আমার গল্পে তুমি পর্ব-০৫

0
466

#আমার_গল্পে_তুমি🍁🍁
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী(writer)
#৫_পর্ব
,
পরশের কথায় দুজনের হুশ ফিরে,, দুজন দুদিকে ছিটকে সরে যায়।

ছিঃ ওনি আমার এতো কাছে ছিলো, ইয়ানা তোর বুদ্ধি সুদ্ধি কি সব লোপ পেয়েছে?? লোকটা এখন আমায় কী ভাববে, আর পরশই বা কি মনে করবে ধ্যাত,, মনে মনে কথাগুলি বলে নিজের মাথায় নিজেই একটা চাটি মারলো ইয়ানা।

সিট আমি এসব কি করছিলাম ওই মেয়েটার এতোটা কাছে কি করে যেতে পারলাম,, নো নো আর্দ্র নিজেকে সামলা এসব ঠিক নয়,,, মনে মনে এসব বলে নিজের মনকে সান্ত্বনা দিতে লাগল আর্দ্র।

কি হলো তোমরা কথা বলছো না কেনো,,, কি করছিলে ওখানে?? আচ্ছা ঠিক আছে আমি তাহলে আব্বুর থেকে জিগাস করে আসি,, এই বলে পরশ দরজার দিকে যেতে গেলেই আর্দ্র বলল।

এই সেরেছে রে,,, আরে আমার ছোট্ট চাম্প আসোলে কি বলোতো তোমার কিউটিপাই না ভীষণ ভিতু ভয় পেয়ে গেছিলো তাই আমি ওনাকে ধরে রেখেছিলাম।

আর্দ্রের কথা শুনে ইয়ানা ভ্রু কুঁচকে কিছু বলতে যাবে তখনি ভাবলো না থাক এই পিচ্চি টা যা বিচ্ছু না জানি আবার সবাই কে কীসব বলে তার বদলে আর্দ্র যা ভুলভাল বুঝাচ্ছে বোঝাক , ,,, আচ্ছা আমি নিচে থেকে একটু পানি খেয়ে আসছি৷ এই বলে ইয়ানা দরজা দিয়ে বাইরে বেরিয়ে সামনে তাকাতেই ওর চোখ কপালে উঠে গেছে,,,কেননা সামনে অনিক অন্তরা কে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে সম্ভবত অন্তরাকে মানানোর চেষ্টা করছে,,, এভাবে অপত্যাশিত ভাবে ইয়ানা কে দেখে অনিক অন্তরা কে ছেড়ে দিয়ে দূরে দাঁড়ালো।

আ,,আরে ত,,তুমি কখন এলে,, এসো ভিতরে এসে,, নিজেকে ঠিক করে বলল অন্তরা।

আব ইয়ে ম,,মানে আমি কিছু দেখেনি,, এই বলে ইয়ানা চোখে হাত দিয়ে আবার রুমে ঢুকতে গেলে আর্দ্রের সাথে ধাক্কা লাগল।

পরশকে ভুলভাল বুঝিয়ে কেবলি আর্দ্র নিচে যাচ্ছিলো তখনি ইয়ানার সাথে ধাক্কা খেলো,,, এই তুমি সব সময় এমন ছোটাছুটি করো কেনো?? একটু ধীরে সুস্থে চলতে পারো না??

আব,, আপনি, এসব কি যে ইচ্ছে,,, এই আপনি দেখে চলতে পারেন না চোখ থাকতে অন্ধ,, এই বলে কপাল ডলতে ডলতে পরশের কাছে চলে গেলো,, এটা বুক নাকি লোহা,, ভাগ্যিস ওনার বুকের সাথে ধাক্কাটা লাগলো নয়তো মাথার সাথে লাগলে আমার মাথাটাই ফেটে যেতো উফফ ঝামেলা। মনে মনে কথাগুলি বলে পরশকে পড়ানো শুরু করলো তারপর পড়ানো শেষে সবার থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা হলো।

রাতে,,,,,,

শোনোনা আম্মু কাল সকাল সকাল আমায় ডেকে দেবে তো একটা ইন্টারভিউ আছে,, খেতে খেতে বলল ইয়ানা।

তুই যে বললি ইন্টার পাশ এর সার্টিফিকেট দিয়ে এই চাকরি হবে না তাহলে।

আরে আম্মু চেষ্টা করতে অসুবিধা কোথায় দেখি কি হয় ।

আচ্ছা তুই যা ভালো বুঝিস কর, তবে সাবধানে।

তুমি এতো চিন্তা করো নাতো, তাহলে আবার তোমার শরীল খারাপ করবে,, আর তোমার দোয়া আছে তো ইনশাআল্লাহ আমার কিছু হবে না।

খাওয়া দাওয়া শেষ করে মায়ের হাতে হাতে সবকিছু গুছিয়ে দিয়ে নিজের রুমে চলে আসলাম,,, আজকে যদি আবারও ওই স্বপ্ন টা দেখি তাহলে এবার ওই অন্ধকারে থাকা লোকটার হাত ধরে টেনে আলোয় নিয়ে এসে ওনার মুখ দেখবো হুম,,তবে স্বপ্নে কি হাত ধরে টানা যায়?? তাতে কি আমার স্বপ্ন আমি যেভাবে সাজাবো সেভাবেই হবে হুমম,, এই বলে ইয়না ঘুমিয়ে পরলো।

