#আমি_তোমার_গল্প_হবো🍁
লেখিকা- মাহিয়া তাহসীন মেরিন
পর্ব:::১৮
🌻পরদিন🌻
অধরা আশ্বিনকে নিয়ে কবরস্থানে আসে। আশ্বিন অধরার দিকে একনজর তাকিয়ে ধীর পায়ে হেঁটে আকাশের কবরের দিকে এগিয়ে গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে। অধরা একটু দূর থেকে আশ্বিনকে দেখছে।
— আশ্বিন স্তব্ধ হয়ে শীতল কণ্ঠে,
” ড্যাড…..আমি এসেছি।
তোমার ছোট্ট সুপারহিরো এতগুলো বছর পর তোমাকে দেখতে এসেছে। আমাকে..বুকে জড়িয়ে ধরবে না?
সুপারম্যান কি কখনো এভাবে হেরে যায় ড্যাড?
তুমি কি আর উঠবে না? আমাকে সুপারহিরো বলে ডাকবে না? ”
অধরা আশ্বিনের কথাগুলো শুনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিরবে চোখের পানি ফেলে।
— ” আই এম সরি, ড্যাড।
আমি এতোগুলো বছর ধরে তোমাকে ভুল ভেবে এসেছি। আমি ভেবেছিলাম তুমি মমের উপর রাগ করে আমাকে একা রেখে চলে গিয়েছো। আমি কতোটা ভুল ছিলাম।
তুমি আমার জন্যই তো আজ….। ”
কথাটা বলেই আশ্বিন কিছুক্ষণ চুপ হয়ে বসে থাকে। তার মনের অজান্তেই চোখ থেকে পানি বের হয়ে আসছে।
— ” ড্যাড, আমার মমকে চাই না। আমি তোমাকে চাই ড্যাড।
তোমার ওই খুনিদের আমার কোন দরকার নেই। মমের জন্য তুমি আজ আমার সাথে নেই।
আমি শিওর তারা প্ল্যান করে তোমাকে কষ্ট দিয়েছে ড্যাড। আমি তাদের ছাড়বো না। যারা তোমার সাথে এমন করেছে তাদের শাস্তি আমি দিবোই।
এমন শাস্তি দিবো যেনো বাকি জীবন তাদের আফসোস করতে হয়। ”
আশ্বিন কথাগুলো বলে থেমে যায়। অধরা দূর থেকে ঠিকই বুঝতে পারছে আশ্বিন কান্না করছে। অধরা ধীর পায়ে আশ্বিনের কাছে এসে তাকে দাঁড় করিয়ে,
— ” আশ্বিন, এভাবে ভেঙে পড়বেন না। আপনি ভেঙে পড়লে দাদিকে কে সামলাবে? প্লিজ শান্ত হোন। ”
আশ্বিন চোখ মুছে একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে অধরাকে নিয়ে চলে আসে।
গাড়িতে অধরা আর আশ্বিন পাশাপাশি বসে আছে। কেউ কোন কথা বলছে না। হঠাত নিরবতা কাটিয়ে আশ্বিন বললো,
— ” অধরা, দাদিকে এসব কিছু বলো না। ”
— ” কোনো আশ্বিন? উনার তো জানার অধিকার আছে। ”
— ” কোন প্রয়োজন নেই। দাদি বয়স্ক মানুষ আবার অসুস্থও। আমি জানি, বাবাকে শেষবার দেখার আশায় তিনি এখনও বেঁচে আছেন। যদি সত্যিটা জানতে পারে, দাদি সহ্য করতে পারবে না। ”
— ” কিন্তু আশ্বিন…। ”
— ” অধরা জেদ করো না। পৃথিবীতে আমার আপন মানুষের সংখ্যা একদম কম। আমি কোনভাবেই তাদের হারাতে চাই না। বুঝেছো তুমি? ”
অধরা কিছুক্ষণ চুপ করে আশ্বিনের কথাগুলো শুনে মাথা নেড়ে হ্যা বোঝায়। আশ্বিন একনজর অধরার দিকে তাকিয়ে গাড়ি থেকে নেমে বাসায় চলে আসে।
🌻🌻
আশ্বিন বাসায় প্রবেশ করেই সোজা দাদির রুমে চলে আসে। দাদি তখন খাটের উপর সোজা হয়ে বসে বই পড়ছিলো। আশ্বিন এসে হঠাত দাদির কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে।
— দাদি কিছুটা অবাক হয়ে, ” কি হয়েছে আশ্বিন? মন খারাপ?
