আমার গল্পে তুমি পর্ব-৪০

0
493

#আমার_গল্পে_তুমি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী(writer)
#৪০_পর্ব
,
সকলের মাঝে শিলা গালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে, আসলে গ্রামে একটু কিছু না হতেই একটু জোরে কথা হলেই আশে পাশের বাড়ির মানুষ চলে আসে তখন এক কথায় দুই কথায় অনেক জোরে কথা উঠে যায় শিলা ইয়ানাকে যা নয় তাই বলছিলো, ইয়ানা কিছু বুঝতে পারছিলো না আসলে কি হয়েছে, শুধু ইয়ানা কেনো ওখানে থাকা কেউই বুঝতে পারছিলা আসলে শিলা কি বলতে চাইছে, তবে আর্দ্র আর সয্য করে পারিনি ওর প্রথম থেকেই শিলার উপর রাগ ছিলো আর এখন এভাবে ইয়ানাকে উল্টো পাল্টা কথা বলায় আর্দ্র আর নিজের রাগকে কন্ট্রোল করতে পারিনি সপাং করে শিলার গালে ঠাস করে একটা চড় বসায়ে দিয়েছে,, আর্দ্রর এহেন কাজে সবাই অবাক হয়ে আর্দ্রর দিকে তাকিয়ে ছিলো ইয়ানাও ভয়ে আর কিছু বলেনি কেননা ও আর্দ্রর রাগ সম্পর্কে জানে,, সরি আমি আর টলারেট করতে পারছিলাম না, একটা হাঁটুর বয়সী মেয়ে এসে বিনা কারণে আমার ওয়াইফ কে যা নয় তাই বলবে আর আমি মুখ বুজে সয্য করবো তেমন স্বামী আমি নয়,, আর আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি যে তুমি কিছু না জেনে শুনে কাউকে এভাবে অপমান করতে হয় না সেটা জানো না?? এই শিক্ষা পাওনি কারো থেকে??

আসলে আমরা সত্যি লজ্জিত বাবা, আমি বুঝতে পারিনি আমার মেয়ে এমনটা করবে, ও হয়ত বুঝতে পারিনি আর তুমি না জানলেও ইয়ানা জানে আমার মেয়ে কেমন, আসলে ও ছোট তো তাই ওতোটাও বুঝতে পারিনি।

ভুলটা মনে হয় আমারই,, আমার আগেই শিলার কাছে ব্যাপার টা ক্লিয়ার করে দেওয়া উচিত ছিল,, আসলে শিলা আকাশ কে আর্দ্র ভেবেছিলো আর আর্দ্রকে আকাশ ভেবেছিলো রাতে ইয়ানা সবার সাথে সবার পরিচয় করায়ে দিলেও শিলা তো সেখানে ছিলো না, আর সকালে আমি ওকে সবটা বলতেই চাচ্ছিলাম কিন্তু পরশ আমায় ডেকে নিয়ে গেলো তারপর আর বলা হয়নি।

তুমি এখন বলছো সেটা,, অনিক তোমার সবটা আগেই বলা উচিত ছিলো তাহলে এসব কিছুই হতো না।

ভাবি জানোত যা হয় ভালোর জন্যই হয়,, আর শিলা আমি যে তোমায় চড় টা মেরেছি সেটা কিন্তু বড় ভাই হিসেবেই মেরেছি আর আজকে যা হয়ে গেলো তার থেকে কিন্তু আমরা সবাই একটা শিক্ষা নিতে পারি বলতো সেটা কি?? আর্দ্র শিলাকে সহজ করার জন্য প্রশ্নটা করল।

শিক্ষা টা হলো এটাই যে কখনোই সবটা না জেনে না দেখে হুটহাট সিদ্ধান্ত নেওয়া বা কাউকে দোষারোপ করা ঠিক নয়,, গালে দিয়ে মাথা নিচু রেখেই বলল শিলা।

এইতো গুড গার্ল তোমার তো দেখি অনেক বুদ্ধি তাহলে এই ভুলটা করলে কীভাবে,, আচ্ছা যাই হোক আমরা তো জানিই মানুষ মাএই ভুল, তা তুমি যেনো কোন ক্লাসে পড়ো।

