আমি ফাইসা গেছি পর্ব-১৬+১৭

0
163

#আমি_ফাইসা_গেছি(১৬)
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

সামান্য তুই করে বলাতে তোড়া রাগে আর অভিমানে কুশানের সাথে কথা বলাই ছেড়ে দিলো।রাতে রাগ করে খাওয়াদাওয়াও করলো না তোড়া।তোড়াকে খাবার টেবিলে বসতে না দেখে কুশান জিজ্ঞেস করলো কেনো সে খাচ্ছে না তাদের সাথে?
কুশানের প্রশ্নে তোড়া কোনো উত্তর দিলো না।
সবাই সেজন্য তোড়ার দিকে তাকালো,আর কেউ বা কুশানের দিকে।
সবার তাকানো দেখে তোড়া বললো,
আজ আমার শরীর টা ভালো নেই।সেজন্য খেতে ইচ্ছে করছে না।আপনারা খেয়ে নিন সবাই।

কুশান তোড়ার কথা শুনে বুঝতে পারলো তোড়া মিথ্যা কথা বলছে,তার মোটেও শরীর খারাপ নয়।সে এখনো তার উপর রাগ করে বসে আছে।কুশান মনে মনে ভাবতে লাগলো,তোড়া এবার একটু বেশি বাড়াবাড়ি করতেছে।সে তো সারাক্ষণ তাকে তুই তুই করে বলে,আর কত বাজে ব্যবহার করে তার সাথে, কই কুশান তো এমন রাগ করে থাকে না?উলটো তোড়ার রাগ ভাঙানোর চেষ্টা করে।আজ একটু না হয় ভুল করে তার মুখ থেকে তুই শব্দ টা বের হয়েছে।তাতেই তোড়াকে এমন রিয়্যাক্ট করতে হবে?
না আজ আর সে তার রাগ ভাঙাবে না?দেখি তোড়াই কতদিন এভাবে রাগ করে থাকতে পারে?

কুশান হঠাৎ নিজেও খাবার না খেয়েই উঠে গেলো।

কামিনী কুশানকে এভাবে ওঠা দেখে বললো,তোর আবার কি হলো বাবা?খাবার রেখেই উঠলি কেনো?
কুশান তখন তোড়ার দিকে তাকিয়ে বললো আম্মু আমাকে এখন একটু বাহিরে যেতে হবে।শাওন আর রিয়ান আমার জন্য অপেক্ষা করছে।এই বলেই কুশান চলে গেলো বাহিরে।

–এতো রাতে বাহিরে যাবি?বাবা যাস না।
কিন্তু কুশান শুনলো না তার মায়ের কথা।সে দ্রুত হেঁটে বাসা থেকে চলে গেলো।

কুশান বাসা থেকে চলে যাওয়ার পর পরই কামিনী তোড়ার দিকে রাগান্বিত চোখে তাকিয়ে বললো, আজ আবার কি আনতে বলেছো কুশানকে?যে এতো রাতে ওকে বাহিরে যেতে হচ্ছে?

কামিনীর কথা শুনে তোড়া অনেক বেশি আশ্চর্য হলো।সে অবাক হয়ে বললো, আমি?না তো?কিছুই আনতে বলি নি।আপনার ছেলে তো বললোই সে তার ফ্রেন্ড দের সাথে বাহিরে যাচ্ছে।
কামিনী তোড়ার কথা শুনে বললো, তুমি আমার থেকে কি ওকে বেশি চেনো?না আমি ওকে বেশি চিনি?এতো রাতে ওর কোন ফ্রেন্ড আসবে দেখা করতে?

কামিনীর কথা শুনে তোড়ার ভীষণ মেজাজ খারাপ হলো।কুশান কই গেলো না গেলো তার জন্য কামিনী তাকে বকছে কেনো?
তোড়াকে চুপচাপ থাকা দেখে কামিনী বললো,
তোমাকে আমি সংসারের সব দায়িত্ব দিয়েছি ঠিকই,তার সাথে কিন্তু আরেকটা কথা স্পষ্ট করে বলেছি যে আমার কুশানের যেনো ভালো করে যত্ন করো তুমি।তোমার তো দেখি আমার ছেলের দিকে কোনো খেয়ালই নাই।

তোড়া সেই কথা শুনে বললো, আমি কি অযত্ন করলাম আম্মু?

কামিনী সাথে সাথে তখন উচ্চস্বরে বললো,
কালও কুশান রাত ১২ টার দিকে বাহিরে গিয়েছিলো।কেনো পাঠিয়েছিলে তাকে বাহিরে?

–আমি তো ওনাকে যেতে বলি নি আম্মু।সে নিজের ইচ্ছাতেই গিয়েছে।

–হ্যাঁ যাবেই তো।তুমি যদি তার হাত ধরে রিকুয়েষ্ট করো এখনই আমার চকলেট চাই,এখনই আমার আইসক্রিম চাই, এখনই আমার এটা চাই,এখনই আমার সেটা চাই,তাহলে সে তো যাবেই বাহিরে।তুমি কই তাকে যেতে বারণ করবে উলটো নিজেই আবদার করে বসো।তাকে তো বোঝাতে হবে এতো রাতে বাসার বাহিরে যাওয়া ঠিক না।দিনের বেলায় খাওয়া যেতো না এসব আইসক্রিম, চকলেট?রাত বারোটার দিকেই কি খেতে হবে?

তোড়া কামিনীর মুখে এমন কথা শুনে ছলছল নয়নে কামিনীর দিকে তাকিয়ে রইলো।এই কোন মানুষ রে ভাই?সব ব্যাপারে যার কথা বলতেই হবে।ছেলে হয়েছে দেখে ওনারই শুধু দরদ আছে আর তার কোনো দরদ নাই।কুশানের সাথে খারাপ কিছু হলে তো সবার প্রথমে তারই ক্ষতি হবে।
তবে কুশানকে তোড়া একবারের জন্যও বলে নি তার এসব লাগবে।কুশান নিজের ইচ্ছাতেই গিয়েছিলো বাহিরে।সবার সামনে তোড়ার ফেভারিট খাবারদাবার কিছু কিনে আনতে পারে না দেখে সবাই ঘুমিয়ে গেলে কুশান বাহিরে যায়।কে জানতো তখনো এই সন্ন্যাসী টা জেগে ছিলো।কামিনী যে সবসময় তাদের দিকে নজর রাখে আজ দিয়ে তোড়া ক্লিয়ার ভাবে বুঝে গেলো।

তোড়া কামিনীর কথা শুনে কাঁদো কাঁদো গলায় বললো, আম্মু আমি আবারও বলছি আমি আপনার ছেলেকে কখনোই এসব কিছু আনতে বলি নি।সে নিজের ইচ্ছাতেই এনেছে।আমি নিজেও জানি না সে কখন বাহিরে গিয়েছিলো?আর আজ আবার কেনো গেলো সেটাও জানি না।

–থাক আর বলতে হবে না কিছু।আমার ছেলেকে আমি ভালো করেই জানি।সে আজ অব্দি দশটার পর বাড়ির বাহিরে থাকে নি।আর এখন সেই ছেলে রাত বারোটার পর চুপি চুপি বাসা থেকে বের হয়ে যায়।
তোড়া তখন কাঁদো কাঁদো গলায় বললো, আম্মু এসব কথা আমাকে বলছেন কেনো?সেটা আপনার ছেলেকেই জিজ্ঞেস করুন কেনো সে এতো রাতে বাহিরে যায়?

