আমার চারু পর্ব-১২

0
219

#আমার চারু
#পর্ব১২
#ফারজানা নিলা(writer)

কাব্য অনুভব করতে পারছিলো তার পেছোনে কেউ দাঁড়িয়ে। কিন্তু পিছোন ফিরে দেখে কেউ নেই।

কাব্য বাইরে বেড়িয়ে গেল।রাস্তার মধ্যে হাটছে, নিজের মনে নিজেকে দোষ দিয়ে যাচ্ছে।
হঠাৎ একটা গাড়ি সাইড দিয়ে কাব্যর গা ঘেষেই যেতো,অমনি কাব্যকে ধাক্কা দিলো।

——কে এখানে?চারু তুমি এসেছো?
—–আমি অম্রতি।
—–কে আপনি?আমার চারু কোথায়?
—-তোমার আমাকে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই।আমি তোমার ক্ষতি করব না।
—–তাহলে, আমার কাছে কি
—–আমি তোমাকে বিপদ থেকে বাঁচাতে এসেছি।চারু তো তোমায় বাঁচাতে আসেনি।আমি এসেছি।

চারু কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছে কাব্য।কাব্য চারুকে দেখে ছুটে গেল।

—–কোথায় ছিলে তুমি।
—–আমি ছিলাম আশেপাশেই।


চারু আর অম্রিতা মুখোমুখি।

—–কে তুমি এখানে কি?
—–আমি অম্রিতা,এই ছেলেকে চাই।
—–এই ছেলে কে পাওয়া যাবে না।চলে যাও, যেখান থেকে এসেছো।
—–আমি এখানে আসিনি।ও নিয়ে এসেছে আমায়।
—–মানে কি,খুলে বলো।

দার্জিলিং এ ও আমাকে ছুঁয়েছে। তাই আমার ওর সাথে আসতেই হতো।

চারু কাব্যকে নিয়ে ঘরে চলে গেল।কাব্যের পিছু নিচ্ছে অনেক বড় বিপদ।চারু সেটা বুঝে গিয়েছে।

—চারু তুমি আমায় রেখে চলে গেলে কেন?
—-তোমার কাজটি আমার পছন্দ হয়নি।তোমার জায়গায় অন্য কেউ হলে সে চরম শাস্তি পেত।কিন্তু এখানে তুমি।তাই নিজেকে শান্ত করার জন্য দূরে চলে গেলাম
এবার বলো কে এই অম্রিতা।
অম্রিতা নামের একটা কাহিনী বলেছিলো বড় বাবু।মেয়েটাকে পুড়িয়ে মেরে ফেলা হয়েছে।আমি সেই জায়গায় একটু হাটতে গিয়েছিলাম।আর ওখানে পরে যাই ঝর্ণার পানিতে।তখন কে যেন আমাকে বাঁচিয়েছিলো।হয়তো সেটা অম্রিতা।

তোমার অনেক বিপদ।অনেক সময় যাদের স্বাভাবিক মৃত্যু হয় না।তাদের রূপ ধারণ করে খারাপ জ্বীন গুলো।

আমি তোমাকে কিছু সুরক্ষা কবজ দিবো রাতে।তখন তুমি আমায় দেখতে পাবে না কিন্তু তুমি অনুভব করতে পারবে।আশেপাশে কেউ থাকলে।এমন কি আমি বা এর চেয়ে বেশি কেউ থাকলেও।রাত ২ টায় আমার ঘরে চলে আসবে।


রাত ২ টা…..

কাব্য গুটি গুটি পায়ে বেড়িয়ে গেল।মনের মধ্যে ভয় কাজ করছে না।জানে চারু আছে, ভয়ের কিছু নেই।
চারুর ঘর পুরো অন্ধকার কিছুই দেখা যাচ্ছে না।
কাব্য ঘরে ঢুকতেই কেমন বাতাস শুরু হয়ে গেল।চারদিক যেন এখন টুকরো টুকরো হয়ে যাবে।হঠাৎ সব শব্দ বন্ধ।সব কিছু নিস্তেজ হয়ে পরলো।বাতাসও বন্ধ হয়ে গেল।ধুম করে দরজাটা বন্ধ হয়ে গেল।
কাব্য ভয়ে পেয়েছে এবার।বুকে হালকা থুথু দিলো।
কে যেন টেনে বসিয়ে দিলো।

