আমার একটাই যে তুই ২ পর্ব-১৪

0
2085

#আমার_একটাই_যে-তুই❤️
#সিজন-২
#সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি
১৪
হুট করেই আকাশে ছেয়ে গেলো কালো মেঘের ছায়ায়। প্রকৃতির তাণ্ডব লীলা শুরু হতেও যেন বেশি সময় নিলো না। গাছ-পালা, বাড়ি-ঘর উপরে ফেলার মতো ঝড়ো হাওয়া বইতে লাগলো। তার সাথে তাল মিলালো ভয়ংকর বজ্রপাত। শরীরের প্রতিটি শিরা-উপশিরা কাপানোর মতো। চারিদিকে আলোকিত করে মুহূর্তেই ভস্ম করে চলে যাচ্ছে এ বজ্রপাত। ইউসুফ তার বেলকনিতে দাঁড়িয়ে পৃথিবীর এ ভয়ংকর তান্ডব দেখতে ব্যস্ত। তার সুন্দর চোখ জোড়া আজ অস্থির। বাহিরের তান্ডব লীলাতে থেকেও হিংস্র ইউসুফে বুকের মাঝে উঠা ঝড়। ইউসুফ চোখ বুঝলো।চোখ বোঝার সাথে সাথেই বজ্রপাতের শব্দে তার মুখখানা আলোকিত হলো।

সব-ই তো ঠিক ছিলো। কিছু মুহূর্ত আগেও ইউসুফ সুখের সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছিলো। কুহুর ভালবাসার মাঝে হারিয়ে যেতে চাইছিলো ইউসুফ।

পার্টি থেকে ফিরে বাসায় আসা পর্যন্ত ইউসুফের মুখখানিতে কুহুর চোখ জোড়া বিচরণ করে গেছে। কুহু যেন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ইউসুফের চেহারা দেখে মুখস্থ করছে। ইউসুফের অস্থি লাগার কথা হলেও সে প্রতিটি সময় মিটিমিটি হেসে গেছে। সেই হাসিতে কুহুর ঠোঁটের কোনেও হাসি ফুটেছে। মাঝে মাঝে লজ্জায় নিজেই মুখ ফিরিয়ে লাল-নীল হয়েছে। তারপরও বেহায়া হয়ে চেয়ে দেখেছে ইউসুফের মুখখানা। ইউসুফ মাঝে অবশ্য জিজ্ঞেস করেছে,,

—” আমি তো কোনো খাবার নই। এভাবে তাকিয়ে গিলছিস কেন?”

কুহু লজ্জায় লাল। এভাবে কেউ বলে? কুহু দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরলো। চোখ দুটো দ্রুত সরিয়ে নিলো। অন্যদিকে ফিরে চোখ বুঝে মাথা এদিক ওদিক করে না করলো। ইউসুফ কুহুর লজ্জা পাওয়া দেখে হেসে ফেললো। কিন্তু কুহু চোখ হোড়া ফিরিয়ে রাখতে পাড়লো কই? বেশরম চোখ দুটি যেন লাজের পানি খেয়ে উধাও। ফিরে ফিরে সেদিকেই ছুটে গেলো।

কিন্তু এসব স্বাভাবিক ছিলো। কুহুর একটি কথায় ইউসুফ দ্রুত ব্রেক কসলো। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে কুহুর কথাটি বুঝতে চাইলো। চারিদিকে তখন পিনপতন নিরবতা। জনমানবহীন রাস্তা ঘাট। দূর থেকে মাঝে মাঝে শেয়ালের হাক শোনা যাচ্ছে।

কুহু ইউসুফের হাত চেপে ধরলো। চোখে যেন ধারালো নেশা। ঠোঁটে এক আবেদনময়ী হাসি।কন্ঠে যেন মাদক ছড়াচ্ছে। কুহুর চোখ এবার ইউসুফের লাল ঠোঁট জোড়ায়। ইউসুফের দিক ঝুকে মৃদুমন্দ স্বরে বলল,,

—” আমাকে একটু চুমু খাবেন নেতা সাহেব?”

