতে হয়। তোমার পেশা যেই এইরকম। তাই তহ সবাইকে তোমার কাছে আসার পরও ছেড়ে দেই। তুমি চিন্তা করো না যারা তোমার বন্ধু সলুভ তাদের আমি কিছু করবো না কিন্তু যে তোমার দিকে বাজে দৃষ্টিতে তাকাবে, তোমাকে ছুঁতে চাবে, তোমাকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিতে চাইবে তার মৃত্যু যে নিশ্চিত।
কিন্তু এইসবের পরেও একটা কথা তোমায় সবসময় মনে রাখতে হবে আর তা হলো “তুমি আমার”। “আমার আসক্তি যে তুমি”।


এই বলে রিয়ানার ছবিতে ছুঁড়ি দিয়ে স্লাইড করতে করতে গান ধরে,,

” ❤ হামে তুমসে পেয়ার কিতনা
ইয়ে হাম নেহি জানতে
মাগার জি ভি নেহি সাকতে
তুমহারে বিনা
হামে তুমসে পেয়ার কিতনা ❤ ”


???


আজ “খান হসপিটালে” আমার প্রথম দিন। সকাল থেকে তারাহুড়া করেই চলেছি আমি। আমার যে সবকিছু পার্ফেক্ট চাই। এইটা আমার লাইফের অনেক বড় চান্স তাই এইটা ফুললি কাজে লাগাতে হবে আমার।
তারউপর ড. রিয়ান স্যারের মত একজন পারদর্শী কার্ডিওলজিস্টের আন্ডারে কাজ করার সুযোগ অনেক বড় বেপার। শুনেছি তিনি নাকি বাংলাদেশের বেস্ট কার্ডিওলজিস্টের মধ্যে একজন। হওয়ারই কথা বয়স তহ মনে হয় ভালোই হয়েছে, আর বয়সের সাথে বৃদ্ধিও পেয়েছে তার অভিজ্ঞতা। আমিও হয়তো এমন একজন হতে পারবো কিন্তু তাতে মেবি আগে আমার বুড়িখালাম্মা হতে হবে।
এইসব ভেবেই ফিক হেসে উঠি আমি। তারপর বেড়িয়ে পড়ি। দরজার আশেপাশে একবার ভালো মত উঁকি ঝুঁকি মারি। ফুল দাতা থেকে কিছু এসেছে নাকি। কিন্তু না আসে নি৷
মনটা খারাপ করেই বেড়িয়ে পড়ি ” খান হসপিটালের” উদ্দেশ্যে।


???


বনানীর ২৭ নাম্বার রোডে দাড়িয়ে আছি। হুট করেই সিএনজিটা খারাপ হয়ে যায় যার জন্য মাঝ রাস্তায় আমায় নেমে পড়তে হয়।
এখন কোন গাড়ি এই দেখতাসি না। এমনকি রিকশাও নেই। কেমনটা লাগে??
লেট হচ্ছি বলে হাঁটা শুরু করলাম। সামনেই দেখলাম pathao এর গাড়ি দাড়িয়ে আছে। আমার খুশি আর দেখে কে! আমি আর দেরি না করে খপ করে গিয়ে বসে পড়ি সেই গাড়িতে।

