আমার একটাই যে তুই পর্ব-০৮

0
5448

#আমার একটাই যে তুই❤️
#সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি
#পর্ব-৮

ভাইয়ার মাথায় তেল দিচ্ছি। চুল গুলো খুব নরম,তুলতুলে পলকের মতো। তুলার মতো লাগচ্ছে! কি দেন তিনি চুলে? তার চুলে হাত বুলাতে ভাললাগচ্ছে। তিনিও হয়তো আরাম পাচ্ছেন। তাই চোখ বুজে আছেন।

ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় আমাদের প্রতিছবি ভাসছে। কি সুন্দর লাগচ্ছে!ফোন হাতে ছবি তুলে নিলাম আয়নার প্রতিছবিটি স্মৃতি হিসেবে।ভয়ংকর সুন্দর লাগচ্ছে।খুব ইন্টারেস্টিং বিষয়, ইউসুফ ভাইয়ার চোখে পাপড়ি মেয়েদের মত ঘন আর লম্বা। মাঝে মাঝে মনেই হয় উনি সত্যি মেয়ে হলে! প্রতিটা ছেলের হার্ট বিট মিস হতো।

চুলে বিলি কেঁটে তেল দিচ্ছিলাম। কত ঘন তার চুল। আমার থেকেও ঘন হবে। তেল দেয়ার মাঝে লক্ষ করলাম, ইউসুফ ভাইয়ার বাম পাশের কঁপালের চুলের নিচে একটি লাল তিল! কি আশ্চর্য! আমার সেইম একি জায়গায় তিল আছে। কিন্তু তা হচ্ছে কালো। কুঁচ কুঁচে কালো। ইউসুফ ভাইয়ার তিলটা ছুঁয়ে দিলাম আলত হাতে। কতটা মিল আমাদের!

ইউসুফ ভাইয়ার ভারী নিঃশ্বাস পরছে। মাথাটা আমার কোলে হেলে আছে। বুঝা যাচ্ছে তিনি ঘুমিয়ে গেছেন।ঘুমন্ত চেহারা দেখে মায়া মায়া লাগচ্ছে। কোনো বইতে পড়েছিলাম। কখনো ঘুমন্ত মানুষর মুখমণ্ডল দেখতে নেই। তাহলে নাকি তার মায়ায় পড়ে যায় সবাই!!সত্যি আমি মায়া পড়ে গেছি তার। তার মুখ মন্ডলের মায়ায়।

ইউসুফ ভাইকে এভাবে দেখে মনের মাঝে এক অপ্রত্যাশিত আশা জেগে উঠছে। মন চাইছে তার গালে চুমু খেতে! নিজেকে বেহায়া মনে হচ্ছে। কিন্তু এই বেহায়াপনা করতে ইচ্ছে করছে খুব করে! তিনি তো ঘুমিয়েই আছেন! বুঝবে কি?মনের সাথে দু মনা করতে করতে টুস করে চুমু খেয়েই বসলাম।এতে নড়ে উঠলেন তিনি!

আমি স্বাভাবিক ভাবে বসে মাথায় হাত বুলাতে লাগলাম।তখনি তিনি আমার দিকে ঘুরে আমার কোমরে দুহাত দিয়ে চেপে, আমার পেটে মুখ গুঁজে দিলেন। তার এহেন কাজে আমার সারা শরীর ঝাঁকুনি দিয়ে কেঁপে উঠলো। আমি বিস্ফোরিত চোখে তার দিকে তাকিয়ে। কিন্তু তিনি ঘুম। এটা যে ঘুমের মাঝে করেছেন বুঝতে পারছি। কিন্তু আমার মনে মাঝে যে তোলপাড় শুরু। নিজেকে স্বাভাবিক করার অনেক চেষ্টা করছি। শরীর ঝিমঝিম করছে।

ইউসুফ ভাইয়ার মুখের খোঁচা খোঁচা দাড়ি লাগচ্ছে আমার পেটে বরাবর। কেমন জানি কাতুকুতু লাগচ্ছে। তার উপরও ভাললাগচ্ছে খুব বেশী।আমি তার মাথায় আবার হাত বুলাতে শুরু করলাম। আর মুচকি হেসে গাইতে লাগলাম গুন গুন করে,,

“ঘুমাও তুমি ঘুমাও গো জান,
ঘুমাও আমার কোলে…..
ভালবাসার নাও ভাসাবো,
ভালবাসি বলে….

তোমার চুলে হাত বুলাবো,
পূর্ণ চাঁদের তলে …..
কৃষ্ণচূড়া মুখে তোমার,
জোসনা পড়ুক কোলে…..”

___________________

অনেক দিন ছুটির পর কলেজে আসলাম ক্লাস করতে। অামি ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজে পড়ি। ক্লাস চলছে। ক্লাস করাছেন সাইদুল স্যার। তার ক্লাস করতে মজা লাগে। তিনি প্রতিটি ক্লাসে তিনি উদাহরণ সরূপ ব্যবহার করেন ভালবাসাকে।শুন্তে ভাল লাগে। কখন ক্লাস শেষ হয় বোঝা যায় না। বেল পড়ে গেছে। ক্লাস শেষ। যে যার মতো চলে যাচ্ছে। আবার কেউ কেউ ঘুড়ে বেরাচ্ছে। আমিও বের হলাম।

কলেজের মেইন গেঠ পার হতেই চোখ ছানাবড়া। একি আমি কাকে দেখছি???এতো! ইউসুফ ভাই! বাট উনি এখানে কেন? তাকে আজ সুন্দর লাগচ্ছে। অসম্ভব সুন্দর! তার পড়নে আজ হোয়াইট শার্ট, ব্ল্যাক প্যান্ট, হাতে ঘড়ি, পায়ে ব্ল্যাক জুতা। চুল গুলো সুন্দর করে সেট করা। চোখে সানগ্লাস ।

আমি তার দিকে এগিয়ে যেতে লাগলাম। তিনি আমাকে দেখে হাসলেন মিষ্টি করে! কি সুন্দর তার হাসি!!আমিও মুচকি হেসে বললাম,,

–“ভাইয়া আপনি এখানে! কেনঁ?”

