আমি গোপনে ভালোবেসেছি পর্ব-১১+১২

0
258

#আমি_গোপনে_ভালোবেসেছি
#পর্বঃ১১
#writer : Mishmi_muntaha_moon

ফুপ্পির কথা শুনে হার্ট টা যেনো ধুপধাপ করে বেড়িয়েই যাবে এরকম ফিলিং হচ্ছে।উফফ আমার এই ফুপ্পিকেই যে কেনো দেখার হলো।উনাকে তো বোঝানো ও সম্ভব না।
কে জানে আম্মুর রিয়েক্ট কেমন হবে।

” দেখুন আপা আপনি কি দেখেছেন জানি না।কিন্তু রুদ্ধ কে আমরা চিনি। ও কেমন ছেলে আমি কি জানি না?আর আমার মেয়েকে আমি যথেষ্ট শাষন করি ও এই সব পথে যাবে না।শুধু শুধু আমার কানে আমার মেয়ের কথা লাগিয়েন না দয়া করে।”

আম্মুর কথায় অবাক হলাম। কতটা ভরসা করে আমি তো ভেবেছিলাম এখনি আমার কাছে আসবে আর আমার গালে পড়বে উনার হাতের থাপ্পড়।

” আরেহ ভাবি কি যে বলছেন এখনকার দিনে এইগুলো স্বাভাবিক ব্যাপার সবাই করে।আর আমি তো একবার দেখি নি দুই তিনবার দেখলাম তার পরেও নিজেকে ভুল কি করে বলি।আমি যা বলছি আর দেখেছি সব এক নাম্বার সত্যি।আচ্ছা এইটা না মানলেন কিন্তু ওইযে আপনাদের বাড়িওয়ালা আপা উনার বড় ছেলের জন্য যে বিয়ের সমন্ধ পাঠালো সেইটাতে রাজি হয়ে যান।বাড়ি গাড়ি সবই তো আছে আবার আপনার মেয়েকে পড়ালেখাও করতে দিবে।”

ফুপ্পির কথায় আম্মু কিছুক্ষনের জন্য চুপ হয়ে গেলো তারপর মৃদু কন্ঠে বলল

” আমি ভাববো এই ব্যাপারটা আর আপনি আমাকে যা বললেন আপনার ভাইকে বলবেন না দয়া করে”

বলেই আম্মু তরু আপুর রুমের দিকেই বাড়তে লাগলো।আমিও দাঁড়িয়ে না থেকে তারাতারি রুমের ভিতরে ঢুকে বিছানায় বসে পড়লাম।

সাথে সাথেই আম্মু এসে রুমে ঢুকে সোজা আমার কাছে এসে দাড়ালো।
রেডি হও আমরা রাতেই বেড়িয়ে পড়বো।তাছাড়া সবাই চলে গেছে আমরা থেকে কি করবো।
আম্মুর কথায় মাথা নাড়িয়ে সায় দিলাম।আম্মু সব কিছু ব্যাগে ভরে নিতে বলে বেরিতে গেলো।আমিও উঠে বারান্দায় শুকাতে দেওয়া কাপড় নিয়ে ব্যাগে ভরলাম।আরও টুকটাক যা আছে সব প্যাকিং করলাম।তারপর নিজেও রেডি হয়ে নিলাম।
তিশা এতোক্ষণ ছাদে ছিলো এখন এসে নিজেও ব্যাগ গুছাতে লাগলো।ওরাও চলে যাবে রাতেই।

” কিগো আপু বাহিরে কি হলো শুনেছো?”

