#আমার চারু
#পর্ব-১০
#ফারজানা নিলা(writer)
কাব্য অনেকটা সাহস যুগিয়ে দরজা খুলতে গেল।চারু কিছু একটা আচ করে অদৃশ্য হয়ে গিয়েছে।
জ্বীনেদের এই ক্ষমতা আছে।
কাব্য গিয়ে দরজা খুললো।
খুলতেই এক দল কালো কাপড় পড়া লোক ঘরের ভেতর ঢুকে গেল।তারা মানুষ ছিলো না।
তারা কিছু একটা জপ করছিলো।সবাই একই সুরে মন্ত্র পাঠ করছে।
কাব্য জিজ্ঞেস করছে কারা তোমরা, কিন্তু কোনো উত্তর আসছে না।কাব্যকে ঘিরে ধরেছে।
চারদিকে ঘুরছে আর মন্ত্র জব করছে। চারু লুকিয়ে আছে।
চারু বুঝে গিয়েছে এরা মানুষ না।
তাদের শক্তিটা বুঝে উঠতে পারছে না।তারা যদি একবার জেনে যায় এখানে জ্বীনের বাস আছে, তাহলে তারা বারবার আসবে।
আর তারা হয়তো জেনে গিয়েছে না হয় এরা আসতো না।
চারু ভাবছে বসে বসে।
মিনিটেই কাব্যর যেন কান ফেটে রক্ত বের হবে।
কাব্য কান চেপে ধরেছে।কাব্য মেঝেতে লুটিয়ে পরলো।
চারুকে এবার কিছু একটা করতেই হবে।
না হয়, এরা এবার কাব্যকে নিয়ে যাবে তাদের সাথে।
চারু ও অনেকটা শক্তিশালী। চারু আচমকা হামলা করে কাব্য কে নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেল।
কাব্য অচেতন অবস্থায় আছে।
তারা চারুর পিছু নিচ্ছে।চারুকে তারা দেখে নিয়েছে।
খালি বালুর মাঠ চোখে পরলো।
চারু কাব্যকে কাধে নিয়ে পালাচ্ছিলো।একটি দলের সাথে যুদ্ধ করতে পারবে না একা চারু।কিন্তু তারা পিছু নিচ্ছেই।
বালুর মাঠে কাব্যকে রেখে, চারু দাঁড়ালো।
তারাও এগিয়ে আসছে মন্ত্র বলতে বলতে।এদের দল থেকে কেউ একজন কথা বললো
—কে তুই?ওরে আমাদের দিয়ে দে।চলে যা
—-তোমরা কারা।ওকে কেন নিতে এসেছো।
—-ওকে নিয়ে যেতে হবে।আদেশ আছে।
চারু কিছুতেই মানছে না।ঝাপিয়ে পরলো চারুর উপর।চারু বেশ যুদ্ধ করে অনেকটা আঘাত প্রাপ্ত হয়েছে।
কিন্তু চারু অনেকটাই শক্তিশালী ছিলো।
কারণ চারু ছিলো মারিদ।এরা অনেক শক্তিশালী হয়ে থাকে।
যারা এসেছিলো তারা ছিলো ইফ্রিত।
সব কিছুতেই ভালো খারাপ থাকে।এখানেও তাই।
চারু হয়তো এখনি লুটিয়ে যাবে মাটিতে।
আর হয়তো কাব্যকে বাঁচিয়ে রাখতে পারবে না।
চারু অনেকটা আহত হয়ে গিয়েছে।
হঠাৎ দেখে কাব্য নেই।চারু মিলিয়ে গেল।
সেই দল ও মিনিটেই অদৃশ্য।
।
।
চারু আহত।উঠে দাঁড়ানোর ও শক্তি পাচ্ছে না।
এদিকে কাব্য কোথায় গেল।তাকে কি নিয়ে গেল।
আমি কি কাব্যকে বাঁচাতে পারলাম না।
চারু বেশ কিছুক্ষণ বসে থেকে বাড়ি গেল।
ঘরে গিয়ে দেখে কাব্য বিছানায় শুয়ে আছে।
—-কাব্য এখানে।কিন্তু কিভাবে।
চারু খুব চিন্তায় পরে গেল।
যারা চলে গেল,তারা আবার আসবে এটা নিশ্চিত। কিন্তু কেন এসেছে।কার আদেশ।
।
।
কাব্য পরদিন সকালে ঘুম উঠেছে,মাথা খুব ভারি।মনে হচ্ছে মাথার উপর হয়তো কেউ বসে আছে।
চারু পাশেই বসে আছে।
—-কাব্য তুমি ঠিক আছো?
—–কিন্তু কি হয়েছে।
—–কাল রাতে
—–কাল রাতে কি?
