আমি গোপনে ভালোবেসেছি পর্ব-১০

0
262

#আমি_গোপনে_ভালোবেসেছি
#পর্বঃ১০
#writer: Mishmi Muntaha Moon

রেডি হওয়ার জন্য তাড়া দিতেই তারাতারি রুমে গিয়ে দেখলাম মেয়েদের জন্য আলাদা শাড়ি কেনা হয়েছে।লাল পাড়ের হলুদ শাড়ি।
তিশা শাড়ি পড়তে পারে না।তাই আমি নিজে শাড়ি পরে ওকেও পরিয়ে দিলাম।তারপর তিশা নিজে সাজতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।আমিও সাজলাম। হাতে চুরি কানে দুল পড়ে চুল গুলো খোপা করে হাতে উনার বেধে দেওয়া মালা টা চুলে পেচিয়ে নিলাম।

” কিগো আপু এই মালাটা কোথায় পেলে কত সুন্দর। ”

ওর কথায় মুচকি হেসে বললাম

” পেয়েছি কেউ একজন দিয়েছে”

আমার কথায় তিশা ভ্রু কুচকে সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো আমার দিকে।সেই চাহনি কে পাত্তা না দিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।বেরানোর আগে ঘার পিছে কাত করে তিশার উদ্দেশ্যে বললাম

” তুই আসবি আমার সাথে নাকি আমি একাই যাবো?”

” নাহ দাড়াও আসছি”

তিশা কানে দুল পরতে পরতে আমার সাথে হাটতে লাগলো।

রুম থেকে বের হতেই মেয়েদের সজ্জিত রূপ দেখতে পেলাম।সবাইকেই খুব সুন্দর লাগছে।
ছেলেরা সব হলুদ রঙের পাঞ্জাবী পরেছে।
কিছুক্ষণ যেতেই তরু আপুকে পার্লারের থেকে আনা হলো।তুষার ভাই জুবায়ের ভাই আরও ছেলেরা মিলে চিল্লাফাল্লা করতে লাগলো।কিন্তু এতো ভীড়ভাট্টার মধ্যেও উনাকে কোথাও দেখতে পেলাম না।
তিশা তরু আপুকে দেখে দৌড়ে আপুর কাছে গিয়ে ভাইয়াদের সাথে নাচানাচি করতে লাগলো।কিছুক্ষনের মধ্যেই হলুদ দেওয়া শুরু করবে।
হঠাৎ পিঠে সুরসুরি লাগতেই পিছে ঘুরে তাকাতে নিবো তখনই উনার কন্ঠ ভেসে আসে।

” তুমিতো দেখছি আগে থেকেই খোপা সজ্জিত করে নিয়েছো।”

উনাকে উপর থেকে নিচ দেখতে লাগলাম।হলুদ পাঞ্জাবী পরিহিত চুল গুলো জেল দিয়ে সেটিং করেছে আজ।হাতে কালো রঙের ঘড়ি সাথে একগুচ্ছ গোলাপ।

” আপনার দেওয়া মালাটাই তো বাধলাম”

উনি বিপরীতে আমার চুল থেকে মালাটা খুলে আবার হাতে পরিয়ে দিয়ে বলল

” হাতেরটা হাতেই থাক চুল নাহয় আমি সাজিয়ে দেই”

বলেই হাতের গোলাপ গুলো একে একে চুলের খোপার চারপাশে গুজে দিতে লাগলো।সবাই তরু আপুর কাজে ব্যস্ত।গোলাপ গুলো চুলে বেধে দেওয়া হলে আমার পাশে এসে দাঁড়ায় আমিও উনার দিকে হাসিমাখা দৃষ্টিতে তাকিয়ে সামনে নজর ফিরাতেই দেখি ফুপ্পি আমাদের দিকে তীক্ষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
সাথে সাথেই ভয় পেয়ে যাই আমি।উনার দিকে তেকাতেই দেখি উনি ঠোট নাড়িয়ে আশ্বস্ত দিয়ে বলল

” ডোন্ট ওয়ারি আম হেয়ার”