ওর কথায় ওর দিকে তাকালাম।ব্যাগে ওর ড্রেস ঢুকাচ্ছে মুখে তেমন কোনো রিয়েকশন নেই।

” হ্যা শুনেছি”

” আচ্ছা আপু সত্যি করে বলবে প্লিজ।রুদ্ধ ভাইয়ার সাথে তোমার রিলেশনশিপ চলছে তাই না?আমার কেমন যেনো সন্দেহ আগে থেকেই হচ্ছিলো।এখন তুমি বলো সত্যিটা।”

মুহূর্তে ওর মুখের রঙ পালটে যাওয়ার ব্যাপারটা বুঝতে পারলাম না।আমি ওড়না মাথায় দিতে দিতে বললাম

” দেখ তিশা তোর সাথে আমি সব শেয়ার করি তুইও আমার সাথে শেয়ার করিস। তুই আমার থেকে ছোট তবুও তোকে আমি ফ্রেন্ড এর মতো ট্রিট করেছি।আর রুদ্ধ সাহেবের ব্যাপারটা অন্যরকম। উনার সাথে আমার রিলেশন নেই।কিন্তু উনাকে আমার ভালো লাগে। কিন্তু এইটা এখন সিক্রেট ব্যাপার কাউকে বলবি না প্লিজ”

আমার কথাটা তিশার তেমন পছন্দ হয় নি মনে হলো আমার।কিন্তু ও কোনো রিয়েকশন দেখালো না।আবার নিজের কাজ করতে করতে বলল

“ওহ আচ্ছা।এইটা আমার মধ্যেই থাকবে ডোন্ট ওয়ারি”

ওর কথার বিপরীতে মুচকি হেসে বললাম

” তুই রেডি থাকলে আমার সাথে বেরুতে পারিস”

” নাহ আপু আমার আরও কিছু কাজ আছে আর আমি রেডিও না ড্রেস টা চেঞ্জ করবো তুমি চলে যাও”

” আচ্ছা তাহলে ভালো থাকিস।কলে কথা হবে।আল্লাহ হাফেজ”

“আল্লাহ হাফেজ”

আমি ব্যাগ হাতে নিয়ে বেড়িয়ে গেলাম।বেড়িয়ে দেখলাম আম্মুও বোরখা পরে রেডি।আমি বের হতে সবাই কে বিদায় জানিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম।

~~~~~~~~~~~~~

বাড়িতে ফিরতেই স্বস্তি পেলাম।রুমে এসে ড্রেস পালটে ঘড়ির দিকে তাকাতেই অবাক হয়ে বিরবির করলাম

” ১১ টা বেজে গেছে”

বিছানা থেকে উঠে মোবাইল নিয়ে বারান্দায় গেলাম।উনার নাম্বার আমার কাছে ঠিকই আছে কিন্তু কখনো কল দেওয়া হয় নি যতবার দিয়েছে উনি নিজেই দিয়েছে।
ফুপ্পিদের বাড়ির ঘটনা উনাকে বলবো কিনা ভাবলাম এক মুহূর্ত পরমুহূর্তেই ভাবলাম নাহ বলতে হবে না।আমি সামলে যদি নিতে পারি!

হঠাৎ উনার চিরকুট টির কথা মনে পরতেই দৌড়ে বিছানা থেকে ব্যাগ নিয়ে চিরকুট টা খুজতে লাগলাম।কিন্তু কোথাও না পেয়ে ভ্রু কুচকে আবারও এক দফা খুজতে লাগলাম কিন্তু নাহ পেলাম না।
এখন তো দুঃখে চোখ ভাসাতে ইচ্ছে করছে।ইশ উনি তো মুখে কোনোই ভালোবাসার কথা বলেন না।এই চিরকুটেই তো উনি মনের ভাব প্রকাশ করেন এইটাই যদি হাড়িয়ে যায় তাহলে তো আর জানলামই না কিছু।
কে জানে কি লিখেছিলেন! আই লাভ ইউ ও তো হতে পারে।নাহ উনি এতো সহজেই আই লাভ ইউ বলে দেবে মনে হয় না অনেক প্যাচানো মানুষ সব সময় ঘুড়িয়ে পেচিয়েই বোঝায়।

এইসব ভেবে মনটা আরও খারাপ হয়ে গেলো।ধীর পায়ে হেটে বারান্দায় যেতে নেবো তখনই সামনে পড়ে থাকা একটা কাগজ চোখ যেতেই খুশিতে তারাতারি চিরকুট টা তুললাম।উপরে মুখ করে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম।আর কিছু না ভেবে বারান্দায় গিয়ে চিরকুট টা খুলতে উনার হাতের লেখা দেখতে পেলাম।

উনার হাতের লেখা দেখলেই মুগ্ধ হয়ে যাই।কত সুন্দর উনার হাতের লেখা!উনার কাছে পড়ার সময় উনার হাতের লেখা দেখলে মনে মনে ভাবতাম আমারও হাতের লেখা যদি উনার মত হতো তাহলে স্যাররা হাফ নাম্বার তো এই লেখার জন্যই দিয়ে দিতো।
এদিক সেদিক না ভেবে পড়তে লাগলাম।

❝শুনেছি যার ভালোবাসা যত গোপন তার ভালোবাসা ততই গভীর হয়।তারপর ভাবলাম কিন্তু সেই মানুষ টাকে নিজের করে পেতে হলে কনফেশন টাও তো প্রয়োজন। তা যাই হোক প্রকাশ্য প্রেম থেকে অপ্রকাশ্য প্রেম টা বেশি মজার বুঝলে মিস ফিয়ানা কারন সেখানে যে যার অনুভূতি অনুভব করেই বুঝে যায়।যাই হোক একটা গানের লাইন মনে ঘুরঘুর করছে একদমই মনের কিছু কথার সাথে মিল পেলাম। বলবো কি মিস ফিয়ানা,,,

“তুমি যে শুধু আমারিই থেকো
ও প্রিয়”❞

আবারও আগের চিরকুট এর মতো গানের একটা লাইন দেখে ভ্রু কুচকে হেসে ফেললাম।
হুম উনার কনফেশন করার ধরন টাও কত ভিন্ন।সহজ কথায় বলবে না মিস্টার রুদ্ধ সাহেব।
কিন্তু চিরকুট টা যে অনেক ভালো লাগলো মন ছুয়ে যাবার মতো।

এই চিরকুট টা আগের চিরকুট এর সাথে সেই ডায়েরি ভাজে রেখে দিলাম। ডায়েরিটার একটা নাম দেয়া উচিত। কি দেই হুম আমার উনি মিস্টার রুদ্ধ সাহেব।

এই সেই করতে করতে রাত ১২ঃ৪৫ বেজে গেলো।লাইট নিভিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।

