আমি গোপনে ভালোবেসেছি পর্ব-০৩

0
326

#আমি_গোপনে_ভালোবেসেছি
#পর্বঃ৩
#writer: Mishmi Muntaha Moon

ঘর থেকে বেরোতে প্রায় ৪ টা ২০ বেজে গেলো।আর লাইব্রেরিতে পৌছালাম প্রায় ৪টা ৩৫ এ।
মাথার ঘুমটা টা আরেকবার টেনে ঠিক করে নিলাম। জিয়া বলল ও একটু পর আসবে তাই আর দেরি না করে একলাই চলে এলাম।
লাইব্রেরি তে প্রবেশ করে পুরো রুমে চোখ বুলাতেই কর্নারের একটা বেঞ্চে এক পায়ের উপর আরেকপা তুলে পিছে হেলাম দিয়ে আরামসে বসে থাকা ব্যাক্তি রুদ্ধ সাহেবকে নজরে পরলো।
আমি ধীর পায়ে গিয়ে উনার সামনের বেঞ্চে বসে ব্যাগ টেবিলে রাখতেই উনি হাতে থাকা মোটা বইটার থেকে চোখ সরিয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি আমার দিকে নিবদ্ধ করে গম্ভীর কন্ঠে বলল

” টাইমিং ইস দা ফার্স্ট প্রায়োরিটি মিস ফিয়ানা।”

উনার কথা শুনে চোখ ঘুরালাম।এই টাইমের লেকচার আমার একদমই ভালো লাগে না। আর একটু লেট হলে সমস্যাটা কোথায় জরুরি কাজ পড়ে যেতেই পারে যার জন্য টাইমের হেরফের হওয়া বড় কথা।ইটস নরমাল।
কিন্তু মুখ খুলে কিছুই বললাম না।
আমাকে চুপ থাকতে দেখে উনি কিছুক্ষন চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে থেকে বললেন।

” সো যেই সাবজেক্ট আপনার কাছে বেশি কঠিন মনে হয় সেইটা থেকেই শুরু করবো। ফাস্ট।”

উনার কথা শুনে ভাবতে লাগলাম কোন সাবজেক্ট আমার কাছে বেশি কঠিন লাগে ভাবতেই মাথায় ম্যাথ বই ভেসে উঠলো।
ম্যাথ সাবজেক্ট এর বই বের করে সামনে রাখতেই উনি ব্রু কুচকালেন।অবাক কন্ঠে বললেন

” ম্যাথ! সিরিয়াসলি এইটা তো খুব সহজ একটা সাবজেক্ট। আচ্ছা আপনার প্রব্লেম গুলো দেখান আর কোন পর্যন্ত শেষ করেছে তাও দেখান।”

উনার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনলাম।ম্যাথ কে সহজ বলল শুনে নাক সিটকালাম।যাদের মাথাটা প্যাচগোচ উনাদেরই একমাত্র ম্যাথ সাবজেক্ট ভালো লাগে।
আমার মত সহজ সরল মাথায় ম্যাথের মত কঠিন সাবজেক্ট কমই ঢুকে।দীর্ঘশ্বাস ফেলে উনার কথা মত দেখালাম আমার কতটুকু শেষ হয়েছে এবং প্রবলেম কি।
আমার সব দেখানো শেষ হতেই উনি ব্রু কুচকে চিন্তিত কন্ঠে বলল

“মিস ফিয়ানা আপনি তো দেখছি একেবারেই পিছিয়ে।অনেক হার্ডওয়ার্ক করতে হবে।একদম ভালো প্রিপারেশন না পরীক্ষার।”

উনার কথায় কিছুটা লো ফিল করলাম।সত্যি বলতে আগে যেই ম্যাথ টিচার এর কাছে পড়তাম উনার পড়াটা ততোটা মাথায় ঢুকতো না তবুও উনার কাছেই পড়েছি আর তাই এই দুর্গতি।