বলেই উনি অন্যপাশে চলে গেলেন।হলুদ দেওয়া শেষ হলো তরু আপুর তারপর শুরু হলো নাচের পালা।তরু আপুতো খুশি খুব।সবাই নাচছে তরু আপু কিছুক্ষন বসেই হাত নাড়িয়ে নাচছিলো কিন্তু কেউ উনাকে নিয়ে যাচ্ছে না নাচতে দেখে উনি নিজেই উঠে গিয়ে সবার সাথে নাচতে লাগলো।
এই বিষয়টা দেখে আমার খুব হাসি পেলো।আমাকে একা দাড়িয়ে থাকতে দেখে তিশা আমাকে টেনে নিয়ে গেলো।আমি একদমই নাচতে পারি না তাই বলে কোনো বিয়েতেও নাচিনা।
তিশা জোড় করায় হাত নাড়িয়ে একটু নাচলাম।
হঠাৎ চোখ দরজার পাশে যেতেই দেখি রুদ্ধ সাহেব দরজায় ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে হাতে তার কোকাকোলার ক্যান।
আমাকে দেখে ঠোঁট কামড়ে হাসলো।যা দেখে খুবই লজ্জা পেলাম। নিশ্চয় আমার এই আবাল মার্কা নাচ দেখে হাসছে। খুবই লজ্জাজনক ব্যাপার।

এভাবেই নাচতে পারিনা। যাও তিশার টানাটানি তে একটু নাচতে গেলাম এই প্রথম তাও উনি দেখে হাসছেন।
আর নাচলাম না ওদের ভীড়ের মাঝে দাঁড়িয়ে একেকজনের নাচ দেখতে লাগলাম।
তিশা তো রীতিমতো লাফাচ্ছে।তরু আপুও খুব নাচছে।আর ভাইয়ারা তো পারে না বিল্ডিং ভেঙে ফেলে লাফিয়ে।গান বাজছে একেবারে হাই বোলিউমে।
আমিও আড়চোখে উনাকে দেখছি। উনি দাড়িয়ে ক্যান এ চুমুক দিচ্ছিলেন আর একেকজনের লাফালাফি দেখছিলেন মাঝে মাঝে আমার দিকেও একনজর তাকচ্ছিলেন।
তার মাঝেই কেউ কল করলে ভ্রু কুচকে কিছুক্ষন মোবাইলে তাকিয়ে থেকে দরজা দিয়ে বাহিরে বেড়িয়ে যায়।

হলুদের ঝামেলা শেষ হতেই একে সবাই ঘুমানোর ব্যবস্থা করতে লাগলো।আম্মু তরু আপুর রুমে দাঁড়িয়ে সকলের ঘুমের ব্যবস্থা করে দিচ্ছিলো তার মাঝেই ছোট ফুপ্পি এসে আম্মুকে জরুরি কথার তাগিদে নিয়ে গেলো।
আম্মু আমাকে ঘুমানোর জায়গা দেখিয়ে দিয়ে ফুপ্পির সাথে চলে গেলো।