জি ক্লাস টেনে।

আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে এখন যাও ভালো করে পড়াশুনা করবে,, আর তোমাদের গ্রামটা তো আমাকে ভালো করে দেখালেই না বিকেলের দিকে গ্রামটা ঘুরে দেখাবে তো?? নাকি এখনো আমার আমার উপর রাগ করে থাকবে।

আপনি আমাদের গ্রাম দেখবেন?? আচ্ছা আমি আপনাকে সহ সবাইকে গ্রামটা ঘুরিয়ে দেখাবো, আর সেই বাগানটাও দেখাবো যেখানে ছোট বেলায় ইয়ানা আপু আমায় নিয়ে আম কুঁড়তে গিয়ে গাছ থেকে ধপাস করে পড়ে গিছিলো আর সেকি কান্না আমিতো ছোট ছিলাম তাই আপুকে পড়ে যেতে দেখে হেসে ফেলেছিলাম।

তবেরে দুষ্ট মেয়ে কোথাকার আমার মান ইজ্জত এর বারোটা বাজানোর ধান্দা তাই না দেবো কানটা মলে।

তুমি আমায় কিচ্ছু করতে পারবে না কেননা আমার আর্দ্র ভাইয়া আমাকে বাঁচিয়ে দেবে তাইনা ভাইয়া??

অবশ্যই।

মুহুর্তের চুপচাপ হয়ে যাওয়া বাড়িটা আবার হাসি খুশিতে মেতে উঠলো শিলাও ওর ব্যবহারে লজ্জিত হয়ে ইয়ানার কাছে ক্ষমা চাইলো ইয়ানা খুশি মনে ওকে ক্ষমা করে দিয়েছে কেননা ওতো না জেনে ভুলটা করে ফেলেছে আর যে ভুল করে অনুতপ্ত হয় তাকে ক্ষমা না থাকার কোনো প্রশ্নই আসে না ,,, তারপর সবাই হাসাহাসি করে পিঠা বানানো শেষ করলো দুপুরের দিকে আর্দ্র রুমে ঘুমিয়ে ছিলো তখনি ইয়ানা রুমে এসে আস্তে করে দরজাটা বন্ধ করে আর্দ্রর কাছে এসে বলল,, উঠে পড়ুন উঠে পড়ুন সেহরির সময় হয়ে গেছে।

হোয়াট??

বাব্বাহ এতো হালকা শব্দেই আপনার ঘুম ভেঙ্গে গেলো?? আমি তো ভেবেছিলাম ডাকতে ডাকতে আমার গলা শুকিয়ে যাবে।

এই শোনো নিজেকে সবার মতো ভাবো কেনো, আর আমি কী তোমার মতো নাকি একবার ঘুমালে বস্তায় ভরে পানিতে ফেলে আসলেও ঠিক পাও না।

শুনুন আমি কেমন আর আমার ঘুম কেমন তা আমি ভালো করেই জানি এখন বেশি কথা না বলে এটা পড়ে নিন গোসল করতে হবে।

এক মিনিট আমি না একবার গোসল করলাম আবার কেনো,,আর্দ্র বুঝতে পারলো ও কি বললো তাই কথা ঘুরানোর জন্য বলল, আমি কখনোই এটা পড়বো না, আর তুমি আমায় কখনো দেখেছো লুঙ্গি পড়া।

শুনুন বাঙালি হয়ে লুঙ্গি পরবেন না এটা কেমন যেনো বেমানান আর এটা আপনার শহর না এটা গ্রাম এখানে সবাই লুঙ্গি পড়ে কাঁধে লাঙ্গল নিয়ে মাঠে যায়, আমি তো আপনাকে মাঠে যেতে বলছি না শুধু বলছি এটা পড়ে পুকুর থেকে গোসল করে আসুন, আর কলে বাড়ির মেয়েরা গোসল করবে।

নো নেভার না আমি এটা পড়বো আর না ওই পুকুর না কি ওখানে গোসল করবো,, আমি যেটা পড়ে আছি সেটা পড়েই গোসল করবো তাও কলে, তুমি পানি তুলে দিবা।

