আমার চারু পর্ব-১৫

0
318

#আমার চারু
#পর্ব-১৫
#ফারজানা নিলা(writer)

হুজুররা সূরা পড়তে পড়তে বাড়ির ভেতরে ঢুকছে।অম্রিতা সুযোগ বুঝেই পালিয়ে গেল।হুজুররা ভিতরে ঢুকে গেল।পুরো বাড়ি ঘিরে দিয়েছে পবিত্র পানি দিয়ে।
আগরবাতি, সাথে আরো পবিত্র পানি নিয়ে এসেছে। কাব্য দেখে অবাক হয়ে গেল।
কাব্য বুঝে গেল,একটা বিপদ হবে।

——-একি আপনারা কারা।এখানে কেন এসেছেন?
——আমরা তোমাকে সাহায্য করতে এসেছি।
—–কিন্তু কিসের,কাকা তুমি এখানে?
—–হ্যা আমি।তোমার বাড়ির অবস্থা দেইক্ষা আমি হুজুর আনছি।
—–কি করলে তুমি।ওদের আটকাও।

ঠিক তখনি, চারু চিৎকার। দিয়ে উঠলো কাব্য বলে।
কাব্য দৌড়ে গেল।গিয়ে দেখে চারুকে হুজুররা চারদিক থেকে ঘিরে ধরেছে।

——চারু।ওকে ছেড়ে দিন।ও কিছু করেনি।
—–তুমি এদের খেলা বুঝবেনা।এই তুই এখানে কেন এসেছিস বল।

অমনি চারুকে বশে আনার চেষ্টা করছে।জ্বীনেদের আটকে রাখা যায়।আর সেই চেষ্টা টাই হুজুর রা করছে।
চারুর উপর রীতিমতো বেত্রাঘাত করেই যাচ্ছে।ঠিক তখনি চারু লুটিয়ে পরলো।হয়তো আর সহ্য করতে পারছিলোনা।
কাব্য অসহায়ের মতো দাঁড়িয়েছিল। ঠিক সময়ে চারুর বন্ধু মারিদ এসে হাজির।তার গর্জনে সবাই কানে হাত দিয়ে ফেললো,সুযোগ বুঝে মারিদ চারুকে নিয়ে গেল।

পুরো বাড়ি শান্তো হয়ে গেল।চারুকে আর কিছুক্ষণের মধ্যেই বশে নিয়ে আসতো।আর একবার ধরা দিলে, তারা তাকে বন্দি করে রাখতো।আর না হয় জ্বালিয়ে দিতো।
মারিদ চারুকে তাদের জায়গায় নিয়ে গেল।

——তোমার সাবধানে থাকতে হবে।এ বাড়ি বন্ধ করতে হবে।বাড়ি বন্ধ করলে তাদের আনাগোনা কম হবে।আর আমরা কিছু তাবিজ তোমার ঘরে লাগিয়ে যাব।

কাব্য চুপ করে বসে আছে।ইচ্ছে করছে চিৎকার করে কান্না করার।কিন্তু কান্না পাচ্ছে না।

——ভাইয়া ভাইয়া এসো খাবে
——আমার সামনে থেকে চলে যাও।
—–কিন্তু ভাইয়া
—–চলে যাও,আমাকে একা থাকতে দাও।

রিমা চলে গেল নিজের ঘরে।কাব্য চারুর ঘরের দরজা ধরে বসে আছে।


—-কি ব্যাপার কাব্য,তোমার তো প্রমোশন হয়েই যাচ্ছে।
—-আপনিও কাজ করুন, আপনারো হবে।

এক বছর পেড়িয়ে গেল,
কাব্য এখন অনেকটা চুপচাপ থাকে, কারো সাথে তেমন কথা বলেনা।অফিসে যায়, অফিস থেকে ফিরে ঘরের দরজা বন্ধ করে ফেলে।
কাব্য এই এক বছরে,রোজ একটি করে চিঠি লিখেছে চারুর জন্য।চিঠি গুলো সব আলমারি তে রেখে দিয়েছে।রিমার সাথে তার তেমন যোগাযোগ নেই।
রিমার উপর অম্রিতার মায়া কাজ করেনি।অম্রিতার এরপর থেকে এখানে আর দেখা নেই।
রিমা মাঝে মধ্যে কাব্যকে দেখতে আসে।কিন্তু কাব্য দেখা করে না।

