আমার একটাই যে তুই ২ পর্ব-১২

0
2830

#আমার_একটাই_যে_তুই❤️
#সিজন_২
#সুরাইয়া_সাত্তার_ঊর্মি

১২
খাটের কার্নিষ ঘেঁষে বসে আছে কুহু “দ” ভঙ্গিমায়। মনেটা খুব হাসফাস করছে। ইউসুফ সোফায় বসে। লম্বা সুন্দর পা দুটো সটান করে উঠিয়ে রেখেছে সামনের টি-টেবিলে। বড্ড অবহেলায় কোলের উপর রাখা ল্যাপটপে ঝুঁকি কি যেন করছে। কুহু সেদিকেই দৃষ্টিপাত করে আছে। ইউসুফের পরণে থ্রি কোয়ার্টার কালো প্যান্ট, গায়ে লেমন কালার টি শার্ট। কাপলের উপর তার ঘন ব্রাউন চুল গুলো পড়ে আছে। মৃদু বাতাসে তা নড়াচড়া করছে। এ মুহূর্তে মাত্রাতিরিক্ত সুন্দর লাগচ্ছে। কুহুর বড্ড আফসোস হলো এ নিখুঁত ব্যক্তিটির একটি খুঁতো না থাকা বড্ড অপরাধ! তার এই সৌন্দর্যের জন্য জেলে ভড়া উচিত। না জানি কত মেয়ে এর জন্য জান দিয়েছে। তাকে এ শহরে নিষিদ্ধ করা উচিত। শুধু এক মাত্র কুহুর মনের শহরেই হবে প্রযোজ্য ইউসুফ নামক সুদর্শন যুবুকের। কুহু ছোট শ্বাস ফেললো। তখনি মনের মাঝে উঁকি মারলো দুপরের ঘটনা টি। মনের মাঝে এবার দুঃখ দুঃখ পেল। ইউসুফের পাশের সিট থেকে পৃথাকে নামতে দেখে কুহুর মাথায় আকাশ যেন ভেঙ্গে পড়লো। পৃথা ইউসুফের দূরের সম্পর্কের চাচাতো বোন হলে তার মনের মাঝে ইউসুফের জন্য ফিলিংসের অভাব ছিলো না। একি সাথে পড়াশোনা করতো তারা। ভার্সিটিতে ইউসুফ ভাইয়ের সাথে নির্লজ্জের মতো লেপ্টে থাকত যা চোখ এরিয়ে যায়নি কুহুর।সেদিন হিংসে না হলেও আজ হয়েছে। বড্ড হিংসে। যখন গাড়ি থেকে নেমেই ইউসুফের হাতে তার হাত ঢুকিয়ে নিজের সাথে লেপ্টে ধরে তখন কুহুর মনের কোনে তীব্র থেকে তীব্রতর ব্যথা হচ্ছিলো। অসহায় মুখে চেয়েছিল পাশে থাকা মনিশার দিকে। মনিশাও হতবাক। সে কুহুকে ইশরা করলো। যার অর্থ তেমন কিছু না তারা শুধু বন্ধু৷ কিন্তু কুহুর আবেগী মন কি মানতে চায় তা?? কুহু গোমড়া মুখে চেয়ে রইলো তাদের দিক। পৃথা তখন হাসি হাসি মুখে শুধালো,,

—” আরে কুহু যে? কবে এলে? তোমাকে দেখতে পাবো বলে আশা করিনি! ভালই হয়ে এবার আড্ডা জমিয়ে হবে! তাই না ইউসুফ!”

“তাই না ইউসুফ ” কথাটি বলে চিমটি কাঁটলো পৃথা ইউসুফের হাতে। ইউসুফ “আহ” করে উঠে চেঁচিয়ে বলল,,

—” রাক্ষসী? খামচি দিচ্ছিস কেন? এই বদ অভ্যস কবে যাবে তোর?”

পৃথা ইউসুফের কাছে ঘেঁষে ফিসফিস করে বলল,,

—” তোমাকে বিয়ে করার পর!”