আকাশের দিকে দেখেছেন?? বলি আকাশের দিকে দেখেছেন সূর্যের তাপ কেমন,, কেমন মরা মরা রোদ এই রোদে আপনার ওই বস্তার মতো মোটা প্যান্ট ভিজায়ে শুকাতে দিলো সেটা আদেও শুকাবে?? আর আজকে যাও বা একটু রোদ উঠছে কাল যদি না উঠে যদি কুয়াশায় সব ঢেকে থাকে তখন কি হবে, এই ভিজা প্যান্ট ঘরে রাখলে তো গন্ধ হয়ে যাবে,, তারচেয়ে বরং আপনি এটা পড়ে আমার সাথে চলুন পুকুরে আমি আপনাকে সুন্দর করে গোসল করায়ে দেবো।

নাহ আমি তবুও এটা পড়বো না প্যান্ট না শুকালে না শুকাক।

আমরা এখানে মোট পাঁচ দিন থাকবো তাহলে আপনি পাঁচ দিনে পাঁচ টা প্যান্ট ভিজায়ে রাখবেন তারপর বাসায় যাওয়ার সময় কি পড়ে যাবেন শুনি, প্যান্ট ছাড়াই যাওয়ার ইচ্ছা আছে নাকি??

আরে ইয়ানা তুমি ওকে আমাদের কাছে ছেড়ে দাও আমরা ওকে সুন্দর করে লুঙ্গি পরায়ে দেবো।

সেকি তোরাও লুঙ্গি পরেছিস?? কেমন দেখাচ্ছে তোদের একদম ভালো দেখাচ্ছে না যা চেঞ্জ করে আয় কি সব ভুলভাল পোশাক পরেছিস।

আরে আর্দ্র ভাই শুধু আমরা কেনো এখন তোমাকেও এই ভুলভাল পোশাক পরাবো,, সুইট ভাবি তুমি একটু বাইরে যাবে আমরা তোমার বরকে একটু সাজাবো।

ওহ শিওর হুয়াই নট,,,, ইয়ানা বাইরে চলে যেতেই আকাশ আর অনিক দুজনে মিলে আর্দ্রকে চেপে ধরল ওর প্যান্ট ধরে টানাটানি শুরু করে দিলো ওদের এহেন কান্ডে অগত্যা আর্দ্র কে লুঙ্গি টা পড়তেই হলো,, আর্দ্র কে লুঙ্গি পরায়ে অনিক আর আকাশ ইয়ানার সাথে ওকে পুকুর ঘাটে আসতে বলে চলে গেলো,,ইয়ানা রুমে এসে আর্দ্র কে দেখে তো হা হয়ে গেছে আর্দ্র একটা সাদা চেক চেক লুঙ্গি পরেছে গায়ে টিশার্ট আর হাতে গামছা,, আরে ব্যাস আমার বরটাকে তো হেব্বি লাগছে হায় কারো যেনো নজর না লেগে যায়, আসুন আপনার কেনি আঙুল এ কামড়ে দিই।

মজা করা হচ্ছে আমায় নিয়ে না?? দিন কিন্তু আমারও আসবে তখন বোঝাবো মজা,, আর এসব কি কেউ পড়ে।

আরে সব সময় কোট টাই প্যান্ট পড়ে থাকলেই হয় না মাঝে মাঝে একটু বাঙালি সাজ ও দিতে হয়, তাই না বাঙালি বাবু,, কথাটা বলে আর্দ্রর লুঙ্গি ধরে হালকা টান দিলো ইয়ানা।

এই একদম এটা ধরে টানাটানি করবে না খুলে যাবে, তখন তুমিই লজ্জা পাবে বুঝেছো।

তাই নাকি হুমম হুমম,,,, ইয়ানা এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না বার বার এটা ধরে টান দিবে না তাহলে কিন্তু?? তাহলে কি হমম কি করবেন?? কি করবো তাই না দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা এই বলে আর্দ্র দরজা বন্ধ করে ইয়ানার দিকে এগিয়ে আসলো ইয়ানাও পিছাতে পিছাতে একদম খাটের কাছে চলে গেলো।

চলবে,,,,,,,???