কামিনী তখন মুখ ভেংচিয়ে বললো, ও তুমি এখনো বুঝতে পারছো না আমি কি বলতে চাচ্ছি তোমাকে?আমার প্রশ্ন হলো সে কার ভয়ে এমন কাজ করে?আমাদের ভয়ে?আমরা যাতে কেউ না দেখি সেজন্য রাত করে বাসা থেকে বের হয়ে যায়?তোমার জন্য সে যদি কিছু এনেই থাকে তাহলে প্রকাশ্যে আনবে?এভাবে চোরের মতো গভীর রাতে লুকিয়ে লুকিয়ে কেনো আনতে যাবে?আমার ছেলে তো এমন নয়?এসব আইডিয়া ওর মাথায় আসলো কি করে?নিশ্চয় তুমি শিখিয়ে দিয়েছো?

ইরা সেই কথা শুনে বললো,আমি তো এখন উচিত কথা বললেই দোষ হয়ে যাবে।তারচেয়ে বরং আমি চুপই থাকি।বললে তো অনেক কথাই বলা যায়।
মিরা তখন বললো,সেটা আর বলিস না আপু,আয় দিয়ে দিয়ে আম্মু এমন ভাবে মাথায় তুলেছে যে নিজেকে একদম সংসারের রানী ভাবতেছে,যখন যা মন চাই তাই করতেছে।আর এমন ভাব নিয়ে থাকে মনে হয় ভাজা মাছ টা উল্টায়ে খেতে পারে না।
লিরা সেই কথা শুনে বললো,ভুল বললি আপু।ভাজা মাছ ঠিকই উল্টায়ে খেতে পারে।কিন্তু সে নিজেকে এমন চালাক ভাবে যে দুনিয়ার মধ্যে সেই শুধু চালাক আর আমরা বোকা।

ইরা,মিরা,লিরার কথা শুনে জারিফ চৌধুরী বললো,
তোরা কি এবার একটু চুপচাপ থাকবি?এসব আজাইরা কথা না বলে তাড়াতাড়ি খাবার খেয়ে রুমে চলে যা।কেনো যে এমন ভাবে মেয়েটার সাথে কথা বলে সত্যি আমার মাথাতেই খেলে না।
কুশান এতো রাতে কেনো বাহিরে যায় সেটাও কি এখন তোড়ার দোষ?

সোনিয়া আর সুমন কিন্তু ইতোমধ্যে তোড়ার বেস্ট ফ্রেন্ড হয়ে গেছে।কিন্তু বড়দের মাঝে কথা বলার সাহস যে তাদের নাই।সেজন্য তারা চুপচাপ থাকলো।তবে সুমনের কেনো জানি মনে হচ্ছে এটা খুব বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে তোড়ার সাথে।এরা কুশানের করা অপরাধের জন্যও তোড়াকে কেনো গালমন্দ করে এটা এখনো সুমন বুঝে উঠতে পারলো না।
তোড়াকে এমন অবস্থায় দেখে সুমন বললো,
ভাবি!বসো তো তুমি।আর খেয়ে নাও।রাতে না খেয়ে থাকা হয় না,একটু হলেও কিছু মুখে দিতে হয়।

সুমনের মুখে এরকম উপদেশমূলক কথা শুনে লুতফা রাগান্বিত হয়ে বললো, তোরে কে বড়দের মধ্যে কথা বলতে বলেছে?এতো বড় কবে হয়ে গেলি যে অন্যকে উপদেশ দেস।আর যেখানে তোর বড় আম্মু আর আর বড় আপুরা কথা বলছে সেখানে তুই কথা বললি কেনো?

সুমন তখন বললো কি বললাম আমি?আমি তো শুধু ভাবিকে খেতে বললাম রাতের খাবার।

তোড়া তখন সুমনকে বললো সুমন তুমি চুপ করে থাকো।কেনো এভাবে তর্ক করছো?আমি খাবো না কিছু এখন।এই বলে তোড়া তাড়াতাড়ি করে তার রুমে চলে গেলো।

তোড়াকে এভাবে চলে যাওয়া দেখে জারিফ চৌধুরী তার মেয়েদের উদ্দেশ্যে বললো, তোমরা কি জীবনেও ভালো হবে না?কেনো মেয়েটার সাথে এমন আজেবাজে কথা বলো?মেয়েটা তো তোমাদের একদম নিজের বোনের মতো মনে করে।কত সুন্দর করে সামলাচ্ছে সংসার টা?তোমরা মনে হয় অন্যের ভালো টা সহ্য করতে পারো না?নিজেরা সংসার করো না দেখে কি অন্যের সংসার করা দেখে তোমাদের হিংসা হচ্ছে?

ইরা তখন বললো, আব্বু তুমি আমাদের খোটা দিলে?

–হ্যাঁ দিলাম।কারণ তোমরা সংসারের কিছুই বোঝো না।তোড়া এই কয় দিনে কত সুন্দর করে সাজিয়েছে সংসার টা। তোমরা কি পারবে স্বামীর বাড়ি গিয়ে এভাবে নিজের একটা সংসার তৈরি করতে?

মিরা জারিফ চৌধুরীর কথা শুনে উঠে দাঁড়ালো আর বললো, তুমি আমাদের এ বাড়ি থেকে যেতে বলছো আব্বু?অন্যের মেয়ের পক্ষ নিয়ে নিজের মেয়েকে বের করে দিতে চাচ্ছো?

–আমি কাউকেই বের করে দিতে চাচ্ছি না।আমি শুধু বোঝাতে চাচ্ছি নিজেরা স্বামীর সংসার না করে এই বাড়িতে আছো,আর সেখানে তোড়া নিজের বাড়ি ছেড়ে এই বাড়িটাকে আপন করে নিয়েছে, কি সুন্দর করে সংসার করছে।আর তোমরা তার সাথে যা নয় তাই ব্যবহার করছো?আর তোমাদের যেনো এভাবে ওকে বকতে না দেখি?

ইরা,মিরা আর লিরা তাদের বাবার কথা শুনে চুপ করে রইলো।তারা আর একটা কথাও বলার সাহস পেলো না।তাড়াতাড়ি করে খাবার খেয়ে যে যার রুমে চলে গেলো।

কামিনী তখন বললো,আজকাল দেখি তুমি ভালোই শাসন করছো মেয়েদের।শুরুর থেকে এমন করলে আর কখনোই মেয়েরা এমন আচরণ করতো না?

জারিফ চৌধুরী তখন হাসতে হাসতে বললো, যেখানে তাদের আম্মুই দিনে রাতে তাদের আব্বুকে অপমানমূলক কথা বলে সেখানে মেয়েরা আর তাকে কি সম্মান করবে?সবকিছু মেয়েরা তোমাকে দেখেই শিখেছে।

–কি বললে তুমি?

