আমি গোপনে ভালোবেসেছি পর্ব-০৫

0
265

#আমি_গোপনে_ভালোবেসেছি
#পর্বঃ৫
#writer: Mishmi Muntaha Moon

নিজের রুমে শুয়ে আছি।একটু আগে আমাকে আদার কড়া রংচা দিয়ে গেলো আম্মু।সর্দি লেগে গেলো সাথে খুক খুক কাশি তো ফ্রি।

আম্মুর বকা থেকে রেহায় পাবো তাও বৃষ্টি তে ভিজে তা অকল্পনীয়। কিন্তু আম্মুও কত আর বকবে শেষ পর্যন্ত চিন্তায় পড়ে গেলো আমার অসুস্থতা নিয়ে।তারাতারি রুমে পাঠায় জামা পাল্টাতে।
আর এখন চা নিয়ে এসেছে আমার কাশির আওয়াজ শুনে।চিন্তা করে জানি আর তাই তো এভাবে বকে।

রুদ্ধ সাহেব আমাকে পুরো বাড়ি পর্যন্ত দিয়ে গেছে।রিকশা থেকে আমি নামতেই উনি তাড়া দিয়ে আমাকে বাড়িতে গিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করতে বলে আর কিছু না বলে রিকশা নিয়ে চলে যায়।

