আমার গল্পে আমি খলনায়ক পর্ব-১৭+১৮

0
138

#আমার_গল্পে_আমি_খলনায়ক
#MD_Nachemul_Hasan
#part_17

“কথাটা বলেই রায়হান রাজিবের গলায় রশি পেচিয়ে ধরে।রশি দিয়ে গলা পেচিয়ে ধরতেই, রাজিব ছটফট করতে শুরু করে। বাঁচার জন্য রায়হানের হাতে, খামচে ধরে। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয় না, রায়হান আরো জুড়ে রশি পেচিয়ে টান দেয়। রাজিব ছটফট করতে করতে মারা যায়। রাজিবের নরা-চড়া বন্ধ হয়ে যায়।রাজিব আর এই দুনিয়াতে নেই, এটা বুঝতেই রায়হান গলার মধ্যে পেচিয়ে রাখা রশি সরিয়ে ফেলে। তারপর রাজিবের পকেট থেকে ফোনটা বের করে অন করে। যাক ভালোই হয়েছে ফোনটিতে লক দেওয়া নেই। তারপর রায়হান গ্যালাড়িতে প্রবেশ করে। একে একে সব ছবি দেখতে দেখতে নিচে একটা ছবি দেখার সাথে সাথে রায়হানের মুখের ভাব পরিবর্তন হয়ে যায়।সে যেনো অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এটা কি করে সম্ভব! ও কি করে আমাদের ম্যাডাম হতে পারে,,,,,।সময় নষ্ট না করে রায়হান রাজিবের কল লিস্টে যায় । কল লিস্টে গিয়ে ও ছবিতে দেখা মহিলার নাম্বার দেখতে পায়। আমার মাথা একদম কাজ করছে না! এটা কি করে সম্ভব! ওর মতো একটা বোকা মহিলা কিভাবে এই নারী চক্রের মূল হোতা হতে পারে।

রায়হান আর সময় নষ্ট না করে রাজিবের লাশটি কে টেনে হিচরে নিয়ে যায় ফ্যাক্টরির পিছনে। ওখানে ঘন জঙ্গল থাকায় লোকজন আসা যাওয়া করে না । এখানেই রাজিবের লাশটা পুঁতে ফেলতে হবে,, তাই আর সময় নষ্ট না করে সাথে আনা মাটি খুরার যন্ত্র দিয়ে মাটি খুরতে শুরু করে। প্রায় দুই ঘন্টা ধরে মাটি খুরে রায়হান একদম ক্লান্ত হয়ে যায়। বেশি যায়গা খুরতে পারে নাই,, যতোটুকু হয়েছে এখন এভাবেই মাটি চাপা দিতে হবে । আর সময় নষ্ট না করে রাজিবের লাশটিকে গর্তে ফেলে দিয়ে মাটি চাপা দিতে শুরু করে। রাজিবের লাশটি কে মাটি চাপা দিয়ে রায়হান আবারও ফ্যাক্টরির ভিতরে আসে। ফ্যাক্টরির ভিতরে আসতেই তার চোখ যায় গাড়িটার দিক। তারপর গিয়ে মালবাহী ট্রাকের সামনে দাঁড়ায়,রায়হান সাথে সাথে ট্রাকের গেইটটা খুলে। গেইট খুলার সাথে সাথে দেখতে পাই তিশাকে হাত-পা বেঁধে, মুখে টেপ লাগিয়ে গাড়ির মধ্যে ফেলে রাখা হয়েছে, তিশার সাথে বাকি চব্বিশটা মেয়ের অবস্থা ও এক-ই, তাদের কে ও হাত-পা বেঁধে মুখে টেপ লাগিয়ে ফেলা রাখা হয়েছে। অতিরিক্ত শরীর খারাপের কারনে,তিশা সেন্স লেস হয়ে গিয়েছে। সকল মেয়েদের অবস্থা ও খারাপ, কতদিন ধরে তাদেরকে এই নরকে আটকে রাখা হয়েছে তারা হয়তো নিজেরাও জানে না। না ঠিক মতো খাবার খেতে দিয়েছে, না ঠিক ভাবে ঘুমাতে দিয়েছে। তাদের ওপর দিয়ে চলেছে শুধু পাশবিক নির্যাতন।এই একদিনে তিশার অবস্থা ও অনেক খারাপ হয়ে গিয়েছে,আগে থেকেই কোমরের মধ্যে ব্যাথা ছিলো,এখানে নিয়ে আসার পরে তা দ্বিগুণ হয়েছে। কাল থেকে না খাওয়া, তারওপর হাত-পা বেঁধে ফেলে রাখা এই সবকিছু মিলিয়ে ভয়ে আর দূর্বলতায় অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে তিশা।তিশার এই অবস্থা দেখার সাথে সাথে রায়হানের কপালের রগগুলো ফুলে যায় , চুওয়াল শক্ত হয়ে ওঠে। রায়হান মনে মনে নিজেই আওরাই,,কাজটা তুমি ঠিক করো নাই ম্যাডাম। এর শাস্তি তোমাকে পেতেই হবে, যা হবে খুব ভয়ানক। আমার মেয়েটা এমনিতেই অসুস্থ, তুমি জানা সত্যেও তার সাথে এরকম একটা খারাপ কাজ করলে।এই কারনেই তোমাদের মতো মহিলাকে আমি রায়হান ঘৃনা করি!চরম ঘৃনা।আমার থেকে তুমি প্রতিশোধ নিতে গিয়ে আমার মেয়েকে এই মরণ খেলায় নামিয়ে বড়ো ভুল করেছো।যার ভর পাই তোমাকে তোমার মৃত্যু দিয়ে দিতে হবে! এবং তা খুব শীগ্রই। নিজের মৃত্যুর দিন গুনতে শুরু করো,তোমাকে আবারও মেরে আমি,,,#আমার_গল্পে_আমি_খলনায়ক হবো,,,,বলেই পৈশাচিক হাসি হাসে!