কি হয়েছে দাদিকে বল। ”
— ” কিছু হয়নি দাদি। অনেকদিন তোমার কোলে মাথা রেখে ঘুমাইনি। তাই…। ”
আশ্বিন কথাটা বলতেই অধরা দাদির রুমে প্রবেশ করে। দাদি অধরার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে,
— ” ছোট্ট বুড়ি, দেখেছিস পাগলটা কি বললো? এখনো ছোটই রয়েই গেলি, ছোট্ট বাচ্চাদের মতো আবদার। ”
অধরা দাদির কথা শুনে মুচকি হাসি দেয়।
— আশ্বিন উঠে বসে, ” দাদি তোমাকে তো বলাই হয়নি। শিউলি দাদি তোমাকে তাদের বাসায় যেতে বলেছে। অনেকদিন নাকি তোমাকে দেখে না। অসুস্থতার জন্য উনি নিজেও আসতে পারছেন না। ”
— দাদি খুশি হয়ে, ” শিউলি ফোন দিয়েছিলো তোকে? তাকে বলো আমি আজই আসবো তাকে দেখতে। এই এখনি রেডি হচ্ছি। ”
— দাদির কথা শুনে আশ্বিন মুচকি হেসে, ” ঠিক আছে। ”
— দাদি অধরার দিকে তাকিয়ে, ” ছোট্ট বুড়ি, তুইও চল আমার সাথে। আমার মামাতো বোনকে দেখে আসবি। ”
অধরা কিছু বলার আগেই আশ্বিন তাকে থামিয়ে দিয়ে,
— ” না দাদি। অধরার সামনে পরীক্ষা তার যাওয়ার দরকার নেই। তুমি ঘুরে এসো। ”
আশ্বিনের কথা শুনে দাদিও আর কথা না বাড়িয়ে রেডি হতে চলে যায়।
অধরা চুপচাপ বসে আছে। সে আন্দাজ করতে পারছে আশ্বিন তার উপর রেগে আছে। তাকে শিক্ষা দিতেই দাদিকে পাঠিয়ে দিচ্ছে। কথাটা ভেবে অধরার আত্মা শুকিয়ে আসছে।
🌻🌻
দাদি চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর অধরা ধীরে ধীরে রুমে প্রবেশ করে। আশ্বিন এতোক্ষণ ল্যাপটপে বসে কাজ করছিলো। অধরা রুমে প্রবেশ করছে তা বুঝতে পেরে,
— ” আমার সামনে এসে বসো। তোমার সাথে আমার কথা আছে। ”
আশ্বিনের কথাটা শুনে অধরা কেপে ওঠে। ধীর পায়ে হেঁটে আশ্বিনের পাশে বসে,
— ” ক…কি কথা আছে? ”
— আশ্বিন ল্যাপটপ রেখে অধরার দিকে তাকিয়ে, ” এইসব কবে থেকে চলছে অধরা? ”
— ” বুঝলাম না, কোনসব? ”
— ” আমার চোখ ফাঁকি দিয়ে যে এতো সব তথ্য খুঁজে বেড়াচ্ছো, আমাকে একবার বলার প্রয়োজন মনে করেছো? ”
— অধরা মাথা নিচু করে, ” আপনাকে জিজ্ঞেস করলে তো রেগে যাবেন। আর তাছাড়া..। ”
— চিৎকার করে, ” তাই বলে নিজ থেকে এসব খুঁজে বেড়াচ্ছো। আর তোমার একার পক্ষে তো এসব খুঁজে বের করা সম্ভব না। কে সাহায্য করেছে তোমাকে? ”
— অধরা কাঁপা কণ্ঠে, ” জ…জনি ভাইয়া। ”
— ” কোন জনি? অর্ণবের বিজনেস স্পাই জনি? ”
অধরা মাথা নেড়ে হ্যা বোঝায়। আশ্বিন রেগে উঠে দাঁড়িয়ে,
— ” মানে অর্ণবও এসব কিছু জানে অথচ আমাকে কিছুই বলেনি। ”
— ” ভাইয়া আগে জানতো না। সেদিন আমাকে জোর করায় আমি বলেছি। ভাইয়ার কোন দোষ নেই।
