#আমার চারু
#পর্ব-১১
#ফারজানা নিলা(writer)
কি ব্যাপার অপরাজিতা, তোমার কি হয়েছে?
—–আমার ঘরে না কেউ একজন আছে।আমার কানে কানে কি জানি বলে।
—–তোমার মাথাটা এবার পুরোপুরি গেলো। কিছুদিন পর পর তোমার কি হয় কে জানে।এবার ঘুমাও কথা না বাড়িয়ে।
অপরাজিতা শুয়ে পরলেও ঘুম আসছে না।কানের মধ্যে যেন হাসি বেজে উঠছে একটু পর একটু পর।
পরদিন কাব্য কলকাতা ফিরে যাবে।সাথে রিমা আর তার জেঠু ও যাবে।
রিমা তার ব্যাগ পত্র গুছিয়ে নিলো।কাব্যের দেওয়া নূপুর সে পায়ে দিয়েই ঘুরে।কাব্যের দেওয়া উপহার।
সকালে কাব্যরা বেরিয়ে গেল।বাসায় অপরাজিতা আর জয়।
ট্রেনের মধ্যে রিমা গিয়ে কাব্যের পাশে বসলো।চারু সব দেখছে, আর খুব বিরক্ত চোখেই তাকিয়ে আছে।
বাড়ি ফিরে গেল।
কাব্য শুধু একটি ঘরে থাকে।রিমার জন্য আলাদা রুম নিতে হবে বাড়ি ওয়ালার সাথে কথা বলে।কিন্তু আজ রাত টা একটু কষ্ট করে কাটাতে হবে।
হামিদ সাহেব এসব কিছুই ঠিক ঠাক করেই যাবেন।
———————–
—-জেঠু তোমরা বসো।হাত মুখ ধুয়ে নাও।আমি বাইরে থেকে কিছু খাবার নিয়ে আসি।
—–হ্যা ঠিক আছে।সাবধানে যা।
কাব্য খাবার আনতে বেরিয়ে গেল।
—কি স্যার,আমাকে যে ভুলেই গেলেন।
—আমিতো আপনাকে দেখতে পাচ্ছিনা।একটু দেখা দিয়া শান্ত করেন।
চারু সামনে এলো।
—-চারু,খালি রাস্তায়, কালো মেঘ সাথে নিয়ে হাটবেন?
—–হাটা যায়।
—-চারু একটা কথা বলি
—–
অমনি বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল।চারু আর কাব্য বৃষ্টি উপভোগ করছে।
কাব্য চারুর কোমড়ে ধরে কাছে টেনে আনলো
—-চারু তুমি কি জানো
—-কি?
—–ভালোবাসি।
চারু লজ্জা পেয়ে সামনে এগিয়ে গেল।
কাব্য ও এগিয়ে গেল।কাব্য ভুলেই গিয়েছে তাকে খাবার আনতে যেতে হবে।
—-চারু আমি তোমায় কেন দেখতে পাই না?
—দেখতে চাও আমায়?
—হ্যা চারু।আমি চাই তোমায় সব সময় আমার চোখের সামনে রাখতে।তুমি অদৃশ্য হলেও যাতে আমি তোমায় দেখি
—-চোখ বন্ধ করো।
চারু কাব্যের চোখে হাত বুলিয়ে দিলো।
—-এবার চোখ খুলো।
—-তুমি কি এখন অদৃশ্য?
—হ্যা।
—কি বলছো?আমি তোমায় দেখতে পাচ্ছি।
কাব্য খুব খুশী। আনন্দে লাফিয়ে উঠলো।
—-এবার চলো।দেরি হয়ে যাচ্ছে।
কাব্য দোকান থেকে ভাত ডাল মাছ কিনে নিলো।
—–জেঠু দরজা খুলো
রিমা দৌড়ে এসে দরজা খুললো।
—তুমিতো পুরো ভিজে গিয়েছো।
—বাইরে অনেক ঝড়।
—-যা যা কাপড় বদলে নে।তারপর খেয়ে নে।
কাব্য কাপড় বদলাতে গেল।
—-কি ম্যাডাম,আমি কি আপনার সামনেই কাপড় বদল করব?
—-করতে পারেন,আমার সমস্যা নেই।
—হয়েছে অনেক দুষ্টামি। এবার যাও তো।
।
।
রিমা কে বিছানায় শুতে দিলো।আর কাব্য আর তার জেঠু বারান্দায় শুয়ে পরলো।চারু তার ঘরে গেল।
ঘরে গিয়ে চারু গোসল সারবে।
ভেজা কাপড় খুলে চেয়ারের উপর রেখে দিলো।
বাধা চুল গুলো খুলে দিলো।
চুল খুলতেই কাচা রজনীগন্ধার সুঘ্রাণ।
এই ঘ্রাণ গিয়ে কাব্যর নাকে নাড়া দিচ্ছিলো।
কাব্যর ঘুম ভেঙে গেল।চারু বিছানায় শুয়ে আছে।খানিক বাদে গোসলে যাবে।চারুর ঘর জুড়ে রজনীগন্ধা ফুল।হোক কাচা হোক শুকনো। চারুর বিছানায় সব কাচা রজনী।চারু শুয়ে ফুল গুলো নিয়ে খেলা করছিলো।হঠাৎ কাব্য এসে হাজির।দুয়ারে দাঁড়িয়ে দেখছে,চারুর জোছনা বিলাসী শরীর,যৌবন।কাব্যকে যেন আর দাড় করিয়ে রাখতে পারছিলোনা।
কাব্য নিজেকে আর বাধা দিতে না পেরে, চারু বলে ডেকে উঠলো।
—-চারু!!!