উনি আর কিছু না বলে সোজা অংক করাতে লাগলো এবং নিজের মত করে যতটা সম্ভব শুরু থেকে পড়াতে লাগলো।আমিও মনোযোগ দিয়া বুঝতে লাগলাম।

~~~~~

বাড়িতে ফিরতে ফিরতে প্রায় ৭ টা বেযে গেলো।
বাড়িতে ফিরে ড্রেস চেঞ্জ করে বিছানায় বসতেই আম্মু এলো ফায়াজকে সাথে নিয়ে।উনাদের আগমনে হাতে থাকা মোবাইল টা পাশে রেখে আম্মুর দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেও উনি কঠিন গলায় বলল

” তোমাকে এতো পড়াশুনা করিয়ে কি লাভটা হচ্ছে যদি ছোট ভাইকেই না পড়াতে পারো।তুমি কি ৭ এর পড়া পরাতে পারবে না।ওর সামনে পরীক্ষা পড়ায় একটু হেল্প করতেই তো পারো। ”

আম্মুর কথা শুনে মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। রেগে গিয়ে বললাম

” আমার পরীক্ষা সামনে আমি নিজের পড়া না পড়ে ওকে পড়াতে যাবো কেনো আর ও তো প্রাইভেট পড়ছেই তাহলে আবার এক্সট্রা আমার পরানোর প্রয়োজন আছে নাকি?”

” কেনো নেই।তোমার মত একটা বোন থাকলে তো প্রাইভেট পড়ারই প্রয়োজন পরে না তার পরেও তুমি একটু বাড়িতে সামান্য পড়াতে পারবে না।”

আবার এক কথা শুনে বিরক্ত হয়ে বললাম

” তোমার ছেলে আমার কথা শুনে উল্টো তর্ক করে আমার সাথে তুমি প্লিজ এখন আমার মাথা খারাপ করো না আমার সামনে পরীক্ষা পড়তে বসতে হবে তুমি পড়াও তোমার ছেলেকে।”

আমার কথার পরিবর্তে আর কিছু না বলে চলে গেল আম্মু।উনি চলে যেতেই ফায়াজ ও পা বাড়াতে নিতেই আমি গম্ভীর মুখে বললাম

” কোনো সমস্যা হলে আমাকে দেখাবি। এখন একা একা পড় নিজের রুমে গিয়ে।”

আমার কথা শুনে ও মুখ ভেংচি কেটে চলে গেলো।উফ আস্ত একটা হারামি ছেলেটা।
ওরা যেতেই মোবাইল বেজে উঠলো।স্ক্রিনে তাকাতেই জিয়া নামটা ভেসে উঠলো।রিসিভ করে কানে দিতেই উত্তেজিত হয়ে বলল

“কিরে রুদ্ধ ভাইয়া পড়িয়েছে তোকে? ”

ওর এমন কথায় বিরক্ত হলাম।

” তোর কেনো মনে হচ্ছে পড়াবে বলেও উনি আমাকে পড়াবে না। আর তুই আসবি বলেও এলি না কেনো।”.

“আরে বলিস না আর আমার স্যার টাইম পরিবর্তন করে এখন ৫টার দিকে পড়াতে আসে।তাহলে সাড়ে ৪ টার দিকে আমি তো তোর সাথে থাকতে পারবো না রে সরি”

ওর কথা শুনে কোনো রকম প্রতিক্রিয়া এলো না স্বাভাবিক ভাবেই বললাম

” ওহ আচ্ছা!”

আরও কিছুক্ষন ও আজাইরা কথাবার্তা বলে ফোন কাটতেই বিশাল এক হাম এসে জানান দিলো কতটা ঘুম চোখে হানা দিচ্ছে। ইদানীং প্রচুর ঘুম পায় আমার জাগতে বসতে ঘুম পায়।

খোলা চুল গুলো হাত খোপা করে রুম থেকে বেরোতেই আব্বুকে নজরে পরলে টিভির রুমে রাতের খবর দেখছে আর রুটি খাচ্ছে।আমাকে দেখে খেতে ডাক দিলো।আব্বু রাত্রে রুটি খায় উনার অলওয়েজ রুটিং।
আমিও গিয়ে আব্বুর সাথে কিছুটা খেয়ে রুমে চলে গেলাম।গিয়ে বিছানায় গুছাতেই মনে পরলো রুদ্ধ সাহেবে কথা।

” ইশ উনি যে পড়া দিয়েছিলো ভুলেই গিয়েছিলাম।উফফ!’

ফস করে নিঃশ্বাস ফেলে বই খাতা নিয়ে বসলাম।
উনার পড়ানোর ধরন টা না চাইতেও বলতে হবে খুবই ভালো।আর বোঝানোর টেলেন্ট টা তো আরো বেশ।একদিনেই উনার পড়ায় মুগ্ধতা প্রকাশ পেলো।একেবারে ঘিলুতে ঢুকিয়ে পড়ায়।

~~~~~~~

পরেরদিন আর রিস্ক নিলাম না একদমই ৪ টা বাজতেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে পরলাম বাড়ি থেকে। সবুজ রঙের ফুল হাতার একটা লীলেনের গাউন এর ওরনাটা দিয়ে একদম ভালো করে চুল গুলো ঢেকে নিলাম।বাহিরে অনেক ধুলাবালি রিকশা দিয়ে যাওয়ার ফলে চুল একদম বিগড়ে দেয় এই ধুলাবালি গুলো।