—–তোমার কি কিছুই মনে নেই।
—–কই নাতো।আমরা ছাদে গেলাম।এরপর ঘুমালাম।আর কি।
—-না,কিছুনা।
চারু কাব্যের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।নিমিষেই মাথা হালকা হয়ে গেল।
——এখন ঠিক লাগছে?
—–হ্যা এখন তো একদম ঠিক।
—–তুমি হাত মুখ ধুয়ে নাও।আমি তোমার জন্য আদা চা নিয়ে আসি।
আদা চা খেয়ে কাব্য অফিসের জন্য বেরিয়ে গেল।
চারু আজ তার এক বন্ধুর সাথে দেখা করতে যাবে।
তার সেই বন্ধু ও একজন মারিদ।সে ছেলে।
যে কোনো বিপদে তাকে পাশে পেয়েছে।
এই বিপদের কথা তাকে জানাতে হবে।যাতে পরের বার সাহায্য করতে পারে।
।
।
মদন কাকার দোকানে কাব্যের জেঠুর চিঠি এলো।
কাব্য অফিস শেষে বাড়ি ফিরতেই
—–কাব্য তোমার চিঠি আইছে।
—–ও। দাও দেখি।
——তুমি যে চা খাইতে আসো না কয়েক দিন।
—–কাজের একটু চাপ চলছে, তাই বসার সময় পাচ্ছিনা।
কাব্য বাড়ি গিয়ে চিঠি টি খুললো
ভালোবাসার কাব্য,
ভালো আছিস?
তোর জেঠি মা এখন অনেকটা সুস্থ।তোর সময় হলে বাড়ি এসে ঘুরে যাস।
রিমা চাইছে,কলকাতা গিয়ে বাকি লেখাপড়া টা করতে।তুই তো সেখানেই থাকিস।তুই সময় করে একদিন এসে নিয়ে যাস।ভালো থাকিস।আমার ভালোবাসা রইলো।
ইতি
তোর জেঠু।
কাব্য চিঠি পড়ে চোখ কপালে উঠেছে।চারু এখানে।রিমা যদি আসে তাহলে একটা ঝামেলা হবে।
আর রিমা কে যদি না আনা হয় তাহলে,জেঠুর কাছে ছোট হয়ে যাবে।।।।।
।
।
——চারু বাড়ি থেকে চিঠি এসেছে।আমাকে যেতে হবে।সাথে আমার বোন আসবে।
—–অহ।আমাকেও নিয়ে যাও।
—–তোমাকে?কিন্তু
—–আমি এমন ভাবে থাকব।কেউ বুঝতেই পারবেনা।
——আচ্ছা ঠিক আছে।নিয়ে যাব তোমায় আমার গোবিন্দপুরে।
।
।
রাত ১.৩৫
কাব্যর হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল।পানি খাবে উঠে।কাব্য বিছানা থেকে উঠে টেবিলের কাছে গিয়ে পানি খেয়ে আসার সময়।
হঠাৎ কেউ যেন সামনে থেকে জড়িয়ে ধরলো।
কাব্য ঘুম চোখে বলছে
চারু তুমি আমায় জড়িয়ে ধরলে।
এটা বলার সাথে সাথেই কাব্যকে ছেড়ে দিলো।
কাব্য কিছু বুঝতে না পেরেই ঘুমাতে চলে গেল।
কিন্তু কাব্যকে জড়িয়ে ধরলো কে!!
পরদিন সকালে,
কাব্য গ্রামে যাবে।সাথে চারুও।
ট্রেনের টিকেট করে নিয়েছে।কাব্য ঘুমাচ্ছে আর চারু কানের কাছে এসে চারু চারু বলছে।
একটু পর পর ঘুমটা ভেঙে দিচ্ছে আর কাব্য মুচকি মুচকি হাসছে।
আর বলছে, আমাকে ঘুমাতে দাও আমি ঘুমাবো।
গ্রামে চলে এলো কাব্য।
কাব্য আসবে শুনে অপরাজিতা তার মুখ খানা বাংলার পাচঁ করে রেখেছে।আর রিমাতো মহা খুশ।কাব্য আসবে আজ।বেশ অনেক পদ রান্না হয়েছে।
।
।
কাব্য ঢুকলো ঘরে,সাথে চারুও আছে কিন্তু কেউ দেখছেনা।
—জেঠি মা কেমন আছো?
—-ভালো থাকতে আর কই দিলি।
—-কাব্য, আয় আয়।
—-জেঠু কেমন আছো?
—-হ্যা ভালো।
আদিক্ষেতায় বাচিনা।
জেঠিমা মুখ বেকিয়ে চলে গেল।রিমা তাড়াতাড়ি করে লেবুর শরবত বানাচ্ছে।
লেবুর শরবত স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ভালো।
রিমা শরবত নিয়ে এলো।
কাব্য রিমাকে যত দেখছে তত অবাক।রিমা কখনো কাব্যের সাথে ভালো করে কথা বলতো না।কিন্তু এখন বিনা দ্বিধায় সব কিছু করে।
।
।
রাতের খাবার খেয়ে কাব্য ঘরে চলে গেল।
—–কি ব্যাপার ম্যাডাম, আমাদের বাড়ি কেমন লাগছে?
