আমি তোমার গল্প হবো পর্ব-২২

0
793

#আমি_তোমার_গল্প_হবো🍁
লেখিকা- মাহিয়া তাহসীন মেরিন
পর্ব:::২২

আশ্বিন মিটিং শেষ করে ঘন্টা দুয়েক পর ফিরে এসে দেখে অধরা রেডি না হয়ে দাদির সাথে বসে আছে।

— আশ্বিন তাদের কাছে গিয়ে, ” কি ব্যাপার?
তোমাদের না বলে গেলাম আমি মিটিং থেকে এসেই একসাথে ঘুরতে বের হবো। তাহলে তোমরা এখনও রেডি হওনি কেনো? ”

— অধরা গাল ফুলিয়ে, ” আশ্বিন দেখুন দাদি আমাদের সাথে যেতে চাইছে না। আমি দাদিকে রেখে কোথাও যাবো না। ”

— অধরার কথা শুনে আশ্বিন দাদির পাশে বসে, ” কি হয়েছে দাদি? তোমার শরীর খারাপ লাগছে?
আমি ডাক্তার ডেকে আনছি…। ”

কথাটা বলেই আশ্বিন উঠে যেতে নিতেই দাদি আশ্বিনের হাত ধরে ফেলে,

— ” আরে আরে…আমি একদম ঠিক আছি। এতো হাইপার হয়ে যাচ্ছিস কেনো? ”

— অধরা গাল ফুলিয়ে, ” তাহলে কেনো যেতে চাইছো না আমাদের সাথে? ”

— দাদি অধরার গাল আলতো করে টেনে ধরে, ” পাগলী মেয়ে একটা!
কাল এতোটা সময় ধরে জার্নি করে এসেছি তো তাই একটু পায়ে ব্যাথা করছে। একটু রেস্ট নিলেই ঠিক হয়ে যাবে। ”

— আশ্বিন দাদির কথা শুনে, ” তোমার পায়ে ব্যথা করছে আমাদের আগে কেনো বললে না?
অধরা হালকা গরম তেল নিয়ে এসো, পায়ে মালিশ করলে ভালো লাগবে। ”

অধরা আশ্বিনের কথা শুনে মাথা নেড়ে চলে যায়। দাদি অধরার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে,

— ” দাদুভাই এসবের কোন দরকার নেই। আমি তো বললাম আমি ঠিক আছি। ”

আশ্বিন দাদির কথা শুনে দাদির দিকে তাকিয়ে চুপ করে থাকে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই অধরা একটা ছোট পাত্রে তেল নিয়ে আসে। আশ্বিনকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই অধরা তার দিকে তাকিয়ে,

— ” আশ্বিন আপনি রুমে চলে যান। আমি আছি দাদির সাথে। ”

আশ্বিন একনজর দাদির দিকে তাকিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যেতেই অধরা দাদির পায়ে তেল মালিশ করতে শুরু করে। দাদি মুচকি হেসে অধরার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।

🌻বিকেলে🌻

অধরা আর আশ্বিন একসাথে ঘুরতে বের হয়। মুলত দাদির জোরাজুরিতেই তারা রাজি হয়েছে।
আশ্বিন আসার আগে কয়েকজন গার্ডকে দাদির রুমের সামনে কড়া পাহারা দিতে বলে আসে।

অধরার বাহিরে আসার পর থেকেই মুখে একটা মিষ্টি হাসি লেগে আছে। আশ্বিন মুগ্ধ নয়নে অধরার দিকে তাকিয়ে আছে।
অধরা শক্ত করে আশ্বিনের হাত ধরে রেখে পাশাপাশি হাঁটছে। আশেপাশে অনেক মানুষ তাদের প্রিয়জনদের নিয়ে ঘুরতে এসেছে।

অধরা আর আশ্বিন একসাথে অনেকগুলো ছবি তোলে।
হঠাত আশ্বিনের জরুরি কল আসায় সে অধরাকে হোটেলে নামিয়ে দিয়ে দ্রুত চলে যায়।

অধরা হোটেল রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে বরান্দায় বসে রাতের শহরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে থাকে।

🌻এদিকে…..