লাইব্রেরি তে প্রবেশ করে আজকে আর উনাকে দেখলাম না। মোবাইল বের করে দেখলাম ৪ টা ২৫ বাজে।
সবসময়ের মত কর্নারের বেঞ্চে সুষ্ঠ ভাবে বসতেই ক্লান্তপায়ে হেটে আসা কাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তিকে চোখে পড়লো।

এসেই পাশে থাকা চেয়ারে গা এলিয়ে প্রব্লেম গুলো দেখায় তাড়না দিতে আমি দেখালাম সব।
উনার দিকে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতেই উনি হাতের কলম দিয়ে ব্রু স্লাইড করতে করতে বললেন

” মিস ফিয়ানা আপনি কি বই নিয়ে বসেছিলেন আদৌ? ”

উনার কথা শুনে শুকনো গলা ভিজিয়ে নিয়ে দৃষ্টি ফেরালাম।তারপর মৃদু কন্ঠে বললাম

” অবশ্যই বই নিয়ে বসেছিলাম”

আমি কথা শেষ করার সাথে সাথেই উনি টেবিলে হাত দিয়ে একটা বাড়ি দিয়ে কঠোর গলায় বলল

” মিথ্যা কথা একদমই পছন্দ না আমার।আমি আপনাকে কয়টা করতে বলেছিলাম।শুধু পড়তে বসলেই তো হবে না।সব কমপ্লিট করতে হবে। আজকে মাফ করলাম। তারপর থেকে যেনো না হয়।

উনার কথায় সায় জানিয়ে মাথা নাড়ালাম।

পড়ার মধ্যে আর কোথাও নজর যায় নাই।কিন্তু মিস্টার রুদ্ধ সাহেব পুরো দেড় ঘন্টা পড়ানোর পর উনার কাছে পড়া শেষ হতেই বাহিরে তাকালাম সাথে সাথেই ভ্রু কুচকে গেলো।

লাইব্রেরি তে আসার আগেও যেই পরিবেশ পরিষ্কার ছিলো এখন মোটেও পরিবেশ পরিষ্কার না।আকাশ কালো মেঘে ঝড়াঝড়ি।
হাল্কা দমকা বাতাসে বৃষ্টির আভাস দিচ্ছে।মনে মনে ভাবলাম গ্রীষ্মের প্রথম বৃষ্টি শুরু হবে হয়তো। ঝড়ের পূর্বাভাস নিয়ে।

বাহির থেকে নজর সড়িয়ে সামনে তাকালাম। উনি মোবাইল হাতে আমার দিকেই তাকিয়ে ছিলো দেখে কিছুক্ষন আগের ভ্রু কুচকানো ভাব আরেকটু দৃঢ় হলো।
উনার সাথে চোখাচোখি হতেই উনি উঠে দাঁড়িয়ে মোবাইল পকেটে ঢুকায়।

কফি রঙের শার্টের স্লিভ গুটিয়ে চুল গুলো হাত দিয়ে বেকব্রাশ করে বাহিরের দিকে পা বাড়ায়।

উনার চলে যাওয়া দেখে তারাতারি ব্যাগ গুছিয়ে আমিও বেড়িয়ে পড়ি।
বাহিরের দমকা হাওয়া ওড়না স্বাভাবিক থাকছে না। ওড়নাটা এক হাত দিয়ে খাবলে ধরে সামনে তাকালাম ওপর পাড়ে রুদ্ধ সাহেব একটা রিকশা থামিয়ে দাঁড়িয়ে কারো সাথে কথা বলছে মোবাইল৩।
উনার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে চটজলদি বিশাল রাস্তায় তাকালাম নিজের জন্য একটা খালি রিকশা খোজার উদ্দেশ্যে।
ব্যস্ত পথে আমার অবলা দৃষ্টিতে কোনো রিকশা চোখে পরার আগেই পৃথিবীর বুকে এক পশলা বৃষ্টি ঝাপিয়ে পড়লো প্রবল ফোটার আকারে।

হুটহাট বৃষ্টির আগমনে মুখ হা হয়ে গেলো।মুখে অবাকের রেশ না কাটতেও হাত দিয়ে নিজেকে আড়াল করার চেষ্টায় অস্থির হলাম।
অস্থির হয়ে চটজলদি পিছে ঘুরে লাইব্রেরির দিকে পা বাড়াতেই সামনে একটা রিকশা এসে থামলো।তারসাথেই অস্থির গলা ভেসে এলো

” মিস ফিয়ানা।তারতারি রিকশায় উঠে বসুন ফাস্ট।”

চলবে,,,

(ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই ❤️❤️🖤🖤)