জারিফ চৌধুরী তখন বললো, যা শুনেছো ঠিক শুনেছো আর যা বলছি ঠিক বলেছি।এবার আসল কথা শোনো কামিনী।
তোমার কিন্তু কুশান আর তোড়ার সব ব্যাপারে এতো নাক গলানো উচিত না?কুশান কি ভালোবেসে তার বউ এর জন্য কিছু আনতে পারে না?সবার তো একটা পার্সোনাল লাইফ আছে তাই না?এতো কিছু ধরলে কিন্তু আবার সংসারে একটা অশান্তি হবে।আর তুমি তো গোলাপ সাহেব কে কথা দিয়েছো আর তোড়ার সাথে এভাবে কথা বলবে না?

কামিনী তখন চিৎকার করে উঠে বললো, হ্যাঁ কথা দিয়েছি।আর আমি আমার কথা রাখছিও।তোড়াকে তো সবকিছু বুঝিয়ে দিয়েছিই আমি।আর তার সাথে তাকে আমি পূর্ণ স্বাধীনতাও দিয়েছি।কিন্তু এখন কথা হচ্ছে আমার ছেলের নিরাপত্তা নিয়ে।সে এতো রাত করে যে চুপিচুপি বাসা থেকে বের হয়ে যায় যদি কোনো অঘটন ঘটে যায়।যদি কেউ আমার ছেলেকে কিডন্যাপ করে?তখন কি হবে?আমি সব সহ্য করতে পারবো কিন্তু আমার ছেলের সাথে হওয়া অন্যায় কিছুতেই সহ্য করতে পারবো না।এই বলে কামিনী খাবার খাওয়া বাদ দিয়েই চলে গেলো।

তোড়া তার রুম থেকেই কামিনীর সব কথা শুনছিলো।
তোড়া তখন মনে মনে বললো, আল্লাহ এ কোন সংসারে ফালাইছো আমাকে।না পারছি সরে যেতে না পারছি থাকতে।কেউ তার ভালো চায়,কেউ তাকে সহ্য করতেই পারে না,আবার কেউ তাকে ভালোবাসে আর কেউ তাকে ঘৃনার চোখে দেখে।
আমি তো নিজেও ভীষণ রাগী আর জেদি। তবুও কত কষ্টে নিজেকে মানিয়ে নিলাম সবার সাথে। কিন্তু এরা তো জীবনেও ভালো হওয়ার মানুষ নয়।আসলেই মনে হয় কুত্তার লেজ কখনো সোজা হয় না।এরা মা বেটি বোধ হয় জীবনেও ভালো হবে না।
🖤
রাত ১২ টা পার হয়ে গেলো।তবুও কুশান বাসায় ফিরলো না।কুশান চাইছিলো তোড়া নিজে তাকে কল করে ডাকবে।কিন্তু তোড়াও আর কল দিলো না সেজন্য তারও আর ফেরা হচ্ছে না বাসায়।তবে কুশান ফোন হাতে ধরেই বসে আছে।
তোড়া চুপচাপ তার রুমে শুয়ে থাকলেও কুশানের কথাই বার বার মনে হচ্ছে।সেজন্য তোড়া বার বার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে।

রাত একটা বেজে গেলো।
এবার তোড়ার মনে মনে একটু একটু ভয়ও হতে লাগলো।কেনো সে আসছে না এখনো?সে কি একবার কল দিবে তাকে?
না দেবে না কল সে?কল দিলে তো কুশানের উপর থেকে তার সমস্ত রাগ চলে যাবে।

এদিকে কামিনী কুশানের ফোনে বার বার কল দিচ্ছে।রিং হচ্ছে কিন্তু কুশান রিসিভ করছে না কামিনীর কল।কামিনী তখন সোজা তোড়ার রুমে চলে এলো।

তোড়া ঘরের লাইট অফ করে শুয়ে ছিলো।কামিনী তখন নিজেই সুইট টা অন করে বললো, কুশান তোমাকে কল দিয়েছিলো তোড়া?
তোড়া তার শাশুড়ী কে দেখামাত্র থতমত খেয়ে বললো,না আম্মু।
–তুমি কল দিয়েছিলে?
তোড়া নিচ মুখ হয়ে বললো, না।

কামিনী তখন বললো, আমি জানতাম তুমি একবারও কল দিবে না।সে এখন কোথায় আছে কি করছে সেটা শোনার কি একবারও ইচ্ছে হয় নি তোমার?দাও কল দাও।তাড়াতাড়ি কল দাও।এতো রাত হয়ে গেলো ছেলেটা আমার কই চলে গেলো এভাবে?

তোড়া কামিনীর কথা শুনে কুশানকে কল দিলো। কুশান সাথে সাথে তোড়ার কল রিসিভ করে বললো,

কল দিয়েছো কেনো?

তোড়া কি উত্তর দিবে বুঝতে পারছিলো না।এদিকে কামিনী তোড়াকে চুপ থাকা দেখে বললো,কুশানকে জিজ্ঞেস কেনো করছো না কোথায় আছে ও?আর কখন বাসায় আসবে?

তোড়া কামিনীর কথা শুনে বললো,
কোথায় আছো তুমি?কখন আসবা বাসায়?

কুশান সেই কথা শুনে বললো, কি দরকার আমার খোঁজ নেওয়ার?আমি আজ বাড়িতেই যাবো না।সামান্য তুই করে বলার কারণে যে বউ এতো রাগ করতে পারে তার সামনেই যাবো না আমি।

তোড়া কুশানের প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে চুপ করে থাকলো।কামিনী তা দেখে তোড়ার হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিয়ে বললো,
এই তুই আমার কল রিসিভ করতেছিস না কেনো?আর বউ এর কল সাথে সাথে ধরলি?তুই কি শুরু করেছিস কুশান?আমার কি তোকে নিয়ে চিন্তা হয় না বল?

কুশান তার মায়ের কন্ঠ শুনে বললো, হ্যালো আম্মু?তুমি?

কামিনী রাগান্বিত কন্ঠে বললো,হ্যাঁ আমি।আগে বল কই আছিস তুই?এতো রাতে বাহিরে কি করিস?বাসায় আসবি কখন?

কুশান কামিনীর কথা শুনে বললো আম্মু আমি তো অনেক আগেই এসেছি বাসায়। ভালো লাগছিলো না তাই ছাদে একটু পায়চারি করছিলাম।

–ছাদে তুই?এতো রাতে ছাদে কি করিস?নেমে আয় তাড়াতাড়ি।রাতে যে ভুত পেত্নী ঘুরে বেড়ায় সেটা কি ভুলে গেলি?

কুশান তার মায়ের কথা শুনে ভালো করে চারদিকে তাকালো।এতোক্ষন তার কিছু মনে না হলেও এখন সত্যি সত্যি ভয় করছে তার।সেজন্য তাড়াতাড়ি করে নেমে এলো ছাদ থেকে।

কামিনী কুশানের সাথে কথা বলা শেষ করে ফোনটা তোড়ার হাতে দিয়ে বললো, কুশানের সাথে কি নিয়ে ঝগড়া করেছো?