রায়হান কে গাড়ীর দরজা খুলতে দেখে ময়েগুুলো ভয় পেয়ে যায়। পিট পিট করে তাকাই দাড়িয়ে থাকা লোকটার দিকে,, তাদের দিকেই এগিয়ে আসছে,,, মেয়ে গুলো এখন আরও ভয়ে সিটিয়ে যায়।রায়হান মেয়েগুলো কে ভয় পেতে দেখে,,তাদের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে,,,

__ভয় পেও না! আমি তোমাদের কোনো ক্ষতি করবো না। আমি তিশার বাবা, তোমাদের এখান থেকে নিয়ে যেতে এসেছি।নারী পাচার-কারীরা চলে গেছে পালিয়ে, তোমাদের আর কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। এখন তোমরা সবাই নিজেদের বাড়িতে আবারও ফিরে যাবে। আমি তোমাদের বাসায় পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করবো।

রায়হানের মুখে এইসব কথা শুনার পরে মেয়েগুলোর মুখে যেনো আশার আলো দেখা দিয়েছে।এতখন তো তাদের মনে হচ্ছিলো যে আজকেই তাদের পাচার করে দেওয়া হবে, কিন্তু এই লোকটার কারনে তারা আজ বেঁচে যাবে। কিন্তু তারা তো আর জানে না যে তাদের এই পাচার করার পিছনের মুল হোতাদের মধ্যে একজন উনিও। কিন্তু নিজের সার্থে হাত পড়াই উনি পল্টি খেয়ে যান। যদি জানতো তাহলে হয়তো আর আশার আলো দেখতে পেতো না।