কাব্য অটোমেটিক ভাবেই চোখ বন্ধ করে বসলো।ধ্যান করার ভংগিমায়।
চারু এসে কিসব বলছে,আর তখনি কাব্যকে কে যেন পিছোন থেকে টানছে আর বাতাস হচ্ছে।ক্রমেই বাতাস বেড়ে চলেছে।চারু কাব্যর কপালে আংগুল ছুঁয়ে রেখেছে।
পিছোন থেকে কাব্যকে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা ব্যর্থ হলো।কাব্য চোখ খুলছে আবার খুলছে না।এই বুঝি বেহুশ হবে।
কাব্য লুটিয়ে পরলো মাটিতে।কাব্যের ভেতরের ক্ষমতা গুলো চারপাশে জানান দিচ্ছিলো।যার কারণে কাব্যের দিকে বিপদ ধেয়ে আসছে।

সকাল দশটায়,
কাব্য তাকে অফিসে আবিষ্কার করলো।
চোখ খুলে দেখে অফিসে সবাই কাজ করছে।কাব্যর হাতে কলম, কাগজ।
দেখে সে অবাক।

—-আমিতো চারুর ঘরে ছিলাম,এখানে কিভাবে এলাম।

পাশে অমিত বাবু কাজ করছেন।

—–অমিত বাবু আমি এখানে কিভাবে এলাম
—-কি!! তুমিতো আজ সবার আগে এসে কাজ সেরে নিলে।এখন তো তুমি চাইলেই বাসায় ফিরতে পারো।
—-কিন্তু আমি যে।
—-বড় বাবুর সাথে কথা বলে বাড়ি যাও।একদিনে এতো কাজ করা ঠিক হবে না।

কাব্য বড় বাবুর সাথে কথা বলে বাড়ি ফিরে গেল।

রিমা কলেজে চলে গিয়েছে।টেবিলে খাবার সাজিয়ে।
কাব্য ছাদে গিয়ে চারুর ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।চারুর ঘরের দরজা বন্ধ।
হুট করেই দরজা খুলে গেল।

—-ভেতরে আসব?
—-হ্যা আসো।
—-কাল কি হয়েছিলো?আর আমি অফিসে কিভাবে।
—-আমি নিয়ে গিয়েছি।
—-তুমি কি আমার সাথে রেগে আছো?
—-না।
—সত্যি বলছো?
—হ্যা,মিথ্যা বলার কি আছে।
—-তাহলে এসে জড়িয়ে ধরো।

কাব্যের কথা শুনে চারু মুচকি হেসে দিলো।উঠে এসে কাব্যকে জড়িয়ে ধরলো।

—-এবার ঠিক আছে?
—-এখন অনেকটাই শান্তি।তুমি এভাবেই আমার বুকে থাকবে।তুমি আমার প্রশান্তি চারু।
—–হ্যা হয়েছে হয়েছে।

রিমা বাসায় এসে কাব্যকে খুঁজছে। ঘরে খুজে না পেয়ে ছাদে চলে এলো।হঠাৎই কথার শব্দ শুনতে পেল।রিমা ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে।
চারু টের পেয়ে অদৃশ্য হয়ে গেল।

—–ভাইয়া তুমি এখানে কি করছো?
—–এখানে মানে এই ঘর টা দেখতে এসেছি।
—–ওহ,আমি তোমাকে খুজছিলাম পুরো ঘরে।কিন্তু এই ঘর কার জন্য?
—–ওহ আমার অফিসের একজনের জন্য।ঘর পাচ্ছে না তাই আমি বলেছিলাম এই ঘরের কথা।

—-ওহ।চলো খাবে।খাবার সব ঠান্ডা হয়ে গেল।


রাত হয়ে গেল।কাব্য শুয়ে পরেছে।রিমার আসাতে চারুর সাথে ভালো ভাবে সময় কাটাতে পারছেনা কাব্য।শোয়া থেকে উঠে কিছুক্ষণ বারান্দায় হাটছে।তখনি কানে ভেসে আসছে, মিষ্টি সারদের সুর।
আজকের সুরে ছিলো,একাকিত্বের ছোঁয়া।
তবে কি, চারু জানে আমার ঘুম আসছেনা।চারু তুমি যদি আমার কাছে থাকতে, তাহলে আরো ভালো হতো।তুমি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে, আর আমি চোখ বুজে তোমায় অনুভব করে ঘুমিয়ে পরতাম।
চারু,আমাদের মাঝে কি দূরুত্ব এসেছে।কেন তুমি দূরে।চারু তুমি কি শুনতে পাও।

কাব্য ঘুমিয়ে গেল।ধীরে ধীরে সারদের সুরটাও অনেক দূরে চলে যাচ্ছিলো।পুরো ঘরে শিউলির ঘ্রাণ। যেন কেউ এক গাদা শিউলি তুলে এনে পুরো ঘরে ছড়িয়ে দিয়েছে।


