আমার গল্পে তুমি পর্ব-৪১

0
683

#আমার_গল্পে_তুমি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী(writer)
#৪১_পর্ব
,
হাজার খানিক বিরক্তি নিয়ে পুকুর ঘাটে দাঁড়িয়ে আছে আর্দ্র, বাকি সবাই অলরেডি পুকুরে নেমে গেছে পানি অনেক ঠান্ডা হলেও সবাই অনেক মজা করে একসাথে গোসল করছে কিন্তু অন্তরা এখানে আসিনি কেননা এতো ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করলে যদি ঠান্ডা বা জ্বর আসে তাহলে তো বেবিরও ক্ষতি হবে তাই ও সহ বাড়ির সবাই বাড়ির কলে গোসল করবে তবে রোজা আর ইয়ানা এসেছে।
অনিক আর আকাশ লুঙ্গি দিয়ে বোম বানায়ে ফুলায়ে পানির উপর দিয়ে ভেসে বেড়াচ্ছে,, কি হলো আপনি ওখানে দাঁড়য়ে আছেন কেনো??নেমে পড়ুন শুনুন শীতের সময় ঠান্ডা পানি দেখে গোসল করতে যত বেশি দেরি করবেন তত বেশি শীত লাগবে আসুন আমার হাত ধরে এখানে বসে দ্রুত গোসল করে নেন।

এখানে কেউ গোসল করে?? আর আমি এখানে কীভাবে গোসল করবো দেখেছো পানিতে কত জীবাণু এখানে নামলে আমি নির্ঘাত অসুস্থ হয়ে যাবো।

হ্যাঁ আপনি জানেন শুনুন এই পুকুরে গ্রামের বেশির ভাগ মানুষই এখানে গোসল করে কই ওনারা তো কেউ অসুস্থ হয়নি, সব গোসল না করার ধান্দা আসুন বলছি,, এই বলে ইয়ানা আর্দ্র কে ধরে টেনে পুকুরের ঘাটে বসায়ে দিলো তারপর ছোট বাচ্চার মতো আর্দ্র কে ধরে সুন্দর করে গোসল করায়ে দিলো আর্দ্র শুধু অপলক দৃষ্টিতে ইয়ানার দিকে তাকিয়ে ছিলো কিছু বলেনি,,ইয়ানা নিজের মতো করে আর্দ্র কে গোসল করায়ে গামছা দিয়ে মাথা মুছায়ে দিলো,, যান আপনার গোসল শেষ এখন রুমে গিয়ে চেঞ্জ করে নিন নাকি চেঞ্জ টাও আমিই করায়ে দেবো হুমম।

তার কোনো প্রয়োজন নেই আমি নিজেই করতে পারবো, আর হ্যাঁ তুমি চলো আমার সাথে এখানে গোসল করা লাগবে না ভাবির মতো তুমিও কলে গোসল করবে।

কিন্তু,,,,

কোনো কিন্তু নয় চলো আমার সাথে এই বলে আর্দ্র ইয়ানার হাত ধরে নিয়ে চলে গেলো। রোজা পাড়ে বসে পানিতে পা ভিজিয়ে গায়ে সাবান মাখছিলো ওর আবার খুব ভয় বেশি পানিতে নামলে যদি কুমির বা অন্য কিছু এসে পা ধরে টেনে নিয়ে চলে যায় তাই বেশি পানিতে নামবে না উপর থেকেই কয়েক মগ পানি মাথায় নিয়ে চলে যাবে, আর যে ঠান্ডা পানি এর থেকে বেশি পানিতে থাকলে হয়ত জমে বরফ হয়ে যাবো, এরা দুজনে মহিষ নাকি শীতের দিনেও কেমন মহিষের মতো পানিতে জেঁকে বসে আছে, অনিক আর আকাশ এর দিকে তাকিয়ে মনে মনে কথা গুলো বলছিলো তখনি কি যেনো এসে রোজার পা টেনে ধরল।আআআআআ আমি এই পানিতে গোসল করবো না এখানে কুমির আছে একটুর জন্য আমি বেঁচে গেছি,, পানি থেকে উঠে চেঁচিয়ে বলল রোজা।

