আমার খাঁচায় তুমি বন্দি পর্ব-১৬

0
2807

#আমার_খাঁচায়_তুমি_বন্দি
#Avigya_Ayaat
#পর্ব:১৬

রাহি: রিফাত আমি ডির্ভোস চাই।
রিফাত : দেখো রাহি এমনি মেজাজ খারাপ আছে। এখন মজা করো না।
রাহি: আমি মজা করছি না। আমার ডির্ভোস চাই তো চাই।
রিফাত: পাগল হয়ছো নাকি।
রাহি: হুমম, ডির্ভোস চাই আমি।
রিফাত রাহিকে ধরতে যায় তখন রাহি পিছনের দিকে সরে যায়।
রাহি: আপনার মতো মানুষ আমাকে ছুবেন না।আমার ঘৃনা হচ্ছে যে আমি আপনার মতো মানুষের বউ ছিলাম।
রিফাত: কি হয়ছে এমন করছো কেনো?
রাহি: আমি কিছু বলবো না। শুধু ডির্ভোস চাই আমার।
রিফাত: রাহি তুমি এমন করো না। তুমি তো জানো আমি তোমাকে ছারা থাকতে পারবো না। তুমি আমার থেকে চলে গেলে আমি মরে যাবো।
রাহি: আমি তোমার কাছে থাকলে মরে যাবো।
রিফাত: আমি ডির্ভোস দিবো না।
রাহি বিছানার পাশে থেকে ছুরি হাতে নিয়ে বলে…
রাহি: ডির্ভোস দিবি না হলে আমি এখনি নিজের হাত কাটবো।
রিফাত: দেখ রাগ ওঠাস না এসব বন্ধ কর।
রাহি: তোর বিশ্বাস হচ্ছে না তাই না।
এরপর রাহি ছুরি দিয়ে নিজের হাত কেটে ফেলে।
রিফাত রাহিকে এমন করতে দেখে কাছে গিয়ে রাহিকে ধরে বলে….
রিফাত : রাহি কি করলি এইটা।
রাহি: ডির্ভোস না দিলে বিষ খেয়ে মরে যাবো।
রাহির মুখে এসব শুনে রিফাতের চোখ দিয়ে পানি চলে আসে। রিফাতের মনে হচ্ছে যেনো কেউ তার বুকে অনাবরত ছুরি দিয়ে আঘাত করছে । অশ্রু চোখে রিফাত রাহির দিকে তাকিয়ে বলে…
রিফাত: আচ্ছা ডির্ভোস দিলে যদি তুমি খুশি থাকো তাহলে তাই হবে। এখন হাতটা ব্যান্ডেজ করে নাও।
রিফাত ডির্ভোস দিবে শুনে রাহি খুশি হয়।
রিফাত বড় একটা নিশ্বাস ছেরে চোখের পানি মুছে রাহির হাত ব্যান্ডেজ করার জন্য ফাস্টএইড বক্স নিয়ে আসে আর রাহির কাছে বসে। রিফাত রাহির হাত ধরতে যাবে তখনি রাহি হাত সরিয়ে নেয়।
রিফাত রাহির দিকে ছলছল চোখে তাকায়।
রাহি অন্যদিকে তাকিয়ে বলে…
রাহি: আমারটা আমি করে নিবো।
রিফাত বুক ভরা কষ্ট নিয়ে রাহির পাশ থেকে ওঠে পরে।
রিফাত: তোমার জন্য খাবার পাঠিয়ে দিচ্ছি উপরে, খেয়ে নিয়ো।
এই বলে রিফাত রুম থেকে বের হতে যাবে তখন রাহি বলে…..
রাহি: ডির্ভোস টা কবে দিবেন ।
রিফাত কষ্ট মনে চেপে বলে…
রিফাত: তাড়তাড়ি দেবার চেষ্টা করবো চিন্তা করো না, কারন তোমার সুখের জন্য আমি সব কিছুই করতে পারি।
রাহি: হুমম তাড়াতাড়ি দিয়ে দিয়েন আর আমি কাল সকালে বাবার বাসায় চলে যাবো, ডির্ভোস পেপার সেখানে পাঠিয়ে দিয়েন।
রিফাত আর সেখানে এক মূর্হত যেনো দাড়িয়ে থাকতে পারছে না। তাই তাড়তাড়ি সেখান থেকে বের হয়ে আসে।
রিফাত বাসা থেকে বের হয়ে রাস্তার পাশ দিয়ে আনমনে হাটছে। কিছু সময় হাটার পর একটা জায়গায়ই বসে পরে।
রিফাতের চোখ দিয়ে পানি ঝরছে।চোখের পানি বাম হাত দিয়ে মুছে রিফাত জোরে জোরে বলছে….
রিফাত: রাহি তুমি সত্যি আমার বিশ্বাসটা ভেঙ্গে দিলে। আমি তো তার কথা বিশ্বাস করিনি, সে তো বলেছিলো তুমি ডির্ভোস চাইবে, কিন্তু আমি যে তাকে বলে এসেছিলাম তুমি কখনো আমাকে ছেরে যাবে না। সব শেষ করে দিলে তুমি।
সারা রাত রিফাত বাসার বাহিরে ছিলো। ভোর সকালে বাসায় আসে আর রুমে গিয়ে দেখে রাহি ঘুমিয়ে আছে।
রিফাত ঘুমন্ত রাহির কাছে যায় আর তার পাশে বসে, তার দিকে তাকিয়ে বলে….