রিয়ানাঃ ড্রাইভার আঙ্কেল পেসেঞ্জার ইজ রেডি টু ফ্লাই থুরি গো। তহ গাড়ি স্টার্ট করেন?
.
আর কিছু বলার আগেই কানে এক ইংরেজি বেসুরা কাকের কর্কশ কণ্ঠে কানে আসলো।
.
— ” হোয়াট দ্যা হেল!!! ”
.
কথাটা কে বললো তা দেখার জন্য পাশে ঘুরতেই দেখি কালকের ওই কাঁদা ওয়ালা ছেলেটা।? প্রথমে রাগ হলেও নিজেকে সংযত রাখার চেষ্টা করতে লাগলাম। কেন না হয়তো তিনি আগেই Pathao বুক করে ফেলেছেন এখন কিছু বললে আমারই লস। কিন্তু তাও মেয়ে মানুষের রাগ কি আর এত তারাতারি কমে। একটু খোঁচা না মেরে কথা বললে কি হয়?।
.
রিয়ানাঃ আরেহ দূর্গন্ধ বিরধী আপনি!!
.
সাদাতঃ হোয়াট ডু ইউ মিন বাই দূর্গন্ধ বিরধী। ?
.
রিয়ানাঃ না মানে কালকে যে পরিমানে দূর্গন্ধ নিয়ে নাক ছিটকালেন তা দেখে মনে হলো আপনি দুর্গন্ধী বিরধী টাইপ মানুষ। দাঁত কেলিয়ে।
.
সাদাতঃ হোয়াট দ্যা.. বেয়াদব মেয়ে এইখানে কি করছো?? নামো গাড়ি থেকে বলছি নামো!!
.
রিয়ানাঃ হুহ! নামুম না। সরকারি পাব্লিক পেয়েছেন নাকি?? যে যা বলবেন তাই করবো? আর এমনেও pathao জনগনের কল্যানের জন্য তাই এখন এইটি আমার কল্যাণ করিতে চলিছে দয়া করিয়া মাঝে খাম্বা হয়ে দাড়িয়ে থাকিবেন না। এর চেয়ে শুদ্ধ ভাবে রিকুয়েষ্ট আমি করতে পারবো না?
.
সাদাতঃ What nonsense is this!! গাড়ি আমি বুক করেছি তাই এইটি আমার কল্যাণ করবে। ধুর কি বলি এইসব! মানে আমি গাড়ি আমায় নিয়ে যাবে।
.
রিয়ানাঃ তাতে কি?? নিজে যাবেন তহ যান কিন্তু একটু দয়ালু হয়ে আমায় লিফট দেন।
.
সাদাতঃ কোন খুশিতে?
.
রিয়ানাঃ আপনার বিয়ে লেগেছে সেই খুশিতে? বাই দ্যা ওয়ে চাইলে দাওয়াত দিতে পারেন আমি মাইন্ড করবো না ☺
.
সাদাতঃ ইউউউ।
.
ব্যাস লেগে গেল ঝগড়া। তখন গাড়ির ড্রাইভার বলে উঠে।
.
ড্রাইভারঃ আরেহ মিয়া দুইজনে চুপ করেন তহ!! দুইজনেই চলেন টাকা হাফ হাফ করে দিয়ে দিয়েন। এমনেও আমার আরেকটা টিপ উঠাইতে হইবো দেরি হইতাসে আমার। যদি আবার ঝগড়া করেন তাহলে এইহানেই নামাইয়া দিমু।
.