তোড়া কামিনীর কথা শুনে ভয়ে ভয়ে বললো, ঝগড়া?হয় নি তো ঝগড়া?

–তাহলে এতো রাতে কুশান রুমে আসা বাদ দিয়ে ছাদে কি করে?

তোড়া তখন বললো, আম্মু এটাও কি আমার দোষ?সে কেনো ছাদে গিয়েছে সেটা তাকেই জিজ্ঞেস করুন।

–আমরাও এমন সময় পার করেছি তোড়া?সত্যি করে বলো কি কারণে আমার বাবুটার মন খারাপ?

এদিকে ছাদ থেকে নেমে এলো কুশান।কুশানকে রুমে আসা দেখে কামিনী এতোক্ষণে স্বস্তি পেলো।তারপর কুশানের কাছে গিয়ে বললো, বাবা এতো রাতে একা একা ছাদে কেনো গিয়েছিলি?
কুশান তখন বললো, বললাম তো এমনি গিয়েছিলাম।তুমি এতো কেনো চিন্তা করো আম্মু?এতো রাত হইছে এখনো কেনো ঘুমাও নি তুমি?যাও এখন ঘুমিয়ে পড়ো।এই বলে কুশান কামিনী কে নিজে গিয়ে রুমে রেখে আসলো।তারপর বিছানায় শুয়ে রেখে গায়ে একটা কাঁথা দিয়ে বের হয়ে আসলো রুম থেকে।
জারিফ চৌধুরী অনেক আগেই ঘুমিয়ে গেছেন।

কামিনী কে ঘরে রেখে এসে কুশান যখন নিজের রুমে আসলো সে দেখলো তোড়া শুয়ে পড়েছে। কুশান সেজন্য নিজেও তোড়ার পাশে শুয়ে পড়লো।আর মনে মনে ভাবতে লাগলো সে যে আশা করছে সেটা জীবনেও পূরণ হবে না।এই মেয়ের বুক ফাটবে তবুও মুখ ফুটবে না।এই জীবনেও তাকে নিজের থেকে ভালোবাসবে না।সেজন্য কুশান তোড়াকে নিজেই জড়িয়ে ধরলো।আর বললো, ঘুমাইছো তুমি?

তোড়ার কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে কুশান তোড়াকে তার পাশ করলো।কিন্তু একি?তোড়া তো কাঁদছে।
কুশান তখন তোড়ার চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বললো, এখনো তোমার রাগ কমে নি?তুমি এখনো কাঁদছো?এই যে কান ধরলাম,সরি।আর ভুল করেও তুই বলবো না।আমার জন্মের শিক্ষা হয়ে গেছে আজ।প্লিজ কান্দাকাটি থামাও এবার।

তোড়া হঠাৎ কি মনে করে যেনো কুশানকে জড়িয়ে ধরে আরো জোরে জোরে কাঁদতে লাগলো।কুশান তোড়াকে এভাবে কাঁদতে দেখে বললো,তুমি এভাবে কাঁদতেছো কেনো?বললাম তো ভুল হয়ে গেছে আমার।আর কতবার সরি বলবো?আচ্ছা তুমিই বলে দাও কি করলে তোমার রাগ কমে যাবে?

তোড়া সেই কথা শুনে আরো জোরে জোরে করে কাঁদতে লাগলো।
আসলে কুশান তো এখনো জানে না তোড়া কেনো কাঁদছে?সে তো আর জানে না আজ আবার তার বোনেরা বাজে ব্যবহার করেছে তার সাথে।আর কামিনী কাল রাতের ঘটনা নিয়ে তোড়াকে গালমন্দ করেছে?তোড়া নিজের থেকেও আর কিছু বলতে গেলো না।সে কেঁদেই চলছে শুধু।

কুশান তখন বললো, হায় আল্লাহ!
এমন একটা পাগলির প্রেমে পড়েছিলাম,যাকে ভুল করে একটা চিমটি দিলে সে দশটা চিমটি মারতো,যদি তাকে একটা ঝাড়ি দিতাম সে তখন দশ টা ঝারি মারতো,যদি কখনো দেখা করতে এক ঘন্টা লেট হতো,তখন সে উল্টো আমাকে দশ ঘন্টা ধরে খারা করে রাখতো।এতো অত্যাচার সহ্য করেও এই পাগলারি টারে ছাড়ি নি।সারাদিন শুধু তাকেই দেখতে মন চাইতো।আর সেজন্যই এক নজর দেখার জন্য ছুটে যেতাম।আজ সেই পাগলি টা আমার বউ হয়ে আমার ঘরে এসেছে।তবুও তার পুরাতন অভ্যাস দূর হলো না?
তাকে আজ ভুল করে তুই বলায় সেই সন্ধ্যা থেকে কেঁদে চলেছে।এই কাঁন্দোন যে আর কতক্ষন চলবে আল্লাহই ভালো জানে।

তোড়া এতোক্ষনে কথা বলে উঠলো। সে তার চোখের পানি মুছিয়ে বললো,কুশান তুমি আমাকে ভালোবাসো ঠিকই কিন্তু আমার মনের কথা বুঝতে পারো না তুমি।যেদিন বুঝতে পারবা সেদিন আসবা আমার সামনে।তার আগে কখনোই আসবা না?যাও আমার সামনে থেকে।এই বলে তোড়া কুশানকে ছেড়ে দিয়ে আবার অন্য পাশ হলো।

কুশান তখন বললো, কি বলছো কি? মনের কথা বুঝি না মানে?

–হ্যাঁ বোঝো না।যদি বুঝতে তাহলে সারাক্ষণ এই এক কথা বলতে না?তুমি আমাকে তুই বলেছো,হ্যাঁ আমি রাগ করেছিলাম।কিন্তু সে রাগ তো আমার অনেকক্ষণ শেষ হয়ে গেছে।এখন আমি অন্য কারণে কাঁদছি।

কুশান সেই কথা শোনার সাথে সাথে বললো, হ্যাঁ বুঝেছি।আজ তোমার জন্য চকলেট,আইস্ক্রিম, চিপস এগুলো আনি নি দেখে কাঁদতেছো?
আমি অতো বোকা নই তোড়া।আমি ঠিক তোমার মনের কথা বুঝতে পারি।তোমার সব ফেভারিট খাবারদাবার আজও এনেছি।এই বলে কুশান বিছানা থেকে নেমে গেলো।

চলবে,

#আমি_ফাইসা_গেছি(১৭)
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

–বিছানা থেকে নাম।নাম বলছি।
এই বলে তোড়া চকলেট আর আইসক্রিমের বক্স,চিপসের প্যাকেট সব ছুঁড়ে ফেলে দিলো বাহিরে।তারপর কুশানকেও টেনে রুম থেকে বের করে দিলো।

–কি হয়েছে কি?এই তোড়া?পাগল হয়ে গেলে?

