আমার একটাই যে তুই ২ পর্ব-১০

0
2869

#আমার_একটাই_যে_তুই❤️
#সিজন-২
#সুরাইয়া_সাত্তার_ঊর্মি

১০
প্রতিটি বেল্টের বাড়ির কড়াঘাতে ভেঙে চুরে যাচ্ছে কুহুর মন।

কিছুক্ষণ আগের কথা ভাবতেই বুকের ভিতর এখনো ধরাস ধরাস করছে। নিঝুম কুহুর চাচাতো ভাই। ছোট থেকেই ও কুহুকে পছন্দ করত। অতি মাত্রায় ড্রাগ অ্যাডিকটেট হওয়াতে এর আগেও কুহুর গায়ে স্পর্শ করেছিলো এই নিঝুম। ঘরের কথা বাহিরে যাবে ভেবেই নিঝুমের বাবা-মা কুহুর কাছে মাফ চেয়ে ছেলেকে পাঠিয়ে দেয় কুয়েত। আজ দু বছর পর সেই রাক্ষসকে নিজের সাথে লেপ্টে থাকতে দেখে কুহুর অন্তরাত্মা কেঁপে উঠে। বৃষ্টি প্রোকোপ তখন ঝড়ের তান্ডব লীলায় ধরণ করেছে। চারপাশে কেউ নেই। কুহু চিৎকার যেন ঝড়ের তেজের সাথে হারিয়ে যাচ্ছে। কুহু ছুটতে চাইলেই ঘুরিয়ে এক ধাক্কায় নিচে ফেলে দেয়। কুহুর পা মচকে যায়। ” আহ্ ” শব্দ করে উঠে। কিন্তু নিঝুম সে হিংস্র পশুর নেয়। কুহু উপর চড়ে বসে। কুহুর ভিজে যাওয়া শরীরের প্রতিটি ভাজে তার চোখ বিচরণ করে। ঘাড় কাত করে অস্বাভাবিক মানুষের মতো। বিশ্রী ভাবে হেসে বলে,,

—” কি গো কুহু রানী? দিন দিন সুন্দর হইতাসে দেহখানী তোমার। মাথা ধড়াইয়া দেওয়ার মত!”

কুহু কান্না করছে। নিঝুমের ভাড় নিতে পাড়ছে না আকুতি-মিনতু করে বলল,,
—” ছোট ভাই ছেড়ে দাও। আমি তোমার বোন হই। আল্লাহর দোহাই লাগে!”

নিঝুম খিল খিল করে হেসে উঠে। কুহু যেন মজার কথা বলেছে। সেই হাসি বহাল রেখে কুহু গাল স্পর্শ করে বলল,,

—” সবাইরে যদি বইন ভাবি মাজা করমু কার লগে কো?”

কুহু এবার নিঝুমকে নিজের উপর থেকে নামানোর জন্য ধাক্কা দিতে থাকে। লাভ হয় না। কুহু দুহাত এক হাতে ভাজ করে আরেক হাতে শাড়ি বুকের উপর থেকে সরিয়ে ফেলে গলায় মুখ ডুবায়। কুহু জোড়ে জোড়ে চিৎকার করতে থাকে। কণ্ঠনালি এবার ছিঁড়ে যাওয়ার অতিক্রম। কিন্তু কেউ আসচ্ছে না। কুহুর ভয় হচ্ছে খুব ভয়। মন চাইছে ছুটে পালাতে নয়তো নিঝুমকে খুন করতে। সে পাড়ছে না। কিছুই পাড়ছেনা ব্যর্থ। তাহলে এর শেষ কি হবে? কোনো নর্দমায় পড়ে থাকা লাশ? নাকি সমাজের কাছে ধর্ষণ উপাধি পেয়ে ঢুকে ঢুকে মরবে? আচ্ছা ইউসুফ কি এ অবস্থা মেনে নিবে তাকে? ভালবাসবে আগের মতো? ইউসুফ কথা মনে পড়তেই ভাবলো, ইউসুফ কই? তার বাবুইপাখি, তার বাবুইবউকে আজ কেউ কুঁড়ে কুড়ে খাচ্ছে আর সে নেই? কেন নেই? কেন আসচ্ছে না? কুহু এবার আকাশের দিকে তাকালো। বিড়বিড় করে বলল,,

—” আল্লাহ হয় আমার জান এ মুহূর্তে কবজ করতে আজরাইল( আঃ) কে পাঠাও নয় এই জানোয়ারকে ধংস করো। ধংস করো এই নরপিশাচকে!”