চারু কাব্যকে দেখে সেকেন্ডেই উধাও।
চারু, কোথায় তুমি?চারু।আমার কাছে কোনো আড়াল নয়।
মূহুর্তেই চাদর জড়িয়ে ভেতর থেকে এলো।
—-কাব্য তুমি এখন যাও।তোমার এভাবে আসা উচিত হয়নি।
—–কিন্তু চারু
—-যাও কাব্য।পরে কথা হবে।
চারু মোটেও প্রস্তুত ছিলোনা এই ব্যাপারটার জন্য।
মেয়েরা যখন একা থাকে, তাদের অনেক কিছুই করতে ইচ্ছে হয়।হোক সে অস্বাভাবিক কিছু।
——————
পরদিন রিমার জন্য একটি ঘর ভাড়া নেওয়া হলো।কাব্যর পাশের ঘর।হামিদ সাহেব, মেয়ের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে দিয়ে বিদেয় হলেন।
অন্যদিকে কাব্যর আবার অফিসে যেতে হবে।
সকাল হয়ে গেল,প্রায় ১০ টা বাজে। কিন্তু চারুর কোনো খোজ নেই।
—-রিমা তুমি বাসায় থেকো।কোথাও বের হবে না।আমি কাল তোমাকে নিয়ে যাব কলেজে।আমি অফিসে যাচ্ছি।
—-তুমি নাস্তা করবে না?
—–করব অফিসে।তোমার জন্য নাস্তা এনেছি খেয়ে নিও।
কাব্য অফিসের জন্য বের হলো।ভাবছে
—-আজ চারু একবারের জন্য ও এলো না যে।ও কি আমার সাথে রাগ করেছে নাকি।
কাব্য অফিস শেষে ফিরতি পথে,এক লোক রজনীগন্ধা নিয়ে বসে আছে।
রজনীগন্ধা তো চারুর প্রিয় ফুল।নিয়ে নিলে হয়তো খুশী হবে।
মেয়েরা আবার ফুল খুব ভালোবাসে।প্রেমিকাদের রাগ ভাঙানোর অস্ত্র হলো, হয় ফুল, হয় চুমু।
কাব্য ফুল গুলো ব্যাগে নিয়ে নিয়েছে।রিমা দেখলে আবার সন্দেহ করবে।
—-এসেছো তুমি।আমি দুপুরে রান্না করেছি।কই মাছ,লাউয়ের খোসার ভত্তা।মুখ হাত ধুয়ে খেয়ে নাও।
—-হ্যা ঠিক আছে।তুমি খেয়ে নাও। আমার জন্য বসে থাকার কোনো প্রয়োজন নেই।
কাব্য হাত মুখ ধুয়ে ছাদে গেল,দেখে চারু নেই।এরপর চারুর ঘরে গিয়ে দেখে দরজা বন্ধ।ভেতরে কেউ নেই মনে হচ্ছে।
—–তুমি কি করছো ওখানে।খাবার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।
—-কই কি। কিছুনা।আসছি।
কাব্য খাবার খেয়ে নিলো।চারুর সাথে সারাদিন কথা হয় নি, দেখা ও হয়নি।কাব্যর খেতে ইচ্ছে করছিলো না তবুও খেতে হলো।কারণ রিমা জোর করছিলো।
কাব্য ছাদে এসে দাঁড়িয়ে আছে।আজ আকাশ খুব পরিষ্কার। কাব্য তারা দেখছে আর ভাবছে
—-চারু কোথায় তুমি।ফিরে এসো।আর আমি এমন ভুল করব না।কথা দিলাম।
হুট করেই রিমা ডাকছে,
—–ভাইয়া ভাইয়া এগুলো কি আমার?
কাব্য গিয়ে দেখে, রিমার হাতে রজনীগন্ধা ফুল।সে এগুলো পেয়ে মহা খুশী। মাথায় একটা গুজে দিলো।
এগুলো তুমি কোত্থেকে পেলে।
—তোমার ব্যাগ থেকে।
কাব্য খুব বিরক্ত হলো এই আচরণে।চারুর রাগ ভাঙানোর জন্য ফুল রিমা নিয়ে গেল।
—-রিমা তোমার সাথে একটা কথা আছে
—হ্যা ভাইয়া বলো
—আমাকে জিজ্ঞেস না করে আমার ব্যাগ বা আমার কোনো জিনিসে হাত দিবে না।
রিমা এই কথাটি শুনে মুখটা বাংলার পাচঁ এর মতো করে ফেললো।তবুও বললো
—ঠিক আছে।
সারা রাত কেটে গেল চারু এখনো আসছেনা।
কাব্য ছাদে অপেক্ষা করছে চারুর জন্য।
হঠাৎ কাব্যর মাথায় কেমন ঠান্ডায় শিরশির ভাব অনুভব হলো।ওর মনে হচ্ছে কেউ আছে আশে পাশে।কিন্তু চোখে দেখতে পারছেনা।
চারুর দেওয়া ক্ষমতায় সে শুধু চারুকেই দেখতে পাবে।কিন্তু পাশাপাশি এমন কিছু অস্বাভাবিক কিছু থাকলেও কাব্য বুঝে নিতে পারবে।
কিন্তু চারু এসব কিছুই বলেনি কাব্যকে।
চলবে….