তোড়া কুশানের প্রশ্নের কোনো উত্তর দিলো না।সে কুশানকে বাহিরে রেখে তাড়াতাড়ি করে ঘরের দরজা লাগিয়ে দিয়ে শুয়ে পড়লো।আর চিৎকার করে করে বলতে লাগলো,
আমি নাকি চিপস আর চকলেটের জন্য কাঁদতেছি।কি রে ভাই আমি কি ছোটো বাচ্চা?যে চিপস আর চকলেট না আনাতে কাঁদবো?সে যে আমার ইমোশন বুঝতেই পারে না?আমার সাথে কখন কি হচ্ছে?কে কি বলছে আমাকে?আমার মন কি জন্য খারাপ সে যে বুঝতেই পারে না?সেই বলদ নাকি আবার আমার ভালোবাসার মানুষ। অনেক ধরনের বলদ দেখেছি আমি কিন্তু এরকম বলদ দেখি নি।থাক!আজ তুই বাহিরেই থাক।সারারাত মশার কামড় খাওয়ার পর যদি একটু বুদ্ধি হয়?মশারাও তোর থেকে অনেক বুদ্ধিমান।

এদিকে কুশান বার বার দরজা ধাক্কাতে লাগলো।আর তোড়া তোড়া বলে ডাকতে লাগলো।
তোড়া যেনো আজ কুশানের কথা শুনতেই পারছে না।সে চুপচাপ বেডে শুয়ে থাকলো।

হঠাৎ কুশান ইরার রুমের দরজা খোলার শব্দ শুনতে পেলো।তখন কুশান তাড়াতাড়ি করে চকলেট বক্স,আইস্ক্রিমের বক্স,আর চিপসের প্যাকেট গুলো কুড়ে নিয়ে তাড়াতাড়ি সুমনের ঘরের দিকে চলে গেলো।কারণ সুমন দরজা খোলা রেখেই ঘুমায়।

ইরা এই রাতের বেলা পানি খাওয়ার জন্য উঠেছে।যখন সে দেখলো বোতলে পানি নেই।সেজন্য বাহিরে এসেছে পানি নেওয়ার জন্য।ইরা দেখতে পেলো না কুশানকে।কুশান তার আগেই সুমনের রুমে ঢুকেছে।

এদিকে সুমন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছে।সে জানেই না তার রুমে কুশান এসেছে।কুশান এবার সুমনের ফোন টা নিয়ে আগে তোড়াকে কল দিলো।
কিন্তু তোড়া রিসিভ করলো না সুমনের কল।তখন কুশান আবার কল দিলো।

তোড়া এবার রিসিভ করলো।
তোড়া হ্যালো বলতেই কুশান বললো,আমার অপরাধ কি তোড়া?কেনো সবকিছু ছুঁড়ে ফেলে দিলে এভাবে?আর আমাকে এভাবে কেনো রুম থেকে বের করে দিলে?প্লিজ উত্তর দাও।

কুশান পুরো কথা শেষ না করতেই তোড়া কেটে দিলো কল। কুশান তখন আবার কল দিলো।এবার তোড়া বিরক্ত হয়ে সুমনের নাম্বার টাই ব্লক করে দিলো।
কুশান এবার একদম অস্থির হয়ে গেলো।কারণ সে যে বুঝতেই পারছে না তোড়ার রাগের কারন টা কি?
কুশান রুমের মধ্যে অনবরত পায়চারি করতে লাগলো।সে আর কোনো উপাই খুঁজে পাচ্ছে না।কুশান তখন সিদ্ধান্ত নিলো আবার সে তার রুমের সামনে যাবে।আর আবার তোড়াকে ডাক দিবে।যেই ভাবা সেই কাজ।কুশান চুপি চুপি সুমনের রুম থেকে বের হয়ে আগে চারপাশ দেখে নিলো ভালো করে।যখন সে কাউকে দেখতে পেলো না তখন এক দৌড়ে চলে গেলো তার রুমের সামনে।আর আবার তোড়া তোড়া বলে ডাকতে লাগলো।

তোড়া যখন দরজা খুলে দিচ্ছিলো না তখন কুশান মিনতি করে বললো,
তোড়া প্লিজ খুলে দাও দরজাটা।বিশ্বাস করো আমি কোনো কথা বলবো না তোমার সাথে। জিজ্ঞেসও করবো না কেনো এভাবে সবকিছু ছুঁড়ে ফেলে দিলে।আমি শুধু চুপচাপ গিয়ে শুয়ে পড়বো।

কিন্তু তোড়ার কোনো সাড়াশব্দ নাই।

–তোড়া?তোড়া?এই তুমি আবার ঘুমিয়ে পড়েছো নাকি?আমি কি আজ বাহিরেই ঘুমাবো?প্লিজ খুলে দাও দরজাটা।

কামিনী ঘুমের ঘোরেই জারিফ চৌধুরীকে বললো,এই দেখো তো একটু।কুশান ডাকছে নাকি আমাকে?
জারিফ চৌধুরী তখন ঘুম ঘুম কন্ঠ নিয়ে বললো, কামিনী এখন রাত কয় টা বাজে জানো?কুশান কেনো তোমাকে এতো রাতে ডাকতে যাবে?সে মনে হয় এখন ঘুমিয়ে পড়েছে।
কামিনী সেই কথা শুনে উঠতে ধরলে জারিফ চৌধুরী বললো,তুমি শুয়ে থাকো।দেখছি আমি।এই বলে জারিফ চৌধুরী চোখ ডলতে ডলতে রুম থেকে বের হলেন।

জারিফ চৌধুরী দরজা খুলে দেখেন কেউ নাই।তবে তিনি কুশানের ঘরের সামনে আবছা আবছা কিছু দেখতে পেয়ে বললেন, কে রে ওখানে দাঁড়িয়ে ?

অন্ধকারে স্পষ্ট ভাবে দেখা যাচ্ছিলো না কুশানকে।তবে বোঝা যাচ্ছে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে কুশানের ঘরের দরজার সামনে।

কুশান কোনো উত্তর দিলো না।সে চুপচাপ সরে যেতে লাগলো।

এদিকে জারিফ চৌধুরী অন্ধকারে কিছু দেখতে পাচ্ছেন না দেখে লাইট অন করলেন।কিন্তু ভুলক্রমে তিনি বারান্দার লাইট জ্বালাইছেন।

কুশান জারিফ চৌধুরীকে সুইচ অন করা দেখে আবার সুমনের ঘরের দিকে দৌঁড় দিলো।কারণ তাকে এভাবে ঘরের বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলে আর তোড়াকে ঘরের দরজা লাগিয়ে ঘুমিয়ে থাকতে দেখলে নতুন আরেক ঝামেলার সৃষ্টি হবে।

জারিফ চৌধুরী সুমনের ঘরের দিকে কাউকে যেতে দেখে চিল্লাতে চিল্লাতে তিনিও সুমনের ঘরে ঢুকে গেলেন।এদিকে কুশান সোজা সুমনের বেলকুনিতে চলে গেছে।
জারিফ চৌধুরীর চিল্লাচিল্লি শুনে কামিনী এক লাফে বেড থেকে নেমে এলেন।আর জোরে জোরে করে জারিফ কে ডাকতে লাগলেন।