ইস্টিলের থালাবাসন পড়ার পর যেমন ঝনঝন করে শব্দ বেজে উঠে? ইউসুফের কানেও ঠিক তেমন ঝনঝন করে বাজতে লাগলো। ইউসুফ বিস্ময় কাঁটে উঠার আগেই কুহু অনাকাঙ্ক্ষিত একটি কাজ করে বসলো অনাকাঙ্ক্ষিত একটি কাজ করে বসলো। ইউসুফে শার্টের দুটি বোতাম খোলা ছিলো। লোমোশ বুকের খাঁজ দৃশ্যমান। কুহু টুপ করে চুম খেয়ে ইউসুফের বুকেই মুখ লুকালো। ইউসুফের সারা শরীরে যেন বিদ্যুৎ কয়েকশো গুন বেড়ে গেলো। ইউসুফের ফাকা হয়ে যাওয়া মাথায় হুট করে প্রশ্ন জেগে বসলো। কুহুকে আজ তাকে কাছে পেতে চাইছে? ইউসুফ মুকনো ঢুক গিললো। এমন একটি প্রহরের জন্য কত দিন আর কত রাত কেঁটে গেলো। কাঙ্ক্ষিত রাতটি বুঝি আজই?

ইউসুফ কুহুকে এক হাতে আকড়ে ধরে গাড়ি চালাতে শুরু করলো। কুহুর করা কাজে এখনো হতভম্ব সে। আচ্ছা? কুহুকি কিছু খেয়েছে? সে কি হুঁশে আছে? এমন তো নয়? সে কোনো নেশার ঘোরে এমন করছে??

ইউসুফের মাথায় প্রশ্নের বাহার নিয়ে গাড়ি থামায় তাদের বাসার সামনেই। নিজে বের হয়ে কুহুকে বের হওয়ার জন্য বলতেই কুহু বলল,,

—” আমাকে কোলে নিন না নেতা সাহেব! ”

ইউসুফ খানিকটা ভ্রু কুচকালো। মেয়েটির আজ হয়েছেটা কি? সবসময় দূরে থাকা এ মেয়েটি এমন কেন করছে? ইউসুফের ভাবার মাঝেই কুহু তার দু হাত তুলে বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টে বললো,,

—” কি হলো নেতা সাহেব নিচ্ছেন না কেন কোলে? ”

ইউসুফ সুপ্ত শ্বাস ছাড়লো। নির্ঘাত মেয়েটি এলকোহল টাইপ কিছু খেয়েছে? ইউসুফ কুহুকে কোলে তোলে নিলো। কুুহু এখনো চেয়ে আছে ইউসুফের দিক। ইউসুফের এবার অস্থি লাগচ্ছে। কুহুকে খাটে শুইয়ে দিয়ে যেই যেতে নিবে। কুহু তখন অভাবনীয় এক কাজ করে বসলো। ইউসুফ কলার ধরে টেনে ধরতেই ইউসুফ কুহুর উপরে গিয়ে পড়লো। ইউসুফ অবাকে ফেঁটে পড়লো তখন। আবার উঠতে চাইলে কুহু ইউসুফ কানে ফিসফিস করে বলে,,

—” আমি নেশা করিনি নেতা সাহেব। আমার নেশা ধরেছে আপনার নেশা। একটু আদর করুন না!”

ইউসুফ কুহুর দিক তখন বিস্ফোরিত চোখে তাকালো। সন্ধিহান কন্ঠে বলল,,

—” আর ইউ ওকে? এমন উদ্ভট কথাতো কুহু কখনো বলে না! তুই সত্যি কুহু? নাকি কুহুর চেহারার মাস্ক পরিহিত অন্য কেও??”

ইউসুফ কথা কুহু বিরক্ত হয়। মুখ দিয়ে “চ” শব্দ করে বলে,,
—” আজাইরা কথা রাখুনতো! আসুনতো আমাকে একটু গাড়ো করে চুমু খান তো। আপনার এই লাল টুকটুকে ঠোঁট আমাকে কতটা যে কাতর করে তুলে জানেন কি? ”

ইউসুফ কিছু বললো না। কুহু খানিকটা চুপ থেকে বলে উঠলো হুট করেই,,

—“নাকি আপনি ইম্পোটেন্ট??”