রায়হান একে একে সব-কয়টা মেয়ের হাত -পায়ের বাঁধন খুলে দেয়। সবার লাস্টে আসে তিশার কাছে, এখনো অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। মুখটা মলিন হয়ে আছে, একদিনে মেয়েটার অবস্থা একদম নাজেহাল করে দিয়েছে,মেয়েটার মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না।আসলে একজন বাবা যতোই খারাপ হোকনা কেনো তার সন্তানের প্রতি সে কখনো নির্দয় হতে পারে না। আর একটা মেয়েকে পৃথিবীতে তার বাবার থেকে হয়তো কেও বেশি ভালো বাসে না। এটা ঠিক যে ও একজন নারী পাচার কারী,, কিন্তু সে ও একজন মানুষ। তার ও সকলের মতোই মন রয়েছে, মনে রয়েছে ভালো বাসা, কিন্ত পরিস্থিতি তাকে এমন বানিয়ে দিয়েছে। দিশার জন্য যেমন তার মনে ভালোবাসা আছে,, তিশার জন্য ও সেম ভালোবাসা।তিশার এই অবস্থা দেখে, তার চোখ দিয়ে দুফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে। রায়হান গিয়ে তিশার সামনে বসে তিশার মাথাটা নিজের পায়ের ওপর রেখে হাত -পায়ের বাধনটা খুলে দেয়।তারপর মেয়েকে হালকা হাতে বুকে আগেলে নেয়।এভাবে কিছুখন থাকবার পরে তিশাকে কোলে তুলে নিয়ে গাড়ী থেকে বের হয়ে আসে। সাথে মেয়েগুলো ও গাড়ী থেকে বের হয়ে আসে। তারপর থানায় কল করে পুলিশ কে আসতে বলে।রায়হান এখানে আসার আগে থেকেই পুলিশ কে বলে রেখেছিলো যে আজকে একটা নারী পাচারকারী গ্যাং এর থেকে মেয়েদের কে ওদ্ধার করবে,ওখানে উনার নিজের মেয়েও আছে। এতে যদি ও রায়হান কে সাহায্য করার কথা বললেও রায়হান না করে দেয়। রায়হানের বন্ধু একজন এসপি পদে থাকায় আরোও সুবিধা হয়েছে রায়হানের ওপর কেও সন্দেহ করে নি। অবশ্য রায়হানের এসপি বন্ধু জানে না যে রায়হান নারী পাচার কারী গ্যাংএর একজন মেম্বার। যদি জানতো আদৌও রায়হান এতোদিন বাহিরে ঘুরতে পারতো না৷ তাকে জেলের ভাত খাইয়ে ছাড়তো তার বন্ধু, সে নিজের যায়গায় একদম স্ট্রীক্ট।রায়হানের ওপর ও সন্দেহ এর তীর যেতো, কিন্তু তার মেয়ে থাকার সে এইবারের যাএায় বেঁচে যায়।

কিছুখনের মধ্যেই পুলিশ এসে পরে,,,, পুলিশ এসে এখানে এতখন যা যা হয়েছে তা রায়হান কে জিজ্ঞেস করে। রায়হান অনেক কিছু বানিয়ে বলে দেয় পুলিশ কে। এবং মেয়েদের জিজ্ঞাসা বাদ করা হলে তারাও বলে যে রায়হান আংকেল এর জন্য তারা বেঁচে গেছে,তাই পুলিশ আর রায়হানের ওপর সন্দেহ করে নি। চব্বিশটা মেয়েকে সাথে করে নিয়ে থানার চলে যায়। আজকে অনেক রাত হয়ে গিয়েছে কালকে তাদের নিজ নিজ বাড়ীতে পৌঁছানোর ব্যবস্তা করা হবে। আর কাল থেকেই পুলিশ ফোর্স নেমে পড়বে,নারী পাচারকারী গ্যাংকে ধরার জন্য। রায়হান তার এসপি বন্ধুর মুখে এই কথাটা শুনে কিছুটা ঘাবড়ে যায়। যদিও বন্ধুর সামনে কোনো রিয়াকশন দেয় নাই।কিন্তু বন্ধু যাওয়ার পড় সে অনবরত ঘামতে শুরু করে, তার বন্ধু আজ পর্যন্ত একটা কেইস ও হারে নাই। এই নারী পাচারকারী কেইসটাও যে তার বন্ধু হারবে না সে তা ভালো করেই জানে, শুধু একটু টাইম লাগবে কিন্তু সে লক্ষ পর্যন্ত পৌঁছে ছাড়বে।

