আমার চারু পর্ব-১৪

0
217

#আমার চারু
#পর্ব-১৪
#ফারজানা নিলা(writer)

উঠে বসো।ধরো চা খাও।চা খেলে অনেকটা ভালো লাগবে।
—-আপা আমি এখন অনেকটাই ঠিক আছি।ভাইয়া কোথায়?
—-আছে।
—–অফিসে যায়নি?
—–তোমার এই অবস্থা,এর মধ্যে কি কাজে মন বসাতে পারবে।আর কথা বলো না।তুমি এবার ঘুমাও।

দু দিন কেটে গেল, ভাইয়া আমার সাথে কথা বলে না।আপা তুমি একটু বুঝাও।
—-তুমি এসব নিয়ে চিন্তা করোনা।তুমি তোমার পড়ায় মন দাও।

রিমার কাছে চারুর কথা গুলোর স্বাদ খানিক তিতা লাগলো।
পড়তে বসেছে।দুদিন কেটে যাওয়ার পর রিমা অনেকটাই ভালো।
রিমা জানালা খুলে দিয়ে বসেছে।হালকা ঠান্ডা বাতাসের মাঝে পড়তে ভালোই লাগে।

হুট করে একটা ছায়া পাশ কেটে গেল মনে হলো রিমার।চমকে উঠে এদিক সেদিক তাকাচ্ছে।হঠাৎ টেবিলের ছোট আয়নায় নজর পড়তেই দেখে,বিছানায় এক সুন্দরী মহিলা বসে বসে চুলে বিলি কাটছে।

—–কে?কে আপনি??
—-আমি অম্রিতা।দু দিন আগে যাকে দেখে বেহুশ হয়েছিলে।সেই আমি।
—-মানে?
—-মানে খুব সোজা।সেদিন যে চেহারায় এসেছিলাম সেটি আমার এখন কার চেহারা।আর এখন যে রূপবতী চেহারা দেখছো এটি আমার আগের নিজের চেহারা।
—–মানে কি এসবের?কে আপনি?
—–আমি কে সেটা তোমার না জানলেও চলবে।তুমিতো কাব্যকে পছন্দ করো তাই না!!!
—–সেটা আপনি জানলেন কিভাবে?
—-আমি সবই জানি।এখন তুমি বলো, তোমার কাব্যকে চাই কি চাই না।
—-হ্যা চাই কিন্তু
—–কিন্তু কিসের
—–কিন্তু তুমি কে?
—-আমি মানুষ নই সেটাতো বুঝেছোই।আমি ছাড়া তুমি কখনোই কাব্যকে পাবে না।
—-কে বলেছে, পাবো। অবশ্যই পাবো।
—-চেষ্টা করে দেখো।তোমার কাব্য ভাইয়ার আশে পাশে যে ঘুর ঘুর করে, তার জন্য তুমি কখনোই কাব্যকে পাবে না।
—-কে ঘুর ঘুর করে?
—-কে আবার,চারু।আমার কথা বিশ্বাস না হলে,লুকিয়ে তাদের উপর নজর রেখে দেখো।তখন সবটা পরিষ্কার। ঠিক যেমন, বড় এলাচ আর ছোট এলাচ।

নিমিষেই মিলিয়ে গেল অম্রিতা।রিমা যেন একটা ধাধার মাঝে ঘুরছে।কি করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছেনা।

কে এই অম্রিতা।আমার উপকার করবে।আমার কাছে পুরো এলোমেলো লাগছে।


কাব্য অফিস থেকে ফিরেই ছাদে চলে গেল।ছাদে গিয়ে সিগারেট খাচ্ছে।চারু বসে আছে চেয়ারে।
বেলি ফুলের মালা গাথার শখ হয়েছে।

—–কি ম্যাডাম,কি করছেন?
—–কেন,চোখ দুটো কি রুমে রেখে এসেছেন নাকি?
—-হ্যা রুমেই রেখে এলাম।হালকা বিশ্রামের জন্য।আপনার চোখ থাকতে আবার আমার গুলো লাগে নাকি।
—–বাহ,কি কথা।আমার চোখ আমার কাছে।
—-তোমার গুলো থাকলেই হবে।আমার পেত্নী।
—-কি বললে তুমি।আমি পেত্নী। যখন দেব না ঘাড় মটকে।তখন বুঝবে।

কাব্য বেশ অনেক দিন পর একটু হাসি ঠাট্টা করছে।
রিমা দাঁড়িয়ে সব শুনলো।

মেয়েরা প্রেম আদায় করার জন্য মরিয়া উঠে।আবার যখন নিজের ব্যক্তিত্বতে ঘা লাগে তখন দূরে সরে যায়।
রিমা এখন মরিয়া হয়ে উঠেছে কাব্যকে পাওয়ার জন্য।যতক্ষণ না নিজের করে নিতে পারছে ততক্ষণ শান্তি নেই।

কাব্য গিয়ে শুয়ে পরলো।চারু ছাদে বসে বসে বেলী ফুলের মালা গাথছে।
রিমার ঘুম আসছেনা।বার বার ভাবছে, কি করা যায়।ছাদে এসে দেখে চারু মাদুর বিছিয়ে মালা গাথছে।

——-আপা,এতো রাতে ছাদে কি করছো?
——অহ রিমা।আমি মালা গাথছি।
——এতো রাতে ছাদে,ভয় লাগে না একা একা?
——ভয় কিসের?
—–ভূত টুত নাকি রাত হলে ছাদে হাটাহাটি করে।আমার বান্ধুবিরা বলতো।
——ভূত!!!ভূত বলতে কিছু নেই।এসব মনের ভয়।
—–তাহলে তুমি কে?