আমার কথায়। তার মুখে হাসি যেন উবে গেল। গম্ভীর কন্ঠে বলল,,

–” গাড়িতে উঠ!”

–” ভাইয়া আমার এখনো ক্লাস বাকি আছে!”

তিনি এবার তার সানগ্লাস খুলে রাগান্বিত কন্ঠে বলে উঠেন,,

–” আমার মুখের উপর আর একটা কথা বললে ধরে চটকানা দিব বেদ্দপ! যা গাড়িতে উঠ!”

আমি সাথে সাথে উঠে বসলাম। তিনিও ড্রাইভিং সিটে বসে পরলেন।আমি তাকে জিগ্যেস করলাম,,

–” কই যাচ্ছি ভাইয়া!”

উনি এবার চোখ রাঙ্গিয়ে বলে উঠেন,,

–” আমি কি তোর মায়ের পেটের ভাই হই না, যে ভাই ভাই করিস! বেদ্দপ!”

আমি তার কথায় চুপসে গেলাম। মিনমিন গলায় বললাম,,

–“ভাইকে ভাই ডাকবো নাতো কি ডাকবো!!”

তখনি তিনি বলে উঠেন,,

–“ঘুমের মাঝে চুমু খেতে পারিস, তার জন্য গান গাইতে পারিস?তা কি ভাই হিসেবে করেছিস নাকি?”

তার এমন কথায় চমকে গেলাম। আমি বিস্ফোরিত চোখে তাকালাম তার দিক। তিনি নির্বিকার! কি সুন্দর গাড়ি চালাচ্ছেন। আর আমি লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করেছে!তাকে জিগ্যেস করতে ইচ্ছে করছে,,

–“ইউসুফ ভাই! আপনি না ঘুমিয়ে ছিলেন? নাকি ঘুমের নাটক??”

তখনি পাশ থেকে তিনি বলে উঠলেন,,

–” আমার ঘুম খুব পাতলা আমি সব বুঝতে পারি। হালকা শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায়! যাই হোক বলতেই হয় তুই কাল সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছিস!”

বলে বাঁকা হাসলেন ইউসুফ ভাই।তার এই হাসিতে আমি লজ্জায় এই গাড়ি থেকেই লাফ দিতে ইচ্ছে করছে! মরে যেতে ইচ্ছে করছে! আমি কি ভাবছি সব তিনি ধরতে পারছেন। এখন আরো বেশভ লজ্জা লাগচ্ছে!

গাড়ি এসে থামলো বৃষ্টি বিলাসে। গাড়ি থামতেই। আমপ দিলাম দৌঁড়। পিছনে না ফিরে বুঝতে পারছি ইউসুফ ভাই হাসচ্ছেন।

বাসার সবাই হলে বসে। আমি বাসার ভিতরে ঢুকতেই ছোট মামি ভ্রু কুচকে জিগ্যেস করলেন,,

–” এত তাড়াতাড়ি চলে এলি যে? তোর… ০১ঃ০০ টায় ছুটি?”

আমি মামির কথায় কি বলবো বুঝতে পারছিনা। আমতাআমতা করে বললাম,,

–“আসলে, আমি হয়েছে কি…”

তখনি পিছন থেকে ইউসুফ ভাইয়া এসে সোফায় বসতে বসতে বললেন,,

–” আমি নিয়ে এসেছি!”

–“কেন?”মামী ভ্রু কুচকে বলল।”

–” কথা ছিল! তোমাদের সাথে!”

ছোট মামা বললেন,,

–” কি কথা?”

–” চিন্তা করছি আগামী সপ্তাহ সহ পরিবার সাজেক যাবো ঘুড়তে!”

সাজেকের কথা শুনে হইহুল্লোর শুরু বাসার ছোটদের।কিন্তু ছোট মামি সন্দিহান দৃষ্টিতে চেয়ে আমার দিক।আমি হাতট মুচড়াচ্ছি।

তখনি ছোট মামী বললেন,,

–” তা তুই পরেও বলতে পাড়তি! কুহুকে এখন আনেই বলতে হবে এমন তো কোনো কথা এটা ছিল না।”

তখনি পাশ থেকে বলে উঠে লিয়া,,

–” খালা ইউসুফ পরিবারের সবার কথা বলছেন তাহলে কুহু কেন? কুহু তো তোমাদের পরিবারের কেউ না! তাহলে ইউসুফ ওকে এখানে টানচ্ছে কেন!”

লিয়ার এমন কথায় উপস্থিত সকলেই অবাক হয়ে চেয়ে।ইউসুফ ভাইয়া লিয়ার দিক চোখ লাল করে চেয়ে আর আমি মাথা নত করে চোখের জল ফেলছি। সত্যি তো আমি কে? আমি তো তাদের বাসায় শুধু আশ্রিতা। শুধুই আশ্রিতা।

চলবে,

ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন!