আমি তোমার গল্প হবো পর্ব-০৫

0
715

#আমি_তোমার_গল্প_হবো🍁
লেখিকা- মাহিয়া তাহসীন মেরিন
পর্ব:::০৫

অধরা আর আশ্বিন বাসায় আসতেই দাদি তাদের সামনে এসে,,

— ” কি ব্যাপার? তোদের হাতে এসব কি? ”

— আশ্বিন অধরার দিকে একবার তাকিয়ে,, ” দাদি এটা তোমার জন্য।
আজ রাতে পার্টিতে তুমিও আমাদের সাথে যাবে। ”

কথাটা বলেই আশ্বিন উপরে চলে আসে। দাদি তার যাওয়ার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে,,

— ” পার্টি? কিন্তু…।
ছোট্ট বুড়ি, এসব কি হচ্ছে একটু বলবি আমাকে? ”

— অধরা বাঁকা হেসে,, ” আরে দাদি, তুমিও না। শুধু দেখতে থাকো আগে আগে কি হয়। ”

কথাটা বলে অধরা একটা মুচকি হাসি দেয়। দাদি অধরার দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভেবে মুচকি হাসে।

🌻রাতে🌻

অধরা একটা কালো শাড়ি পরে হালকা সাজে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করছে। হঠাত আশ্বিন ফোনে কথা বলতে বলতে রুমে প্রবেশ করে সামনে তাকিয়ে স্তব্ধ হয়ে যায়।

কালো শাড়িতে মায়াবী অধরাকে আরো বেশি সুন্দর লাগছে। চোখে হালকা কাজল যেনো তার মায়াবী রুপকে আরো ফুটিয়ে তুলেছে। আশ্বিন মুগ্ধ নয়নে তার মায়াবিনীর দিকে তাকিয়ে আছে।

— অধরা আয়নায় আশ্বিনকে দেখে পিছনে ফিরে,, ” আমি রেডি। দেখুন তো কেমন লাগছে আমাকে। ”

— অধরার কথায় হুশ ফিরে নিজেকে সামলে নিয়ে,, ” এতোক্ষণ লাগে রেডি হতে? দাদি কতক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছে।
চলো জলদি। ”

অধরা চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে একটা ভেংচি কেটে চলে আসে। আশ্বিন তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে তার পিছু আসতে থাকে।

🌻🌻

অধরা আশ্বিন আর দাদি পার্টিতে প্রবেশ করতেই দেখে, ইতিমধ্যে অনেকেই চলে এসেছেন।
মারিয়া দূর থেকে তাদের আসতে দেখেই দৌড়ে সামনে এসে,,

— ” আশ্বিন, ফাইনালি তুমি চলে এসেছো! আমি খুব খুব খুব খুশি হয়েছি। ”
অধরার দিকে তাকিয়ে,, ” আমি তো ভেবেছিলাম তুমি আসবেই না। ”

— অধরা মুচকি হেসে,, ” কি যে বলো না আপু,
তুমি এতো করে বলেছিলে, তাই না এসে থাকতে পারলাম না। ”

— মারিয়া জোর পূর্বক মুচকি হেসে,, ” আরে দাদি, কেমন আছেন? ”

— দাদি মুচকি হেসে,, ” এই তো, আল্লাহ রহমতে ভালো আছি। তুমি কেমন আছো মা? ”

— ” আমিও ভালো আছি।
চলুন মমের সাথে দেখা করবেন। ”
কথাটা বলেই দাদি আর অধরাকে নিয়ে মারিয়া ভেতরে চলে আসে।

এদিকে,,

আশ্বিন সবার সাথে কুশল বিনিময় করতে ব্যাস্ত। আর অধরা দাদির পাশে দাঁড়িয়ে একে একে সবার সাথে পরিচিত হচ্ছে।
খুব কম সময়ের মধ্যেই অধরা সবার সাথে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে। আশ্বিন দূর থেকে মাঝে মাঝে আঁড়চোখে তাকে দেখছে।

হঠাত আশ্বিনের একজন ফ্রেন্ড তার কাছে এসে…

— ” আরে আশ্বিন তুই..! তুই তো কখনো পার্টিতে আসিস না, হঠাত আজ কি মনে করে..?
বাই দ্য ওয়ে,, শুনেছি বিয়ে করেছিস। ভাবি কোথায়? ”

— আশ্বিন অধরার দিকে ইশারা করে,, ” ওইয়ে তোর ভাবি।
সরি,, বিয়েটা ঘরোয়া ভাবেই হয়েছে তো তাই তোকে বলা হয়নি। ”

— ” আরে ঠিক আছে। চল, ভাবির সাথে পরিচিত হয়ে আসি। ”

কথাটা বলেই আশ্বিনকে নিয়ে অধরার সামনে এসে,,

— ” ভাবি, কেমন আছেন? আমি মিরাজ,, আশ্বিন আমার খুব ভালো ফ্রেন্ড। ”

— অধরা একবার আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে,, ” ওহ আচ্ছা, আমি ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন? ”