পুলিশ মেয়ে গুলো কে নিয়ে চলে গেছে সেই কখন, রায়হান ও আর সময় নষ্ট না করে তিশাকে কোলে তুলে গাড়ী অব্দি নিয়ে আসে। তিশাকে গাড়ীর সিটে রেখে,, গাড়ী থেকে বেড়িয়ে আসতে যাবে এমন সময় তিশার জ্ঞান ফিরে আসে,,, সে তার চোখের সামনে তার বাবা -কে দেখে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দেয়,,,,মেয়েকে এভাবে বাচ্চাদের মতো কাদতে দেখে রায়হানের চোখ দিয়েও পানি গরিয়ে পরতপরতে শুরু করে। একজন বাবার কাছে সবচেয়ে আদরের মানুষ টি হলো
তার মেয়ে
একটা মেয়ে কে তার বাবার চেয়ে আর কেউ ভালোবাসতে পারেনা
বাবা হচ্ছে এমন একটি রাজা যার রাজত্বে মেয়েরা সবসময় রাজকন্যা হয়ে থাকে
কারণ প্রতিটা মেয়েই তার বাবার কাছে রাজকন্যা
বাবা মানে..?
জড় কলম, সাদা পাতায় লিখন ।
বাবা মানে..?
আবদার করার পাত্র, নেই কোনো স্বার্থ ।
বাবা মানে …?
বাবার নামে, আমাকে সকলে চেনা, প্রথম পথ চলা
বাবা মানে…?
সকল ছেলে মেয়ের ব্যাংক একাউন্ট ।
বাবা মানে… ?
প্রথম শিক্ষার আলয়, নিরাপদ আশ্রয় ।
বাবা মানে …?
পুরনো ড্রেসে নতুন মনোভাব, দেখতে দেয়না অভাব।
বাবা মানে …?
গুরুজনদের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় শেখানো ।
বাবা মানে …?
গল্পের আড়ালে থাকা, একজন মহানায়ক ।
কিন্ত এর কোনোকিছুই আমি করতে পারিনি আমার মেয়ে তিশার জন্য। আমি ওর গল্পের আড়ালে থাকা, একজন মহানায়কের যায়গায় হয়ে গেলাম #খলনায়ক

রায়হান হালকা হাতে তিশার মাথা তুলে চোখের পানি মোছে দিয়ে গাড়ী থেকে বের হয়ে এসে কাকে যেনো কল লাগায়,,,,কয়েকবার কল দিতেই ওপাশ থেকে কল রিসিভ করে,,,,

__হ্যালো আংকেল তিশাকে পেলেন! ও এখন কেমন আছে! ওকে নিয়ে কি হসপিটালে যাচ্ছেন নাকি বাসায়। হসপিটালে গেলে আমাকে বলেন কোন হসপিটালে যাচ্ছেন! আমি ওখানে আসছি।

কিছুটা আগ্রহ নিয়ে কথাগুলো বলেন সায়ান

__হুম তিশা আমার সাথেই আছে। ওকে নিয়ে এখন বাসায় বা হসপিটাল কোথায় ই যাওয়া হচ্ছে না।

__তো কোথায় যাবেন আংকেল ওকে নিয়ে!

__কাজী অফিসে,তুমি তাড়াতাড়ি কাজি অফিসে চলে আসো। “যদি তোমার তিশাকে বিয়ে করতে কোনো আপওি না থাকে’।কথাটা বলেই রায়হান কলটি কেটে দেয়।

সায়ানের রায়হানের বলা কথাটি বুঝতে কিছুটা টাইম লেগে যায়! এটা কি স্বপ্ন দেখছে নাকি সত্যি! সে তার পছন্দের মেয়েকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পাবে।সায়ান একমুহূর্ত দেরি না করে রেডি হয়ে বাসা থেকে বেড়িয়ে পরে,, কাজী অফিসের উদ্দেশ্যে,,।

সায়ানের সাথে কথা বলা শেষ করে রায়হান মুঠোফোনটি পকেটে রাখতে নিবে এমন সময় আবার কে যেনো কল করে রায়হানের মোবাইলে,,,, কে কল করেছে দেখার জন্য মোবাইল সামনে নিতেই আহিলের নাম দেখে কিছুটা ভ্রকুচকে ফেলে রায়হান। রায়হান সাথে সাথে কলটি কেটে দেয়,, কিন্তু আবার আহিলও সাথে সাথেই কল করে,,,,,রায়হান না পারতে আহিলের বার বার কল দেওয়ায় বিরক্তি নিয়ে কলটি রিসিভ করে।

