আমি তোমার গল্প হবো পর্ব-১৯

0
582

#আমি_তোমার_গল্প_হবো🍁
লেখিকা- মাহিয়া তাহসীন মেরিন
পর্ব:::১৯

আশ্বিন অফিসে প্রবেশ করার কিছুক্ষণ পর অর্ণব চলে আসে। আশ্বিন ইশারায় অর্ণবকে তার পাশে বসতে বলে।

— ” কি হয়েছে আশ্বিন? হঠাত এভাবে আসতে বললি। ”

— ” তুই তো জানিস অধরা আমাকে লুকিয়ে কিসব করছে। কে বলেছিলো তাকে আমার পাস্ট খুঁজে বেড়াতে?
আর তুইও সবটা জানার পর আমাকে একবারও বললি না। ”

— ” আমি কি করবো, বল? তুই জানিস না অধরা কতোটা জেদী। সে যখন একবার ঠিক করেছে তোর পাস্ট সম্পর্কে সব জানবে তখন হাজার যাই হোক না কেনো, অধরা পিছু পা হবে না।
আর আমি বিষয়টা আগে জানতাম না, সেদিন জনিকে অধরার সাথে ফোনে কথা বলতে শুনে জনিকে জোর করি তখন সেই সবকিছু বলে। ”

— আশ্বিন কপালে হাত বুলিয়ে, ” এট লিস্ট তোর নিজে বিষয়টা সামলানো উচিত ছিল। তাহলে হয়তো… ”

— অর্ণব চিন্তিত হয়ে, ” কি হয়েছে? আশ্বিন আমাকে সবকিছু পরিষ্কার করে বল। ”

আশ্বিন একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে অর্ণবকে একে একে সবটা খুলে বলে। অর্ণব সবটা শুনে স্তব্ধ হয়ে যায়।

— অর্ণব অবাক হয়ে, ” এর মানে কি? আকাশ আঙ্কেল…? ”

আশ্বিন অর্ণবের কথাটা শুনে চুপ হয়ে মাথায় হাত রেখে বসে আছে। অর্ণব কিছু একটা ভেবে,

— ” এখন কি করবি? হতেও তো পারে অনুরিমা আন্টি সত্যি কথা বলছেন। ”

— ” এটা বিশ্বাস করার মতো না অর্ণব। উনি চাইলে অধরাকে মিথ্যা কাহিনী শুনিয়ে মন ভোলাতে পারে কিন্তু আমাকে না।

অনুরিমা শুধু মাত্র উনার স্বার্থে কাজ করে। তিনি অধরাকে বলেছেন না, ড্যাডের কথা শুনে তিনি তার ভুল বুঝতে পেরেছেন আর ড্যাডের সাথে চলেও আসতে চেয়েছিলেন। এটা একদম মিথ্যে কথা। কারণ তিনি কখনোই আমার বাবাকে ভালোবাসেনি, আর আমাকে নিজের সন্তান বলে মানেওনি।

অনুরিমার কাছে সবচেয়ে ইমপটেন্ট হলো তার বিলাস বহুল জীবন, তার সোসাইটি আর তার ফ্রেন্ড সার্কেল। যখন ড্যাডের বিজনেসে প্রবলেম হয়েছিল তখন তিনি ড্যাডের সাপোর্ট না হয়ে, উল্টো শাহিন হাসাদের সাথে বিয়ের স্বপ্ন দেখেছে।

আর কি যেনো বলেছে অধরাকে? আমার মা হয়ে উনি ফিরে আসতে চেয়েছিলো। ড্যাডের জন্য আমার সাথে মুখোমুখি হতে চাইতেন না।

হুহহ, ছোট থেকে সবার মায়ের আদর দেখে নিজের মায়ের পিছু পিছু পাগলের মতো ঘুরঘুর করছি আমি, অর্ণব। মাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতাম। তার একটু ভালোবাসা পাওয়ার জন্য কতো চেষ্টা করেছি, অথচ উনি কোনদিন আমাকে জড়িয়ে ধরে বাবা কেমন আছো এটাও জিজ্ঞেস করোনি।
আর উনার কাছে আমি কেনো আমার ড্যাডও ভালো ব্যবহারটুকু পায়নি।

