আমার চারু পর্ব-০৯

0
253

#আমার চারু
#পর্ব-৯
#ফারজানা নিলা(writer)

—-কি ব্যাপার আমাকে কেন ধরে আনা হয়েছে?
—-সেটা তোমার না জানলেও চলবে।

অম্রিতা ভয়ংকর রূপ ধারণ করে পিটারসন এর কলার ধরে,অগ্নি চোখে তাকিয়ে আছে।

—-আমার প্রশ্নের জবাব দিন।
—listen to me.

অম্রিতা অনেকটা নিডর।ভয় খুব কম কাজ করে।পিটারসন কে ধাক্কা দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলো।কিন্তু তাকে ধরে ফেলা হয়েছে।
পিটারসন অম্রিতার উপর পুরো ঝুকে পরেছিলো।অম্রিতাকে দু দিন একটি ঘরে আটকে রাখা হয়।
অম্রিতা কান্না করতে করতে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলো।দরজা খুলে দেখে অম্রতি মাটিতে লুটিয়ে আছে।দারোয়ান রা গিয়ে পিটারসনকে খবর দিলো।সে এই খবর শুনে, রীতিমতো পাগল হয়ে গেল।দৌড়ে ঘরে এসে পাজা কোলা করে ঘরে নিয়ে গেল।
পিটার তাকে নিজের শোভার ঘরে নিয়ে শুইয়ে দিলো।
কাজের লোকদের বলে,নতুন জামা কাপড়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

বেশ কিছুক্ষণ পর, অম্রিতার জ্ঞান ফিরে এলো।জ্ঞান ফিরে দেখে গায়ে নতুন জামা,পাশে পিটার।
অম্রিতা কিছু না ভেবেই পিটারকে একটা চর কোষে দিলো।
পিটার প্রচণ্ড রেগে গিয়েছে।তবুও অম্রিতাকে কিছুই করে নি।
গ্রামে গিয়ে অম্রিতার বোনকে তুলে আনা হলো।
অম্রিতার বোনের বয়স ১৪।
পিটার সমস্ত রাগ পুষে রেখেছে।


এক সপ্তাহ পর….

অম্রিতা আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই।তুমি অনেক সুখী হবে।
ভরা মহলের সামনে পিটারকে না বলে দিলো।পিটার যেন হাসির পাত্র হয়ে গেল সবার সামনে।
অম্রিতার এই দুঃসাহসের জন্য অম্রিতাকে আজ চাবুক দিয়ে মারা হবে।

রাত ১১ টা,অম্রিতাকে পিলারের সাথে বেধে রাখা হলো।এই ঘর থেকে সবাইকে বের করে দেওয়া হয়েছে।

অম্রিতা চোখ লাল করে তাকিয়ে আছে।পিটার চাবুক হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু এগিয়ে আসছে না।
বেশ কিছুক্ষণ পর অম্রিতার বোন মায়া কে ঘরে নিয়ে আসা হলো।
ঘরে এখন অম্রিতা,মায়া আর পিটার।
পিটার একজন যোদ্ধা।প্রচন্ড শক্তিমান। সে চাইলেই এক নিমিষেই অম্রিতাকে শেষ করতে পারে।কিন্তু পিটার হয়তো খুবই ভেঙে পরেছে।

মায়াকে দেখে অম্রিতা চিৎকার দিয়ে উঠলো
—মায়া কে কেন আনা হয়েছে।ওকে ছেড়ে দিন।
—why not,

পিটার মায়াকে টেনে মাটিতে ফেলল,অম্রিতার সামনেই পিটার মায়ার শারীরিক ভাবে লিপ্ত হতে দেখলো।
অম্রিতা পারছে না, এখনি হয়তো পিটার কে মেরে ফেলে।
ঘন্টা অব্দি এই যৌণ তান্ডব চললো মায়ার উপর,আর অম্রিতা দাঁড়িয়ে দেখছিলো।
মায়া পুরোপুরি নিস্তেজ হয়ে পরেছে।মায়াকে অন্য মেয়েদের সাথে নিয়ে রাখা হলো।
পিটার মুচকি হেসে রুম থেকে বের হয়ে গেল।যেন প্রতিশোধ নিয়েছে তা সামান্য হলেও।

পরদিন বিকালে…..
অম্রিতাকে পিটারের ঘরে নিয়ে আসা হলো।
পিটার ঘরেই বসে ছিলো উলঙ্গ হয়ে।অম্রিতা হয়তো একটু লজ্জায় পরে গেল।বাইরে থেকে ঘরের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
পিটার অম্রিতাকে তুলে জোরপূর্বক বিছানায় তুললো।

—-ভরা সভায় কেন আমাকে অসম্মান করলে.why?tell me.