হাতে তখনও আমার উনার দেওয়া কৃষ্ণচূড়া ফুল।হুটহাট টাইমে হাতে ধরিয়ে দিলো।আম্মুর থেকে লুকিয়ে রুমে এনে বারান্দায় থাকা একটা ভেস এ রেখে দিয়েছি।

~~~~~~~

পরীক্ষার আর ১০ দিন বাকি ভাবনা টা মাথায় যতভার আসছে ততবারই মাথাটা যেনো ঠিক থাকছে না চিন্তায় টেনশনে।

উনি এখন ১ ঘন্টার পরিবর্তে ২ ঘন্টা সময় করে পড়াচ্ছে।কিন্তু আমার ভয় টা কোনোমতেই কমছে না।কোচিং এ যেতে হয় কিছুদিন হলো।
আমার মাথায় তো এইটা ঢুকে না যে এই লাস্ট দিকে কলেজের স্যাররা কোচিং করে কি উল্টিয়ে ফেলতে চাইছে।মাথাটা গরম হয়ে যায়।

কোচিং এ যেতেই আজ অনেক দিন বাদে জিয়ার সাথে দেখা হলো।স্যার নিজের মতো পড়িয়ে যাচ্ছে আর জিয়া নিজের মতো গল্প করে যাচ্ছে অবশ্য আমার কাছ থেকে কোনো জবাব পাচ্ছে না তবুও ওর এতোদিনের কাহিনি একরকম জোর করে শোনাচ্ছে আমাকে।
৩০ মিনিট এর মতো ক্লাস করিয়ে স্যার চলে গেলো আরও থাকে ৩০ মিনিট যার কোনো খবর নেই স্যারের।

বিরক্ত হয়ে উঠে বেরিয়ে গেলাম ক্লাস থেকে।রাস্তায় যেতেই জিয়াও দৌড়ে এসে আমার পাশে দাড়ালো।
আমি বিভিন্ন গাড়ির দিকে চোখ বুলিয়ে যাচ্ছি।কোনো গাড়ি খালি পাওয়া যায় কিনা!
তার মধ্যেই দূর থেকে একটা বাইক দেখে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলাম। আমি যাকে দেখতে পাচ্ছি আসলেই সেই কিনা!

বাইক টা আমাদের থেকে একটু দূরে পার্ক করে নেহাল ভাইয়া আমাদের সামনে এসে দারাতেই জিয়ার কন্ঠ শুনে ওর দিকে তাকালাম।

“আরেহ নেহাল ভাইয়া নাকি!”

ওর কথায় এক ব্রু কুচকে ঘার বাকা করলাম।মানে পৃথিবীর সব ছেলেকেই এই মেয়ে চিনে নাকি।

” ওহহো জিয়া সুন্দরী! তুমি এই কলেজে পরো নাকি?”

” অবশ্যই, কেনো আপনি জানতেন না নাকি!”

” কে জানে মাথায় নেই তো!মাথায় সারাদিন কতো কিছু ঢুকে মাথায় তার মধ্যে তোমার কলজের কথা টা ভুলে গিয়েছিলাম হাহা”

উনার হাসির সাথে জিয়াও হাসলো।ওদের হাসি দেখে অবাক হলাম।এতো ছোটখাটো বিষয়ে হাসতে হয় নাকি।
আমি চাপা স্বরে জিয়াকে বললাম

“কিরে জিয়া! এমন ছেলেকি আদৌ আছে যাকে তুই চিনিস না?”

আমার কথায় জিয়া হাসির রেখা টেনেই আমার হাতে চাপড় দিয়ে বলল

” ধুর কি যে বলিস। নেহাল ভাইয়া তো তোদের বাড়িওয়ালার ছেলে।আমি চিনবো না তাহলে এক এলাকায়ই তো থাকি।”

ওর কথা চোখ ঘিরিয়ে অন্যদিকে চাইলাম।তখনই নেহাল ভাইয়া আমার উদ্দেশ্যে বলল

” আরে ফিয়ানা না।তুমিও এই কলেজে পড়ো?হুম আন্টি তো বলল ওইদিন তোমার একটু খেয়াল রাখতে।অনেক টেনশন করে তোমাকে নিয়ে উনি।”

উনার কথায় আরেকটু অবাক হয়ে ব্রু কুচকালাম।কি বলে আম্মুর সাথে উনার এতোই সখ্যতা নাকি যে আমাকে দেখে শুনে রাখতে বলবে।অবশ্য আম্মুর সাথে বাড়িওয়ালা আন্টির খুবই সখ্যতা দেখলাম।হয়তো বলেছে।

আমাকে কিছু বলতে না দেখে উনি আবারও বললেন

” আমি তো বাড়িতেই যাচ্ছি। চলো তোমাকেও নিয়ে যাই।”

মুহূর্তেই দম আটকে গেলো।বলে কি এই ছেলে আমি যাবো উনার সাথে তাও আবার বাইক এ করে কক্ষনও না।

” নাহ ভাইয়া।আমি চলে যাবো জিয়ার সাথে আপনি চলে যান।”

আমার কথা শেষ হতে না হতেই জিয়া বলল

” নারে ফিয়ানা আমি তো বাড়িতে না আমার আপুর বাড়িতে যাবো।কাল পরশু কোচিং এও আসবো না।তুই বরং নেহাল ভাইয়ার সাথেই চলে যা।”

ওর কথায় চোখ রাঙিয়ে তাকালাম ওর দিকে।এখন ওর বলার কি প্রয়োজন ছিলো।রাগ লাগলো কিছুটা এখন কি বলবো আমি।

” হুম তুমি আমার সাথেই চলো রাস্তায় এখন রিকশা পাবা না।”

