আমার একটাই যে তুই ২ পর্ব-২৩

0
2966

#আমার_একটাই_যে_তুই
#সিজন-২
#সুরাইয়া_সাত্তার_ঊর্মি

২৩
বর্ষার শুরু হয়েছে। প্রায় প্রতি সকালেই ঝড়-ঝঞ্ঝার সঙ্গে ভারী বৃষ্টি। কখনো বা বৃষ্টির পরের রৌদ্রোজ্জ্বল দিন মিষ্টি করে হাসছে।এই টুকুনের মাঝেই কেউ কেউ ছুটছে নিজ গন্তব্য। পথ-ঘাটের শিশুরা রাস্তার ধারে জমে থাকা পানির উপর করছে লাফালাফি। এই দিনটিকে আরো সুন্দর করে তুলছে “হেমন্ত কুমার ” এর একটি বিখ্যাত গান,

এই মেঘলা দিনে একলা
ঘরে থাকেনাতো মন
কাছে যাবো কবে পাবো
ওগো তোমার নিমন্ত্রণ?

গুন গুন করে গানিটির সাথে তাল মিলিয়ে ঠোঁট নাড়ছে কুহু।ভার্সিটি যাওয়ার পথেই রেড লাইট সিগনালে ভীরের মাঝে আটকে আছে তাদের গাড়ি। গাড়ির জানালা ভেদ করে নজর পড়ছে বাহিরের পরিবেশের উপর। কিছু কিছু শিশুরা ফেরি করে বেড়াচ্ছে নানা ফুল আর খাবার। প্রতিটি গাড়ির কাঁচের মাঝে টোকা দিয়ে বলে যাচ্ছে ” আফা একটু ফুল নেন!”

কেউ নিচ্ছে তো কেউ এড়িয়ে যাচ্ছে। কুহু মায়া হলো। একটু ছোট মেয়েকে ডাক দিলো। পরনে ছেড়া বড় ফুলের ছাপের একটি জামা। উস্কো খুস্কো চুল। মুখটা মলিন। কুহুদের গাড়ির দরজার সামনে এসেই একটি হাসি দিলো। কি চমৎকার হাসি।যে কারো মন ভোলানোর মতো হাসি। কুহু বলল,,

—-” নাম কি তোমার বাবু?”

বাচ্চা মেয়েটি তার মন ভোলানো হাসি দিয়ে বলল,,

—-” আফিফা!”

—-” সুন্দর নাম। এ ফুল গুলো আমি নিবো! কত দিবে??”

মেয়েটি ভাবনায় পরে গেলো যেন।বলল,,

—-” আমি প্রতি পিস ১০ টাকা দিয়া বেছি আফ। আপনে হিসাব করে দেন?”

কুহু হিসেব করলো। যত গুলো ফুল হলো তার থেকে দুশো টাকা বেশি দিলো! মেয়েটি খুশিতে কেঁদে উঠলো। বলল,,

—-” গত সাত দিনে আফা আমি মাত্র দশটা ফুল বেচ্ছি। আপনারে ধন্যবাদ। ”

কুহু হাসলো। বাচ্চা মেয়েটির এলোমেলো চুল গুলো গুছিয়ে বলল,,

—-” আমি প্রতিদিন তোমার থেকে ফুল নিবো!”

বাচ্চা মেয়েটি খুশিতে নাচতে নাচতে চলে গেলো। কুহু সেইদিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে গাড়ির জানালা বন্ধ করতে নিলো। তার থেকে দূরে থাকা একটি দিকে তাকাতেই থম মেরে গেলো। একটি গাড়িতে আশিক আর একটি মেয়ে বসে আছে। মেয়েটিকে দূর থেকেই কেমন চেনা চেনা লাগচ্ছে তার। কুহু ভ্রু কুঁচকালো। আরেকটু উঁকি ঝুঁকি দিতেই তার মনে হলো সাথে মেয়েটি আখি। কুহু গাড়িতে থেকে মানতে নিলো। কিন্তু তার আগেই গাড়ি চলতে শুরু করে দিলো। ভীরের মাঝে হারিয়ে গেলো আশিকদের গাড়ি। কুহুর চিন্তার ছাপ পড়লো মাথা! আদো কি মেয়েটি আখি ছিলো না অন্য কেউ? কতখন মনের সাথে লড়াই করে ব্যর্থ কুহু ধরেই নিলো দেখার ভুল।কিন্তু মন? বার বার বলছে না তুই ঠিক দেখেছিস? কুহুর রাগ লাগলো। কিন্তু লাল টকটকে গোলাপ ফুল গুলো দেখেই মনটা ফুরফুরে হয়ে গেলো। ফুল গুলো হাতে নিয়ে একটি চিরকুট লিখে ফেললো সে। লজ্জায় গোলাপের মতো লাল রঙ্গা হয়ে চুমু খেলো ফুল গুলোতে। ভার্সিটিতে পৌঁছে ড্রাইবারকে দিয়ে ফুল আর একটি খাম দিয়ে পাঠিয়ে দিলো ইউসুফের অফিসে।