অম্রিতা ছটফট করছে, এখান থেকে পালাতে পারলে হয়তো বাচে।
পিটার অম্রিতার হাত দুটো বিছানার হাতলের সাথে বেধে দিলো।
অম্রিতা ছটফট করছে,পিটার তার কাছে এসে একটি একটি জামা সব খুলে ফেললো। কাপড় খুলেই পিটারের সামনে ভেসে উঠলো, অম্রিতার যৌবন ভরা শরীর।যেন পিটারের সব অঙ প্রত্যঙ কেপে উঠলো।
অম্রিতা এখনো ছটফট করছে।পিটার তার হাত দিয়ে অম্রিতার পুরো শরীরে অনূভুতি জাগানোর চেষ্টা করছে।
মানুষের শরীর খুবই রহস্যময়। ছোঁয়াতেও মানুষ বশ হয়ে যায়।বেশ অনেক্ষন পর অম্রিতা যেন আর সহ্য করতে পারছিলো না।অম্রিতার পুরো শরীর শিরশিরিয়ে উঠলো।হাল ছেড়ে দিলো।
অম্রিতা পিটারের উপর লুটিয়ে পরলো।হাতের বাধনও খুলে দেওয়া হয়েছে।
ভোর হতেই মায়াকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না।
মায়া পালানোর চেষ্টা করছিলো।অম্রিতা, মায়ার নিখোজের খবর শুনে ছুটে যায়।মায়া পালিয়ে যাওয়ার সময় পিটার মায়াকে বন্দুক দিয়ে হত্যা করে।
অম্রিতা চিৎকার করে উঠে।ফলের ঝুড়ি থেকে ছুড়ি নিয়ে পিটারের পিঠে বসিয়ে দিলো অম্রিতা।
পিটারের বাহিনীরা অম্রিতা বন্দি করে সাথে সাথে।
পিটারের চিকিৎসা না সারতেই সে সিদ্ধান্ত নেয়,একে বাচিয়ে রেখে লাভ নেই।
অম্রিতাকে ঝর্ণার কাছে নিয়ে যাওয়া হলো, ঝর্ণার পাশে একটি বড় শিউলি ফুল গাছ ছিলো।সেই গাছের সাথে বেধে,জীবন্ত পুড়ে ফেলা হলো অম্রিতাকে।
পিটার সুস্থ হয়ে গেলেও।যখনি ঘরে গিয়েছে সেই। ঝর্ণা চোখের সামনে।
একদিন ভোরে সবাই উঠে দেখে সেই শিউলি গাছে গলায় ফাশি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।
এরপর এই গ্রাম একে একে শূণ্যতায় পরিণত হয়েছে।
এতো বছর পর এসে কিছু কিছু লোকজন দেখা যাচ্ছে।


কাব্য তার কাজ শেষ করে আজ রওনা হবে।
কাব্য ঘরে গিয়ে শুয়ে পরেছে।বিছানা থেকে ঝর্ণা একদম স্পষ্ট। আচমকা মনে হলো যেন কেউ বসে আছে।
কাব্য লাফ দিয়ে উঠে, জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো কিন্তু কিছুই দেখতে পাচ্ছেনা।হয়তো চোখের ভুল।
একটা ঠান্ডা বাতাস এসে কাব্যের কানে বেজে উঠলো,অম্রিতা…

ঠিক যেন কেউ পিছোনে দাঁড়িয়ে আছে।শরীরের গরম অনূভব হচ্ছে।কাব্য পিছনে তাকিয়ে দেখে কিছু নেই।কাব্য হালকা ভয় পেয়েছে।

ভোরেই রওনা দিয়ে দিলো….
চারু আজ সাদা শাড়ি কালো পাড়ের শাড়ি পরেছে।
আজ কাব্য আসবে তাই হালকা সাজুগুজু করেছে।
বেশ রান্না বান্না করছে।
মদন কাকা জানে কাব্য বাসায় নেই।কিন্তু অদিক থেকেই ঘ্রাণ আসছে।
মদন কাকা বেশ অনেক দিন ধরেই আচ করতে পারছেন।
এখানে এমন কিছু হচ্ছে যেটা স্বাভাবিক না।


রিমা কলকাতায় পড়ার জন্য বায়না ধরেছে অপরাজিতার কাছে।অপরাজিতা এখন অনেকটাই সুস্থ।

—-মা দেখো ওখানে তো কাব্য ভাইয়া ও আছে।আমার কোনো অসুবিধা হবে না।

রিমা আসলে কাব্যের কাছাকাছি থাকতে চাচ্ছিলো।কারণ রিমা কাব্যকে অনেক পছন্দ করে।
কিন্তু অপরাজিতা কাব্যকে একদমই পছন্দ করতেন না।তাই মেয়েকে কাব্যের কাছে পাঠাতে ভরসা পাচ্ছে না।
অনেক জোরাজোরির পর রাজি হলো।কাব্যের জেঠু তাকে চিঠি পাঠাবে এই ব্যাপারে।
তবেই কাব্য জানতে পারবে।


