আমি তোমার গল্প হবো পর্ব-২১

0
566

#আমি_তোমার_গল্প_হবো🍁
লেখিকা- মাহিয়া তাহসীন মেরিন
পর্ব:::২১

দেখতে দেখতে প্রায় একমাস পার হয়ে যায়। অধরার আজ শেষ পরীক্ষা।
আশ্বিন অধরাকে কলেজে পৌঁছে দিয়ে দ্রুত অফিসে চলে আসে।
কিছুক্ষণ পর ফাহাদ আর জনি তার রুমে এসে,

— ” স্যার, আমরা আপনার ডিটেইলস অনুসারে উনাকে অনেক খুঁজেছি বাট আমরা কোথাও উনাকে খুঁজে পাইনি।
আমার মনে হয় আপনার মা আমাদের মিথ্যে কথা বলেছে। ”

— আশ্বিন চেয়ারে হেলান দিয়ে, ” যদি কথাটা মিথ্যাও হয় তাহলেও নানাভাই এখন কোথায় আছেন? উনি তো আর এভাবে নিখোঁজ হয়ে যাবেন না। ”

— জনি কিছু একটা ভেবে, ” আমার মনে হয় আপনার নানাভাই এখানে নেই। আমরা এতোদিন ধরে যেটা জেনে এসেছি মানে, আপনার নানাভাই ইতালি আছেন।
আমার মনে হয় সেখানে একবার চেক করা দরকার। হয়তো এতোদিন ধরে আমরা বিনা কারণে পরিশ্রম করে এসেছি। হয়তো আপনার মা নিজের ভুল ঢাকতে এই মিথ্যা কথাটা বলেছে। ”

— আশ্বিন কিছুক্ষণ ভেবে, ” আমারও মনে হয় তুমি ঠিক বলছো জনি। আমাদের উচিত সেখানে একবার খোঁজ নেওয়া। তবে আমি চাই বিষয়টা যেনো গোপন থাকুক। ”

— ” ডোন্ট ওয়ারি স্যার। আমরা বিষয়টা হেন্ডেল করছি। ”

ফাহাদের কথা শুনে আশ্বিন মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়।

🌻🌻

অধরা পরীক্ষা দিয়ে বাসায় এসেই দাদির রুমে চলে আসে।

— দাদি মুচকি হেসে, ” ছোট্ট বুড়ি চলে এসেছিস? পরীক্ষা কেমন হয়েছে? ”

— ” পরীক্ষা আলহামদুলিল্লাহ ভালোই হয়েছে দাদি। কিন্তু আমার মন ভালো নেই। ”

— ” কেনো? তোর আবার কি হলো? ”

— ” কতোদিন হয়ে গেলো আমি কোথাও ঘুরতে যাই না।
এই চার দেয়ালের মাঝেই আমার জীবন সীমাবদ্ধ। এই কষ্ট চোখে দেখা যায় নাকি? ”

— দাদি মুচকি হেসে, ” তাহলে আশ্বিনকে বলে কিছুদিন নাহয় ঘুরে আয়। ”

— ” হুম বলতেই হবে। আমি আজই বাসায় চলে যাবো। ”

তখনি রুমে আশ্বিন প্রবেশ করে,

— ” না, বাসায় যেতে পারবে না তুমি। ”

আশ্বিনের কথা শুনে অধরা আর দাদি আশ্বিনের দিকে ফিরে তাকায়।

— অধরা মুখ ফুলিয়ে, ” কেনো যেতে পারবো না আমি? ”

— ” কারণ কাল আমরা তিনজন ইতালি যাচ্ছি। ”

হঠাত আশ্বিনের কথাটা শুনে অধরা আর দাদি হা হয়ে যায়। দুজন চোখ বড় বড় করে একে অপরের দিকে তাকায়।

— অধরা অবাক হয়ে, ” কিহহ? হঠাত ইতালি যাচ্ছি কেনো? ”

— আশ্বিন স্বাভাবিক কণ্ঠে, ” বিজনেসের কাজে আর সাথে ঘুরতে যাচ্ছি।
কেনো? তুমি যেতে না চাইলে থাকতে পারো, আমি আর দাদি চলে যাবো। ”