— ” আলহামদুলিল্লাহ। আমিও ভালো আছি। শুনেছি আপনারা নাকি ভালোবেসে বিয়ে করেছেন, অথচ আশ্বিন আমাকে কখনোই বলেনি এমন মিষ্টি একটা মেয়ে আমার ভাবি হবে। ”

— অধরা কথাটা শুনে হালকা হেসে আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে বিরবির করে,, ” বলবে কিভাবে? আমি নিজেই তো আজ জানতে পেরেছি। ”

— ” যাই হোক, ভাবি আমার একটা জরুরী কাজ আছে তাই চলে যাচ্ছিলাম।
ভাবলাম যাওয়ার আগে পরিচিত হয়ে যাই। ”

— ” ওহ আচ্ছা। পরিচিত হয়ে ভালো লাগল।
একদিন সময় করে বাসায় আসবেন কিন্তু। ”

— ” হ্যা হ্যা অবশ্যই। নতুন ভাবির হাতের চা খেতে তো যেতেই হবে। হিহিহি।
আচ্ছা, আশ্বিন যাই তাহলে। দেখা হবে। ”

কথাটা বলেই মিরাজ মুচকি হেসে বিদায় নেয়। অধরাও মুচকি হেসে আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে দেখে সে শক্ত মুখে তার দিকে তাকিয়ে আছে।

— অধরা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে,, ” কিহহ? এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো? ”

— আশ্বিন দাঁতে দাঁত চেপে,, ” এতো কথা বলার কি আছে? যাও চুপচাপ দাদির পাশে গিয়ে বসে থাকো। যাও…। ”

অধরা চোখ ছোট করে তাকিয়ে দাদির পাশে এসে বসে পড়ে। আর মনে মনে আশ্বিনকে হাজারটা বকা দিচ্ছে সে।

🌻হঠাত,,

গেটের দিকে তাকাতেই দেখে শাহিন হাসাদ, অনুরিমা আর সাহিল একসাথে প্রবেশ করছে। তাদের দেখে অধরা আর দাদি একে অপরের দিকে তাকায়।
আশ্বিন দূর থেকে তাদের একনজর দেখে চোখ ফিরিয়ে নেয়।

মারিয়া অনুরিমাকে দেখে তাদের কাছে গিয়ে গল্প জুড়ে দেয়। এদিকে,, শাহিন হাসাদের সাথে অন্যান্য বিজনেস ম্যানরা এসে কথা বলতে ব্যাস্ত।

আশ্বিন তাদের থেকে অনেকটা দূরে সরে দাঁড়িয়ে ফোনে কিছু একটা করছে। হঠাত কেউ একজন তার সামনে এসে দাঁড়াতেই আশ্বিন মাথা তুলে দেখে অধরা।

— ” এখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো? চলুন আমার সাথে। ”

কথাটা বলেই আশ্বিনকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে তার হাত ধরে সবার সামনে নিয়ে আসে।
দূর থেকে অনুরিমা একবার আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নেয়।

অধরা ভালোভাবে তাদের দিকে তাকিয়ে প্রতিটা মুহূর্ত তাদের পর্যবেক্ষণ করছে। তার কাছে কেনো যেনো মনে হচ্ছে অনুরিমা তাদের সাথে থেকেও ভালো নেই।
একজন নাম্বার ওয়ান বিজনেস ম্যানের ওয়াইফ হওয়ার পরও তিনি ভালো কেনো নেই!

— অধরা মনে মনে,, ” কেমন যেন মনে হচ্ছে উনি সবার সামনে ভালো থাকার অভিনয় করেছেন। এটা কি শুধু আমার মনের ভুল নাকি অন্যকিছু? ”

অধরা কথাগুলো ভাবতে ভাবতে আনমনে হাটার সময় হঠাত কারো সাথে ধাক্কা লাগে।

— অধরা সামনে না তাকিয়েই,, ” আই এম সরি। আমি আসলে খেয়াল করি নি। ”

কথাটা বলে সামনে তাকিয়ে দেখে সাহিল তার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।

🌻এদিকে🌻

আশ্বিন একা দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছিলো হঠাত শাহিন হাসাদ তার সামনে এসে…

— ” কি খবর আশ্বিন? শুনেছি নতুন প্রোজেক্ট নিয়ে কাজ করেছো? ”

— আশ্বিন ফোন রেখে বিরক্তি নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে,, ” হ্যা, ঠিক শুনেছেন। দাদাভাইয়ের বিজনেস একা হাতে হ্যান্ডেল করার চেষ্টা করছি। ”

— শাহিন বাঁকা হেসে,, ” আমাকে টেক অভার করার চেষ্টা করছো, তাই তো? নাম্বার ওয়ান পজিশনে যেতে চাও।
কিন্তু আমাকে হারানো কি এতো সহজ নাকি? ”