,,,,,সকলে,,,,

দূর ঘোড়ার ডিমের মাথা আজকেও ওই লোকটার মুখ দেখতে পারলাম না,, দেখেই নিতাম কিন্তু মাঝে মায়ের ডাকে ঘুমটাই ভেঙ্গে গেলো,,, সাড়ে দশটাই ইন্টারভিউ তাই আজকে আর ভার্সিটি যাবো না,, সকালের যে টিউশনি টা আছে ওটাও আজকে ছুটি দিয়েছি একদম ফ্রেশ মুডে ইন্টারভিউ দিতে যাবো।

তারপর সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে ফাইলের ভিতর সব কাগজ পএ নিয়ে ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে আম্মুর থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম,,,।

ঠিকানায় তো এটাই,, বাপরে কত্তবড় অফিস, রিকশা ভাড়া দিয়ে,, কাঁচের দরজা ঠেলে ভিতরে গিয়ে সোজা রিসিপশনের মেয়েটির কাছে জিগাস করলাম ইন্টারভিউ কোথায় নেওয়া হচ্ছে,, ওনি বলল সেকেন্ড ফ্লোরে,, আমি মেয়েটিকে ধন্যবাদ জানিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলাম, গিয়ে দেখি ওখানে ওয়েটিং রুমে অনেকেই বসে আছে আর কেউ কেউ পায়চারি করছে,, সবাই আমার থেকে বড় এখানে মনে হয় আমিই সবার ছোট,, এতোজন অভিজ্ঞ মানুষের মধ্যে আমার চাকরি হওয়া অসম্ভব,, তবুও আল্লাহ আল্লাহ করে দাঁড়িয়ে আছি,,

প্রায় অনেক সময় পর আমার ডাক পড়ল আমি মনে মনে আল্লাহ নাম নিয়ে দরজার কাছে গিয়ে বললাম,,

মে আই কামিং স্যার।

ভিতর থেকে গম্ভীর কণ্ঠে বললো,, ইয়েস কাম।

আমি ভয়ে ভয়ে ভিতরে গিয়ে দাঁড়াতেই সামনে থেকে একজন বলল বসুন,, আমি মাথা উঁচু করে সামনের মানুষ টাকে দেখে একটা শুকনো ঢোক গিললাম,, এটা তো আর্দ্র ,, এখন আমি কি করবো এখান থেকে ছুট্টে পালিয়ে যাবো?? না না তাহলে এটা অভদ্রতা দেখায়,,, তাহলে কি করবো,, আমার ভাবনার মাঝেই একজন লোক বলল।

কি হলো বসুন??

জ,,,জি,, এই বলে আমি চেয়ারে বসে পড়লাম।

ম্যানেজার সাহেব আপনি একটু বাইরে যান আমার এনার সাথে একটু কথা আছে,, আর্দ্র।

কি হলো ওনি ম্যানেজার কে বাইরে যেতে বলল কেনো,, কি করতে চাইছেন কি ওনি,, আল্লাহ বাঁচাও, মনে মনে বলল ইয়ানা।

জি স্যার,, এই বলে ম্যানেজার বাইরে চলে গেলো,, আর্দ্র চেয়ারে নড়েচড়ে বসে বলল,,,তা মিস ইয়ানা আপনি এখানে তাও আবার আমার অফিসে?? কি চাই চাকরি??

দ,,দেখুন আপনার সাথে আমার যায় হয়েছে সেটা বাইরে,,আর এটা অফিস সো আমি আশা করবো আপনি আগের করা কাজের সাথে অফিস এর কাজ মিশিয়ে ফেলবেন না,,।

ওহ শিওর,, তা আপনার কাজগ পএ দেখি।

আমি ভয়ে ভয়ে আমার হাতে থাকা ফাইলটা ওনার দিকে বারিয়ে দিলাম,, ওনি কাগজ গুলো নেড়েচেড়ে দেখে একটা হাসি দিয়ে বলল,,আপনার তো দেখি মাথায় সেই বুদ্ধি এতো বড় একটা কোম্পানি তে আপনি এইচএসসি পাশের সার্টিফিকেট দিয়ে কাজ করতে চাইছেন?? বাহ,, যেখানে মানুষ এর থেকেও আরো বড় বড় ডিগ্রী নিয়েও কাজ করতে পারেন না,, বাইরে যায়া অপেক্ষা করছে তাদের যোগ্যতা সম্পর্কে আপনার কোনো ধারণা আছে??

আমি প্রথমে ওনাকে এখানে দেখেই বুঝে গেছি যে ওনি আমায় চাকরি তো দেবেনই না উল্টে আরো না না ধরনের কথা বলবে,,,আমি কিছু বলতে যাবো তখনি ওনি বলল।

তবে চাকরিটা আমি আপনাকে দেবো।

ওনার কথা শুনে আমি অনেক হয়ে গেলাম তারপরও নিজেকে সামলে বললাম,, মানে আমার এই যোগ্যতা দিয়েই আপনি আমায় এতো বড় একটা পোস্টে জব দেবেন??

পাগল নাকি তুমি?? তোমার এই যোগ্যতা দিয়ে এই অফিসের পিওনের চাকরি টাও তুমি পাবে না। তবে পিওনের চাকরিটা তোমাকে দেওয়াও যাবে না কেননা বর্তমানে ওই পোস্টে একজন আছে,,

তাহলে??? আমি রেগে বললাম।

এই পোস্টের জন্য তো ইন্টারভিউ নেওয়া হবেই আর একজন যোগ্য মানুষকেই জবটা দেওয়া হবে,, তবে তোমার জন্য অন্য একটা জব অফার করবো আমি তা তুমি কি রাজি??

আমি আমতা আমতা করে বললাম৷ ক,কিসের জব??

চলবে,,,,,,,