আমার একটাই যে তুই ২ পর্ব-২২

0
1968

#আমার_একটাই_যে_তুই❤️
#সিজন-২
#সুরাইয়া_সাত্তার_ঊর্মি

২২
আখি রেগে ফুসতে ফুসতে বের হয়ে গেলো। কুহু সেদিকে তাকিয়েই হাসতে লাগলো। ঠিক তখনি পিছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো ইউসুফ আর তখনি কুহু ঠেলে দুরে সরিয়ে দিলো। বলল,,

—-” আমাকে একদম ছুঁবেন না। নেতা সাহেব!”

ইউসুফ ভ্রুকুচকালো। কুহুর কথা উপেক্ষা করে টেনে এনে বসালো ইউসুফের কোলে। বলল,,

—-” আমি ছোঁবো না তো কে ছুইবে?হুম। প্রিন্স ফিলিপ? ওই বুড়া বেটা তোকে ছুইতো তুই মজা পাইতি?”

কুহু হতাশ হলো। মনে মনে বলল,,

—-” ইউসুফ ভাই ইজ কামিং। মাই ঘুম হারামিং!”

কুহু গাল ফুলিয়ে শ্বাস ছাড়লো। বলল,,

—-” আমাকেই কথার আগাগোড়ার মাঝে চিপে ধরতে পাড়বেন। যাদের ধরার তাদের তো পাড়বেন না। উল্টো ফিট হবেন টেনশনে। ”

ইউসুফ কুহুর নাকে নাক ঘসলো। ফিসফিস করে বলল,,

—” তুই আমার বউ তোরেই চিপবো। চিপে একদম টমেটোর জুস বানিয়ে ঢক ঢক করে গিলে ফেলবো!”

কুহুর চোখ কঁপালে।কি সাংঘাতিক। তড়িৎ গতি উঠে নিতেই ইউসুফ ঘাপটি মেরে ধরলো। কুহুর মাথা বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো। ঘাড়ের মাঝে তার দাঁড়ি
ঘষা দিতে কুহু ” ও মা গো ” বলে নড়েচড়ে উঠলো। তাও ছাড়লো না ইউসুফ। কুহুর সাথে আরো ঘনিষ্ঠ হলো। ইউসুফের ঠোঁট জোড়া বিচরণ করতে লাগলো গা জুড়ে। কি শান্তি কি শান্তি। ইউসুফের প্রাণ জুড়িয়ে গেলো। ফট করে কুহু ইউসুফ ঘাড়ে কামড় বসালো। অসহ্য ভাল লাগায় মারা যাচ্ছে কুহু। ইউসুফ “আহ রাক্ষস মাইয়া” বলে ছেড়ে দিলো। কুহু সটানভাবে দাঁড়িয়ে পড়লো। হাপাতে হাপাতে বলল,,

—-” আপনি গম্ভীর টাইপ ফর্মেই ভাল ছিলেন। সেই ফর্মে চলে যান। আগের ইউসুফ একদম ভালো না আমায় পুড়ায়!”

ইউসুফ চেয়ারের পিছনে দুহাত পেতে মাথা রাখলো। হেলে বসে মুচকি হেসে বলল,,

—-” অনেক দিন পর মনের শান্তি পেয়েছি বাবুইপাখি। তা তো আর আমি হারাচ্ছি না!এবার তোকে পড়াবো। পুড়িয়ে ছাই ছাই করে রেখে দিবো তালাবন্ধ করে”

বলে আবার কুহুকে কাছে টানলো। কুহু বাঁধা দিয়ে বলল,,

—-” এভাবে তো কাছে পাবেন না নেতা সাহেব। একদম না! আমাকে আগে সবটা বলুন। নয়তো ডিভোর্স ফাইনাল! ”

ইউসুফ কুহুর কণ্ঠনালি চেপে ধরলো। রাগী গলায় বলল,,

—-” সেদিনের মার ভুলে গেছিস? হুম। মাথা আওলায়া দিস কেন? কেন দিস মেরে দেই তোরে এখন?আই শুড কিল ইউ!”

কুহুর শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে ইউসুফের থেকে ছাড়া পাচ্ছেই না। মনে মনে নিজেকে গালি দিলো। কেন গেলো রাগাতে হুয়াই? ইউসুফ ছেড়ে দিলো কুহুকে। নিজের চুল টেনে ধরে চোখ বন্ধ করে ফেললো। কুহু খুক খুক করে কেশে উঠে বলল,,

—-” আপনার নামে কেশ করে দিবো! দিন দুপুরে মারার হুমকি! আহারে একটু হলেই দুনিয়া ত্যাগ করে ফেলতাম!”