রিফাত: তুমি ছারা আমার আকড়ে ধরে বাঁচার মতো কেউ নেই। আমি তো তোমায় আমার জীবনের থেকে ও বেশি ভালবাসি। রাহি আমার খুব কষ্ট হচ্ছে, মনে হচ্ছে আমি মারা যাচ্ছি,আচ্ছা রাহি তুমি কি আমার কষ্ট টা একটু ও বুঝছো না। তোমাকে ছারা আমি কি করবে থাকবো। যাকে ছারা আমি একটা রাত কাটাতে পারি না, তাকে ছারা আমি সারাটা জীবন কি করে থাকবো বলো না। আজ তোমাকে শেষ দেখছি মন ভরে হয়তো আর তোমার এতো কাছে এসে, এতো মন ভরে দেখতে পাবো না তোমায়।
রিফাতের চোখ দিয়ে পানি ঝরছে আর কথা গুলো বলছে। কথা গুলো বলে রিফাত রাহির মুখের দিকে তাকিয়ে অনবরত নিরব কান্না করছে।
রিফাত আর সহ্য করতে পারছে না তাই রাহির মাথায় হাত বুলিয়ে, কপালে একটা চুমু দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়।
রিফাতের দাদু রিফাতকে রুম থেকে বের হতে দেখে রিফাতকে ডাকে…
দাদু: রিফাত এদিকে আসো।
রিফাত চোখের পানি মুছে দাদুর কাছে যায়।
রিফাত: কি হয়ছে দাদু।
দাদু: তোমার চেহারা এমন হয়ছে কেনো?
রিফাত : কই দাদু।
দাদু: চোখ ফুলে লাল হয়ে আছে,চেহার ও কেমন যেনো হয়ে গিয়েছে। দাদু কি হয়ছে আমাকে বলো না।
রিফাত আর নিজেকে আর সামলাতে পারেনি। তাই তার দাদুকে জরিয়ে ধরে কান্না করে দেয়।
রিফাতের কান্না দেখে দাদু জিঙ্গেস করে…
দাদু: কি হয়ছে, কান্না করো কেনো?
রিফাত: দাদু, রাহি আমার থেকে দূরে চলে যেতে চায়, সে আমার সাথে আর থাকবে না, আমাকে সে ডির্ভোস দিতে চাই।
এই বলে রিফাত কান্না করতে থাকে।
রিফাতের দাদু এসব শুনে থ হয়ে যায়। তবু নিজেকে সামলে রিফাতকে বলে…
দাদু: এসব তুমি কি বলছো?
রিফাত কান্না করতে করতে বলে…
রিফাত: দাদু এসব সত্যি।
দাদু: আমি রাহির সাথে কথা বলবো।
রিফাত: না দাদু, ওই আমাকে ছারা ভাল থাকবে, তাহলে তাই হোক। এই বিষয়ে তুমি রাহিকে কিছুই বলো না।
দাদু: তোর তো কষ্ট হচ্ছে।
রিফাত: দাদু সত্যিই আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে। তবু রাহি ভাল থাক। আমার পাগলীটার ভালর জন্য আমি না হয় কষ্টে থাকবো।
এরপর দাদু রিফাতকে তার রুমে নিয়ে যায়। রিফাত তার দাদুর কুলে মাথা রেখে চুপ করে শুয়ে আছে। হঠাৎ রিফাত বলে…
রিফাত: দাদু, আজ আমার মা বেঁচে থাকলে আমি তার কোলে মাথা রেখে শুয়ে থাকতে পারতাম, মাকে জরিয়ে মন খুলে কান্না করতে পারতাম তাই না।
দাদু বড় একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলে…
দাদু: হুমম রে দাদু।
রিফাত: আমার আজ মাকে খুব মনে পরছে, মনে হচ্ছে মায়ের কাছে যেতে। দাদু আমার না খুব কষ্ট হচ্ছে।
রিফাত কান্না করছে আর দাদু রিফাতকে শান্ত করার চেষ্টা করছে।
তখনি বুলি আসে দাদুর রুমে।
বুলি: ভাবী ব্যাগ লইয়া কই যানি যাইতাছে ভাই।
রিফাত বুলির কথা শুনে দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে রাহির কাছে আসে।
রিফাত: রাহি প্লিজ আমাকে ছেরে যেয়ো না।
রাহি: কালকের কথা মনে নেয় আপনার।
রিফাত: তুমি চলে গেলে আমি মরে যাবো। আমার প্রতি একটু দয়া করো।
রাহি: আপনি কাল বলে ছিলেন আমার সুখের জন্য সব করতে পারবেন তাহলে এখন কেনো যেতে না করছেন।
রিফাত: আমার সাথে থাকলে তুমি সুখে থাকবে না?
রাহি: না।
রিফাত রাহির কথাটা শুনে থ হয়ে যায়। কি করবে, কি বলবে তা ভেবে পাচ্ছে না। রিফাতের কথা বলতে অনেক কষ্ট হচ্ছে তাও নিজেকে সামলিয়ে বলে…
রিফাত: আচ্ছা যাও চলে আর কয়দিনের মধ্যে ডির্ভোস পেপার পেয়ে যাবে। তবু তুমি ভাল থাকো।
রাহি আর কিছু না বলে রিফাতের বাসা থেকে বের হয়ে যায়। রাহিকে বের হতে দেখে রিফাত ফ্লোরে বসে পাগলের মতো কান্না করে।
রিফাতের দাদু রিফাতকে শান্ত করার চেষ্টা করছে।