তার কথায় দুইজনেই চুপ হলাম। আমি টাইম দেখতে লাগলাম। ইসস!! দেরি হয়ে যাচ্ছে। ছেলেটার দিকে একবার তাকালাম। সেও টাইম দেখছে। বুঝতে পারছি তারও তারা আছে তহ সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বলি।
.
রিয়ানাঃ ও ভাইয়া.
.
সাদাতঃ আমাকে বলছেন? হতভম্ব হয়ে।
.
রিয়ানাঃ হু। দেখুন আমায় লিফট দেন না। আমি তহ আপনার ছোট বোনের মত তাই না? আমায় একটু হেল্প করলে কি হয়? এমনেই লেট হয়ে যাচ্ছি প্লিজ একটু হেল্প করুন না।? অর্ধেক ভাড়া দিয়ে দিব তহ।
.
সাদাতঃ পারলে তহ আমি আপনার মত বেয়াদপ মেয়েকে নিজের দূরসম্পর্কের খাল্লামাও না করি!! বোন তহ দূরে থাক। বিরবির করে।
.
রিয়ানাঃ কিছু কি বললেন ভাইয়া?
.
সাদাতঃ না। ভাড়া দিতে হবে না আপনি এমনেই চলুন।
.
রিয়ানাঃ ইয়াহু। থেংকিউ ভাইয়া। ( ভাইয়া না কচু!! খারুস একটা। মনে মনে)
.
তখন ড্রাইভার বলে।
.
ড্রাইভারঃ কই যাইবেন কোন এলা?
.
দুইজন একসাথেই বলে উঠি “খান হসপিটাল”। বলার দুইজন দুইজনের মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। কিন্তু ঠিক কিছু বললাম না। ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দিল।
হঠাৎ আমার মাথায় প্রশ্ন আসলো এই খারুস বেটার গাড়ি কই?? প্রশ্ন আসতে দেরি মাথায় মুখে বলতে নয়।
.
রিয়ানাঃ আপনার গাড়ি কই?? বেঁচে দিসেন নাকি??
.
সাদাতঃ নষ্ট হয়ে গেছে তাই ফেলে দিসি। বিরক্তিকর একটা ভাব নিয়ে।
.
রিয়ানাঃ নষ্ট বলে ফেলে দিবেন?? টিস্যু পাইসেন নি? জানেন একটা গাড়ি কিনতে কত টাকা লাগে। ওই টাকা দিয়ে হয়তো হাজার মানুষের এক বেলার ভাতও খেতে পারতো। কিন্তু আপনি তহ সেই টাকা দিয়ে গাড়ি কিনসেন! কিনসেন তহ কিনসেন আবার ফালাইয়া ও দিসেন। কত অপচয়ী আপনি। আপনার নামে অপচয়ী মামলা করা উচিৎ।
আমি আর কিছু বলতে যাব তার আগেই ওই ছেলেটা দুইহাত সামনে এনে রিকুয়েষ্ট করে বলে।
.
সাদাতঃ প্লিজ স্টোপ যান!! আমার কানের পর্দা ফেটে গেল। অনেক বড় ভুল করেছি আপনাকে এই কথা বলে তা আমি বুঝেছি আর বুঝাতে হবে না। ?
.
রিয়ানাঃ হুহ। বলে চুপ করে থাকি।