~~~~~~~~~~~~~~

গোসল করে কালো একটা থ্রি-পিস পড়লাম।বেশি একটা থ্রি-পস নেই আমার কারণ থ্রি-পিসের থেকে বেশি গাউন পড়া হয় আমার।
ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে বসে আস্তে ধীরে চুল আচড়াচ্ছিলাম।তখনই আম্মু তাড়া দিয়ে ডাক দিতেই গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম কেনো ডেকেছে

” কাপড় গুলো ছাদে রোদ দিয়ে আসো যাও”

আম্মুর কথায় বিরক্ত লাগার পড়েও ছোট বালতিটা হাতে নিয়ে গেলাম ছাদে।
কাপড় গুলো শুকাতে দিয়ে কর্নারে চোখ যেতেই চোখ কুচকে তাকাই।
নেহাল ভাইয়ের বড় ভাই অর্থাৎ নিশাদ ভাই উলটো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আমি শুধু উনার পিঠ টাই দেখতে পাচ্ছি আর উড়ন্ত ধোয়া।
বুঝতে পাড়লাম উনি সিগারেট খাচ্ছে।আর সেটার সাক্ষী হলাম আমি, অসীম আকাশ আর এই মিষ্টি বাতাস যা উনি দূষিত করেই যাচ্ছে।

সিগারেট এর ধোয়া মৃদু নাকে আসতেই নাক ছিটকালাম।কেউ সিগারেট খেলে আমার একদম ভালো লাগে ইচ্ছে হয় সামনে গিয়ে ভাষন শুনিয়ে আসি সিগারেটের ক্ষতিকর প্রভাবের বিষয়ে। অবশ্য যারা খায় তারা তো জানে তবুও খায় তাহলে আমরা আর কি বলতে পারি।

আমি হেটে ছাদের গেটের সামনে যেতেই পিছন থেকে গম্ভীর, ভারী কন্ঠ ভেসে আসে

” এই মেয়ে তুমিই ফিয়ানা তাই না!”