কাব্যর অফিসে আজ থেকে ছুটি।পূজোর ছুটি শুরু।কলকাতায় পূজো হয় খুব জমজাট করে।
অফিস থেকে বেরিয়ে রাস্তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
রাস্তা ক্রস করবে কি করবে না।গাড়ি গুলো যাচ্ছে আসছে।এসব দেখে কাব্য ভাবছে,
আমি রাস্তা ক্রস করতে গিয়েই একটা বড় লোহা বোঝাই গাড়ি এসে আমার উপর দিয়ে যাবে।আর আমার কানে শব্দ আসবে মড়মড়ে শব্দ।যেটা আমার শরীরের হাড় আর আমার মাথার খুলি ভাংগার শব্দ।তারপর আমায় সবাই ঘিরে ধরবে।সবাই আলোচনা করবে।
ধুর কি যে ভাবছি।

আজকে কাব্যর রাস্তা ক্রস করতে ইচ্ছে করছে না।আজকের আবহাওয়া ভালো।হালকা মেঘলা,বৃষ্টি হতেও পারে আবার নাও হতে পারে।তবে হালকা ঠান্ডা হালকা গরম অনুভব হচ্ছে।
রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছে।দূর থেকে দেখা যাচ্ছে একটি বেঞ্চে পিছোন ফিরে একটি মহিলা বসে আছে।
সাদা শাড়ি পড়েছে,চুল গুলো উড়ছে।
সাদা শাড়ি মানেই চারু।কাব্য দৌড়ে গেল।

—-চারু
—-কে?
কাব্যর মুখটা নিমিষেই ছোট হয়ে গেল।প্রায় বছর খানিক পরে কাব্যর মুখে হাসি ফুটেছিলো।তাও সেকেন্ডেই উধাও।সাদা শাড়ি মানেই চারু নয়।আজকে এটা শিখলো কাব্য।
এখন আর সারদের মিষ্টি সুর আসে না।এখন আর কাচা রজনীগন্ধার ঘ্রাণ পাওয়া যায় না।ছাদে এখন একা একা চাঁদ দেখতে হয়।

কাব্য এগিয়ে যাচ্ছে পথে অনেক যুগল দেখা যাচ্ছে।আকাশ মেঘলা করলেই তাদের প্রেম বাড়ে।তাদের ভিজতে ইচ্ছে করে।
কাব্য কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে বসলো।এই গাছে সারা বছর ফুল ধরে।এটি বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়েছে।এর নিচে একটি লোহার বেঞ্চ পাতা হয়েছে।চারদিকে ফুল পরে লাল হয়ে আছে।
কাব্য বসে সবার কাহিনী দেখছে।

একটা বাদাম ওয়ালা বাদাম নিয়ে যাচ্ছে
।এ বাদাম বাদাম বাদাম মাত্র দশ টাকা
এ বাদাম বাদাম।
বাদাম ওয়ালারা একটা সুরে বাদাম বাদাম বলে।তাদের এই ছন্দ কাব্যের বেশ পছন্দ হয়েছে।

—-ভাই আপনারা এই ছন্দ কিভাবে বানালেন?
—-কি যে কন ভাই,আমরা ফেট এর দায়ে এসব কই,অভাবের তারনায় ছন্দ হইয়া যায়।

বাদাম ওয়ালা চলে গেল,কাব্যের ইচ্ছে হয়েছিলো দশ টাকার বাদাম নিবে।কিন্তু নেওয়া হলো না।
অভাবে ছন্দ বানানো যায়।
আসলে অভাবে শুধু ছন্দ না,অনেক কিছুই হয়।
কাব্যর বেশ ভালো লাগছে ঠান্ডা বাতাস,আর কিছুক্ষণ পর পর একটা দুটা ফুল মাথার উপর এসে পরছে।
ফুলেদের কাছে হয়তো মনে হচ্ছে,কাব্যের মাথা বেশ আরামদায়ক। কিন্তু মাথা কখনো আরামদায়ক হতে পারে না।

কখন যে সন্ধ্যা হয়ে গেল,খবরই নেই।
কাব্য এখন আর মদন কাকার দোকানে যায় না।কাব্য ভাবে,হয়তো মদন কাকার জন্যই আজ চারু নেই।
আচ্ছা চারু কি বেছে আছে?জ্বীনেরা কি মারা যায়।চারুকি ফিরে আসবে,একদিন আসবে।