অতঃপর হসপিটালে এসে পড়ি। আমি তারাতারি ব্যাগ থেকে টাকা বের করে তার হাতে ধরিয়ে বেড়িয়ে আসি। সে হয়তো কিছু বলতে চেয়েছিল কিন্তু তাতে আমার কি।। আমি দৌড়ে চলে যাই হসপিটালে।
এইদিকে,
.
সাদাতঃ Such a Childish person. মাথার সব নার্ভ নাড়িয়ে দিসে এই মেয়েটা। Uff irritating.


???


হসপিটালের ভিতরে গিয়ে আমি আগে রিংকি আর আরিশাকে খুঁজি। একসময় পেয়েও যাই। ওদের কাছে গিয়ে বসে আমি চারদিক তাকিয়ে দেখি সব মেয়েরা রংসং লাগিয়ে করে দাড়িয়ে আছে। মুখে বস্তা বস্তা মেকাপ। তা দেখে আমার কিছুটা সন্দেহ হয়। আমি আরিশাকে জিজ্ঞাসা করি।
.
রিয়ানাঃ ওই এই মাইয়ারা শাকচুন্নির মত সেজে এসেছে কেন রে??
.
আরিশাঃ ড. রিয়ানকে ইম্প্রেস করার জন্য।
.
রিয়ানাঃ বুইড়া মানুষকে ইম্প্রেস করার জন্য এত কিছু?? এরা কি স্যারের সাথে পরকিয়া করবো নি??
.
রিংকিঃ কি যাতা বলছিস তুই?? বুইড়া বেটা,পরকিয়া মানে?? কার কথা বলছিস??
.
রিয়ানাঃ আর কার ড. রিয়ানের।
.
আরিশাঃ তোরে কে বলসে যে ড. রিয়ান বুইড়া বেটা??
.
রিয়ানাঃ কেউ না।
.
রিংকিঃ দ্যান তুই জানলি কেমনে সে বুইড়া?
.
রিয়ানাঃ আরেহ আমি শুনেছি তিনি নাকি অনেক নাম করা একজন কার্ডিওলজিস্ট। তিনি এই পর্যন্ত যতটি সার্জারী করেছে তার ৯০% এই সাকসেস ফুল ছিল। তার মানে তহ তার experience অনেক হইবো আর তার সাথে বয়সও। কেন না বুইড়া ডাক্তারগোই সার্জারী এত পার্ফেক্ট হয়। তহ সেই হিসাবে সে বুড়োই?
.
এই শুনার সাথে সাথে রিংকি আর আরিশা মাথায় হাত দিয়ে বসে। এই সব থিংকিং রিয়ানাকে দিয়েই সম্ভব। ঠিক তখনই পিছন থেকে কেউ বলে উঠে।
.
— ” Hello everyone. আপনাদের সকলকে আমাদের এই হসপিটালে স্বাগতম। তহ আগে পরিচয়টা দিতে ফেলি।
আমি হচ্ছি ড. সিয়াম মাহমুদ আর এনি হচ্ছে ড. সাদাত খান রিয়ান। আপনারা এর আন্ডারেই কাজ করবেন। আগেই বলে দিচ্ছি আমাদের রুলস অনেক strict. তাই কোন টাইপের ফাঁকি বাজি চলবে না।
তা এখন আপনাদের সকলের ফরম চেক করছি তারপর একেকজনকে ডাকা হবে আর একেক জনকে একেক এসাইনমেন্ট দেওয়া হবে। সেগুলাই আজ আপনারা এইখানে বসে করবেন। এসাইনমেন্ট শেষে আমাদের কাছে একটা তা জমা দিয়ে বাসায় চলে যাবেন। মাইন্ড ইট কেউ এসাইনমেন্ট শেষ না করে কোথাও যেতে পারবেন না। কিছুক্ষণের মধ্যেই একেক করে সবাইকে ডাকা হবে। ” বলে তারা রুমে চলে যান।

সবাই ড. রিয়ানকে দেখে খুশি হলেও এসাইনমেন্টের কথা শুনে চুপসে যায়। প্রথম দিনেই কাজ কার ভালো লাগবে।
কিন্তু আমার সমস্যা তহ অন্য জায়গায়।কেন না এই ড. রিয়ানই হচ্ছে ওই গাড়িওয়ালা খারুস বেটা।
.
রিয়ানাঃ এইটা কেমনে সম্ভব??
.
রিংকিঃ এইটাই সাইন্স মাই ডিয়ার।
.
রিয়ানাঃ মানে??
.
আরিশাঃ আরেহ গাধী নিউজ যখন শুনেই ছিলি তাইলে ভালো মত শুনতি। ড. রিয়ান ইজ দ্যা মোস্ট ইয়োংগেস্ট পার্ফেক্ট কার্ডিওলজিস্ট ইন বাংলাদেশ। তিনি ৩০ বছর বয়সেই অপেন হার্ট সার্জারী করে যা সাকসেসফুলও হয়। সেই থেকে তার নাম ছড়িয়ে পড়ে যার ফল স্বরুপ তিনি এত নাম খেতি অর্জন করে।
.
রিয়ানাঃ আগে বললি না কেন?
.
রিংকিঃ আমরা কি জানতাম নাকি তুই এমন খাটাইশা মার্কা ভাবনা নিয়ে বসে আছোস।
.
আরিশাঃ কাহিনি কি তুই এত ভয় পাইতাসোস কেন?
.
রিয়ানাঃ এইটা ওই ছেলে!!
তারপর ওদের কালকের ঘটনা থেকে শুরু করে সব খুলে বলি। সব শুনে দুইজন মাথা হাত দিয়ে বসে আর বলে।
” আব তেরা কেয়া হোগা রিয়ানু বেবি। আব তু গেয়া ”


??