— আশ্বিন কিছুক্ষণ চুপ থেকে একটা বাঁকা হাসি দিয়ে,, ” আমাকে এতোটা দূর্বল ভেবে ভুল করবেন না মিস্টার শাহিন হাসাদ। আমি মাত্র কয়েক বছরে যদি দাদুর বিজনেস এতোটা সফল করতে পারি,, তো কে জানে,, হয়তো একদিন টপ হয়ে দেখিয়ে দিবো। ”

— আশ্বিনের কথা শুনে শাহিন হাসতে হাসতে,, ” গুড। স্বপ্ন দেখা ভালো।
যাই হোক,, অমিত রহমানের মেয়ে অধরাকে বিয়ে করেছো। ভালো কথা।
বউকে সামলে রেখো। বুঝই তো, বাচ্চা মেয়ে। কখন আবার মায়ের মতো সেও….। ”

কথাটা বলে শাহিন আশ্বিনের পিছনের দিকে তাকিয়ে একটা বাঁকা হাসি দিয়ে চলে যায়।
আশ্বিন হাত মুঠো করে কোনমতে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করে পিছনে ফিরে দেখে সাহিল আর অধরা সামনাসামনি দাঁড়িয়ে আছে।

সাহিল অবাক হয়ে অধরার দিকে তাকিয়ে,,

— ” তুমি…। তোমাকে তো ঠিক চিনতে পারলাম না। কে তুমি…? ”

— অধরা আমতা আমতা করে,, ” আ…আমি, আ…। ”

কথাটা বলার আগেই আশ্বিন হুট করে এসেই অধরাকে টেনে নিজের কাছে এনে…

— রেগে চিৎকার করে,, ” ও মিসেস আশ্বিন চৌধুরী। আমার ওয়াইফ।
ভুল করেও অধরার আশেপাশে যেনো তোকে না দেখি। ”

অধরা আশ্বিনের চিৎকার শুনে ভয়ে কেপে ওঠে। এদিকে আশেপাশের অনেকেই তাদের দিকে তাকিয়ে আছে।

সাহিল একবার আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে আবার অধরার দিকে তাকিয়ে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে,,,

— ” হুহহহ, ভয় পাচ্ছিস নাকি? তোর বউকে নিয়ে নিবো ভেবেছিস? ”

— আশ্বিন দাঁতে দাঁত চেপে,, ” সেই সুযোগও আমি দিবো না।
চলো অধরা…। ”

আশ্বিন অধরাকে নিয়ে চলে আসতে নিতেই সাহিল একটা হাসি দিয়ে,,

— ” তোদের সমস্যা কি বল তো? একে তো নিজেরা কিছু ধরে রাখতে পারিসনা। আর দোষ আমাদের দিস।
একবার ভেবে দেখ,, তোরা কেমন মানুষ যে জন্মদাত্রী মা নিজেই সন্তানের মূল্য দেয়নি। ”

আশ্বিন কথাটা শুনেই রাগে সাহিলের শার্টের কলার চেপে ধরে।

— ” মুখ সামলে কথা বল সাহিল। ”

হঠাত অনুরিমা তাদের সামনে এসে,,

— ” আশ্বিন ছাড়ো সাহিলকে।
এসব কি ধরনের পাগলামী?
দিন দিন অসভ্য হয়ে যাচ্ছো তুমি। ”

— আশ্বিন সাহিলের কলার ছেড়ে দিয়ে,, ” হ্যা, আমি অসভ্য। কারণ, ছোট থেকে ভালো শিক্ষা দেওয়ার জন্য আমার মা বাবা আমার সাথে ছিলো না।

কিন্তু,, টপ বিজনেস ম্যানের ওয়াইফ হওয়ার লোভে নিজের স্বামী সন্তানকে একা ফেলে নিজের জীবন সাজানো সভ্য সমাজের এক আদর্শ চরিত্র তো আপনি,, তাই না?

” ঠাসস… ”

অনুরিমা স্ব জোরে আশ্বিনের গায়ে হাত তোলা।

অধরা এতোক্ষণ চুপচাপ তাদের কথাগুলো শুনছিলো। অনুরিমার গায়ে হাত তোলা দেখে অধরা অবাক হয়ে যায়।

— অনুরিমা আশ্বিনের সামনে এসে,, ” আজ আমার লজ্জা হচ্ছে এই ভেবে যে তোমার মতো একজন আমার সন্তান। ”

— আশ্বিন গালে হাত দিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে,, ” এতো দিন পর লজ্জা হচ্ছে?
যেদিন আমাদের ফেলে চলে গিয়েছিলেন, আমার তো তখন থেকেই নিজের প্রতি লজ্জা হতো, যে আমি আপনার সন্তান। ”

কথাটা বলেই আশ্বিন সেখান থেকে বেরিয়ে যায়। অধরাও আশ্বিনকে ডাকতে ডাকতে তার পিছু নেয়।

এদিকে,, আশ্বিনের দাদি অনুরিমার দিকে এক নজর তাকিয়ে মাথা নিচু করে বেরিয়ে আসে।

—চলবে💜