আমার শুধু তোমাকেই চাই পর্ব-১৯ এবং শেষ পর্ব

0
5411

#আমার_শুধু_তোমাকেই_চাই🍁🍁
#লেখিকা;সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব;১৯ (শেষ পর্ব)

৫৮,,,,,
আম সরি আমি আপনার বোন কে আর মেনে নিতে পারবো না ক্ষমা করবেন আমায় (মেহরাব)

কিহ??(অবাক হয়ে বললো মেঘ)

ভাইয়া তুমি মজা করছো তাই না,, মাহিকে কষ্ট দেওয়ার জন্য এমন বলছো তাই না?? আমি জানি(মেঘলা)

না মেঘলা আমি ঠিকই বলছি আমি কোনো মজা টজা করছি না(মেহরাব)

মেহরাব এর কথা শুনে মাহি ডুকরে কেঁদে উঠলো।

বাবা আমি এখনো অনেক অসুস্থ তাই এখানে আমার সামনে কাউকে কাদতে নিষেধ করো(মেহরাব)

মেহরাব এসব কি বলছিস তুই??(মহসীন)

মেহরাব প্লিজ তুমি এমন করো না দাখো আমি তো আমার ভুলের জন্য তোমার কাছে ক্ষমা চাইছিই,,, আর মাহি ছোট মানুষ কি বলতে কি বলে ফেলেছে ওর কথা তুমি ধরো না দাখো কেমন কান্না করছে প্লিজ তুমি এসব বন্ধ করো আমার বোনকে মেনে নাও প্লিজ(মেঘ)

হ্যাঁ মেহরাব মেঘ ঠিকিই বলেছে,,, আরে তোমরা একবার আমায় বলতে পারতে আমি না হয় মেঘকে বোঝাতাম,,, আর আমার সাথে মাহি এই বিয়ে হলে কেউ সুখী হতো না,,, না আমি আর তা তোমার দুজন,,,, (জয়)

আমি আপনাকে (মেঘকে উদ্দেশ্য করে) ক্ষমা করে দিয়েছি আমার কারো উপর কোনো রাগ নেই,, কিন্তু তবুও আমি আপনার বোনকে বিয়ে করতে পারবো না,,,,, বাবা তুমি আমার জন্য লন্ডন এর একটা টিকিট কেটে রাখো আমি একটু সুস্থ হলেই লন্ডন চলে যাবো(মেহরাব)

কিন্তু মেহরাব(মহসীন)

বাবা আমি যা বলার বলে দিয়েছি(মেহরাব)

মেহরাব এর কথা শুনে মাহি ওখান থেকে কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলো।

৫৯,,,,
কয়েকদিন পর,,,

এই কয়েকদিনে মাহি অনেক চেষ্টা করেছে মেহরাব এর রাগ ভাঙ্গানোর ওকে বিদেশ যাওয়া থেকে আটকানোর কিন্তু বারবার ব্যার্থ হয়েছে।
আজকে মেহরাব চলে যাবে সকাল ১০ টায় ফ্লাইট তাই ৮টার দিকেই এয়ারপোর্টের দিকে রওনা দিয়েছে।

মাহি মেহরাব চলে যাচ্ছে (মেঘ)

কি বলছো ভাইয়া ওর না কালকে যাওয়ার কথা ছিলো??(মাহি)

হ্যাঁ,, ও সবাইকে ভুল বলেছিলো আসলে ওর ফ্লাইট আজকে(মেঘ)

কি বলছো ভাইয়া কয়টাই ফ্লাইট আর ও এখন কোথায়।

ফ্লাইট তো ১০ টাই অলরেডি নয়টার বেশি বেজে গেছে আর মেহরাব ও এয়ারপোর্টের দিকে রওনা দিয়েছে (মেঘ)

না আমি ওকে এভাবে কিছুতেই যেতে দেবো না ,।। এই বলে মাহি কাদতে কাদতে দৌড়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গাড়ি করে এয়ারপোর্টের দিকে গেলো।

মেহরাব এয়ারপোর্টে এসে গাড়ি থেকে নেমে ট্রলিব্যাগটা হাতে নিয়ে এয়ারপোর্টের ভিতরে যেতে লাগল। তখনি মাহি তারাহুরো করে গাড়ি থেকে নেমে মেহরাব কে ডাকতে ডাকতে ওর পিছনে গেলো।

মেহরাব শুনুন দাড়ান একটু আগে আমার কথাটা তো শুনুন(দৌড়ে মেহরাবের কাছে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল)

কি হয়েছে বলো,,,আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে (মেহরাব)