ট্রেন থেকে নেমে এক লোক বেলী ফুলের মালা নিয়ে বসে ছিলো।দেখতে খুব সুন্দর।বেশ কজন কিনলেন

—দাদা এটি কার জন্য কিনেছেন?
—আমার বউ।
–আচ্ছা।

কাব্য ভাবতে লাগলো,

আমার তো বউ নেই।তাইলে।আচ্ছা চারুর জন্য নিয়ে গেলে কেমন হয়। ও হয়তো পছন্দ করবে।

কাব্য দুইটি বেলি ফুলের মালা কিনে নিয়ে গেলো চারুর জন্য।
চারু খাবার সাজাচ্ছে।
দরজায় কড়া নাড়লো।চারু দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলেছে।

—–আরে আপনি আমার ঘরে?কি ব্যাপার শুনি।
—–এটাতে আসার অনুমতি আছে,তাই এসেছি।বুঝছেন।
—-আমার ঘর, আপনাকে অনুমতি দিলো কে শুনি
—–হয়েছে হয়েছে অনেক পাকামো।ঘরে এসো।

কাব্য গোসল সেরে খাবার টেবিলে বসলো।
আজ অনেক কিছু রান্না করেছে চারু।একটা স্পেশাল ও রান্না করেছে।পায়েশ।কাব্যর পায়েশ অনেক পছন্দের।জেঠিমার হাতের পায়েশ ও বেশ মজার।

—–খেয়ে বলো কেমন হয়েছে?
——তুমি বানিয়েছো,ভালো তো হবেই।
—–আচ্ছা খাও।

খাবার খেয়ে ছাদে চলে গেল।

—আকাশে অনেক তারা।
—-হ্যা অনেক তারা।তোমায় একদিন আকাশ ঘুরাবো।
—-আকাশ ঘুরাবে?কিভাবে
—–তা দেখো,যখন নিয়ে যাবো।

কাব্য আর চারু ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আকাশের তারা গুনছে।বেশ ঠান্ডা হাওয়া বইছে।

—-চারু!!!
—-হু
—-তোমার জন্য একটা উপহার এনেছি।
—-কি উপহার?
—-চোখ বন্ধ করো।

কাব্য বেলি ফুলের মালা দুটি চারুর ঘন চুলে পরিয়ে দিলো।

—–বেলি ফুল?
—–হ্যা।বেলি ফুলের মালা।পছন্দ হয়নি?
—- হ্যা হয়েছে।
—-অনেক সুন্দর লাগছে তোমায়।

কাব্য চারুর চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।চুল গুলো চোখের উপর এসে পরছে, আর বারেবার চারু কানের পিছোনে লুকাচ্ছে।

—-চারু!!
—-হু
—–একটা কথা বলি?
—-বলো,
—–আমার নিঃশ্বাস না ভারি হয়ে আসছে ক্রমশ।

চারু উত্তর না দিয়ে মুচকি হেসে ঘুরে দাঁড়ালো। কাব্য চারুর হাত ধরে টেনে নিয়ে আসলো।
চারু কাব্যের দিকে তাকিয়ে আছে।

—-চারু,তোমারো কি আমার মতো নিঃশ্বাস ভারি হয়?
তোমারো কি আমার মতো ইচ্ছে হয়?
—-কি ইচ্ছে হয়?

কাব্য চারুর কানে ফিস ফিস করে বললো
—-কি ইচ্ছে হয় শুনবে?
–হ্যা শুনবো।
—-তোমায় অনেকটা কাছে পেতে চাই।

এই বলেই আচমকা এক ধাক্কায় কাব্য পরে গিয়ে দেয়ালের সাথে ব্যাথা পেল।
কিন্তু চারু কাব্যকে ধাক্কা দেয় নি।
হঠাৎ একটা ঠান্ডা শীতল বাতাস,মাথার ভিতর শিরশিরিয়ে উঠলো কাব্যের।চারু কিছু একটা আচ করতে পেরেছে।
চারু কাব্যকে ঘরে চলে যেতে বললো।

হঠাৎই দরজায় খুব জোরে কেউ ধাক্কাচ্ছে।এই বুঝি দরজা ভেঙে গেল।
কাব্য চারু দুজনই তাকিয়ে আছে।
কি হচ্ছে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না।

চলবে……

(ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।কেমন হলো জানাবেন)