আশ্বিন নিদিষ্ট ঠিকানায় এসে গাড়ি থামিতেই দুজন গার্ড তার সামনে আসে।

— আশ্বিন তাদের উদ্দেশ্যে, ” তোমরা কি শিওর নানাভাই এখানে থাকতে পারে? ”

— ” স্যার, মিস্টার আহমেদের পুরনো ডিটেইলস অনুসারে এই বাগানবাড়িতে তিনি প্রায়ই সময় কাটাতে আসতেন। হয়তো উনি এখানেই থাকতে পারেন। ”

— ” ঠিক আছে। চলো খোঁজ নিয়ে দেখি। ”

আশ্বিন কথাটা বলে বাগানবাড়ির দিকে এগিয়ে গিয়ে দেখে বাড়িটা অনেক পুরনো, হয়তো অনেকদিন এখানে কেউ আসেনি।
আশ্বিন তবুও বাড়িতে অনেকবার নক করে, কিন্তু কেউ নেই।

হঠাত পাশের বাড়ি থেকে একজন বয়স্ক লোক তাদের সামনে এসে,

— ” তোমরা কাকে চাও বাবা? এখানে কি করছো? ”

— আশ্বিন উনার কাছে গিয়ে, ” দাদু, এটা কি মিস্টার আহমেদের বাড়ি? তিনি কি এখানে থাকেন? ”

— ” হ্যা। এটা আহমেদের বাড়ি। কিন্তু তুমি কে? তোমাকে তো ঠিক চিনতে পারলাম না। ”

— ” আমি আশ্বিন, আশ্বিন চৌধুরী। আহমেদ খান আমার নানাভাই। ”

— ” ওহ, আশ্বিন? তোমার কথা আহমেদের কাছে অনেক শুনেছিলাম। তখন তুমি অনেক ছোট ছিলে। ”

— আশ্বিন খুশি হয়ে, ” নানাভাই কি এখানে থাকেন? উনি কোথায় আছে কিছু জানেন আপনি? ”

হঠাত প্রশ্নটা করায় লোকটা চুপ হয়ে যায়। তারপর আশেপাশে একবার তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,

— ” বাসায় এসো। তোমার সাথে কথা আছে। ”

কথাটা বলে লোকটা বাসার ভেতর ঢুকে পড়ে। আশ্বিন কিছু একটা ভেবে লোকটার পিছু পিছু প্রবেশ করে।

🌻🌻

অনেক রাত হয়ে যাওয়ার পরও আশ্বিন ফিরে না আসায় অধরার অনেকটা টেনশনে পড়ে যায়। দাদিকে কিছু একটা বুঝিয়ে খাবার খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে রুমে এসে বসে থাকে। কিন্তু আশ্বিনের ফিরে আসার কোন নাম নেই।

অধরা আশ্বিনের ফোনে একের পর এক ফোন করে যাচ্ছে কিন্তু আশ্বিন ফোন রিসিভ করে না। অধরার হঠাত ভয় লাগতে শুরু করে।

— ” আশ্বিন কোথায় আছেন আপনি? আমি এখন কোথায় খুঁজবো আপনাকে?
গার্ডদের সাহায্য নিয়ে দেখি…। ”

কথাটা বলেই অধরা দরজার কাছে আসতেই দেখে আশ্বিন হোটেলে প্রবেশ করছে। অধরা ভ্রু কুঁচকে আশ্বিনের দিকে তাকাতেই আশ্বিন অধরার দিকে মুখটা কালো করে তাকিয়ে রুমে চলে আসে। অধরাও তার পিছু আসে।

— ” আশ্বিন, কি হয়েছে? এতোক্ষণ কোথায় ছিলেন আপনি? জানেন আমি কতো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। আপনি এভাবে চলে গেলেন। ”

অধরার এতো কথার উত্তর না দিয়ে আশ্বিন চুপচাপ ফ্রেশ হতে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর বের হয়ে এসে বারান্দায় এসে বসে।

অধরা এতোক্ষণ আশ্বিনের কাজগুলো দেখছিলো। সেও আশ্বিনের পিছু পিছু বারান্দায় বসে শান্ত কণ্ঠে,

— ” আশ্বিন, কি হয়েছে? ”

— আশ্বিন অধরার দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে, ” অধরা, আমি তোমাকে একটা মিথ্যা বলেছিলাম।
আমি ইতালি মূলত নানাভাইকে খুঁজতে এসেছি। ”