কুহু নেতি পড়লো। নিঝুম ততখনে তার ব্লাউজে হাত দিয়েছে। কুহু ঘোলা চোখে তাকিয়ে আছে ছাদের দরজার দিক এ বুঝি কেউ আসলো। রক্ষা করলো এই নরক থেকে। কিন্তু হায় কেউ নেই। তাহলে কি সত্যিই জয়ী হবে এ শয়তান?

তখনি কুহুর মনে কিঞ্চিৎ আসার আলো জাগে। ছাদের দরজায় কাউকে দেখে মুখে ফুটে উঠে। মৃদুস্বরে উচ্চারণ করে,, ” ইউসুফ ”

—“নিঝুম!”
ইউসুফ হুংকার ছেড়ে এগিয়ে এসে এক লাথি মারে। নিঝুম ছিটকে যায়। ইউসুফকে দেখে তার ভয় আকড়ে ধরে। ঢুক গিলে পালিয়ে যেতে যায়। ইউসুফ ধরে ফেলে। চুলের মুঠি ধরে চেচিয়ে বলে,,

—” আমার বাবুইপাখির দিক হাত দিয়ছোস? তোরে আজ আস্ত রাখবো না। ”

কমোড়ের ব্লেট খুলে মারতে থাকে লাগাতার। বৃষ্টি যেন তখনি থেমে গেলো। নিচ থেকে দৌঁড়ে এলো সবাই। কুহুকে বিধ্বস্ত অবস্থা পড়ে থাকতে দেখে সবাই আত্মকে উঠে। সুমি দৌড়ে কুহুর কাছে আসে শরীরের কাঁপড় ঠিক করে দেয়। কুহু হু হু করে মায়ের বুকে মুখ লুকিয়ে কাঁদে। সুমি নিজেও কাঁদে।

সকলেই দেখে নিঝুমের মার খাওয়কর দৃশ্য কেউ এগিয়ে আসে না। ইউসুফের মেরেই যাচ্ছে। বিলাই চোখ ভয়ংকর লাল ধারণ করেছে। মুখ খানি লাল হয়ে গেছে। কপালের রগ ধপ ধপ করছে। কি করুন সেই দৃশ্য। নিঝুম মাটিতে লুটিয়ে পরে ব্যথায় কাতরাচ্ছে। দয়ামায়াহীন ভাবে মেরে যাচ্ছে ইউসুফ নিঝুমকে। ইউসুফকে দেখে কুহুর এবার ভয় করছে। কেউ তাকে আটকাচ্ছে না কেন? ভেবেই পেলো না কুহু।

নিঝুমের হোস নেই। আরিফ এগিয়ে এসে ইউসুফ থামায়। ইউসুফ তখন হাড়কাঁপানো চিৎকার করে বলে,,

—” যে বাসায় আমার বউ সেইফ না সেই বাসায় আর এক মুহূর্তেও না। সে আর এখানে পা রাখবে।”

হাতের বেল্ট ফেলে কুহুর সামনে হাটু গেড়ে বসে ইউসুফ। কুহু নিষ্পলক চেয়ে থাকে ইউসুফের দিক। লোকটির চোখে পানি। লোকটি তার জন্য কাঁদছে ভেবেই যেন কুহুর আরো কান্না পাচ্ছে। ইউসুফ কুহুকে পাজো কোলে করে নিয়ে গাড়িতে বসালো।গাড়ি থেকে তকর জ্যাকেট নিয় পড়িয়ে দিল কুহুকে। কুহু তখন কাঁপাচ্ছে। ইউসুফ কুহুর মাথায় হাত বুলিয়ে আদুরে কন্ঠে বলে,,

—” আর একটু কষ্ট কর বাবুইপাখি। আমরা দ্রুত বাসায় ফিরছি!”

কুহু কিছুই বলল সে চেয়ে রইলো ইউসুফের দিক। ইউসুফ ড্রাইভ করছে। সুন্দর সিল্কি আর কোঁকড়ানো চুল গুলো সব ভেজে সোজা হয় টুপটুপ পানি কঁপাল বেয়ে নাক মুখে পড়চ্ছে। আজ এই লোকটি না এলে কি হতো? সব থেকে বড় সর্বনাশটা হয়েই যেতো।

কুহু তখন মাথায় ধাক্কা লাগলো। সে সময় সে কেন চাইছিলো? ইউসুফ আসুক তাকে বাচাক? কেন তখন সে আশিকে কথা ভুলে বসেছিলো? কেন? সেই মুহূর্তে আল্লাহর কাছে প্রার্থণা করেছে ইউসুফ যেন আসে? তাহলে কি ইউসুফের জন্য কুহু মনে সুক্ষ অনুভূতির জোয়ার খেলে গেলো? কুহুকে ভালোবেসে বসলো ইউসুফকে??

চলবে,,