ইউসুফের দাম্ভিক মুখখানায় তখন নেমে এলো আধার। সে থমথমে কন্ঠে বললো,,

—” আমি বিয়ে করে নিয়েছি পৃথা।”

পৃথা তখন মাছি তাড়ানোর মতো হাত নাড়িয়ে বলল,,

—” মজা করো না তো! সব সময় দুষ্টমি। ”

ইউসুফ তখন সিঁড়ি দিয়ে উপরে যেতে যেতে বলল,,

—” আমি বিয়ে করে নিয়েছি পৃথা কুহু আমার বউ। আর আমি মজা মোটেও করছি না!”

ইউসুফ উপরে চলে গেলো।পৃথা মাথায় যেন গোটা আকাশটা উল্টে পাল্টে পড়লো। পৃথা ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে রইলো ইউসুফের দিক। মনের স্বপ্ন সব ভেঙ্গে রাশভারি মনটা নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো হা করে। সে আজ এসেছিল ইউসুফকে তাদের বিয়ের কথা বলবে বলে সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য। পৃথার বাবা মুহিত কাল দেশে ফিরেই সোজা আসবেন এখানে। কিন্তু এখানে এসে সে নিজেই সারপ্রাইজড হয়ে গেলো। কিন্তু পৃথা? সে কি থেমে যাওয়ার পাত্রী? মোটেও না। এত বছর ভালবেসে এবার সে ফাঁকা হাতে ফিরবে? না না একদম না। পৃথা কুহুর দিক তাকালো ক্রুদ্ধ চোখে তাকিয়ে ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল,,

—” এ বিয়ে মানি না আমি।”

কুহু তখন মিষ্টি হেসে বলল,,

—” আপু মানো বা না মানো! ইউসুফ ভাই আমার অর্ধাঙ্গ আর আমি তার অর্ধাঙ্গীনি। ”

পৃথা কিড়মিড় করতে লাগলো। বিড়বিড় করে বলল,,
—” আমিও দেখবো কতদিন টিকে এই ঠুনকো বিয়ে!”

—” কি এতো ভাবছিস?
ইউসুফের ঝংকার তুলা চমৎকার কন্ঠে কুহু ভাবনার পাখি উড়াল দিলো। এতোখন কাটের চাদুরে নতজানু হয়ে পায়ের আঙুল দিয়ে খুটছিলো। এবার ইউসুফের দিক তাকালো। ইউসুফ ভ্রু কুচকে কুহুর পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষন করে বলল,,

—” শরীর খারাপ লাগচ্ছে কি আবার?”

কুহু দু পাশে মাথা নাড়লো। যার অর্থ, না!” ইউসুফ আবার বলল,

—” তাহলে? এভাবে চুপ করে বসে আছিস কেন?”

কুহু কিছু বলল না। ইউসুফ ইশরা করে বলল,,

—” কাছে আয়?”

কুহুর উদাস মনে ধীরে পায়ে হেঁটে গেলো ইউসুফের দিক। ইউসুফ ওকে ঝুঁকতে বলে। কুহু ঝুঁকতেই ইউসুফ তখন তার হাতে উল্টো-পাশ কঁপালে হাত ঠেকাতেই কুহুর শরীর ছন্দ তুলে কেঁপে উঠলো। কুহু খিঁচিয়ে চোখ দুটি বুঝে নিলো। ইউসুফ বলল,,

—-” জ্বর তো নেই একেবারে! ঔষধ খেয়েছিলি?”

কুহুর ছোট উত্তর “হে” খানিক চুপ থেকে আবার মুখ খুলতেই ভেসে এলো পৃথার কন্ঠ। সে ইসু ইসু বলে চেঁচিয়ে এদিকেই আসচ্ছে। ঠিক তখনি কুহুর কি হলো সে এক অভাবনীয় কাজ করে বসলো। ইউসুফের কোল থেকে ল্যাপটপ সরিয়ে দ্রুত তার কোলে বসে পড়লো। আর তখনি আগমন ঘটে পৃথার। কুহু পৃথা সেই স্থান নাই করে দিয়ে ইউসুফের গলায় চুমু খেলো। আকস্মিক এমন ঘটনায় ইউসুফ বিস্ময় কিংকর্তব্যবিমূঢ়।সে কুহুর দিক বিস্ফোরিত চোখর চেয়ে।