মাথাটা নিচু করে দীর্ঘশ্বাস নিলাম।নেহাল ভাইয়া চুল হাত দিয়ে বেকব্রাশ করতে করতে বাইক এর দিকে এগুচ্ছে।পড়নে তার সাদা শার্টের সাথে জলপাই রঙের জ্যাকেট।

উনার পথ অনুযায়ী পা বাড়াতেই নেহাল ভাইয়ার পা থেমে যেতে দেখে আমি নিচ থেকে মাথা তুলে তাকাতেই রুদ্ধ সাহেবকে দেখে চমকে তাকাই।

” আরেহ রুদ্ধ ভাই। কেমন আছেন ভাই?”

আরেকদফা চমক খেলাম নেহাল ভাইয়া কে উনাকে ভাই বলতে শুনে।উনাকে চিনে আগে থেকেই।

নেহাল ভাইয়ার কথার জবাব না দিয়ে ঘাড় বাকিয়ে উনি আমার দিকে একপলক তাকালেন তারপর আবারও নেহাল ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে গম্ভীরমুখে বললেন

” ভালো আছি। তুমি ভালো আছো?”

” জ্বী ভাই।আপনি এইখানে কোনো কাজ ছিলো নাকি?”

” নাহ।তোমার কি কাজ এইখানে”

উনি ডান ব্রু উচিয়ে প্রশ্ন করলেন। জবাবে নেহাল ভাইয়া বললেন

” এইভাবেই আরকি এসেছিলাম।এখন একটু ফিয়ানা আমাদের বিল্ডিং এই থাকে মেয়েটা ওকে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছিলাম।”

নেহাল ভাইয়ার জবাবে উনি কিছুক্ষন চুপ থেকে আমার দিকে পা বারালেন।আমার পাশে এসে উনার বা হাতে আমার ডান হাতের কবজি চেপে ধরে নেহাল ভাইয়ার উদ্দেশ্যে বললেন

” আই নো।ওর সাথে আমার কিছু কাজ আছে।তুমি একাই চলে যাও”

বলেই মুচকি হেসে নেহাল ভাইয়ার বিপরীত রাস্তা ধরে হাটতে লাগলো।আমিও কি আর বলবো নেহাল ভাইয়ার সাথে বাইকে যাওয়ার থেকে উনার সাথে যাওয়াটা উত্তম আমার কাছে।

কিছুদূর যেতেই উনি আমার ধরা হাতটা ছেড়ে দিয়ে আমার থেকে একপা আগে হাটতে লাগলেন।আমিও পিছে পিছে হাটছি কিন্তু উনি যে কোন পথ দিয়ে যাচ্ছে সেইটার খেয়াল নেই আমার আমি উনার পায়ের দিকে তাকিয়ে হাটছি।

কিছুক্ষন হেটে হঠাৎ থেমে যাওয়ায় উনার হাতের সাথে হাল্কা ধাক্কা খেয়ে থেমে গিয়ে উনার দিকে তাকাই।সামনে একটা রক্তজবা গাছ।অতিরিক্ত পরিমানে ফুল হয়ে আছে গাছটায়। দেখে আমি অপলক দৃষ্টিতে হেটে গাছের সামনে গিয়ে দারালাম।
পা বাড়িয়েও একটা ফুলও নিতে না পেরে মুখ গোমড়া করে শ্বাস ফেললাম।

” ফুল চাই?”

তখনই উনার মৃদু কন্ঠস্বরে উনার দিকে তাকালাম।সাদা টি শার্টের উপর ক্রিম কালার শার্ট স্লিভ গুলো গুটানো কনুইয়ের একটু নিচ পর্যন্ত সাথে সাদা জিন্স।
উনাকে পর্যবেক্ষণ করলাম কিন্তু কোনো জবাব দিলাম না।
আমাকে চুপ থাকতে দেখে ব্রু দুটো সামান্য কুচকে আমাকে পাশ কাটিয়ে হাত উচিয়ে দুটো রক্তজবা ছিড়ে আমার দিকে বারিয়ে দিতেই আমি একপলক উনার চোখে তাকালাম
উফ উনার চোখটা একটু বেশি সুন্দর তাকালে তাকিয়ে থাকতেই ইচ্ছে হয় তারউপর মনিটা একদম হৃদয়স্পর্শী।

মুচকি হেসে উনার বারিয়ে দেওয়া হাত থেকে জবা দুইটা নিয়ে দেখতে লাগলাম।

_
আজও উনি আমায় বাড়িতে পৌছে দিলেন।আমিও উনাকে বিদায় জানিয়ে গেট দিয়ে ঢুকে পরলাম।

রুমে ঢুকে ক্লান্ত পায়ে বারান্দায় গিয়ে দারালাম।কর্নারের ভেসে কৃষ্ণচূড়া ফুলটা নেতিয়ে পরেছে।তার থেকে কয়েকটা পাপড়ি ছিড়ে নিলাম আর হাতের একটা জবা ভেস এ কৃষ্ণচূড়া ফুলের পাশে রেখে আরেকটা ফুল হাতে নিয়ে রুমে ঢুকলাম।

ছেলেদের হাত ধরার অনুভূতি আমি কখনো পাই নি সত্যি বলতে। ভাই ব্রাদারের সাথে ততোটা ধরাধরির সম্পর্ক আমার না। তবুও হয়তো ধরা হয়েছে সেই ব্যাপার আলাদা। কিন্তু ভাইদের ছাড়া বাহিরের পুরুষ ব্যাক্তির সংস্পর্শে কখনো যাওয়া হয়নি।উনিই হয়তো প্রথম।

পড়ার টেবিল থেকে নতুন একটা ডায়েরি বের করে পাতার ভাজে কৃষ্ণচুড়ার পাপড়ি আর একটা আস্ত জবা রেখে দিয়ে ডায়েরি বন্ধ করে ড্রয়ারে রেখে দিলাম।
উনার দেওয়া দ্বিতীয় ফুল জবা,,,,,।