__হ্যালো কাকা, তিশাকে পেয়েছেন! ও এখন কেমন আছে, কাকা প্লিজ বলেন না। ও ভালো আছে তো,,,আহিলের মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না কান্নার জন্য।

রায়হান কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বলে,,,

__হ্যাঁ তিশাকে পেয়েছি । কিন্তু, তোমাকে না বলেছি আমার মেয়ের কাছ থেকে দূরে থাকতে, তাহলে আমার মেয়ের খুঁজ কেনো নিচ্ছো।

__কাকা আজকেই লাস্ট বারের মতো, আর কখনো তিশার সামনে ও আসবো না। আপনি তাড়াতাড়ি তিশাকে নি বাসায় আসেন৷

__তিশাকে নিয়ে এখন বাসায় আসতে পারবো না, আর তিশা কখনে ওই বাসায় আর ফিরে যাবে না। ওকে নিয়ে আমি এখন কাজী অফিসে যাচ্ছি। আজকে তিশাকে বিয়ে দেবো সায়ানের সাথে। তুমি আর আমার মেয়ের কাছে আসতে পারবে না । আমার মেয়েকে তুমার থেকে মুক্তি দেবো আমি।কথাগুলো ব’লে কলটি কেটে দেয় রায়হান।

রায়হানের মুখে তিশার বিয়ের কথা শুনার সাথে সাথে আহিলের রক্ত গরম হয়ে ওঠে, হাতে থাকা মোবাইলটি কে এক আছাড় মেড়ে ভেঙে ফেলেছে। সে তার প্রেয়সী কে কিছুতেই হারাতে চায় না। তার প্রেয়সী অন্য কারো হয়ে যাবে সে এখানে বসে থাকবে তা কি করে সম্ভব! তাই আহিলও তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে বেড়িয়ে পরে কাজী অফিসের উদ্দেশ্যে,,,,,,,,,

চলবে,,,,,,,,,,,,

#আমার_গল্পে_আমি_খলনায়ক
#MD_Nachemul_Hasan
#part,18

রায়হানের মুখে তিশার বিয়ের কথা শুনার সাথে সাথে আহিলের রক্ত গরম হয়ে ওঠে, হাতে থাকা মোবাইলটি কে এক আছাড় মেড়ে ভেঙে ফেলেছে। সে তার প্রেয়সী কে কিছুতেই হারাতে চায় না। তার প্রেয়সী অন্য কারো হয়ে যাবে সে এখানে বসে থাকবে তা কি করে সম্ভব! তাই আহিলও তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে বেড়িয়ে পরে কাজী অফিসের উদ্দেশ্যে,,,,,,

রায়হান আর একমুহূর্তে দেরি না করে, গাড়িতে ওঠে বসে পরে তিশার পাশে । তারপর ড্রাইবারকে উদ্দেশ্য করে বলে,,,

__মজনু গাড়ী নিয়ে কাজি অফিসে চলো।

রায়হানের মুখে কাজি অফিসের কথা শুনে কিছুটা অবাক হয় মজনু আর তিশা। কৌতূহল বসে তিশা রায়হান কে জিজ্ঞেস করে,,,,

__আব্বু কাজি অফিসে কেনো! আমরা এখন কাজি অফিসে কেনো যাবো!ওখানে কি আপনার কোনো কাজ আছে।

__হুম কাজ আছে, আজকে আমি আমার বাবা হওয়ার দায়িত্ব পালন করবো।

রায়হানের কথার কোনো মানেই তিশা বুঝতে পারে না,

__বাবা হুওয়ার দায়িত্ব পালন করবেন মানে বুঝলাম না কিছু!

__কিছুখন পরে তোমার বিয়ে সায়ানের সাথে, তোমাকে বলেছিলাম না যে কিছুদিনের মধ্যে তোমার বিয়ে দিবো!

__না বাবা আমি কিছুতেই এই বিয়ে করতে পারবো না। আমি আহিল কে ভালোবাসি ওকে ছাড়া আমি অন্য কাওকে বিয়ে করতে পারবো না। যদি করতে হয় আমি ওকেই বিয়ে করবো আর না হয় অন্য কাওকে বিয়ে করবো না। আহিল কে না পেলে আমি বাঁচব না।