———————

মিটিং শেষে নিজ রুমে আসতেই। টেবিলের উপর এক গাদা গোলাপ আর একটি খাম দেখে ভ্রু কুটি কুঞ্চিত কুচকায়। খামটি হাতে নিতেই গোটা গোটা অক্ষরে “আপনার বাবুইবউ ” লিখা দেখতেই ঠোঁটের কোনে হাসির রেখা ফুটে উঠে। চেয়ারের মাঝে আরাম করে বসে খামটি খুলে। একটি গোলাপি রঙ্গের ছোট চিরকুট। লিখা,,

আজ আমি ক্ষণে ক্ষণে
কি যে ভাবি আনমনে ক্ষণে ক্ষণে
কি যে ভাবি আনমনে
তুমি আসবে ওগো হাসবে
কবে হবে সে মিলন
কাছে যাবো কবে পাবো
ওগো তোমার নিমন্ত্রণ
এই মেঘলা দিনে একলা
ঘরে থাকেনাতো মন
কাছে যাবো কবে পাবো
ওগো তোমার নিমন্ত্রণ?

ইউসুফ ঠোঁটের কোনের হাসি বহাল হলো। ফুল গুলোতে কুহুর মতো সেও চুমু খেলো।গোলাপের ঘ্রাণের সাথে যেন কুহু শরীরের ঘ্রাণ পেলো ইউসুফ। বুকে মাঝে ফুল গুলো জড়িয়ে নিয়ে কবিরকে কল করলো। কবির তৎক্ষনাৎ এসে হাজির। তার বসকে এমন মুচকি মুচকি হাসতে দেখে কবিরের ভালোই লাগলো। আজ কতদিন পর সে স্যারকে হাসতে দেখছে! কবির বলল,,

—” স্যার ডেকেছেন?”

ইউসুফ মাথা নাড়লো। বাহিরে জগতটা আজ কি সুন্দর লাগচ্ছে বলার বাহিরে। ইউসুফ বাহিরে চোখ রেখে কিছু প্ল্যান করে ফেললো। বর্ষার এ ঝিরিঝিরি মৌসুমে তার বাবুইপাখিকে একান্ত চাই। শুধুই একান্ত কিছু মুহূর্ত এই ব্যস্ত শহর থেকে দূরে। ইউসুফ বলল,,

—-“শ্রীমঙ্গলের বেষ্টি রিসোর্ট বুক করো। তোমার মেডামকে নিয়ে একটু ঘুরে আসি!”

কবির হেসে কাউকে কল করতে ব্যস্ত হয়ে গেলো। আর ইউসুফ তার ভাবনায়।

————

ক্লাস শেষ হতেই কুহু বেড়িয়ে এলো। আকাশে তখন কালো মেঘ দলা পাকিয়ে সূর্যকে ঢেকে দিয়েছে। পৃথিবীর বুকে বৃষ্টির বিন্দু বিন্দু ফোঁটা পগতে শুরু করেছে। কুহু দৌড়ে গেইটের কাছে যেতেই চোখ ছানাবড়া। তার নেতা সাহেব দাঁড়িয়ে আছে। পড়নে আজ ব্ল্যাক জীন্স। হোয়াইট টি শার্ট তার উপর ব্ল্যাক জেকেট। সব মিলিয়ে সুপুরুষ লাগছে ইউসুফে। প্রতিদিনকার শুভ্র পাঞ্জাবি-পায়জামা পড়া ইউসুফকে দেখতে দেখতে ইউসুফ যেন এসব ড্রেস পড়তেই ভুলে গেছিলো। কুহুকে এভাবে হা করে তাকিয়ে দেখতে দেখতে ইউসুফ হেসে ফেললো। কুহুর হাতটি ধরে বলল,,

—-” চলেন!”

কুহুর ভ্রুজোড়া কুচকে বললো,,

—-” কই?”

কুহু এক চোখ টিপ দিয়ে কুহুকে তার বাহু ধারা ধাক্কা দিয়ে গুন গুন করে উঠলো,,

আজ মন চেয়েছে আমি হারিয়ে যাব
হারিয়ে যাব আমি তোমার সাথে
সেই অঙ্গীকারের রাখী পরিয়ে দিতে
কিছু সময় রেখো তোমার হাতে।

কিছু স্বপ্নে দেখা, কিছু গল্পে শোনা
ছিলো কল্পনা জাল এই প্রাণে বোনা।
তার অনুরাগের রাঙা তুলির ছোঁয়া
নাও বুলিয়ে নয়ন পাতে।

আজ মন চেয়েছে আমি হারিয়ে যাব
হারিয়ে যাব আমি তোমার সাথে।

চলবে,