আমি তোমার গল্প হবো পর্ব-২৫

0
556

#আমি_তোমার_গল্প_হবো🍁
লেখিকা- মাহিয়া তাহসীন মেরিন
পর্ব:::২৫

আশ্বিন অধরাকে নিয়ে একটা রিসোর্টে আসে। অধরার চোখ বন্ধ থাকায় সে চুপচাপ গাড়িতে বসে আছে। আশ্বিন অধরার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে তার হাত ধরে গাড়ি থেকে নামিয়ে হাঁটতে শুরু করে।

— ” আশ্বিন, কোথায় যাচ্ছি আমরা? ”

— আশ্বিন সামনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে, ” এখনি দেখতে পারবে। ”

আশ্বিন কথাটা বলেই অধরার চোখ থেকে রুমাল খুলে ফেলে। অধরা চোখ পিটপিট করে সামনে তাকিয়ে হা হয়ে যায়।

পুরো রিসোর্ট সুন্দর করে ডেকরেসন করা হয়েছে একদম অধরার মনের মতো করে। সে অবাক হয়ে আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে দেখে আশ্বিন মুচকি হেসে তার দিকে তাকিয়ে আছে।

— অধরা অবাক হয়ে, ” এসব….!
আপনি কিভাবে জানলেন, এসব আমার ড্রিম ছিল। ”

আশ্বিন মুচকি হেসে অধরার হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে,

— ” তুমি কি ভেবেছিলে? শুধুমাত্র তুমিই জনিকে দিয়ে আমার সম্পর্কে সব ইনফরমেশন কালেক্ট করেছো? আমি কিছু করিনি..? ”

অধরা কথাটা শুনে অবাক হয়ে চোখ বড় বড় করে আশ্বিনের দিকে ফিরে তাকায়। আশ্বিন অধরার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি দেয়।

—————-

আশ্বিন অধরার হাত ধরে বসে আছে। আশেপাশে কেউ নেই। নিরিবিলি পরিবেশে রাতের প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করছে তারা। অধরা মুহূর্তটা খুব বেশি উপভোগ করছে।

— ” আচ্ছা, হঠাত করেই আমরা এখানে ঘুরতে আসলাম কেনো? ”

— আশ্বিন ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে, ” কেনো মানে?
এই প্রথম ইতালিতে এসেছি নিজের বউকে নিয়ে। তো ঘুরবো না? ”

— ” কিন্তু আশ্বিন, আমরা তো এখানে নানাভাইকে…। ”

— আশ্বিন অধরাকে থামিয়ে দিয়ে, ” উফ অধরা। এসব কথা এখন বাদ। কিছুটা সময় এসব চিন্তা থেকে দূরে থাকতে চাই।

আর নানাভাইকে তো আমরা খুঁজে পেয়েছি। তাই এখন এসব কথা বলবে না, বুঝেছো? ”

— অধরা ড্যাবড্যাব করে আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে, ” হুম ঠিক আছে। ”

অধরাকে এভাবে তাকাতে দেখে আশ্বিন ফিক করে হেসে ওঠে। তারপর দুহাত দিয়ে অধরাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে, চোখ বন্ধ করে অধরার গালে নাক ঘষে ঘোর লাগা কণ্ঠে,

— ” অধরা, চলো কোন একদিন দুজন মিলে দূর কোথাও ঘুরে আসি।

তুমি সেদিন লাল শাড়ি, লাল চুরি আর কপালে ছোট্ট লাল টিপ পড়ে আমার কাছে আসবে।
আমি তখন মুচকি হেসে তোমার জন্য লুকিয়ে রাখা সেই বেলী ফুলের গাজরা তোমার খোঁপায় বেঁধে দিবো।
তারপর তোমার হাত ধরে একসাথে হেঁটে যাবো।

আমাদের গন্তব্য হবে এমন, যেখানে লোকসংখ্যা হবে ক্ষীণ।
যেখানে থাকবে না কেউ আমাদের কষ্ট দিতে।
থাকবে না কোন সমালোচনার ঢেউ, কেউ আর বলবে না আমায় একা। কারণ তুমি থাকবে আমার সাথে।