কাব্য ঘরে চলে গেল।ঘরে ঢুকে লাইট জ্বালাতে হয়।কিন্তু কাব্যের লাইট ভালো লাগে না।তাই সে একা একা অন্ধকারে বসে চাঁদ দেখে।আর নিজের মনে চারুর সাথে কথা বলে যায়।

রিমা কিছু খাবার নিয়ে এসেছে।
—–ভাইয়া দরজা খুলো।আমি রিমা।
—–কে রিমা,চিনিনা আমি
—–ভাইয়া পাগলামি রাখো,দরজা খুলো।

কাব্য এসে দরজা খুলেছে।রিমা হয়তো কাব্যকে ছয় মাস পর দেখেছে।

—-এ কি হাল করেছো,চুল দাড়ি।যেন বন মানুষ।
—-কি চাই এখানে।
—-কিছুই না।খাবার এনেছি।
—-যাও।লাগবে না কোনো খাবার।

রিমা টেবিলে খাবার রেখে চলে গেল।
কাব্য আজ দু দিন কিছু খায় না।খিদাও পায় না।হয়তো বড় কোনো অসুখ হয়েছে।
মানুষ দেবদাশ হয়ে গেলে খিদে পায়না।কাব্যর ও হয়তো সেই অসুখ হয়েছে।

টেবিল থেকে খাবারের ঘ্রাণ আসছে।ঘ্রাণে কাব্যর পেট মোচড় দিয়ে উঠলো।
একটা প্লেটে নিলো,বিরানি বানিয়েছে।সাথে দু পিস মুরগীর মাংস ও দিয়েছে।কাব্য পুরো এক বক্স খাবার সবটা খেয়ে নিলো।হয়তো দুদিনের খিদে এক সাথে মিটিয়েছে।

কাব্য খেয়ে ছাদে যাবে ভাবছে আবার যাচ্ছে না।তার আশে পাশে অনেক কিছু ঘুর ঘুর করে
।সেটা কাব্য বুঝতে পারে।

রাত যত গভীর হয় তত তাদের আনাগোনা বাড়ে।চারুর ঘরটা অন্ধকার কূপে পরিণত হয়েছে।কাব্য তার বারান্দা থেকে দেখে আর চারুর কথা ভাবে
এই বুঝি চারু বেড়িয়ে এলো দরজা খোলে।আজ থেকে চারুর ঘরের নাম অন্ধকার চন্দ্রিমা।
চারুর ঘর অন্ধকার হলেও সেই ঘর টাই কাব্যের কাছে সব চেয়ে আলোকিতো।

মদন কাকার টিভি রোগ ধরা পরেছে।তাই সে বেশী একটা দোকান খোলা রাখতে পারেনা।গরীব মানুষের অসুখ হলে তাদের অনেক সমস্যা হয়।
মদন কাকার অসুখ তাই, কাব্য আজ মদন কাকাকে দেখতে যাবে।

খালি হাতে রোগী দেখতে যেতে নেই।একশ টাকার আংগুর কিনেছে।খুব দাম।অবশ্য এখন কাব্যের প্রমোশন হয়েছে।তাই আগে থেকে টাকা বেশী পায়।

কাকা কাকা আছো?
—-কে?
—-আমি কাব্য।
—-তুমি কেমনে আইলা।এক বছরে তো এক কাপ চা আমার দোকানে খাইলানা।
—-ওসব বাদ দাও।ধরো তোমার জন্য আংগুর এনেছি।খেয়ো।তোমার শরীর কেমন।
—-আছে আগের মতোই।
—-ঠিক আছে ঘুমাও।আমি যাই।

চারু একদিন বলেছিলো,যাই বলা ভালো না।আসি বললে ভালো।
কাকা আমি আসি।
—-আচ্ছা বাবা।

কাব্য ঘরে চলে গেল।রাত প্রায় ১২ টা হবে।এখন আর কোনো কিছুর ঠিক ঠিকানা থাকে না।

হঠাৎ কেমন একটা চেনা ঘ্রাণ ভেসে আসছে।

এটা কিসের ঘ্রাণ।আমার ঘরেতো কোনো সেন্টের বোতল আনিনি।হুট করে মাথায় আসলো,আর থমকে দাঁড়ালো….

চলবে……

(ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।কেমন হলো জানাবেন।ধন্যবাদ)