কি বলছো রোজা আপু এই ছোট একটা পুকুরে কুমির থাকবে কেনো আর আমরা তো এই পুকুরে সেই কবে থেকে গোসল করি কই আমরা তো কখনোই কুমির দেখেনি তোমার মনের ভুল হয়ত।

আকাশ পানির নিচে থেকে ডুব মেরে উঠে বলল,, এতোই যখন ভয় তাহলে পুকুরে নামতে বলেছিলো কে আপুর মতো কলে গোসল করলেই হতো।

এই শোনেন আমি না মোটেও ভয় পাইনি ওকে নির্ঘাত পায়ে কিছু একটার স্পর্শ পেলাম তাই নয়ত এই রোজা কিছু দেখে ভয় পাই। নাহ বাবা এখানে আর বেশি গোসল করা যাবে না টুপ করে একটা ডুব দিয়ে উঠে চলে যেতে হবে,, শেষের কথাটা আস্তে করে বলল।

তারপর রোজা পুনরায় আবার পানিতে নামলো কমর পানিতে নেমে রোজা যেই ডুব দিলো তখনি কেউ ওকে পানির নিচ থেকে জড়িয়ে ধরে গালে কিস করে দিলো, রোজার চোখ বন্ধ ছিলো বিধায় ও দেখতে পাইনি। তারপর পানির নিচ থেকে উঠে চিৎকার করতে করতে পাড়ে উঠে আসলো,, আবার কি হলো রোজা আপু?

শিলা তোমাদের এই পুকুরে সত্যি কিছু একটা আছে আমি আর এখানে নামবো না, আমার গাল।

কি হয়েছে আপু তোমার গালে আর তুমি এভাবে গালে হাত দিয়ে রাখছো কেনো আর এই পুকুরে তেমন কিছুই নেই তুমি এতো ভয় পাচ্ছো কেনো??

ধূর আমি আর গোসলই করবো না, আর এমনিতেই অনেক ঠান্ডা লাগছে আমি গেলাম, তোমার গোসল করতে ইচ্ছে হলে তুমি ওই ভুতুরে পুকুরে গোসল করো আমি বাবা আর করবো না।

আচ্ছা তাহলে চলো আমিও যাবো তোমার সাথে, আমারও গোসল হয়ে গেছে,,। রোজা গালে হাত রেখেই ভাবতে ভাবতে শিলার সাথে চলে গেলো, ওদিকে অনিক হাসতে হাসতে আকাশকে বলল,, সালাবাবু তুমি কিন্তু ভীষণ দুষ্ট হয়েছো এভাবে আমার শালিটাকে ভয় না দেখালেও পারতে।

আমার তো বেশ মজাই লাগল তবে কিসটা গালে না দিয়ে ঠোঁটে দেওয়া ভালো ছিলো।

এই একদম না তাহলে কিন্তু তুমি সহ আমাকেও গণ পিটুনি খেতে হতো।

তাতে কি সালার জন্য একটু না হয় মার খেলেই।
,,,,,,,,,,

কি হলো বাইরে যান আমি চেঞ্জ করবো।

কেনো বাইরে যাবো কেনো তুমি আমার সামনেই চেঞ্জ করো আর আমি তো তোমার বর দেখলে কিছু হবে না চাপ নিও না চিল,,ফোন টিপতে টিপতে বলল আর্দ্র।

চাপ দিয়ে বলছেন চাপ নিও না আপনি বার হবেন নাকি আমি আপনাকে টেনে রুম থেকে বার করে দেবো?? দেখুন আমার কিন্তু অনেক শীত লাগছে এভাবে ভিজা কাপড়ে আর কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবো।

তাই নাকি তুৃমি আমায় টেনে বার করে দেবে?? ওকে চেষ্টা করতে পারো, আর তখন আমার লুঙ্গি ধরে টান দিছিলে আমার মনে আছে এখন তার শোধ নেবো আমি এখান থেকে এক চুল ও নড়বো না পারলে আমার সামনেই করে নয়ত এভাবেই ভিজা কাপড়ে দাঁড়িয়ে থাকো।