ছয় মাস পর……
রিমা এখন সালোয়ার কামিজ ছেড়ে শাড়ি পড়া শুরু করেছে।সকাল ৮ টায় শাড়ি পড়ে কাব্যের ঘরে এলো।
কাব্য অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।রিমা এর আগে কখনো শাড়ি পড়েনি।তবে সুন্দর লাগছে কিন্তু চারুর পাশে হয়তো দাঁড়াতে পারেনি।
চারুর সাদা শাড়ি,হালকা ভাজ পড়া কোমড়।বাতাসে তার মলিন চুল তার মুখের উপর উড়ে এসে বসে।অসম্ভব সুন্দরী নারী।

চারু এখন সবার সামনেই থাকে,কাব্যের অফিসের লোক বলে।ঘর পাচ্ছে না তাই এখানে ভাড়া নিয়েছে।
রিমা প্রায় সময় চারুর কাছে যায়।
মেয়েরা আবার গল্প করা শুরু করলে আর শেষ করার নাম নেয় না।এখানে কোনো মেয়ে না থাকায়,রিমা চারুর সাথে গল্প করে।

……………………………….
—-আপা তোমার চুল গুলো এতো সুন্দর করে কিভাবে রাখো?আমাকেও বলো।আমার তো সব চুল পরে যাচ্ছে।

—–চুলে তিন দিন পর পর তেল দিবা।তখন তোমার চুলও ঠিক থাকবে।আর নারীদের সৌন্দর্য ফুটে উঠে চুলে বুঝেছো।

—–আপা তোমার সাথে একটা কথা আছে।রাতে বলবো।
—–রাতে কেন?এখন কি হয়েছে।
—–রাতে তুমি সারদ বাজাবে, আমি তখন বলব।যে কথা বলব, সেটার জন্য পরিবেশ টা ও সুন্দর করতে হয়।আর তুমি তো মন ভালো করার মতো সারদ বাজাও।

—–ঠিক আছে।


রাস্তায় গাড়ির জন্য কাব্য দাঁড়িয়ে আছে।

—–এই যে সাহেব,আমি কি কোনো ভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি?
—–আপনি?আমাকে সাহায্য করবেন।কিভাবে শুনি।
—-এই যে এখন আমি আপনার পকেটের পয়সা বাঁচিয়ে দিবো।
—-তাই নাকি।
—-হাত ধরুন,আর চলুন।

শত ব্যস্ততার শেষে তোমার হাতটা ধরে হাজার কিলোমিটার হাটলেও যেন ক্লান্তি লাগে না।চারু তুমি কি জানো, আমি তোমায় অনেকটা ভালোবাসি।

—–হ্যা জানিতো।

—-মানে,কি জানো।
—-যেটা তুমি এই মাত্র বললে।
—-কি বললাম।আমিতো চুপ ছিলাম।
—-তাই নাকি।

এই বলে,চারু কাব্যকে সুরসুরি দিয়ে ছুটতে লাগলো।বেশ অনেক খানি পথ চলে এলো।রিমা বাসায় অপেক্ষা করছে।চারুকে কিজানি বলবে।আবার হয়তো কাব্যের জন্যও অপেক্ষা করছে।

অনেক্ষন পর ঘরে এলো কাব্য।

—-কি ব্যাপার এতো দেরি হলো?
—-এমনি।কাজ ছিলো তাই।
—-চারু আপাও কি সাথে ছিলো।
—-কেন?
—-না এমনি।আচ্ছা তুমি মুখ হাত ধুয়ে খেয়ে নাও।আমি একটু চারু আপার সাথে গল্প করব।
—-এতো রাতে কিসের গল্প?
—-সেসব তুমি বুঝবেনা।

কাব্যের মুখ খানি শুকিয়ে গেল।আজকে রাতেও তাহলে চারুর সাথে সময় কাটানো হবে না তাহলে।
কিন্তু আমি আজ অপেক্ষা করব,যত রাতই হোক না কেন।আজকের চাঁদনী রাত একা ঘুমিয়ে কাটালে হবে না।

——–আপা আসব?

চারু একটা বড় বাটিতে কিছু রজনীগন্ধা ফুল সাজাচ্ছে।পানিতে ফুল ভাসাতে খুব সুন্দর লাগে।

—-হ্যা এসো।
—-কি করছো আপা?
—-ফুল সাজাচ্ছি।
—-তুমি এই ফুল গুলো কোত্থেকে পাও
—-কিনে নিয়ে আসি।কি যেন বলবে বলেছিলে
—-হ্যা বলব।তুমি আগে সারদ নিয়ে বসো,তারপর।

চলবে……

(ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন,পড়ে জানাবেন কেমন হলো।)