আমার গল্পে তুমি পর্ব-০৯

0
410

#আমার_গল্পে_তুমি🍁🍁
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী(writer)
#৯_পর্ব
,
হাসি খুশি বাড়িটা মহুর্তেই কেমন নিস্তব্ধতাই ছেয়ে গেলো এক কোণায় অনিক দাঁড়িয়ে আছে পাশের সোফায় অন্তরাকে শুইয়ে রাখা হয়েছে,, আর্দ্র ডাক্তারকে ফোন করেছে একটু পরেই চলে আসবে,,

কিছুক্ষণ আগে৷

আম সরি অন্তরা একটা ভুল হয়ে গেছে,,

অনিকের কথা শুনে আর অনিকের পাশে অচেনা একটা মেয়েকে দেখে বুকের ভিতরটা কেমন ধক করে উঠেছে তার উপর অনিকের সরি বলা আর ভুল হয়েছে শুনে দেহে যেনো প্রাণ নেই তবুও কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,, মানে??

অনিক কিছু বলার আগেই অচেনা মেয়েটা হুট করে অন্তরার হাত ধরে বলল,,আপনি আমার বোনের মতো আমার বাঁচা মরা সবকিছু এখন আপনার উপর নির্ভর করছে প্লিজ আমায় সাহায্য করুন।

অন্তরা অনিকের দিকে তাকিয়ে দেখলো অনিক মাথা নিচু করে আছে এতে যেনো অন্তরা আরো বেশি ভয় পাচ্ছে তবুও অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে বলল,,,কি বলছেন এসব আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।

আসলে কালকে হোটেলের পার্টিতে আমরা একটা ভুল করে ফেলেছি,,

কি ভুল করেছেন?? আতংকিত গলায় বলল অন্তরা।

আসলে স্যার আমাকে আপনি ভেবে,,, আর কিছু বলার আগেই অন্তরা মাথা ধরে অঙ্গান হয়ে নিচে পড়তে গেলেই অনিক ওকে ধরে ফেলে তারপর অন্তরাকে কোলে তুলে সোফায় শুইয়ে দেয় আর ওই মেয়েটাকে এখন যেতে বলে যা করার কাল সকালে যাই হোক করা হবে,, মেয়েটা হলো শেলী আর্দ্রদের অফিসেই কাজ করে।

,,,বর্তমান,,,,

কিরে কি হলো ডাক্তার আসছে?? আশা অস্থির হয়ে বলল।

হুমম মা আসছে,, গম্ভীর কন্ঠে বলল আর্দ্র।

এতো কিছুর মধ্যে পরশকে কেউ খেয়ালই করেনি আমি আপুর হাত ধরে হাত ঘষতেছিলাম তখনি হঠাৎ করে পরশ কান্না করা শুরু করল এইটুকু বাচ্চা কিছু বুঝতে না পারলেও এটা তো দেখছে যে ওর মার কিছু একটা হয়েছে,, পরশের কান্না দেখে অনিক পরশের কাছে যেতে গেলে করিব রেগে বলল,

খবরদার তুই যদি তোর ওই অপবিত্র হাত দিয়ে আমার দাদু ভাই কে স্পর্শ করিস তাহলে কিন্তু আমি তোর গায়ে হাত তুলতে বাধ্য হবো।

বাবা বিশ্বাস করো আমি কিছু করিনি তোমরা একটা বার আমার কথাটা তো শোনো।

কোনো কথা শুনতে চাই না এখন যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার অন্তরায় নেবে।

কি হয়েছে আমার চাম্প এর এভাবে কান্না করে কেউ আমাদের চাম্প না সাহসী,, পরশের চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল ইয়ানা।

কিউটিপাই মাম্মাম এর কি হয়েছে?? মাম্মাম ওভাবে শুয়ে আছে কেনো??

মাম্মাম এর কিছু হয়নি চাম্প মাম্মাম একটু অসুস্থ হয়ে পড়েছে,, এখন ডাক্তার আংকেল এসে দেখলেই মাম্মাম একদম সুস্থ হয়ে যাবে তুমি এভাবে কান্না করো না তাহলে তো মাম্মাম কষ্ট পাবে তাই না??

হুমমম আমি আর কান্না করবো না,, তাহলে দাদু পাপ্পাকে বকা দিলো কেনো??