ড. রিয়ানের সামনে বসে আছি। চোখে মুখে ভয় স্পষ্ট আমার। ড. রিয়ান আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আমার ফরমটা হাতে নিলেন। তারপর বলতে শুরু করলেন।
.
রিয়ানঃ মিস রিয়ানা রাইট!
.
রিয়ানাঃ জ্বী।
.
রিয়ানঃ Much bright student but you have no manners.
.
আমি দাঁতে দাঁত চেপে কথাটা সহ্য করে বসে রইলাম। সে আবার বললো।
.
রিয়ানঃ সে যাই হোক, হিয়ার ইজ ইউর এসাইনমেন্ট টপিক। এক মুচকি হাসি হেসে।
.
আমি চুপচাপ তা হাতে নিয়ে দেখতে লাগি। টপিকটা দেখেই আমার মাথা চক্কর দিয়ে উঠে।
“Heart Failure and Pulmonary Hypertension”
.
আমার কাছে কার্ডিওলজিতে এইটাই সবচেয়ে কঠিন লাগে আর সবচেয়ে ভয়ংকর। আর এই খারুস বেটা আমায় এইটা দিল।
এই এসাইনমেন্ট করতে করতে আমার এই জনম পার হয়ে যাবে তাও এসাইনমেন্ট শেষ হবে না।
আমি কিছু বলতে যাব তার আগেই বলে সে বলে উঠে।

রিয়ানঃ You may can leave now. Mr. Himel come in.
.
আমি আর কিছু বলতে পারলাম না। বাদ্ধ হয়ে বেড়িয়ে আসলাম। জানি বদমাইশ বেটা আমাকে ইচ্ছা করে এত কঠিন জিনিস দিসে। আমি মনের মধ্যে একগাদা দুঃখ আর কষ্ট নিয়ে এসাইনমেন্ট করা শুরু করি।


???


রাত ৯ টা বাজে।
সবাই সবার এসাইনমেন্ট শেষ করে আর আগেই চলে গেছে শুধু আমিই বাকি। আরেকটু রয়ে গেছে। এতটুকু করলেই আমার কাজ শেষ।
কিন্তু যতই ভাবছি এইতো আরেকটু হলেই ইতি ততই হাতের স্পীড কমে আসছে। হাতটা যেন চলছে না। অবশেষে সব বাধা পেরিয়ে আমার এসাইনমেন্ট শেষ হয়।
আমি এক শান্তিময় শ্বাস নিয়ে এগিয়ে যাই ড. রিয়ানের কেবিনে। কিন্তু বেটা খারুস কেবিনে নাই। আজকে নাকি হসপিটালে সকল ডাক্তারদের সাথে তার বোর্ড মিটিং আছে তাই সে সেখানেই গিয়েছে। শুনেই মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল। আজকেই মিটিংটা পড়তে হলো?? একে তহ এমন কামলার মত খাটাইসে আবার এখন উঠাও। অসহ্য!! ঘোর অসহ্য!!

হসপিটালের এক সাইডে বসে আছি। উদ্দেশ্য ড. রিয়ানকে এসাইনমেন্টটা জমা দেওয়া। এই সময় না বড্ড বাজে জিনিস। যখন বলি ধীর গতে চল তখন চোখের পলকে ছুটে চলে। আর যখন বলি দ্রুত চল তখন একদম কচ্ছপের ন্যায় চলে।
অপেক্ষা করেই চলেছি এমন সময় একজন ছিমছাম টাইপ লোক হন্তদন্ত হয়ে হসপিটালে ঢুকে। ডাক্তার আর সিস্টারকে খুঁজতে থাকে। কিন্তু কাউকে পাচ্ছে না।
বেশির ভাগ সিস্টারের ডিউটি শেষ বলে তারা চলে গেছে আর যারা আছে তারা একেক কাজে ব্যস্ত। আর বাকি ডাক্তাররা মিটিংয়ে।
লোকটি বেশ চিন্তিত। পড়নের শার্টের এক কোনে হাল্কা রক্ত। তা দেখে আমি তার কাছে যাই আর আগ বাড়িয়ে বলি।
.
রিয়ানাঃ আপনি কি কিছু খুঁজছেন??
.
লোকটিঃ আব হ্যাঁ! আমার বস কার এক্সিডেন্ট করেছে যার ফল স্বরুপ অনেক ব্যথাও পেয়েছে। হাত আর মাথা থেকে ব্লিডিং হচ্ছে কিন্তু সে হসপিটালে আসতে নারাজ। তাই আমি এইখানে ডাক্তার বা নার্সকে নিতে এসেছি বাইরেই গাড়ি দাড় করানো। কিন্তু কেউ যেতে যাচ্ছে না প্লাস কোন ডাক্তারও নেই।
.
এই বলে কিছুক্ষণ চুপ থেকে আমার দিকে ভালো মত তাকালো। গায়ে আমার সাদা এপরোন। তিনি হয়তো কিছুটা আন্তাজ করতে পেরে আমায় বলে।
.
–” আপনি তহ মেবি মেডিক্যালেরই স্টুডেন্ট। আপনি প্লিজ আমায় একটু হেল্প করবেন। প্লিজ মানা করবেন না”