জারিফ চৌধুরীর চিৎকার শুনে সুমনও চমকে উঠলো।

–বড় আব্বু?তুমি এ রুমে?
জারিফ চৌধুরী কোনো কথা না বলে শুধু এদিক ওদিক খুঁজতে লাগলেন।কিন্তু কাউকেই খুঁজে পেলেন না তিনি।
সুমন তখন বললো কি হয়েছে বড় আব্বু?কাকে খুঁজছেন এভাবে?
–কেউ একজন ঢুকেছে তোর রুমে।
সুমন তখন বললো দূর কে ঢুকবে?
–না ঢুকেছে।
সুমন সেই কথা শুনে নিজেও খুঁজতে লাগলো।

এদিকে কামিনীও এসে গেছে সুমনের রুমে।আর জিজ্ঞেস করতে লাগলো কি হয়েছে?কেনো চিৎকার করলে?
জারিফ চৌধুরী তখন বললো, একজন কে এই দিকে আসতে দেখলাম।

কামিনী তখন বললো, ও মোর আল্লাহ। কাকে দেখলে?নিশ্চয় শত্রু পক্ষের কেউ এসেছে।আমার কুশান ঠিক আছে তো?এই বলে কামিনী কুশানের দরজায় গিয়ে ধাক্কা দিতে লাগলো।

তোড়া ভাবলো কুশান বোধ হয় ধাক্কা দিচ্ছে সেজন্য সে খুললো না দরজা।
জারিফ চৌধুরী কামিনী কে এভাবে দরজা ধাক্কানো দেখে বললো, এই কি করছো?দেখতেই তো পারছো দরজা লাগানো।ওরা মনে হয় ঘুমিয়ে পড়েছে।এই বলে জারিফ চৌধুরী কামিনী কে নিয়ে রুমে চলে গেলেন।

জারিফের চিৎকার শুনে সোনিয়াও জাগা পাইছে।সেও চোখ ডলতে ডলতে এগিয়ে এলো।যখন দেখলো তার ভাই এর রুমে আলো জ্বলছে তখন সোনিয়া সোজা সুমনের রুমে ঢুকলো।আর বললো,ভাইয়া কি হয়েছে?এতো হইচই কেনো?
সুমন কিছু বলার আগেই হঠাৎ সোনিয়ার চোখ গেলো টেবিলের উপরে।সে চকলেট আর আইসক্রিমের বক্স হাতে নিয়ে বললো,ভাইয়া? এগুলো কার? তুই এনেছিস?

সুমন সেই কথা শুনে বক্স গুলো হাতে নিয়ে বললো,তোর মনে হয় এখনো ঘুম কম্পিলিট হয় নি।সেজন্য ভুলভাল বকছিস?নিজে এনে এখন নিজেই বলছিস কে এনেছে এগুলো?
সোনিয়া সুমনের কথা শুনে চিন্তার সাগরে ডুবে গেলো।সে আবার কখন আনলো এসব জিনিস?সে তো মাত্র রুমে ঢুকলো।তাছাড়া আজ তো সে বাহিরেই যায় নি?
সোনিয়া মনে মনে ভাবতে লাগলো তার ভাই যখন বলছেই এগুলো তার তাহলে সে তো সাথে করেই নিয়ে যেতে পারে।এই ভেবে সোনিয়া চকলেট বক্স,আর আইসক্রিমের বক্স নিয়ে যেতে ধরলো।

–এই দাঁড়া দাঁড়া।তুই কখন আনলি এসব?তুই তো আজ কলেজেই যাস নি?রাখ।অন্য মানুষের জিনিস এভাবে নিয়ে যেতে লজ্জা লাগে না?

সোনিয়া সেই কথা শুনে রাগ করে চকলেট আর আইসক্রিমের বক্স রেখে বললো তুই তো বললি এগুলো নাকি আমি নিয়ে এসেছি।

–যা ভাগ এখান থেকে।জীবনে দশটা টাকা খরচ করিস না।আর তুই আনবি এসব জিনিস?

সোনিয়া তখন বললো, যেই আনুক এগুলো এখন আমার।এই বলেই সে চকলেট আর আইসক্রিমের বক্স টা নিয়ে দৌঁড় দিলো।আইস্ক্রিম আর চকলেট গুলো একদম গলে যাওয়ায় সোনিয়া সেগুলো ফ্রিজে রেখে নিজের রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লো।

হঠাৎ জারিফ চৌধুরী আবার আসলেন সুমনের রুমে।কারণ তিনি যে নিজের চোখে দেখেছেন কাউকে ঢুকতে। জারিফ চৌধুরী আবার ভালো করে দেখতে লাগলেন চারপাশ। তিনি যখন বেলকুনির দিকে যেতে ধরলেন তখন হঠাৎ করে সুমন বললো, বড় আব্বু তুমি কি চকলেট আর আইসক্রিমের বক্স এনেছিলে?

জারিফ চৌধুরী সুমনের কথা শুনে ঘুরে তাকালো।আর বললো,না তো?কিসের চকলেট বক্স?আর কিসের আইসক্রিম বক্স?
–টেবিলের উপর কে যেনো রেখে গেছে?
জারিফ চৌধুরী সেই কথা শুনে বললো,তুই মনে হয় এনেছিস।আর কে আনতে যাবে?
ঘুমিয়ে পড় তো এখন।আর দরজা ভালো করে লাগিয়ে দিয়ে ঘুমাবি।তোর এই বদ অভ্যাস কবে যে ভালো হবে?এইভাবে দরজা খোলা রেখে কেউ ঘুমায় নাকি?এই বলে জারিফ চৌধুরী চলে গেলেন।

সুমন যেই শুতে যাবে হঠাৎ সে খেয়াল করলো কতগুলো চিপসের প্যাকেট ও।সোনিয়া চিপসগুলো দেখে নি তা না হলে এগুলোও নিয়ে যেতো।

চিপসের প্যাকেট দেখে সুমনের আর লোভ মানলো না।সে একটা প্যাকেট ছিড়ে খেতে লাগলো চিপস।আর ভাবতে লাগলো সত্যি কি সে নিজেই এসব এনেছে?কিন্তু কখন এসেছে?
সুমনের এবার ভয় হতে লাগলো।যদি সত্যি সত্যি কেউ এসে থাকে তার রুমে।আর সেই অচেনা ব্যক্তিই যদি তার জন্য নিয়ে আসে এসব?
কিন্তু সেই অচেনা লোক কেনো আনবে এসব জিনিস?
তাকে আবার কেউ মেরে ফেলানোর ফন্দি করছে না তো?
সুমনের মনে নানারকম প্রশ্ন জাগতে লাগলো।শেষমেশ সে চিপসের প্যাকেট টা রেখে দিয়ে দরজা লাগিয়ে দিয়ে শুয়ে পড়লো।