— অধরা শান্ত ভাবে তাকিয়ে, ” আমি জানি। আমার আগেই সন্দেহ হয়েছিলো।
আপনি কি এখন নানাভাইকে খুঁজতেই গিয়েছিলেন? ”

অধরার কথা শুনে আশ্বিন মাথা নেড়ে হ্যা বোঝায়।

— ” কোন খবর পেয়েছেন নানাভাইয়ের? ”

অধরার কথা শুনে আশ্বিন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাথা নেড়ে হ্যা বোঝায়।

🌻ফ্ল্যাশব্যাক🌻

আশ্বিন লোকটার পিছু পিছু তার বসার রুমে আসে।

— লোকটা সোফায় বসে, ” এখানে বসো। ”

— আশ্বিন চুপচাপ বসে চারদিকে একবার চোখ বুলিয়ে, ” আপনি কি বাসায় একা থাকেন? না মানে, আর কাউকে দেখছি না। ”

— ” আছে। আমার ছেলে তার স্ত্রী সন্তান নিয়ে একটু আগেই ঘুরতে বেরিয়েছে। ”

— ” ওহ আচ্ছা। ”

— ” হুম।
আমার নাম কামাল। আহমেদ আমার বন্ধু। ইতালিতে আসার প্রথম দিকে আমরা একসাথে বিজনেস করি। তখন থেকেই আমাদের পরিচয়।
তোমার নানাভাই খুব ভালো একজন মানুষ। তোমার বাবার আর তোমার কথা প্রায়ই আমাদের বলতেন।

কয়েকবছর আগেই হঠাত গভীর রাতে আমাদের বাসায় এসেছিলো। কেমন যেন অদ্ভুত লাগছিলো আমার কাছে বিষয়টা। অনেক বার জানতে চাওয়ায় শুধু বলেছিলো

“আকাশকে তারা মেরে ফেলেছে, আমাকেও মেরে ফেলতে চাইছে। আমি অনেক কষ্টে পালিয়ে এসেছি।”

সেদিন রাতে আমাদের সাথে কথা বলে নিজের বাড়িতে চলে যায়। আর পরদিন সকালে একটা গাড়িতে করে কয়েকজন লোক এসে আহমেদকে খুঁজতে শুরু করে। কিন্তু আহমেদ সেখানে ছিলো না, হয়তো আগেই চলে গিয়েছিলো।
তারা আহমেদকে না পেয়ে আমাদের অনেকবার জিজ্ঞেস করেছিলো সে কোথায় আছে। বলতে না পারায় আমাদের বাসায় অনেক ভাঙচুরও করে। ”

— আশ্বিন সবটা শুনে, ” নানাভাই কোথায় গিয়েছিলো কিছু জানেন?
তিনি কি কিছু বলে গিয়েছেন আপনাকে? ”

— ” তেমন কোন কথা সেদিন আমাদের হয়নি। আকাশকে কে মেরেছে, কার ভয়ে আহমেদ পালিয়ে বেড়াচ্ছে এসব জানি না।

তবে আহমেদ বারবার একটা ঠিকানা বলেছিলো। আমি শিওর না তবে, হয়তো সে এই ঠিকানায় থাকতে পারে। ”

— আশ্বিন শান্ত কণ্ঠে, ” কোথায়…? ”

লোকটা উঠে গিয়ে তার রুমে যেয়ে একটা ডাইরি নিয়ে এসে আশ্বিনের সামনে ধরে। আশ্বিন ডায়রির দিকে একনজর তাকিয়ে লোকটার দিকে ফিরে তাকায়।

— ” অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। ইনশাল্লাহ এবার নানাভাইকে আমি খুঁজে পাবো। ”

কথাটা বলেই আশ্বিন বেরিয়ে পড়ে।

🌻বর্তমান🌻

— অধরা সবটা শুনে, ” তাহলে তো আমাদের নানাভাইয়ের খোঁজে এখনি যাওয়া উচিত। আর দেরি করা ঠিক হবে না আশ্বিন।
বাই দ্য ওয়ে, কোথায় আছেন নানাভাই? ”

অধরার কথা শুনে আশ্বিন তার দিকে ফিরে তাকায়।

—চলবে❤