পৃথার চোখের সামনে এমন একটি ঘটনা ঘটতে দেখে বিব্রত বোধ করলো।আড় চোখে আবার চেয়ে দেখলো। কুহু এখনো ইউসুফের কোলের উপর বসা। সরছেই না। উল্টো তার দিক তাকিয়ে আছে নির্বিকার ভাবে। পৃথা দু হাত কঁচালে বলে উঠলো,,

—” আম সরি বুঝতে পারিনি এমন কিছু..”

কুহু কথার মাঝে কথা কেড়ে নিয়ে বলল,,

—” আপু না বুঝার কি আছে? একজন দম্পতির ঘরে তাদের পার্মিশন ছাড়া ঢুকা ব্যাড ম্যানার্স জানেন না বুঝি? যদি না যেনে থাকে যেনে নিন তবে! আপনার বন্ধু এখন বিবাহিত হুটহাট করে তার ঘরে আসা শোভা পায় না!”

কুহুর প্রতিটি কথা ধারালো তরোয়ালের মতো আঘাত করতে লাগলো। রাগে, দুঃখে কেঁদে ফেললো সে। ইউসুফের দিক আরেক বার তাকিয়ে কাঁদতে কাঁদতে হুড়মুড় করে বেড়িয়ে গেলো সে।

কুহুর ঠোঁটে তখন বিশ্বজয়ের হাসি। ইউসুফের কোল থেকে সে উঠতে নিতেই বুঝতে পারে কারো শক্তপোক্ত পাতে বাঁধা। কুহু শুকনো ঢুক গিললো। তার গলা শুকিয়ে কাঠ। সে মৃদু কাঁপচ্ছে। আড় চোখে ইউসুফকে দেখে উঠতে চাইলো কুহু। কিন্তু ব্যর্থ। ইউসুফ তখন কেমন করে যেন চেয়ে হাসচ্ছে কুহু ভয়ে ভয়ে তাকে দেখছে। ইউসুফের মসৃণ গালের টোল পড়া বাঁকা হাসিতে কুহুর বুক দ্রীম দ্রীম করে তবলা বাজাচ্ছে। সে সইতে পাড়ছে না এই মিষ্টি অসহ্যতা। কুহুর শ্ব্স এবার ঘন হতে লাগলো। মিন মিন করে বলে উঠলো,,

—” ছাঁড়ুন ইউসুফ ভাই!”

ইউসুফ তখন আরো চেপে কাছে নিয়ে এলো কুহুকে। কুহুর মতোই কুহুর কঁপালে, গালে, ঘাড়ে তার পর গলায় তার ঠোঁটে বিচরণ করলো। কুহুর শ্বাস এবার গাড়ো হতে লাগলো। ঘন ঘন শ্বাস ছাড়ছে। ইউসুফ তখন কুহুর কানের কাছে তার ঠোঁট এগিয়ে নিলো। কুহু খিঁচিয়ে চোখ বন্ধ করে আবার। ইউসুফের তা দেখে হাসি পেলো খুব। কিন্তু হাসিটুকু এবার গিলে সে ফিস ফিস করে বলল,,

—” আমি কারো ধার রাখি না। কেউ আমায় কিছু দিলে তার চার গুন ফিরত দেই!”

কুহু তখন স্তব্ধ। চকিতে চোখ খুলে তাকিয়ে দেখলো ইউসুফকে। সে আয়েসি ভঙ্গিতে মাথা হেলে চেয়ে দেখছে কুহুকে। কুহু জিব কাঁটলো নিজের পাতা জালে মুখ থুবড়ে পড়লো। ইউসুফের দিক আড় চোখে আরেক বার তাকিয়ে লাজুক হেসে ছু মন্তর হয়ে গেলো মুহূর্তেই।

ইউসুফ কুহু যাওয়ার পানে তাকিয়ে হাসলো। বিড়বিড় করে বলল,,

—” পাখি এবার নিজেই খাঁচায় বন্দি হতে চায়!”

চলবে,