আড়াল থেকে আমি কতোবার দেখেছি মমকের বাজে ব্যবহারে ড্যাড মন খারাপ করে বারান্দায় বসে থাকতো। অনুরিমা কখনো ভালোবাসা বুঝেনি, অর্ণব। ”

অর্ণব এতোক্ষণ চুপচাপ কথাগুলো শুনছিলো। আশ্বিনের কথাগুলো শুনে কিছুক্ষণ চুপ থেকে,

— ” যদি তাই হয় তাহলে এখন কেনো আকাশ আঙ্কেলের কবরের সামনে বসে কান্না করে? এটাকে কি বলবি তুই? ”

— ” সব উনার ড্রামা। আমি কিছুই বিশ্বাস করি না। হয়তো এখন তার ভুল বুঝতে পেরেছে। কারণ ড্যাডের কাছে উনি যতোটা স্বাধীনতা আর সম্মান পেয়েছে শাহিন কখনোই তাকে সেই সুযোগ দিবে না। তাই হয়তো এখন বুঝতে পারছে।

আবার এমনও তো হতে পারে, উনি ইচ্ছে করেই কবর জিয়ারত করতে গিয়েছিলেন। হয়তো উনি আগে থেকেই জানতেন অধরা উনার পিছু নিয়েছে। হয়তো…. উনি আমাদের বড় কোন বিপদে ফেলতে চাইছেন। ”

— অর্ণব গভীর ভাবে চিন্তা করে, ” আমাদের সব ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আশ্বিন। মনে রাখিস, যদি আন্টির কথা সত্য হয় তবে তোর নানাভাই এখন বিপদে আছে সেই সাথে তোরা সবাইও।
আর যদি কথাগুলো মিথ্যা হয়, তবে তোদের উপর খুব বড় ঝড় আসতে যাচ্ছে। আমাদের যা করার এখনই করতে হবে। ”

— ” হুমম। আমার তোর হেল্প চাই। আমিও এর শেষ দেখে ছাড়বো। অনেক খেলেছে আমাদের জীবন নিয়ে। ড্যাডের সাথে তারা যা করছে এর জন্য তাদের শাস্তি পেতেই হবে। ”

কথাগুলো বলে আশ্বিন অর্ণবের দিকে তাকায়। অর্ণব আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়।

🌻রাতে🌻

আশ্বিন অর্ণবের সাথে আলোচনা শেষ করে বাসায় ফিরতে অনেক রাত হয়ে যায়। সে বাসায় প্রবেশ করেই দেখে অধরা একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে। আশ্বিন তার দিকে না তাকিয়ে রুমে চলে আসে তা দেখে অধরাও পিছু পিছু চলে আসে।

— অধরাকে চুপ থাকতে দেখে, ” কি ব্যাপার? তুমি এখনও জেগে আছো কেনো? বলেছিলাম না খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়তে। ”

আশ্বিন কথাটা বলার পর বেশ কিছুক্ষণ অধরার কোন উত্তর না আসায় আশ্বিন পিছনে ফিরে দেখে অধরা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।

— আশ্বিন ভ্রু কুঁচকে, ” কি হয়েছে? আমি কিছু জিজ্ঞেস করেছি তোমাকে। ”

অধরা কিছু না বলে আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে দৌড়ে এসে আশ্বিনকে জড়িয়ে ধরে,

— ” আপনি আমার উপর রেগে আছেন। ”

হঠাত এমন করায় আশ্বিন কিছুটা চমকে যায়। তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে অধরার মাথায় হাত রেখে,

— ” একটু রেগে ছিলাম। কিন্তু এখন আর রেগে নেই। পিচ্চিদের সাথে রাগ করতে নেই। ”