— অধরা খুশিতে এক লাফ দিয়ে উঠে, ” আমি এখনি যাচ্ছি, ব্যাগটা গুছিয়ে ফেলি। ”

কথাটা বলেই অধরা দৌড়ে রুমে চলে আসে। দাদি অধরার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে,

— ” কি ব্যাপার আশ্বিন? হঠাত আজ ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান করলি…। ”

— আশ্বিন মুচকি হেসে, ” আরে তেমন কোন কারণ নেই। অনেক দিন হয়ে গেলো একসাথে ঘুরতে যাই না। আজ হঠাত বিজনেসের কাজে ইতালি একটা মিটিং ডাকায় ভাবলাম তোমাদেরকেও সাথে নিয়ে যাই। ”

— ” খুব ভালো করেছিস। কিন্তু আমাকে নেওয়ার দরকার নেই। তুই বরং অধরাকে নিয়ে ঘুরে আয়।
আমি নাহয় ততোদিন ভাইয়ের বাসায় ঘুরে আসি। ”

— ” না দাদি। এটা কেমন কথা? তোমার কি মনে হয়? আমি তোমাকে একা রেখে নিশ্চিন্তে থাকতে পারবো? ”

— ” আরে আমি ঠিক আছি…। ”

— আশ্বিন রাগ দেখিয়ে, ” নাহহ। আমি কোন কথা শুনতে চাই না। তুমিও আমাদের সাথে যাচ্ছো। আমি কোন রিক্স নিতে চাই না। ”

— দাদি মুচকি হেসে, ” আচ্ছা বাবা ঠিক আছে। আমিও যাবো তোদের সাথে। ”

আশ্বিন দাদির কথা শুনে মুচকি হেসে মনে মনে, ” সরি দাদি। তোমার উপর রাগ করার জন্য। আমি চাই না তোমাদের এখানে একা রেখে যেতে, যদি শাহিন তোমাদের ক্ষতি করে দেয়…। ”

কথাটা ভেবে আশ্বিন নিজের রুমে প্রবেশ করে দেখে অধরা নাচতে নাচতে ব্যাগ গুছিয়ে রাখছে। অধরার অবস্থা দেখে আশ্বিন মুচকি হেসে,

— ” এতো খুশি খুশি লাগছে কেনো…? ”

— অধরা একনজর তাকিয়ে, ” খুশি হবো না? আমরা ইতালি যাচ্ছি…।
অনেক ঘুরবো, শপিং করবো। কতো মজা হবে। ”

অধরার কথা শুনে আশ্বিন মুচকি হেসে খাটে হেলান দিয়ে শুয়ে পড়ে। এদিকে অধরা ব্যাগ গোছাতে গোছাতে বকবক করেই যাচ্ছে। আর আশ্বিন ঘোর লাগা দৃষ্টিতে অধরার দিকে তাকিয়ে আছে।

🌻পরদিন🌻

আশ্বিন অধরা আর দাদি একসাথে এয়ারপোর্টে বসে আছে, কিছুক্ষণ পর তাদের ফ্লাইট। অধরা আর দাদি খুশি মনে একসাথে গল্প করছে আর আশ্বিন একটু দূরে দাঁড়িয়ে ফাহাদকে কল দিয়ে,

— ” ফাহাদ, সব ঠিকঠাক আছে তো? ”

— ” জি স্যার। আমরা সবকিছু চেক করে রেখেছি। আপনার নানাভাই যে বাসায় থাকতো এবং উনার সকল আত্নীয়ের বাসার ঠিকানা আমি আপনাকে পাঠিয়ে দিচ্ছি। আর এখানেও বিষয়টা আমি আর জনি ভাই মিলে হ্যান্ডেল করছি। আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন। ”

— ” ঠিক আছে। আমি পৌঁছে আবার ফোন দিবো। ”

কথাটা বলে আশ্বিন ফোন রেখে দেয়। তারপর অধরা আর দাদিকে নিয়ে ফ্লাইটে এসে বসে। অধরার খুশি তার চোখ মুখে ফুটে উঠেছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাদের ফ্লাইট টেক অফ করে। অধরা অনেকক্ষণ ধরে দাদির সাথে গল্প করতে করতে এক পর্যায়ে দুজনেই ঘুমিয়ে পড়ে। আশ্বিন তাদের পাশে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে।