ইয়ানার পরশকে কিছু বলার আগেই ডাক্তার চলে আসলো। ডাক্তার ভিতরে এসে অন্তরাকে ভালো করে দেখে অনেকক্ষণ পর বলল,,,এই সময় এতো পেশার নেওয়া ঠিক নয় এতে মা ও বেবি দুজনের জন্যই ক্ষতি।

ডাক্তার এর কথায় সবার খুশি হওয়ার কথা হলেও কারো মুখে তেমন কোনো আভাস দেখা গেলো না অনিক কথাটা শুনে অনেক খুশি হয়েছে,, ডাক্তার কিছু ওষুধ লিখে দিয়ে আর অন্তরাকে বেড রেস্ট এ থাকতে বলে চলে গেলো আর বলল কিছুক্ষণ পরই জ্ঞান ফিরে আসবে।

আর্দ্র বৌমাকে ওর রুমে দিয়ে আয়।

কেনো বাবা আর্দ্র কেনো আমিই অন্তরাকে নিয়ে যাচ্ছি।

বলেছিনা তুই আমার দাদু ভাই বা আমার বৌমার কাছেও আসবি না,, কি হলো আর্দ্র কি বলেছি শুনতে পাসনি।

হুম বাবা.

ভাবিকে আমি বড় আপুর মতোই দেখি আমাকে যখন ভাইয়া বলে ডাকে তখন নিজেকে অনেক ছোট বাচ্চা মনে হয় প্রাণটা জুড়িয়ে যায় মনেই হয় না যে আমার কোনো বোন নেই,, তবে আজকে ভাবির এই অবস্থায় আমি চেয়েও কিছু করতে পারছি না,, ভাইয়া মোটেও ওমন নয় ভাইয়া ভাবিকে অনেক ভালো বাসে সেটা আমি জানি তাহলে ভাইয়া কিছু বলছে না কেনো হুমম কালকে বিষয় টা দেখতে হবে,,, অন্তরাকে বেডে শুইয়ে দিয়ে আর্দ্র নিচে নেমে এলো।

জানোত চাম্প মাম্মাম না তোমার জন্য ছোট একটা বেবি আনবে।

সত্যি বলছো কিউটিপাই??

হুমম সত্যিতো তুমি তার সাথে খেলবে কেমন,, এখন তাহলে যাও গুড বয় এর মতো মাম্মাম এর পাশে গিয়ে শুয়ে পড়ো,,

ওকে কিউটিপাই, কিন্তু পাপ্পা যাবে না??

যাবে তো ওই যে বললাম বেবি আনতে যাবো সেইটা নিয়ে তো পাপ্পার সাথে কথা বলতে হবে তুমি গিয়ে শুয়ে পড়ো।

আচ্ছা আমি গিয়ে একদম গুড বয় এর মতো মাম্মাম এর পাশে শুয়ে টুপ করে ঘুমিয়ে পড়বো।

,,,,,,,,,,

আর্দ্র ইয়ানাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আয় অনেক রাত হয়ে গেছে এতো রাতে মেয়েটাকে একলা ছাড়া যাবে না। কবির গম্ভীর কণ্ঠে বললো

অন্য কোনো সময় হলে আর্দ্র হয়ত না করত আমিও না করতাম কিন্তু এখন এতো সব কিছুর মধ্যে ঝামেলা না করাই ভালো হবে,, আর্দ্র আমাকে গাড়ি করে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে গেলো গাড়িতে আমরা কেউই কারো সাথে কোনো কথা বলিনি।

কিরে এতো দেরি হলো কেনো জানিস আমার কত চিন্তা হচ্ছিল।

চিন্তা করো না মা আমি তোমাকে সবকিছু বলছি,, তারপর মাকে সবকিছু খুলে বললাম।

ছিঃ ছেলেটা কত খারাপ একটার বাবা হয়ে গেছে তবুও এমন আকাম কেমনে করল তুই আর ও বাড়িতে পড়াতে যাস না কি জানি কার মনে কি আছে বলাতো য়ায় না।

না মা এভাবে বলো না অনিক ভাইয়া অনেক ভালো একজন প্রাণোবন্ধ হাসিখুশি মানুষ আর ওনি অন্তরা আপুকে অনেক ভালোবাসে।

তাহলে কি ওই মেয়েটা মিথ্যা বলছে??