চলবে,,,,

#আমি_গোপনে_ভালোবেসেছি
#পর্বঃ১২
#Writer: Mishmi_muntaha_moon

উনার কথায় পিছে ফিরে তাকাতেই দেখলাম উনি সিগারেটের ছোট টুকরা টা নিচে ফেলে পা দিয়ে পিষে ফেলে এক কদম আমার দিকে বাড়ালেন। আমি কিছুটা ইতস্তত করে ডানে বামে তাকালাম।উনি পকেট থেকে একটা সেন্টার ফ্রেশ বের করে মুখে দিলেন।তারপর খেতে খেতে বললেন

” দেখতে তো খুবই ছোট লাগছে তোমাকে। এইজ কতো হবে তোমার বলতো।”

উনার কথার উত্তর না দিয়েই চলে যেতে ইচ্ছে করছে কিন্তু তাহলে তো বেয়াদবি মনে হবে আর আম্মু যদি জানে তাহলে তো শেষ আমি।
আমি চোখ দড়ির শুকাতে দেওয়া কাপড়ের দিকেই রেখে বললাম

” মেয়েদের এইজ বলতে নেই।”

সামনে থেকে অস্বাভাবিক হাসির আওয়াজে চোখ তুলে তাকালাম।উনি একদম হাসতে হাসতে যেনো এখনই বিদায় নিবে পৃথিবীর বুক থেকে।দাত শক্ত করে কঠোর দৃষ্টিতে তাকাতেই উনি চুল ঠিক করে হাসতে হাসতে বলল

” সরি!আমি আমার হাসি থামাতে পারছিলাম না।আচ্ছা আমাকে চিনেন তো?”

উনার কথা এক ভ্রু উচিয়ে অন্য দিক চোখ ফিরিয়ে বললাম

” অবশ্যই চিনবো না কেনো।যাদের বাড়িতে থাকি তাদের না চিনে উপায় আছে”

আমার কথা শুনে আবারও ঠোঁট চেপে হাসলো উনি।আমারও একদমই ভালো লাগছে না কিন্তু কিভাবে যাওয়া যায় কিছু বাহানা দিতে হবে নাহলে এই বজ্জাত ছেলে সামনে দাড় করিয়েই রাখবে।

” ওহ আচ্ছা আমি তাহলে আসি আম্মুর একটা কাজ করতে হবে দেরি হলে আমাকে কবর দিবে বুঝলেন।আসি তাহলে”

বলেই আমি দ্রুত পায়ে সিড়ির দিকে যেতেই উনি গলা উচিয়ে বললেন

” বায় ফর নাও”