রিমার এই প্রশ্ন, চারুর হাসিটা থামিয়ে দিলো।

—-আমি ভূত।হা হা হা।ভয় পেলে।
——না ভয় পাইনি।
—–অনেক হয়েছে কথা যাও তো ঘরে গিয়ে ঘুমাও।আমার অনেক ঘুম পাচ্ছে।আমিও ঘুমাবো।মালা কাল গাথব।

চারু উঠে চলে গেল।কিছুক্ষণ পর রিমাও ঘরে ফিরে গেল।

কাব্য শুয়ে আছে।বেশ অনেক্ষন হলো ঘুমিয়েছে।
হঠাৎ কেউ যেন কাব্যকে চাপ দিচ্ছে।যেন জড়িয়ে ধরছে।
চারু কাব্যকে কিছু ক্ষমতা দিয়েছে।যাতে সে চারুকে অদৃশ্য অবস্থায় ও দেখতে পায়।এই ক্ষমতার কারণে,কাব্যর আশে পাশে কোনো অশরীরী থাকলে সেটা কাব্যের শরীর তাকে জানান দেয়।
মাথার মধ্যে শিরশিরিয়ে উঠছে।সাথে সাথে ঘুম ভেঙে গেল।কাব্য কিছুতেই উঠতে পারছে না।প্রচন্ড চাপ প্রয়োগ করছে কাব্যের উপর।খিলখিলিয়ে হাসি।কাব্যের কানে আসছিলো।যা খুবই বিরক্তীকর।
মুখ দিয়ে কোনো শব্দ বের করতে পারছে না।বেশ ১৫ মিনিট পর ছেড়ে দিলো।কাব্যর উপর থেকে বিশাল পাথর সরেছে।উঠে এক গ্লাস পানি খেয়ে নিলো।
কাল সকালে চারুকে এই বিষয়ে জানাতে হবে।

সারা রাত আর ঘুমুতে পারেনি কাব্য।সকালের আলো ফুটতেই চারুর ঘরে হাজির।

—–কি ব্যাপার,তুমি এতো সকালে।
—–জরুরী কথা ছিলো।
—–কি হয়েছে?
—–কাল ঘুমের মধ্যে হঠাৎ কেউ আমাকে চেপে ধরেছিলো।এবং খুব খিলখিলিয়ে হাসছিলো।

চারু চোখ বন্ধ করেই কাব্যের হাত ধরলো।নিমিষেই সব সামনে।
—-এটা অম্রিতা।তুমি বিপদ বাধিয়ে নিয়ে এসেছো।এটা তোমার পিছু সহজে ছাড়বেনা।

—-তাহলে কি করব।
—-আমি আছিতো।তোমার চিন্তা করতে হবে না।

চারু পুরো বাড়ির আশেপাশে দাগ কেটে দিলো।যাতে এই বাড়িতে অম্রিতা প্রবেশ না করতে পারে।অম্রিতা একজন ইফ্রিতে পরিণত হয়েছে।এদের প্রচণ্ড ক্ষমতা থাকে।শয়তানি বুদ্ধি এদের ভরপুর।কিন্তু এখানে অন্য কিছু।অম্রিতার নজর কাব্যর দিকে।সে তাকে নিয়েই ছাড়বে।

রাত ঠিক দুইটায় এর ক্ষমতা বুঝার জন্য বসবে চারু।চারুর মারিদ বন্ধু এ ব্যাপারে তাকে সাহায্য করতে পারে।কিন্তু এখন সাহায্য চাইবে না।বিপদের কথা ঠিক বুঝা যাচ্ছে না।
রাত ঠিক দুইটায় চারু তার ঘরে বসে আছে।আলো নিভিয়ে।
বাড়ির আশে পাশে যেন এলাহি কান্ড বেধেছে।অম্রিতা দাগ কাটিয়ে ঢুকতে পারছে না।

——-ভাইয়া এসব কি হচ্ছে
——কিছুনা।যা হচ্ছে হতে দাও।।তুমি বাসা থেকে বের হবে না।

রিমা ছাদে যেতেই অম্রিতা রূপে ফিরে এসেছে।

——এই রিমা, বেরিয়ে আয়।আমি ঢুকতে পারছিনা।

রিমা তাকিয়ে আছে।কিন্তু কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না।

রিমা অম্রিতার চোখের দিকে তাকাতেই বস হয়ে গেল।
সে নিচে নেমে আসছে।
এর মধ্যে মদন কাকা দোকান থেকে বের হয়ে কিছু একটা আচ করতে পেরে,তিনি মসজিদে চলে গেলেন।

—–হুজুর সাহায্য করুন।
—-কি হয়েছে খুলে বলো।
—–হুজুর আমার দোকানের পাশেই একটা বাড়ি আছে।ছেলে একজন থাকে।এর মধ্যে তার বোন আসলো।কিন্তু আগেও উলটা পালটা আওয়াজ পাইছি।কিন্তু আজকের অবস্থা খুবই খারাপ।আপনি ছেলেটারে বাচান।পোলাডা বড় ভালা।
—–ঠিক আছে আমি দেখছি।তুমি শান্ত হও।

এলাকার মধ্যে আব্দুল্লাহ হুজুর অনেক ডাক নাম।তিনি অনেক লেখাপড়া করেছেন।আর হুজুরের কাছে প্রায় সময় এমন ঘটনা আসে।

হুজুর সাথে আরো ছয় জন হুজুর সহ রওনা হলো।বাড়ির সামনে আসতেই সবাই সূরা পড়তে শুরু করলো।

চলবে……

(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।পড়ে জানাবেন কেমন হলো)