আমরা দুজন মিলে সাজাবো আমাদের গল্প। আশ্বিন আর অধরার গল্প। ”

আশ্বিন কথাগুলো বলে কিছুক্ষণ চুপ থেকে ধীরে ধীরে চোখ খুলে দেখে অধরাও চোখ বন্ধ করে তার কথাগুলো শুনছে। সে মুচকি হেসে অধরার কপালে আলতো করে চুমু খেয়ে দূরে সরে আসে। পরক্ষণে অধরা চোখ মেলে একনজর আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নেয়।

— আশ্বিন আশেপাশে তাকিয়ে, ” জায়গাটা খুব সুন্দর। তাই না? ”

— অধরা হালকা হেসে, ” হুম খুব সুন্দর।

আপনাকে আজ খুব খুশি খুশি লাগছে। ”

— আশ্বিন আড়চোখে অধরার দিকে তাকিয়ে দুষ্টু হেসে, ” খুশি তো হবোই। আমার কিউট মায়াবী পিচ্চি বউটাকে সাথে নিয়ে এতো সুন্দর একটা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করছি। সেই সাথে রোমান্টিক একটা ভাব। ”

অধরা আশ্বিনের কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে একবার আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে আবার অন্যদিকে ফিরে একটা লাজুক হাসি দেয়। আশ্বিনের বলা কথায় ইতোমধ্যে তার গালে রক্তিম আভা ফুটে উঠেছে।

— আশ্বিন অধরার কান্ড দেখে একটা মুচকি হাসি দিয়ে, ” চলো। ”

— অধরা অবাক হয়ে, ” কোথায়? ”

অধরার প্রশ্নের কোন উত্তর না দিয়ে আশ্বিন অধরার হাত ধরে একটা ছাউনিতে নিয়ে আসে। ছাউনিটা পুরো ক্যান্ডেল আর ফুল দিয়ে সুন্দর করে সাজানো আর মাঝখানে একটা টেবিল।
অধরা অবাক হয়ে সব দেখছে। আশ্বিন অধরাকে একটা চেয়ারে বসিয়ে একটা প্লেট এনে,

— ” তোমার ফেভারিট নুডলস। আমি নিজে রান্না করছি, যদিও ভালো রান্না পারি না। তবুও আশা করি এতোটাও বাজে হবে না। ”

আশ্বিনের কথায় অধরা শক খেয়ে বোকার মত তার দিকে তাকিয়ে আছে। পরক্ষণে নিজেকে সামলে নিয়ে নুডলস মুখে নিয়ে,

— ” নুডলসটা খুব মজা হয়েছে আশ্বিন। আর এই ডেকরেসন জাস্ট ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। আমার খুব পছন্দ হয়েছে।
আপনাকে অনেক অনেক অনেক ধন্যবাদ। ”

অধরার কথা শুনে আশ্বিন মুচকি হাসি দেয়। অধরাও মুচকি হেসে আশ্বিনের দিকে তাকায়।

🌻দুদিন পর🌻

শাহিন তার লোকদের সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ঝামেলা করছে তখন সাহিল রুমে এসে,

— ” কি হয়েছে ড্যাড? এতো হাইপার হচ্ছো কেনো? ”

— শাহিন চেয়ারে বসে, ” সবগুলো ডাফরকে রেখেছি আমার কাছে। এতোদিন হয়ে গেলো আশ্বিন ইতালিতে আছে। অথচ তার খবর আমি সেদিন জানতে পারলাম। আর এখন তারা কি করছে, কার সাথে মিটিং করছে কোন তথ্যই আমি জানতে পারছি না। ”

— ” ড্যাড, তোমার কি মনে হয় আশ্বিন সেখানে কেনো যেতে পারে? ”

— শাহিন শান্ত হয়ে বসে, ” জানি না আমি। নিশ্চয়ই তারা গোপন কোন কান্ড করছে। কিন্তু আমাকে তো সবটা জানতেই হবে। ”

— ” তুমি চিন্তা করো না ড্যাড। আমি দেখছি বিষয়টা। ”