কুহুর কথায় ইউসুফের মেজাজ এবার চান্দে। মেয়েটা উস্কানিমূলক কথায় মাথা এবার ধপ ধপ করে আগুন জ্বলে উঠলো ইউসুফের। মেয়েটা এবার পৌরুষত্বের উপর সন্দেহ করছে? কি সাংঘাতিক? পরক্ষণেই মাথাটা ঠান্ডা করে ফেললো। কুহুর মুখের দিক ঝুকে দুষ্টু হাসি ফুটিয়ে বলল,,

—” আমাকে উস্কে তোর খুব একটা ভাল হবে না কিন্তু কুহু! নিজেকে সংযোগ রাখছি রাখতে দে নয় তো…! ”

কুহু ঠোঁট কামড়ে ধরলো নিজের। ঝিম ধরনো এক হাসি দিয়ে বলল,,

—” রাখতে কে বলেছে?”

ইউসুফ বাঁকা হাসলো। সুযোগটা লুফে নিয়ে ঝাপিয়ে পড়লো কুহুর দিক। কুহু চোখ বুঝে ফেললো ভয়ে। ইউসুফ তখন কুহু গলায় নাক ডুবিয়ে নেশাতুর কন্ঠে বলল,,

—” আজ তুই শেষ কুহু!”

কুহু লজ্জায় মুখ গুঁজে ফেললো ইউসুফের বুকে। ইউসুফ ফিসফিস করে বলল তখন,,

—“তুই কি ছোটো থেকে তুলো খেয়ে বড় হয়েছিস? এত তুলতুলে কেন?”

কুহুর তখন আর সাড়া নেই। ইউসুফ তাকালো কুহুর দিক। কুহু ঘুম। ভাড়ী নিশ্বাস বলে দিচ্ছে তার। স্বপ্নের দুনিয়ায় ফুড়ুৎ করে উড়ে গেছে। ইউসুফ আহত সুরে বলল,,

—” এটা কোনো কথারে বাবুইপাখি? আমাকে ভালোবাসার অতল গহবরের ডুবিয়ে তুই ঘুম দিলি? প্রতিশোধ নিলি তো? আমিও নিবো!”

ইউসুফ হা করে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো। কুহুর ঘুমার্থ মুখটিতে হাত বুলিয়ে কঁপালে চুমু দিলো। কুহু গায়ে কাথা জড়িয়ে উঠতেই ইউসুফের ফোনের মেসেজ টিউন বেঁজে উঠলো। ইউসুফ কঁপাল কুঁচকে ফোন স্ত্রোল করতেই কঁপালে দুটি ভাজ পড়ে। সে আবার চোখ বুলায়,,

—” আই এম ব্যাক!”

ইউসুফ লিখলো,,

—” গো টু হেল।”

ওপর প্রান্ত থেকে তখন উত্তর এলো,,

—” তোমার সাথেই যাবো যেখানেই যাই!”

ইউসুফের রাগ বাড়লো। আবার নতুন কোনে ঝড়ের আবাস নয় তো? ইউসুফ টাইপ করলো,,

—” কি চাই আর!”

—” তোমাকে!”

—“আমি চাই না আর! আমি বিবাহিত! ”

ওপাশ থেকে আর কিছু রিপ্লাই না। ইউসুফ বেলকনিতে গেলো। চারিদিকে ঝড় উঠেছে। গাছগাছালী উপরে ফেলছে যেন। ঠিক তেমনটি অনুভব হচ্ছে ইউসুফের বুকে। ইউসুফ রেলিং এর উপর দু হাত রেখে দাঁড়ালো। বৃষ্টি তার তেজে ইউসুফকেও ভিজিয়ে দিলো যেন। ইউসুফ চোখ বুজে সেই বৃষ্টি উপভোগ করছে নাকি নিজের চোখে পানি লুকাচ্ছে বুঝা যাচ্ছে না। ইউসুফ চোখ খুললো মেসেজ টিউনের আওয়াজে। রক্তিম হয়ে উঠা চোখ জোড়া মেললো ইউসুফ।

—” আম প্রেগন্যান্ট। তোমার বেবি আমার গর্বে বড় হচ্ছে ইউসুফ। আই নিড ইউ। প্লীজ কাম ব্যাক।”

বজ্রাপাতের ওয়াজটা সেই মুহূর্তে ভয়ংকর ভাবে বেড়ে গেলো। ইউসুফের মনে হলো। তার উপরি পড়েছে। কি হবে এখন?

চলবে,