তিশার মুখে এইসব কথা শুনে রায়হানের মাথা গরম হয়ে যায়।সাথে সাথে গাড়ির মধ্যেই তিশার গালে জুড়ে একটা থাপ্পড় মারে। থাপ্পর চুটে তিশা কান্না করতে শুরু করে দেয়।

__তোমার এতো বড়ো সাহস তুমি আমার মুখের ওপর কথা বলো। আহিল কে যে বিয়ে করার কথা বলছো, তোমার এতবড় বিপদের সময় সে চুপ করে বসেছিলো। একবার ও তোমাকে খুজতে বের হয় নায়, তোমাকে হারানোর ভয় আমি তার চোখে একবারও দেখি নাই। তুমি এই ছেলেকে বিয়ে করবে তাই না! যে তোমার কিডন্যাপ হয়েছে শুনার পড়ে একবার ও আমার সাথে কথা বলে নাই যে কি করে তোমাকে খুঁজে বের করা যায়। নিজের মতো শুধু রুমে বসে ছিলো, তোমার মা’র মতো।এই তোমার চার বছরের প্রনয়ের সম্পর্ক, গার্লফ্রেন্ড কে কিডন্যাপ করা হয়েছে, আর বয়ফ্রেন্ড বাসায় বসে আরাম করে। আমি কিছুতেই এরকম একটা ছেলের হাতে তোমাকে তুলে দিবো না। আমি বাবা হয়ে কি করে নিজের মেয়েকে একটা রেসপন্সিবেল ছেলের হাতে তুলে দিবো! উওর আছে তোমার কাছে! নেই না!আমি জানতাম থাকবেও না।তাই আমি যেই ডিসিশন নিয়েছি সেটাই ফাইনাল । আমি তোমাকে কিছুতেই আমার বাসায় পুনরায় নিয়ে যেতে চাই না, এতে তোমার বিপদ বাড়বে বয় কমবে না। তাই আজকেই তোমার সাথে সায়ানের বিয়ে দিয়ে আমি একটু নিশ্চিন্তে মরতে চাই।সায়ন হয়তো এতখনে চলে আসতেছে।তুমি কাজি অফিসে গিয়ে আবার নতুন কোনো ঝামেলা তৈরি না করো তাই আমি তোমাকে, এখানেই সব কথা বললাম।

__না আব্বু আমি তো আপনার মেয়ে! আপনি আমার এতোবড়ো সর্বনাশ করবেন না। আমি ওই সায়ান কে কিছুতেই বিয়ে করতে পারবো না।

__তো করো না! তোমার ইচ্ছে। আমি আর তোমার কে! আমি কি বলবে তুমায়! শুধু একটা কথাই বলতে চাই, যদি আহিল কে বিয়ে করতে চাও আমার লাশের ওপর দিয়ে তোমাকে গিয়ে আহিল কে বিয়ে করতে হবে। আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী হবে তুমি,শুধুই তুমি। মেয়ের জন্য ভালো চাইতে গিয়ে বাবার মৃত্যু ব্যপারটা মন্দ না, কি বলো তিশা!

বাবার মৃত্যুর জন্য সে দায়ী থাকবে রায়হানের মুখে এই কথা শুনে তিশা কিছু বলতে গিয়ে ও আর বলে না। চুপ করে যায় সে, তারপর কান্না বরা কন্ঠে জবাব দেয়,,,

__আমি এই বিয়েতে রাজি আব্বু।

তিশার মুখে এই একটা জবাব শুনার জন্যই যেনো রায়হান অপেক্ষা করছিলো। তিশার মুখে রাজি কথাটা শুনে রায়হানের মুখে হাসি ফুটে ওঠে। আলতো হাতে তিশার মাথায় হাত ভুলিয়ে দিয়ে তিশাকে বলে,,,,

__আজকে তুই তোর আব্বুর ওপর রাগ করে আছিস আমি জানি! কিন্তু একদিন তুই নিজেই তোর আব্বু কে ধন্যবাদ দিবি, সায়ানের মতো একটা ছেলেকে তোর লাইফে এনে দেওয়ার জন্য। আফসোস তখন আর আমি থাকবো না। কান্না বেজা কন্ঠে কথাগুলো বলে, আলতো হাতে তিশার চোখের পানি গুলো মুছে দেয় রায়হান।