🌻🌻

এয়ারপোর্ট থেকে বের হতেই কয়েকজন গার্ড আশ্বিনের কাছে এসে তাদের একটা বড় গাড়িতে করে হোটেলে নিয়ে আসে।
অধরা কোনরকম হোটেল রুমে প্রবেশ করেই ধপ করে খাটে শুয়ে মূহুর্তেই ঘুমিয়ে পড়ে।

আশ্বিন গার্ডদের সাথে কথা বলে দাদিকে পাশের রুমে দিয়ে এসে নিজের রুমে প্রবেশ করে দেখে অধরা গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে।

— ” এতো ঘুম কোথা থেকে আসে তার? দেখো এখনো চেঞ্জও করেনি, এভাবেই ঘুমিয়ে পড়েছে…। ”

আশ্বিন অধরার কাছে গিয়ে একটা কম্বল দিয়ে দেয়। তারপর ফোন হাতে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে পড়ে।

জনির পাঠানো ঠিকানা অনুযায়ী আশ্বিন তার নানাভাইয়ের বাসার সামনে এসে দেখে দরজায় তালা দেওয়া। সে পাশের বাড়িতে কাউকে ডেকে…

— আশ্বিন ইংরেজিতে জিজ্ঞেস করে, ” হ্যালো। আচ্ছা, আপনি কি বলতে পারবেন এখানে মিস্টার আহমেদ নামের একজন থাকতেন। তিনি এখন কোথায় আছেন? ”

— ” মিস্টার আহমেদ তো এখানেই থাকতেন। কিন্তু বেশ কয়েক বছর ধরেই উনাকে এখানে দেখি না। হয়তো উনি দেশে ফিরে গিয়েছেন। আমি উনার সম্পর্কে তেমন কিছু জানি না। ”

— আশ্বিন কিছুক্ষণ চুপ থেকে, ” আচ্ছা ঠিক আছে। ধন্যবাদ আপনাকে। ”

আশ্বিন আশেপাশের অনেককেই নানাভাইয়ের কথা জিজ্ঞেস করে। কিন্তু কোন লাভ হয় না। অবশেষে বিফল হয়ে হোটেলে ফিরে আসে।

— আশ্বিন বারান্দায় বসে বাহিরে তাকিয়ে, ” নানাভাইকে তো কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না। আমার এখন কি করা উচিত? নানাভাই হয়তো বলতে পারবেন আমার বাবার খুনের আসল অপরাধী কারা।
আই নিড ইউ নানাভাই। কোথায় আছো তুমি? ”

কথাটা বলে চোখ বন্ধ করে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে থাকে।

🌻সকালে🌻

আশ্বিন রেডি হচ্ছে মিটিং-এর জন্য। অধরা তার পাশে সোফায় বসে নাস্তা করছে আর আড়চোখে আশ্বিনকে দেখছে।

— অধরা আফসোস করে, ” ভেবেছিলাম সকালে একসাথে নাস্তা করবো বাহিরে গিয়ে। কি দরকার ছিল এতো সকাল সকাল মিটিং রাখার? ”

— আশ্বিন রেডি হতে হতে, ” মিটিংটা অনেক ইমপরটেন্ট অধরা। তুমি আর দাদি রেডি হয়ে থাকো। আমি মিটিং শেষ করেই তোমাদের ঘুরতে নিয়ে যাবো। ”

অধরা আশ্বিনের কথা শুনে গাল ফুলিয়ে বসে খেতে শুরু করে। তা দেখে আশ্বিন মুচকি হেসে অধরার সামনে হাটু গেড়ে বসে,

— ” এভাবে রাগ করে থাকলে তো আমি মিটিয়ে গিয়ে মনোযোগ দিতে পারবো না। আফটার অল একটা মাত্র পিচ্চি বউ আমার। ”

অধরা কথাটা শুনে অন্যদিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দেয়। তা দেখে আশ্বিনও মুচকি হেসে অধরার কপালে চুমু খেয়ে রুম থেকে বেরিয়ে পড়ে।

অধরা আশ্বিনের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দাদির রুমে চলে আসে।

—চলবে❤