অধরা কথাটা শুনে কান্না করে দেয়। আশ্বিনকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে,

— ” আমি জানতাম না বিষয়টা এমন পর্যায়ে চলে আসবে আশ্বিন। আমি সত্যিই অনেক সরি। আমার আপনাকে না জানিয়ে এমন করা ঠিক হয়নি। ”

অধরা কথাগুলো বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। আশ্বিন মুচকি হেসে অধরার চোখ মুছে দিয়ে,

— ” অধরা এখানে তোমার দোষ নেই। যা হওয়ার হয়েছে। আর আমি আছি তো, ভয় নেই।
হয়েছে অনেক কেঁদেছো। এখন চলো ঘুমাবে।
পড়া চোর পড়া ফাঁকি দিয়ে এসব করে বেরিয়েছে। কাল থেকে আমি নিজে তোমাকে পড়াবো। এখন চলো ঘুমাতে যাই। ”

কথাটা বলে আশ্বিন অধরাকে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে শুয়ে পড়ে। অধরা কিছুক্ষণ কান্না করায় কিছুক্ষণেই ঘুমিয়ে যায়। আশ্বিন তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে মনে মনে,

— ” পৃথিবীতে আমার আপন বলতে যখন শুধু দাদি ছিলো, তখন সহধর্মিণী হিসেবে আমার হাত ধরে আমার জীবনে এসেছিলে তুমি।

যদিও একটু অদ্ভুত,তবুও আমার হৃদয়ের হাজারো অনুভূতির মিশ্রণ তুমি।
জানি না এই অনুভূতির নামই কি ভালোবাসা? হয়তো কখনো ভালোবাসা পাইনি বলে জানি না।
শুধু জানি আমার তোমাকেই চাই।
আমার শূন্য হৃদয়ের পূর্ণতা হয়ে আমার তোমাকেই চাই।
আর, ভালোবাসার এই নতুন রূপে,
আমি_তোমার_গল্প_হবো। ”

আশ্বিন কথাগুলো ভাবতে ভাবতে হঠাত তার ফোন বেজে ওঠে। সে ফোনের দিকে এক নজর তাকিয়ে অধরাকে রেখে ফোন রিসিভ করে বারান্দায় চলে আসে।

🌻🌻

পরদিন সকালে আশ্বিন ঘুম থেকে উঠে দেখে রান্নাঘর থেকে শব্দ আসছে। সে একটু অবাক হয়ে ধীরে ধীরে রান্নাঘরে ঢুকে দেখে অধরা কোমরে ওড়না পেঁচিয়ে একমনে রান্না করছে।

— আশ্বিন অবাক হয়ে, ” এসব কি করছো অধরা? ”

— অধরা কাজে মন দিয়ে, ” দেখতেই তো পাচ্ছেন আমি রান্না করছি। ”

— ” কিন্তু তুমি কেনো রান্না করছো? খালা কোথায়? ”

— ” খালা আজ আসবেন না বলেছে। তাই আমি রান্না করছি। ভয় নেই, আমি ভালোই রান্না করতে পারি। ”

— আশ্বিন অধরার সামনে এসে, ” এসব কি? এতোগুলো খাবার কার জন্য রান্না করছো তুমি? ”

— অধরা আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে, ” এগুলো গরিব অসহায় বাচ্চাদের জন্য। আমি তাদের আজ দুপুরের খাবারের জন্য আসতে বলেছি।
এতে বাচ্চাগুলো যেমন খুশি হবে তেমন আকাশ বাবার জন্য তারা দোয়াও করবে। ”

অধরা কথাটা বলে একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে রান্নায় মনোযোগ দেয়। আশ্বিন কিছুক্ষণ মুগ্ধ চোখে অধরার দিকে তাকিয়ে পিছন থেকে অধরাকে জড়িয়ে ধরে।

—চলবে❤