—–হ্যা ভালো।
—-আমার ঘরে থাকতে আপনার কোনো অসুবিধা নেই তো?
—–একদম নেই।
কাব্য, চারুকে টেনে খাটে শুইয়ে দিলো।
—-কি হচ্ছে কি হু?
—-কি আবার হবে?আদর করতে চাই
—–ছি ছি কি সব বলছে।
কাব্য ধীরে ধীরে চারুর কাছে আসছিলো আর তখনি দরজায় কড়া নাড়লো রিমা।
চারু অদৃশ্য হয়ে গেল।কাব্য খুবই বিরক্ত হলো।
কাব্য গিয়ে দরজা খুললো
—–হ্যা রিমা কিছু বলবে?
—–আসলে ঘরে পানি আছে কিনা দেখতে এসেছি।না থাকলে আমি এনে দিব।
—–হ্যা পানি আছে।শেষ হলে আমি নিয়ে নিব।
—-ঠিক আছে।
রিমা যেতেই চাইছিলো না।তারপর গেল।
কাব্য এসে বিছানায় বসলো।চারু শুয়ে আছে।
—–কি হয়েছে সাহেব কি দেখছেন?
—–তোমায় দেখছি।তোমার চোখ, তোমার ঠোট এতো সুন্দর কেন।
কাব্য কাছে আসতেই চারু দৌড়ে জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। অনেক বাতাস। চারুর চুল গুলো উড়ছে।
কাব্য এসে পিছোনে দাঁড়ালো। চুল গুলো সরিয়ে পিঠে আলতো করে চুমু একে দিলো।চারু যেন কেপে উঠেছে।
—-কি হচ্ছে কি কাব্য।
—–ভালোবাসছি।
—-এসব কি ঠিক হচ্ছে?
—-হ্যা। আমার চারুকে আমি ভালোবাসব। আমি তুমি যেখানে,সেখানে কোনো নিয়ম নেই।
চারু কাব্যকে জড়িয়ে ধরতেই আবার দরজায় ধাক্কা।
—-উফ আবার কে এলো।
চারু হাসছে।
কাব্য গেল,দরজা খুলে দেখে,আবার রিমা।রিমা এবার দুধ নিয়ে এসেছে।
—-রিমা!!
—-বাবা বললো,এটা দিয়ে দিতে।
—-হ্যা ঠিক আছে।
—-কি করছিলে?
—-বিশ্রাম নিচ্ছিলাম।আচ্ছা আমি ঘুমাতে গেলাম।
কাব্য এই বলে দরজা বন্ধ করে দিলো।
—-কি এক জ্বালা।
—-এভাবে বলতে নেই।তুমি ঘুমাও আমি একটু ঘুরে আসি।
।
।
চারু বেরিয়ে গেল।গিয়ে অপরাজিতার ঘরে ঢুকলো।
অপরাজিতা পান বানাচ্ছে আর বির বির করছে
—-আসে গান্ডে পিন্ডে গিলতে।আর আমার মেয়েকে নিয়ে যে কি করে কে জানে।আমার কথা তো কেউ কানে তুলে না। বুঝবে কিছু ঘটলে।
চারু বাতাসে রূপ নিলো।অপরাজিতার চারপাশে ঘুরপাক খাচ্ছে।প্রথমে খেয়াল করেনি।
চারু অপরাজিতার কানের কাছে এসে ফিস ফিস করে বললো কাব্য।
অপরাজিতা চিৎকার দিয়ে উঠে।পান হাত থেকে ফেলে দিলো।
আপনা আপনি দরজা বন্ধ হয়ে গেল।
—-কে এখানে কে।
—-আমি।কেন চিনতে পারোনি এর আগের বার ও তো এসেছিলাম।
অপরাজিতাকে শূণ্যে উঠিয়ে নিলো।
অপরাজিতা চিৎকার করছে।কিন্তু কেউ শুনতে পাচ্ছে না।
চারু বড় করে হাসছে।তখনি হামিদ সাহেব ঘরে ঢুকে দেখে।অপরাজিতা চেঁচামিচি করছে।
—–কি ব্যাপার কি হয়েছে তোমার?
—–আমাকে নিচে নামাও
—-মানে কি?
—-নিচে নামাও পরে গেলে মাথা ফাটবে।
—–তুমিতো নিচেই।বিছানায়
অপরাজিতা তাকিয়ে দেখে সে বিছানায় বসে আছে।পাশে পান ও আছে।
চারু হাসছে, অপরাজিতার কানের কাছে এসে বললো, ভয় পেলে?
চলবে…….