কয়েক দিন পর….
রিফাতে এখন সবসময় নিজের রুমে থাকে।কারো সাথে তেমন কথা বলে না, ঠিক মতো খায় না, সব সময় রাহির ছবি বুকে করে বসে- শুয়ে থাকে। ছবির রাহির সাথে কথা বলে আর একা একা কান্না করে রুমে বসে। রিফাত প্রায় পাগলের মতো হয়ে গেছে।

রিফাত নিজের রুমে শুয়ে আছে রাহির ছবি বুকে করে।
তখন রিফাতের দাদু আসে।
দাদু: রিফাত..
রিফাত: দাদু…
দাদু: রাহি আসছে নিচে…
রিফাত: আমার পাগলীটা এসেছে।
রাহির কথা শুনে রিফাত খুশি হয়ে যায়। তাড়তাড়ি দৌড়ে নিচে চলে আসে।
রিফাতকে দেখে রাহির খারাপ লাগতাছে। রাহির মন বলতাছে রিফাতকে জরিয়ে ধরতে তখনি অন্য কিছু ভেবে আবার রাগি ভাবে থাকে।
রিফাত রাহিকে দেখে খুশিতে বলে….
রিফাত: আমি জানতাম তুমি ফিরে আসবে। আমি যেমন তোমাকে ছারা থাকতে পারছি না তুমি ও তেমন পারছো না তাই ফিরে এসেছো তাই না আমার পাগলীটা।
রাহি কঠিন মুখ করে বলে…
রাহি: একদমই না, আমি ডির্ভোস পেপার নিয়ে এসেছি সাইন করার জন্য…
রাহির কথা শুনে রিফাতের হাসি মুখটা নিমিষেই বিলিন হয়ে যায় আর তার মুখে মেঘের মতো কালো ছায়া এসে ভর করে।
রাহি: তাড়তাড়ি পেপারে সাইন করে দেন আর আমি ও করে দিবো।
এরপর রাহি ডির্ভোস পেপারে সাইন করতে যায়। তখনি রিফাত….
চলবে….