আমি চারদিক চোখ বুলিয়ে দেখি তেমন কেউ নেই। আর ডাক্তারদের মিটিংও কখন শেষ হয় কে জানে। তাই সব চিন্তা করে আমি বললাম।
.
রিয়ানাঃ আচ্ছা ঠিক আছে। আপনি একটু দাড়া আমি ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে আসছি।
.
— ” জ্বী ঠিক আছে। ”


??

[ নিচের কথা গুলো পড়ে নিবেন]

গাড়িতে এসে দেখি আমার বয়সী একছেলে সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। হাত আর মাথার এইদিক দিয়ে রক্ত ঝড়ছে। আমি দিয়ে তার পাশে বসে আমার কাজ শুরু করি। হ্যক্সিসোল লাগানোর সাথে সাথে সে লাফিয়ে উঠে। বুঝতে পারি তার জ্বলছে। সে কিছু বলতে যাবে তার আগেই পিছন থেকে সেই লোকটি বলে উঠে।

— ” বস, চিন্তার বিষয় নেই তিনি আপনার ট্রিটমেন্ট করতেই এসেছে। ”

সে কিছু না বলে চুপ করে বসে থাকে। আমি আবার হ্যক্সিসোল লাগাতেই ব্যথায় কিছুটা কুঁড়িয়ে উঠে। আমি হেসে বলি।

— ” ছেলে হয় এতটুকু ব্যথা সহ্য হচ্ছে না। তা কেউ যদি আপনায় মেরে ভূত বানিয়ে দিয়ে যায় তাহলে তহ সত্যি আপনি ভূত হয়ে আল্লাহ এর প্রিয় হয়ে যাবেন।” বলে হেসে উঠি।

সে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে বলে।

–” জ্বী না। মোটেও তেমন কিছু না। আমি তহ এমনেই কেঁপে উঠেছিলাম ”


— ” থাক থাক মিথ্যা বলতে হবে না।
বুঝি বুঝি। জ্বালা করছে কিন্তু বলবেন না। ”

— ” আপনি যা বুঝছেন তা নয়। আমার মোটে জ্বালা করছে না।”

— ” তাই নাকি!” বলে একটু হ্যক্সিসোল ঘাতে চেঁপে ধরলাম। সে আবার ব্যথায় কুকড়িয়ে উঠে।

–” হলো তহ মিথ্যাটা ফাঁস হয়ে। আর এমনেও হ্যক্সিসোলে এমন জ্বালা করবেই। এইটি ঘা এর জন্য উপকারি হলেও জ্বালা করে অনেক বেশি। ”

— “হু”


কথা বলতে বলতেই আমি মাথায় আর হাত বেন্ডেজ করে দেই। তারপর বলি।
–” নেন হয়ে গেছে ”

— ” থেংকি ইউ, তা আপনি কি নার্স নাকি ডাক্তার? ”

— ” আপাতত কোনটাই না আমি একজন স্টুডেন্ট। এই হসপিটালে ইন্টারসিপ করতে এসেছি ”

— ” অহহ!! তা আপনার নাম? ”

— “রিয়ানা আপনার??”

— ” আবির আরহাম”


#চলবে