সেটাও তো বুঝতে পারছি না একটা মেয়ে তার সব থেকে বড়,, সম্মান নিয়ে কেনো মিথ্যা বলবে??

আচ্ছা ওসব বাদদে এখন আয় খেয়ে নে।
,,,,,,,,,,,,

,মাঝরাত চারিদিকে গভীর অন্ধকার জানালার গ্রিল ধরে একমনে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে অন্তরা বিছানায় পরশ গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে অনিক কোথায় জানিনা,, আচ্ছা আমার ভালোবাসায় কোথায় কমতি ছিল এই আট বছর সংসার জীবনে কখনোত এমন হয়নি তাহলে এখন কেনো এমন হচ্ছে এতো ভালোবাসা বিশ্বাস সব কি মিথ্যা ছিলো। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অন্তরা এসব ভাবছিলো তখনি একজোড়া হাত পিছন থেকে অন্তরার পেটে রেখে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল,, অন্তরা প্রথমে ভয় পেলেও পরে ঠিকি বুঝতে পেরেছে এটা অনিক।

বিশ্বাস করো অন্তরা ওই আল্লাহ সাক্ষী আমি আমার জ্ঞান থাকা অবস্থায় কোনো খারাপ কাজ করিনি,, এই হাত দিয়ে ভালোবেসে একটা নারীকেই ছুঁয়েছি সেটা হলো তুমি প্লিজ আমায় বিশ্বাস করো,, অন্তরাকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরে ওর ঘাড়ে মুখ গুজে বলল অনিক।

আমাকে ছাড়ো অনিক।

প্লিজ আমায় বিশ্বাস করো আমি আমার অনাগত বাচ্চা কে ছুঁয়ে বলছি আমি কোনো পাপ করেনি।

এখান থেকে যাও অনিক বাবা দেখলে রাগ করবে।

তুমিও আমাকে বিশ্বাস করলে না ওকে আমি চলে যাচ্ছি পরে আবার আফসোস করো না যেনো, এই বলে অনিক চলে গেলো,, অনিক যাওয়ার পর অন্তরা কাঁদতে কাঁদতে নিচে বসে পড়ল তারপর ঘাড়ে হাত দিয়ে দেখল ওখানে ভিজা।

তাহলে কি অনিক কাঁদছিলো?? আমি কি ওকে বিশ্বাস না করে ভুল করলাম?? না না আমাকে ওর থেকে সবটা শুনতে হবে,, এই ভেবে অন্তরা রুম থেকে বেরোতে গেলেই পরশ উঠে বসে চোখ ডলতে ডলতে অন্তরাকে ডাকতে লাগল,, অন্তরাও পরশের কাছে গিয়ে ওকে ঘুম পাড়াতে লাগল।

,,,,সকালে,,,,

আজকে সকাল সকাল অফিসে চলে আসছি আর্দ্র স্যারের সাথে কিছু কথা আছে আমার কেনো জানি ওই মেয়েটার কথা বিশ্বাস হচ্ছে না,, তাই আমি আর্দ্র কেবিনে গিয়ে দেখি ওনি চেয়ারে বসে কপালের উপর হাত রেখে কিছু একটা ভাবছে।

আসতে পারি??

হুম আসো,,,

শুনুন না আপনার সাথে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা ছিলো অনিক ভাইয়াকে নিয়ে।

হুম বসো,, তবে আমার মনে হয় না ভাইয়া এমনটা করবে।

হুমম আমারো।

আমার কথাশুনে আর্দ্র ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকালো,,

না মানে আমি আপনাকে কপি করছি না,, আমি বলছিলাম কি আমি যতটা অনিক ভাইয়াকে চিনি ওনি এমন কাজ করতেই পারেন না,, এখন অনিক ভাইয়া কে এখানে আসতে বলেন ওনার থেকে সবটা শুনতে হবে।

অর্ডার করছো আমায়??

প্লিজ এখন ঝগড়া করার মুড নেই ভাইয়াকে ডাকুন আগে এসব ঝামেলা মিটমাট করি তারপর আপনার সাথে কমর বেঁধে ঝগড়া করবো।

,চলবে,,,,,,,,??