প্লিজ আপনি যাবেন না আমি বলছিতো আমার ভুল হয়ে গেছে আর কখনো এমন করবো না। আমি বুঝে গেছি আমি আপনাকে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি, বিশ্বাস করুন আমারও একয়দিন অনেক কষ্ট হয়েছে।আমি বুঝে গেছি প্রিয় মানুষের কাছ থেকে দূরে থাকা কতটা কষ্টের তার থেকে পাওয়া অবহেলা গুলো কতটা কষ্টের (কাঁদতে কাঁদতে বলল মাহি)

এখন বুঝেছো তো সেদিন আমার কতটা কষ্ট হয়েছিলো??(মেহরাব)

হুম(কাঁদতে কাঁদতে)

ওকে এখন কান ধরো আর সরি বলো,, আর বলো যে এমনটা কখনো করবে না,,,আর আমাকে ছাড়ার কথা তো দূরে থাক কখনো মাথাতেও আনবে না।বলো(মেহরাব)

কিহ?? এখানে এতো মানুষের মধ্যো আমি কান ধরবো??(করুন কন্ঠে বলল)

ধরবা নাতো?? ওকে আমি যাচ্ছি।(মেহরাব)

রাগ করেন কেনো ধরছিতো। তারপর মাহি কাঁদো কাঁদো ফেস করে কান ধরে মেহরাবকে সরি বলে তারপর ওর বলা সব কথা বলল।

ওকে এখন আমার লাগেজটা নিয়ে গাড়ির কাছে যাও(মেহরাব)

আমি??

তো কি আমি নাকি যাও??

আচ্ছা। এই আপনি না লন্ডন যাচ্ছিলেন তাহলে??(মাহি)

তাহলে?? আরে ওসব তো সব নাটক ছিলো তোমাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য করেছিলাম(মেহরাব)

কিহ???(মাহি)

জি এখন চলো।তারপর মেহরাব আগে আগে গাড়িতে উঠে গাড়ির দরজা লাগিয়ে দিয়ে বসে থাকলো।মাহি লাগেজ নিয়ে এসে দরজা খুলতে গিয়ে দাখে যে ওটা অফ।

কি হলো খুলেন আমি ওঠবো তো(মাহি)

উঠতে দিতে পারি একটা শর্ত আছে (মেহরাব)

শর্ত?? কি শর্ত??(মাহি)

আগে ডান্স করো তারপর খুলবো(মেহরাব)

কিহ?? এখানে?? এই আপনি কি পাগল হয়ে গেছেন?? ইম্পসিবল আমি পারবো না(মাহি)

ওকে তাহলে তুমি এখানে থাকো আমি গেলাম।এই বলে মেহরাব গাড়ি স্টার্ট দিলো তখনি মাহি বলল।

ওকে ওকে আমি করছি । তারপর কোনো মতে হাত পা নাড়ালো। ওদিকে এয়ারপোর্টের সব মানুষ তো মাহির দিকে তাকিয়ে আছে,,, আমারও দিন আসবে কিন্তু।ও যখন আসবে তখন দেখা যাবে এখন আসো গাড়িতে বসো।

তারপর মাহি আর মেহরাব বাড়ি চলে গেলো আর সবকিছু ঠিকঠাক করে মাহি মেহরাব,আর মেঘ মেঘলার বিয়ে হলো,, আর শান্ত আর মুনিরার শুধু এনগেজমেন্ট করে রাখা হলো আরো কয়েক মাস পর ওদের বিয়ে হবে৷

৬০,,,,,
একি কমিউনিটি সেন্টার এ ওদের বিয়ে হচ্ছে,, মাহি আর মেঘলা সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠল দুজনই আলাদা আলাদা গাড়িতে। তারপর মেঘ ও মেহরাব সবার কাছে বলে ওরাও গাড়ির দিকে গেলো তারপর মেঘলা যে গাড়িতে সেই গাড়িতে মেঘ উঠলো। আর মাহি যে গাড়িতে সেই গাড়িতে মেহরাব উঠতে গিয়ে দাখে গাড়ির দরজা খুলছে না ভিতর থেকে বন্ধ। তাই মাহিকে ডাকলো।

একি মাহি লক করে রাখছো কেন খোলো?(মেহরাব)

খুলতে পারি একটা শর্ত আছে??(মাহি)

শর্ত?? কি শর্ত??(মেহরাব)

আগে ডান্স করুন তারপর খুলবো(মাহি)

কিহ?? তুমি পাগল হয়ে গেছো?? এখানে এতো মানুষের মধো আমি নাচবো কীভাবে??(মেহরাব)