~~~~~

সারাদিন পাড় হয়ে অন্ধকার ঘনিয়ে রাত পাড়ি জমালো।বারান্দায় দারিয়ে আছি নিঃস্থব্দ পরিবেশ।বাতাসের সাথে হাসনাহেনা ফুলের সুগন্ধ ভেসে আসছে যার জন্য আমি জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছি আর সুগন্ধ নিচ্ছি ভালো লাগছে।

আজ কলজে যাই নি রুদ্ধ সাহেবের কাছে পড়তেও যাই নি।আজ বাড়িতে থেকে যাওয়ায় আম্মু আব্বু আর ফায়াজ বড় ফুপ্পিদের বাড়ি গেছে রাতেই এসে পরবে। বেশি দূর না ৩০ মিনিটের রাস্তা।
আমার পরীক্ষার সুবাদে আমাকে নিয়ে যাওয়া হয় নি।আমার যেতেও ভালো লাগে না ফুপ্পিদের বাসায় গেলেই আমার বিয়ের কথা।অবশ্য আম্মুরা একলা গেলে যে করবে না তা না।কে জানে আবার কি করে ফুপ্পি।
উনাদের ভাবনা বাদ দিয়ে সামনের বড় কদম গাছটায় নজর দিলাম রাস্তার বাম পাশটা গাছটা নিজ দাপটে দাঁড়িয়ে আছে।
ফুল ফোটা শুরু হয়েছে গ্রীষ্মের শেষ দিক বর্ষার শুরু তো।অনেক ফুল চোখে পরছে।আহা!কি সুন্দরই না লাগছে দেখতে।
প্রত্যেকবার খালি তাকিয়ে দেখি কিন্তু নিতে পারিনা কারণ গাছ টা অনেক বড়। ফুল নিতে হলে গাছে উঠতে হবে।আর কে দেবে আমাকে গাছে কষ্ট করে উঠে কদম ফুল পেরে।আমার ভাইটাও গাছে উঠতে পারে না।দুঃখ!

ভাবনার মাঝেই একটা রিকশা দেখলাম আমাদের বিল্ডিং এর পাশে দারালো। আমাদের ফ্ল্যাট টা তৃতীয় তলায়।
প্রথম ভাবলাম আম্মুরা এসে পরেছে কিন্তু পরমুহূর্তেই অন্ধকারে একটা পুরুষের প্রতিচ্ছবি দেখে নিশ্চিত হলাম আম্মুরা না।

অনেক ক্ষন হলো কিন্তু ছেলেটা আমাদের দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে বিল্ডিংয়ের দিকে মুখ করে।হঠাৎ মনে হলো আমার বারান্দায় তাকিয়ে আছে।
ব্রু কুচকে বারান্দার লাইটটা অফ করে দিলাম।যদিও আমাকে দেখে তাহলে আর দেখা যাবেনা।

চলবে,,,,

(ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই ❤️)