তোড়া ঘরের দরজা বন্ধ করে শুয়ে থাকলেও সে কিছুতেই ঘুমাতে পারছিলো না।নানা ধরনের চিন্তা ভাবনা আসতে লাগলো তার মনে।কুশান কত করে মিনতি করলো তবুও সে খুলে দিলা না দরজাটা।না জানি বেচারা এখনো দাঁড়িয়েই আছে দরজার সামনে।এইভাবে কুশানকে বাহিরে রেখে তার কি ঘুম আসবে?দেখি বলদ টা এখন কি করে?ওকে দেখেই আবার বন্ধ করে দিবো দরজা টা।এইভেবে তোড়া ঘরের দরজা খুলে দিলো।কিন্তু কুশান কে সে দেখলো না।
তোড়া ভাবলো হয়তো কুশান সুমনের রুমে আছে।একবার কি যাবো সেখানে?
এই ভেবে তোড়া সোজা সুমনের রুমে চলে গেলো।

এদিকে জারিফ চৌধুরী এখনো নোটিশ করছিলেন সুমনের রুম।কারণ তিনি সিওর ছিলেন কেউ না কেউ রুমে অবশ্যই ঢুকেছে।কারণ তিনি যে নিজের চোখে দেখেছেন।

তোড়াকে সুমনের রুমে যাওয়া দেখে জারিফ চৌধুরী বেশ অবাক হলেন।তখন তিনি নিজেও তোড়ার পিছু পিছু চলে গেলেন।

তোড়াকে দেখামাত্র সুমন তাড়াতাড়ি করে উঠে বসলো। আর বললো,ভাবি তুমি?এতো রাতে এ রুমে?
তোড়া চারপাশে তাকিয়ে দেখে কুশান নেই রুমে।তখন সে বললো, তোমার ভাই কই?

–ভাই?কোন ভাই?

তোমার কয় টা ভাই আছে?

–কুশান ভাই?

–হ্যাঁ।

–জানি না তো?

তোড়া তখন অবাক হয়ে বললো, কি বলছো এসব?কুশানকে দেখো নি তুমি?

–না তো?

তোড়া তখন বললো, কিন্তু কুশান তো তোমার রুমেই ছিলো?

–বলো কি?ভাইয়া আমার রুমে কেনো আসবে?

তোড়া তখন সুমনের ফোনটা দেখিয়ে বললো, কিছুক্ষণ আগে কুশান তো তোমার নাম্বার থেকে কল দিয়েছিলো আমাকে।

সুমন তো কিছু বুঝতে পারছিলো না।কুশান কেনো তার নাম্বার থেকে তোড়াকে কল দিতে যাবে?এই জন্য সুমন চেক করতে লাগলো।
না তো?কই কল দিয়েছে কুশান?
এদিকে কুশান কথা বলা শেষ করেই ডিলিট করে দিয়েছে তোড়ার নাম্বার।

তোড়া তখন কুশান কুশান বলে ডাকতে লাগলো। কিন্তু বের হয়ে এলো না কুশান।তোড়া এবার ভয়ের মধ্যে পড়ে গেলো।তাহলে কুশান গেলো কোথায়?

হঠাৎ বেলকুনির দরজার ছিটকিনি খুলে কুশান বের হয়ে আসলো।তবে সে কারো সাথে কোনো কথা বললো না।চুপচাপ সুমনের রুম থেকে বের হয়ে সোজা নিজের রুমে চলে গেলো।

সুমন একদম হা করে তাকিয়ে রইলো।সে এতোক্ষণে বুঝতে পারলো ব্যাপার টা।তাহলে জারিফ চৌধুরী ঠিকই দেখেছেন।আসলেই কেউ একজন ঢুকেছিলো তার রুমে।তাহলে এই হলো আসল কাহিনী।
জারিফ চৌধুরী নিজেও এখনো বাহিরেই দাঁড়িয়ে আছেন?

সুমন তোড়াকে বললো, ভাবি তোমরা কি ঝগড়া করেছো?ভাইয়া এ রুমে কেনো এসেছে?

তোড়া বললো হুম।

–ভাইয়া তোমার সাথে ঝগড়াও করে?

তোড়া তখন বললো কাল কথা বলি?এই বলেই সে সুমনের রুম থেকে বের হলো।

হঠাৎ জারিফ চৌধুরী ডাক দিলো,মা তোড়া?

জারিফ চৌধুরীর কন্ঠ শুনে তোড়া একদম চমকে উঠলো।সে ভয়ে ভয়ে পিছন ফিরে তাকালো।কারন এতো রাতে তাকে সুমনের রুমে দেখে জারিফ চৌধুরী বুঝি কি ভাবেন কে জানে?

জারিফ চৌধুরী কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই তোড়া নিজেই গড়গড় করে বললো,
আসলে আব্বু কুশান এতোক্ষণ সুমনের রুমে ছিলো।সেজন্য তাকে ডাকতে এসেছিলাম আমি।

জারিফ সাহেব নিজেও কুশানকে বের হতে দেখেছেন সুমনের রুম থেকে। সেজন্য তিনি সন্দেহ করলেন না তোড়াকে।তবে তিনি তোড়ার কথা শুনে বললেন,

–কুশান নিজের ইচ্ছাতে সুমনের রুমে ছিলো না। তুমি তাকে ঘরে উঠতে দেও নি দেখে সে সুমনের রুমে গিয়েছে।

–না মানে আব্বু।ও আসলে,
তোড়া বলতে ধরে আর বললো না।

জারিফ চৌধুরী তখন বললো, স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়াঝাটি হবে,মারামারি হবে,মান অভিমান হবে আবার ভালোবাসাবাসিও হবে।তাই বলে স্বামীকে তুমি ঘরে উঠতে দেবে না?এটা কি ধরণের অসভ্যতা তোড়া?কুশানের সাথে এই রকম আচরণ করতে করতে একদিন দেখবে সে নিজেও পালটে গিয়েছে।সেও তোমার সাথে এমন বাজে আচরণ করা শুরু করলো তখন কি হবে?

–না মানে?

–কিসের মানে?আজ যদি কামিনী দেখতো এটা?কি হতো বুঝতে পেরেছো?

তোড়া নিচ মুখ হয়ে থাকলো।সে কোনো উত্তর দিলো না।

জারিফ চৌধুরী তখন বললো, আর কখনোই এই রকম কাজ করবে না তোড়া।কুশান কতো টা ভয় পাইছে জানো তুমি?না জানি ভয়ে আজ ছেলেটার বোধ হয় জ্বর এসে যায়?