ইউসুফ গাল ফুলিয়ে শ্বাস ছাড়লো কুহুকে আবার তার হাতে আবদ্ধ করে কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,,

—-” আমার হৃদয় আঘাত কেন করিস বল বাবুইপাখি। আমি তুই ছাড়া শূন্য। প্রাণ হারা।ইউ ফিল দ্যা ভয়েড ইন মাই চেষ্ট!”

কুহুর মায়া হলো। দু হাতে ইউসুফের গাল ধরে বলল,,

—-” সব বলুন না আমায়! আমি সব জানতে চাই। শুরু থেকে। সবববববববববব।”

কুহু বাচ্চাদের মতো মুখ করে বলল। ইউসুফ হেসে ফেললো। কুহুকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। গালের মাঝে আবার দাড়ি ঘষা দিলো। কুহু কটমট করে তাকালো। ইউসুফ হেসে ফেললো। কুহুর গালে শব্দে করে চুমু খেয়ে বলল “আমার রসগোল্লা”। কুহু লজ্জায় লাল-নীল। ইউসুফ মুচকি হেসে বলতে শুরু করলো,,

—-” আমার জীবনের প্রথম মেয়ে তুই ছিলিরে বাবুইপাখি! শুধু তুই! ভালো তোকেই বেশিছি ছোট থেকে!”

কুহু চুপ করে চেয়ে রইলো ইউসুফ মুখপানে। কত গর্ব করে বলছে কুহু তার প্রথম লাইফের। কুহুর মনে ভালো লাগা কাজ করলো। ইউসুফ আবার বলতে শুরু করলো।

—-” আমাদের বিয়ের দুই-তিনদিন পর আমাদের দলের অনিদার র্অ্যানিভার্সারিতে ইনভাইট করে আমাদের। তুই তখন আমাকে দু চোখেও দেখে পেতিস না। তোকে বলে ছিলাম সেদিন পার্টির কথা তুই না কোচ করেছিলি। মনে আছে? সেদিনেরই ঘটনা।সেদিন আমি কবির কে সেখানে উপস্থিত হয়ই। সেখানেই দেখা আখির সাথে। আখিকে এর আগে থেকে চিনতাম। আমার সাথে কলেজে পড়তো। বড্ড চিপকুস টাইপ মেয়ে। এর থেকে দূরে থাকতাম সব সময়!”

কুহু বড্ড অভিমান হলো। মুখ টা কাচুমাচু করে শুনছে। তার নেতা সাহেবকে সবার কেন চাই? দুনিয়াতে কি আর কোনো ছেলে নাই?ইউসুফ কথায় আবার কান দিলো কুহু।

—-” অনেক দিন পর তার সাথে দেখা হয়৷ সেদিন। সেধে এসে কথা বলল। আমিও কথা বললাম। সব স্বাভাবিক চলছিলো। কথার শেষ পর্যায় অাখি চলে যায়। গ্লাসের জুসে চুমুক দিচ্ছিলাম একটু করে। হুট করে তখন কি হয়ে গেলো বুঝতে পারলাম না। পুরো দুনিয়া৷ উল্টে গেলো।তারপর আর কিছু মনে নেই।
পরের দিন সকালে যখন ঘুমভাঙ্গে তখন আখি আমায় ঝাপটে ধরে ছিলো। তার শরীরে কাপড়ের ছিটেফোঁটা ছিলো না। আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম সেদিন। তারপর থেকেই আখি ব্ল্যাকমেইলিং শুরু এদিকে বাবার কাছে এ কথা পৌছাতেই উনিও পেশার দিচ্ছিলো। আখিও হুমকি দিচ্ছিলো তোকে সব বলে দেবে। আমার ব্রেনের নার্ভ যেন কাজ করা বন্ধ করে দেয়। তার উপর তোর অভিমান অভিযোগ। সব মিলিয়ে হিমশিম খাচ্ছিলাম। এর মাঝে তুই কি করলি ডিভোর্স পাঠালি! আমার দুনিয়াই সে দিন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছিলো!”

এ পর্যায় ইউসুফের কন্ঠ ধরে এলো। কুহু ছলছল চোখে তাকিয়ে বলে উঠল,,

—-” আমি আপনাকে ডিভোর্স লেটা পাঠাইনি নেতা সাহেব। আমি গেছিলাম উকিলদের কাছে। কিন্তু সাহস পায়নি ডিভোর্স দেয়ার সত্যি বলছি। আমি জানি না কিছু। কে পাঠালো তা।”

কুহু ফুপিয়ে উঠলো ইউসুফের বুকে মুখ গুঁজে। ইউসুফ পরম যত্নে মাথায়৷ হাত বুলিয়ে বলল,,

—“কাদিস না! ”

কুহু শুনলো না কাঁদতেই লাগলো। কিন্তু ইউসুফের মাথায় চিন্তা ঢুকে গেলো। কে করলো এমন কাজ? নতুন কোনো শত্রু নাকি ঘরের শত্রু??

চলবে,