শুনলাম কিন্তু ফিরে তাকালাম না নিচে নেমে পড়লাম।

~~~~~~

সন্ধ্যা বেলায় আসলো জিয়ার কল। অনেকদিন পর ওর নাম্বার দেখে অবাক হয়ে তুললাম তারপর বললাম

” এতোদিন পর আমার নাম্বার ডায়াল করার কারণ?ভুলে কল দিলি নাকি”

” ধুর কি যে বলিস না।ভুলে দিবো কেনো।আমিতো বেরাতে গিয়েছিলাম তাই তোর খবর নেয়া হয় নি।তুইও তো আমাকে কল করিস নি”

” আচ্ছা সেই সব কথা বাদ দে।কল করার কোনো বিশেষ কারণ? ”

” অবশ্যই। আমার বার্থডে কাল ভুলে গিয়েছিস নিশ্চয়। আচ্ছা যাক কাল ছোট একটা অনুষ্ঠান করবো তুই আসবি প্লিজ হ্যা সকাল সকাল এসে পরবি”

ওর কথা শুনে মনে করার চেষ্টা করলাম ওর বার্থডে ডেট আমি জানতাম কিনা কিন্তু নাহ মনে হলো কখনো জিজ্ঞাসা করি নি ওর বার্থডের ব্যাপারে।ও আবারও আসার কথা বলতে আমি বললাম

” আচ্ছা আম্মু যদি পারমিশন দেয় তাহলে আসবো”

” নাহ আন্টি যদি না ও বলে তুই আমাকে কল দিবি আমি আন্টিকে বলবো না হলে এখুনি দে আমি আন্টিকে বলি”

” নাহ বোন থাক আমিই আম্মুকে বলবো আর ডোন্ট ওয়ারি আসবো ”

” আচ্ছা তাহলে বায় কাল দেখা হচ্ছে”

“বায়”

কল কেটে দিতেই বিছানায় বসলাম।অলরেডি এখন রাত আম্মুকে এখুনি বলতে হবে নাহলে যেতে দিবেনা।
বিছানা থেকে উঠে আম্মুকে খুজতে লাগলাম।কিন্তু কোনো রুমেই পেলাম মা।না পেয়ে রুমে আসতে নিতেই দেখলাম আম্মু বাহির থেকে এলো।এসে সোজা রান্নাঘরে চলে গেলো।আমিও আম্মুর পিছু পিছু রান্নাঘরে গিয়ে দাড়ালাম।
আমাকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আম্মু বলল

” ভনিতা না করে কিছু বলার থাকলে বলো শীগ্রই ”

আমি হাসির রেখা টেনে বললাম

” আম্মু কাল না জিয়ার বার্থডে তো ওরা ছোট একটা অনুষ্ঠান করবে।”

আমার কথা শুনে আম্মু চুলা নিভিয়ে আমার দিকে ফিরে তাকালো।

” তো?তোমাকে যেতে বলেছে?”

আম্মুর কথা শুনে তারাতারি মাথা উপর নিচ দোলালাম সাথে মুখে বললাম

” হ্যা।যদি তুমি যেতে দিতে তাহলে যেতাম”

” না যেতে দিলে যাবে না?”

আম্মুর কথা শুনে দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। মুখটা গোমড়া করে বললাম

” জিয়া বলল আমি না গেলে নাকি ও কেক কাটবে না।”

” আহা অনেক ভালোবাসা দেখছি”

আম্মুর কথায় মাথা চুলকে চোখ নিচু করলাম।

” আচ্ছা যেও কিন্তু সন্ধ্যা হলেই বাড়ি ফিরতে হবে আমি নিশাদ কে বলবো তোমাকে নিয়ে আসতে”

আম্মু প্রথম কথায় অনেক খুশি হয়ে ছিলাম কিন্তু পরের কথাটা শুনে মুডটাই নষ্ট হয়ে গেলো।এখন থেকেই উনি নিশাদ নিশাদ করছে কি সাংঘাতিক ব্যাপার ।আমি আর কি বলবো বেশি নাখড়া দেখালে যাওয়াই হবে না তাই কিছু না বলে রুমে গেলাম।

তখনই আবারও ফোন বাজলো।ভেবেছিলাম জিয়া কল করেছে কিন্তু নাহ রুদ্ধ সাহেব কল করেছে। রিসিভ করে রিনরিন কন্ঠে বললাম

” আসসালামু আলাইকুম ”

সালামের উত্তর নিতেই আমি বললাম

” কাল আপনি কোথায় উধাও হয়ে গিয়েছিলেন বলুন তো?”

” একটা ইম্পর্ট্যান্ট কাজ এসে পরেছিলো তাই তারাতারি বেড়িয়ে পরেছিলাম।তুমি বলো কাল ফ্রি আছো।”

কথাটা শুনতেই আফসোস লাগলো নিশ্চয় উনি আমার সাথে দেখা করতেন।কিন্তু কাল তো ফ্রি না।

” আসলে কাল জিয়ার বার্থডে তো। জিয়া বললো বার্থডে তে ওর সাথেই থাকতে”

“ওহ আচ্ছা। আমার পক্ষ থেকে উইশ করে দিও তাহলে।”

” হুম আচ্ছা।”