তোড়া এবারও কোনো কথা বললো না।

জারিফ চৌধুরী তখন তোড়ার মাথা বুলিয়ে দিয়ে বললো,
আমি জানি তোমার অনেক কষ্ট হচ্ছে এ বাড়িতে থাকতে?কামিনী আর ইরা,মিরা,লিরা যেভাবে তোমাকে অপমান করে কথা বলে যেকোনো মেয়ের পক্ষে এটা মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।তবে কুশান কিন্তু তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসে।আমি আগেও বলেছি ও একটু সহজ সরল মানুষ। এতো পেচ সে বোঝে না।তাই বলি কি মা ওকে অযথা কষ্ট দিও না।তোমার রাগ কামিনীর উপর যা বলার ওকে বলো,তোমার রাগ ইরা,মিরা,লিরার উপর,প্রতিবাদ করার হলে ওদের সাথে করো।অযথা ওদের রাগ কুশানের উপর ঝাড়িও না।

তোড়া জারিফ চৌধুরীর কথা শুনে কাঁদতে লাগলো।তার আজ নিজেকে অনেক বেশি অসহায় লাগছিলো।সে এমন একটা পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে গেছে যেখান থেকে সে নড়তেও পারছে না, সরতেও পারছে না আবার লেগে থাকতেও ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।

তোড়াকে এভাবে কাঁদতে দেখে জারিফ চৌধুরী বললো, এভাবে কেঁদো না তোড়া।আজ তুমি যাদের জন্য কাঁদছো একদিন তারাই তোমার কাছে কাঁদতে কাঁদতে ক্ষমা চাইবে।তবে সেদিন পেতে হলে তোমাকে অনেক বেশি স্ট্রং হতে হবে।তোমাকে সেজন্য ধৈর্য্য হারালে চলবে না।আমি আমার নিজের বউ আর মেয়েদের কে কখনোই সাপোর্ট করি না,কারণ তারা কখনোই আমার কথা শোনে নি।নিজেদের ইচ্ছেমতো চলাফেরা করেছে।তবে আমি তোমাকে নিজের মেয়ের মতো মনে করি।সেজন্য যা যা বললো যদি সেই অনুযায়ী চলতে পারো তাহলে কখনোই তোমার খারাপ কিছু হবে না।প্রথম উপদেশ হবে,তুমি কখনোই কুশানের সাথে খারাপ ব্যবহার করবে না।কুশান যদি কোনো জিনিস বুঝতে না চাই ওকে ভালো করে বোঝালেই সে বুঝবে।কুশানকে যাকে ভালোবাসে তাকে কিন্তু সে নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসে।আর যাকে একবার ঘৃণা করবে তার দিকে কিন্তু আর ফিরেও তাকাবে না।
কামিনী আর ইরা,মিরা, লিরাকে কেনো কুশান কিছু বলতে পারে না জানো?কেনো তাদের মুখে মুখে কিছু বলতে পারে না?

তোড়া জারিফ চৌধুরীর কথা শুনে মুখ তুলে তাকালো।

একটাই কারণ তা হলো ওরা কখনোই কুশানের সাথে খারাপ ব্যবহার করে না।যতকিছু হয়ে যাক কামিনী কখনোই কুশান কে গালাগালি করে না।ইরা,মিরা,লিরা তার ভাই এর উপর কখনোই রাগারাগি করে না।তাহলে কুশান কি করে তাদের গালমন্দ করবে?কিন্তু আমি অনেকবার দেখেছি তুমি কুশানের সাথে অনেক বাজে ব্যবহার করো।ওর উপর তৎক্ষনাৎ রেগে যাও।এরকম রাগ না দেখিয়ে ওকে একটু বুঝিয়ে বলবে তাহলেই ও বুঝতে পারবে?

তোড়া তখন কাঁদতে কাঁদতে বললো, আব্বু ওরকম বোকা ছেলেকে আমি কি করে বুঝাবো?সে যে সহজ জিনিস টাও বুঝতে পারে না।তখন আম্মু আর আপুরা কত আজেবাজে কথা বললো আমি সেজন্য মন খারাপ করে কাঁদতেছিলাম।
আপনার ছেলে আমাকে কাঁদা দেখে বলে আমি নাকি চকলেট আর চিপসের জন্য কাঁদছি?বলেন তো কার মেজাজ ঠিক থাকবে তখন?

হঠাৎ পিছন দিক থেকে কুশান এসে বললো, এই কথা টা আমাকে বুঝিয়ে বললে কি প্রবলেম হতো তোমার?আমি তো আর জানি না তুমি কেনো কাঁদছো?আমি তো আর সব জান্তা শমসের না।যে তোমার মুখ দেখেই বুঝে যাবো কি হয়েছে তোমার?

তোড়া তখন কুশানের কাছে এগিয়ে এসে বললো, তুমি বোঝো না মানলাম।কিন্তু বাচ্চাদের মতো উল্টোপাল্টা কথা কেনো বলো?আমি কোনদিন চিপস আর চকলেটের জন্য কেঁদেছিলাম?

–কাঁদোই তো?একদিন চিপস চকলেট না আনলে মুখ ফুলে বসে থাকো।ভেবেছো আমি বুঝি না।সেজন্য ভাবলাম আজও বুঝি সেজন্যই কাঁদছো?

–কুশান?এবার কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি হচ্ছে?আমি কোনদিন ফুলে থাকলাম চিপস আর চকলেটের জন্য?

–থাকোই তো।বাবার সামনে ভালো সাজছো এখন।

তোড়া তখন জারিফ চৌধুরীর কাছে গিয়ে বললো, আব্বু আপনি যে বলছেন ধৈর্য্য ধরে থাকতে। আমি কি করে ধৈর্য্য ধরি?নিজের চোখেই দেখেন কিভাবে উল্টাপাল্টা কথা বলছে?আমি কিন্তু কখনোই এসব কিছুর জন্য রাগ করে বসে থাকতাম না।

কুশান তখন বললো আব্বু তুমি কার কথা বিশ্বাস করবে?আমার না তোড়ার?

জারিফ চৌধুরী সেই কথা শুনে বললো, তুই মিথ্যা বলছিস আর তোড়াই সত্য কথা বলছে।যা এখন রুমে চলে যা।

কুশান তখন বললো, আব্বু এটা তুমি বলতে পারলে?আমাকে মিথ্যাবাদী বানালে।আমি আর যাবোই না রুমে।

–না গেলে না যাবে।আব্বু ওকে জোর করবেন না।এই বলে তোড়া একা একা রুমে চলে গেলো।

জারিফ চৌধুরী তখন তোড়াকে ডাক দিয়ে বললো, তোড়া?একাই যাচ্ছো কেনো ওভাবে?কুশানকেও নিয়ে যাও।

তোড়া জারিফ চৌধুরীর কথা শুনে থেমে গেলো।আর বললে,আব্বু ও কি ছোটো বাচ্চা?যে ওকে নিয়ে যেতে হবে?ও কি পায়ে হেঁটে আসতে পারে না নিজে?

কুশান তখন জারিফ চৌধুরীকে বললো,না আব্বু।আমি আর যাবো না ওই ঘরে।কারণ ও আমাকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে।আমি আর কখনোই যাবো না ও ঘরে।আগে ওর বিচার করো তারপর দেখা যাবে।

–এতো রাতে বেশি ঝামেলা করিস না কুশান।কাল এর বিচার করে দেবো।এখন রুমে চলে যা।তোর আম্মু কিন্তু জেগেই আছে।এভাবে এখানে দেখলে কি হবে বুঝতেই তো পারছিস?তোকে তো কিছুই বলবে না শুধু শুধু তোড়াকে বকবে।

কুশান জারিফ চৌধুরীর কথা শুনে বললো, আব্বু মনে যেনো থাকে।কাল অবশ্যই এর বিচার করবে।এই বলে কুশান ঘরে চলে গেলো।

চলবে,