সাহিল কথাটা বলে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। শাহিন মাথায় হাত রেখে চোখ বন্ধ করে বসে থাকে।

🌻🌻

সকাল থেকেই অধরা, দাদি আর আশ্বিন ফিরে যাওয়ার জন্য গোছগাছ করছে। অধরা দাদীর সাথে গল্প করছে। আর আশ্বিন নানাভাইকে নিয়ে বাইরে এসে।

— ” নানাভাই, তোমাকে আর সেই গ্রামে ফিরে যেতে হবে না। এখানে আমি একটা বাসা নিয়েছি, তুমি সেখানেই থাকবে।
আমার গার্ডরা চব্বিশ ঘণ্টাই তোমাকে দেখে রাখবে, ভয় নেই।
একটা নম্বর দিচ্ছি তোমাকে, এই নম্বরেই আমাকে কল দিবে। আর তোমার কোন প্রয়োজন হলে আমাকে অবশ্যই বলবে। অহেতু বাহিরে যাবে না। বুঝতে পেরেছো? ”

— ” হুমমম বুঝতে পেরেছি। একদমে এতো কথা বলে ফেলেছে। আমাকে নিয়ে এতো ভাবিস না। আমি ঠিক থাকবো।
আমি দুদিনে তোকে যা যা বললাম, সেই অনুযায়ী কাজ করে যাবি। আর দরকার হলেই আমাকে কল দিবি। ”

— ” ঠিক আছে। নিজের খেয়াল রেখো। ”

আশ্বিন কথাটা বলে নানাভাইকে জড়িয়ে ধরে বিদায় নিয়ে অধরা আর দাদিকে নিয়ে চলে আসে।

🌻🌻

আশ্বিন অফিসে আসতেই দেখে অর্ণব বসে আছে।

— অর্ণব আশ্বিনকে দেখে মুচকি হেসে, ” কি খবর আশ্বিন? এতোদিন পর তাহলে ফিরলে। তো বল, কি খবর? নানাভাইকে খুঁজে পেয়েছিস? ”

আশ্বিন চেয়ারে বসে মুচকি হেসে অর্ণবকে সবকিছু খুলে বলে। অর্ণব সবটা শোনার পর,

— ” এখন নানাভাই তোকে কি করতে বলেছেন? ”

— ” আমাকে শাহিনের বিজনেসের কিছু দুর্বলতা দেখিয়েছে। বলেছে এভাবে কাজ করলে আমি সহজেই শাহিনকে টেক অভার করতে পারবো। ”

— ” তাহলে তো খুবই ভালো হয়েছে। নানাভাই অভিজ্ঞতা সম্পন্ন, উনার উপদেশ মতো চললে ইনশাল্লাহ আমরা লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবো। ”

— ” হুম ইনশাল্লাহ। আর একটা খবর আছে। ইতালিতে বিজনেস ডিলটাও আমরা পেয়ে গিয়েছি। ”

— ” গ্রেইট। যাক ইতালি যাওয়াটা তাহলে স্বার্থক হয়েছে।
ওহ, আমি তো তোকে বলতেই ভুলে গিয়েছিলাম। মিস্টার জামাল শেখের ছোট মেয়ের জন্মদিন উপলক্ষে সকলকে কাল রাতে ডিনারে ইনভাইট করেছে। তোর কার্ডটাও আমার কাছেই দিয়েছে।

আশ্বিন এটাই সুযোগ জামাল শেখের সাথে বিজনেস পার্টনার করা। এটা কিন্তু আমাদের প্লাস পয়েন্ট হবে। ”

— ” তুই ঠিক বলেছিস অর্ণব। এখন ছোট ছোট সুযোগও আমাদের কাজে লাগবে।
বাই দ্য ওয়ে, তোকে অনেক ধন্যবাদ। এভাবে আমার হেল্প করার জন্য। ”

অর্ণব আশ্বিনের কথা শুনে মুচকি হেসে আশ্বিনের কাধে হাত রাখে। আশ্বিন মুচকি হেসে গভীর ভাবে চিন্তা ভাবনা করতে শুরু করে।

—চলবে❤