~~~~~~~~

রেডি হয়ে দাঁড়িয়ে আছি কিছুক্ষন হলো।সাদা গাউন পরিহিতা রমনী রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে আছে দেখতে বড়ই অদ্ভুত লাগছে হয়তো সবার কাছে।ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে কিন্তু এই সামান্য বৃষ্টি মানুষদের ভেজাতে বড়ই অক্ষম। তবুও ঘোমটা দিয়ে ঢেকে নিলাম মাথা সহ শরীর টা।

হঠাৎ মেইন গেট থেকে আম্মুকে বেরিয়ে আসতে দেখে অবাক হয়ে তাকালাম।আম্মু বেরিয়ে আমার কাছে এসেই দাড়ালো।

” তুমি এলে কেনো।”

” কেনো তোমার সমস্যা হচ্ছে আমি আসায়?”

আম্মুর কথায় আমতা করে বললাম

” নাহ!কিন্তু বৃষ্টি পড়ছে তো তাই বললাম

তখনই মেইন গেট থেকে আবারও নিশাদ ভাই বেড়িয়ে এলো।উনাকে দেখে যতটা অবাক হলাম আমাদের দিকে আসতে দেখে তার থেকে বেশি অবাক হলাম।
আম্মু উনাকে দেখে হাসিমুখ ফিরিয়ে দিলো আর গোমড়া মুখ।
কিন্তু উনি পাত্তা না দিয়ে আম্মুর পাশে এসে দারাতে আম্মু বলল

” যাক ভালো হলো বাবা তুমি এসেছো।এই বৃষ্টির মধ্যে কোনো গাড়িও পাওয়া যাচ্ছে না দেখেছো কি জ্বালা।”

” চিন্তা করবেন না আন্টি আমি আছিতো”

এতোদিন ভাবতাম উনার ছোট ভাই নেহাল হয়তো আমার সাথে ফ্লার্ট করার চেষ্টা করতো এখন দেখছি উনার বড় ভাই উড়ে এসে জুরেছে।উফ কি এক জ্বালাময় জীবন!

” আপনি এই বৃষ্টি তে দাঁড়িয়ে থাকবেন না প্লিজ। আমি ওকে সাবধানে পৌছে দিয়ে আসবো।”

উনার কথায় আম্মু ঠিকই রাজি হয়ে চলে গেলো।আম্মু যেতেই আমি উনাকে কাঠ কাঠ কন্ঠে বললাম

” দেখুন আমি চলে যেতে পারবো একা আপনার কষ্ট করার প্রয়োজন নেই”

উনি যেনো আমার কথাকে পাত্তাই দিলো না।মনে হলো আমি জেনো রাস্তার একটা খাম্বা। বিরক্ত হয়ে কিছু বলতে নিবো তার আগে উনি রিকশা থামিয়ে উঠে বসে বলল

” রিকশায় উঠে পরো”

আমি কিছুক্ষন চিন্তা ভাবনা করে বললাম

“নাহ আমি রিকশা দিয়ে যাবো না।অটো দিয়ে যাবো।”

আমার কথায় উনি আবারও পাত্তাহীন বসে থাকলো।তারপর জোর গলায় বলল

” উঠে বস নাহলে এমনভাবে আন্টির কাছে কমপ্লেইন করবো যে তোমার যাওয়া কেনসাল হয়ে যাবে”

উনার কথা শুনে অবাকের চোটে মুখ হা হয়ে গেলো।আমাকে থ্রেট দেয় সাহস কতো বড় ! রাগে ঠোট কামড়ে ধরলাম।কিন্তু কোনো উপায় না থাকায় রিকশায় উঠে গুটিশুটি হয়ে কিছুটা জায়গা নিয়ে চেপে বসলাম।যেনো টাচ না লাগে।

চলবে,,,,
{ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই ❤️❤️❤️}