হঠাৎ ফুপ্পির সেই চাহনির কথা মনে আসতেই ভয় লাগতে শুরু করলো।কি বলবে আবার রুদ্ধ সাহেবকে নিয়ে কিছু বলবে নাতো!

~~~~~~~~~

সকাল থেকেই জাকজমকপূর্ন পরিবেশ সৃষ্টি। সবাই যে যার মত রেডি হওয়ায় ব্যস্ত।
তিন রুমের ফ্ল্যাটে সাধারণত দুইটা বাথরুম থাকে।সেই ভোরবেলা থেকে বুকিং বাথরুম দুইটা।তিশাও ফাক ফোকরে বাথরুমে ঢুকে গোসল সেরে ফেলেছে।আমিই বলদ ঢুকতে পারলাম না।
আম্মুর ও মুড টা ভালো ঠেকছে না সকাল থেকেই।কেমন গম্ভীর মুখ করে কাজ করছে।
তিশা এসে খবর দিলো বাথরুম খালি হয়েছে সাথে সাথেই জামা কাপড় নিয়ে দিলাম এক দৌড়।

_

হাল্কা গোলাপি রঙের গাউন পরেছি আজ।খুবই সুন্দর গাউনটা।
সাথে হাল্কা সাজ চুল গুলো ছাড়াই রেখেছি।
তরু আপু সেই সকালে পার্লারে গেছে। এখন হয়তো এসে পড়বে।

তিশা আর আমি সেজে এদিক সেদিক হাটছি।ফোনে মেসেজ রিং বাজলো কিন্তু চেক করলাম। সারাদিনে কতশত মেসেজ আসে অফিস থেকে সব তো তাৎক্ষনাক চেক করা প্রয়োজন না।

” আপু তুমি চুরি পড়লে না?”

তিশার কথায় চুরির কথা মনে পড়লো।

” ওহ হ্যা আমিতো ভুলেই গিয়েছিলাম!তুই থাক এখানেই আমি পড়ে আসছি”

তিশাকে রেখেই রুমে পা দিলাম।ড্রেসিং টেবিল থেকে চুরি গুলো তুলে হাতে পড়ে নিলাম।চুরি পরে হাতটা ভালো করে দেখলাম খুব সুন্দর লাগছে তার ওপর মেহেদি দেওয়া হাত তো!
চোখ তুলে আয়নায় তাকাতেই অবাক হলাম।
কালো পাঞ্জাবী তে উনি দাঁড়িয়ে আছে কোমল নজরে অপলকভাবে তাকিয়ে আছে।হাল্কা হাসি তার ঠোঁটে।

আমি আয়না থেকে নজর সড়িয়ে উনার দিকে ফিরে দাড়ালাম।
কি বলবো কিছু খুজে পেলাম না।উনিই হাত থেকে একটা হাল্কা গোলাপি রঙের গোলাপ বের করলো তারপর ড্রেসিং টেবিল থেকে ক্লিপ নিয়ে বললেন।

” লাগিয়ে দেবো?”

” আমি মুচকি হেসে ডান দিকে একটু ঘুরে দাড়াতেই উনি আলতো হাতে কানের পাশে ক্লিপ দিয়ে ফুল টা লাগিয়ে দিলো।তারপর দুই কাধে দুই হাত রেখে আয়নার দিকে ফিরিয়ে বলল

” পুরো আস্ত গোলাপ লাগছে”

উনার কথায় কিছু বললাম না নিজেকে দেখতে লাগলাম।হঠাৎ কিছুটা আনমনা হয়ে হেসে বিরবির করলাম

” আপনাকে আমি ফুলের মতো ভালোবাসবো মিস্টার ”

আমার কথা উনি শুনলেন কি জানি না কিন্তু বিপরীতে চমৎকার একটা হাসি দিলেন।
আমি আমার পায়ের দিকে তাকিয়ে ছিলাম।কিছুক্ষন যেতেও কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে চোখ তুলে তাকাতেই দেখি উনি উধাও। এদিক সেদিক খুজেও কোথাও পেলাম না।
মন খারাপ করে চলে যেতে নিতেই ড্রেসিং টেবিলে চোখ যায় একটা চিরকুট রাখা।চিরকুট টা খুলতে নিবো তখনই তিশার আগমন।

” আমিতো ভেবেছিলাম তুমি ঘুমিয়ে পড়েছো চুরি পরতে এসে এতোক্ষন লাগে নাকি?”

” আরেহ না একটা কাজ করছিলাম।

বলতেই তিশা হাত ধরে বাহিরে টেনে নয়ে গেলো।আর পড়া হলো না তার চিরকুট।রেখে দিলাম ব্যাগের ভিতরে।

~~~~~~~~~

বিয়ের ঝামেলা সুন্দর ভাবে সম্পন্ন হলো।সব মেহোমান ও আজকেই একে একে করে চলে গেলো।থাকলো শুধু চাচারা আর আমরা।তরু আপুকেও বিদায় দেওয়া শেষ।
উমাকে যে দেখলাম রুমে তারপর আর দেখলাম না
কিন্তু বিয়ে শেষ হতে না হতেই শুরু হলো আরেক ঘটনা। মনে হলো বিয়েটা শেষ হওয়ার অপেক্ষাই ছিলো।

আমি তখন মুখ ধুয়ে ড্রেস পালটে মাত্র তরু আপুর রুম থেকে বের হচ্ছিলাম তিশা তখন ওর এক ফ্রেন্ড এর সাথে কলে কথা বলছিলো।
বের হতে নিবো ফুপ্পির কথায় পা থামালাম।

” আমার কথা আপনার বিশ্বাস হচ্ছে না ভাবি।আমি নিজ চোখে দেখেছি ভাইয়ের বন্ধুর ছেলে নাম কি যেনো হ্যা রুদ্ধ ওকে আপনার মেয়েকে একান্তে দেখা করতে তাও আবার রাতের আধারে।এখনই দেখুন বিষয় টা নাহলে তিল থেকে তাল হতে সময় লাগে না।”

চলবে,,,,
(ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই ❤️❤️)