আর আমি তো আপনার ভালোর জন্যই এমন করেছি। আপনি রেগে যাচ্ছেন কেনো? ”
— ” ভালোর জন্য করেছো? অধরা তুমি এখনো এতোটাও বড় হয়ে যাওনি যে বিপদের সাথে যুদ্ধ করে এসব খুঁজে বেড়াবে।
ঠিক আছে মানছি তুমি সব সত্যিটা বের করেছো। তারপর আমাকে বললে না কেনো? ওই অনুরিমার কাছে যাওয়ার কি দরকার ছিল? ”
— ” উনার কাছে না গেলে তো সত্যিটা জানতে পারতাম না। উনিই তো এখন সব স্বীকার করছেন। ”
— আশ্বিন রেগে, ” কিছুই স্বীকার করেনি অধরা। তুমি ধারণাও করতে পারবে না অনুরিমা তার নিজ স্বার্থে কোন পর্যায়ে যেতে পারে। সে তোমাকে যা যা বলেছে সব মিথ্যা। ”
— ” কিন্তু উনি মিথ্যা কেনো বলবে আশ্বিন? ”
— ” কারণ তখন তোমার কাছে উনার বিপক্ষে প্রমাণ ছিলো। তাই তিনি বুদ্ধি করে এসব কথা বলেছে যেনো তুমি ইমোশনাল হয়ে প্রতিশোধ নেওয়া থেকে দমে যাও।
অধরা, তুমি ভুল করে ফেলেছো। আমাদের শত্রুদের তুমি জানিয়ে দিয়েছো যে তাদের বিপক্ষে আমাদের প্রমাণ আছে। ”
— অধরা অবাক হয়ে, ” আশ্বিন, হতেও তো পারে তিনি সত্য বলছেন। আপনি এমন করেও তো ভাবতে পারেন।”
— আশ্বিন কিছুক্ষণ চুপ থেকে,
” ঠিক আছে। আমি আমার লোকদের সত্যটা জানতে পাঠিয়ে দিবো। আর নানাভাইকেও খুঁজে বের করবো।
কিন্তু, উনার কথাটা যদি মিথ্যে হয় অধরা, তাহলে জেনে রাখো অনেক বড় বিপদ আসতে চলেছে। ”
অধরা কথাটা শুনে চিন্তায় পড়ে যায়। সত্যিই হয়তো আশ্বিনকে না জানিয়ে এমন করা তার ঠিক হয়নি।
আশ্বিন ফোন হাতে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। অধরা তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
— ” হ্যালো অর্ণব, এখনি দেখা কর। ”
— ” কি হয়েছে আশ্বিন? সব ঠিক আছে তো? অধরা ঠিক আছে? ”
— ” আগে দেখা কর। তারপর সব বলছি। জলদি আমার অফিসে চলে আয়। ”
— ” ঠিক আছে আমি আসছি। ”
আশ্বিন ফোন রেখে দ্রুত অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যায়। গাড়িতে বসে ফোন নিয়ে,
— ” হ্যালো ফাহাদ, এখনি বাসায় কিছু গার্ড পাঠিয়ে দাও। অধরার সেফটি অনেক দরকার। আর কয়েকজনকে শিউলি দাদির বাসার সামনে গোপনে গার্ড দিতে বলো, দাদি আছে সেখানে। ”
— ” ওকে স্যার। ”
আশ্বিন ফোন রেখে রাগী কণ্ঠে,
” মিসেস অনুরিমা হাসাদ। অধরাকে অবুঝ পেয়ে আপনি তাকে যা তা বললেও আমি আপনার সত্য জানি। আপনি কতোটা নিচ নামতে পারেন আমি জানি।
অনেক আমার জীবন নিয়ে খেলেছেন। এখন সময় এসেছে প্রতিশোধ নেওয়ার। ”
—চলবে❤