এইতো ওইদিন ঠিক আমিও এই কথাটাই বলেছিলাম কিন্তু আপনি শুনেছিলেন না তাই আজকে আমিও শুনবো না,, তাই কথা না বলে নাচেন(মাহি)

মাহি মাই বিউটি কুইন তুমি একটু বোঝার চেষ্টা করো আজকে আমাদের বিয়ে হয়েছে আমি নতুন বর আমি কীভাবে এতো মানুষের ভিতর নাচবো সবাই কি বলবে,, তারচেয়ে আমি তোমায় বাসর ঘরে নাচ দেখাবো এখন খোলো(মেহরাব)

না না কোনো কথা হবে না আগে আপনাকে নাচতে হবে (মাহি)

কিরে কি হলো ওভাবে দাড়িয়ে আছিস কেনো উঠ রাত হয়ে যাচ্ছে তো?(মহসীন)

দেখেছেন বাবাও তাড়া দিচ্ছে তাই দেরি না করে যলদি শুরু করেন(মাহি)

মেহরাব কি করবে অগত্যা নাচাই লাগলো দাঁতে দাঁত চেপে হাত পা নাড়ালো শুধু।

একি মেহরাব এসব কি করছে??(মেঘ)

তা আমি কি জানি। দেখেছেন বিয়ে হতে না হতেই আপনার বোন আমার ভাইকে কেমন নাচাচ্ছে (মেঘলা)

তাই না?? চলো বাসর ঘরে আমিও তোমায় নাচাবো (মেঘ)

ছি মুখের কি ভাষা বদ লোক একটা (মেঘলা)

হয়েছে?? এখন তো খোলো।(মেহরাব)

হুম আসুন। তারপর ওরা দুজন দুবাড়ি চলে গেলো মেঘলা মেঘদের বাড়ি আর মাহি মেহরাব এর বাড়ি)

বাসর ঘরে
,
একি তুমি এটা কি করছো??(মাহি মেঘকে সালাম করছিলো তখনি মেঘ বলল)

কেনো আপনাকে সালাম করছি।

আরে এভাবে সালাম করতে হয় না মুখে সালাম দিলেই হয়।আচ্ছা এখন চলো।

কোথায়??

কেনো তোমাকে না বললাম নাচাবো?? এখন তোমায় সেটাই দেখাবো।মেঘলা লজ্জায় লাল হয়ে মেঘের বুকে মুখ গুজে দিলো আর মেঘ ও ওকে পরম আদরে জরিয়ে কোলে তুলে খাটের দিকে গেলো।

ওদিকে,,,
মাহি দাড়াও তোমার খবর আছে,, আজকে তুমি সবার সামনে আমায় নাচিয়েচো(মাহিকে দৌড়ানি দিয়ে)

আরে আপনিও তো ওইদিন আমায় এয়ারপোর্টে নাচিয়েছিলেন তার বেলায়?? আমি তো শুধু ওটার শোধ নিলাম। (দৌড়াতে দৌড়াতে)

তারপর দুজনি একসাথে হাঁপাতে হাঁপাতে বিছানার উপর শুয়ে পড়ল।

তুমি জানো আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি,, আমি তো ভেবেই নিয়েছিলাম যে তুমি যদি জয় স্যারকে বিয়ে করো তো আমিও নিজেকে শেষ।মেহরাবকে আর বলতে না দিয়ে।

প্লিজ ওভাবে বলবেন না,,, আমিও আপনাকে অনেক ভালোবাসি আমিও বিয়েটা করতাম ঠিকি কিন্তু আজীবন জিন্দা লাশ হয়ে বেঁচে থাকতাম,,, যে জীবনে আপনি নেই সেখানে আমার কোনো অস্তিত্বই নেই।

ভালোবাসি অনেক (মাহিকে জরিয়ে ধরে বলল)

আমিও অনেক বেশি ভালোবাসি আপনাকে মেহরাব(আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরে)

তারপর?? তারপর আর কি,, ওরা যা খুশি তাই করুক আমি কি জানি ওরা তো দরজা অফ করে আলো নিভিয়ে দিয়েছে তাই আমি কিছু দেখতে পাচ্ছিনা না এই জন্য এখানেই সমাপ্ত।।আর হ্যাঁ কাল থেকে শুরু হবে এক নতুন গল্প যেটাই থাকবে আরো বেশি রহস্য,,, পাগলামি,,,মারপিট,,,অনেক বেশি রোমাঞ্চ আর অফুরন্ত ভালোবাসা,,,,,,

,,,,,,,,,,,,,,,,,,সমাপ্ত,,,,,,,,,,,