__
সায়ানের মুখে যেনে বিশ্ব জয়ের হাসি, সে তার মায়াবতী কে পেতে চলেছে।তাড়াতাড়ি করে রেডি হয়ে বের হওয়ায়, রাস্তায় আসতেই গাড়ি পেয়ে যায়। তারপর গাড়িতে ওঠে কাজি অফিসে চলে আসে। রায়হান আর তিশাও চলে এসেছে কাজি অফিসে। তিশার শরীর খারাপ থাকায় রায়হান একহাতে তিশাকে ধরে রেখেছে। সায়ান তিশা আর রায়হানের দিকে এগিয়ে আসে তারপর রায়হান কে সালাম দিয়ে তিশাকে জিজ্ঞেস করে যে সে কেমন আছে! কিন্তু আশানুরূপ কোনো ফল পাইনি। তিশা সায়ানের কথার কোনো জবাব দেয় না, তার চোখ দিয়ে শুধু অনবরত পানি পরছে। তারপর সায়ান, তিশা আর রায়হান কাজি অফিসের ভিতরে ডুকে৷

এদিকে আহিল বাসা থেকে বেড়িয়ে রাস্তায় আসতেই গাড়ী পেয়ে যায়।তারপর দ্রুত গাড়িতে ওঠে ড্রাইবার কে বলে কাজি অফিসে যাওয়ার জন্য। গাড়ি চলতে শুরু করে আপন গতিতে।হঠাৎ করে গাড়ী থেমে যায় মেইন রোডে। এরকম একটা সময়ে রাস্তায় জ্যাম থাকায়, চরম বিরক্তিতে আহিলের মুখ দিয়ে,,” চ ” জাতীয় শব্দ উচ্চারণ হয়।প্রায় পনেরো মিনিট জ্যামে থাকার পরে গাড়ী আবার চলতে শুরু করে।

সায়ান আর তিশার বিয়ে সম্পূর্ন হলো। সায়ানের মুখে যেন বিশ্ব জয়ের হাসি। সে তার মায়াবতী কে নিজের করে পেয়েছে। প্রথম দেখায় প্রেমে পড়া,দ্বিতীয় দেখায় ঝগড়া, আর তৃতীয় দেখায় বিয়ে।

“একেই হয়তো বলে ভাগ্য! যেই মানুষটার সাথে চার বছরের সম্পর্ক, সেই মানুষটা আজকে পর হয়ে গিয়েছে। আর যেই ছেলেকে তিশা ভালো করে চিনতোও না, সেই ছেলে এখন তার স্বামী। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস!এইসব কথা ভাবতে ভাবতে চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে তিশার। কস্টে বুক ফেটে যাচ্ছে তার, সে তার আহিল কে হারিয়ে ফেলেছে। কি করে সে সায়ান কে আহিলের যায়গা দিবে! না, কখনোই সে আহিলের যায়গা অন্য কাউকে দিতে পারবে না।

প্রায় এিশ মিনিট পরে আহিল এসে কাজি অফিসের সামনে দাঁড়ায়। গাড়ী থেকে নামতেই তার সামনে তিশাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে, তিশার দিকে এগিয়ে যেতে শুরু করে।এগিয়ে এসে তিশার হাত ধরে বলেতে শুরু করে,,,,,

__তিশা আমি এসে পড়েছি তোমার বিয়ে অন্য কারো সাথে আমি হতে দিবো না। তোমার সাথে আমার বিয়ে হবে,আজকে আর এখুনি।

আহিলের হাত থেকে তিশার হাতটা ছাড়িয়ে, তিশাকে টান দিয়ে নিজের পাশে নিয়ে দাড় করায়। আহিলের উদ্দেশ্যে বলে,,,
__তোমার সাহস কি করে হয়, আমর স্ত্রী এর গায়ে হাত দেওয়ার!

সায়ানের মুখে স্ত্রী কথাটা শুনে যেনে আহিলের পুরো পৃথিবী ওল্টে গেছে। এটা কেনো হলো ওর সাথে,,,,

চলবে,,,,,,,,,