আরে,, ইয়ানা কিছু বলতে গিয়েও বলল না কেননা ও জানে আর্দ্র যা তেড়া এখান থেকে একটুও নড়বে না কেনো যে তখন লুঙ্গি ধরে টানতে গেলাম কে জানে একেই হয়ত বলে নিজের বিপদ নিজে ডেকে আনা, এখন কি করবো?? বেশিক্ষণ তো এভাবে থাকাও যাবে না ভীষণ শীত লাগছে,, কিছুক্ষণ ভেবে ইয়ানা ঠিক করল ও এখানেই চেঞ্জ করবে কেননা এখন কোনো রুম খালি নেই সবাই গোসল করে এসে চেঞ্জ করছে আবার এই ভিজা কাপড়ে রোজার রুমেও যাওয়া যাবে না ওখানে হয়ত শিলা আর রোজা নানুর কাছে থেকে গল্প শুনছে অগত্যা এখানেই ওনার সামনে চেঞ্জ করতে হবে। ইয়ানা কিছু একটা ভেবে হুট করে আর্দ্রর সামনে চলে আসলো তারপর নিজের একটা উড়না দিয়ে আর্দ্রর চোখটা বেঁধে দিলো কাজটা এতো তারা তারি করেছে যে আর্দ্র কিছু বুঝে উঠার আগেই চোখ বাধা শেষ। আরে এটা কি করছো ছাড়ো চোখ বাঁধছো কেনো??

একদম চুপ করে বসে থাকেন, আপনি বলেছেন যে আপনি এ রুমে থাকবেন কিন্তু কীভাবে থাকবেন সেটা নিতান্তই আমার ব্যাপার ওকে মিস্টার আর্দ্র চৌধুরী।

এই এই এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না চিটিং করছো তুমি,,

কিসের চিটিং হ্যাঁ চুপচাপ লক্ষী ছেলের মতো বসে থাকুন,, ইয়ানা আর্দ্রর চোখ বেঁধে দিয়ে তারপর দরজা বন্ধ করে দিয়ে আসলো, আর এদিকে আর্দ্র লক্ষী ছেলের মতো চুপ করে বসে মিটমিট করে হাসতেছে কেননা ওর মাথার মধ্যে কি চলছে সেটা ওই ভালো জানে। ইয়ানা গ্রামে এসে শাড়ি কম পড়ছে অবশ্য বাসায় ও শাড়ী কম জামায় বেশি পড়ত,, ও আর্দ্র দিকে পিট দিয়ে পিছন হয়ে দাঁড়িয়ে কেবলি নিজের জামার চেনটা খুলেছে তারপর আস্তে আস্তে গা থেকে জামাটা খুলতে লাগল কিন্তু ওর কোনো ধারণায় নেই ওদিকে আর্দ্র চুপিচুপি চোখের বাঁধন হালকা একটু সরিয়ে হা করে ইয়ানার চেঞ্জ করা দেখছে,, ইয়ানার চেঞ্জ করা শেষ হলে পিছন ঘুরে দেখলো আর্দ্র আগের মতোই চোখে বাঁধন নিয়ে চুপ করে বসে আছে, ও গিয়ে আর্দ্রর চোখ থেকে উড়নাটা খুলে নিজের গায়ে জরিয়ে বলল,, নিন হয়ে গেছে আপনি এখানে বসুন আমি এগুলো ধুয়ে শুকাতে দিয়ে আসছি, এই বলে ইয়ানা চলে গেলো,, আর্দ্র বাধ্য ছেলের মতো মাথা ঝাঁকিয়ে বসে থাকল তারপর ইয়ানার যাওয়ার পানে তাকিয়ে ঠোঁট কাঁমড়ে হাসি দিয়ে বলল,, মিসেস বকবক তুমি বুঝতেও পারলে না তোমার অগচরেই তোমার সব কিছু দেখে নিয়েছি।
,,,,,,,,

চলবে,,,,,,???